ঈশ্বরের উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করার জন্য এক বিধান
“[ঈশ্বর] সকলই আপন ইচ্ছার মন্ত্রণানুসারে সাধন করেন।”—ইফিষীয় ১:১১.
১. কেন যিহোবার সাক্ষিদের সমস্ত মণ্ডলী ২০০৬ সালের ১২ই এপ্রিল মিলিত হবে?
দুহাজার ছয় সালের ১২ই এপ্রিল বুধবার সন্ধ্যায়, প্রায় ১ কোটি ৬০ লক্ষ লোক প্রভুর সান্ধ্যভোজ উদ্যাপন করার জন্য একত্রিত হবে। প্রতিটা সভাস্থলে একটা টেবিল থাকবে, যেটার ওপর তাড়ীশূন্য রুটি এবং লাল দ্রাক্ষারস রাখা হবে। এই তাড়ীশূন্য রুটি খ্রিস্টের দেহকে এবং লাল দ্রাক্ষারস তাঁর পাতিত রক্তকে চিত্রিত করে। যিশুর মৃত্যুর স্মরণার্থ সভার অর্থ ব্যাখ্যা করে একটা বক্তৃতা দেওয়া হবে, যেটার শেষ দিকে এই প্রতীকগুলো—প্রথমে রুটি ও পরে দ্রাক্ষারস—উপস্থিত সকলের সামনে দিয়ে ঘোরানো হবে। যিহোবার সাক্ষিদের যে-মণ্ডলীগুলো রয়েছে, সেগুলোর তুলনায় অল্প কয়েকটা মণ্ডলীতে উপস্থিত এক বা একাধিক ব্যক্তি সেই প্রতীকগুলো গ্রহণ করবে। কিন্তু, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উপস্থিত কেউই সেগুলো গ্রহণ করবে না। কেন মাত্র অল্প কয়েক জন খ্রিস্টান, যারা স্বর্গে বাস করার আশা রাখে, তারা গ্রহণ করবে কিন্তু অন্যদিকে বেশির ভাগ ব্যক্তি, যারা পৃথিবীতে অনন্তকাল বাস করার আশা রাখে, তারা গ্রহণ করবে না?
২, ৩. (ক) কীভাবে যিহোবা তাঁর উদ্দেশ্য অনুযায়ী ক্রমান্বয়ে সৃষ্টি করেছিলেন? (খ) কোন উদ্দেশ্যে যিহোবা পৃথিবী এবং মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছিলেন?
২ যিহোবা হলেন একজন উদ্দেশ্যপরায়ণ ঈশ্বর। তাঁর সংকল্প বা উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করার ক্ষেত্রে তিনি “সকলই আপন ইচ্ছার মন্ত্রণানুসারে সাধন করেন।” (ইফিষীয় ১:১১) তিনি প্রথমে তাঁর একজাত পুত্রকে সৃষ্টি করেন। (যোহন ১:১, ১৪; প্রকাশিত বাক্য ৩:১৪) এরপর, তাঁর পুত্রের মাধ্যমে যিহোবা আত্মিক পুত্রদের এক পরিবার এবং পরে পৃথিবী ও এতে মানুষসহ ভৌত নিখিলবিশ্ব সৃষ্টি করেন।—ইয়োব ৩৮:৪, ৭; গীতসংহিতা ১০৩:১৯-২১; যোহন ১:২, ৩; কলসীয় ১:১৫, ১৬.
৩ যিহোবা স্বর্গে তাঁর আত্মিক পুত্রদের পরিবার বড় করার জন্য এই পৃথিবীকে পরীক্ষার এক জায়গা হিসেবে সৃষ্টি করেননি, যা কি না খ্রিস্টীয়জগতের অনেক গির্জা শিক্ষা দিয়ে থাকে। একটা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের কথা মনে রেখে তিনি এই পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন আর তা হল, “বাসস্থানার্থে।” (যিশাইয় ৪৫:১৮) ঈশ্বর পৃথিবীকে মানুষের জন্য এবং মানুষকে পৃথিবীর জন্য সৃষ্টি করেছিলেন। (গীতসংহিতা ১১৫:১৬) পুরো পৃথিবী এক পরমদেশে পরিণত হওয়ার কথা ছিল, যা সেই ধার্মিক মানুষদের দিয়ে পূর্ণ হবে, যারা এই পৃথিবীতে কৃষিকর্ম করবে এবং এর রক্ষণাবেক্ষণ করবে। প্রথম মানব দম্পতিকে কখনো এই প্রত্যাশা দেওয়া হয়নি যে, অবশেষে তারা স্বর্গে যাবে।—আদিপুস্তক ১:২৬-২৮; ২:৭, ৮, ১৫.
যিহোবার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়
৪. কীভাবে মানব ইতিহাসের শুরুতেই যিহোবার সার্বভৌমত্বের ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল?
৪ ঈশ্বরের একজন আত্মিক পুত্র বিদ্রোহ করেছিল এবং ঈশ্বর তাকে উপহার হিসেবে যে-স্বাধীন ইচ্ছা দিয়েছেন, সেটার অপব্যবহার করে যিহোবার উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করতে চেয়েছিল। সে সেইসমস্ত ব্যক্তির শান্তিকে নষ্ট করে দিয়েছিল, যারা প্রেমের সঙ্গে যিহোবার সার্বভৌমত্বের বশীভূত হয়। শয়তান, প্রথম মানব দম্পতিকে ঈশ্বরের কাছ থেকে স্বাধীন এক পথে চলতে পরিচালিত করেছিল। (আদিপুস্তক ৩:১-৬) সে যিহোবার ক্ষমতাকে অস্বীকার করেনি কিন্তু তাঁর সার্বভৌমত্ব ব্যবহারের উপায় নিয়ে অর্থাৎ তাঁর শাসন করার অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। এভাবে, মানব ইতিহাসের একেবারে শুরুতেই এই পৃথিবীতে যিহোবার সার্বভৌমত্বের মূল বিচার্য বিষয়টা উত্থাপিত হয়েছিল।
৫. কোন গৌণ বিচার্য বিষয়টা উত্থাপন করা হয়েছিল এবং এর সঙ্গে আর কারা জড়িত ছিল?
৫ সর্বজনীন সার্বভৌমত্ব সংক্রান্ত মুখ্য বিচার্য বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত গৌণ বিচার্য বিষয়টা শয়তান ইয়োবের দিনে উত্থাপন করেছিল। যিহোবার প্রতি বশীভূত হওয়ার এবং তাঁকে সেবা করার বিষয়ে তাঁর সৃষ্ট প্রাণীদের উদ্দেশ্য নিয়ে শয়তান প্রশ্ন তুলেছিল। শয়তান পরোক্ষভাবে বলেছিল যে, স্বার্থপর কারণের জন্য তারা তা করে থাকে আর তাই যদি পরীক্ষায় ফেলা হয়, তা হলে তারা ঈশ্বরের কাছ থেকে সরে যাবে। (ইয়োব ১:৭-১১; ২:৪, ৫) যদিও যিহোবার একজন মানব দাসকে নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল কিন্তু এর সঙ্গে ঈশ্বরের আত্মিক পুত্ররাও, এমনকি যিহোবার একজাত পুত্রও জড়িত ছিল।
৬. কীভাবে যিহোবা তাঁর উদ্দেশ্য এবং তাঁর নামের প্রতি বিশ্বস্ত প্রমাণিত হয়েছিলেন?
৬ যিহোবা তাঁর উদ্দেশ্য এবং তাঁর নামের অর্থের প্রতি বিশ্বস্ত বলে নিজেকে একজন ভাববাদী এবং একজন পরিত্রাতায় পরিণত করেছিলেন।a তিনি শয়তানকে বলেছিলেন: “আমি তোমাতে ও নারীতে, এবং তোমার বংশে ও তাহার বংশে পরস্পর শত্রুতা জন্মাইব; সে তোমার মস্তক চূর্ণ করিবে, এবং তুমি তাহার পাদমূল চূর্ণ করিবে।” (আদিপুস্তক ৩:১৫) যিহোবা তাঁর ‘নারীর’ বংশের অথবা স্বর্গীয় সংগঠনের মাধ্যমে শয়তানের প্রশ্নের উত্তর দেবেন এবং আদমের বংশধরের জন্য উদ্ধারের ও জীবনের আশা জোগাবেন।—রোমীয় ৫:২১; গালাতীয় ৪:২৬, ৩১.
“আপন ইচ্ছার নিগূঢ়তত্ত্ব”
৭. প্রেরিত পৌলের মাধ্যমে যিহোবা কোন উদ্দেশ্য প্রকাশ করেছিলেন?
৭ ইফিষের খ্রিস্টানদের প্রতি লেখা চিঠিতে প্রেরিত পৌল সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, যিহোবা তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করার জন্য বিভিন্ন বিষয়কে কীভাবে পরিচালনা করেন। পৌল লিখেছিলেন: “তিনি আমাদিগকে আপন ইচ্ছার নিগূঢ়তত্ত্ব জ্ঞাত করিয়াছেন, তাঁহার সেই হিতসঙ্কল্প অনুসারে যাহা তিনি কালের পূর্ণতার বিধান লক্ষ্য করিয়া তাঁহাতে পূর্ব্বে সঙ্কল্প করিয়াছিলেন। তাহা এই, স্বর্গস্থ ও পৃথিবীস্থ সমস্তই খ্রীষ্টেই সংগ্রহ করা যাইবে।” (ইফিষীয় ১:৯, ১০) যিহোবার গৌরবান্বিত উদ্দেশ্য হল, তাঁর সার্বভৌমত্বের প্রতি প্রেমের সঙ্গে বশীভূত থাকবে এমন প্রাণীদের দিয়ে পূর্ণ এক ঐক্যবদ্ধ নিখিলবিশ্ব নিয়ে আসা। (প্রকাশিত বাক্য ৪:১১) এভাবে তাঁর নাম পবিত্রীকৃত হবে, শয়তান মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হবে এবং ঐশিক ইচ্ছা “যেমন স্বর্গে তেমনি পৃথিবীতেও” সম্পাদিত হবে।—মথি ৬:১০.
৮. “বিধান” হিসেবে অনুবাদিত শব্দটির অর্থ কী?
৮ যিহোবার “হিতসঙ্কল্প” বা উত্তম উদ্দেশ্য ‘বিধানের’ দ্বারা পরিপূর্ণ হবে। পৌল যে-শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন, সেটির আক্ষরিক অর্থ হল “গৃহ ব্যবস্থাপনা।” এই অভিব্যক্তিটি বিভিন্ন বিষয় পরিচালনা করার এক উপায়কে নির্দেশ করে। যিহোবা তাঁর উদ্দেশ্য সম্পাদন করার জন্য বিভিন্ন বিষয়কে যে-বিস্ময়কর উপায়ে পরিচালনা করবেন, সেটার সঙ্গে এক “নিগূঢ়তত্ত্ব” জড়িত, যা বছরের পর বছর ধরে ধীরে ধীরে জানানো হবে।—ইফিষীয় ১:১০; ৩:৯, পাদটীকা, NW.
৯. কীভাবে যিহোবা তাঁর ইচ্ছার নিগূঢ়তত্ত্ব ধীরে ধীরে প্রকাশ করেছিলেন?
৯ এক ধারাবাহিক চুক্তির মাধ্যমে যিহোবা ধীরে ধীরে প্রকাশ করেছিলেন যে, এদনে প্রতিজ্ঞাত বংশ সম্বন্ধে তাঁর উদ্দেশ্য কীভাবে পরিপূর্ণ হবে। অব্রাহামের কাছে করা তাঁর প্রতিজ্ঞাত চুক্তি প্রকাশ করেছিল যে, সেই প্রতিজ্ঞাত বংশ অব্রাহামের বংশে পৃথিবীতে আসবে এবং এমন এক মাধ্যম হবে, যার দ্বারা “পৃথিবীর সকল জাতি” আশীর্ব্বাদপ্রাপ্ত হবে। সেই চুক্তিতে এও জানানো হয়েছিল যে, অন্যেরা বংশের মুখ্য অংশের সঙ্গে যুক্ত হবে। (আদিপুস্তক ২২:১৭, ১৮) মাংসিক ইস্রায়েলের সঙ্গে করা ব্যবস্থা চুক্তি ‘যাজকদের এক রাজ্যের’ বিষয়ে যিহোবার উদ্দেশ্যকে প্রকাশ করেছিল। (যাত্রাপুস্তক ১৯:৫, ৬) দায়ূদের সঙ্গে করা চুক্তি দেখিয়েছিল যে, সেই বংশ চিরকালের জন্য এক রাজ্যের মস্তক হবে। (২ শমূয়েল ৭:১২, ১৩; গীতসংহিতা ৮৯:৩, ৪) আর ব্যবস্থা চুক্তি যিহুদিদেরকে মশীহের দিকে পরিচালিত করার পর, যিহোবা তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করার আরও অন্যান্য দিক প্রকাশ করেছিলেন। (গালাতীয় ৩:১৯, ২৪) যে-মানুষদের সেই বংশের মুখ্য অংশের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কথা ছিল, তারা ভবিষ্যদ্বাণীকৃত ‘যাজকদের রাজ্য’ গঠন করবে এবং তাদেরকে নতুন ‘ইস্রায়েল’ অর্থাৎ আত্মিক ইস্রায়েল হিসেবে “নূতন নিয়ম” বা চুক্তিতে আনা হবে।—যিরমিয় ৩১:৩১-৩৪; ইব্রীয় ৮:৭-৯.b
১০, ১১. (ক) কীভাবে যিহোবা ভবিষ্যদ্বাণীকৃত বংশকে প্রকাশ করেছিলেন? (খ) কেন যিহোবার একজাত পুত্র পৃথিবীতে এসেছিলেন?
১০ ঐশিক উদ্দেশ্যের বিধান অনুযায়ী, ভবিষ্যদ্বাণীকৃত বংশের পৃথিবীতে আবির্ভূত হওয়ার সময় এসেছিল। যিহোবা মরিয়মকে এই কথা বলার জন্য গাব্রিয়েল দূতকে পাঠিয়েছিলেন যে, মরিয়ম একজন পুত্র প্রসব করবেন, যাঁর নাম হবে যিশু। সেই দূত মরিয়মকে বলেছিলেন: “তিনি মহান্ হইবেন, আর তাঁহাকে পরাৎপরের পুত্ত্র বলা যাইবে; আর প্রভু ঈশ্বর তাঁহার পিতা দায়ূদের সিংহাসন তাঁহাকে দিবেন; তিনি যাকোব-কুলের উপরে যুগে যুগে রাজত্ব করিবেন, ও তাঁহার রাজ্যের শেষ হইবে না।” (লূক ১:৩২, ৩৩) এভাবে প্রতিজ্ঞাত বংশের পরিচয় স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল।—গালাতীয় ৩:১৬; ৪:৪.
১১ যিহোবার একজাত পুত্রকে পৃথিবীতে আসতে এবং সহ্যশক্তির চরম সীমা পর্যন্ত পরীক্ষিত হতে হয়েছিল। শয়তানের প্রশ্নের একেবারে সঠিক উত্তর যিশুর ওপর নির্ভর করেছিল। তিনি কি তাঁর পিতার প্রতি বিশ্বস্ত থাকবেন? এর সঙ্গে এক নিগূঢ়তত্ত্ব জড়িত ছিল। প্রেরিত পৌল পরবর্তী সময়ে যিশুর ভূমিকা সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করেছিলেন: “ভক্তির নিগূঢ়তত্ত্ব মহৎ, ইহা সর্ব্বসম্মত, যিনি মাংসে প্রকাশিত হইলেন, আত্মাতে ধার্ম্মিক প্রতিপন্ন হইলেন, দূতগণের নিকট দর্শন দিলেন, জাতিগণের মধ্যে প্রচারিত হইলেন, জগতে বিশ্বাস দ্বারা গৃহীত হইলেন, সপ্রতাপে ঊদ্ধের্ব নীত হইলেন।” (১ তীমথিয় ৩:১৬) হ্যাঁ, মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর অটল নীতিনিষ্ঠার মাধ্যমে যিশু শয়তানের প্রশ্নের চূড়ান্ত উত্তর দিয়েছিলেন। কিন্তু, নিগূঢ়তত্ত্বের আরও অন্যান্য বিস্তারিত বিষয় প্রকাশ করা বাকি ছিল।
“ঈশ্বরের রাজ্যের নিগূঢ় তত্ত্ব”
১২, ১৩. (ক) ‘ঈশ্বরের রাজ্যের নিগূঢ় তত্ত্বের’ একটা দিক কী? (খ) যিহোবা যে সীমিত সংখ্যক মানুষকে স্বর্গে যাওয়ার জন্য বাছাই করেছেন, সেটার সঙ্গে কী জড়িত ছিল?
১২ গালীলে একবার প্রচার করার সময় যিশু ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, সেই নিগূঢ়তত্ত্ব তাঁর মশীহ রাজ্য সরকারের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তিনি তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “স্বর্গরাজ্যের [“ঈশ্বরের রাজ্যের,” মার্ক ৪:১১] নিগূঢ় তত্ত্ব সকল তোমাদিগকে জানিতে দেওয়া হইয়াছে।” (মথি ১৩:১১) সেই নিগূঢ়তত্ত্বের একটা দিকের সঙ্গে যিহোবার দ্বারা ১,৪৪,০০০ জন মানুষের এক “ক্ষুদ্র মেষপাল” বাছাই করার বিষয়টা জড়িত, যাতে তারা বংশের অংশ হিসেবে স্বর্গে রাজত্ব করার জন্য তাঁর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।—লূক ১২:৩২; প্রকাশিত বাক্য ১৪:১, ৪.
১৩ যেহেতু মানুষকে পৃথিবীতে বাস করার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছিল, তাই কিছু মানুষকে স্বর্গে যাওয়ার জন্য যিহোবার দ্বারা এক “নূতন সৃষ্টি” লাভ করার প্রয়োজন হয়েছিল। (২ করিন্থীয় ৫:১৭) অসাধারণ স্বর্গীয় আশাসম্পন্ন এই মনোনীত ব্যক্তিদের একজন হিসেবে, প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “ধন্য আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের ঈশ্বর ও পিতা; তিনি নিজ বিপুল দয়ানুসারে মৃতগণের মধ্য হইতে যীশু খ্রীষ্টের পুনরুত্থান দ্বারা, জীবন্ত প্রত্যাশার নিমিত্ত আমাদিগকে পুনর্জন্ম [“নতুন জন্ম,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন] দিয়াছেন, অক্ষয় ও বিমল ও অজর দায়াধিকারের নিমিত্ত দিয়াছেন; সেই দায়াধিকার স্বর্গে তোমাদের নিমিত্ত সঞ্চিত রহিয়াছে।”—১ পিতর ১:৩, ৪.
১৪. (ক) কীভাবে ন-যিহুদিরা ‘ঈশ্বরের রাজ্যের নিগূঢ় তত্ত্বে’ যুক্ত হয়েছিল? (খ) কেন আমরা “ঈশ্বরের” এই ‘গভীর বিষয় সকল’ বুঝতে পারি?
১৪ ভবিষ্যৎ রাজ্য সরকারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নিগূঢ়তত্ত্বের আরেকটা অংশ ছিল, মানুষের এই ছোট দলের মধ্যে সেই ন-যিহুদিদের যুক্ত করার বিষয়ে ঈশ্বরের ইচ্ছা, যাদেরকে স্বর্গে খ্রিস্টের সঙ্গে রাজত্ব করার জন্য আহ্বান জানানো হবে। যিহোবার “বিধান” অথবা তাঁর উদ্দেশ্যের পরিপূর্ণতাকে পরিচালনা করার উপায়ের এই দিকটা পৌল ব্যাখ্যা করেছিলেন: “বিগত পুরুষপরম্পরায় সেই নিগূঢ়তত্ত্ব মনুষ্যসন্তানদিগকে এইরূপে জ্ঞাত করা যায় নাই, যেরূপে এখন আত্মাতে তাঁহার পবিত্র প্রেরিত ও ভাববাদিগণের নিকটে প্রকাশিত হইয়াছে। ফলতঃ সুসমাচার দ্বারা খ্রীষ্ট যীশুতে পরজাতীয়েরা সহদায়াদ, দেহের সহাঙ্গ ও প্রতিজ্ঞার সহভাগী হয়।” (ইফিষীয় ৩:৫, ৬) নিগূঢ়তত্ত্বের এই অংশের বোধগম্যতা ‘পবিত্র প্রেরিতদের’ কাছে প্রকাশ করা হয়েছিল। একইভাবে, আজকেও পবিত্র আত্মার সাহায্য না থাকলে আমরা “ঈশ্বরের” এই ‘গভীর বিষয় সকল’ বুঝতে পারতাম না।—১ করিন্থীয় ২:১০; ৪:১; কলসীয় ১:২৬, ২৭.
১৫, ১৬. কেন যিহোবা মানবজাতির মধ্যে থেকে খ্রিস্টের সহযোগী শাসকদের বেছে নিয়েছিলেন?
১৫ স্বর্গীয় সিয়োন পর্বতে ‘মেষশাবকের’ সঙ্গে যে-‘এক লক্ষ চোয়াল্লিশ সহস্র লোককে’ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল, তাদের সম্বন্ধে বলা হয়েছিল যে, তারা “পৃথিবী হইতে ক্রীত” হয়েছে, “ঈশ্বরের ও মেষশাবকের,” অর্থাৎ খ্রিস্ট যিশুর “নিমিত্ত অগ্রিমাংশ বলিয়া মনুষ্যদের মধ্য হইতে ক্রীত হইয়াছে।” (প্রকাশিত বাক্য ১৪:১-৪) যিহোবা তাঁর স্বর্গীয় পুত্রদের মধ্যে থেকে প্রথম পুত্রকে এদনে প্রতিজ্ঞাত বংশের মুখ্য অংশ হওয়ার জন্য মনোনীত করেছিলেন কিন্তু কেন তিনি মানবজাতির মধ্যে থেকে খ্রিস্টের সহযোগীদের বাছাই করেছিলেন? প্রেরিত পৌল ব্যাখ্যা করেন যে, এই সীমিত সংখ্যক ব্যক্তিরা “তাঁহার [ঈশ্বরের] সঙ্কল্প অনুসারে আহূত,” তাঁর “নিজ ইচ্ছার হিতসঙ্কল্প অনুসারে” আহূত।—রোমীয় ৮:১৭, ২৮-৩০; ইফিষীয় ১:৫, ১১; ২ তীমথিয় ১:৯.
১৬ যিহোবার উদ্দেশ্য হল, তাঁর মহান ও পবিত্র নামকে পবিত্রীকৃত করা এবং তাঁর সর্বজনীন সার্বভৌমত্বকে প্রতিপাদন করা। তাঁর অতুলনীয় বিজ্ঞ “বিধান” অথবা বিভিন্ন বিষয় পরিচালনা করার উপায় দ্বারা যিহোবা তাঁর প্রথমজাত পুত্রকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন, যেখানে তিনি সহ্যশক্তির সীমা পর্যন্ত পরীক্ষিত হয়েছিলেন। অধিকন্তু, যিহোবা স্থির করেছিলেন যে তাঁর পুত্রের মশীহ রাজ্য সরকারে সেই মানুষদের অন্তভুর্ক্ত করা হবে, যারা মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর সার্বভৌমত্বকে উচ্চীকৃতও করবে।—ইফিষীয় ১:৮-১২; প্রকাশিত বাক্য ২:১০, ১১.
১৭. খ্রিস্ট এবং তাঁর সহযোগী শাসকরা একসময় মানুষ হিসেবে বেঁচে ছিল বলে কেন আমরা আনন্দিত হতে পারি?
১৭ যিহোবা তাঁর পুত্রকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে এবং যারা রাজ্য সরকারে পুত্রের সহদায়াদ হবে, তাদেরকে মানবজাতির মধ্যে থেকে বাছাই করে আদমের বংশধরদের জন্য তাঁর মহান প্রেম দেখিয়েছেন। কীভাবে তা হেবল থেকে শুরু করে অন্যান্য ব্যক্তিকে উপকার করতে পারে, যারা যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত প্রমাণিত হয়েছে? পাপ এবং মৃত্যুর দাসত্বে জন্মগ্রহণ করায়, অসিদ্ধ মানুষদের আধ্যাত্মিক ও দৈহিকভাবে আরোগ্য লাভ করতে হবে এবং মানবজাতির জন্য যিহোবার আদি উদ্দেশ্য অনুযায়ী সিদ্ধ অবস্থায় ফিরে আসতে হবে। (রোমীয় ৫:১২) যারা পৃথিবীতে অনন্তকাল বেঁচে থাকার জন্য অপেক্ষা করে আছে, তাদের সকলের জন্য এটা জানা কতই না সান্ত্বনাজনক যে, তাদের রাজা তাদের প্রতি প্রেমময় এবং সদয় উপলব্ধি দেখাবেন, ঠিক যেমনটা পার্থিব পরিচর্যাকালে তিনি তাঁর শিষ্যদের প্রতি দেখিয়েছিলেন! (মথি ১১:২৮, ২৯; ইব্রীয় ২:১৭, ১৮; ৪:১৫; ৭:২৫, ২৬) আর এটা বোঝা তাদের জন্য কতই না আশ্বাসজনক যে, স্বর্গে খ্রিস্টের সহযোগী রাজা ও যাজকরা একসময় সেই বিশ্বাসী নারী ও পুরুষ ছিল, যারা নিজেরা আমাদের মতো ব্যক্তিগত দুর্বলতার সঙ্গে লড়াই করেছে এবং জীবনের প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মুখোমুখি হয়েছে!—রোমীয় ৭:২১-২৫.
যিহোবার অব্যর্থ উদ্দেশ্য
১৮, ১৯. ইফিষীয় ১:৮-১১ পদে বলা পৌলের কথাগুলো কেন আমাদের কাছে স্পষ্ট এবং পরের প্রবন্ধে কী বিবেচনা করা হবে?
১৮ ইফিষীয় ১:৮-১১ পদে, অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের প্রতি বলা পৌলের কথাগুলোর অর্থ এখন আমরা আরও ভালভাবে বুঝতে পারি। তিনি বলেছিলেন যে, যিহোবা তাদেরকে “আপন ইচ্ছার” এই “নিগূঢ়তত্ত্ব” জানিয়েছেন যে, তারা খ্রিস্টের সঙ্গে ‘অধিকারস্বরূপ’ এবং তারা ‘যিনি সকলই আপন ইচ্ছার মন্ত্রণানুসারে সাধন করেন, তাঁহার সঙ্কল্প অনুসারে পূর্ব্বে নিরূপিত হইয়াছে।’ আমরা বুঝতে পারি যে, এটা তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করার জন্য বিভিন্ন বিষয় সম্বন্ধে যিহোবার বিস্ময়কর ‘বিধানের’ সঙ্গে মানানসই। এটা আমাদের এও বুঝতে সাহায্য করে যে, কেন প্রভুর সান্ধ্যভোজে উপস্থিত মাত্র কয়েক জন খ্রিস্টান প্রতীকগুলো গ্রহণ করে থাকে।
১৯ পরের প্রবন্ধে আমরা দেখব যে, স্বর্গীয় আশা রয়েছে এমন খ্রিস্টানদের জন্য খ্রিস্টের মৃত্যুর স্মরণার্থের অর্থ কী। এ ছাড়া আমরা এও শিখব যে, যে-লক্ষ লক্ষ লোকের পৃথিবীতে চিরকাল বাস করার আশা রয়েছে, তাদের কেন স্মরণার্থের প্রতীকগুলোর প্রতি অত্যন্ত আগ্রহী হওয়া উচিত?
[পাদটীকাগুলো]
a ঐশিক নামের আক্ষরিক অর্থ হল, “তিনি অস্তিত্বে আনেন।” যিহোবা তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করার জন্য যা কিছু হওয়ার প্রয়োজন, তা-ই হতে পারেন।—দয়া করে যিহোবার নিকটবর্তী হোন বইয়ের ১ অধ্যায়ের ৯ পৃষ্ঠার ৭ ও ৮ অনুচ্ছেদ দেখুন।
b ঈশ্বরের উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করার সঙ্গে যুক্ত এই চুক্তিগুলো সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনার জন্য ১৯৮৯ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকার ১০-১৫ পৃষ্ঠা দেখুন।
পুনরালোচনা
• কেন যিহোবা পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন এবং মানুষকে এর মধ্যে রেখেছেন?
• কেন যিহোবার একজাত পুত্রের পৃথিবীতে পরীক্ষিত হওয়া আবশ্যক ছিল?
• কেন যিহোবা মানবজাতির মধ্যে থেকে খ্রিস্টের সহযোগী শাসকদের বেছে নিয়েছিলেন?