যিহোবার মেষদের যত্ন নেওয়ার জন্য ‘মনুষ্যদিগের নানা বর’
“‘তিনি ঊদ্ধের্ব উঠিয়া বন্দিগণকে বন্দি করিলেন, মনুষ্যদিগকে নানা বর দান করিলেন।’”—ইফিষীয় ৪:৮.
১. একজন খ্রীষ্টান বোন তার মণ্ডলীর প্রাচীনদের সম্বন্ধে কী বলেছিলেন?
“আমাদের যত্ন নেওয়ার জন্য আপনাদেরকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনাদের হাসি, ভালবাসা আর আমাদের প্রতি আপনাদের আগ্রহ সত্যিই আন্তরিক। আমাদের কথা শোনার জন্য ও বাইবেল থেকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য আপনারা সবসময়ই তৈরি থাকেন যা আমাদের মনকে সতেজ করে। আমি প্রার্থনা করি যেন কখনই আমি আপনাদের এই দানকে হালকা করে না দেখি।” একজন খ্রীষ্টান বোন তার মণ্ডলীর প্রাচীনদেরকে লিখেছিলেন। সত্যিই যত্নবান খ্রীষ্টান পালকদের ভালবাসা তার মনকে ছুঁয়ে গিয়েছিল।—১ পিতর ৫:২, ৩.
২, ৩. (ক) যিশাইয় ৩২:১, ২ পদ অনুসারে কীভাবে দয়ালু প্রাচীনেরা যিহোবার মেষদের জন্য চিন্তা করেন? (খ) কখন একজন প্রাচীনকে বর হিসেবে মনে করা যেতে পারে?
২ যিহোবা তাঁর মেষদের দেখাশোনা করার জন্য প্রাচীনদের দিয়েছেন। (লূক ১২:৩২; যোহন ১০:১৬) যিহোবার কাছে তাঁর মেষেরা খুবই প্রিয়—এতটা প্রিয় কারণ তিনি তাদেরকে যীশুর মহামূল্যবান রক্ত দিয়ে কিনেছেন। তাই এটা খুবই স্বাভাবিক যে প্রাচীনেরা যখন তাঁর পালের প্রতি মমতা দেখান তখন যিহোবা সত্যিই খুশি হন। (প্রেরিত ২০:২৮, ২৯) এই প্রাচীনদের বা “শাসনকর্ত্তৃগণ” সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী কী বলে তা লক্ষ্য করুন: “যেমন বাত্যা হইতে আচ্ছাদন, ও ঝটিকা হইতে অন্তরাল, যেমন শুষ্ক স্থানে জলস্রোত ও শ্রান্তিজনক ভূমিতে কোন প্রকাণ্ড শৈলের ছায়া, এক জন মনুষ্য তদ্রূপ হইবেন।” (যিশাইয় ৩২:১, ২) হ্যাঁ, তারা যিহোবার মেষদেরকে রক্ষা করার, সতেজ করার এবং সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য আছেন। যে প্রাচীনেরা দয়ালুভাবে পালকে পালন করেন তারা ঈশ্বর তাদের কাছ থেকে যা আশা করেন তাই করার চেষ্টা করছেন।
৩ এই প্রাচীনদেরকেই বাইবেলে ‘মনুষ্যদিগের নানা বর’ বলা হয়েছে। (ইফিষীয় ৪:৮) আপনি যখন কাউকে উপহার দেওয়ার কথা চিন্তা করেন তখন এমন কিছু দেওয়ার কথা ভাবেন যেটা তার কাজে আসবে বা তাকে খুশি করবে। একজন প্রাচীনকে তখনই বর হিসেবে ধরা যায় যখন তিনি পালকে প্রয়োজনীয় সাহায্য যোগান এবং তাদের সুখের জন্য কাজ করেন। তিনি কীভাবে এটা করতে পারেন? এর উত্তর ইফিষীয় ৪:৭-১৬ পদে লেখা পৌলের কথায় পাওয়া যায় যা মেষদের জন্য যিহোবার প্রেমপূর্ণ চিন্তাকে প্রকাশ করে।
‘মনুষ্যদিগের নানা বর’—কোথা থেকে?
৪. গীতসংহিতা ৬৮:১৮ পদের পরিপূর্ণতাস্বরূপ কীভাবে যিহোবা ‘ঊদ্ধের্ব উঠেছিলেন’ এবং কারা “মনুষ্যদের মধ্যে দান” ছিলেন?
৪ পৌল যখন ‘মনুষ্যদিগের নানা বর’ কথাটা ব্যবহার করেন তখন তিনি রাজা দায়ূদের কথাকে উদ্ধৃত করেছিলেন যিনি যিহোবার বিষয়ে বলেছিলেন: “তুমি ঊদ্ধের্ব উঠিয়াছ, বন্দিগণকে বন্দি করিয়াছ, মনুষ্যদের মধ্যে দান গ্রহণ করিয়াছ।” (গীতসংহিতা ৬৮:১৮) ইস্রায়েলীয়রা প্রতিজ্ঞাত দেশে কয়েক বছর থাকার পর, যিহোবা রূপক অর্থে সীনয় পর্বতকে “ঊদ্ধের্ব” উঠিয়েছিলেন এবং যিরূশালেমকে ইস্রায়েল রাজ্যের রাজধানী ও দায়ূদকে এর রাজা বানিয়েছিলেন। কিন্তু কারা “মনুষ্যদের মধ্যে দান” ছিলেন? তারা ছিলেন সেই পুরুষেরা যাদেরকে দেশ দখল করার সময় বন্দি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এই বন্দিদের কয়েকজন পরে সমাগম তাম্বুর কাজে সাহায্য করার জন্য লেবীয়দের সঙ্গে ছিলেন।—ইষ্রা ৮:২০.
৫. (ক) কীভাবে পৌল দেখান যে গীতসংহিতা ৬৮:১৮ পদ খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে পূর্ণ হয়েছে? (খ) কীভাবে যীশু ‘ঊদ্ধের্ব উঠেছিলেন’?
৫ ইফিষীয়দের কাছে লেখা তার পত্রে পৌল বলেন যে গীতরচকের কথাগুলো খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে বড় আকারে পূর্ণ হয়। গীতসংহিতা ৬৮:১৮ পদকে একটু ঘুরিয়ে পৌল লেখেন: “খ্রীষ্টের দানের পরিমাণ অনুসারে আমাদের প্রত্যেক জনকে অনুগ্রহ দত্ত হইয়াছে। এই জন্য উক্ত আছে, ‘তিনি ঊদ্ধের্ব উঠিয়া বন্দিগণকে বন্দি করিলেন, মনুষ্যদিগকে নান বর দান করিলেন।’” (ইফিষীয় ৪:৭, ৮) এখানে পৌল দেখান যে এই গীত ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসেবে যীশুর বেলায় খাটে। যীশু বিশ্বস্ত থেকে “জগৎকে জয়” করেছিলেন। (যোহন ১৬:৩৩) তিনি মৃত্যু ও শয়তানের ওপরও জয় লাভ করেন কারণ ঈশ্বর তাঁকে মৃতদের মধ্য থেকে পুনরুত্থিত করেছিলেন। (প্রেরিত ২:২৪; ইব্রীয় ২:১৪) সা.কা. ৩৩ সালে পুনরুত্থিত যীশু “সকল স্বর্গের ঊদ্ধের্ব” ওঠেন অর্থাৎ অন্য সব স্বর্গীয় প্রাণীদের চেয়ে উঁচু মর্যাদা পান। (ইফিষীয় ৪:৯, ১০; ফিলিপীয় ২:৯-১১) বিজয়ী হিসেবে যীশু শত্রুদের মধ্য থেকে “বন্দিগণকে” বন্দি করেছিলেন। কীভাবে?
৬. সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমী থেকে শুরু করে কীভাবে স্বর্গে আরোহিত যীশু শয়তানের গৃহে লুট করতে আরম্ভ করেছিলেন এবং ‘বন্দিগণকে’ নিয়ে তিনি কী করেছিলেন?
৬ পৃথিবীতে থাকাকালে যীশু ভূতে পাওয়া লোকেদের সুস্থ করে শয়তানের ওপর তাঁর ক্ষমতাকে দেখিয়েছিলেন। এটা এমন ছিল যেন যীশু শয়তানের ঘরে ঢুকে তাকে বাঁধেন ও তার ঘরের জিনিসপত্র লুট করেন। (মথি ১২:২২-২৯) শুধু একটু ভাবুন, যখন যীশু পুনরুত্থিত হয়েছিলেন এবং “স্বর্গে ও পৃথিবীতে সমস্ত কর্ত্তৃত্ব” পেয়েছিলেন তখন তিনি কত কিছুই না লুট করতে পারতেন! (মথি ২৮:১৮) সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিন থেকে শুরু করে স্বর্গে আরোহিত যীশু ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসেবে ‘বন্দিগণকে বন্দি করে’ শয়তানের গৃহ লুট করতে আরম্ভ করেন। এই বন্দিগণ হলেন সেই মানুষেরা যারা দীর্ঘ সময় ধরে পাপ ও মৃত্যুর দাসত্বে এবং শয়তানের অধীনে ছিলেন। এই ‘বন্দিগণ’ স্বেচ্ছায় “খ্রীষ্টের দাসের ন্যায় প্রাণের সহিত ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন” করেছিলেন। (ইফিষীয় ৬:৬) আর এইজন্য যীশু তাদেরকে শয়তানের কবল থেকে মুক্ত করেছিলেন আর যিহোবার হয়ে তাদেরকে ‘মনুষ্যদিগের নানা বর’ হিসেবে মণ্ডলীগুলোকে দান করেছিলেন। শয়তানের চোখের সামনে দিয়ে যখন তাদের কেড়ে নেওয়া হয়েছিল তখন কিছু করতে না পারায় তার প্রচণ্ড রাগের কথা ভেবে দেখুন!
৭. (ক) ‘মনুষ্যদিগের নানা বরেরা’ মণ্ডলীতে কোন্ কোন্ পদে সেবা করেন? (খ) প্রাচীন হিসেবে যারা সেবা করেন এমন প্রত্যেক পুরুষকে যিহোবা কোন্ সুযোগ দিয়েছেন?
৭ আজকে কি আমরা মণ্ডলীতে এই ‘মনুষ্যদিগের নানা বরদের’ দেখতে পাই? অবশ্যই! সারা পৃথিবীতে ঈশ্বরের লোকেদের ৮৭,০০০ এরও বেশি মণ্ডলীতে আমরা তাদের প্রাচীন হিসেবে সেবা করতে দেখি আর তারা ‘সুসমাচার-প্রচারক, পালক ও শিক্ষাগুরু’ হিসেবেও কঠোর পরিশ্রম করে চলেছেন। (ইফিষীয় ৪:১১) তাদের দিয়ে পালের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করাতে পারলে শয়তানের খুশি আর ধরবে না। কিন্তু এটা হয় না কারণ খ্রীষ্টের মাধ্যমে ঈশ্বর স্বয়ং তাদেরকে মণ্ডলীতে নিয়োগ করেছেন। মণ্ডলীর ভালর জন্য যিহোবা এই ব্যক্তিদের দিয়েছেন আর মেষদের দেখাশোনা করার যে দায়িত্ব তাদের দেওয়া হয়েছে তার জন্য তাদেরকে তাঁর কাছে নিকাশ দিতে হবে। (ইব্রীয় ১৩:১৭) আপনি যদি একজন প্রাচীন হন, তাহলে আপনার ভাইদের কাছে নিজেকে বর বা আশীর্বাদ প্রমাণ করার জন্য যিহোবা আপনাকে এক চমৎকার সুযোগ দিয়েছেন। আপনি চারটে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে তা করতে পারেন।
যখন ‘পুনর্বিন্যাস’ দরকার
৮. কোন্ কোন্ দিক দিয়ে আমাদের সবার মাঝে মাঝে পুনর্বিন্যাসের দরকার?
৮ প্রথমত, পৌল বলেন যে “পবিত্রগণকে পরিপক্ব [পুনর্বিন্যস্ত] করিবার নিমিত্ত” ‘মনুষ্যদিগের নানা বর’ দেওয়া হয়েছে। (ইফিষীয় ৪:১২) যে গ্রিক বিশেষ্য পদকে ‘পুনর্বিন্যাস’ হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে তা কোন কিছুকে “ঠিক করে সাজিয়ে” নেওয়াকে বোঝায়। অসিদ্ধ মানুষ হওয়ায় আমাদের কোন না কোন সময় পুনর্বিন্যস্ত হওয়ার দরকার হয় অর্থাৎ ঈশ্বরের চিন্তাভাবনা এবং ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে আমাদের চিন্তাভাবনা, মনোভাব বা ব্যবহারকে “ঠিক করে সাজিয়ে” নিতে হয়। যিহোবা ভালবেসে ‘মনুষ্যদিগের নানা বর’ দিয়েছেন যাতে তারা আমাদের প্রয়োজনীয় পরিবর্তনগুলো করতে সাহায্য করেন। তারা এটা কীভাবে করেন?
৯. ভুল করেছেন এমন একজন মেষকে কীভাবে একজন প্রাচীন সাহায্য করতে পারেন?
৯ কখনও কখনও একজন প্রাচীনকে হয়তো এমন একজন মেষকে সাহায্য করার জন্য ডাকা হতে পারে যিনি ভুল করেছেন, হয়তো কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিনি ‘অপরাধ করে ফেলেছেন।’ কীভাবে একজন প্রাচীন তাকে সাহায্য করতে পারেন? গালাতীয় ৬:১ পদ বলে, “সেই প্রকার ব্যক্তিকে মৃদুতার আত্মায় সুস্থ কর।” অতএব, অপরাধীকে পরামর্শ দেওয়ার সময় প্রাচীন তাকে বকাঝকা করবেন না বা তাকে খারাপ কথাও বলবেন না। পরামর্শ যেন “ভয়” দেখানোর মতো না হয়, বরং উৎসাহ যোগায়। (২ করিন্থীয় ১০:৯; ইয়োব ৩৩:৭ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।) অপরাধী ব্যক্তি হয়তো ইতিমধ্যেই তার কাজের জন্য লজ্জিত তাই একজন প্রেমময় পালক তার মন ভেঙে দেবে এমন কিছু করা এড়িয়ে চলবেন। যখন পরামর্শ, এমনকি কঠিন তিরস্কারের পিছনে ভালবাসা থাকে এবং তা কোমলভাবে দেওয়া হয়, তখন এটা হয়তো অপরাধীর চিন্তাভাবনা বা ব্যবহারকে নতুন করে সাজাবে আর এভাবে তাকে আবার ফিরিয়ে আনবে।—২ তীমথিয় ৪:২.
১০. অন্যদের পুনর্বিন্যাস করা বলতে কী বোঝায়?
১০ আমাদের পুনর্বিন্যাসের জন্য ‘মনুষ্যদিগের নানা বর’ দেওয়ার পিছনে যিহোবার ইচ্ছা ছিল যে প্রাচীনেরা আধ্যাত্মিকভাবে সতেজক হবেন এবং এমন আদর্শ হবেন যেন তাঁর লোকেরা তাদের অনুকরণ করতে পারেন। (১ করিন্থীয় ১৬:১৭, ১৮; ফিলিপীয় ৩:১৭) অন্যদের পুনর্বিন্যাস করার মানে শুধু দোষীদের সংশোধন করাই নয় কিন্তু বিশ্বস্ত ব্যক্তিদেরও সাহায্য করা যেন তারা ঠিক পথে চলতে থাকেন।a আজকে আমাদের চারিদিকে অনেক অনেক সমস্যা রয়েছে যা মনকে ভেঙে দেয় আর তাই আমাদের অনেকেরই স্থির থাকার জন্য উৎসাহের দরকার। কারও কারও হয়তো ঈশ্বরের চিন্তাধারার সঙ্গে তাদের নিজেদের চিন্তাভাবনাকে মেলানোর জন্য কোমল সাহায্যের দরকার হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কিছু বিশ্বস্ত খ্রীষ্টান হীনমন্যতায় ভোগেন বা সবসময় মনে করেন যে তারা যোগ্য নন আর এই অনুভূতি তাদের কষ্ট দেয়। এইরকম ‘ক্ষীণসাহস’ ব্যক্তিরা হয়তো মনে করতে পারেন যে যিহোবা তাদের কখনও ভালবাসবেন না আর তারা যদি ঈশ্বরকে সেবা করার জন্য তাদের যথাসাধ্যও করেন, তিনি তাতে সন্তুষ্ট হবেন না। (১ থিষলনীকীয় ৫:১৪) কিন্তু এইরকম চিন্তা ঈশ্বরের তাঁর লোকেদের জন্য যে সহানুভূতি আছে তার সঙ্গে মেলে না।
১১. যারা নিজেদের অযোগ্য মনে করে কষ্ট পান তাদের সাহায্য করার জন্য প্রাচীনেরা কী করতে পারেন?
১১ প্রাচীনেরা, এইরকম ব্যক্তিদের সাহায্য করার জন্য আপনারা কী করতে পারেন? দয়ার সঙ্গে বাইবেল থেকে তাদের দেখান যে যিহোবা তাঁর প্রত্যেক দাসের জন্য চিন্তা করেন আর আশ্বাস দিন যে বাইবেলের এই পদ তাদের জন্য লেখা রয়েছে। (লূক ১২:৬, ৭, ২৪) তাদের বোঝান যে যিহোবা তাঁকে সেবা করার জন্য তাদের “আকর্ষণ” করেছেন, তাই এতে কোন ভুল নেই যে তিনি তাদের মূল্যবান মনে করেন। (যোহন ৬:৪৪) তাদের আশ্বাস দিন যে তারা একা নন—যিহোবার অনেক বিশ্বস্ত দাসেদেরও এমন অনুভূতি ছিল। একবার ভাববাদী এলিয় এতই হতাশ হয়ে পড়েছিলেন যে তিনি মরতে পর্যন্ত চেয়েছিলেন। (১ রাজাবলি ১৯:১-৪) প্রথম শতাব্দীর কিছু অভিষিক্ত খ্রীষ্টান আপনা থেকেই নিজেদের “দোষী” ভেবেছিলেন। (১ যোহন ৩:২০) বাইবেলের সময়ের বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা “আমাদের ন্যায় সুখদুঃখভোগী মনুষ্য” ছিলেন তা জানা আমাদের সান্ত্বনা দেয়। (যাকোব ৫:১৭) হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে আপনি প্রহরীদুর্গ ও সচেতেন থাক! পত্রিকা থেকে উৎসাহজনক প্রবন্ধগুলো নিয়েও আলোচনা করতে পারেন। এইরকম ব্যক্তিদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনার জন্য আপনার ভালবাসাপূর্ণ চেষ্টাকে ঈশ্বর ভুলে যাবেন না যিনি আপনাকে ‘মনুষ্যদিগের নানা বর’ হিসেবে নিয়োগ করেছেন।—ইব্রীয় ৬:১০.
পালকে “গাঁথিয়া তোলা”
১২. ‘খ্রীষ্টের দেহকে গাঁথিয়া তোলা’ কথার মানে কী এবং পালকে গেঁথে তোলার চাবিটা কী?
১২ দ্বিতীয়ত, ‘খ্রীষ্টের দেহকে গাঁথিয়া তোলার’ জন্য ‘মনুষ্যদিগের নানা বর’ দেওয়া হয়েছে। (ইফিষীয় ৪:১২) এখানে পৌল অলংকারপূর্ণ ভাষা ব্যবহার করেন। “গাঁথিয়া তোলা” কিছু নির্মাণ করার কথা মনে করিয়ে দেয় আর ‘খ্রীষ্টের দেহ’ বলতে লোকেদের অর্থাৎ অভিষিক্ত খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর সদস্যদের বোঝায়। (১ করিন্থীয় ১২:২৭; ইফিষীয় ৫:২৩, ২৯, ৩০) প্রাচীনদের তাদের ভাইদেরকে আধ্যাত্মিকভাবে মজবুত হয়ে গড়ে ওঠার জন্য সাহায্য করা উচিত। তাদের উদ্দেশ্য পালকে ‘উৎপাটন করা নয় কিন্তু গাঁথিয়া তোলা।’ (২ করিন্থীয় ১০:৮) পালকে গেঁথে তোলার চাবি হল প্রেম কারণ “প্রেমই গাঁথিয়া তুলে।”—১ করিন্থীয় ৮:১.
১৩. সহানুভূতি দেখানোর মানে কী এবং প্রাচীনদের ক্ষেত্রে সহানুভূতি দেখানো জরুরি কেন?
১৩ প্রেমের একটা বৈশিষ্ট্য হল সহানুভূতি দেখানো, যা প্রাচীনদের পালকে গেঁথে তুলতে সাহায্য করে। সহানুভূতি দেখানোর মানে অন্যের অবস্থাকে অনুভব করা অর্থাৎ তাদের ভাবনা ও অনুভূতির সঙ্গে একাত্ম হওয়া, তাদের ক্ষমতাকে মনে রাখা। (১ পিতর ৩:৮) প্রাচীনদের সহানুভূতি থাকা কেন জরুরি? সবচেয়ে বড় কারণ হল যিহোবা যিনি ‘মনুষ্যদিগকে নানা বর’ দেন তিনি সহানুভূতিশীল ঈশ্বর। তাঁর দাসেরা যখন কষ্টের মধ্যে থাকে বা দুঃখ পায়, তখন তিনি তাদের অবস্থা অনুভব করেন। (যাত্রাপুস্তক ৩:৭; যিশাইয় ৬৩:৯) তিনি তাদের ক্ষমতার কথা মনে রাখেন। (গীতসংহিতা ১০৩:১৪) তাহলে কীভাবে প্রাচীনেরা সহানুভূতি দেখাতে পারেন?
১৪. কী কী উপায়ে প্রাচীনেরা অন্যদের সহানুভূতি দেখাতে পারেন?
১৪ নিরুৎসাহিত কোন ব্যক্তি যখন তাদের কাছে আসেন, তারা তাদের কথা শোনেন এবং তাদের অনুভূতিকে বোঝেন। তারা তাদের ভাইদের অবস্থা, ব্যক্তিত্ব এবং পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করেন। এরপর যখন প্রাচীনেরা বাইবেল থেকে গঠনমূলক সাহায্য দেন তখন মেষেরা তা সহজেই মেনে নেন কারণ এমন পালকেরা তাদের সাহায্য করছেন যারা সত্যিই তাদের বোঝেন এবং তাদের জন্য চিন্তা করেন। (হিতোপদেশ ১৬:২৩) অন্যদের ক্ষমতা এবং সেই কারণে তাদের মধ্যে যে অনুভূতিগুলো আসে তা বুঝতে সহানুভূতি প্রাচীনদের সাহায্য করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কিছু বিবেকবান খ্রীষ্টানেরা হয়তো নিজেদের অপরাধী ভাবতে পারেন কারণ তারা বার্ধক্য বা অসুস্থতার জন্য ঈশ্বরের সেবায় বেশি সময় দিতে পারেন না। আবার কয়েকজনকে হয়তো তাদের প্রচার কাজ আরও বাড়ানোর জন্য উৎসাহ দেওয়ার দরকার হতে পারে। (ইব্রীয় ৫:১২; ৬:১) সহানুভূতি প্রাচীনদের “মনোহর বাক্য” খুঁজতে উৎসাহ যোগাবে যা অন্যকে গড়ে তোলে। (উপদেশক ১২:১০) যিহোবার মেষেরা যখন গড়ে ওঠেন এবং উৎসাহিত হন তখন ঈশ্বরের জন্য তাদের ভালবাসা তাদেরকে তাঁর সেবায় যতটুকু তারা পারেন তা করতে প্রেরণা দেবে!
একতাকে বাড়ান এমন মানুষেরা
১৫. ‘বিশ্বাসের ঐক্য’ কথার মানে কী?
১৫ তৃতীয়ত, ‘মনুষ্যদিগের নানা বর’ দেওয়া হয়েছে যাতে “আমরা সকলে ঈশ্বরের পুত্ত্র বিষয়ক বিশ্বাসের ও তত্ত্বজ্ঞানের ঐক্য পর্য্যন্ত” পৌঁছাতে পারি। (ইফিষীয় ৪:১৩) ‘বিশ্বাসের ঐক্য’ কথাটা একতাকে বোঝায়, শুধু বিশ্বাসেই নয় কিন্তু বিশ্বাসীদের মধ্যে একতাকেও বোঝায়। এটা হল আরেকটা কারণ যে কেন ঈশ্বর তাঁর লোকেদের মধ্যে একতা বাড়িয়ে তুলতে ‘মনুষ্যদিগের নানা বর’ দিয়েছেন। কীভাবে তারা এটা করেন?
১৬. নিজেদের মধ্যে একতা বজায় রাখা প্রাচীনদের জন্য কেন জরুরি?
১৬ এটা করতে গিয়ে প্রথমে তাদের নিজেদের মধ্যে একতা বজায় রাখতে হবে। পালকদের মধ্যে যদি একতা না থাকে, তবে মেষেরা হয়ত অবহেলিত হতে পারে। যে মূল্যবান সময় পালকে দেখাশোনা করার কাজে দেওয়া যেত তা হয়তো ছোটখাট বিষয়গুলো নিয়ে অনেক সময় ধরে সভা ও তর্কবিতর্কে অযথাই নষ্ট হতে পারে। (১ তীমথিয় ২:৮) প্রাচীনেরা স্বাভাবিকভাবেই তাদের আলোচনায় সব বিষয়ে সবাই একমত হতে পারেন না কারণ তাদের প্রত্যেকের ব্যক্তিত্ব আলাদা, যা কারও সঙ্গে কারওটা মেলে না। একতার মানে এই নয় যে তারা খোলাখুলি আলোচনায় ভারসাম্য বজায় রেখে আলাদা আলাদা মতামত বা নিজেদের মত জানাতে পারবেন না। প্রাচীনেরা আগেই কোনরকম মন্তব্য না করে এবং একে অন্যের মতামত শ্রদ্ধার সঙ্গে শুনে তাদের একতা বজায় রাখেন। যতক্ষণ পর্যন্ত না বাইবেলের নীতির কোনরকম হেরফের হচ্ছে, সব প্রাচীনদের একে অন্যের মতকে মেনে নেওয়া ও প্রাচীন গোষ্ঠীর চূড়ান্ত সিদ্ধান্তকে সমর্থন করা উচিত। মেনে নেওয়ার ইচ্ছা দেখায় যে তারা “যে জ্ঞান উপর হইতে আইসে” তার দ্বারা চলছেন যা “শান্তিপ্রিয়, ক্ষান্ত [যুক্তিসংগত]।”—যাকোব ৩:১৭, ১৮.
১৭. মণ্ডলীতে একতা বজায় রাখার জন্য প্রাচীনেরা কীভাবে সাহায্য করতে পারেন?
১৭ প্রাচীনেরা মণ্ডলীতে একতা বাড়ানোর জন্যও কাজ করেন। যখন একতা নষ্ট করার মতো বিষয়গুলো, যেমন ক্ষতিকর পরচর্চা, কারও উদ্দেশ্যকে সন্দেহ করা বা ঝগড়াটে মনোভাব শান্তি নষ্ট করতে বসে তখন তারা সঙ্গে সঙ্গেই সাহায্যকারী পরামর্শ দেন। (ফিলিপীয় ২:২, ৩) উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, প্রাচীনেরা সেইসব ব্যক্তিদেরকে চিনে রাখতে পারেন যারা অতিরিক্ত সমালোচনা করেন বা অন্যের ব্যাপারে অযথা নাক গলাতে পছন্দ করেন। (১ তীমথিয় ৫:১৩; ১ পিতর ৪:১৫) প্রাচীনেরা এই ব্যক্তিদের বোঝাবেন যে এইরকম কাজ ঈশ্বর আমাদের যে শিক্ষা দেন তার বিপরীত আর প্রত্যেকের “নিজ নিজ ভার বহন” করা উচিত। (গালাতীয় ৬:৫, ৭; ১ থিষলনীকীয় ৪:৯-১২) শাস্ত্র থেকে তারা বুঝিয়ে দেবেন যে অনেক বিষয় যিহোবা আমাদের বিবেকের ওপর ছেড়ে দেন আর তাই আমাদের কারও এইসব ব্যাপারে অন্যের বিচার করা উচিত না। (মথি ৭:১, ২; যাকোব ৪:১০-১২) একতা বজায় রেখে একসঙ্গে সেবা করার জন্য মণ্ডলীতে একে অন্যের প্রতি আস্থা ও শ্রদ্ধা থাকা দরকার। প্রয়োজনের সময় শাস্ত্র থেকে পরামর্শ দিয়ে ‘মনুষ্যদিগের নানা বরেরা’ আমাদের মধ্যে শান্তি ও একতা রক্ষা করতে সাহায্য করেন।—রোমীয় ১৪:১৯.
পালকে রক্ষা করা
১৮, ১৯. (ক) ‘মনুষ্যদিগের নানা বরেরা’ আমাদের কীসের থেকে রক্ষা করেন? (খ) আর কোন্ বিপদ থেকে মেষদের রক্ষা করা দরকার এবং মেষদের রক্ষা করার জন্য প্রাচীনেরা কী করেন?
১৮ চতুর্থত, যিহোবা ‘মনুষ্যদের নানা বর’ দেন যাতে তারা আমাদেরকে ‘মনুষ্যদের ঠকামি, ধূর্ত্ততা, ভ্রান্তির চাতুরী . . . এবং যে সে শিক্ষাবায়ুর’ দ্বারা প্রভাবিত হওয়া থেকে রক্ষা করেন। (ইফিষীয় ৪:১৪) ‘ঠকামি’-র জন্য যে মূল শব্দ রয়েছে তার মানে “জুয়ার ছক্কা নিয়ে প্রতারণা” বা “ছক্কাকে নিজের সুবিধার জন্য ব্যবহার করায় দক্ষ।” এটা কি আমাদের মনে করিয়ে দেয় না যে ধর্মভ্রষ্টরা কতটা চালাক? সত্য খ্রীষ্টানদেরকে তাদের বিশ্বাস থেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় ধূর্ত যুক্তি ব্যবহার করে তারা শাস্ত্রপদগুলোকে ইচ্ছাখুশি মতো ব্যবহার করেন। প্রাচীনদের এইরকম ‘দূরন্ত কেন্দুয়াদের’ সম্বন্ধে সাবধান হতে হবে!—প্রেরিত ২০:২৯, ৩০.
১৯ যিহোবার মেষদেরকে অন্য বিপদগুলো থেকেও রক্ষা করা দরকার। প্রাচীনকালের মেষপালক দায়ূদ সাহসের সঙ্গে তার পিতার মেষপালকে শিকারি পশুদের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন। (১ শমূয়েল ১৭:৩৪-৩৬) আজকেও এমন পরিস্থিতি আসতে পারে যখন খ্রীষ্টান পালকদের পালকে সেইসব ব্যক্তিদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সাহস দেখাতে হতে পারে যারা যিহোবার মেষদের ভুল পথে নিয়ে যায় বা তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে, বিশেষ করে দুর্বল ব্যক্তিদের। প্রাচীনেরা সেইসব স্বেচ্ছাচারী পাপীদের মণ্ডলী থেকে বের করে দিতে দেরি করবেন না যারা খারাপ কাজ করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে ঠকায়, প্রতারণা করে এবং খারাপ ফন্দি আঁটে।b—১ করিন্থীয় ৫:৯-১৩. গীতসংহিতা ১০১:৭ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।
২০. ‘মনুষ্যদিগের নানা বরদের’ যত্নের অধীনে কেন আমরা নিজেদেরকে নিরাপদ ভাবতে পারি?
২০ ‘মনুষ্যদিগের নানা বরের’ জন্য আমরা কতই না কৃতজ্ঞ! তাদের প্রেমপূর্ণ যত্নের অধীনে আমরা নিজেদের নিরাপদ ভাবতে পারি কারণ তারা আমাদের কোমলভাবে পুনর্বিন্যাস করেন, প্রেমের সঙ্গে গেঁথে তোলেন, আমাদের মধ্যে একতা বজায় রাখতে সাহায্য করেন এবং সাহসের সঙ্গে আমাদের রক্ষা করেন। কিন্তু ‘মনুষ্যদিগের নানা বরেরা’ মণ্ডলীতে তাদের কাজকে কীভাবে দেখবেন? আর আমরা কীভাবে দেখাতে পারি যে আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ? এই প্রশ্ন দুটো পরের প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে।
[পাদটীকাগুলো]
a যে ক্রিয়াপদকে ‘পুনর্বিন্যাস’ হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে গ্রিক সেপ্টুয়াজিন্ট সংস্করণে, গীতসংহিতা ১৭:৫ পদে সেই একই ক্রিয়াপদ ব্যবহার করা হয়েছিল, যেখানে বিশ্বস্ত দায়ূদ প্রার্থনা করেছিলেন যে যিহোবা যেন তার পদক্ষেপকে তাঁর পথে স্থির করেন।
b উদাহরণ হিসেবে ১৯৭৯ সালের ১৫ই নভেম্বর সংখ্যার প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) ৩১-২ পৃষ্ঠায় “পাঠকদের থেকে প্রশ্নসকল” এবং ১৯৯৭ সালের ১লা জানুয়ারি সংখ্যার ২৬-৯ পৃষ্ঠায় দেওয়া “আসুন আমরা দুষ্টতাকে ঘৃণা করি” প্রবন্ধ দুটো দেখুন।
আপনি কি মনে করতে পারেন?
◻ কারা ‘মনুষ্যদিগের নানা বর’ এবং কেন ঈশ্বর খ্রীষ্টের মাধ্যমে তাদের মণ্ডলীতে নিয়োগ করেছেন?
◻ পালকে পুনর্বিন্যাস করার জন্য কীভাবে প্রাচীনেরা তাদের দায়িত্ব পালন করেন?
◻ প্রাচীনেরা তাদের খ্রীষ্টান ভাইবোনদের গেঁথে তোলার জন্য কী করতে পারেন?
◻ প্রাচীনেরা কীভাবে মণ্ডলীতে একতা বজায় রাখতে পারেন?
[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]
হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তিদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য সহানুভূতি প্রাচীনদের সাহায্য করে
[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]
প্রাচীনদের মধ্যে একতা থাকলে মণ্ডলীতে একতা থাকে