অন্যদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার পরামর্শ
আমাদের সৃষ্টিকর্তা আমাদের জানান যে, কীভাবে আমরা অন্যদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে পারি, হোক তা বাড়িতে, কাজের জায়গায় অথবা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে। তাঁর বলা কিছু ভালো পরামর্শ বিবেচনা করুন, যেগুলো কাজে লাগিয়ে অনেকে সফল হয়েছে।
ক্ষমাশীল হোন
“এমনকী কারো বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ করার কারণও থাকে, তবুও সবসময় . . . পরস্পরকে পুরোপুরিভাবে ক্ষমা করো।”—কলসীয় ৩:১৩.
আমরা সবাই ভুল করি। আমরা হয়তো অন্যদের দুঃখ দিই অথবা অন্যেরা হয়তো আমাদের দুঃখ দেয়। তাই, আমাদের ক্ষমা করতে হবে আর আমরাও চাই যেন অন্যেরা আমাদের ক্ষমা করুক। আমরা যখন ক্ষমা করি, তখন আমরা সেই ব্যক্তির প্রতি বিরক্তির মনোভাব পুষে রাখি না, যে আমাদের দুঃখ দেয়। আমরা “মন্দের পরিশোধে কারো মন্দ” করি না আর আমরা সবসময় সেই ব্যক্তির ভুলগুলো অথবা দুর্বলতাগুলো তুলে ধরি না। (রোমীয় ১২:১৭) কিন্তু, আমরা যদি কারোর কথায় গভীরভাবে আঘাত পাই আর যা ঘটেছিল, তা যদি ভুলতে না পারি, তা হলে? এইরকম ক্ষেত্রে, আমাদের বিষয়টা নিয়ে সম্মানের সাথে সেই ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলা উচিত। আমাদের লক্ষ হওয়া উচিত শান্তি স্থাপন করা, তর্কে জেতা নয়।—রোমীয় ১২:১৮.
নম্র হোন এবং সম্মান দেখান
“নম্রতা সহকারে অন্যকে নিজেদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করো।”—ফিলিপীয় ২:৩.
আমরা যদি নম্র হই আর অন্যদের প্রতি সম্মান দেখাই, তা হলে তারা আমাদের সঙ্গে থাকতে পছন্দ করবে। তারা বুঝতে পারবে যে, আমরা তাদের প্রতি দয়া ও বিবেচনা দেখাব আর আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের আঘাত দেব না। কিন্তু, আমরা যদি নিজেদের অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করি অথবা আমরা যদি সবসময় আমাদের মতো করে কাজ করার জন্য জোর করি, তা হলে আমরা বিভেদ ও চাপ সৃষ্টি করব। এর ফলে, লোকেরা আমাদের এড়িয়ে চলবে আর আমরা কেবল কয়েক জনের সঙ্গেই বন্ধুত্ব করতে পারব।
পক্ষপাতহীন হোন
“ঈশ্বর পক্ষপাতিত্ব করেন না, কিন্তু প্রত্যেক জাতির মধ্য থেকে যে-কেউ তাঁকে ভয় করে এবং সঠিক কাজ করে, তাকে ঈশ্বর গ্রহণ করেন।”—প্রেরিত ১০:৩৪, ৩৫.
আমাদের সৃষ্টিকর্তা একজন ব্যক্তির জাতি, ভাষা, সামাজিক পদমর্যাদা অথবা বর্ণের ভিত্তিতে তাকে অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মনে করেন না। “তিনি এক ব্যক্তি থেকে সমস্ত জাতির লোককে তৈরি করেছেন।” (প্রেরিত ১৭:২৬) তাই, এক অর্থে আমরা সবাই ভাই ও বোন। আমরা যখন সবার সঙ্গে মর্যাদাপূর্ণ ও সদয়ভাবে আচরণ করি, তখন আমরা তাদের খুশি করি, আমরা নিজেরা আরও বেশি খুশি হই আর আমাদের সৃষ্টিকর্তাকে খুশি করি।
মৃদুশীল হোন
‘তোমরা মৃদুতাকে কাপড়ের মতো পরিধান করো।’—কলসীয় ৩:১২.
আমরা যদি মৃদুশীল হই বা শান্তভাব বজায় রাখি, তা হলে অন্যেরা আমাদের সঙ্গে থাকতে স্বচ্ছন্দ বোধ করবে। তারা আমাদের সঙ্গে খোলাখুলিভাবে কথা বলবে আর এমনকী আমাদের সংশোধন করতেও দ্বিধা বোধ করবে না কারণ তারা জানে যে, আমরা খারাপ মনে করব না এবং শান্ত থাকব। কেউ যদি আমাদের উপর রেগে যায়, তা হলে শান্তভাবে কথা বলা সেই ব্যক্তিকেও শান্ত করতে পারে। হিতোপদেশ ১৫:১ পদ বলে, “কোমল উত্তর ক্রোধ নিবারণ করে, কিন্তু কটুবাক্য কোপ উত্তেজিত করে।”
উদার ও কৃতজ্ঞ হোন
“নেওয়ার চেয়ে বরং দেওয়ার মধ্যে আরও বেশি সুখ।”—প্রেরিত ২০:৩৫.
বর্তমানে অনেকে লোভী আর কেবল নিজেদের বিষয়ে চিন্তা করে। কিন্তু, সেই ব্যক্তিরা প্রকৃতই সুখী হয়, যারা উদার। (লূক ৬:৩৮) তারা আনন্দিত কারণ তারা বস্তুগত বিষয়ের চেয়ে লোকদের ভালোবাসে। কেউ যখন তাদের প্রতি উদারতা দেখায়, তখন এই একই ভালোবাসা তাদের কৃতজ্ঞ হতে এবং উপলব্ধি প্রকাশ করতে অনুপ্রাণিত করে। (কলসীয় ৩:১৫) একটু চিন্তা করুন, ‘আমি কার সঙ্গে থাকতে পছন্দ করি? কৃপণ ব্যক্তির সঙ্গে, না কি উদার ব্যক্তির সঙ্গে? যে উপলব্ধি বোধ করে, না কি যে করে না?’ তাই, আপনি নিজেই একজন উদার ব্যক্তি হোন আর অন্যদের প্রতি উপলব্ধি বোধ গড়ে তুলুন।—মথি ৭:১২.