মন থেকে ক্ষমা করুন
“আমার স্বর্গীয় পিতাও তোমাদের প্রতি এইরূপ করিবেন, যদি তোমরা প্রতিজন অন্তঃকরণের সহিত আপন আপন ভ্রাতাকে ক্ষমা না কর।”—মথি ১৮:৩৫.
১, ২. (ক) কীভাবে একজন পাপিষ্ঠা স্ত্রীলোক যীশুর জন্য উপলব্ধি দেখিয়েছিল? (খ) উত্তরে যীশু কোন্ বিষয় নিয়ে কথা বলেছিলেন?
সম্ভবত সে একজন বেশ্যা ছিল। তাকে নিশ্চয়ই আপনি কোন ধার্মিক ব্যক্তির বাড়িতে আশা করবেন না। তাকে সেখানে দেখেই যদি কেউ অবাক হন, তাহলে সেখানে গিয়ে সে যা করেছিল তাতে আরও বেশি অবাক হওয়ার কথা। সে পৃথিবীর সর্বোচ্চ নীতিবান ব্যক্তির কাছে গিয়ে তাঁর কাজের জন্য উপলব্ধি দেখায়, চোখের জলে তাঁর পা ভেজায় ও মাথার চুল দিয়ে তা মুছে দেয়।
২ সেই ব্যক্তি ছিলেন যীশু আর তিনি সেই স্ত্রীলোককে ঘৃণা করেননি যদিও “সেই নগরে” লোকেরা তাকে “এক পাপিষ্ঠা” বলে জানত। ওই ঘরের কর্তা ছিলেন শিমোন নামের একজন ফরীশী আর তিনি মনে মনে ভাবছিলেন যে এই স্ত্রীলোক এক পাপিষ্ঠা। শিমোনের কথার উত্তরে যীশু এক মহাজনের দুজন ঋণীর গল্পটা বলেছিলেন। তাদের মধ্যে একজনের অনেক বেশি ঋণ ছিল যা একজন মজুরের প্রায় দু’বছরের বেতন। অন্যজনের ঋণ ছিল এর প্রায় দশ ভাগের এক ভাগ, তিন মাসের বেতনেরও কম। দুজনেই তা শোধ করতে পারেনি আর মহাজন তাদের “উভয়কেই ক্ষমা করিলেন।” এখানে এটা পরিষ্কার যে যার বেশি ঋণ ক্ষমা করা হয়েছিল, ভালবাসা দেখিয়ে কৃতজ্ঞ হওয়ার বেশি কারণ তারই ছিল। এই দৃষ্টান্তকে সেই স্ত্রীর ভাল কাজের সঙ্গে জুড়ে যীশু এই নীতিকথা বলেছিলেন: “যাহাকে অল্প ক্ষমা করা যায়, সে অল্প প্রেম করে।” তারপর তিনি ওই স্ত্রীলোককে বলেন: “তোমার পাপ সকল ক্ষমা হইয়াছে।”—লূক ৭:৩৬-৪৮.
৩. আমাদের নিজেদেরকে কোন্ প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা দরকার?
৩ নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘আমার অবস্থা যদি ওই স্ত্রীলোকের মতো হতো অথবা আমাকে যদি এইরকমই করুণা দেখানো হতো, তাহলে কি আমি অন্যদেরকে করুণা দেখাতাম ও ক্ষমা করতাম না?’ আপনি হয়তো উত্তর দেবেন, ‘অবশ্যই!’ কিন্তু, আপনি কি নিশ্চিত যে আসলেই আপনি ক্ষমা করে দেন? আপনার স্বভাব কি এমন? আপনি কি বার বার অন্যদের ক্ষমা করেছেন আর অন্যেরা কি জানে যে আপনি ক্ষমা করে দেন? আসুন আমরা দেখি যে কেন আমাদের প্রত্যেকেরই নিজেদেরকে এই বিষয়ের ওপর খোলাখুলি পরীক্ষা করা উচিত।
ক্ষমা করা দরকার ছিল—আর আমাদেরকে করা হয়েছে
৪. নিজেদের সম্বন্ধে আমাদের সবার কী স্বীকার করা উচিত?
৪ আপনি জানেন যে আপনি অসিদ্ধ। আপনাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, তাহলে আপনি হয়তো তা স্বীকারও করবেন, হয়তো ১ যোহন ১:৮ পদের কথাগুলো মনে করে আপনি বলবেন: “আমরা যদি বলি যে, আমাদের পাপ নাই, তবে আপনারা আপনাদিগকে ভুলাই, এবং সত্য আমাদের অন্তরে নাই।” (রোমীয় ৩:২৩; ৫:১২) কেউ কেউ হয়তো অনেক বড় বড় পাপ করেছেন। আপনি হয়তো জেনেশুনে এমন কোন বড় পাপ করেননি কিন্তু অনেক বার নিজের অজান্তেই হয়তো ঈশ্বরের মানদণ্ড থেকে সরে গিয়েছেন বা অন্য কথায় বললে আপনি পাপ করেছেন। তাই নয় কি?
৫. আমাদের কেন ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত?
৫ তাই, আপনার অবস্থা হয়তো সেইরকমই যে অবস্থার কথা প্রেরিত পৌল বলেছিলেন: “ঈশ্বর তোমাদিগকে, অপরাধে ও তোমাদের মাংসের অত্বক্ছেদে মৃত তোমাদিগকে, তাঁহার [যীশুর] সহিত জীবিত করিয়াছেন, আমাদের সমস্ত অপরাধ ক্ষমা করিয়াছেন।” (কলসীয় ২:১৩; ইফিষীয় ২:১-৩) লক্ষ্য করুন, তিনি “আমাদের সমস্ত অপরাধ ক্ষমা করিয়াছেন।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) এর সঙ্গে অনেক কিছু জড়িত। আমাদের প্রত্যেকের রাজা দায়ূদের মতো মিনতি করার উপযুক্ত কারণ রয়েছে: “তোমার নামের গুণে, হে সদাপ্রভু, আমার অপরাধ ক্ষমা কর, কেননা তাহা গুরুতর।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।)—গীতসংহিতা ২৫:১১.
৬. যিহোবা ও ক্ষমার বিষয়ে আমাদের কী জানা উচিত?
৬ আমি, আপনি আমরা সবাই কীভাবে ক্ষমা পেতে পারি? একটা মুখ্য বিষয় হল যিহোবা ঈশ্বর ক্ষমা করতে চান। এটা তাঁর বৈশিষ্ট্য, তাঁর একটা বিশেষ গুণ। (যাত্রাপুস্তক ৩৪:৬, ৭; গীতসংহিতা ৮৬:৫) এটা পরিষ্কার যে ঈশ্বর চান আমরা যেন তাঁর কাছে প্রার্থনা করি এবং আমাদের ভুলের জন্য তাঁর কাছে ক্ষমা চাই, মিনতি জানাই যেন তিনি আমাদের ক্ষমা করে দেন। (২ বংশাবলি ৬:২১; গীতসংহিতা ১০৩:৩, ১০, ১৪) আর ক্ষমা করার জন্য যে বৈধ ব্যবস্থা তিনি করেছেন, তা হল যীশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদান।—রোমীয় ৩:২৪; ১ পিতর ১:১৮, ১৯; ১ যোহন ৪:৯, ১৪.
৭. কোন্ কোন্ দিক দিয়ে আপনার যিহোবাকে অনুকরণ করতে চাওয়া উচিত?
৭ ঈশ্বর যে ক্ষমা করতে চান, তা দেখে আপনি বুঝতে পারেন যে অন্যদের ক্ষমা করার ব্যাপারে আপনার কী করা উচিত। এই বিষয়টাই বোঝানোর জন্য পৌল লিখেছিলেন: “তোমরা পরস্পর মধুরস্বভাব ও করুণাচিত্ত হও, পরস্পর ক্ষমা কর, যেমন ঈশ্বরও খ্রীষ্টে তোমাদিগকে ক্ষমা করিয়াছেন।” (ইফিষীয় ৪:৩২) এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে পৌল ঈশ্বরের উদাহরণ দেখে আমাদের শিখতে বলছিলেন কারণ পরের পদে তিনি বলেন: “অতএব প্রিয় বৎসদের ন্যায় তোমরা ঈশ্বরের অনুকারী হও।” (ইফিষীয় ৫:১) এই দুটো পদের মধ্যে কোন যোগসূত্র কি আপনি খুঁজে পান? যিহোবা ঈশ্বর আপনাকে ক্ষমা করেছিলেন, তাই পৌল জোরালো যুক্তি দেখান যে ঈশ্বরকে অনুকরণ করে আপনার অন্যদের প্রতি ‘করুণাচিত্ত হওয়া . . . ক্ষমা’ করা উচিত। কিন্তু নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘আমি কি তা করছি? এটা করা যদি আমার স্বভাব না হয়, তাহলে কি আমি তা করার জন্য চেষ্টা করছি, ক্ষমা করার বিষয়ে ঈশ্বরকে অনুকরণ করার জন্য সত্যি সত্যিই চেষ্টা করছি?’
ক্ষমা করার জন্য আমাদের চেষ্টা করা দরকার
৮. খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর ভাইবোনদের বিষয়ে আমাদের কী স্বীকার করা উচিত?
৮ এটা কতই না ভাল হতো যদি খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে খুব কমই এমন পরিস্থিতি আসত যখন আমাদের অন্যকে ক্ষমা করার দরকার হয়। কিন্তু বাস্তবে অন্যরকম কিছু ঘটে। এটা স্বীকার করতেই হবে যে আমাদের খ্রীষ্টান ভাইবোনেরা যীশুর পদচিহ্ন অনুযায়ী চলে তাঁর মতো করে প্রেম দেখানোর জন্য মনেপ্রাণে চেষ্টা করেন। (যোহন ১৩:৩৫; ১৫:১২, ১৩; গালাতীয় ৬:২) তারা এই দুষ্ট জগতের চিন্তাধারা, কথাবার্তা ও চালচলনকে একেবারে ত্যাগ করার জন্য অনেক সময় ধরে আর এখনও চেষ্টা করে চলেছেন। তারা সত্যি সত্যিই দেখাতে চান যে তারা নতুন ব্যক্তিত্বকে পরিধান করেছেন। (কলসীয় ৩:৯, ১০) কিন্তু, এই সত্যকে আমরা অস্বীকার করতে পারি না যে সারা পৃথিবীর মণ্ডলীগুলো এবং আমাদের নিজেদের মণ্ডলীও আমাদের অসিদ্ধ ভাইবোনদের নিয়ে গড়ে উঠেছে যারা ভুল করেন। সবকিছু মিলিয়ে এখন তারা তাদের আগেকার জীবনের চেয়ে অনেক ভাল হয়েছেন কিন্তু তবু তারা এখনও অসিদ্ধ।
৯, ১০. ভাইদের মধ্যে সমস্যা হলে কেন আমাদের অবাক হওয়া উচিত নয়?
৯ বাইবেলে, ঈশ্বর চিন্তাভাবনা করে আমাদের বলেছেন যে মণ্ডলীতে ভাইবোনদের কাছ থেকে সিদ্ধতা আশা করার বদলে আমাদের জানা দরকার যে কখনও কখনও তারা ভুল করবেন। উদাহরণ হিসেবে কলসীয় ৩:১৩ পদে লেখা কথাগুলোর বিষয়ে চিন্তা করুন: “পরস্পর সহনশীল হও, এবং যদি কাহাকেও দোষ দিবার কারণ থাকে, তবে পরস্পর ক্ষমা কর; প্রভু [যিহোবা] যেমন তোমাদিগকে ক্ষমা করিয়াছেন, তোমরাও তেমনি কর।”
১০ লক্ষ্য করার বিষয় হল যে বাইবেল এখানেও আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয়, ঈশ্বর যে আমাদেরকে ক্ষমা করেছেন এবং আমাদেরও যে অন্যদের ক্ষমা করা কর্তব্য ও দরকার তার মধ্যে যোগসূত্র কী। কিন্তু এটা করা এত কঠিন কেন? কারণ পৌল স্বীকার করেছিলেন যে হয়তো “কাহাকেও দোষ দিবার কারণ” থাকবে। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে সেইরকম কিছু ঘটবে। প্রথম শতাব্দীতে এইরকম ঘটেছিল এমনকি খ্রীষ্টান ‘পবিত্র লোকদের’ মধ্যেও, যাদের ‘প্রত্যাশিত বিষয় তাহাদের নিমিত্ত স্বর্গে রাখা’ হয়েছিল। (কলসীয় ১:১, ৫) তাই আমরা কি ভেবে নিতে পারি যে আজকে অন্যরকম কিছু হবে যখন বেশির ভাগ খ্রীষ্টানদের সম্বন্ধে আত্মা সাক্ষ্য দেয়নি যে তারা হলেন “ঈশ্বরের মনোনীত . . . পবিত্র ও প্রিয়” লোক? (কলসীয় ৩:১২) তাই, আমাদের মণ্ডলীতে যদি কাউকে কোন দোষ দেওয়ার জন্য সত্যিকারের বা মনগড়া কোন কারণ থাকে, তাহলে সেগুলোকে আমাদের খুব বিরাট কিছু ভুল বলে দেখা উচিত নয়।
১১. শিষ্য যাকোব আমাদেরকে কোন্ বিষয়ে সাবধান করেছিলেন?
১১ যীশুর সৎ ভাই যাকোবের কথাগুলোও দেখায় যে আমরা মাঝে মধ্যে এমন অবস্থায় পড়তে পারি যখন আমাদের ভাইদের ক্ষমা করার দরকার হতে পারে। “তোমাদের মধ্যে জ্ঞানবান ও বুদ্ধিমান্ কে? সে সদাচরণ দ্বারা জ্ঞানের মৃদুতায় নিজ ক্রিয়া দেখাইয়া দিউক। কিন্তু তোমাদের হৃদয়ে যদি তিক্ত ঈর্ষা ও প্রতিযোগিতা রাখ, তবে সত্যের বিরুদ্ধে শ্লাঘা করিও না ও মিথ্যা কহিও না।” (যাকোব ৩:১৩, ১৪) সত্য খ্রীষ্টানদের মনে “তিক্ত ঈর্ষা ও প্রতিযোগিতা?” হ্যাঁ, যাকোবের কথা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে প্রথম শতাব্দীর মণ্ডলীগুলোতে এইরকম মনোভাব ছিল আর আজকেও আছে।
১২. প্রাচীন ফিলিপীয় মণ্ডলীতে কোন্ সমস্যা দেখা গিয়েছিল?
১২ প্রথম শতাব্দীর দুজন মনোনীত খ্রীষ্টান হলেন এর এক জলন্ত উদাহরণ, যাদের পৌলের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রচার কাজ করার সুনাম ছিল। আপনার হয়তো ফিলিপীয় মণ্ডলীর দুজন খ্রীষ্টান বোন ইবদিয়া ও সুন্তুখীর কথা মনে আছে। তাদের মধ্যে আসলে কী হয়েছিল বাইবেল সেই বিষয়ে বিশদভাবে না বললেও ফিলিপীয় ৪:২, ৩ পদ থেকে জানা যায় যে তাদের দুজনের মধ্যে কোন একটা সমস্যা ছিল। কিন্তু তাদের এই সমস্যার কারণ কি অবিবেচকের মতো বলা কোন কটু কথা, তাদের কোন আত্মীয়কে অপমান করা কিংবা তাদের দুজনের মধ্যে কোন হিংসাহিংসি? কারণ যাই হোক না কেন, বিষয়টা এত জটিল হয়ে উঠেছিল যে পৌল সেই রোমে বসে তা শুনতে পেয়েছিলেন। এই দুই আত্মিক বোন হয়তো নিজেদের মধ্যে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলেন, ফলে তারা হয়তো সভাতে গিয়ে একে অন্যকে এড়িয়ে চলতেন অথবা তাদের বন্ধুদের কাছে একজন অন্যজনের সম্বন্ধে আজেবাজে কথা বলতেন।
১৩. ইবদিয়া ও সুন্তুখীর মধ্যে হয়তো কী সমস্যা হয়েছিল আর এটা আমাদেরকে কী শেখায়?
১৩ এই ঘটনাটাকে কি আপনার কাছে পরিচিত মনে হচ্ছে, আপনার মণ্ডলীর কোন ভাইবোনের সঙ্গে বা আপনার সঙ্গেই কি কারও এমন কিছু হয়েছিল? এইধরনের সমস্যা এখনও হতে পারে। অতএব, আমরা কী করতে পারি? প্রথম শতাব্দীতে পৌল এই দুই উৎসর্গীকৃত বোনকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, “প্রভুতে একই বিষয় ভাব।” তারা হয়তো বিষয়টা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে রাজি হয়েছিলেন, হয়তো তাদের ভুল বোঝাবুঝি মেটাতে চেয়েছিলেন, একে অন্যকে ক্ষমা করে দিতে চেয়েছিলেন আর সত্যিকার অর্থে তারা যিহোবার ক্ষমা করার মনোভাবকে অনুকরণ করতে চেয়েছিলেন। ইবদিয়া ও সুন্তুখী তাদের সমস্যা মিটিয়ে নিতে সফল হয়েছিলেন, তাই সেই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে আমরাও সফল হব। ক্ষমা করার এই মনোভাব কাজে লাগিয়ে আজকেও সফল হওয়া যায়।
ক্ষমা করে শান্তি বজায় রাখুন
১৪. কেন সাধারণত ভাইবোনদের মধ্যে সমস্যা মিটিয়ে ফেলা যায় ও তা করাই ভাল?
১৪ কোন ভাই বা বোনের সঙ্গে আপনার যদি কোন সমস্যা হয়, তাহলে তাকে ক্ষমা করার জন্য আপনি কী করবেন? খোলাখুলিভাবে বলতে গেলে নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই কিন্তু বাইবেল আমাদের অনেক সাহায্যকারী উদাহরণ ও কাজে লাগানোর মতো উপদেশ দেয়। এর মধ্যে একটা বড় উপদেশ হল বিষয়টাকে ভুলে যাওয়া, এমন মনোভাব দেখানো যেন কিছুই হয়নি—যদিও এটা শোনা ও কাজে লাগানো খুব সহজ নয়। প্রায়ই যখন সমস্যা দেখা দেয় যেমন ইবদিয়া ও সুন্তুখীর মধ্যে হয়েছিল, তখন প্রত্যেকেই ভাবে যে ভুল অন্য জনের অথবা অন্য জনই বেশি দোষী। তাই এইরকম অবস্থায়, আপনি হয়তো ভাবতে পারেন যে দোষ আপনার নয় আর অন্যজনই আপনাকে দুঃখ দিয়েছে। সেইরকম হলে আপনি কি সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমা করে বিষয়টাকে সেখানেই মিটমাট করে ফেলতে পারেন? অন্য খ্রীষ্টানেরই যদি বেশি ভুল হয়ে থাকে অথবা তিনিই যদি পুরোপুরি দোষী হন, যদিও বা তা প্রায় একেবারেই অসম্ভব তাহলেও মনে রাখবেন যে আপনি সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টাকে মিটিয়ে ফেলতে পারেন অর্থাৎ ভুলে যেতে ও বিষয়টাকে সেখানেই শেষ করে ফেলতে পারেন।
১৫, ১৬. (ক) মীখা যিহোবার বিষয়ে কী বলেছিলেন? (খ) ঈশ্বর “অধর্ম্মের প্রতি উপেক্ষাকারি” বলতে কী বোঝায়?
১৫ ক্ষমা করার সময় আসুন আমরা ঈশ্বরের উদাহরণকে ভুলে না যাই। (ইফিষীয় ৪:৩২-৫:১) যিহোবা যে অন্যায়কে উপেক্ষা করেন সেই সম্বন্ধে ভাববাদী মীখা লিখেছিলেন: “কে তোমার তুল্য ঈশ্বর?—অপরাধ ক্ষমাকারী, ও আপন অধিকারের অবশিষ্টাংশের অধর্ম্মের প্রতি উপেক্ষাকারি! তিনি চিরকাল ক্রোধ রাখেন না, কারণ তিনি দয়ায় প্রীত।”—মীখা ৭:১৮.
১৬ যিহোবাকে “অধর্ম্মের প্রতি উপেক্ষাকারি” হিসেবে বলে বাইবেল এখানে বলছে না যে তিনি মানুষের অন্যায়কে মনে করতে পারেন না বা তাঁর স্মরণ শক্তি ভাল নয়। শিমশোন ও দায়ূদের কথা চিন্তা করুন, যারা দুজনেই গুরুতর পাপ করেছিলেন। অনেক দিন পরেও যিহোবা তাদের পাপ মনে করতে পেরেছিলেন; এমনকি আমরাও তাদের কিছু কিছু পাপ সম্বন্ধে জানি কারণ যিহোবা সেগুলোকে বাইবেলে লিখে রেখেছেন। তারপরও, ক্ষমা করার ক্ষেত্রে আমাদের আদর্শ, ঈশ্বর তাদের দুজনের প্রতি করুণা দেখিয়েছিলেন, তাদেরকে আমাদের সামনে বিশ্বাসের উদাহরণ হিসেবে রেখেছেন যাতে আমরা তাদের উদাহরণ অনুকরণ করতে পারি।—ইব্রীয় ১১:৩২; ১২:১.
১৭. (ক) অন্যদের ভুল অথবা খারাপ ব্যবহারকে উপেক্ষা করতে কী আমাদের সাহায্য করতে পারে? (খ) আমরা যদি তা করার জন্য চেষ্টা করি, তাহলে কীভাবে আমরা যিহোবাকে অনুকরণ করে চলছি? (পাদটীকা দেখুন।)
১৭ হ্যাঁ, যিহোবা অন্যায় ‘উপেক্ষা’a করতে পারতেন আর সেইজন্য দায়ূদ তাঁর কাছে কয়েকবার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। (২ শমূয়েল ১২:১৩; ২৪:১০) এই ক্ষেত্রে কি আমরা ঈশ্বরকে অনুকরণ করতে পারি, আমাদের অসিদ্ধ খ্রীষ্টান ভাইবোনেরা যখন আমাদের অপমান করেন বা খারাপ ব্যবহার করেন তখন কি আমরা সেগুলোকে উপেক্ষা করতে চাই? মনে করুন আপনি একটা বড় প্লেনে বসে আছেন যেটা কিছুক্ষণের মধ্যে উড়ে যাবে। বাইরের দিকে তাকিয়ে আপনি দেখেন যে সেখান থেকে আপনার পরিচিত কেউ আপনার দিকে তাকিয়ে বাচ্চাদের মতো ভেংচি কাটছেন। আপনি জানেন যে তিনি এখন রেগে আছেন, হয়তো আপনাকে দেখেই তিনি তা করেছেন। কিংবা তিনি হয়তো আপনার কথা ভাবছেনই না। যাইহোক, প্লেনটা যখন ওপরে ওঠার জন্য ঘুরতে থাকে তখন আপনি আস্তে আস্তে সেই মহিলার চেয়ে অনেক ওপরে উঠে যান, যাকে তখন আপনার একটা সামান্য বিন্দুর মতো মনে হয়। এক ঘন্টার মধ্যে আপনি তার কাছ থেকে শত শত কিলোমিটার দূরে চলে যান আর তার অপমানকর ভঙ্গিকে আপনি অনেক পিছনে ফেলে আসেন। একইভাবে, আমরা যদি যিহোবার মতো হতে চেষ্টা করি এবং বুদ্ধিমানের মতো দোষকে উপেক্ষা করি, তাহলে আমরা অনেক বার ক্ষমা করতে পারব। (হিতোপদেশ ১৯:১১) এখন থেকে দশ বছর বা খ্রীষ্টের হাজার বছর রাজত্বের মধ্যে দু’শ বছর কেটে যাওয়ার পর এই অপমানকে কি আপনার অতি ক্ষুদ্র বলেই মনে হবে না? তাই দোষকে উপেক্ষা করুন না কেন?
১৮. কোন অন্যায়কে যদি আমরা ক্ষমা করতে পারছি না বলে মনে হয় তখন আমরা কোন্ পরামর্শ কাজে লাগাতে পারি?
১৮ কখনও কখনও হয়তো এমন হতে পারে যে আপনি কোন বিষয়ের জন্য প্রার্থনা করেছেন ও ক্ষমা করারও চেষ্টা করেছেন কিন্তু আপনার মনে হয়েছে যে আপনি পারছেন না। তাহলে কী করা যায়? যীশু অন্য পক্ষের কাছে যেতে এবং শান্তি বজায় রাখার জন্য নিজেদের মধ্যে সমস্যাটা মিটিয়ে ফেলতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। “অতএব তুমি যখন যজ্ঞবেদির নিকটে আপন নৈবেদ্য উৎসর্গ করিতেছ, তখন সেই স্থানে যদি মনে পড়ে যে, তোমার বিরুদ্ধে তোমার ভ্রাতার কোন কথা আছে, তবে সেই স্থানে বেদির সম্মুখে তোমার নৈবেদ্য রাখ, আর চলিয়া যাও, প্রথমে তোমার ভ্রাতার সহিত সম্মিলিত হও, পরে আসিয়া তোমার নৈবেদ্য উৎসর্গ করিও।”—মথি ৫:২৩, ২৪.
১৯. আমাদের ভাইদের সঙ্গে শান্তি বজায় রাখার সময় আমাদের কোন্ মনোভাব থাকা উচিত এবং কোন্ মনোভাব এড়িয়ে চলা উচিত?
১৯ লক্ষ্য করুন যে এখানে যীশু আপনাকে আপনার ভাইয়ের কাছে এই বিষয় বোঝানোর জন্য যেতে বলেননি যে আপনি ঠিক ছিলেন ও ভুল তারই ছিল। হতে পারে, ভুল তারই ছিল। বেশির ভাগ সময়ই দেখা যায় যে দুজনেরই কিছু না কিছু ভুল থাকে। ভুল যারই হোক না কেন, এই যাওয়ার উদ্দেশ্য নয় যে অন্য পক্ষ হার মানবে কিংবা ছোট হবে। আপনি যদি এই উদ্দেশ্যে কথা শুরু করেন, তাহলে আপনি সফল হবেন না। এছাড়া সমস্যার প্রতিটা খুঁটিনাটি বিষয় আবারও বলা এই কথাবার্তার উদ্দেশ্য নয়, কারণ এমনও হতে পারে যে সমস্যাটা মনগড়া। যদি শান্তির সঙ্গে কথাবার্তা বলে দেখা যায় যে সমস্ত সমস্যার মূল হচ্ছে ভুল বোঝাবুঝি, তাহলে খ্রীষ্টীয় প্রেম দেখিয়ে আপনারা দুজনে সেটা মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। কিন্তু হতে পারে যে কথা বলার পরও আপনারা দুজনে একমত হতে পারছেন না কিন্তু একমত হওয়া কি সবসময় দরকার? এটা কি ভাল হবে না যদি অন্তত আপনি একমত হন যে আপনারা দুজনেই আন্তরিকভাবে আমাদের ক্ষমাবান ঈশ্বরকে সেবা করতে চান? আপনারা দুজনেই যখন এই সত্যকে মেনে নেন তখন আপনাদের পক্ষে মন থেকে এই কথা বলা হয়তো অনেক বেশি সহজ হয়ে যায়, “আমি দুঃখিত, অসিদ্ধ বলেই আমাদের মধ্যে এই ভুলবোঝাবুঝি হয়েছে। আসুন আমরা এগুলো একেবারে ভুলে যাই।”
২০. প্রেরিতদের উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
২০ মনে রাখবেন যে প্রেরিতদের মধ্যেও সমস্যা ছিল, তারা কেউ কেউ শ্রেষ্ঠ পদ পেতে চেয়েছিলেন। (মার্ক ১০:৩৫-৩৯; লূক ৯:৪৬; ২২:২৪-২৬) এই নিয়ে তারা চিন্তিত হয়েছিলেন, দুঃখ পেয়েছিলেন কিংবা তাদের মধ্যে বড় ভুল বোঝাবুঝিও হয়েছিল। কিন্তু তারা এই মতভেদগুলো কাটিয়ে উঠে একসঙ্গে কাজ করে চলেছিলেন। তাদের মধ্যে একজন পরে লিখেছিলেন: “যে ব্যক্তি জীবন ভাল বাসিতে চায়, ও মঙ্গলের দিন দেখিতে চায়, সে মন্দ হইতে আপন জিহ্বাকে, ছলনাবাক্য হইতে আপন ওষ্ঠকে নিবৃত্ত করুক। সে মন্দ হইতে ফিরুক ও সদাচরণ করুক, শান্তির চেষ্টা করুক, ও তাহার অনুধাবন করুক।”—১ পিতর ৩:১০, ১১.
২১. ক্ষমা করার বিষয়ে যীশু কোন্ উত্তম শিক্ষা দিয়েছিলেন?
২১ এতক্ষণ পর্যন্ত আমরা ক্ষমা করার শুধু একটা দিক দেখেছি: আমরা আগে যে সমস্ত পাপ করেছি সেগুলোকে ঈশ্বর ক্ষমা করে দিয়েছেন, তাই আমাদের তাঁকে অনুকরণ করা উচিত ও আমাদের ভাইদের ক্ষমা করা উচিত। (গীতসংহিতা ১০৩:১২; যিশাইয় ৪৩:২৫) কিন্তু এর আরেকটা দিক আছে। আদর্শ প্রার্থনা সম্বন্ধে বলার পর যীশু বলেছিলেন: “তোমরা যদি লোকের অপরাধ ক্ষমা কর, তবে তোমাদের স্বর্গীয় পিতা তোমাদিগকেও ক্ষমা করিবেন।” সেই একই কথা যীশু এক বছরেরও কিছু সময় পর আবারও বলেছিলেন যখন তিনি শিষ্যদের প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন: “আমাদের পাপ সকল ক্ষমা কর; কেননা আমরাও আপনাদের প্রত্যেক অপরাধীকে ক্ষমা করি।” (মথি ৬:১২, ১৪; লূক ১১:৪) এরপর তাঁর মৃত্যুর মাত্র কয়েকদিন আগে যীশু বলেছিলেন: “তোমরা যখনই প্রার্থনা করিতে দাঁড়াও, যদি কাহারও বিরুদ্ধে তোমাদের কোন কথা থাকে, তাহাকে ক্ষমা করিও; যেন তোমাদের স্বর্গস্থ পিতাও তোমাদের অপরাধ সকল ক্ষমা করেন।”—মার্ক ১১:২৫, ২৬.
২২, ২৩. ক্ষমা করতে চাওয়া কীভাবে আমাদের ভবিষ্যৎকে প্রভাবিত করতে পারে?
২২ হ্যাঁ, ঈশ্বরের কাছ থেকে আমাদের পাপের ক্ষমা পেতে হলে আমাদেরকে আমাদের ভাইদের ক্ষমা করতে হবে। খ্রীষ্টান ভাইবোনেদের মধ্যে যখন কোন সমস্যা দেখা দেয় তখন নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘ছোটখাটো কোন অপমানজনক কথা, সামান্য ভুল অথবা অসিদ্ধ হওয়ায় ছোটখাটো দোষ করার জন্য কোন ভাই বা বোনকে দোষী প্রমাণ করার চেয়ে বরং ঈশ্বরের কাছ থেকে ক্ষমা পাওয়াই কি আরও বেশি জরুরি নয়?’ উত্তর আপনার জানা আছে।
২৩ ছোটখাটো কোন অপমান কিংবা সমস্যার চেয়ে বিষয়টা যদি আরও বেশি গুরুতর হয়, তাহলে কী বলা যায়? আর মথি ১৮:১৫-১৮ পদে যীশু যে পরামর্শ দিয়েছিলেন তা কখন কাজে লাগে? পরের প্রবন্ধে এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে।
[পাদটীকাগুলো]
a একজন পণ্ডিত ব্যক্তি বলেন যে মীখা ৭:১৮ পদে যে ইব্রীয় রূপক শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে তা এমন “একজন যাত্রীর কথা মনে রেখে বলা হয়েছে যিনি কোন বস্তুকে উপেক্ষা করে চলে যান যেহেতু তিনি তাতে মন দিতে চান না। কিন্তু, এর অর্থ নয় যে ঈশ্বর লোকেদের পাপ দেখতে পান না কিংবা সেগুলোকে খুব ছোট বা হালকাভাবে দেখেন। বরং তিনি এইজন্য এগুলোকে উপেক্ষা করেন কারণ তিনি এই পাপের জন্য কোন শাস্তি দিতে চান না; সব পাপেরই শাস্তি না দিয়ে বরং তিনি ক্ষমা করে[ন]।”—বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ৩:২৬; ১ শমূয়েল ১৬:৮.
আপনার কি মনে আছে?
◻ ক্ষমা করার বিষয়ে আমাদের অনুকরণের জন্য যিহোবা কীভাবে উদাহরণ রেখেছেন?
◻ মণ্ডলীর ভাইবোনদের বিষয়ে আমাদের কী মনে রাখা উচিত?
◻ বেশির ভাগ সময় ছোটখাটো অপমান বা খারাপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের কী করা উচিত?
◻ আমাদের ভাইদের সঙ্গে শান্তি বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনে আমরা কী করতে পারি?
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
কোন ভাইবোনের সঙ্গে যদি মনোমালিন্য হয়, তাহলে তা উপেক্ষা করার চেষ্টা করুন; সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে