একে অপরকে শক্তিশালী করুন
“ইহাঁরা আমার সান্ত্বনাজনক [“শক্তিবর্ধক,” Nw] হইয়াছেন।”—কলসীয় ৪:১১.
১, ২. বিপদজনক হওয়া সত্ত্বেও, পৌলের বন্ধুরা কেন জেলখানায় তার সঙ্গে দেখা করেছিল?
জেলখানার মধ্যে কষ্টভোগ করছেন এমন একজন ব্যক্তির বন্ধু হওয়া বিপদজনক হতে পারে—এমনকি আপনার বন্ধু যদি অন্যায়ভাবেও কারারুদ্ধ হয়ে থাকেন। জেলখানার কর্মকর্তারা হয়তো আপনাকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখতে পারে, আপনার প্রতিটা গতিবিধির ওপর নজর রাখতে পারে এটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য যে, আপনি কোনো অপরাধ করেননি। তাই, আপনার বন্ধুর সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ করার এবং জেলখানায় তাকে দেখতে যাওয়ার জন্য সাহসের প্রয়োজন।
২ কিন্তু, প্রায় ১,৯০০ বছর আগে প্রেরিত পৌলের কিছু বন্ধু ঠিক তা-ই করেছিল। তারা পৌলের বন্দিত্বের সময় তাকে প্রয়োজনীয় সান্ত্বনা ও উৎসাহ দেওয়ার এবং আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে তাকে শক্তিশালী করার জন্য তার সঙ্গে দেখা করতে দ্বিধা করেনি। এই অনুগত বন্ধুরা কারা ছিল? আর তাদের সাহস, আনুগত্য এবং বন্ধুত্ব থেকে আমরা কী শিখতে পারি?—হিতোপদেশ ১৭:১৭.
“শক্তিবর্ধক”
৩, ৪. (ক) পৌলের বন্ধুদের মধ্যে পাঁচ জন কারা ছিল এবং তারা তার কাছে কী হয়ে উঠেছিল? (খ) “শক্তিবর্ধক” মানে কী?
৩ আসুন আমরা সা.কা. প্রায় ৬০ সালে চলে যাই। রাজদ্রোহিতার মিথ্যা অভিযোগে পৌল রোমের জেলখানায় আছেন। (প্রেরিত ২৪:৫; ২৫:১১, ১২) পৌল উল্লেখ করার জন্য পাঁচ জন খ্রিস্টানকে বেছে নেন, যারা তার পাশে ছিল: তুখিক, এশিয়া অঞ্চল থেকে আসা তার ব্যক্তিগত দূত এবং ‘প্রভুতে সহদাস’; ওনীষীম, কলসীর “বিশ্বস্ত ও প্রিয় ভ্রাতা”; আরিষ্টার্খ, থিষলনীকীর একজন মাকিদনীয় ব্যক্তি এবং একসময় পৌলের “সহবন্দি”; মার্ক, পৌলের মিশনারি সঙ্গী বার্ণবার আত্মীয় এবং তার নামের সুসমাচার লেখক; যুষ্ট, “ঈশ্বরের রাজ্যের পক্ষে” প্রেরিতের একজন সহকর্মী। পৌল সেই পাঁচ জনের বিষয়ে বলেন: “ইহাঁরা আমার শক্তিবর্ধক হইয়াছেন।”—কলসীয় ৪:৭-১১.
৪ তার অনুগত বন্ধুরা তাকে যে-সাহায্য করেছিলেন, সেই বিষয়ে পৌল এক জোরালো বিবৃতি দিয়েছিলেন। তিনি যে-গ্রিক শব্দ (প্যারাগোরিয়া) ব্যবহার করেছিলেন, সেটা “শক্তিবর্ধক” হিসেবে অনুবাদিত হয়েছে, যা বাইবেলে শুধু এই পদের মধ্যেই পাওয়া যায়। এই শব্দটির ব্যাপক অর্থ রয়েছে এবং বিশেষভাবে আরোগ্যকর ভেষজসংক্রান্ত প্রসঙ্গগুলোতে এটি ব্যবহৃত হতো।a এটিকে ‘প্রবোধ, উপশম, সান্ত্বনা অথবা স্বস্তি’ হিসেবে অনুবাদ করা যেতে পারে। পৌলের সেই ধরনের শক্তির দরকার ছিল আর সেই পাঁচ জন তা-ই জুগিয়েছিল।
যেকারণে পৌলের ‘শক্তিবর্ধকের’ প্রয়োজন ছিল
৫. একজন প্রেরিত হওয়া সত্ত্বেও, পৌলের কীসের প্রয়োজন ছিল এবং আমাদের সকলের সময়ে সময়ে কীসের প্রয়োজন?
৫ কেউ কেউ হয়তো এই ভেবে অবাক হতে পারে যে, একজন প্রেরিত হওয়া সত্ত্বেও পৌলের শক্তির প্রয়োজন ছিল। কিন্তু, তার প্রয়োজন ছিল। এটা ঠিক যে, পৌলের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল এবং তিনি অনেক শারীরিক নির্যাতন যেমন “প্রহারে অতিরিক্তরূপে,” “প্রাণসংশয়ে অনেক বার” এবং অন্যান্য যন্ত্রণা থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। (২ করিন্থীয় ১১:২৩-২৭) তা সত্ত্বেও, তিনি একজন মানুষ ছিলেন এবং সব মানুষেরই সময়ে সময়ে সান্ত্বনা লাভ করার এবং অন্যদের সাহায্যে তাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার প্রয়োজন রয়েছে। আর তা এমনকি যিশুর ক্ষেত্রেও সত্য ছিল। তাঁর শেষরাতে, গেৎশিমানী বাগানে একজন দূত তাঁর কাছে এসে “তাঁহাকে সবল করিলেন।”—লূক ২২:৪৩.
৬, ৭. (ক) রোমে কারা পৌলকে হতাশ করেছিল এবং কারা তাকে উৎসাহ দিয়েছিল? (খ) রোমে পৌলের খ্রিস্টান ভাইয়েরা তার জন্য কোন ধরনের কাজগুলো করেছিল আর এভাবে “শক্তিবর্ধক” হয়েছিল?
৬ পৌলেরও শক্তিশালী হওয়ার প্রয়োজন ছিল। তিনি যখন বন্দি হিসেবে রোমে এসেছিলেন, তখন তার নিজ জাতির লোকেরা তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানায়নি। এই যিহুদি লোকেদের বেশির ভাগই রাজ্যের বার্তার প্রতি সাড়া দেয়নি। যিহুদিদের প্রধান লোকেরা পৌল যেখানে অবরুদ্ধ ছিলেন, সেখানে তার সঙ্গে দেখা করতে আসার পর, প্রেরিত পুস্তকের বিবরণ বলে: “কেহ কেহ তাঁহার কথায় প্রত্যয় করিলেন, আর কেহ কেহ অবিশ্বাস করিলেন। এইরূপে তাঁহাদের মধ্যে মতের একতা না হওয়ায় তাঁহারা বিদায় হইতে লাগিলেন।” (প্রেরিত ২৮:১৭, ২৪, ২৫) যিহোবার অযাচিত দয়ার প্রতি তাদের উপলব্ধির অভাব পৌলকে কত কষ্টই না দিয়েছিল! এই বিষয়ের প্রতি তার দৃঢ় অনুভূতি কয়েক বছর আগে রোমের মণ্ডলীর প্রতি লেখা তার চিঠিতে স্পষ্ট হয়েছিল: “আমার হৃদয়ে ভারী দুঃখ ও নিরন্তর যাতনা হইতেছে। কেননা আমার ভ্রাতৃগণের [যিহুদিদের] জন্য, যাহারা মাংসের সম্বন্ধে আমার স্বজাতীয় তাহাদের জন্য, আমিই যেন খ্রীষ্ট হইতে পৃথক্ থাকিয়া শাপাস্পদ হই, এমন কামনা করিতে পারিতাম।” (রোমীয় ৯:২, ৩) তবুও, তিনি রোমে অনুগত, প্রকৃত সঙ্গীদের পেয়েছিলেন, যাদের সাহস এবং স্নেহ তার হৃদয়কে শান্ত করেছিল। তারা ছিলেন তার অকৃত্রিম আধ্যাত্মিক ভাই।
৭ সেই পাঁচ জন ভাই কীভাবে শক্তিবর্ধক প্রমাণিত হয়েছিল? জেলখানায় পৌলের বন্দিত্বের কারণে তারা ভয় পেয়ে তার কাছ থেকে দূরে সরে যায়নি। এর পরিবর্তে, তারা স্বেচ্ছায় এবং প্রেমের সঙ্গে পৌলের ব্যক্তিগত কাজগুলো করে দিয়েছিল, যে-কাজগুলো তিনি বন্দি বলে করতে অসমর্থ ছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, তারা বার্তাবাহক হিসেবে কাজ করেছিল এবং পৌলের চিঠিগুলো ও মৌখিক নির্দেশনাগুলো বিভিন্ন মণ্ডলীতে পৌঁছে দিয়েছিল; তারা রোম এবং অন্যান্য জায়গার ভাইবোনদের মঙ্গলের বিষয়ে পৌলের কাছে উৎসাহমূলক সংবাদ নিয়ে এসেছিল। সম্ভবত তারা প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো যেমন, শীতের কাপড়, গুটানো পুস্তক এবং লেখার সামগ্রী সংগ্রহ করেছিল। (ইফিষীয় ৬:২১, ২২; ২ তীমথিয় ৪:১১-১৩) এই সমস্ত সাহায্যকারী কাজ বন্দি পৌলকে শক্তি এবং উৎসাহ দিয়েছিল, যাতে এর ফলে তিনিও সমগ্র মণ্ডলীসহ অন্যদের কাছে “শক্তিবর্ধক” হতে পারেন।—রোমীয় ১:১১, ১২.
যেভাবে “শক্তিবর্ধক” হওয়া যায়
৮. পৌলের ‘শক্তিবর্ধকের’ প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে তার নম্রভাবে স্বীকার করা থেকে আমরা কোন শিক্ষা লাভ করতে পারি?
৮ পৌল এবং তার পাঁচ সহকর্মীর ঘটনা থেকে আমরা কী শিখতে পারি? আসুন আমরা নির্দিষ্ট একটা শিক্ষার দিকে মনোযোগ দিই: অন্যদের দুঃখকষ্টের সময়ে তাদের সাহায্যে আসার জন্য সাহস এবং ত্যাগস্বীকারের প্রয়োজন। এ ছাড়া, ব্যক্তিগত কষ্টের সময় আমাদের হয়তো সাহায্যের দরকার হতে পারে, তা স্বীকার করার জন্য নম্রতার প্রয়োজন রয়েছে। পৌল শুধু স্বীকারই করেননি যে তার সাহায্যের প্রয়োজন কিন্তু তিনি সেই সাহায্য সদয়ভাবে গ্রহণ করেছিলেন এবং যারা তা জুগিয়েছিল, তাদের প্রশংসা করেছিলেন। তিনি অন্যদের কাছ থেকে সাহায্য গ্রহণ করাকে দুর্বলতার এক চিহ্ন অথবা তিনি ছোট হয়ে গিয়েছেন বলে মনে করেননি আর আমাদেরও তা করা উচিত নয়। আমরা যদি বলি যে আমাদের কখনও শক্তিবর্ধকের প্রয়োজন নেই, তা হলে সেটা বোঝাবে যে আমরা অতিমানব। মনে রাখবেন, যিশুর উদাহরণ দেখায় যে, এমনকি একজন সিদ্ধ মানুষেরও মাঝে মাঝে সাহয্যের জন্য আর্তনাদ করার প্রয়োজন হতে পারে।—ইব্রীয় ৫:৭.
৯, ১০. একজন ব্যক্তি যখন স্বীকার করেন যে তার সাহায্যের প্রয়োজন, তখন কোন উত্তম ফল আসতে পারে এবং পরিবারে ও মণ্ডলীতে অন্যান্যদের ওপর এর কোন প্রভাব থাকতে পারে?
৯ যারা দায়িত্বপূর্ণ পদে রয়েছে, তারা যখন স্বীকার করে যে তাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে এবং তারা অন্যদের সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল, তখন তা উত্তম ফল নিয়ে আসতে পারে। (যাকোব ৩:২) এই ধরনের স্বীকৃতি, যারা কর্তৃত্বে রয়েছে এবং যারা সেই কর্তৃত্বের অধীনে, তাদের উভয়ের মধ্যে বন্ধনকে শক্তিশালী করে, উষ্ণ এবং স্বচ্ছন্দ ভাববিনিময় বৃদ্ধি করে। যারা সাহায্য গ্রহণ করতে ইচ্ছুক, তাদের নম্রতা একই পরিস্থিতিতে অন্যদের জন্য ব্যবহারিক উদাহরণ হিসেবে কাজ করে। এটা দেখায় যে, যারা নেতৃত্ব নেয় তারা মানুষ এবং তাদের কাছে সহজেই যাওয়া যায়।—উপদেশক ৭:২০.
১০ উদাহরণস্বরূপ, ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন সমস্যা এবং প্রলোভন মোকাবিলা করার সময় তাদের বাবামার সাহায্য সহজেই গ্রহণ করতে পারে, যখন তারা জানে যে, তাদের বাবামাও একইরকম প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মুখোমুখি হয়েছিল, যখন তারা ছোট ছিল। (কলসীয় ৩:২১) এভাবে বাবামা এবং সন্তানের মধ্যে উত্তম ভাববিনিময়ের পথ খুলে যেতে পারে। শাস্ত্রীয় সমাধানগুলো আরও কার্যকারীভাবে জানানো এবং তা আরও সহজেই গ্রহণ করা যেতে পারে। (ইফিষীয় ৬:৪) একইভাবে, মণ্ডলীর সদস্যরাও প্রাচীনদের কাছ থেকে সাহায্য গ্রহণ করার জন্য আরও বেশি প্রস্তুত থাকবে, যখন তারা বুঝতে পারবে যে প্রাচীনরাও সমস্যা, ভয় এবং জটিলতার সঙ্গে মোকাবিলা করে। (রোমীয় ১২:৩; ১ পিতর ৫:৩) এই ক্ষেত্রেও উত্তম ভাববিনিময় করা এবং শাস্ত্রীয় পরামর্শ জানানো যেতে পারে, ফলস্বরূপ বিশ্বাস শক্তিশালী হতে পারে। মনে রাখবেন যে, আমাদের ভাই ও বোনদের আগের চেয়ে এখন আরও বেশি করে শক্তির প্রয়োজন।—২ তীমথিয় ৩:১.
১১. আজকে কেন অনেকের ‘শক্তিবর্ধক’ প্রয়োজন?
১১ আমরা যেখানেই বাস করি না কেন, আমরা যে-ই হই না কেন অথবা আমাদের বয়স যা-ই হোক না কেন, আমরা সকলে জীবনে চলার পথে কোনো না কোনো সময় বিভিন্ন চাপের মুখোমুখি হই। এটা এই জগতের একটা অংশ। (প্রকাশিত বাক্য ১২:১২) শারীরিক এবং মানসিক দিক দিয়ে এই ধরনের হতাশাজনক অবস্থা আমাদের বিশ্বাসের গুণগত মানকে পরীক্ষা করে। কাজের জায়গায়, স্কুলে, পরিবারে অথবা মণ্ডলীতে পরীক্ষামূলক পরিস্থিতি আসতে পারে। গুরুতর অসুস্থতা অথবা অতীতের কোনো আঘাত চাপের কারণ হতে পারে। একজন বিবাহ সাথি, প্রাচীন অথবা বন্ধু যদি বিবেচনাপূর্ণ কথাবার্তা এবং সাহায্যকারী কাজের মাধ্যমে সদয়ভাবে উৎসাহ দেয়—আহ্, তা কতই না সান্ত্বনাদায়ক হতে পারে। আসলে, এটা যন্ত্রণাদায়ক ত্বকের ওপর মলমের মতো! তাই, আপনি যদি আপনার ভাইদের কাউকে এইরকম পরিস্থিতিতে দেখেন, তা হলে তার শক্তিবর্ধক হোন। অথবা যদি বিশেষ কোনো কঠিন সমস্যা আপনাকে ভারগ্রস্ত করে, তা হলে আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে যোগ্য ব্যক্তিদের সাহায্য চান।—যাকোব ৫:১৪, ১৫.
মণ্ডলী যেভাবে সাহায্য করতে পারে
১২. মণ্ডলীর প্রত্যেকে তার ভাইদের শক্তিশালী করার জন্য কী করতে পারে?
১২ মণ্ডলীর সকলে, যাদের মধ্যে অল্পবয়স্করাও রয়েছে, অন্যদের শক্তিশালী করার জন্য কিছু না কিছু করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, সভায় এবং ক্ষেত্রের পরিচর্যায় আপনার নিয়মিত উপস্থিতি অন্যদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার জন্য অনেক কিছু করতে পারে। (ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) পবিত্র সেবায় আপনার স্থিরতা যিহোবার প্রতি আপনার আনুগত্যের প্রমাণ এবং এটা দেখায় যে, আপনি যে-সমস্যার মুখোমুখিই হোন না কেন, আপনি আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে সজাগ আছেন। (ইফিষীয় ৬:১৮) সেই স্থিরতা অন্যদের ওপর জোরালো প্রভাব ফেলতে পারে।—যাকোব ২:১৮.
১৩. কেন কেউ কেউ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়তে পারে এবং তাদের সাহায্য করার জন্য কী করা যেতে পারে?
১৩ মাঝে মাঝে জীবনের চাপ এবং অন্যান্য সমস্যা আমাদের কিছুটা ধীর করে দিতে পারে অথবা আমরা ক্ষেত্রের পরিচর্যায় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়তে পারি। (মার্ক ৪:১৮, ১৯) আমরা হয়তো নিষ্ক্রিয় ব্যক্তিদের মণ্ডলীর সভাগুলোতে দেখি না। তবুও, তাদের হৃদয়ে সম্ভবত এখনও ঈশ্বরের প্রতি প্রেম আছে। তাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার জন্য কী করা যেতে পারে? প্রাচীনরা তাদের সঙ্গে দেখা করার মাধ্যমে সদয় সাহায্য দিতে পারেন। (প্রেরিত ২০:৩৫) মণ্ডলীর অন্যান্য সদস্যদেরও হয়তো সাহায্য করার জন্য বলা যেতে পারে। এই ধরনের প্রেমময় সাক্ষাৎ যারা বিশ্বাসে দুর্বল, তাদের পুনরুদ্দীপিত করার জন্য বলতে গেলে একেবারে সঠিক ওষুধ হতে পারে।
১৪, ১৫. অন্যদের শক্তিশালী করার বিষয়ে পৌল কোন পরামর্শ দিয়েছেন? তার পরামর্শ কাজে লাগিয়েছিল, এমন একটা মণ্ডলীর উদাহরণ দিন।
১৪ বাইবেল আমাদের পরামর্শ দেয়, “ক্ষীণসাহসদিগকে সান্ত্বনা কর, [“বিষণ্ণদের প্রতি সান্ত্বনার বাক্য বল,” NW] দুর্ব্বলদিগের সাহায্য কর।” (১ থিষলনীকীয় ৫:১৪) হতে পারে, সেই ‘বিষণ্ণ’ ব্যক্তিরা মনে করে যে তাদের সাহস শেষ হয়ে গিয়েছে এবং তাদের যে-বাধাগুলোর মুখোমুখি হতে হয়, সেগুলো তারা সাহায্যের হাত ছাড়া কাটিয়ে উঠতে পারে না। আপনি কি সেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারেন? “দুর্ব্বলদিগের সাহায্য কর,” অভিব্যক্তিটিকে দুর্বল ব্যক্তিদের “দৃঢ়ভাবে ধরে রাখা” অথবা তাদের সঙ্গে “লেগে থাকা” হিসেবে অনুবাদিত হয়েছে। যিহোবা তাঁর সমস্ত মেষকে মূল্যবান গণ্য করেন এবং তাদের ভালবাসেন। তাদের তিনি কম মূল্যবান বলে গণ্য করেন না এবং তিনি চান না যে কেউ ভেসে চলে যাক। আধ্যাত্মিক দিয়ে দুর্বল ব্যক্তিরা যতক্ষণ পর্যন্ত না শক্তিশালী হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের ‘দৃঢ়ভাবে ধরে রাখার’ জন্য আপনি কি মণ্ডলীকে সাহায্য করতে পারেন?—ইব্রীয় ২:১.
১৫ প্রায় ছয় বছর ধরে নিষ্ক্রিয় ছিল এমন এক বিবাহিত দম্পতির সঙ্গে একজন প্রাচীন সাক্ষাৎ করেছিলেন। প্রাচীন ভাই লেখেন: “পুরো মণ্ডলী তাদের প্রতি যে-দয়া এবং প্রেমময় চিন্তা দেখিয়েছে, তা এতটা অসাধারণ প্রভাব ফেলেছিল যে, এটা তাদেরকে পালের মধ্যে ফিরে যেতে পরিচালিত করেছিল।” মণ্ডলীর সদস্যদের সাক্ষাতের ফলে একসময়ের নিষ্ক্রিয় বোন কেমন বোধ করেছিলেন? তিনি এখন বলেন: “যে-বিষয়টা আমাদের আবারও সক্রিয় হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে, সেটা ছিল যে-ভাইয়েরা আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল অথবা যে-বোনেরা তাদের সঙ্গে এসেছিল, তারা কখনও আমাদের প্রতি বিচার বা সমালোচনা করার মনোভাব দেখায়নি। বরং, তারা বোধগম্য ছিল এবং শাস্ত্রীয় উৎসাহ দিয়েছিল।”
১৬. যাদের শক্তিশালী হওয়ার প্রয়োজন, তাদের সাহায্য করার জন্য কে সবসময় তৈরি?
১৬ হ্যাঁ, একজন অকপট খ্রিস্টান অন্যদের শক্তিবর্ধক হতে পেরে আনন্দিত হন। আর আমাদের জীবনের পরিস্থিতিগুলো পরিবর্তনের কারণে স্বয়ং আমাদেরই হয়তো আমাদের ভাইদের করা শক্তিশালী কাজগুলো গ্রহণ করতে হতে পারে। তবে বাস্তবে, প্রয়োজনের সময় কোনো মানুষের সাহায্য না-ও পাওয়া যেতে পারে। তা সত্ত্বেও, শক্তির এক উৎস রয়েছে, যাঁকে সবসময়ই পাওয়া যায় এবং যিনি সবসময়ই সাহায্য করতে ইচ্ছুক—যিহোবা ঈশ্বর।—গীতসংহিতা ২৭:১০, NW.
যিহোবা—শক্তির পরম উৎস
১৭, ১৮. কোন কোন উপায়ে যিহোবা তাঁর পুত্র যিশু খ্রিস্টকে শক্তিশালী করেছিলেন?
১৭ যাতনাদণ্ডে বিদ্ধ হওয়ার সময় যিশু চিৎকার করে বলেছিলেন: “পিতঃ, তোমার হস্তে আমার আত্মা সমর্পণ করি।” (লূক ২৩:৪৬) এরপর তিনি মারা গিয়েছিলেন। মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা তাঁকে ছেড়ে ভয়ে পালিয়ে গিয়েছিল। (মথি ২৬:৫৬) যিশুর তখন কেবল শক্তির একমাত্র উৎস ছিল—তাঁর স্বর্গীয় পিতা। কিন্তু, যিহোবার প্রতি তাঁর নির্ভরতা নিষ্ফল হয়নি। তাঁর পিতার প্রতি যিশুর আনুগত্যের ফলে তাঁর ওপর যিহোবার নিজের অনুগত সমর্থন ছিল।—গীতসংহিতা ১৮:২৫; ইব্রীয় ৭:২৬.
১৮ পৃথিবীতে যিশুর পরিচর্যার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত, যিহোবা তাঁর পুত্রকে সেই সমস্তকিছু জুগিয়েছেন, যা মৃত্যু পর্যন্ত নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার জন্য তাঁর প্রয়োজন ছিল। উদাহরণস্বরূপ, যিশু বাপ্তিস্ম নেওয়ার পর পরই, পরিচর্যা শুরু করার সময় তিনি তাঁর পিতার স্বর শুনতে পেয়েছিলেন, যা অনুমোদন এবং তাঁর প্রতি যিহোবার প্রেমের স্বীকৃতিকে প্রকাশ করেছিল। যখন যিশুর সাহায্যের প্রয়োজন হয়েছিল, তখন যিহোবা তাঁকে শক্তিশালী করার জন্য দূতেদের পাঠিয়েছিলেন। যিশু যখন তাঁর পার্থিব জীবনের শেষে চূড়ান্ত পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছিলেন, তখন যিহোবা অনুমোদন সহকারে তাঁর বিনতি এবং অনুরোধ শুনেছিলেন। নিশ্চিতভাবে, এগুলোর সবই যিশুর কাছে শক্তিবর্ধক ছিল।—মার্ক ১:১১, ১৩; লূক ২২:৪৩.
১৯, ২০. কীভাবে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, যিহোবা আমাদের প্রয়োজনের সময় আমাদের শক্তিশালী করবেন?
১৯ যিহোবা আমাদের জন্যও শক্তির প্রধান উৎস হতে চান। (২ বংশাবলি ১৬:৯) সমস্ত সামর্থ্যের আধিক্য এবং শক্তির প্রাবল্যের প্রকৃত উৎস আমাদের প্রয়োজনের সময় আমাদের কাছে শক্তিবর্ধক হয়ে উঠতে পারেন। (যিশাইয় ৪০:২৬) যুদ্ধ, দারিদ্র, অসুস্থতা, মৃত্যু অথবা আমাদের নিজেদের অসিদ্ধতা আমাদের প্রচুর চাপের মধ্যে ফেলতে পারে। জীবনের পরীক্ষাগুলো যখন “বলবান শত্রু” হিসেবে আমাদের জর্জরিত করে বলে মনে হয়, তখন যিহোবা আমাদের শক্তি ও আমাদের পরাক্রম হতে পারেন। (গীতসংহিতা ১৮:১৭; যাত্রাপুস্তক ১৫:২) আমাদের জন্য তাঁর এক ক্ষমতাশালী সাহায্য রয়েছে—তাঁর পবিত্র আত্মা। তাঁর আত্মার মাধ্যমে যিহোবা “ক্লান্ত ব্যক্তিকে শক্তি” দেন, যাতে সেই ব্যক্তি “ঈগল পক্ষীর ন্যায় পক্ষসহকারে ঊদ্ধের্ব” উঠতে পারেন।—যিশাইয় ৪০:২৯, ৩১.
২০ এই নিখিলবিশ্বে ঈশ্বরের আত্মা হল সবচেয়ে ক্ষমতাশালী শক্তি। পৌল বলেছিলেন: “যিনি আমাকে শক্তি দেন, তাঁহাতে আমি সকলই করিতে পারি।” হ্যাঁ, আমাদের প্রেমময় স্বর্গীয় পিতা আমাদের “পরাক্রমের উৎকর্ষ” দান করতে পারেন, যাতে আমরা সমস্ত কষ্টকর সমস্যা সহ্য করতে পারি, যতক্ষণ পর্যন্ত না তিনি তাঁর প্রতিজ্ঞাত পরমদেশে “সকলই নূতন” করেন, যা একেবারে কাছেই।—ফিলিপীয় ৪:১৩; ২ করিন্থীয় ৪:৭; প্রকাশিত বাক্য ২১:৪, ৫.
[পাদটীকা]
a ডব্লু. ই. ভাইনের ভাইনস কমপ্লিট এক্সপজিটরি ডিকশনারি অফ ওল্ড আ্যন্ড নিউ টেস্টামেন্ট ওয়ার্ডস্ বলে: “[প্যারাগোরিয়া] শব্দের এক মৌখিক অভিব্যক্তি সেই ওষুধগুলোকে নির্দেশ করে, যেগুলো যন্ত্রণাকে লাঘব করে। (ইং., ‘প্যারাগোরিক’)।”
আপনি কি স্মরণ করতে পারেন?
• রোমের ভাইয়েরা কীভাবে পৌলের কাছে “শক্তিবর্ধক” প্রমাণিত হয়েছিল?
• কোন কোন উপায়ে আমরা মণ্ডলীতে “শক্তিবর্ধক” হতে পারি?
• কীভাবে যিহোবা আমাদের শক্তির পরম উৎস?
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
ভাইয়েরা তাদের অনুগত সমর্থন, উৎসাহ দেওয়া এবং ব্যক্তিগত কাজগুলো করার মাধ্যমে পৌলের “শক্তিবর্ধক” প্রমাণিত হয়েছিল
[২১ পৃষ্ঠার চিত্র]
পালকে শক্তিশালী করার জন্য প্রাচীনরা নেতৃত্ব নেয়