কোনো কিছুই যেন আপনাকে পুরস্কার থেকে বঞ্চিত না করে
“তারা যেন তোমাদের পুরস্কার পাবার পথে বাধা না জন্মায়।”—কল. ২:১৮, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন।
১, ২. (ক) ঈশ্বরের দাসেরা কোন পুরস্কার লাভ করার জন্য অপেক্ষা করে আছে? (খ) কী আমাদের নিজেদের পুরস্কারের প্রতি চোখ রাখতে সাহায্য করে? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)
অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের এক মূল্যবান আশা রয়েছে। তারা স্বর্গীয় জীবন লাভ করার জন্য অপেক্ষা করে রয়েছে। প্রেরিত পৌল এই আশাকে “ঈশ্বরের কৃত ঊর্দ্ধ্বদিক্স্থ আহ্বানের পণ” বা পুরস্কার বলে উল্লেখ করেছিলেন। (ফিলি. ৩:১৪) অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা স্বর্গে যিশু খ্রিস্টের সঙ্গে তাঁর রাজ্যে শাসন করবে এবং মানুষকে সিদ্ধতায় পৌঁছাতে সাহায্য করার জন্য তাঁর সঙ্গে কাজ করবে। (প্রকা. ২০:৬) এটা কতই-না চমৎকার এক আশা! অন্যদিকে, যারা আরও মেষের অন্তর্ভুক্ত, তারা এক ভিন্ন পুরস্কারের জন্য অপেক্ষা করে রয়েছে। তাদের পরমদেশ পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকার আশা রয়েছে আর এই আশা তাদের প্রকৃতপক্ষে সুখী করে!—২ পিতর ৩:১৩.
২ পৌল তার সহঅভিষিক্ত খ্রিস্টানদের বিশ্বস্ততা বজায় রাখার এবং পুরস্কার লাভ করার বিষয়ে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। তিনি তাদের বলেছিলেন: “ঊর্দ্ধ্বস্থ বিষয় ভাব।” (কল. ৩:২) তাদের নিজেদের মূল্যবান স্বর্গীয় আশার উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার প্রয়োজন ছিল। (কল. ১:৪, ৫) যিহোবার আশীর্বাদগুলো নিয়ে চিন্তা করা তাঁর সমস্ত দাসকে পুরস্কারের প্রতি চোখ রাখতে সাহায্য করে। এই বিষয়টা সত্য, তা তাদের স্বর্গ অথবা পৃথিবী, যেখানেই বাস করার আশা থাকুক না কেন।—১ করি. ৯:২৪.
৩. পৌল খ্রিস্টানদের কোন বিষয়ে সাবধান করেছিলেন?
৩ এ ছাড়া, পৌল খ্রিস্টানদের এমন বিপদগুলো সম্বন্ধে সাবধান করেছিলেন, যেগুলো তাদের পুরস্কার পাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারত বা পুরস্কার থেকে বঞ্চিত করতে পারত। উদাহরণ স্বরূপ, তিনি কলসীয়দের কাছে এমন মিথ্যা খ্রিস্টানদের বিষয়ে লিখেছিলেন, যারা খ্রিস্টে বিশ্বাস স্থাপন করার পরিবর্তে মোশির ব্যবস্থা অনুসরণ করার মাধ্যমে ঈশ্বরকে খুশি করার চেষ্টা করছিল। (কল. ২:১৬-১৮) এ ছাড়া, পৌল এমন বিপদগুলো সম্বন্ধে আলোচনা করেছিলেন, যেগুলো আমাদের সময়েও দেখা যায় এবং যেগুলো আমাদেরও পুরস্কার লাভ করা থেকে বঞ্চিত করতে পারে। তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন, কীভাবে অনৈতিক আকাঙ্ক্ষার প্রতিরোধ করা যায় এবং সেইসময় কী করা যায়, যখন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অথবা মণ্ডলীতে ভাইদের সঙ্গে আমাদের সমস্যা দেখা দেয়। পৌলের মূল্যবান পরামর্শ বর্তমানে আমাদের সাহায্য করতে পারে। তাই আসুন, আমরা কলসীয়দের উদ্দেশে লেখা তার চিঠি থেকে কিছু প্রেমময় সাবধানবাণী পরীক্ষা করে দেখি।
অনৈতিক আকাঙ্ক্ষাকে মৃত্যুসাৎ করুন
৪. কেন অনৈতিক আকাঙ্ক্ষার কারণে আমরা পুরস্কার লাভ করা থেকে বঞ্চিত হতে পারি?
৪ পৌল তার ভাইদের তাদের অপূর্ব আশার বিষয়ে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার পর লিখেছিলেন: “অতএব তোমরা পৃথিবীস্থ আপন আপন অঙ্গ সকল মৃত্যুসাৎ কর, যথা, বেশ্যাগমন, অশুচিতা, মোহ [“দেহলালসা,” জুবিলী বাইবেল], কু-অভিলাষ, এবং লোভ।” (কল. ৩:৫) অনৈতিক আকাঙ্ক্ষাগুলো খুবই প্রবল হয়ে উঠতে পারে এবং সেগুলোর কারণে আমরা যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ও ভবিষ্যতের বিষয়ে আমাদের আশা হারিয়ে ফেলতে পারি। একজন ভাই যিনি তার অনৈতিক আকাঙ্ক্ষার কাছে নতিস্বীকার করেছিলেন এবং পরবর্তী সময় মণ্ডলীতে ফিরে এসেছিলেন, তিনি বলেছিলেন, তার সেই আকাঙ্ক্ষাগুলো এতটাই প্রবল হয়ে উঠেছিল যে, তার ‘চেতনা ফিরে পেতে গিয়ে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল।’
৫. কীভাবে আমরা বিপদজনক পরিস্থিতিতে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে পারি?
৫ আমাদের বিশেষভাবে সেইসময় সতর্ক থাকতে হবে, যখন আমরা এমন কোনো পরিস্থিতিতে থাকি, যেটা আমাদের যিহোবার নৈতিক মানের অবাধ্য হওয়ার দিকে পরিচালিত করতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ, বিয়ের উদ্দেশ্যে মেলামেশা করছে, এমন ব্যক্তিদের জন্য কিছু কিছু বিষয়ে যেমন, একে অপরকে স্পর্শ করা, চুম্বন করা অথবা একান্তে মিলিত হওয়ার ক্ষেত্রে একেবারে শুরু থেকেই সীমা নির্ধারণ করা বিজ্ঞতার কাজ হবে। (হিতো. ২২:৩) অন্যান্য বিপদজনক পরিস্থিতি সেইসময় ঘটতে পারে, যখন আমরা ব্যাবসার উদ্দেশ্যে কোথাও যাই অথবা বিপরীত লিঙ্গের কোনো ব্যক্তির সঙ্গে কাজ করি। (হিতো. ২:১০-১২, ১৬) নিজেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য আপনি কী করতে পারেন? অন্যদের জানান যে, আপনি একজন যিহোবার সাক্ষি। সঠিকভাবে আচরণ করুন এবং কখনো ভুলে যাবেন না, প্রেমের ভান করা বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া, আমরা যদি দুঃখের মধ্যে থাকি অথবা নিজেদের একা বলে মনে করি, তা হলেও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। সেইসময় আমরা হয়তো চাইতে পারি যে, কেউ আমাদের মূল্যবান বলে মনে করুক। আমরা হয়তো এতটাই মরিয়া হয়ে উঠতে পারি যে, যেকোনো ব্যক্তি আমাদের প্রতি মনোযোগ দিলে, আমরা সেটার প্রতি সাড়া দিতে পারি। এটা বিপদজনক। আপনি যদি কখনো এমনটা অনুভব করেন, তা হলে এমন কিছু করবেন না, যা আপনাকে পুরস্কার লাভ করা থেকে বঞ্চিত করবে। সাহায্যের জন্য যিহোবা ও আপনার ভাই-বোনদের শরণাপন্ন হোন।—পড়ুন, গীতসংহিতা ৩৪:১৮; হিতোপদেশ ১৩:২০.
৬. আমোদপ্রমোদ বাছাই করার সময় আমাদের কী মনে রাখতে হবে?
৬ অনৈতিক আকাঙ্ক্ষা মৃত্যুসাৎ করার জন্য আমাদের অনৈতিক আমোদপ্রমোদকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। বর্তমানে প্রাপ্তিসাধ্য বেশিরভাগ আমোদপ্রমোদ আমাদের সদোম ও ঘমোরায় ঘটা বিষয়গুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়। (যিহূদা ৭) আমোদপ্রমোদের উদ্যোক্তারা যৌন অনৈতিকতাকে এক স্বাভাবিক ও অক্ষতিকর বিষয় হিসেবে তুলে ধরে। তাই, আমাদের সবসময় সতর্ক থাকতে হবে। আমরা জগতের কাছ থেকে আসা যেকোনো আমোদপ্রমোদ গ্রহণ করতে পারি না। এর পরিবর্তে, আমাদের এমন আমোদপ্রমোদ বাছাই করতে হবে, যেটা আমাদের জীবনের পুরস্কার লাভ করা থেকে বঞ্চিত করবে না।—হিতো. ৪:২৩.
প্রেম ও দয়া ‘পরিধান করুন’
৭. খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে কোন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে?
৭ আমরা খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর সদস্য হতে পেরে সত্যিই সুখী। আমরা সভায় ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করি এবং প্রেমের সঙ্গে একে অন্যকে সাহায্য করি। এই বিষয়গুলো আমাদের পুরস্কারের প্রতি চোখ রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু, কখনো কখনো ভুল বোঝাবুঝির কারণে আমাদের ভাই-বোনদের মধ্যে সমস্যা দেখা দিতে পারে। আমরা যদি সেই সমস্যাগুলোর সমাধান না করি, তা হলে খুব সহজেই আমাদের মধ্যে বিরক্তির মনোভাব গড়ে উঠতে পারে।—পড়ুন, ১ পিতর ৩:৮, ৯.
৮, ৯. (ক) কোন গুণগুলো আমাদের পুরস্কার লাভ করতে সাহায্য করবে? (খ) কোনো সহখ্রিস্টান যদি আমাদের অসন্তুষ্ট করেন, তা হলে কী আমাদের শান্তি বজায় রাখার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে?
৮ আমরা বিরক্তির মনোভাবকে আমাদের পুরস্কার লাভ করা থেকে বঞ্চিত করার সুযোগ দিতে পারি না। খ্রিস্টানদের কী করতে হবে, সেই বিষয়ে পৌল ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন: “তোমরা, ঈশ্বরের মনোনীত লোকদের, পবিত্র ও প্রিয় লোকদের, উপযোগী মতে করুণার চিত্ত, মধুর ভাব, নম্রতা, মৃদুতা, সহিষ্ণুতা পরিধান কর। পরস্পর সহনশীল হও, এবং যদি কাহাকেও দোষ দিবার কারণ থাকে, তবে পরস্পর ক্ষমা কর; প্রভু [ঈশ্বর] যেমন তোমাদিগকে ক্ষমা করিয়াছেন, তোমরাও তেমনি কর। আর এই সকলের উপরে প্রেম পরিধান কর; তাহাই সিদ্ধির যোগবন্ধন।”—কল. ৩:১২-১৪.
৯ প্রেম ও মধুর ভাব বা দয়া অন্যদের ক্ষমা করার জন্য আমাদের সাহায্য করতে পারে। আমরা যদি কোনো ব্যক্তির কথা অথবা কাজের কারণে দুঃখ পাই, তা হলে আমরা সেই সময়গুলোর কথা চিন্তা করতে পারি, যখন আমরা অন্যদের বিরুদ্ধে নির্দয় কথা বলেছিলাম অথবা কাজ করেছিলাম এবং তারা আমাদের ক্ষমা করে দিয়েছিল। তাদের প্রেম ও দয়ার কারণে আমরা কতই-না কৃতজ্ঞ হয়েছিলাম! (পড়ুন, উপদেশক ৭:২১, ২২.) আমরা কৃতজ্ঞ যে, খ্রিস্ট সদয়ভাবে সত্য উপাসকদের একত্রিত করেন। (কল. ৩:১৫) আমরা সবাই একই ঈশ্বরকে ভালোবাসি, একই বার্তা প্রচার করি এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একই সমস্যার মুখোমুখি হই। আমরা যদি সদয় ও প্রেমময় হই এবং একে অন্যকে ক্ষমা করি, তা হলে মণ্ডলী আরও একতাবদ্ধ হবে এবং আমরা পুরস্কারের প্রতি মনোযোগ বজায় রাখতে পারব।
১০, ১১. (ক) কেন ঈর্ষা করা বিপদজনক? (খ) ঈর্ষা যাতে আমাদের পুরস্কার লাভ করার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়, সেই বিষয়টা নিশ্চিত করার জন্য আমরা কী করতে পারি?
১০ ঈর্ষা আমাদের পুরস্কার লাভ করার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। বাইবেলের উদাহরণগুলো দেখায় যে, ঈর্ষা করা কতটা বিপদজনক। উদাহরণ স্বরূপ, কয়িন হেবলের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে তাকে হত্যা করেছিলেন। কোরহ, দাথন ও অবীরাম মোশির প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন। রাজা শৌল দায়ূদের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে তাকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন। ঈশ্বরের বাক্যে প্রাপ্ত এই কথাগুলো কতই-না সত্য: “যেখানে ঈর্ষা ও প্রতিযোগিতা, সেইখানে অস্থিরতা ও সমুদয় দুষ্কর্ম্ম থাকে।”—যাকোব ৩:১৬.
১১ আমরা যদি প্রকৃতই প্রেমময় ও সদয় হওয়ার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করি, তা হলে আমরা সহজেই ঈর্ষান্বিত হয়ে যাব না। ঈশ্বরের বাক্য বলে: “প্রেম চিরসহিষ্ণু, প্রেম মধুর,” বা সদয় এবং “ঈর্ষা করে না।” (১ করি. ১৩:৪) ঈর্ষা যাতে আমাদের ব্যক্তিত্বের একটা অংশ হয়ে না ওঠে, সেই বিষয়টা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন বিষয়কে আমাদের যিহোবার মতো করে দেখার চেষ্টা করতে হবে। আমাদের ভাই-বোনদের একই দেহের অর্থাৎ মণ্ডলীর অংশ হিসেবে দেখতে হবে। বাইবেল বলে: “এক অঙ্গ গৌরব প্রাপ্ত হইলে তাহার সহিত সকল অঙ্গই আনন্দ করে।” (১ করি. ১২:১৬-১৮, ২৬) আমাদের কোনো ভাইয়ের প্রতি যদি ভালো কিছু ঘটে, তা হলে আমরা তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হওয়ার পরিবর্তে তার জন্য আনন্দিত হব। রাজা শৌলের ছেলে যোনাথনের উত্তম উদাহরণের বিষয়ে চিন্তা করুন। যোনাথনের পরিবর্তে যখন দায়ূদকে রাজা হিসেবে মনোনীত করা হয়েছিল, তখন যোনাথন ঈর্ষান্বিত হননি। এর পরিবর্তে, তিনি এমনকী দায়ূদকে উৎসাহ ও সমর্থন জুগিয়েছিলেন। (১ শমূ. ২৩:১৬-১৮) আমরা কি যোনাথনের মতো সদয় ও প্রেমময় হতে পারি?
পরিবারগতভাবে পুরস্কার লাভ করুন
১২. বাইবেলের কোন পরামর্শ আমাদের পরিবারকে পুরস্কার লাভ করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে?
১২ আমাদের পরিবারের সকল সদস্য যদি বাইবেলের নীতি কাজে লাগায়, তা হলে আমাদের পরিবার শান্তিপূর্ণ ও সুখী হবে এবং পুরস্কার লাভ করবে। পৌল পরিবারের জন্য এই বিজ্ঞ পরামর্শ দিয়েছিলেন: “নারীগণ, তোমরা আপন আপন স্বামীর বশীভূতা হও, যেমন প্রভুতে উপযুক্ত। স্বামীরা, তোমরা আপন আপন স্ত্রীকে প্রেম কর, তাহাদের প্রতি কটুব্যবহার করিও না। সন্তানেরা, তোমরা সর্ব্ববিষয়ে পিতামাতার আজ্ঞাবহ হও, কেননা তাহাই প্রভুতে তুষ্টিজনক। পিতারা, তোমরা আপন আপন সন্তানদিগকে ক্রুদ্ধ করিও না, পাছে তাহাদের মনোভঙ্গ হয়।” (কল. ৩:১৮-২১) আপনি কি বুঝতে পারছেন, কীভাবে এই পরামর্শ আপনার পরিবারকে সাহায্য করতে পারে?
১৩. কীভাবে একজন খ্রিস্টান বোন তার ন-সাক্ষি স্বামীকে যিহোবার সেবা করার জন্য আগ্রহী হতে সাহায্য করতে পারেন?
১৩ হতে পারে, আপনি একজন খ্রিস্টান বোন এবং আপনার স্বামী যিহোবার সেবা করেন না। আপনি যদি মনে করেন, আপনার স্বামী আপনার সঙ্গে উপযুক্ত আচরণ করেন না, তা হলে আপনি কী করবেন? আপনি হয়তো রেগে গিয়ে তার সঙ্গে তর্ক করতে পারেন কিন্তু তা করা কি পরিস্থিতিকে আরও ভালো করবে? এমনকী আপনি যদি তর্কে জিতেও যান, আপনি কি তাকে যিহোবার সেবা করার জন্য আগ্রহী হতে সাহায্য করতে পারবেন? সম্ভবত না। কিন্তু, আপনি যদি পরিবারের মস্তক হিসেবে তার ভূমিকার প্রতি সম্মান দেখান, তা হলে আপনি আপনার পরিবারকে আরও শান্তিপূর্ণ হতে সাহায্য করতে পারবেন এবং যিহোবার নামের সম্মান নিয়ে আসবেন। আপনার উত্তম উদাহরণ হয়তো এমনকী আপনার স্বামীকে যিহোবার সেবা করার জন্য আগ্রহী হতে সাহায্য করবে এবং এরপর আপনারা দু-জনেই পুরস্কার লাভ করতে পারবেন।—পড়ুন, ১ পিতর ৩:১, ২.
১৪. একজন খ্রিস্টান স্বামীর ন-সাক্ষি স্ত্রী যদি তাকে সম্মান না করেন, তা হলে তার কী করা উচিত?
১৪ হতে পারে, আপনি একজন খ্রিস্টান ভাই এবং আপনার স্ত্রী যিহোবার সেবা করেন না। আপনি যদি মনে করেন, আপনার স্ত্রী আপনাকে সম্মান করেন না, তা হলে আপনি কী করতে পারেন? আপনি যদি চিৎকার করে তার উপর কর্তৃত্ব করার চেষ্টা করেন, তা হলে তিনি কি আপনাকে সম্মান করবেন? অবশ্যই না! ঈশ্বর আশা করেন যেন আপনি এমন একজন প্রেমময় স্বামী হন, যিনি যিশুকে অনুকরণ করেন। (ইফি. ৫:২৩) মণ্ডলীর মস্তক যিশু সবসময় ধৈর্য ধরেন এবং ভালোবাসা দেখান। (লূক ৯:৪৬-৪৮) আপনি যদি যিশুকে অনুকরণ করেন, তা হলে একসময় আপনার স্ত্রীও হয়তো যিহোবার সেবা করার বিষয়ে আগ্রহী হবেন।
১৫. কীভাবে একজন খ্রিস্টান পুরুষ তার স্ত্রীকে দেখান যে, তিনি তাকে ভালোবাসেন?
১৫ যিহোবা স্বামীদের এই নির্দেশনা দেন: “তোমরা আপন আপন স্ত্রীকে প্রেম কর, তাহাদের প্রতি কটুব্যবহার করিও না।” (কল. ৩:১৯) একজন প্রেমময় স্বামী তার স্ত্রীর প্রতি সম্মান দেখান। কীভাবে? তিনি মন দিয়ে তার স্ত্রীর মতামত শোনেন এবং স্ত্রীকে জানান যে, তার কথাগুলো তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। (১ পিতর ৩:৭) এমনকী যদিও তিনি হয়তো সবসময় তার স্ত্রীর কথা মতো কাজ করতে পারেন না, কিন্তু মন দিয়ে তার কথা শোনা তাকে আরও ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে। (হিতো. ১৫:২২) একজন প্রেমময় স্বামী তার স্ত্রীর কাছ থেকে সম্মান দাবি করেন না। এর পরিবর্তে, তিনি তার স্ত্রীর কাছ থেকে সম্মান অর্জন করার চেষ্টা করেন। একজন স্বামী যদি তার স্ত্রী ও সন্তানকে ভালোবাসেন, তা হলে তাদের যিহোবার সেবা করার এবং জীবনের পুরস্কার লাভ করার সময় আরও বেশি সুখী হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
অল্পবয়সিরা—পুরস্কার লাভ করার বিষয়ে কোনো কিছুকেই বাধা হতে দিও না!
১৬, ১৭. একজন অল্পবয়সি হিসেবে কীভাবে তুমি তোমার বাবা-মায়ের প্রতি অতিরিক্ত অসন্তুষ্ট হওয়া এড়িয়ে চলতে পার?
১৬ হতে পারে, তুমি একজন কিশোর বয়সি সন্তান এবং তুমি মনে করো যে, তোমার বাবা-মা তোমাকে বোঝেন না অথবা তারা খুবই কঠোর। এই বিষয়গুলো হয়তো তোমাকে এতটাই অসন্তুষ্ট করতে পারে যে, তুমি ভাবতে পার, তুমি এমনকী যিহোবার সেবা করতে চাও কি না। কিন্তু, তুমি যদি যিহোবাকে পরিত্যাগ করো, তা হলে তুমি বুঝতে পারবে যে, জগতের কোনো ব্যক্তিই তোমাকে তোমার খ্রিস্টান বাবা-মা ও মণ্ডলীর বন্ধুবান্ধবের মতো ভালোবাসে না।
১৭ এই বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করো: তোমার বাবা-মা যদি কখনো তোমাকে সংশোধন না করেন, তা হলে কীভাবে তুমি জানবে, তারা তোমার জন্য সত্যিই চিন্তা করেন কি না? (ইব্রীয় ১২:৮) এটা ঠিক যে, তারা সিদ্ধ নন আর তাই তারা যেভাবে শাসন করেন, সেটার কারণে তুমি অসন্তুষ্ট হতে পার। কিন্তু, তোমাকে যেভাবে শাসন করা হয়েছে, সেটার উপর মনোযোগ দিও না। এর পরিবর্তে, তাদের কাজ ও কথার পিছনে থাকা কারণগুলো বোঝার চেষ্টা করো। শান্ত থাকার এবং অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া না দেখানোর চেষ্টা করো। ঈশ্বরের বাক্য বলে: “যে বাক্য সম্বরণ করে, সে জ্ঞানবান; আর যে শীতলাত্মা, সে বুদ্ধিমান।” (হিতো. ১৭:২৭) এমন একজন পরিপক্ব ব্যক্তি হওয়ার লক্ষ্য স্থাপন করো, যিনি পরামর্শ গ্রহণ করেন ও সেটা থেকে শিক্ষা লাভ করেন, তা সেটা যেভাবেই দেওয়া হোক না কেন। (হিতো. ১:৮) কখনো ভুলে যেও না, যিহোবাকে ভালোবাসেন এমন বাবা-মা পাওয়া হল আশীর্বাদের এক বিষয়। তারা তোমাকে চিরকাল বেঁচে থাকার জন্য সাহায্য করতে চান।
১৮. কেন আপনি পুরস্কারের প্রতি চোখ রাখার বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ?
১৮ আমাদের স্বর্গে অথবা পৃথিবীতে, যেখানেই চিরকাল বেঁচে থাকার আশা থাকুক না কেন, আমরা প্রত্যেকেই এক চমৎকার ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষা করতে পারি। আমাদের আশা হল এক বাস্তব বিষয়। এটা নিখিলবিশ্বের সৃষ্টিকর্তার প্রতিজ্ঞার উপর ভিত্তি করে রয়েছে, যিনি বলেন: “পৃথিবী সদাপ্রভু-বিষয়ক জ্ঞানে পরিপূর্ণ হইবে।” (যিশা. ১১:৯) শীঘ্রই, পৃথিবীতে থাকা সকলে ঈশ্বরের কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করবে। এটা হল এমন এক পুরস্কার, যেটা লাভ করার জন্য বর্তমানে কাজ করা সত্যিই সার্থক হবে। তাই, সবসময় আপনার কাছে করা যিহোবার প্রতিজ্ঞার কথা স্মরণে রাখুন এবং কোনো কিছুকেই আপনাকে পুরস্কার লাভ করা থেকে বঞ্চিত করার সুযোগ দেবেন না!