কেন আপনার নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখবেন?
“হে সদাপ্রভু, . . . আমার . . . সিদ্ধতানুসারে [“নীতিনিষ্ঠা অনুসারে,” NW] আমার বিচার কর।” —গীত. ৭:৮.
১, ২. কিছু সাধারণ পরিস্থিতি কী, যেগুলো একজন খ্রিস্টানের নীতিনিষ্ঠাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফেলে?
তিনটে দৃশ্য কল্পনা করুন: একটা ছেলেকে তার কিছু সহছাত্রছাত্রী উপহাস করছে। তারা তাকে রাগিয়ে তোলার, সম্ভবত গালিগালাজ অথবা মারামারি করার জন্য প্ররোচিত করার চেষ্টা করছে। সে কি প্রতিশোধ নেবে, নাকি সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে চলে যাবে? একজন স্বামী বাড়িতে একা ইন্টারনেটে কিছু গবেষণা করছেন। তার কম্পিউটারের স্ক্রিনে হঠাৎ একটা উইন্ডো আসে, যেখানে নোংরা ওয়েব সাইটের বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে। তিনি কি প্রলুব্ধ হয়ে সেই ওয়েব সাইটে ঢুকবেন, নাকি তিনি তা এড়িয়ে যাবেন? একজন খ্রিস্টান মহিলা একটা ছোট্ট দলের সঙ্গে কথা বলার সময়, সেই কথাবার্তা নেতিবাচক দিকে, মণ্ডলীর কোনো বোন সম্বন্ধে ক্ষতিকর গুজবের দিকে মোড় নেয়। তিনি কি তাতে অংশ নেবেন, নাকি তিনি বিষয়বস্তু পরিবর্তন করার চেষ্টা করবেন?
২ যদিও পরিস্থিতিগুলো বিভিন্ন রকমের, তবুও একটা বিষয়ে সেগুলোর মিল রয়েছে। প্রতিটা পরিস্থিতির সঙ্গে একজন খ্রিস্টান হিসেবে নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার লড়াই যুক্ত রয়েছে। আপনি যখন জীবনের উদ্বিগ্নতা, চাহিদা ও লক্ষ্যগুলোর মুখোমুখি হন, তখন কি আপনার নীতিনিষ্ঠা সম্বন্ধে চিন্তা করেন? প্রতিদিন লোকেরা তাদের বেশভূষা, তাদের স্বাস্থ্য, জীবিকানির্বাহের প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং বন্ধুত্বের উত্থাপ-পতন, এমনকি হয়তো রোমান্টিক সম্পর্ক নিয়ে চিন্তা করে থাকে। আমরা হয়তো এই ধরনের বিষয়ে যথেষ্ট মনোযোগ দিয়ে থাকি। কিন্তু, যিহোবা যখন আমাদের হৃদয় অনুসন্ধান করেন, তখন কোন বিষয়টা তাঁর কাছে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ? (গীত. ১৩৯:২৩, ২৪) সেটা হল আমাদের নীতিনিষ্ঠা।
৩. যিহোবা আমাদেরকে কোন বিশেষ সুযোগ দিয়েছেন আর এই প্রবন্ধে আমরা কী বিবেচনা করব?
৩ ‘সমস্ত উত্তম দান এবং সমস্ত সিদ্ধ বরের’ দাতা যিহোবা আমাদের প্রত্যেককে বিভিন্ন ধরনের দান দিয়েছেন। (যাকোব ১:১৭) তাঁর কারণেই আমাদের এই ধরনের দান রয়েছে যেমন, একটা দেহ, একটা মন, সুস্বাস্থ্য এবং বিভিন্ন রকমের ক্ষমতা। (১ করি. ৪:৭) কিন্তু, যিহোবা কখনোই আমাদেরকে নীতিনিষ্ঠা দেখানোর ক্ষেত্রে জোর করেন না। আমরা এই গুণ গড়ে তুলব কি না, সেই বিষয়ে তিনি আমাদের বেছে নেওয়ার সুযোগ দেন। (দ্বিতী. ৩০:১৯) তাহলে, আমাদের পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে, নীতিনিষ্ঠা কী। এ ছাড়া, কেন এই গুণটা অতীব গুরুত্বপূর্ণ, সেই বিষয়ে আমরা তিনটে কারণ বিবেচনা করব।
নীতিনিষ্ঠা কী?
৪. নীতিনিষ্ঠার সঙ্গে কী যুক্ত রয়েছে আর পশু বলিদানের বিষয়ে দেওয়া যিহোবার আইন থেকে আমরা হয়তো কী শিখতে পারি?
৪ নীতিনিষ্ঠা কী, সেই বিষয়ে অনেকের অস্পষ্ট ধারণা রয়েছে বলে মনে হয়। উদাহরণস্বরূপ, প্রায়ই লোকেরা মনে করে থাকে যে, এর অর্থ সততা। যদিও সততা গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু এটি নীতিনিষ্ঠার একটি অংশ মাত্র। বাইবেলে যেমনটা ব্যবহৃত হয়েছে, সেই অনুসারে নীতিনিষ্ঠার সঙ্গে নৈতিক সম্পূর্ণতা ও দৃঢ়তা যুক্ত রয়েছে। যে-ইব্রীয় শব্দগুলো ‘নীতিনিষ্ঠার’ সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, সেগুলো এমন একটি মূল শব্দ থেকে এসেছে, যেটির অর্থ অক্ষত, পূর্ণাঙ্গ অথবা ত্রুটিহীন। এগুলোর মধ্যে একটি শব্দ যিহোবার কাছে উৎসর্গীকৃত বলিদানের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে। বলিদানের জন্য একটা পশু কেবলমাত্র তখনই যিহোবার গ্রাহ্য হতো, যদি কিনা তা নির্দোষ বা অক্ষত অথবা পূর্ণাঙ্গ থাকত। (পড়ুন, লেবীয় পুস্তক ২২:১৯, ২০.) যিহোবা সেই ব্যক্তিদের দৃঢ়ভাবে ভর্ৎসনা করেছিলেন, যারা বলিদানের জন্য খঞ্জ, রুগ্ন অথবা অন্ধ পশু উৎসর্গ করার মাধ্যমে তাঁর নির্দেশনা অবজ্ঞা করেছিল।—মালাখি ১:৬-৮.
৫, ৬. (ক) কোন উদাহরণগুলো দেখায় যে, আমরা প্রায়ই সেই বিষয়গুলোকে মূল্যবান বলে গণ্য করি, যেগুলো পূর্ণাঙ্গ বা সম্পূর্ণ? (খ) অসিদ্ধ মানুষদের বেলায় নীতিনিষ্ঠা বলতে কি সিদ্ধতাকে বোঝায়? ব্যাখ্যা করুন।
৫ কোনো পূর্ণাঙ্গ অথবা সম্পূর্ণ কিছু খোঁজার ও সেটাকে মূল্যবান বলে গণ্য করার ধারণা অস্বাভাবিক নয়। উদাহরণস্বরূপ, এমন একজন বই সংগ্রাহকের কথা কল্পনা করুন, যিনি দীর্ঘদিন অনুসন্ধানের পর অত্যন্ত মূল্যবান একটি বই খুঁজে পেয়ে আবিষ্কার করেন যে, সেই বইয়ের অতীব গুরুত্বপূর্ণ কিছু পৃষ্ঠা হারিয়ে গিয়েছে। হতাশ হয়ে তিনি হয়তো সেটি পুনরায় বইয়ের তাকে রেখে দেন। অথবা এমন একজন মহিলার কথা চিন্তা করুন, যিনি সমুদ্রসৈকত দিয়ে হাঁটছেন এবং উপকূলের মধ্যে থেকে ঢেউয়ের সঙ্গে আসা কিছু ঝিনুক সংগ্রহ করছেন। এই সৃষ্টির বৈচিত্র্য ও সৌন্দর্য দেখে রোমাঞ্চিত হয়ে তিনি মাঝেমধ্যে নিচু হয়ে ঝিনুক পরীক্ষা করেন। তিনি কোনগুলো রাখেন? যেগুলো পূর্ণাঙ্গ এবং অক্ষত। একইভাবে, ঈশ্বরও সেই লোকেদের অনুসন্ধান করেন, যাদের এই পূর্ণাঙ্গ অথবা একাগ্র বা সম্পূর্ণতা গুণটা রয়েছে।—২ বংশা. ১৬:৯.
৬ তবে, আপনি হয়তো ভাবতে পারেন যে, নীতিনিষ্ঠার জন্য সিদ্ধতার প্রয়োজন আছে কি না। যেহেতু আমরা পাপ এবং অসিদ্ধতার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত, তাই আমরা হয়তো নিজেদেরকে কিছুটা অসম্পূর্ণ বই অথবা নষ্ট ঝিনুকের মতো বলে মনে করতে পারি। আপনি কি মাঝেমধ্যে এইরকমই অনুভব করেন? এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকুন যে, যিহোবা আমাদের কাছ থেকে সম্পূর্ণ সিদ্ধতা আশা করেন না। তিনি কখনোই আমাদের কাছ থেকে আমাদের সাধ্যের অতিরিক্ত কিছু আশা করেন না।a (গীত. ১০৩:১৪; যাকোব ৩:২) কিন্তু, তিনি চান যেন আমরা নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখি। তাহলে, সিদ্ধতা ও নীতিনিষ্ঠার মধ্যে কি কোনো পার্থক্য আছে? হ্যাঁ। উদাহরণস্বরূপ: একজন যুবক একজন যুবতীকে ভালবাসে, যাকে সে বিয়ে করতে যাচ্ছে। সেই যুবতীর কাছ থেকে সিদ্ধতা আশা করা যুবকের জন্য বোকামি হবে। তবে, সেই যুবতী তাকে সম্পূর্ণ হৃদয় দিয়ে ভালবাসুক অর্থাৎ শুধু তার জন্যই সেই যুবতীর রোমান্টিক ভালবাসা থাকুক বলে চাওয়াটা যুবকের জন্য বিজ্ঞতার কাজ। একইভাবে, যিহোবা হলেন “স্বগৌরব রক্ষণে উদ্যোগী [“একাগ্র ভক্তি পাওয়ার,” NW] ঈশ্বর।” (যাত্রা. ২০:৫) তিনি আমাদের কাছ থেকে সিদ্ধতা আশা করেন না বরং চান যেন আমরা তাঁকে পূর্ণহৃদয়ে ভালবাসি, একমাত্র তাঁকেই উপাসনা প্রদান করি।
৭, ৮. (ক) নীতিনিষ্ঠার বিষয়ে যিশু কোন উদাহরণ স্থাপন করেছেন? (খ) শাস্ত্রীয়ভাবে নীতিনিষ্ঠার অর্থ আসলে কী?
৭ যিশুকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, সমস্ত আজ্ঞার মধ্যে কোনটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তখন তিনি যে-উত্তর দিয়েছিলেন, তা হয়তো আমরা স্মরণ করতে পারি। (পড়ুন, মার্ক ১২:২৮-৩০.) যিশু কেবল সেই প্রশ্নের উত্তরই দেননি; তিনি সেই অনুসারে জীবনযাপনও করেছিলেন। তিনি তাঁর সমস্ত মন, অন্তঃকরণ, প্রাণ ও শক্তি দিয়ে যিহোবাকে ভালবাসার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত উদাহরণ স্থাপন করেছেন। তিনি দেখিয়েছিলেন যে, নীতিনিষ্ঠা কেবল মুখে বলার দ্বারাই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে শুদ্ধ মনোভাব থেকে উদ্ভূত ইতিবাচক কাজগুলোর দ্বারা প্রকাশ পায়। নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার জন্য আমাদের যিশুর পদচিহ্নের অনুগমন করা প্রয়োজন।—১ পিতর ২:২১.
৮ তাই, শাস্ত্রীয়ভাবে আমাদের নীতিনিষ্ঠার অর্থ হল এটা: একমাত্র স্বর্গীয় ব্যক্তি যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি এবং তাঁর প্রকাশিত ইচ্ছা ও উদ্দেশ্যের প্রতি পূর্ণহৃদয়ের ভক্তি। নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার অর্থ হল, আমাদের রোজকার জীবনে আমরা মূলত যিহোবা ঈশ্বরকে খুশি করার চেষ্টা করব। আমাদের জীবনের অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে তাঁর অগ্রাধিকারগুলো প্রতিফলিত হবে। কেন তা অতীব গুরুত্বপূর্ণ, সেই বিষয়ে আসুন আমরা তিনটে কারণ বিবেচনা করি।
১. আমাদের নীতিনিষ্ঠা এবং সার্বভৌমত্বের বিচার্য বিষয়
৯. কীভাবে আমাদের ব্যক্তিগত নীতিনিষ্ঠা সর্বজনীন সার্বভৌমত্বের বিচার্য বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত?
৯ যিহোবার সার্বভৌমত্ব আমাদের নীতিনিষ্ঠার ওপর নির্ভর করে না। তাঁর সার্বভৌমত্ব ন্যায্য, অনন্ত ও সর্বজনীন। এটি সবসময় একই থাকবে, তা যেকোনো সৃষ্ট প্রাণী যা-ই বলুক বা করুক না কেন। কিন্তু, স্বর্গে ও পৃথিবীতে ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বের ওপর চরম নিন্দা নিয়ে আসা হয়েছিল। তাই, বুদ্ধিবিশিষ্ট সমস্ত প্রাণীর সামনে তাঁর শাসনব্যবস্থার সত্যতা প্রতিপাদিত—সঠিক, ন্যায্য ও প্রেমপূর্ণ হিসেবে নিশ্চিত—হতে হবে। যিহোবার সাক্ষি হিসেবে আমরা এমন যেকারো সঙ্গে যিহোবার সর্বজনীন সার্বভৌমত্ব নিয়ে কথা বলতে ভালবাসি, যারা তা শুনতে চায়। কিন্তু, কীভাবে আমরা এই বিচার্য বিষয়ের পক্ষসমর্থন করতে পারি? কীভাবে আমরা দেখাই যে, যিহোবাকে আমরা আমাদের সার্বভৌম হিসেবে বেছে নিই? নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার মাধ্যমে।
১০. মানুষের নীতিনিষ্ঠার বিষয়ে শয়তান কোন অভিযোগ করেছে আর আপনি কীভাবে সাড়া দিতে চান?
১০ আপনার নীতিনিষ্ঠা কীভাবে জড়িত, তা বিবেচনা করুন। শয়তান মূলত দাবি করেছিল যে, কোনো মানুষই ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বের পক্ষসমর্থন করবে না এবং কেউই নিঃস্বার্থ প্রেমের কারণে যিহোবার সেবা করবে না। আত্মিক প্রাণীদের এক বিশাল সমাবেশে দিয়াবল যিহোবাকে বলেছিল: “চর্ম্মের জন্য চর্ম্ম, আর প্রাণের জন্য লোক সর্ব্বস্ব দিবে।” (ইয়োব ২:৪) লক্ষ করুন যে, শয়তান সেই দোষারোপ কেবল ইয়োবের ওপরই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে সাধারণ মানবজাতির ওপরও নিয়ে এসেছিল। তাই, বাইবেল শয়তানকে “আমাদের ভ্রাতৃগণের উপরে দোষারোপকারী” হিসেবে অভিহিত করে। (প্রকা. ১২:১০) সে এই দাবি করে যিহোবাকে টিটকারি দেয় যে, খ্রিস্টানরা—যাদের মধ্যে আপনিও রয়েছেন—বিশ্বস্ত থাকবে না। শয়তান দাবি করে যে, নিজেকে বাঁচানোর জন্য আপনি যিহোবার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবেন। আপনার ওপর নিয়ে আসা এই অভিযোগগুলো সম্বন্ধে আপনি কেমন বোধ করেন? আপনি কি শয়তানকে একজন মিথ্যাবাদী হিসেবে প্রমাণ করার সুযোগকে সাদরে গ্রহণ করবেন না? আপনার নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার মাধ্যমে আপনি ঠিক তা-ই করতে পারেন।
১১, ১২. (ক) কোন উদাহরণগুলো দেখায় যে, রোজকার বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্তগুলো ব্যক্তিগত নীতিনিষ্ঠা সম্বন্ধীয় বিচার্য বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত? (খ) কেন নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখা এক বিশেষ সুযোগ?
১১ এভাবে, আপনার নীতিনিষ্ঠার বিচার্য বিষয়টা রোজকার আচরণ ও বাছাইগুলোকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। শুরুতে উল্লেখিত সেই তিনটে দৃশ্যের কথা আবারও বিবেচনা করুন। কোনটা নীতিনিষ্ঠার কাজ হবে? সেই ছেলে, যাকে সহছাত্রছাত্রীরা টিটকারি দিচ্ছিল, সে যদিও প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য প্ররোচিত হয়েছিল, কিন্তু সে এই উপদেশ স্মরণ করে: “হে প্রিয়েরা, তোমরা আপনারা প্রতিশোধ লইও না, বরং ক্রোধের জন্য স্থান ছাড়িয়া দেও, কারণ লেখা আছে, ‘প্রতিশোধ লওয়া আমারই কর্ম্ম, আমিই প্রতিফল দিব, ইহা প্রভু [“যিহোবা,” NW] বলেন।’” (রোমীয় ১২:১৯) সে চলে গিয়েছিল। সেই স্বামী, যিনি ইন্টারনেট ব্যবহার করছিলেন, তিনি যৌন উদ্দীপক বিষয়বস্তু দেখতে পারতেন কিন্তু তিনি ইয়োবের এই কথাগুলোর মধ্যে প্রতিফলিত নীতিটা স্মরণ করেন: “আমি নিজ চক্ষুর সহিত নিয়ম করিয়াছি; অতএব যুবতীর প্রতি কটাক্ষপাত কেন করিব?” (ইয়োব ৩১:১) সেই ব্যক্তিও নোংরা চিত্রগুলো দেখা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, এই ধরনের বিষয়বস্তু এমনভাবে এড়িয়ে গিয়েছেন যেন তা বিষের মতো ছিল। সেই মহিলা, যিনি একটা দলের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তিনি হয়তো সেখানে কিছুটা ক্ষতিকর গুজব শুনেছিলেন, কিন্তু তিনি এই নির্দেশনা স্মরণ করে তাতে অংশ নেওয়া থেকে বিরত ছিলেন: “আমাদের প্রত্যেক জন যাহা উত্তম, তাহার জন্য, গাঁথিয়া তুলিবার নিমিত্ত, প্রতিবাসীকে তুষ্ট করুক।” (রোমীয় ১৫:২) তিনি যে-গুজব পুনরাবৃত্তি করতে পারতেন, তা গঠনমূলক নয়। এটা তার খ্রিস্টীয় বোন সম্বন্ধে উত্তম ধারণা দেবে না; কিংবা এটা তার স্বর্গীয় পিতাকেও খুশি করবে না। তাই, তিনি তার জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণ করেন এবং আলোচনা অন্যদিকে নিয়ে যান।
১২ উপরোক্ত প্রতিটা ক্ষেত্রে, খ্রিস্টান ব্যক্তিরা এমন একটা বাছাই করে, যা বস্তুতপক্ষে বলে: ‘যিহোবা হলেন আমার শাসক। এই ক্ষেত্রে যে-বিষয়টা তাঁকে খুশি করে, আমি তা-ই করার চেষ্টা করব।’ আপনি কি আপনার ব্যক্তিগত বাছাই ও সিদ্ধান্তগুলোকে একই দৃষ্টিতে দেখেন? যদি দেখে থাকেন, তাহলে আপনি সত্যিই হিতোপদেশ ২৭:১১ পদে লিপিবদ্ধ এই হৃদয়গ্রাহী কথাগুলো পালন করছেন: “বৎস, জ্ঞানবান হও; আমার চিত্তকে আনন্দিত কর; তাহাতে যে আমাকে টিট্কারি দেয়, তাহাকে উত্তর দিতে পারিব।” ঈশ্বরের হৃদয়কে আনন্দিত করার কী এক বিশেষ সুযোগই না আমাদের রয়েছে! আমাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করা কি উপযুক্ত নয়?
২. ঐশিক বিচারের ভিত্তি
১৩. কীভাবে ইয়োব ও দায়ূদের কথাগুলো দেখায় যে, নীতিনিষ্ঠাই হল সেই ভিত্তি, যার ওপর নির্ভর করে যিহোবা আমাদের বিচার করেন?
১৩ আমরা দেখলাম যে, নীতিনিষ্ঠা আমাদেরকে যিহোবার সার্বভৌমত্বের পক্ষসমর্থন করতে সমর্থ করে। তাই, এটাই হল সেই ভিত্তি, যেটার ওপর নির্ভর করে ঈশ্বর আমাদের বিচার করতে পারেন। ইয়োব এই সত্যটা ভালভাবে বুঝতে পেরেছিলেন। (পড়ুন, ইয়োব ৩১:৬.b) ইয়োব জানতেন যে, ঈশ্বর সমস্ত মানবজাতিকে “সঠিক দাঁড়িপাল্লায়” ওজন করেন, আমাদের নীতিনিষ্ঠাকে মূল্যায়ন করার জন্য তাঁর ন্যায়বিচারের নিখুঁত মান ব্যবহার করেন। দায়ূদও একই কথা বলেছিলেন: “সদাপ্রভু জাতিগণের বিচার করেন; হে সদাপ্রভু, আমার ধার্ম্মিকতা ও আমার আন্তরিক নীতিনিষ্ঠা অনুসারে আমার বিচার কর। . . . ধর্ম্মময় ঈশ্বর ত অন্তঃকরণ ও মর্ম্মের [“বৃক্কগুলোর,” NW] পরীক্ষক।” (গীত. ৭:৮, ৯) আমরা জানি যে, ঈশ্বর আমাদের ভিতরের ব্যক্তিত্বের অর্থাৎ রূপক “অন্তঃকরণ ও বৃক্কগুলোর” একেবারে গভীরে দেখতে পারেন। তবে, তিনি কীসের অনুসন্ধান করেন, সেই বিষয়টা আমাদের মনে রাখতে হবে। দায়ূদ যেমন বলেছেন, যিহোবা আমাদের নীতিনিষ্ঠা অনুযায়ী আমাদের বিচার করেন।
১৪. কেন আমাদের কখনো এইরকম ধরে নেওয়া উচিত নয় যে, আমাদের অসিদ্ধ, পাপপূর্ণ প্রবণতা আমাদেরকে নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার ক্ষেত্রে বাধা দেবে?
১৪ কল্পনা করুন যে, আজকে যিহোবা ঈশ্বর লক্ষ লক্ষ মানবজাতির হৃদয় অনুসন্ধান করছেন। (১ বংশা. ২৮:৯) তিনি কি প্রায়ই এমন ব্যক্তিদের খুঁজে পান, যারা খ্রিস্টীয় নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখছে? তা পাওয়া আপাতদৃষ্টিতে সত্যিই দুর্লভ! কিন্তু, আমাদের এইরকম ধরে নেওয়া উচিত নয় যে, আমরা এতটাই ত্রুটিযুক্ত যে আমাদের পক্ষে নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখা অসম্ভব। এর বিপরীতে, দায়ূদ ও ইয়োবের মতো আমাদের এই নির্ভরতা রাখার উত্তম কারণ রয়েছে যে, আমাদের অসিদ্ধতা সত্ত্বেও যিহোবা আমাদেরকে নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখতে দেখবেন। মনে রাখবেন যে, নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার ক্ষেত্রে সিদ্ধতা কোনো নিশ্চয়তা নয়। এই পৃথিবীতে মাত্র তিনজন সিদ্ধ ব্যক্তি ছিল আর তাদের মধ্যে দুজনই অর্থাৎ আদম ও হবা নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছিল। তা সত্ত্বেও, লক্ষ লক্ষ অসিদ্ধ মানুষ এক্ষেত্রে সফল হয়েছে। আপনিও হতে পারেন।
৩. আমাদের আশার জন্য অপরিহার্য
১৫. কীভাবে দায়ূদ দেখিয়েছেন যে, আমাদের ভবিষ্যতের আশার জন্য নীতিনিষ্ঠা অপরিহার্য?
১৫ যেহেতু নীতিনিষ্ঠা হল সেই ভিত্তি, যার ওপর নির্ভর করে যিহোবা আমাদের বিচার করেন, তাই আমাদের ভবিষ্যতের আশার জন্য এটি অপরিহার্য। দায়ূদ এই বিষয়টাকে সত্য বলে জানতেন। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৪১:১২.c) তিনি হৃদয়ে চিরকালের জন্য ঈশ্বরের অনুগ্রহের দৃষ্টি লাভ করার প্রত্যাশাকে পোষণ করতেন। বর্তমানের সত্য খ্রিস্টানদের মতো দায়ূদও চিরকাল বেঁচে থাকার এবং যিহোবা ঈশ্বরের সেবা করার সময় ক্রমাগত তাঁর আরও নিকটবর্তী হওয়ার আশা করেছিলেন। দায়ূদ জানতেন যে, তিনি যদি সেই আশার পরিপূর্ণতা দেখতে চান, তাহলে তাকে তার নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখতে হবে। একইভাবে, নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার সময় যিহোবা আমাদেরকে ধরে রাখেন, আমাদেরকে শিক্ষা দেন, আমাদেরকে নির্দেশনা দেন এবং আমাদেরকে আশীর্বাদ করেন।
১৬, ১৭. (ক) কেন আপনি সর্বদা আপনার নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ? (খ) পরের প্রবন্ধে কোন প্রশ্নগুলো আলোচনা করা হবে?
১৬ আমাদের বর্তমান সুখের জন্য আশা অপরিহার্য। এটা আমাদের সেই আনন্দ প্রদান করতে পারে, যা আমাদের কঠিন সময়গুলো পার করার জন্য প্রয়োজন। আশা আমাদের চিন্তাভাবনাকেও রক্ষা করতে পারে। মনে রাখবেন যে, বাইবেলে আশাকে শিরস্ত্রাণের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। (১ থিষল. ৫:৮) একটা শিরস্ত্রাণ যেমন যুদ্ধে একজন সৈনিকের মস্তককে সুরক্ষা করে, তেমনই আশা আমাদের মনকে সেই নেতিবাচক ও হতাশাপ্রবণ চিন্তাভাবনা থেকে রক্ষা করে থাকে, যেগুলো শয়তান এই মৃতপ্রায় পুরোনো জগতের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছে। বস্তুতপক্ষে, আমাদের যদি আশা না থাকত, তাহলে জীবন অর্থহীন হয়ে যেত। নিজেদেরকে আমাদের অকপটভাবে পরীক্ষা করতে হবে, আমাদের নীতিনিষ্ঠার অবস্থা ও এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আশাকে মনোযোগের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। ভুলে যাবেন না যে, নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার মাধ্যমে আপনি যিহোবার সার্বভৌমত্বকে সমর্থন করছেন এবং ভবিষ্যতের জন্য আপনার মূল্যবান আশাকে রক্ষা করছেন। আপনি যেন সর্বদা আপনার নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখেন!
১৭ যেহেতু নীতিনিষ্ঠা অতীব গুরুত্বপূর্ণ, তাই আমাদের আরও কিছু প্রশ্ন বিবেচনা করতে হবে। কীভাবে আমরা নীতিনিষ্ঠা গড়ে তুলি? কীভাবে আমরা তা বজায় রাখতে পারি? আর কেউ যদি কিছু সময়ের জন্য তা বজায় না রাখে, তাহলে কী করা যেতে পারে? পরের প্রবন্ধে এই প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে।
[পাদটীকাগুলো]
a যিশু বলেছিলেন: “অতএব তোমাদের স্বর্গীয় পিতা যেমন সিদ্ধ, তোমরাও, তেমনি সিদ্ধ হও।” (মথি ৫:৪৮) স্পষ্টতই, তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, এমনকি অসিদ্ধ মানুষও আপেক্ষিক অর্থে সম্পূর্ণ বা সিদ্ধ হতে পারে। আমরা অন্যদেরকে উদারভাবে প্রেম করার আজ্ঞা পালন করতে আর এভাবে ঈশ্বরকে খুশি করতে পারি। কিন্তু, যিহোবা সম্পূর্ণরূপে সিদ্ধ। তাঁর বেলায় প্রয়োগ করা হলে “নীতিনিষ্ঠা” শব্দটির সঙ্গে সিদ্ধতাও যুক্ত।—গীত. ১৮:৩০.
b ইয়োব ৩১:৬ (NW): “তিনি আমাকে সঠিক দাঁড়িপাল্লায় ওজন করবেন আর ঈশ্বর আমার নীতিনিষ্ঠা সম্বন্ধে জানতে পারবেন।”
c গীতসংহিতা ৪১:১২ (NW): “আমার নীতিনিষ্ঠার কারণে তুমি আমাকে ধরে রেখেছ আর তুমি চিরকালের জন্য আমাকে তোমার সামনে স্থাপন করবে।”
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
• নীতিনিষ্ঠা কী?
• কীভাবে নীতিনিষ্ঠা সর্বজনীন সার্বভৌমত্বের বিচার্য বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত?
• কীভাবে নীতিনিষ্ঠা আমাদের আশার এক ভিত্তি জোগায়?
[৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
রোজকার জীবন আমাদের নীতিনিষ্ঠার ক্ষেত্রে অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে আসে