ঈশ্বরের সাথে গমনাগমন করে চলুন
“তোমরা আত্মার বশে চল, তাহা হইলে মাংসের অভিলাষ পূর্ণ করিবে না।”—গালাতীয় ৫:১৬.
১. (ক) কোন্ পরিস্থিতির মধ্যে এবং কতদিন হনোক ঈশ্বরের সাথে গমনাগমন করেছিলেন? (খ) নোহ কতদিন ঈশ্বরের সাথে গমনাগমন করেছিলেন এবং কোন্ গুরু দায়িত্বগুলি তার ছিল?
বাইবেল আমাদের বলে যে হনোক “ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন করিতেন।” তার চতুর্দিকের লোকেদের জঘন্য কথাবার্তা ও ঈশ্বরবিহীন আচরণ সত্ত্বেও, তার ৩৬৫ বছরের জীবনের শেষ পর্যন্ত তিনি ঈশ্বরের সাথে গমনাগমন করেছিলেন। (আদিপুস্তক ৫:২৩, ২৪; যিহূদা ১৪, ১৫) নোহও “ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন করিতেন।” তার পরিবার প্রতিপালনে, বিদ্রোহী দূতেদের ও তাদের হিংস্র বংশধরদের দ্বারা প্রভাবিত এক জগতের মোকাবিলায় আর প্রাচীনকালে সমুদ্রগামী যে কোন জাহাজের চেয়ে বিশাল এক জাহাজ নির্মাণের বিস্তারিত বর্ণনানুসারে কাজ করার সময় তিনি তা করেছিলেন। জলপ্লাবনের পরেও তিনি ঈশ্বরের সাথে গমনাগমন করে চলেছিলেন, এমনকি তখনও যখন বাবিলে যিহোবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ পুনরায় মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিল। বাস্তবিকপক্ষে, নোহ ৯৫০ বছর বয়সে তার মৃত্যু পর্যন্ত ঈশ্বরের সাথে গমনাগমন করে চলেছিলেন।—আদিপুস্তক ৬:৯; ৯:২৯.
২. ‘ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন করার’ অর্থ কী?
২ এই বিশ্বাসী ব্যক্তিরা ঈশ্বরের সহিত “গমনাগমন” করতেন বলার সময় বাইবেল এই পরিভাষাটিকে রূপক অর্থে ব্যবহার করেছে। এর অর্থ হল যে হনোক ও নোহ নিজেদের এমন এক পথে পরিচালিত করেছিলেন যা ঈশ্বরের উপর তাদের দৃঢ় বিশ্বাসের সাক্ষ্য দিয়েছিল। যিহোবা তাদের যা করতে আদেশ দিয়েছিলেন তারা তাই করেছিলেন ও মানবজাতির সাথে তাঁর আচরণের থেকে তাঁর সম্বন্ধে তারা যা জেনেছিলেন, তার সাথে সংগতি রেখে তাদের জীবনকে পরিচালিত করেছিলেন। (২ বংশাবলি ৭:১৭ পদের সাথে তুলনা করুন।) ঈশ্বর যা বলেছিলেন ও করেছিলেন তার প্রতি তারা কেবল মানসিক সম্মতিই প্রকাশ করেননি কিন্তু তিনি যা চেয়েছিলেন সেই অনুসারে তারা সমস্ত কাজ করেছিলেন—কেবল এর কয়েকটি নয় কিন্তু অসিদ্ধ মানুষ হিসাবে যতটুকু তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল সমস্তই। উদাহরণস্বরূপ, নোহ, ঈশ্বর ঠিক যেভাবে তাকে আজ্ঞা দিয়েছিলেন, সেই অনুসারেই সমস্ত কাজ করেছিলেন। (আদিপুস্তক ৬:২২) নোহকে দেওয়া নির্দেশনার বহির্ভূত কোন কাজ তিনি করেননি আর সেগুলি অবহেলা করে পিছিয়েও পড়েননি। যিহোবার সাথে অন্তরঙ্গতা উপভোগকারী এক ব্যক্তি হিসাবে তিনি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন ও ঐশিক নির্দেশনাকে উপলব্ধি করতেন আর এইভাবেই তিনি ঈশ্বরের সাথে গমনাগমন করেছিলেন। আপনি কি তা করছেন?
এক সংগতিপূর্ণ জীবনধারা
৩. ঈশ্বরের সকল উৎসর্গীকৃত ও বাপ্তিস্মিত দাসেদের জন্য কী বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ?
৩ লোকেরা ঈশ্বরের সাথে গমনাগমন করা শুরু করেন এটি দেখা উৎসাহজনক। যখন তারা যিহোবার ইচ্ছার সাথে সংগতি রেখে ইতিবাচক পদক্ষেপগুলি নেন, তারা তাদের বিশ্বাসের সাক্ষ্য দেন, যা ব্যতিরেকে কেউই ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে পারেন না। (ইব্রীয় ১১:৬) আমরা কতই না আনন্দিত হই যে গত পাঁচ বছর ধরে, প্রতি বছর গড়ে ৩,৩০,০০০ জনের বেশি ব্যক্তি নিজেদের যিহোবার কাছে উৎসর্গ ও জলে বাপ্তিস্মের জন্য তাদের সমর্পণ করেছেন! কিন্তু তাদের ও আমাদের সকলের জন্য ঈশ্বরের সাথে গমনাগমন করে চলাও গুরুত্বপূর্ণ।—মথি ২৪:১৩; প্রকাশিত বাক্য ২:১০.
৪. যদিও তারা কিছুটা বিশ্বাস দেখিয়েছিল, তবুও কেন অধিকাংশ ইস্রায়েলীয় যারা মিশর ত্যাগ করেছিল তারা প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করতে পারেনি?
৪ মোশির দিনে, একটি ইস্রায়েলীয় পরিবারের জন্য মিশরে নিস্তারপর্ব উদ্যাপন করা এবং তাদের গৃহদ্বারের বাজুতে ও কপালীতে রক্ত ছিটিয়ে দেওয়ার জন্য বিশ্বাসের প্রয়োজন ছিল। (যাত্রাপুস্তক ১২:১-২৮) কিন্তু যখন তারা লোহিত সাগরে ফরৌণের সৈন্যবাহিনীকে তাদের পিছনে দেখেছিল, তখন অনেকের বিশ্বাস কম্পিত হয়েছিল। (যাত্রাপুস্তক ১৪:৯-১২) গীতসংহিতা ১০৬:১২ পদ দেখায় যে যখন তারা সমুদ্রের মধ্যে দিয়ে শুষ্ক পথে নিরাপদে পার হয় আর তরঙ্গায়িত জলরাশি মিশরীয় সৈন্যবাহিনীকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে তা দেখে, তারা আবার “[যিহোবার] বাক্যে বিশ্বাস করিল।” কিন্তু এর অল্প কিছুদিন পরেই প্রান্তরে ইস্রায়েলীয়রা পানীয় জল, খাদ্য ও তত্ত্বাবধান সম্বন্ধে অভিযোগ করতে আরম্ভ করেছিল। প্রতিজ্ঞাত দেশ থেকে ফিরে আসা ১২ জন গুপ্তচরের মধ্যে ১০ জনের নেতিবাচক বিবৃতি তাদের আতঙ্কিত করেছিল। সেই পরিস্থিতিতে গীতসংহিতা ১০৬:২৪ পদ যেমন বলে “তাহারা . . . [ঈশ্বরের] বাক্যে বিশ্বাস করিল না।” তারা আবার মিশরে ফিরে যেতে চেয়েছিল। (গণনাপুস্তক ১৪:১-৪) তাদের যতটুকু বিশ্বাস ছিল তা কেবল তখনই প্রতীয়মান হয়েছিল, যখন তারা ঐশিক ক্ষমতার কিছু অসাধারণ প্রদর্শন দেখেছিল। তারা ঈশ্বরের সাথে গমনাগমন করে চলেনি। ফলস্বরূপ, সেই ইস্রায়েলীয়রা প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করতে পারেনি।—গীতসংহিতা ৯৫:১০, ১১.
৫. ২ করিন্থীয় ১৩:৫ ও হিতোপদেশ ৩:৫, ৬ পদ কিভাবে ঈশ্বরের সাথে গমনাগমন করার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত?
৫ বাইবেল আমাদের উপদেশ দেয়: “আপনাদের পরীক্ষা করিয়া দেখ, তোমরা বিশ্বাসে আছ কি না; প্রমাণার্থে আপনাদেরই পরীক্ষা কর।” (২ করিন্থীয় ১৩:৫) “বিশ্বাসে” থাকার অর্থ খ্রীষ্টীয় বিশ্বাসের সাথে যুক্ত থাকা। আমাদের জীবনের সমস্ত দিন আমরা যদি ঈশ্বরের সাথে গমনাগমন করায় সফল হতে চাই তবে এটি অত্যাবশ্যক। ঈশ্বরের সাথে গমনাগমন করতে হলে, আমাদের অবশ্যই যিহোবার উপর সম্পূর্ণরূপে আস্থা রেখে বিশ্বাসরূপ গুণ অনুশীলন করতে হবে। (হিতোপদেশ ৩:৫, ৬) যারা তা করতে ব্যর্থ হন তাদের বিপদে ফেলার জন্য অসংখ্য ফাঁদ ও জাল রয়েছে। এর কয়েকটি কী?
আত্ম-বিশ্বাসী হওয়ার ফাঁদ পরিহার করুন
৬. ব্যভিচার ও পারদারিকতা সম্বন্ধে সকল খ্রীষ্টানেরা কী জানেন আর এই পাপগুলি সম্বন্ধে তারা কেমন বোধ করেন?
৬ প্রত্যেকে যারা বাইবেল অধ্যয়ন করেছেন, তাদের জীবন যিহোবার কাছে উৎসর্গ করেছেন ও বাপ্তিস্মিত হয়েছেন তারা জানেন যে ঈশ্বরের বাক্য ব্যভিচার ও পারদারিকতাকে নিন্দা করে। (১ থিষলনীকীয় ৪:১-৩; ইব্রীয় ১৩:৪) এইধরনের ব্যক্তিরা স্বীকার করেন যে তা সঠিক। তারা এর সাথে সংগতি রেখে জীবনযাপন করতে ইচ্ছুক। তথাপি, যৌন অনৈতিকতা শয়তানের সবচেয়ে ফলপ্রসূ একটি ফাঁদ হিসাবে পরিগণিত হয়ে এসেছে। কেন?
৭. মোয়াবের তলভূমিতে ইস্রায়েলীয় পুরুষেরা কিভাবে সেই আচরণে লিপ্ত হয়েছিল যা তারা অন্যায় বলে জানত?
৭ প্রথমত, যারা এইধরনের অনৈতিক আচরণে জড়িয়ে পড়েন, তারা হয়ত তা করার পরিকল্পনা করেন না। সম্ভবত এটি মোয়াবের তলভূমিতে ইস্রায়েলীয়দের ক্ষেত্রেও সত্য ছিল। প্রান্তরের জীবনে ক্লান্ত হয়ে পড়া ইস্রায়েলীয় পুরুষদের কাছে, মোয়াবীয়া ও মিদিয়নীয়া স্ত্রীলোকেরা যারা তাদের প্রলুব্ধ করেছিল, হয়ত প্রথমে বন্ধুত্বপূর্ণ ও অতিথিপরায়ণ বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু কী ঘটেছিল যখন ইস্রায়েলীয়রা সেই লোকেদের সাথে মেলামেশা করার আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছিল, যারা যিহোবা নয় বরং বালের উপাসনা করত, যারা তাদের যুবতী কন্যাদের (এমনকি সম্ভ্রান্ত পরিবার থেকেও) পরপুরুষদের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে অনুমোদন করত? যখন ইস্রায়েলীয় শিবিরের পুরুষেরা এইধরনের সাহচর্যকে আকর্ষণীয় হিসাবে গণ্য করতে শুরু করছিল, তখন তারা সেই ধরনের কাজ করতে প্রলুব্ধ হয়েছিল যা তারা অন্যায় বলে জানত আর এর মূল্যস্বরূপ তাদের জীবন দিতে হয়েছিল।—গণনাপুস্তক ২২:১; ২৫:১-১৫; ৩১:১৬; প্রকাশিত বাক্য ২:১৪.
৮. আমাদের দিনে, কী একজন খ্রীষ্টানকে যৌন অনৈতিকতার দিকে পরিচালিত করতে পারে?
৮ আমাদের দিনে কী একজন ব্যক্তিকে এক অনুরূপ ফাঁদে ফেলতে পারে? যৌন অনৈতিকতার ভয়ানক পরিণতি জানা সত্ত্বেও, তিনি যদি আত্ম-বিশ্বাসী হওয়ার বিপদকে উপলব্ধি না করেন, তাহলে তিনি হয়ত নিজেকে এমন এক পরিস্থিতিতে নিয়ে যেতে পারেন যেখানে অন্যায় করার প্রলোভন তার বিচারশক্তিকে লোপ করতে পারে।—হিতোপদেশ ৭:৬-৯, ২১, ২২; ১৪:১৬.
৯. অনৈতিকার বিরুদ্ধে কোন্ শাস্ত্রীয় সতর্কবাণী আমাদের সুরক্ষিত করতে পারে?
৯ ঈশ্বরের বাক্য আমাদের স্পষ্ট ভাষায় সতর্ক করে দেয় যে আমরা যেন এই চিন্তাধারা দ্বারা ভ্রান্ত না হই যে আমরা খুবই শক্তিশালী আর তাই কুসংসর্গ আমাদের কলুষিত করতে পারবে না। এটি টেলিভিশনের অনুষ্ঠানসূচী যা অনৈতিক লোকেদের জীবনযাপনকে লক্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করে এবং যে পত্রিকাগুলি অনৈতিক আকাঙ্ক্ষাকে উদ্দীপিত করে সেইগুলি দেখাকে অন্তর্ভুক্ত করে। (১ করিন্থীয় ১০:১১, ১২; ১৫:৩৩) এমনকি অনুপযুক্ত পরিস্থিতিতে সহবিশ্বাসীদের সাথে মেলামেশাও গুরুতর সমস্যার দিকে পরিচালিত করতে পারে। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ প্রবল হয়ে থাকে। তাই প্রেমপূর্ণ চিন্তা দেখিয়ে যিহোবার সংগঠন বিপরীত লিঙ্গের কোন ব্যক্তির সাথে একাকী কিংবা লোক চক্ষুর অগোচরে সময় কাটানোর বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে যার সাথে আমরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ নই অথবা যিনি আমাদের পরিবারের সদস্য নন। ঈশ্বরের সাথে গমনাগমন করে চলার জন্য আমাদের আত্ম-বিশ্বাসী হওয়ার ফাঁদ পরিহার করা এবং তিনি যে সতর্কতামূলক পরামর্শ আমাদের দেন তার প্রতি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।—গীতসংহিতা ৮৫:৮.
লোক ভয় যেন আপনাকে নিয়ন্ত্রণ না করে
১০. কিভাবে “লোক-ভয়” একটি ফাঁদস্বরূপ?
১০ হিতোপদেশ ২৯:২৫ পদে আরেকটি বিপদ সম্বন্ধে ইঙ্গিত করা হয়েছে, যা বলে: “লোক-ভয় ফাঁদজনক।” একজন শিকারির ফাঁদের মধ্যে প্রায়ই একটি ফাঁস থাকে যা টানলে গলার চারিদিকে শক্তভাবে আটকে যায় বা দড়ি থাকে যা একটি পশুর পা আঁটকে ফেলে। (ইয়োব ১৮:৮-১১) অনুরূপভাবে লোক ভয়ও একজন ব্যক্তিকে স্বাধীনভাবে কথা বলার ক্ষমতা ও ঈশ্বরের সন্তোষজনক পথে নিজেকে পরিচালিত করা থেকে রোধ করতে পারে। অপরকে সন্তুষ্ট করার আকাঙ্ক্ষা স্বাভাবিক আর অন্য লোকেরা যা মনে করেন তা নির্মমভাবে অবজ্ঞা করা খ্রীষ্টানসুলভ কাজ নয়। কিন্তু ভারসাম্যের প্রয়োজন রয়েছে। অন্য লোকেদের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া সম্বন্ধে উদ্বিগ্নতা যখন একজন ব্যক্তিকে ঈশ্বর যা নিষেধ করেন তা করা কিংবা ঈশ্বরের বাক্য যা আদেশ দেয় তা করা থেকে বিরত থাকার কারণ হয় তখন তার অর্থ সেই ব্যক্তি ফাঁদে পড়েছেন।
১১. (ক) লোক ভয় দ্বারা একজনকে নিয়ন্ত্রণ করার বিরুদ্ধে সুরক্ষা কী? (খ) যিহোবা তাঁর দাসেদের কিভাবে সাহায্য করেছেন যারা লোক ভয়ের সাথে লড়াই করছিলেন?
১১ এইধরনের ফাঁদ থেকে সুরক্ষা একজন ব্যক্তির সহজাত প্রবণতার মধ্যে সুপ্ত থাকে না, বরঞ্চ ‘সদাপ্রভুতে বিশ্বাস করার’ মধ্যে থাকে। (হিতোপদেশ ২৯:২৫খ) যিহোবাতে আস্থা রেখে এমনকি একজন লাজুক স্বভাবের ব্যক্তিও সাহসী এবং দৃঢ় প্রমাণিত হতে পারেন। যতদিন পর্যন্ত আমরা শয়তানের এই বিধিব্যবস্থার চাপের দ্বারা পরিবেষ্টিত রয়েছি, আমাদের লোক ভয়ের ফাঁদের বিরুদ্ধে সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন হবে। ভাববাদী এলিয়ের সাহসী পরিচর্যার এক উত্তম নথি থাকা সত্ত্বেও, ঈষেবল যখন তাকে মৃত্যুর হুমকি দেন, তিনি ভয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। (১ রাজাবলি ১৯:২-১৮) চাপের মধ্যে প্রেরিত পিতর ভয়ে যীশু খ্রীষ্টকে চেনার বিষয়টি অস্বীকার করেছিলেন এবং কয়েক বছর পরে ভয়ে তিনি নিজেকে বিশ্বাসের বিপরীত এক আচরণের দিকে পরিচালিত করেছিলেন। (মার্ক ১৪:৬৬-৭১; গালাতীয় ২:১১, ১২) কিন্তু এলিয় ও পিতর উভয়েই শাস্ত্রীয় সাহায্য গ্রহণ করেছিলেন এবং যিহোবাতে প্রত্যয় রেখে ক্রমাগত গ্রহণযোগ্যরূপে ঈশ্বরের পরিচর্যা করে চলেছিলেন।
১২. আধুনিক দিনের কোন্ উদাহরণগুলি দেখায় যে কিভাবে ব্যক্তিবিশেষেরা ভয়ের কারণে ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করা থেকে পিছিয়ে আসা এড়াতে সাহায্যপ্রাপ্ত হয়েছেন?
১২ আমাদের দিনের অনেক যিহোবার দাসেরাও ফাঁদজনক ভয়কে কিভাবে জয় করতে হয় তা শিখেছেন। গায়ানার একজন কিশোরী সাক্ষী স্বীকার করে: “বিদ্যালয়ে সহপাঠীদের চাপ প্রতিরোধ করার লড়াই শক্তিশালী।” কিন্তু সে আরও বলে: “যিহোবার প্রতি আমার বিশ্বাসও তদ্রূপ।” তার শিক্ষক যখন তার বিশ্বাসের কারণে সম্পূর্ণ শ্রেণীর সামনে তাকে উপহাস করেছিলেন, সে নীরবে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিল। পরে নিরালায় সে তার শিক্ষককে কৌশলতার সাথে সাক্ষ্য দিয়েছিল। একজন যুবক ব্যক্তি যিনি যিহোবা যা চান সেই সম্বন্ধে শিখছিলেন, তিনি যখন তার নিজের শহর বেনিনে বেড়াতে যান, তিনি একটি মূর্তি যেটি তার বাবা তার জন্য তৈরি করেছিলেন তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য স্থিরসংকল্প নিয়েছিলেন। সেই যুবক ব্যক্তিটি শিখেছিলেন যে একটি প্রতিমা অচেতন আর তিনি এটিকে ভয় করেননি কিন্তু তিনি এই বিষয়েও অবগত ছিলেন যে ক্রুদ্ধ গ্রামবাসীরা হয়ত তাকে হত্যা করার চেষ্টা করতে পারে। তিনি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন আর তারপর রাতের বেলা সেই মূর্তিটিকে ঝোপের মধ্যে নিয়ে গিয়ে সেটিকে নষ্ট করেছিলেন। (বিচারকর্ত্তৃগণ ৬:২৭-৩১ পদের সাথে তুলনা করুন।) ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রের একজন স্ত্রী যিহোবাকে সেবা করতে আরম্ভ করলে তার স্বামী তাকে, তার ও যিহোবার মধ্যে যে কোন একজনকে বেছে নিতে বলেছিলেন। সেই ব্যক্তি তাকে বিবাহ বিচ্ছেদের ভয়ও দেখিয়েছিলেন। ভয় কি তাকে তার বিশ্বাস পরিত্যাগ করতে পরিচালিত করেছে? তিনি বলেছিলেন: “যদি অবিশ্বস্ততার বিষয় হত আমি লজ্জিত হতাম, কিন্তু যিহোবা ঈশ্বরকে সেবা করতে আমি লজ্জিত নই!” সুতরাং তিনি ঈশ্বরের সাথে গমনাগমন করে চলেছিলেন আর এক সময়ে তার স্বামী যিহোবার ইচ্ছা পালনে তার সাথে যোগ দিয়েছিলেন। আমাদের স্বর্গীয় পিতার উপর পূর্ণ আস্থা রেখে, আমরাও সেই ধরনের লোক ভয় এড়াতে পারি যা আমাদের যিহোবার সন্তোষজনক কিছু করা থেকে পিছিয়ে দেয়।
পরামর্শকে গুরুত্বহীনভাবে দেখা এড়িয়ে চলুন
১৩. ১ তীমথিয় ৬:৯ পদে আমাদের কোন্ ফাঁদের বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে?
১৩ শিকারিদের দ্বারা ব্যবহৃত কিছু ফাঁদ যদিও কোন পশুকে ধরার জন্য নির্দিষ্ট কিছু জায়গা যেখান দিয়ে তাদের যাওয়ার সম্ভাবনা আছে সেখানে পাতা হয়ে থাকে কিন্তু অন্যান্য ফাঁদগুলি প্রতারণাপূর্ণ লোভনীয় টোপের মাধ্যমে পশুদের আকৃষ্ট করে। অনেক লোকের কাছে ধন সেইরকম। (মথি ১৩:২২) ১ তীমথিয় ৬:৮, ৯ পদে বাইবেল আমাদের গ্রাসাচ্ছাদনেই সন্তুষ্ট থাকতে উৎসাহিত করে। তারপর এটি সতর্ক করে: “যাহারা ধনী হইতে বাসনা করে, তাহারা পরীক্ষাতে ও ফাঁদে এবং নানাবিধ মূঢ় ও হানিকর অভিলাষে পতিত হয়, সে সকল মনুষ্যদিগকে সংহার ও বিনাশে মগ্ন করে।”
১৪. (ক) গ্রাসাচ্ছাদনের দ্বারা সন্তুষ্ট থাকার পরামর্শে মনোযোগ করা থেকে কী একজন ব্যক্তিকে প্রতিরোধ করতে পারে? (খ) কিভাবে ধনকে ভুলভাবে সংজ্ঞায়িত করা একজন ব্যক্তির জন্য ১ তীমথিয় ৬:৯ পদের সতর্কবাণীকে গুরুত্বহীনভাবে দেখার কারণ হতে পারেন? (গ) কোন্ উপায়ে “চক্ষুর অভিলাষ” কিছু ব্যক্তিদের যে ফাঁদ অপেক্ষা করছে তার প্রতি অন্ধ করে দিতে পারে?
১৪ এই সতর্কবাণী সত্ত্বেও, অনেকে ফাঁদে পতিত হন কারণ তারা তাদের নিজেদের ক্ষেত্রে এই পরামর্শ প্রয়োগ করেন না। কেন? তা কি এইজন্য যে গর্ব তাদের এমন এক জীবনধারার সাথে যুক্ত হওয়ার দিকে ধাবিত করে যা “গ্রাসাচ্ছাদন” যার দ্বারা বাইবেল আমাদের সন্তুষ্ট থাকতে পরামর্শ দেয়, তার চেয়েও আরও বেশি কিছু দাবি করে? তারা কি ধনকে অত্যন্ত ধনী লোকেদের সম্পত্তির সমতুল্য হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেন বলে বাইবেলের সতর্কবাণীকে গুরুত্বহীনভাবে দেখেন? বাইবেল ধনী হওয়ার বাসনাকে সহজভাবে গ্রাসাচ্ছাদনে সন্তুষ্ট থাকার বিপরীতে স্থাপন করে। (ইব্রীয় ১৩:৫ পদের সাথে তুলনা করুন।) “চক্ষুর অভিলাষ” অর্থাৎ তারা যা দেখেন তা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা কি তাদের এমনকি আধ্যাত্মিক বিষয় ত্যাগ করে সত্য উপাসনার আগ্রহকে দ্বিতীয় স্থানে ঠেলে দেওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়? (১ যোহন ২:১৫-১৭; হগয় ১:২-৮) তারা কতই না সুখী, যারা বাইবেলের পরামর্শের প্রতি প্রকৃতই মনোযোগ দেন এবং যিহোবার পরিচর্যাকে তাদের জীবনের কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে রেখে ঈশ্বরের সাথে গমনাগমন করেন!
সফলভাবে জীবনের উদ্বেগগুলির সাথে মোকাবিলা করা
১৫. কোন্ পরিস্থিতিগুলি প্রকৃতই যিহোবার লোকেদের অনেককে উদ্বিগ্ন করতে পারে আর যখন আমরা এইধরনের চাপের অধীনে রয়েছি, আমাদের অবশ্যই কোন্ ফাঁদ সম্বন্ধে সাবধান থাকতে হবে?
১৫ ধনী হওয়ার বাসনার চেয়ে জীবনের প্রয়োজনীয় বস্তুগুলি লাভ করার জন্য উদ্বিগ্ন হওয়া আরও বেশি স্বাভাবিক। যিহোবার দাসেদের অনেকে কেবল সামান্য সম্পদ নিয়ে জীবনযাপন করেন। তারা এমনকি কেবল অত্যাবশ্যকীয় বস্ত্র, রাতে ঘুমাতে তাদের পরিবারের জন্য একটি স্থান ও দিনের সামান্য খাবারের জন্য অনেক ঘন্টা কঠোরভাবে কাজ করেন। অন্যেরা নিজেদের কিংবা পরিবারের সদস্যদের অসুস্থতা বা বার্ধক্যজনিত সমস্যাগুলির সাথে লড়াই করেন। এইধরনের পরিস্থিতিগুলি দিয়ে তাদের জীবনের আধ্যাত্মিক আগ্রহগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে দেওয়া কতই না সহজ!—মথি ১৩:২২.
১৬. জীবনের চাপগুলির সাথে মোকাবিলা করতে যিহোবা কিভাবে আমাদের সাহায্য করেন?
১৬ যিহোবা প্রেমের সাথে আমাদের জন্য মশীহ রাজ্যের অধীনে যে স্বস্তি আসবে সেই সম্বন্ধে বলেন। (গীতসংহিতা ৭২:১-৪, ১৬; যিশাইয় ২৫:৭, ৮) এছাড়া তিনি আমাদের অগ্রাধিকারগুলিকে কিভাবে সুবিন্যস্ত করা যায় সেই সম্বন্ধে পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে আমাদের এখনই জীবনের চাপগুলির মোকাবিলা করতে সাহায্য করেন। (মথি ৪:৪; ৬:২৫-৩৪) অতীতে তাঁর দাসেদের তিনি কিভাবে সাহায্য করেছিলেন সেই বিবরণের মাধ্যমে যিহোবা আমাদের আশ্বাস দেন। (যিরমিয় ৩৭:২১; যাকোব ৫:১১) তিনি আমাদের এই জ্ঞানের মাধ্যমে শক্তিশালী করেন যে আমাদের উপর যে বিপর্যয়ই আসুক না কেন, তাঁর নিষ্ঠাবান দাসেদের প্রতি তাঁর প্রেম অটুট থাকে। (রোমীয় ৮:৩৫-৩৯) যারা যিহোবার উপর তাদের আস্থা রাখেন তাদের জন্য তিনি ঘোষণা করেন: “আমি কোন ক্রমে তোমাকে ছাড়িব না, ও কোন ক্রমে তোমাকে ত্যাগ করিব না।”—ইব্রীয় ১৩:৫.
১৭. চরম বিপর্যয় ভোগ করেও কিছু ব্যক্তিরা কিভাবে ঈশ্বরের সাথে গমনাগমন করে চলতে সমর্থ হয়েছিলেন তার উদাহরণ দিন।
১৭ এই জ্ঞানের মাধ্যমে শক্তিশালী হয়ে সত্য খ্রীষ্টানেরা জাগতিক পথের দিকে ধাবিত হওয়ার পরিবর্তে ঈশ্বরের সাথে গমনাগমন করে চলেন। অনেক দেশে দরিদ্র লোকেদের মধ্যে প্রচলিত একটি সাধারণ জাগতিক ধারণা হল যে, আপনার পরিবারের ভরণপোষণের জন্য, যাদের বেশি আছে তাদের কাছ থেকে জিনিস ছিনিয়ে নেওয়া চুরি নয়। কিন্তু যারা বিশ্বাস দ্বারা চলেন, তারা এইধরনের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রত্যাখ্যান করেন। তারা সবকিছুর উপরে ঈশ্বরের অনুমোদনকে মূল্য দেন আর তাদের সৎ আচরণের পুরস্কার পাওয়ার জন্য তাঁর দিকে তাকান। (হিতোপদেশ ৩০:৮, ৯; ১ করিন্থীয় ১০:১৩; ইব্রীয় ১৩:১৮) ভারতের একজন বিধবা মহিলা দেখতে পেয়েছিলেন যে তার দক্ষতার উপযোগী কাজ করার ইচ্ছা তাকে মোকাবিলা করতে সাহায্য করেছিল। তার পরিস্থিতির প্রতি বিরক্ত হওয়ার পরিবর্তে তিনি অবগত ছিলেন যে যদি তিনি ঈশ্বরের রাজ্য ও তাঁর ধার্মিকতাকে তার জীবনে প্রথম স্থান দেন যিহোবা তার ও তার ছেলের জন্য প্রয়োজনীয় বস্তু অর্জনে তার প্রচেষ্টাকে আশীর্বাদ করবেন। (মথি ৬:৩৩, ৩৪) পৃথিবীর চতুর্দিকে হাজার হাজার ব্যক্তিরা যে বিপর্যয়ই ভোগ করুন না কেন, তারা প্রদর্শন করেন যে যিহোবাই তাদের আশ্রয় ও দুর্গ। (গীতসংহিতা ৯১:২) আপনার ক্ষেত্রেও কি তা সত্য?
১৮. শয়তানের জগতের ফাঁদগুলি এড়ানোর চাবিটি কী?
১৮ যতদিন আমরা এই বর্তমান বিধিব্যবস্থায় বেঁচে থাকি, এড়িয়ে চলার জন্য ফাঁদগুলি থাকবে। (১ যোহন ৫:১৯) বাইবেল এইগুলিকে শনাক্ত করে এবং কিভাবে সেইগুলি এড়ানো যায় তা দেখায়। যারা যিহোবাকে প্রকৃতই ভালবাসেন এবং তাঁকে অসন্তুষ্ট করা সম্বন্ধে স্বাস্থ্যকর ভয় রাখেন, তারা সফলভাবে এইধরনের ফাঁদগুলির সাথে মোকাবিলা করতে পারেন। যদি তারা ‘আত্মার বশে চলেন’ তারা জাগতিক পথের প্রতি বশ্যতা স্বীকার করবেন না। (গালাতীয় ৫:১৬-২৫) যিহোবার সাথে তাদের সম্পর্ক স্থাপন করে যারা প্রকৃতই তাদের জীবনকে গড়ে তোলেন, তাদের সকলের জন্য যিহোবার সাথে গমনাগমন করার, তাঁর সাথে চিরকাল অন্তরঙ্গতা উপভোগ করার চমৎকার প্রত্যাশা রয়েছে।—গীতসংহিতা ২৫:১৪.
আপনার মন্তব্য কী?
◻ আত্ম-বিশ্বাসী হওয়া কিভাবে একটি ফাঁদ হতে পারে?
◻ লোক ভয় দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার বিরুদ্ধে কী আমাদের সুরক্ষিত করতে পারে?
◻ ধনের অনুধাবন করার বিপদ সম্বন্ধীয় পরামর্শ প্রয়োগ করতে কী আমাদের ব্যর্থ করতে পারে?
◻ জীবনের উদ্বিগ্নতার ফাঁদে পতিত হওয়া এড়াতে কী আমাদের সক্ষম করতে পারে?
[১৬, ১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
অনেকে সারাজীবন ধরে ঈশ্বরের সাথে গমনাগমন করে চলেন