প্রকৃত জীবনকে ধরে রাখুন
এই জীবনই কি সবকিছু? “যাহা প্রকৃতরূপে জীবন, তাহাই ধরিয়া রাখিতে” উৎসাহ দিয়ে বাইবেল আমাদের ইঙ্গিত দেয় যে বর্তমান জীবন ছাড়াও আরও কিছু আছে। (১ তীমথিয় ৬:১৭-১৯) সুতরাং আমাদের বর্তমান জীবন যদি প্রকৃত জীবন না হয়, তাহলে কোন্ জীবনটি প্রকৃত জীবন?
পূর্বে উল্লিখিত শাস্ত্রপদের প্রসঙ্গ দেখায় যে সেটা হল “অনন্ত জীবন” যা একজন ঈশ্বর-ভীরু লোকের দৃঢ়ভাবে ধরে রাখা উচিত। (১ তীমথিয় ৬:১২) অধিকাংশ ব্যক্তির জন্য এর অর্থ হল পৃথিবীতে অনন্ত জীবন। পৃথিবীর প্রথম মানব, আদমের পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্তকাল বেঁচে থাকার প্রত্যাশা ছিল। (আদিপুস্তক ১:২৬, ২৭) শুধুমাত্র “সদসদ্-জ্ঞান-দায়ক যে বৃক্ষ,” তার ফল খেলেই সে মারা যাবে। (আদিপুস্তক ২:১৭) কিন্তু আদম ও তার স্ত্রী হবা যখন অবাধ্য হয়ে সেই বৃক্ষেরই ফল খেয়েছিল, ঈশ্বর তাদের উপর মৃত্যুর দণ্ডাজ্ঞা দিয়েছিলেন। ‘যে দিন তারা সেই বৃক্ষের ফল খায়,’ সেদিন থেকে ঈশ্বরের দৃষ্টিতে তারা ছিল মৃত ও শারীরিকভাবেও তারা মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করে। তাদের জীবনের মান আর তেমন রইল না, যা তারা প্রথমে উপভোগ করেছিল।
‘প্রকৃতরূপে জীবনের’ পথে
“প্রকৃতরূপে জীবন” সম্ভবপর করতে, যিহোবা ঈশ্বর মানুষকে পুনরুদ্ধারের এক ব্যবস্থা করেন। এই ব্যবস্থাটি কেমন, তা বুঝবার জন্য আসুন আমরা একটা ছোট কারখানার বিষয় চিন্তা করি। এই কারখানার প্রতিটি যন্ত্রই ত্রুটিপূর্ণ ও তা মিস্ত্রিদের সমস্যায় ফেলে, কারণ বহু বছর আগে কারখানার প্রথম মিস্ত্রি যন্ত্রচালকের ব্যবহারের নিয়মাবলীকে অগ্রাহ্য করে চালিয়ে সমস্ত যন্ত্রগুলির প্রভূত ক্ষতি করেছিল। পরবর্তীকালের মিস্ত্রিরা শুধুমাত্র সেগুলিকেই প্রকৃত যত্নসহকারে ব্যবহার করে কাজ করতে পারে। কারখানার মালিক তার শ্রমিকদের সুবিধার্থে যন্ত্রগুলি পুনর্নির্মাণ করতে চান এবং সেই উদ্দেশ্যে তিনি প্রয়োজনীয় পুঁজিও আলাদা করে রাখার ব্যবস্থা করছেন।
সেই প্রথম ‘মিস্ত্রি’ আদমকে যে জীবন দেওয়া হয়েছিল, তা সে ধরে রাখেনি। ফলে সে তার বংশধরদের অসিদ্ধতা দেয়, ঠিক সেই ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রের মত। (রোমীয় ৫:১২) ঠিক সেই কারখানার পরবর্তীকালের মিস্ত্রিদের মত যারা সেই পরিস্থিতির কোন সমাধানে অক্ষম, আদমের বংশধরেরাও নিজেদের জন্য প্রকৃত জীবন লাভ করতে অক্ষম। (গীতসংহিতা ৪৯:৭) আপাতদৃষ্টিতে এই দুঃখময় পরিস্থিতির সংশোধন করতে যিহোবা তাঁর একজাত পুত্রকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন মানবজাতির জন্য অনন্ত জীবন পুনরায় ক্রয় করার জন্য। (লূক ১:৩৫; ১ পিতর ১:১৮, ১৯) ঈশ্বরের একজাত পুত্র, যীশু খ্রীষ্ট মানবজাতির জন্য আত্মবলিদানমূলক মৃত্যু বরণ করে সেই মূলধন যোগান—অর্থাৎ সেই জীবন যা আদম হারিয়েছিল। (মথি ২০:২৮; ১ পিতর ২:২২) এই বহুমূল্য বলিদানের মাধ্যমে প্রকৃত জীবন দান করার ভিত্তি এখন যিহোবার আছে।
বাধ্য মানবজাতির জন্য যীশুর মুক্তির মূল্যের অর্থ হবে পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্ত জীবন। (গীতসংহিতা ৩৭:২৯) এই আশা সকল ব্যক্তিকে দেওয়া হচ্ছে, যারা “সর্ব্বশক্তিমান্ ঈশ্বরের সেই মহাদিনের যুদ্ধে” যাকে হর্মাগিদোন বলা হয়, তার থেকে রক্ষা পাবে। (প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৪-১৬) এই যুদ্ধ পৃথিবী থেকে সমস্ত দুষ্টতাকে মুছে ফেলবে। (গীতসংহিতা ৩৭:৯-১১) যারা ঈশ্বরের স্মৃতিতে আছে, অথচ সেই দিনের আগেই মারা যাবে, তারা সেই পুনর্প্রতিষ্ঠিত পরমদেশ পৃথিবীতে পুনরুত্থান পাবে প্রকৃত জীবন উপভোগ করার জন্য, যা সকল বাধ্য মানবজাতির জন্য রাখা হয়েছে।—যোহন ৫:২৮, ২৯.
আমাদের বর্তমান জীবনের প্রতি স্বযত্নের প্রয়োজন
এটার অর্থ এই নয় যে আমাদের বর্তমান জীবনের যে পবিত্রতা, তার প্রতি অশ্রদ্ধা দেখাবো। সেই কারখানার মালিক কি এমন একটি মিস্ত্রির, যে যন্ত্রগুলির যত্ন নেয় না, তার জন্য সময় ও অর্থ ব্যয় করবে? পরিবর্তে, সেই মালিক কি এমন মিস্ত্রির উপর দায়িত্ব অর্পণ করবেন না, যে তার পুরাতন যন্ত্রকে স্বযত্নে কাজে লাগিয়েছিল?
জীবন হল যিহোবার থেকে এক বহুমূল্য উপহারস্বরূপ। সেই সদাশয় উপহারের উৎসরূপে তিনি চান যে আমরা যেন জীবনের উপযুক্ত যত্ন নিই। (গীতসংহিতা ৩৬:৯; যাকোব ১:১৭) পৃথিবীর মানুষের জন্য যিহোবার উদ্বেগের প্রতি দৃষ্টি আরোপ করিয়ে যীশু বলেছিলেন: “এমন কি, তোমাদের মস্তকের কেশগুলিও সমস্ত গণিত আছে।” (লূক ১২:৭) যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের আদেশ করেন যে তারা যেন হত্যা না করে, যার অন্তর্ভুক্ত হল সাধারণভাবেই আত্মহত্যা না করা। (যাত্রাপুস্তক ২০:১৩) এটা আত্মহত্যা, জীবনের পছন্দগুলির মধ্যে একটি হিসাবে গণ্য করা, এড়াতে সাহায্য করে।
আমাদের জন্য যিহোবার প্রেমপূর্ণ আগ্রহ জানার পর ঈশ্বরভীরু লোকেরা বর্তমান জীবনে বাইবেলের নীতিগুলিকে প্রয়োগ করে চলে। উদাহরণস্বরূপ, যেহেতু সত্য খ্রীষ্টানদের আবশ্যকতা হল ‘মাংসের ও আত্মার সমস্ত মালিন্য হইতে আপনাদিগকে শুচি করা, ঈশ্বরভয়ে পবিত্রতা সিদ্ধ করা,’ তাই তারা তামাক ও মন-পরিবর্তনকারী আসক্তিকর নেশাকর ওষুধ পরিহার করে চলে।—২ করিন্থীয় ৭:১.
মানবজীবনের প্রতি ঈশ্বরের আগ্রহ আরও পরিলক্ষিত হয় “শান্ত হৃদয়” রাখার এবং অনৈতিক আচরণ এড়িয়ে চলার জন্য তাঁর উপদেশে। (হিতোপদেশ ১৪:৩০; গালাতীয় ৫:১৯-২১) এই উচ্চ মানগুলির প্রতি অনুগত থেকে আমরা স্বাস্থ-উৎপীড়নকারী দুর্বার ক্রোধ ও যৌন রোগে আক্রান্ত হওয়ার থেকে রক্ষা পাই।
যিহোবার যে তাঁর লোকেদের জন্য উদ্বেগ আছে তা সুস্পষ্টরূপে প্রকাশ পায় অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া-দাওয়া ও পান না করার জন্য তার সতর্কবার্তা থেকে। (দ্বিতীয় বিবরণ ২১:১৮-২১; হিতোপদেশ ২৩:২০, ২১) খ্রীষ্টানদের সাবধান করে দেওয়া হয়েছে যে লোভী ও মাতালরা ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে না, যার অর্থ হল তারা কখনও প্রকৃত জীবন উপভোগ করতে পারবে না। (১ করিন্থীয় ৬:৯, ১০; ১ পিতর ৪:৩) আত্মসংযম করতে উৎসাহ দিয়ে যিহোবা আমাদের উপকারজনক শিক্ষা দিয়ে থাকেন।—যিশাইয় ৪৮:১৭.
ঈশ্বরের মানের প্রতি বাধ্যতা দেখিয়ে আমরা প্রমাণ করি যে আমাদের বর্তমান জীবনকে আমরা ভালবাসি। অবশ্যই, আরও গুরুত্বপূর্ণ হল আমাদের সেই প্রকৃত জীবন। যেহেতু সেই জীবন হল অনন্তকালীন, সত্য খ্রীষ্টানেরা বর্তমান জীবনের চেয়ে সেই জীবনের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়। যখন যীশু তাঁর জীবন বলিদান দিয়েছিলেন, তখন তিনি যিহোবার ইচ্ছার প্রতি বশীভূত হয়েছিলেন। এই পৃথিবীতে তাঁর জীবনের চাইতেও তাঁর পিতার প্রতি বাধ্যতা ছিল তাঁর কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই বলিদানের ফলে যীশু পুনরুত্থিত হয়েছেন এবং স্বর্গে অমর জীবন পেয়েছেন। (রোমীয় ৬:৯) তাঁর মৃত্যুর অর্থও হল বাধ্য মানবজাতির জন্য অনন্ত জীবন যারা তাঁর মুক্তির মূল্যে বিশ্বাস করবে।—ইব্রীয় ৫:৮, ৯; ১২:২.
রক্তের প্রতি অতি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম
বোঝা যায়, যে যীশুর অনুগামীরা তাঁর সেই অভিমতকে প্রতিফলিত করে। তারা সর্ববিষয়ে ঠিক যীশুর মত ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করার জন্য চেষ্টা করে। এটাই হল একটা কারণ যা আমাদের বুঝিয়ে দেয়, যে কেন তারা রক্ত নেয় না, যা ডাক্তাররা বলে থাকে জীবনদানকারী। আসুন আমরা দেখি কিভাবে একজন ব্যক্তি রক্ত না নিয়ে প্রমাণ করে যে সে প্রকৃত জীবন ধরিয়া রাখে।
যীশু খ্রীষ্টের মত সত্য খ্রীষ্টানেরা ঈশ্বরের চোখে জীবিত থাকতে চায় এবং সেইজন্য প্রয়োজন ঈশ্বরের প্রতি সম্পূর্ণ বাধ্যতা। ঈশ্বরের বাক্য খ্রীষ্টের অনুগামীদের আদেশ দেয়: “প্রতিমার প্রসাদ এবং রক্ত ও গলা টিপিয়া মারা প্রাণীর মাংস ও ব্যভিচার হইতে পৃথক্ থাকা তোমাদের উচিত।” (প্রেরিত ১৫:২৮ ২৯) রক্তের বিষয়ে এই আইনটি কেন খ্রীষ্টানদের উপর বাধ্যতামূলক আদেশগুলির অন্তর্ভুক্ত?
ইস্রায়েলীয়দের আইন দেওয়া হয়েছিল রক্ত থেকে পৃথক থাকার জন্য। (লেবীয় পুস্তক ১৭:১৩, ১৪) খ্রীষ্টানেরা মোশির নিয়মের অন্তর্ভুক্ত নয়। কিন্তু তারা বোঝে যে রক্ত না খাওয়ার যে আদেশ, সেটা এর থেকেও আগে দেওয়া হয়েছিল; এটা অনেক আগে জলপ্লাবনের ঠিক পরেই নোহকে দেওয়া হয়েছিল। (আদিপুস্তক ৯:৩, ৪; কলসীয় ২:১৩, ১৪) এই আদেশ নোহের সকল বংশধরদের প্রতিই প্রযোজ্য ছিল, যাদের থেকে আজ পৃথিবীর সকল জাতি উৎপন্ন হয়েছে। (আদিপুস্তক ১০:৩২) এছাড়াও, মোশির নিয়ম আমাদের বুঝতে সাহায্য করে ঈশ্বর কেন রক্তকে পবিত্র জ্ঞান করতে জোর দিয়েছিলেন। ইস্রায়েল জাতিকে কোন রকম রক্ত খেতে নিষেধ করার পর ঈশ্বর বলেছিলেন: “রক্তের মধ্যেই শরীরের প্রাণ থাকে, এবং তোমাদের প্রাণের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করণার্থ আমি তাহা বেদির উপরে তোমাদিগকে দিয়াছি; কারণ প্রাণের গুণে রক্তই প্রায়শ্চিত্তসাধক।” (লেবীয় পুস্তক ১৭:১১) বেদীতে বলিদানের উদ্দেশ্যে ঈশ্বর রক্তকে আলাদা করেন। রক্তের পবিত্রতার বিষয়ে ঈশ্বরের আইন উপলব্ধি করায় পৃথিবীতে সৃষ্ট সমস্ত জীবের উপর তাঁর অধিকারকে। (যিহিষ্কেল ১৮:৪; প্রকাশিত বাক্য ৪:১১) যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গিতে আমাদের জীবনকে দেখলে, আমরা উপলব্ধি করতে পারি যে জীবন আমাদের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে না, কিন্তু ঈশ্বর শুধুমাত্র তা আমাদের উপর বিশ্বাসভরে অর্পণ করেছেন।
ঠিক আমাদের দৃষ্টান্তে যেমন মিস্ত্রি ছিল যন্ত্রের জন্য দায়িত্বশীল, তেমনি আমাদের বর্তমান জীবনের জন্য আমরাও দায়িত্বশীল। যদি আপনার যন্ত্রটির মেরামতের প্রয়োজন হয়, আর একটি কারিগর যদি আপনাকে এমন একটি যন্ত্রাংশ দিয়ে সেটিকে মেরামত করতে বলে, যা যন্ত্রটির নির্দেশিকা পুস্তকের বিপরীত, তাহলে আপনি কী করবেন? আপনি কি অন্য মিস্ত্রির সঙ্গে পরামর্শ করবেন না, যে কী করে সেই নির্দেশিকা পুস্তকের নির্দেশ অনুসরণ করে যন্ত্রটির মেরামত করা যায়? মানবজীবন ক্ষুদ্র যন্ত্রের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান ও জটিল। অনুপ্রাণিত বাক্যে, মানুষকে জীবিত রাখার নির্দেশিকা পুস্তকে, আমাদের সৃষ্টিকর্তা জীবনরক্ষার্থে রক্ত নিতে নিষেধ করেছেন। (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪৬, ৪৭; ফিলিপীয় ২:১৬) তাহলে সেই নির্দেশিকা পুস্তকের নিয়মের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকাটাই কি বাঞ্ছনীয় নয়?
সত্যই, খ্রীষ্টীয় রুগীরা যখন বিনা রক্তে চিকিৎসা চায়, তখন তারা চিকিৎসার সকল পদ্ধতিকে প্রত্যাখ্যান করে না। তারা শুধুমাত্র সেইধরনের চিকিৎসা চায় যা তাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জীবনের প্রতি সম্মান নিয়ে আসে। যে সব ডাক্তাররা খ্রীষ্টানদের সিদ্ধান্তকে সাহসের সঙ্গে সম্মান করেন, তারা সেই প্রকার চিকিৎসার উপকারগুলির সত্যতা বুঝতে পারেন। একজন শল্যচিকিৎসক যিনি ব্যাপকভাবে রক্তকে ব্যবহার করতেন, তিনি ব্যক্ত করেন, “যিহোবার সাক্ষীদের সঙ্গে পরিচয়ে আমি এক নতুন মূল্যবোধ খুঁজে পেয়েছি।” এখন তিনি যারা সাক্ষী নয়, তাদেরও রক্ত ছাড়া চিকিৎসার প্রয়াস করেন।
প্রকৃত জীবনকে ধরে রাখা
এই নতুন মূল্যবোধগুলি কী যেগুলি সেই শল্যচিকিৎসক যিহোবার সাক্ষীদের চিকিৎসা করার মাধ্যমে খুঁজে পেয়েছিলেন? এখন তিনি উপলব্ধি করেন যে একজন রুগীকে চিকিৎসা করার অর্থ শুধুমাত্র তার রোগগ্রস্ত শরীরের অংশটুকুর চিকিৎসা করা নয়, কিন্তু সম্পূর্ণ রুগীকেই চিকিৎসা করা বোঝায়। একজন রুগীর তার শরীর, মানসিক ও আত্মিক বিষয়ের সবচেয়ে ভালভাবে যত্ন নিতে চায় কিনা সে বিষয়ে ইচ্ছা প্রকাশ করা কি উচিত নয়?
১৫ বছর বয়স্ক কুমিকোর মারাত্মক লিউকোমিয়া চিকিৎসার জন্য রক্ত নেওয়া হল সবচেয়ে জঘন্য বিকল্প। রক্ত নেওয়ার মাধ্যমে অল্প কয়েক সপ্তাহ, মাস ও বছর জীবন বাঁচানোর চেষ্টা কোনভাবেই উপযুক্ত নয় যখন দীর্ঘকালীন পরিণামের কথা বিবেচনা করা হয়। বর্তমান জীবন যিহোবার কাছে উৎসর্গ করার মাধ্যমে কুমিকো রক্ত ও জীবনের প্রতি সম্মান দেখিয়েছিল। যদিও তার বাবা ও অন্যান্য আত্মিয়রা ছিল ঘোর বিরোধী, তথাপি কুমিকো তার বিশ্বাসে দৃঢ় ছিল। একবার তার ডাক্তার কুমিকোকে প্রশ্ন করেছিল: “যদি তোমার ঈশ্বর ভুলভ্রান্তিকে ক্ষমা করেন, তাহলে তুমি যদি রক্ত নিয়েও ফেল, তাহলে তিনি কি তোমাকে ক্ষমা করবেন না?” কুমিকো আপোশ করে তার বাইবেল ভিত্তিক বিশ্বাসকে অস্বীকার করেনি। “জীবনের বাক্যকে ধরিয়া” রেখে কুমিকো তার সিদ্ধান্তে অটল ছিল। (ফিলিপীয় ২:১৬) যেমন তার অবিশ্বাসী ঠাকুমা বলেছিল, “কুমিকো তার বিশ্বাস ছাড়বে না।” শীঘ্রই কুমিকোর পিতা ও ঠাকুমা আর সেইসঙ্গে তার ডাক্তারেরও মনোভাবেরও পরিবর্তন ঘটেছিল।
কুমিকোর দৃঢ় বিশ্বাস, যে যিহোবা তাকে মৃত্যু থেকে পুনরুত্থান করতে পারেন, তা বহু ব্যক্তির হৃদয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। বেঁচে থাকাকালীন সে তার বাবাকে কাকুতি-মিনতি করে বলেছিল: “যদি মরেও যাই, আমি পরমদেশে পুনরুত্থানে আসব। কিন্তু হর্মাগিদোনে তুমি যদি ধ্বংস হয়ে যাও, তাহলে আমি আর তোমাকে দেখতে পাব না। তাই দয়া করে বাইবেল পড়।” তার বাবা শুধু বারবার এটাই বলেছিল: “যখন তুমি সুস্থ হয়ে উঠবে, তখন আমি পড়ব।” কিন্তু যখন কুমিকো সেই কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়, তখন তার বাবা কুমিকোর শবাধারে এক টুকরো কাগজের চিঠি রেখে গিয়েছিল, যাতে লেখা ছিল: “কুমিকো, পরমদেশে অবশ্যই তোমার সাথে আমার দেখা হবে।” শোকসভার শেষে উপস্থিত সকলকে কুমিকোর বাবা ব্যক্ত করেছিল: “আমি কুমিকোকে প্রতিজ্ঞা করেছি যে আমি তার সাথে পরমদেশে সাক্ষাৎ করবই। যদিও আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারি না, কারণ এবিষয়ে আমার জ্ঞান খুবই কম, তথাপি এবিষয়ে গভীরভাবে জানতে আমি দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ। দয়া করে আমাকে সাহায্য করুন।” তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করেছিল।
জীবনের প্রতি কুমিকোর ছিল প্রকৃত শ্রদ্ধা এবং সে চেয়েছিল বাঁচতে। তার বর্তমান জীবনকে বাঁচানোর জন্য চিকিৎসকেরা যা কিছু করেছিলেন, সেগুলির প্রতি তার যথাযথ উপলব্ধিবোধ ছিল। সৃষ্টিকর্তার নির্দেশিকা পুস্তকের নিয়মগুলি যথাযথভাবে পালন করার দ্বারা সে প্রমাণ করেছিল যে সে প্রকৃত জীবনকে ধরে রেখেছিল। লক্ষ লক্ষ ব্যক্তির জন্য পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্ত জীবন অপেক্ষা করে আছে। আপনাকে কি তাদের মাঝে দেখতে পাওয়া যাবে?