স্বামী এবং প্রাচীন—দায়িত্বগুলির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা
‘ইহা আবশ্যক যে, অধ্যক্ষ এক স্ত্রীর স্বামী হবেন।’—১ তীমথিয় ৩:২.
১, ২. কেন যাজকীয় কৌমার্য অশাস্ত্রীয়?
প্রথম শতাব্দীতে, বিশ্বস্ত খ্রীষ্টানেরা তাদের বিভিন্ন দায়িত্বগুলির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে উদ্বিগ্ন ছিলেন। প্রেরিত পৌল যখন বলেছিলেন যে একজন খ্রীষ্টান যে অবিবাহিত থাকে সে “আরও ভাল করে,” এই কথাটির দ্বারা কি তিনি বুঝিয়েছিলেন যে এইধরনের ব্যক্তিরা খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে অধ্যক্ষ হিসাবে সেবা করার জন্য অধিকতর উপযুক্ত? বাস্তবিকপক্ষে কি তিনি প্রাচীন পদের জন্য অবিবাহিত থাকাকে আবশ্যক করছিলেন? (১ করিন্থীয় ৭:৩৮) ক্যাথলিক পাদ্রিদের জন্য কৌমার্য আবশ্যক। কিন্তু যাজকীয় কৌমার্য কি শাস্ত্রসম্মত? প্রাচ্যের অর্থোডক্স গির্জাগুলি তাদের যাজকপল্লীর যাজকদের বিবাহিত পুরুষ হতে অনুমোদন করে, কিন্তু বিশপদেরকে নয়। এটি কি বাইবেলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ?
২ খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর প্রতিষ্ঠাকারী সদস্য, খ্রীষ্টের ১২ জন প্রেরিতদের অধিকাংশই বিবাহিত ছিলেন। (মথি ৮:১৪, ১৫; ইফিষীয় ২:২০) পৌল লিখেছিলেন: “অন্য সকল প্রেরিত ও প্রভুর ভ্রাতৃগণ ও কৈফা [পিতর], ইহাঁদের ন্যায় কোন ধর্ম্মভগিনীকে বিবাহ করিয়া সঙ্গে লইয়াই নানা স্থানে যাইবার অধিকার কি আমাদের নাই?” (১ করিন্থীয় ৯:৫) নিউ ক্যাথলিক এনসাইক্লোপিডিয়া স্বীকার করে যে, “কৌমার্য সংক্রান্ত আইনের উৎস গির্জা” আর তাই “ন[তুন] নি[য়মের] পরিচারকেরা কৌমার্য রক্ষা করতে বাধ্য ছিলেন না।” যিহোবার সাক্ষীরা গির্জার আইনের চেয়ে বরঞ্চ শাস্ত্রীয় আদর্শকে অনুসরণ করে।—১ তীমথিয় ৪:১-৩.
প্রাচীনপদ এবং বিবাহ অনুমোদনযোগ্য
৩. কোন্ শাস্ত্রীয় তথ্য দেখায় যে খ্রীষ্টীয় অধ্যক্ষগণ বিবাহিত পুরুষ হতে পারেন?
৩ অধ্যক্ষপদে নিযুক্ত ব্যক্তিদের অবিবাহিত থাকা উচিত তা বলার পরিবর্তে পৌল তীতকে লিখেছিলেন: “আমি তোমাকে এই কারণে ক্রীতীতে রাখিয়া আসিয়াছি, যেন যাহা যাহা অসম্পূর্ণ, তুমি তাহা ঠিক করিয়া দেও, এবং যেমন আমি তোমাকে আদেশ দিয়াছিলাম, প্রত্যেক নগরে প্রাচীনদিগকে [গ্রীক, প্রেস্বাইটেরস] নিযুক্ত কর; যে ব্যক্তি অনিন্দনীয় ও কেবল এক স্ত্রীর স্বামী, যাঁহার সন্তানগণ বিশ্বাসী, নষ্টামি দোষে অপবাদিত বা অদম্য নয় (তাহাকে নিযুক্ত কর)। কেননা ইহা আবশ্যক যে, অধ্যক্ষ [গ্রীক, এপিস্কোপস্, যার থেকে “বিশপ” শব্দটি এসেছে] ঈশ্বরের ধনাধ্যক্ষ বলিয়া অনিন্দনীয় হন; স্বেচ্ছাচারী কি আশুক্রোধী কি মদ্যপানে আসক্ত কি প্রহারক কি কুৎসিত লাভের লোভী না হন।”—তীত ১:৫-৭.
৪. (ক) কিভাবে আমরা জানি যে খ্রীষ্টীয় অধ্যক্ষদের জন্য বিবাহ আবশ্যক নয়? (খ) একজন অবিবাহিত প্রাচীন ভাইয়ের কী সুবিধা রয়েছে?
৪ অপরদিকে, প্রাচীন পদের জন্য বিবাহ শাস্ত্রীয় আবশ্যকতা নয়। যীশু অবিবাহিত ছিলেন। (ইফিষীয় ১:২২) প্রথম-শতাব্দীর খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর একজন বিশিষ্ট অধ্যক্ষ পৌল তখন অবিবাহিত ছিলেন। (১ করিন্থীয় ৭:৭-৯) বর্তমানে, অনেক অবিবাহিত খ্রীষ্টানেরা আছেন যারা প্রাচীন হিসাবে সেবা করছেন। তাদের অবিবাহিত অবস্থা সম্ভবত অধ্যক্ষ হিসাবে তাদের দায়িত্বগুলি সম্পাদনে আরও অধিক সময় ব্যয় করতে অনুমোদন করে।
‘বিবাহিত পুরুষের বিভিন্নতা ঘটে’
৫. কোন্ শাস্ত্রীয় তথ্য বিবাহিত ভাইয়েদের স্বীকার করা উচিত?
৫ যখন একজন খ্রীষ্টীয় পুরুষ বিবাহ করেন তখন তার উপলব্ধি করা উচিত যে তিনি নতুন দায়িত্বাদি নিতে যাচ্ছেন যা তার সময় এবং মনোযোগ দাবি করবে। বাইবেল বলে: “যে অবিবাহিত, সে প্রভুর বিষয় চিন্তা করে, কিরূপে প্রভুকে সন্তুষ্ট করিবে। কিন্তু যে বিবাহিত, সে সংসারের বিষয় চিন্তা করে, কিরূপে স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করিবে; তাই তাহার বিভিন্নতা ঘটে।” (১ করিন্থীয় ৭:৩২-৩৪) কোন্ অর্থে বিভিন্নতা ঘটে?
৬, ৭. (ক) একজন বিবাহিত পুরুষের “বিভিন্নতা” ঘটার একটি উপায় কী? (খ) বিবাহিত খ্রীষ্টানদের পৌল কী পরামর্শ দেন? (গ) কিভাবে এটি একজন পুরুষের দায়িত্ব গ্রহণ করার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে?
৬ একটি বিষয় হচ্ছে, একজন বিবাহিত পুরুষকে তার নিজের দেহের উপর তার অধিকারকে পরিত্যাগ করতে হয়। পৌল এই বিষয়টিকে সম্পূর্ণরূপে স্পষ্ট করেছিলেন: “নিজ দেহের উপরে স্ত্রীর কর্ত্তৃত্ব নাই, কিন্তু স্বামীর আছে; আর তদ্রূপ নিজ দেহের উপরে স্বামীর কর্ত্তৃত্ব নাই, কিন্তু স্ত্রীর আছে।” (১ করিন্থীয় ৭:৪) কেউ কেউ যারা বিবাহ করতে মনস্থ করছে হয়ত মনে করতে পারে যে এটি খুব কমই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ যৌনতা তাদের বিবাহে বড় বিষয় হবে না। কিন্তু যেহেতু বিবাহ-পূর্ব বিশুদ্ধতা একটি শাস্ত্রীয় আবশ্যকতা, তাই খ্রীষ্টানেরা তাদের ভবিষ্যৎ সাথীর অন্তরঙ্গ চাহিদাকে প্রকৃতপক্ষে জানে না।
৭ পৌল দেখান যে একজন দম্পতি যারা তাদের মন ‘আত্মার বশে চালাতে’ স্থির করেছেন তাদেরও অবশ্যই একে অপরের যৌন চাহিদাকে বিবেচনা করতে হবে। তিনি করিন্থের খ্রীষ্টানদের পরামর্শ দিয়েছিলেন: “স্বামী স্ত্রীকে তাহার প্রাপ্য দিউক; আর তদ্রূপ স্ত্রীও স্বামীকে দিউক। তোমরা এক জন অন্যকে বঞ্চিত করিও না; কেবল প্রার্থনার নিমিত্তে অবকাশ পাইবার জন্য উভয়ে একপরামর্শ হইয়া কিছু কাল পৃথক্ থাকিতে পার; পরে পুনর্ব্বার একত্র হইবে, যেন শয়তান তোমাদের অসংযমতা প্রযুক্ত তোমাদিগকে পরীক্ষায় না ফেলে।” (রোমীয় ৮:৫; ১ করিন্থীয় ৭:৩, ৫) দুঃখের বিষয় যে, এই পরামর্শ না পালন করার ফলে অনেক ক্ষেত্রে ব্যভিচারিতা ঘটেছে। অতএব, একজন বিবাহিত খ্রীষ্টানের কোন দায়িত্ব যা তার স্ত্রীর কাছ থেকে দীর্ঘ সময়ের জন্য তাকে পৃথক করবে তা গ্রহণ করার পূর্বে বিষয়গুলিকে সতর্কতার সাথে বিবেচনা করা উচিত। অবিবাহিত অবস্থায় তার যেমন ছিল, কাজ করার জন্য সেই একই স্বাধীনতা এখন আর তার নেই।
৮, ৯. (ক) পৌল কী বোঝাতে চেয়েছিলেন যখন তিনি বলেছিলেন যে, বিবাহিত খ্রীষ্টানেরা “সংসারের বিষয় চিন্তা করে”? (খ) বিবাহিত খ্রীষ্টানদের কী করার জন্য চিন্তা করা উচিত?
৮ কোন্ অর্থে এটি বলা যেতে পারে যে বিবাহিত খ্রীষ্টান পুরুষেরা যার অন্তর্ভুক্ত প্রাচীনেরাও “সংসারের [কস্মস্] বিষয় চিন্তা করে।” (১ করিন্থীয় ৭:৩৩) এটি সম্পূর্ণরূপে প্রতীয়মান যে পৌল এই জগতের মন্দ বিষয়গুলির কথা বলছিলেন না, যা সকল সত্য খ্রীষ্টানদেরকে পরিত্যাগ করতে হয়। (২ পিতর ১:৪; ২:১৮-২০; ১ যোহন ২:১৫-১৭) ঈশ্বরের বাক্য আমাদের নির্দেশ দেয় “যেন আমরা ভক্তিহীনতা ও সাংসারিক [কস্মিকস্] অভিলাষ সকল অস্বীকার করিয়া সংযত, ধার্ম্মিক ও ভক্তিভাবে এই বর্ত্তমান যুগে জীবন যাপন করি।”—তীত ২:১২.
৯ অতএব, একজন বিবাহিত খ্রীষ্টান “সংসারের বিষয় চিন্তা করে” এই অর্থে যে তিনি [স্বামী বা স্ত্রী] যথার্থভাবেই জাগতিক বিষয়গুলি যা একটি স্বাভাবিক বিবাহিত জীবনের অংশ তার জন্য উদ্বিগ্ন থাকেন। এই বিষয়গুলি বাসস্থান, খাদ্য, বস্ত্র, আমোদপ্রমোদকে অন্তর্ভুক্ত করে—আর সন্তান থাকলে তা আরও অগণিত বিষয়গুলিকে যুক্ত করে। কিন্তু এমনকি একটি সন্তানহীন দম্পতির ক্ষেত্রেও যদি বিবাহকে কার্যকারী করতে হয় তবে স্বামী এবং স্ত্রী উভয়কেই অবশ্যই তাদের বিবাহ সাথীকে “সন্তুষ্ট” করতে উদ্বিগ্ন থাকতে হবে। এটি খ্রীষ্টীয় প্রাচীনদের জন্য বিশেষ আগ্রহের বিষয় যখন তারা তাদের দায়িত্বগুলির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করেন।
উত্তম স্বামীরা, একই সাথে উত্তম প্রাচীনেরা
১০. একজন খ্রীষ্টীয় ভাইকে প্রাচীন হিসাবে যোগ্য হয়ে উঠার জন্য, তার ভাইয়েদের এবং বাইরের লোকদের কোন্ বিষয় পর্যবেক্ষণ করতে হবে?
১০ যদিও প্রাচীন পদের জন্য বিবাহ আবশ্যক নয়, তবুও প্রাচীন হিসাবে নিযুক্ত হওয়ার জন্য সুপারিশ করার পূর্বে একজন খ্রীষ্টান যদি বিবাহিত হন, তবে তাকে অবশ্যই যথার্থ মস্তক ব্যবস্থাকে অনুশীলন করার মাধ্যমে একজন উত্তম, প্রেমময় স্বামী হওয়ার জন্য প্রচেষ্টা করার প্রমাণ দিতে হবে। (ইফিষীয় ৫:২৩-২৫, ২৮-৩১) পৌল লিখেছিলেন: “যদি কেহ অধ্যক্ষপদের আকাঙ্ক্ষী হন, তবে তিনি উত্তম কার্য্য বাঞ্ছা করেন। অতএব ইহা আবশ্যক যে, অধ্যক্ষ অনিন্দনীয়, এক স্ত্রীর স্বামী।” (১ তীমথিয় ৩:১, ২) এটি স্পষ্ট প্রতীয়মান হওয়া উচিত যে একজন প্রাচীন এক উত্তম স্বামী হওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন, তার স্ত্রী একজন সহখ্রীষ্টান হোক অথবা না হোক। প্রকৃতপক্ষে, মণ্ডলীর বাইরের লোকেরাও যাতে লক্ষ্য করতে পারে যে তিনি তার স্ত্রীর ও অন্যান্য দায়িত্বগুলির প্রতি উত্তম যত্ন নিচ্ছেন। পৌল আরও বলেছিলেন: “বহিঃস্থ লোকদের কাছেও উত্তম সাক্ষ্য প্রাপ্ত হওয়া তাঁহার আবশ্যক, পাছে তিরস্কারে ও দিয়াবলের জালে পতিত হন।”—১ তীমথিয় ৩:৭.
১১. “এক স্ত্রীর স্বামী” বাক্যাংশটি কোন্ বিষয়কে ইঙ্গিত করে, অতএব খ্রীষ্টীয় প্রাচীনদের কোন্ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত?
১১ অবশ্যই “এক স্ত্রীর স্বামী” বাক্যাংশটি বহুগামিতাকে নিষিদ্ধ করে, কিন্তু এটি বিবাহের মধ্যে বিশ্বস্ততার প্রতিও প্রযোজ্য। (ইব্রীয় ১৩:৪) মণ্ডলীতে বোনেদের সাহায্য করার সময় প্রাচীনদের বিশেষভাবে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। যখন একজন বোনের পরামর্শ এবং সান্ত্বনার প্রয়োজন হয় তাকে পরিদর্শনের সময় তাদের একা যাওয়া পরিহার করা উচিত। যদি সেটি শুধুমাত্র একটি উৎসাহ প্রদানের জন্য এক পরিদর্শন হয়, সেক্ষেত্রে তারা ভাল করবেন যদি তারা তাদের সাথে আর একজন প্রাচীন, একজন পরিচারক দাস অথবা এমনকি তার স্ত্রীকে নেন।—১ তীমথিয় ৫:১, ২.
১২. কোন্ বিবরণ একজন প্রাচীন অথবা পরিচারক দাসেদের স্ত্রীয়েদের পূরণ করার জন্য প্রচেষ্টা করা উচিত?
১২ প্রসঙ্গক্রমে, প্রাচীন এবং পরিচারক দাসেদের আবশ্যকতা তালিকাবদ্ধ করার সময় প্রেরিত পৌলের ঐ ব্যক্তিদের স্ত্রীয়েদের জন্যও কিছু পরামর্শ বাক্য ছিল যারা এইধরনের সুযোগপ্রাপ্ত বলে বিবেচিত হত। তিনি লিখেছিলেন: “তদ্রূপ স্ত্রীলোকেরাও ধীরা, অনপবাদিকা, মিতাচারিণী এবং সর্ব্ববিষয়ে বিশ্বস্তা হউন।” (১ তীমথিয় ৩:১১) একজন খ্রীষ্টীয় স্বামী তার স্ত্রীকে এই বর্ণনার সাথে সঙ্গতি রাখতে সাহায্য করার জন্য যথাসাধ্য করতে পারেন।
একজন স্ত্রীর প্রতি শাস্ত্রীয় কর্তব্যগুলি
১৩, ১৪. এমনকি এক প্রাচীনের স্ত্রী যদি একজন সহসাক্ষী নাও হন, তবুও কেন তাকে সেই স্ত্রীর সাথে থাকতে এবং একজন উত্তম স্বামী হতে হবে?
১৩ অবশ্যই, প্রাচীন এবং পরিচারক দাসেদের স্ত্রীয়েদের প্রতি দেওয়া এই পরামর্শ এই বিষয়টি মেনে নিয়েই দেওয়া হয়েছে যে সেই স্ত্রীয়েরা নিজেরা উৎসর্গীকৃত খ্রীষ্টান। সাধারণতঃ, এটিই ধরে নেওয়া হয় কারণ খ্রীষ্টানদের জন্য “কেবল প্রভুতেই” বিবাহ করাই আবশ্যক। (১ করিন্থীয় ৭:৩৯) কিন্তু এমন একজন ভাই সম্বন্ধে কী যিনি ইতিমধ্যেই একজন অবিশ্বাসী স্ত্রীর সাথে বিবাহিত যখন তিনি তার জীবন যিহোবার কাছে উৎসর্গ করেন অথবা যার স্ত্রী সেই ভাইয়ের কোন দোষ ছাড়াই সত্য থেকে পতিত হয়েছে?
১৪ শুধুমাত্র এই বিষয়টি তাকে একজন প্রাচীন হতে বাধা দেয় না। অথবা তার স্ত্রী তার বিশ্বাসের অংশী নয় শুধুমাত্র এইজন্য পৃথক হওয়াকেও সমর্থন করে না। পৌল পরামর্শ দিয়েছিলেন: “তুমি কি স্ত্রীর সঙ্গে সম্বদ্ধ? মুক্ত হইতে চেষ্টা করিও না।” (১ করিন্থীয় ৭:২৭) তিনি আরও বলেছিলেন: “যদি কোন ভ্রাতার অবিশ্বাসিনী স্ত্রী থাকে, আর সেই নারী তাহার সহিত বাস করিতে সম্মতা হয়, তবে সে তাহাকে পরিত্যাগ না করুক; তথাপি অবিশ্বাসী যদি চলিয়া যায়, চলিয়া যাউক; এমন স্থলে সেই ভ্রাতা কি সেই ভগিনী দাসত্বে বদ্ধ নহে, কিন্তু ঈশ্বর আমাদিগকে শান্তিতেই আহ্বান করিয়াছেন। কারণ, হে নারি, তুমি কি করিয়া জান যে, তুমি তোমার স্বামীকে পরিত্রাণ করিবে কি না? অথবা হে স্বামি, তুমি কি করিয়া জান যে, তুমি তোমার স্ত্রীকে পরিত্রাণ করিবে কি না?” (১ করিন্থীয় ৭:১২, ১৫, ১৬) এমনকি যদিও তার স্ত্রী একজন সাক্ষী নাও হন, তবুও একজন প্রাচীনের এক উত্তম স্বামী হওয়া উচিত।
১৫. খ্রীষ্টীয় স্বামীদের প্রেরিত পিতর কোন পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং যদি একজন প্রাচীন এক অবজ্ঞাপূর্ণ স্বামী হিসাবে প্রমাণিত হন তবে এর পরিণতি কী হতে পারে?
১৫ তার স্ত্রী সহবিশ্বাসী হোক বা না হোক, খ্রীষ্টীয় প্রাচীন শনাক্ত করবেন যে স্ত্রীর তার প্রেমময় মনোযোগের প্রয়োজন রয়েছে। প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “তদ্রূপ, হে স্বামিগণ, স্ত্রীলোক অপেক্ষাকৃত দুর্ব্বল পাত্র বলিয়া তাহাদের সহিত জ্ঞানপূর্ব্বক বাস কর, তাহাদিগকে আপনাদের সহিত জীবনের অনুগ্রহের সহাধিকারিণী জানিয়া সমাদর কর; যেন তোমাদের প্রার্থনা রুদ্ধ না হয়।” (১ পিতর ৩:৭) একজন স্বামী যিনি তার স্ত্রীর প্রয়োজনীতার প্রতি যত্ন নিতে ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যর্থ হন, তিনি যিহোবার সাথে তার নিজ সম্পর্ককে বিপদগ্রস্ত করেন; এটি যিহোবার নিকটবর্তী হতে তার জন্য বাধাস্বরূপ হতে পারে যেন “মেঘে আপনাকে আচ্ছাদন করিয়াছ, প্রার্থনা তাহা ভেদ করিতে পারে না।” (বিলাপ ৩:৪৪) এটি তাকে একজন খ্রীষ্টীয় অধ্যক্ষ হিসাবে সেবা করতে অযোগ্য করে তুলতে পরিচালিত করতে পারে।
১৬. পৌল কোন্ মূল বিষয়টি উল্লেখ করেছিলেন এবং এই বিষয়ে প্রাচীনদের কেমন অনুভব করা উচিত?
১৬ যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, পৌলের বক্তব্যের প্রধান উদ্দেশ্যটি হল যখন একজন পুরুষ বিবাহ করেন, অবিবাহিত অবস্থায় যে পরিমাণ স্বাধীনতা তার ছিল যা তাকে “একাগ্রমনে প্রভুতে আসক্ত” থাকতে অনুমোদন করেছে তিনি তা পরিত্যাগ করেন। (১ করিন্থীয় ৭:৩৫) রিপোর্টগুলি দেখায় যে কিছু বিবাহিত প্রাচীনেরা পৌলের অনুপ্রাণিত বাক্যগুলির উপর যুক্তি করার সময় সর্বদা ভারসাম্য বজায় রাখেন না। উত্তম প্রাচীনদের কী করা উচিত তা সম্পাদন করার আকাঙ্ক্ষায় তারা হয়ত স্বামী হিসাবে তাদের কিছু দায়িত্বগুলিকে উপেক্ষা করতে পারেন। কেউ কেউ মণ্ডলীর দায়িত্বগুলিকে প্রত্যাখ্যান করা কঠিন মনে করতে পারেন যদিও তা গ্রহণ করা স্পষ্টভাবেই তাদের স্ত্রীয়েদের আধ্যাত্মিক ক্ষতিসাধন করতে পারে। বিবাহের সাথে সম্বন্ধযুক্ত সুযোগগুলিকে তারা উপভোগ করেন কিন্তু তারা কি বিবাহের দায়িত্বগুলিকে পরিপূর্ণ করতে ইচ্ছুক?
১৭. কিছু স্ত্রীয়েদের ক্ষেত্রে কী ঘটেছে এবং তা হয়ত কিভাবে এড়ানো যেতে পারত?
১৭ নিশ্চিতরূপে, প্রাচীন হিসাবে একজনের উদ্দীপনা প্রশংসনীয়। কিন্তু, একজন খ্রীষ্টান কি ভারসাম্য বজায় রাখছেন যদি মণ্ডলীতে তার দায়িত্বগুলি পালন করার সাথে সাথে তিনি স্ত্রীর প্রতি তার শাস্ত্রীয় দায়িত্ব উপেক্ষা করেন? মণ্ডলীর অন্যান্যদের সহায়তা করার জন্য ইচ্ছুক হওয়ার সাথে সাথে একজন ভারসাম্যপূর্ণ প্রাচীন তার স্ত্রীর আধ্যাত্মিকতার বিষয়েও উদ্বিগ্ন থাকবেন। কিছু কিছু প্রাচীনদের স্ত্রীয়েরা আধ্যাত্মিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন এবং কেউ কেউ আধ্যাত্মিক “নৌকা ভগ্ন” অভিজ্ঞতা করে থাকেন। (১ তীমথিয় ১:১৯) যদিও একজন স্ত্রী তার নিজ পরিত্রাণ আনয়নের জন্য কাজ করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত, তবুও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই আধ্যাত্মিকতার সমস্যাগুলিকে পরিহার করা যেত যদি প্রাচীন তার স্ত্রীর ‘ভরণ পোষণ ও লালন পালন করতেন’ “যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীর প্রতি করিতেছেন।” (ইফিষীয় ৫:২৮, ২৯) নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রাচীনদের অবশ্যই ‘নিজেদের বিষয়ে . . . এবং সেই সমস্ত পালের বিষয়ে সাবধান হতে হবে। (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (প্রেরিত ২০:২৮) যদি তারা বিবাহিত হন, তবে এটি তাদের স্ত্রীয়েদেরকেও অন্তর্ভুক্ত করে।
“দৈহিক ক্লেশ”
১৮. বিবাহিত খ্রীষ্টানেরা যে “ক্লেশ” অভিজ্ঞতা করে তার কয়েকটি ক্ষেত্র কী এবং এটি এক প্রাচীনের কার্যধারাকে কিভাবে প্রভাবিত করতে পারে?
১৮ এছাড়াও প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “কুমারী যদি বিবাহ করে, তবে তাহারও পাপ হয় না। তথাপি এইরূপ লোকদের দৈহিক ক্লেশ ঘটিবে; আর তোমাদের প্রতি আমার মমতা হইতেছে।” (১ করিন্থীয় ৭:২৮) যারা তার অবিবাহিত অবস্থার উদাহরণ অনুসরণ করতে সমর্থ, পৌল তাদের সেই উদ্বেগগুলি থেকে নিষ্কৃতি দেওয়ার জন্য আকাঙ্ক্ষিত ছিলেন যা বিবাহের সাথে সাথে আবশ্যকীয়ভাবে এসে পড়ে। এমনকি সন্তানহীন দম্পতিদের ক্ষেত্রেও এই উদ্বিগ্নতাগুলির মধ্যে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা, অথবা অর্থনৈতিক সমস্যা এবং যে কোন সাথীর বৃদ্ধ পিতামাতার প্রতি শাস্ত্রীয় দায়িত্বগুলি অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। (১ তীমথিয় ৫:৪, ৮) একজন প্রাচীন অবশ্যই এক উদাহরণযোগ্য উপায়ে এই দায়িত্বগুলির মুখোমুখী হবেন এবং এটি হয়ত মাঝে মাঝে একজন খ্রীষ্টীয় অধ্যক্ষ হিসাবে তার কার্যধারাকে প্রভাবিত করতে পারে। আনন্দের বিষয় যে, অধিকাংশ প্রাচীনেরা পরিবার এবং মণ্ডলীর দায়িত্বগুলি সম্পন্ন করার দ্বারা এক উত্তম কাজ করছেন।
১৯. পৌল কী বুঝাতে চেয়েছিলেন যখন তিনি বলেছিলেন: “যাহাদের স্ত্রী আছে, তাহারা এমন চলুক, যেন তাহাদের স্ত্রী নাই”?
১৯ পৌল আরও বলেছিলেন: “সময় সঙ্কুচিত, এখন হইতে যাহাদের স্ত্রী আছে, তাহারা এমন চলুক, যেন তাহাদের স্ত্রী নাই।” (১ করিন্থীয় ৭:২৯) অবশ্য, এই অধ্যায়ে করিন্থীয়দের উদ্দেশ্যে ইতিমধ্যেই তিনি যা লিখেছেন তার পরিপ্রেক্ষিতে, এটি স্পষ্ট যে তিনি এটি বোঝাননি যে বিবাহিত খ্রীষ্টানদের যে কোন উপায়েই হোক তাদের স্ত্রীদের অবজ্ঞা করা উচিত। (১ করিন্থীয় ৭:২, ৩, ৩৩) তিনি কি বুঝিয়েছিলেন তা তিনি দেখান, যখন তিনি লিখেছিলেন: “যাহারা সংসার ভোগ করিতেছে, যেন পূর্ণমাত্রায় করিতেছে না, যেহেতুক এই সংসারের অভিনয় অতীত হইতেছে।” (১ করিন্থীয় ৭:৩১) পৌল বা প্রেরিত যোহনের দিনের তুলনায় এখন আরও অধিক মাত্রায় “জগৎ . . . বহিয়া যাইতেছে।” (১ যোহন ২:১৫-১৭) অতএব, বিবাহিত খ্রীষ্টানেরা যারা খ্রীষ্টকে অনুসরণ করতে গিয়ে কিছু আত্মত্যাগ করার প্রয়োজনীয়তাকে উপলব্ধি করে, তারা সম্পূর্ণভাবে শুধুমাত্র বিবাহের আনন্দ এবং সুযোগগুলিতে নিমগ্ন হতে পারে না।—১ করিন্থীয় ৭:৫.
আত্মত্যাগী স্ত্রীয়েরা
২০, ২১. (ক) কোন্ আত্মত্যাগগুলি অনেক খ্রীষ্টীয় স্ত্রীয়েরা করতে ইচ্ছুক? (খ) বৈধভাবে একজন স্ত্রী তার স্বামীর কাছ থেকে কী প্রত্যাশা করতে পারেন, যদিও বা তিনি একজন প্রাচীন?
২০ ঠিক যেমন প্রাচীনেরা অন্যদের উপকারের জন্য আত্মত্যাগ করে থাকেন, তেমনি প্রাচীনদের অনেক স্ত্রীয়েরাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যের আগ্রহের সাথে তাদের বিবাহের দায়িত্বগুলির ভারসাম্য রক্ষা করতে প্রচেষ্টা করছেন। হাজার হাজার খ্রীষ্টীয় স্ত্রীয়েরা অধ্যক্ষ হিসাবে তাদের স্বামীদের দায়িত্বগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করতে পেরে আনন্দিত। এইজন্য যিহোবা তাদের ভালবাসেন এবং যে উত্তম মনোভাব তারা দেখিয়ে থাকেন তার জন্য তিনি তাদের আশীর্বাদ করেন। (ফিলীমন ২৫) তৎসত্ত্বেও, পৌলের ভারসাম্যপূর্ণ পরামর্শ দেখায় যে অধ্যক্ষদের স্ত্রীয়েরা বৈধভাবেই তাদের স্বামীদের কাছ থেকে যুক্তিপূর্ণ সময় এবং মনোযোগ আশা করতে পারেন। বিবাহিত প্রাচীনদের তাদের স্ত্রীয়েদের জন্য পর্যাপ্ত সময় দেওয়া একটি শাস্ত্রীয় কর্তব্য, যাতে করে তারা স্বামী এবং অধ্যক্ষ হিসাবে তাদের দায়িত্বগুলির মধ্য ভারসাম্য রক্ষা করতে পারেন।
২১ কিন্তু একজন খ্রীষ্টীয় প্রাচীন যদি স্বামী ছাড়াও একজন পিতা হন, তাহলে সেই সম্বন্ধে কী বলা যায়? এটি তার দায়িত্বগুলিকে আরও অধিকভাবে সংযুক্ত করে এবং আরও অতিরিক্ত তত্ত্বাবধানের এক ক্ষেত্র খুলে দেয়, যা আমরা পরবর্তী প্রবন্ধে দেখব।
পুনরালোচনার মাধ্যমে
◻ কোন্ শাস্ত্রীয় তথ্য দেখায় যে একজন খ্রীষ্টীয় অধ্যক্ষ একজন বিবাহিত পুরুষ হতে পারেন?
◻ যদি একজন অবিবাহিত প্রাচীন বিবাহ করেন, তবে কোন্ বিষয়ে তাকে সতর্ক থাকতে হবে?
◻ কোন্ উপায়ে বিবাহিত খ্রীষ্টানেরা “সংসারের বিষয়ে চিন্তা করে”?
◻ কিভাবে অনেক অধ্যক্ষদের স্ত্রীয়েরা আত্মত্যাগের উত্তম মনোভাব প্রদর্শন করেন?
[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
এমনকি যদিও ঐশিক কার্যধারার দ্বারা পরিব্যাপ্ত, তবুও একজন প্রাচীনের তার স্ত্রীর প্রতি প্রেমময় মনোযোগ দেওয়া উচিত