একত্রে মিলিত হওয়া পরিত্যাগ করবেন না
“আসুন একত্রে মিলিত হওয়া পরিত্যাগ না করি, যেমন কারও কারও অভ্যাস রয়েছে,” শাস্ত্র জানায়, “বরং আসুন একে অন্যকে উৎসাহিত করি—আর সেই দিন যতই কাছে আসতে দেখছি আরও বেশি করে তা করি।” (ইব্রীয় ১০:২৫, নিউ ইন্টারন্যাশনাল ভারসন) এটা স্পষ্ট যে, সত্য উপাসকদের ‘পরস্পর মনোযোগ করিতে, প্রেম ও সৎক্রিয়ার সম্বন্ধে পরস্পরকে উদ্দীপিত করিয়া তুলিতে’ উপাসনার স্থানে একত্র হতে হবে।—ইব্রীয় ১০:২৪.
প্রেরিত পৌল যখন আমাদের সাধারণ কালের প্রথম শতাব্দীতে এই কথাগুলো লিখেছিলেন, তখন যিহুদিদের জন্য উপাসনার স্থান হিসেবে যিরূশালেমে এক উল্লেখযোগ্য মন্দির ছিল। এ ছাড়া, অনেক সমাজগৃহও ছিল। যীশু ‘সমাজ-গৃহে ও ধর্ম্মধামে শিক্ষা দিতেন, যেখানে যিহূদীরা সকলে একত্র হইতো।’—যোহন ১৮:২০.
পৌল যখন একে অন্যকে উৎসাহিত করার জন্য খ্রীষ্টানদের একত্র হতে উপদেশ দিয়েছিলেন, তখন মিলিত হওয়ার জন্য কোন্ ধরনের স্থানগুলো তার মাথায় ছিল? খ্রীষ্টীয়জগতের ধর্মীয় অট্টালিকাগুলোর কি যিরূশালেমের মন্দির ব্যবস্থার সঙ্গে কোন্ মিল রয়েছে? কখন থেকে নামধারী খ্রীষ্টানরা বিশাল ধর্মীয় কাঠামোগুলোর সঙ্গে পরিচিত হয়েছিল?
‘ঈশ্বরের নামে এক গৃহ’
ঈশ্বরকে উপাসনা করার স্থান সম্বন্ধে প্রথম উল্লেখ বাইবেলের যাত্রাপুস্তকে পাওয়া যায়। যিহোবা ঈশ্বর তাঁর মনোনীত লোকেদের—ইস্রায়েলীয়দের—“আবাস,” অথবা “সমাগম-তাম্বু” নির্মাণ করতে আদেশ দিয়েছিলেন। সেখানে নিয়ম সিন্দুক এবং বিভিন্ন পবিত্র পাত্র রাখতে হতো। সা.কা.পূ. ১৫১২ সালে যখন তা সম্পূর্ণ হয়েছিল তখন “সদাপ্রভুর প্রতাপ আবাস পরিপূর্ণ করিল।” বহনকারী ওই তাম্বু চার শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ঈশ্বরের কাছে আসার জন্য তাঁর ব্যবস্থার এক মূল বৈশিষ্ট্য হিসেবে কাজ করেছিল। (যাত্রাপুস্তক, ২৫-২৭ অধ্যায়; ৪০:৩৩-৩৮) এ ছাড়া, বাইবেল এই তাম্বুকে “সদাপ্রভুর মন্দির” এবং ‘সদাপ্রভুর গৃহ’ বলেও উল্লেখ করে।—১ শমূয়েল ১:৯, ২৪.
পরে দায়ূদ যখন যিরূশালেমের রাজা ছিলেন, তখন তিনি যিহোবার গৌরবার্থে একটা স্থায়ী গৃহ নির্মাণ করার তীব্র আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছিলেন। যেহেতু দায়ূদ একজন যোদ্ধা ছিলেন, তাই যিহোবা তাকে বলেছিলেন: “তুমি আমার নামের উদ্দেশে গৃহ নির্ম্মাণ করিবে না।” এর পরিবর্তে, তিনি মন্দির নির্মাণ করার জন্য দায়ূদের পুত্র শলোমনকে বেছে নিয়েছিলেন। (১ বংশাবলি ২২:৬-১০) সাড়ে সাত বছর ধরে চলা নির্মাণ কাজের পর সা.কা.পূ. ১০২৬ সালে শলোমন মন্দির উদ্বোধন করেছিলেন। আর যিহোবা এই নির্মাণকাজকে অনুমোদন করে বলেছিলেন: “এই যে গৃহ তুমি নির্ম্মাণ করিয়াছ, ইহার মধ্যে চিরকালের জন্য আমার নাম স্থাপনার্থে আমি ইহা পবিত্র করিলাম, এবং এই স্থানে প্রতিনিয়ত আমার চক্ষু ও আমার চিত্ত থাকিবে।” (১ রাজাবলি ৯:৩) যতদিন পর্যন্ত ইস্রায়েলীয়রা বিশ্বস্ত থাকবে, ততদিন পর্যন্ত যিহোবা এই গৃহের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ দেখিয়ে যাবেন। কিন্তু, তারা যদি সঠিক বিষয় থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তা হলে যিহোবা সেই স্থান থেকে তাঁর অনুগ্রহ সরিয়ে নেবেন আর ‘এই গৃহ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে।’—১ রাজাবলি ৯:৪-৯, NW; ২ বংশাবলি ৭:১৬, ১৯, ২০.
এক সময় ইস্রায়েলীয়রা সত্যিই সত্য উপাসনা থেকে সরে গিয়েছিল। (২ রাজাবলি ২১:১-৫) “অতএব [যিহোবা] কল্দীয়দের রাজাকে তাহাদের বিরুদ্ধে আনিলেন, আর রাজা . . . ঈশ্বরের গৃহ পোড়াইয়া দিল, যিরূশালেমের প্রাচীর ভগ্ন করিল, এবং তথাকার অট্টালিকা সকল অগ্নিদ্বারা পোড়াইয়া দিল, তথাকার সমস্ত মনোরম পাত্র বিনষ্ট করিল। আর তিনি খড়্গ হইতে অবশিষ্ট লোকদিগকে বাবিলে লইয়া গেলেন; তাহাতে . . . লোকেরা তাঁহার ও তাঁহার সন্তানদের দাস থাকিল।” বাইবেল অনুসারে এটা সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে ঘটেছিল।—২ বংশাবলি ৩৬:১৫-২১; যিরমিয় ৫২:১২-১৪.
ভাববাদী যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে, বাবিলনের অধীন থেকে যিহুদিদের মুক্ত করার জন্য ঈশ্বর পারস্যের রাজা কোরসকে উপস্থিত করেছিলেন। (যিশাইয় ৪৫:১) ৭০ বছর বন্দীত্বে থাকার পর, সা.কা.পূ. ৫৩৭ সালে মন্দির পুনর্নির্মাণের উদ্দেশ্যে তারা যিরুশালেমে ফিরে এসেছিল। (ইষ্রা ১:১-৬; ২:১, ২; যিরমিয় ২৯:১০) নির্মাণকাজে দেরি হওয়ার দরুণ, শেষে সা.কা.পূ. ৫১৫ সালে মন্দির নির্মাণ সমাপ্ত হয় এবং ঈশ্বরের বিশুদ্ধ উপাসনা পুনর্স্থাপিত হয়। যদিও শলোমনের মন্দিরের মতো এটি এতটা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ছিল না তবে এর কাঠামো প্রায় ৬০০ বছর ধরে টিকে ছিল। কিন্তু এই মন্দিরও মেরামতের অভাবে জীর্ণাবস্থায় পড়ে থাকে কারণ ইস্রায়েলীয়রা যিহোবার উপাসনাকে অবহেলা করেছিল। যখন যীশু খ্রীষ্টের পৃথিবীতে আবির্ভাব ঘটে, তখন রাজা হেরোদের দ্বারা মন্দিরটির পুনর্নির্মাণের কাজ চলছিল। কিন্তু এই মন্দিরের ভবিষ্যৎ কী ছিল?
“একখানি পাথর অন্য পাথরের উপরে থাকিবে না”
যিরূশালেমের মন্দিরের বিষয়ে উল্লেখ করে, যীশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “এই স্থানের একখানি পাথর অন্য পাথরের উপরে থাকিবে না, সমস্তই ভূমিসাৎ হইবে।” (মথি ২৪:১, ২) এই কথা অনুযায়ী, যে-স্থানটি বহু শতাব্দী ধরে ঈশ্বরের উপাসনার কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত ছিল, সেটি সা.কা. ৭০ সালে রোমীয় সৈন্যবাহিনীর দ্বারা ধ্বংস হয়ে যায়, যারা যিহুদিদের বিদ্রোহকে দমন করতে এসেছিল।a সেই মন্দিরকে আর কখনও পুনর্নির্মাণ করা হয়নি। সপ্তম শতাব্দীতে, ডোম অফ দ্যা রক নামে পরিচিত মুসলমানদের উপাসনার স্থান নির্মাণ করা হয়েছিল এবং এটি আজ পর্যন্ত সেখানেই আছে, যেখানে যিহুদিদের প্রাক্তন উপাসনার স্থান ছিল।
যীশুর অনুসারীদের জন্য তা হলে উপাসনার কোন্ ব্যবস্থা থাকবে? যিহুদি পটভূমিকা থেকে আসা প্রাথমিক খ্রীষ্টানরা কি সেই মন্দিরে ঈশ্বরের উপাসনা চালিয়ে যাবে, যেটি খুব শীঘ্রই ধ্বংস হতে চলেছিল? ন-যিহুদি খ্রীষ্টানরাই বা কোথায় ঈশ্বরের উপাসনা করবে? মন্দিরের পরিবর্তে কি খ্রীষ্টীয়জগতের ধর্মীয় কাঠামোগুলো ব্যবহার করার কথা ছিল? এক শমরীয় মহিলার সঙ্গে যীশুর কথাবার্তা এই বিষয়টি সম্বন্ধে আমাদের অন্তর্দৃষ্টি দেয়।
শতাব্দী ধরে শমরীয়ার গরিষীম পর্বতে অবস্থিত এক বড় মন্দিরে শমরীয়রা ঈশ্বরের উপাসনা করত। শমরীয় মহিলা যীশুকে বলেছিলেন, “আমাদের পিতৃপুরুষেরা এই পর্ব্বতে ভজনা করিতেন, আর আপনারা বলিয়া থাকেন, যে স্থানে ভজনা করা উচিত, সে স্থানটী যিরূশালেমেই আছে।” উত্তরে যীশু বলেছিলেন: “হে নারি, আমার কথায় বিশ্বাস কর; এমন সময় আসিতেছে, যখন তোমরা না এই পর্ব্বতে, না যিরূশালেমে পিতার ভজনা করিবে।” যিহোবার উপাসনায় আক্ষরিক মন্দিরের আর দরকার হবে না কারণ যীশু স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন: “ঈশ্বর আত্মা; আর যাহারা তাঁহার ভজনা করে, তাহাদিগকে আত্মায় ও সত্যে ভজনা করিতে হইবে।” (যোহন ৪:২০, ২১, ২৪) পরবর্তী সময়ে প্রেরিত পৌল আথীনীয়দের বলেছিলেন: “ঈশ্বর, যিনি জগৎ ও তন্মধ্যস্থ সমস্ত বস্তু নির্ম্মাণ করিয়াছেন, তিনিই স্বর্গের ও পৃথিবীর প্রভু, সুতরাং হস্তনির্ম্মিত মন্দিরে বাস করেন না।”—প্রেরিত ১৭:২৪.
তা হলে এটা স্পষ্ট যে, খ্রীষ্ট আসার আগে যে-মন্দির ব্যবস্থা ছিল, সেটার সঙ্গে খ্রীষ্টীয়জগতের ধর্মীয় স্থানগুলোর কোন সম্পর্ক নেই। আর প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানদেরও সেইধরনের স্থান নির্মাণের কোন কারণ ছিল না। কিন্তু, প্রেরিতদের মৃত্যুর পর, ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে সত্য শিক্ষাগুলো থেকে পথভ্রষ্টতা—ধর্মভ্রষ্টতা—দেখা দিয়েছিল। (প্রেরিত ২০:২৯, ৩০) সা.কা. ৩১৩ সালে রোমীয় সম্রাট কনস্ট্যানটিন খ্রীষ্টধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার অনেক বছর আগেই নামধারী খ্রীষ্টানরা যীশু যা শিখিয়েছিলেন, সেটা থেকে দূরে সরে গিয়েছিল।
“খ্রীষ্টধর্ম”-কে রোমীয় পৌত্তলিক ধর্মের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলার ব্যাপারে কনস্ট্যানটিন জড়িত ছিলেন। দি এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা বলে: “কনস্ট্যানটিন নিজেই রোমে তিনটে বৃহৎ খ্রীষ্টান ব্যাসিলিকা নির্মাণ করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন: সেন্ট পিটার্স, সান পাওলো ফিউওরি লে মিউরা এবং সান জোভাননি ইন লাটেরানো। তিনি . . . ক্রুশের নকশা রচনা করেন, যা মধ্যযুগে পশ্চিম ইউরোপের গির্জাগুলোর জন্য এক আর্দশ হয়ে ওঠে।” রোমের পুনর্নির্মিত সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকাকে এখন পর্যন্ত রোমান ক্যাথলিক গির্জার কেন্দ্রস্থল হিসেবে দেখা হয়।
ইতিহাসবেত্তা উইল ডুরান্ট বলেন, “খ্রীষ্টপূর্বের [পৌত্তলিক] রোমের কিছু ধর্মীয় প্রথা এবং রীতিনীতি গির্জা গ্রহণ করেছিল। এর মধ্যে রয়েছে “ব্যাসিলিকার নির্মাণকৌশল।” দশম থেকে পঞ্চদশ শতাব্দীতে, গির্জা ও ক্যাথিড্রেলের নির্মাণকাজে ব্যাপক প্রসার ঘটেছিল, যেখানে নির্মাণকৌশলের ওপর যথেষ্ট জোর দেওয়া হয়। সেই সময়ই খ্রীষ্টীয়জগতের বিশাল অট্টালিকাগুলো গড়ে উঠেছিল, যেগুলোকে আজ শৈল্পিক স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে দেখা হয়।
লোকেরা কি গির্জায় উপাসনা করে সবসময় আধ্যাত্মিক সতেজতা এবং উৎসাহ পায়? “আমার কাছে গির্জা ছিল ধর্মের মধ্যে এমন এক বিষয় যা একঘেয়েমি ও ক্লান্তিকর,” বলেন ব্রাজিলের ফ্রান্সিসকো। “গির্জার মাস্ ছিল অর্থহীন, বার বার একই অনুষ্ঠান যা আমার প্রকৃত চাহিদাকে মেটানোর জন্য কিছুই করতে পারেনি। তা শেষ হওয়া ছিল এক স্বস্তির বিষয়।” তা সত্ত্বেও, সত্য বিশ্বাসীদের একত্র হওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে। তা হলে, মিলিত হওয়ার জন্য কোন্ ব্যবস্থা তারা অনুসরণ করবে?
‘তাঁহাদের গৃহস্থিত মন্ডলী’
প্রথম শতাব্দীতে বিশ্বাসীরা যেভাবে মিলিত হয়েছিল, তা পরীক্ষা করলে একত্রে মিলিত হওয়ার খ্রীষ্টীয় পদ্ধতির আদর্শ সম্বন্ধে জানা যায়। শাস্ত্র ইঙ্গিত দেয় যে, তারা সাধারণত নিজেদের বাড়িতে মিলিত হতো। উদাহরণ হিসেবে, প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “খ্রীষ্ট যীশুতে আমার সহকারী প্রিষ্কা ও আক্বিলাকে মঙ্গলবাদ কর; . . . আর তাঁহাদের গৃহস্থিত মণ্ডলীকেও মঙ্গলবাদ কর।” (রোমীয় ১৬:৩, ৫; কলসীয় ৪:১৫; ফিলীমন ২) কিছু কিছু অনুবাদে “মণ্ডলী” (ইকলিসিয়া) শব্দটির জন্য যে-গ্রিক শব্দ রয়েছে সেটাকে “চার্চ” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে যেমন কিং জেমস্ সংস্করণে। কিন্তু এই শব্দটি কোন একটা স্থানকে নয় বরং একদল লোককে নির্দেশ করে, যারা একটা সাধারণ উদ্দেশ্যে একত্রে মিলিত হয়েছে। (প্রেরিত ৮:১; ১৩:১) সত্য খ্রীষ্টানরা যে-উপাসনা করত সেটার জন্য জাঁকজমকপূর্ণ ধর্মীয় স্থানের দরকার ছিল না।
প্রাথমিক খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীগুলোতে কীভাবে সভাগুলো পরিচালনা করা হতো? শিষ্য যাকোব একটা খ্রীষ্টীয় সভাকে উল্লেখ করতে গিয়ে গ্রিক শব্দ সিনাগগিন এর একটা প্রতিরূপ শব্দকে ব্যবহার করেন। (যাকোব ২:২) এই গ্রিক শব্দের অর্থ “একত্রে আনা” এবং এটা ইকলিসিয়া-র পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে। যদিও সময় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে “সমাজগৃহ” শব্দের অর্থ বলতে সেই স্থান অথবা কাঠামোকে বোঝানো হয়েছিল যেখানে অধিবেশন হয়। প্রথমদিকের যিহুদি খ্রীষ্টানরা সেই সকল বিষয়গুলোর সঙ্গে পরিচিত ছিল, যেগুলো সমাজগৃহে করা হতো।b
যিহুদিরা তাদের বাৎসরিক উৎসবগুলোর জন্য যিরূশালেমে মন্দিরে মিলিত হলেও, সমাজগৃহগুলো নিজ নিজ এলাকায় যিহোবা সম্বন্ধে শিখতে এবং ব্যবস্থা সম্বন্ধে শিক্ষালাভ করতে সাহায্য করেছিল। সমাজগৃহে যে-বিষয়গুলো করতে দেখা যেত সেগুলোর মধ্যে ছিল প্রার্থনা এবং শাস্ত্র পড়া, সেইসঙ্গে বিশদভাবে আলোচনা করা ও প্রেরণা দেওয়া। যখন পৌল এবং তার সঙ্গে অন্যেরা আন্তিয়খিয়ার এক সমাজগৃহে গিয়েছিল, “সমাজাধ্যক্ষেরা তাঁহাদিগকে বলিয়া পাঠাইলেন, ভ্রাতৃগণ, লোকদের কাছে আপনাদের কোন উপদেশ কথা যদি থাকে, বলুন।” (প্রেরিত ১৩:১৫) প্রথমদিকের যিহুদি খ্রীষ্টানরা নিজেদের বাড়িতে যখন মিলিত হতো, তখন তারা নিঃসন্দেহে একই ধারা অনুসরণ করত, তাদের সভাগুলোকে তারা শাস্ত্রীয়ভাবে নির্দেশনামূলক এবং আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে গঠনমূলক করে তুলত।
গড়ে তোলার জন্য মণ্ডলীগুলো
প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের মতো আজকে যিহোবার সাক্ষিরা বাইবেল থেকে নির্দেশনা লাভ করতে এবং গঠনমূলক সাহচর্য উপভোগ করতে উপাসনার সাধারণ স্থানগুলোতে মিলিত হয়। বহু বছর ধরে তারা শুধু নিজেদের বাড়িতে মিলিত হতো এবং এখনও কিছু জায়গায় তারা তা করে থাকে। কিন্তু, এখন মণ্ডলী বৃদ্ধি পেয়ে এর সংখ্যা ৯০,০০০রেরও বেশি হয়েছে এবং তাদের সভার মূল স্থানগুলোকে কিংডম হল বলা হয়। এই স্থানগুলো না জাঁকালো, না দেখতে গির্জার মতো। এগুলোর কাঠামো ব্যবহারিক এবং সরল, যা ১০০ থেকে ২০০ লোকের মণ্ডলীগুলোকে সাপ্তাহিক সভাগুলোর জন্য একত্রিত হতে সুযোগ করে দেয়, যাতে তারা ঈশ্বরের বাক্য থেকে শুনতে এবং শিখতে পারে।
যিহোবার সাক্ষিদের বেশির ভাগ মণ্ডলীই সপ্তাহে তিনবার মিলিত হয়। একটা সভাতে বর্তমানের কোন আগ্রহজনক বিষয়ের ওপর জনসাধারণের উদ্দেশে বক্তৃতা দেওয়া হয়। এরপর মূল উপাদান হিসেবে প্রহরীদুর্গ পত্রিকা ব্যবহার করে, বাইবেলের কোন একটা বিষয় অথবা ভবিষ্যদ্বাণীর ওপর অধ্যয়ন করা হয়। আরেকটা সভা হল একটা বিদ্যালয়, যেটা বাইবেলের বার্তাকে উপস্থাপন করার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্দেশে গঠিত। এরপর যে-সভাটি রয়েছে তাতে বিশেষ করে খ্রীষ্টীয় পরিচর্যার জন্য ব্যবহারিক পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া, সপ্তাহে একবার সাক্ষিরা নিজেদের বাড়িতে ছোট ছোট দলে, বাইবেল অধ্যয়নের জন্য মিলিত হয়। এই সমস্ত সভা সকলের জন্য উন্মুক্ত। এখানে কখনও চাঁদা তোলা হয় না।
যার বিষয়ে আগে উল্লেখ করা হয়েছে সেই ফ্রান্সিসকো কিংডম হলের সভাগুলোকে খুবই উপকারী বলে মনে করেছিলেন। তিনি বলেন, “আমি প্রথম যে-সভার স্থানটিতে গিয়েছিলাম, তা ছিল এক প্রধান এলাকায় মনোরম স্থান আর আমি সন্তোষজনক মনোভাব নিয়ে হল থেকে ফিরে এসেছিলাম। উপস্থিত সবাই ছিল খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ এবং তাদের মধ্যে যে-ভালবাসা রয়েছে আমি তা বুঝতে পেরেছিলাম। আমি আবার সভায় আসার জন্য খুবই আগ্রহী ছিলাম। আসলে, এরপর থেকে আমি আর সভা বাদ দিইনি। এই সভাগুলো প্রাণবন্ত এবং এগুলো আমার আধ্যাত্মিক চাহিদা পূর্ণ করে। এমনকি যখন কোন কারণে আমি হতাশা বোধ করি, তখন আমি কিংডম হলে যাই এই আস্থা নিয়ে যে, উৎসাহ নিয়ে ফিরে আসব।”
যিহোবার সাক্ষিদের খ্রীষ্টীয় সভাগুলোতে বাইবেল শিক্ষার, গঠনমূলক মেলামেশার এবং ঈশ্বরকে প্রশংসা করার সুযোগ আপনারও রয়েছে। আপনার বাড়ির সবচেয়ে কাছের কিংডম হলে যোগদান করার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ রইল। সেখানে গিয়ে আপনি আনন্দিত হবেন।
[পাদটীকাগুলো]
a রোমীয়দের দ্বারা মন্দিরটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়। ওয়েলিং প্রাচীর ওই মন্দিরের কোন অংশ নয়, যেখানে দূরদূরান্ত থেকে অনেক যিহুদি প্রার্থনা করার জন্য আসে। এটা কেবল মন্দিরের প্রাঙ্গণের প্রাচীরের একটা অংশ।
b মনে করা হয় যে, সম্ভবত ৭০ বছর ধরে বাবিলনীয়দের বন্দিত্বে থাকার সময় যখন কোন মন্দিরের অস্তিত্ব ছিল না, তখন সমাজগৃহগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল অথবা বন্দিত্ব থেকে ফিরে আসার কিছু সময় পর, যে-সময় মন্দিরটি পুনর্নির্মাণ করা হচ্ছিল সেই সময় তা হয়েছিল। প্রথম শতাব্দীতে, প্যালেস্টাইনের প্রত্যেকটা শহরে নিজেদের সমাজগৃহ ছিল ও বড় নগরগুলোতে একাধিক সমাজগৃহ ছিল।
[৪ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
আবাস এবং পরে মন্দিরগুলো যিহোবার উপাসনার বিশুদ্ধ কেন্দ্রস্থল হিসেবে ছিল
[৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
রোমে সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা
[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
প্রাথমিক খ্রীষ্টানরা নিজেদের বাড়িতে মিলিত হতো
[৮ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
যিহোবা সাক্ষিরা নিজেদের বাড়ি ও কিংডম হলগুলোতে খ্রীষ্টীয় সভাগুলো করে থাকে