বিশ্বাসের অভাব সম্পর্কে সতর্ক হোন
“ভাইরা, সতর্ক থাক, যেন তোমাদের মধ্যে কারও, জীবন্ত ঈশ্বর থেকে সরে পড়ার ফলে অবিশ্বাসের এক মন্দ হৃদয় গড়ে না ওঠে।”—ইব্রীয় ৩:১২, NW.
১. ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের প্রতি উক্ত পৌলের বাক্যগুলি কোন্ আঘাতজনক বাস্তবতার প্রতি আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে?
কতই না এক ভয়াবহ চিন্তাধারা—সেইসমস্ত লোকেরা যারা একসময় যিহোবার সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক উপভোগ করতেন, এক “মন্দ হৃদয়” গড়ে তুলতে ও ‘জীবন্ত ঈশ্বর থেকে সরে পড়তে’ পারেন! আর এটি কত বড় সতর্কবাণীও! প্রেরিত পৌলের এই বাক্যগুলি অবিশ্বাসীদের উদ্দেশে বলা হয়নি কিন্তু সেইসমস্ত লোকেদের জন্য বলা হয়েছিল, যারা যীশু খ্রীষ্টের মুক্তির মূল্যে বিশ্বাসের ভিত্তিতে তাদের জীবন যিহোবার প্রতি উৎসর্গ করেছিলেন।
২. আমাদের কোন্ প্রশ্নগুলি বিবেচনা করা প্রয়োজন?
২ কিভাবে একজন এইধরনের আশীর্বাদযুক্ত আধ্যাত্মিক অবস্থায় থেকেও “অবিশ্বাসের এক মন্দ হৃদয়” গড়ে তুলতে পারেন? বস্তুতপক্ষে, যিনি ঈশ্বরের প্রেম ও অযাচিত করুণা আস্বাদন করেছেন, তিনি কী করে ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁর কাছ থেকে দূরে সরে যেতে পারেন? আর এটি কি আমাদের যে কারও ক্ষেত্রে ঘটতে পারে? এই গম্ভীর চিন্তাগুলি আমাদের এই সতর্কবাণীর পিছনে অবস্থিত যুক্তিগুলিকে দেখতে প্রণোদিত করে।—১ করিন্থীয় ১০:১১.
এইধরনের শক্তিশালী পরামর্শ কেন?
৩. সেই পরিস্থিতিগুলি সম্বন্ধে বর্ণনা করুন যা যিরূশালেমের ভিতরে ও চতুর্দিকে অবস্থিত প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানদের প্রভাবিত করেছিল।
৩ স্পষ্টতই পৌল সা.কা. ৬১ সালে, যিহূদীয়ায় বসবাসকারী ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের উদ্দেশে তার এই চিঠি লিখেছিলেন। একজন ইতিহাসবেত্তা মন্তব্য করেন যে এটি এমন এক সময় ছিল যখন “যিরূশালেম শহর অথবা সমস্ত প্রদেশের কোথাও অকৃত্রিম, সৎ লোকেদের জন্য কোন শান্তি অথবা নিরাপত্তা ছিল না।” সময়টি ছিল নীতিহীনতা ও দৌরাত্ম্যপূর্ণ যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল পীড়নকর রোমীয় সামরিক প্রভাব, রোমীয় বিরোধী ধর্মান্ধ যিহূদীদের দুঃসাহস এবং চোরদের অপরাধমূলক কার্যকলাপ, যারা এই অরাজকতার সুযোগ নিয়েছিল। এই সমস্ত কিছু খ্রীষ্টানদের জন্য খুব কঠিন সময় নিয়ে এসেছিল যারা এইধরনের বিষয়গুলিতে জড়িয়ে না পড়ার জন্য কঠোর চেষ্টা করেছিলেন। (১ তীমথিয় ২:১, ২) প্রকৃতপক্ষে, তাদের নিরপেক্ষ পদক্ষেপের কারণে কিছুজন তাদের সমাজ বিরোধী, এমনকি রাজদ্রোহী হিসাবে মনে করেছিলেন। খ্রীষ্টানদের উপর প্রায়ই অত্যাচার করা হত আর তারা ব্যক্তিগত ক্ষয়ক্ষতি ভোগ করেছিলেন।—ইব্রীয় ১০:৩২-৩৪.
৪. ধর্মীয় প্রকৃতির কোন্ চাপের অধীনে ইব্রীয় খ্রীষ্টানেরা ছিলেন?
৪ ইব্রীয় খ্রীষ্টানেরা ধর্মীয় প্রকৃতির কারণেও তীব্র চাপের অধীনে ছিলেন। যীশুর বিশ্বস্ত শিষ্যদের উদ্যোগ ও ফলস্বরূপ খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর দ্রুত বৃদ্ধি যিহূদীদের মধ্যে ঈর্ষা ও ক্রোধের উদ্রেক করেছিল—বিশেষভাবে ধর্মীয় নেতাদের। যীশু খ্রীষ্টের অনুগামীদের হয়রান ও উৎপীড়ন করার জন্য তারা কোন কিছু করতেই পিছু পা হননি।a (প্রেরিত ৬:৮-১৪; ২১:২৭-৩০; ২৩:১২, ১৩; ২৪:১-৯) এমনকি যদিও কিছু খ্রীষ্টানেরা সরাসরি তাড়না থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন, তবুও তারা যিহূদীদের ঘৃণা ও উপহাসের পাত্র হয়েছিলেন। সাম্প্রতিক গড়ে ওঠা ধর্ম হিসাবে খ্রীষ্টতত্ত্বকে অবজ্ঞার চোখে দেখা হত যেটিতে মন্দির, যাজকত্ব, উৎসবগুলি, কোন প্রথাগত বলিদান ও এমন আরও কিছু না থাকার কারণে যিহূদীবাদের অত্যুজ্জ্বলতার অভাব ছিল। এমনকি তাদের নেতা যীশুকে এক জঘন্য অপরাধী হিসাবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তাদের ধর্ম অনুশীলন করার জন্য খ্রীষ্টানদের বিশ্বাস, সাহস ও ধৈর্যের প্রয়োজন ছিল।
৫. যিহূদীয়ায় খ্রীষ্টানদের জন্য কেন আধ্যাত্মিকভাবে সজাগ থাকা আবশ্যক ছিল?
৫ সর্বোপরি, যিহূদীয়ার ইব্রীয় খ্রীষ্টানেরা জাতির ইতিহাসের এক চরম সময়ে বাস করছিলেন। তাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট যিহূদী ব্যবস্থার শেষের চিহ্ন হিসাবে যা বলেছিলেন ইতিমধ্যেই তার অনেক কিছু পূর্ণ হচ্ছিল। শেষ খুব বেশি দূরে ছিল না। রক্ষা পাওয়ার জন্য খ্রীষ্টানদের আধ্যাত্মিকভাবে সজাগ ও “পাহাড় অঞ্চলে পলায়ন” করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়েছিল। (মথি ২৪:৬, ১৫, ১৬) তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়ার মত বিশ্বাস ও অদম্য মানসিক শক্তি কি তাদের ছিল যেমন যীশু নির্দেশনা দিয়েছিলেন? কিছু সন্দেহ দেখা গিয়েছিল।
৬. যিহূদীয়ায় খ্রীষ্টানদের কোন্ বিষয়টি খুব জরুরিভাবে প্রয়োজনীয় ছিল?
৬ সম্পূর্ণ যিহূদী বিধিব্যবস্থা উৎসন্ন হওয়ার পূর্বের শেষ দশকটিতে ইব্রীয় খ্রীষ্টানেরা স্পষ্টতই মণ্ডলীর ভিতর ও বাইরে থেকে অত্যন্ত চাপের মধ্যে ছিলেন। তাদের উৎসাহের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তাদের পরামর্শ ও নির্দেশনারও প্রয়োজন ছিল এটি দেখার জন্য যে তারা যে জীবনধারা নির্বাচন করেছিলেন সেটি সঠিক ছিল কি না আর যে কষ্টভোগ ও সহ্য তারা করছিলেন তা যেন নিষ্ফল না হয়। আনন্দের বিষয় যে, পৌল সেই পরিস্থিতিতে উদ্ভুত হয়েছিলেন ও তাদের সাহায্যে এসেছিলেন।
৭. ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের প্রতি পৌল যা লিখেছিলেন সে বিষয়ে আমরা কেন আগ্রহী হব?
৭ পৌল ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের যা লিখেছিলেন, তা আমাদের জন্য অত্যন্ত আগ্রহের বিষয় হওয়া উচিত। কেন? কারণ আমরা এমন একটি সময়ে বাস করছি যা তাদের সময়ের সমরূপ। শয়তানের নিয়ন্ত্রণাধীন জগৎ থেকে আমরা প্রতিদিন চাপের সম্মুখীন হই। (১ যোহন ৫:১৯) শেষ কাল ও “যুগান্তের” বিষয়ে যীশু ও প্রেরিতদের ভবিষ্যদ্বাণীগুলি আমাদের চোখের সামনে পরিপূর্ণ হচ্ছে। (মথি ২৪:৩-১৪; ২ তীমথিয় ৩:১-৫; ২ পিতর ৩:৩, ৪; প্রকাশিত বাক্য ৬:১-৮) সর্বোপরি, আমাদের আধ্যাত্মিকভাবে সজাগ থাকার প্রয়োজন রয়েছে যাতে করে আমরা “এই যে সকল ঘটনা হইবে, তাহা এড়াইতে” পারি।—লূক ২১:৩৬.
মোশির চেয়েও মহান একজন
৮. ইব্রীয় ৩:১ পদে যা লিখিত রয়েছে তা বলার দ্বারা পৌল সহ খ্রীষ্টানদের কী করার জন্য উৎসাহিত করছিলেন?
৮ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করে পৌল লিখেছিলেন: “প্রেরিত ও মহাযাজকের প্রতি, যীশুর প্রতি, দৃষ্টি রাখ।” (ইব্রীয় ৩:১) “দৃষ্টি রাখ” এর অর্থ হল “স্পষ্টভাবে প্রত্যক্ষ করা . . . . সম্পূর্ণভাবে বোঝা, কাছ থেকে বিবেচনা করা।” (ভাইনের পুরাতন ও নতুন নিয়ম শব্দাবলির বর্ণনাত্মক শব্দকোষ, ইংরাজি) সুতরাং, তাদের বিশ্বাস ও পরিত্রাণের ক্ষেত্রে যীশু যে ভূমিকা পালন করেছিলেন তার প্রতি এক প্রকৃত উপলব্ধিতে আসার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করতে পৌল তার সহবিশ্বাসীদের উৎসাহিত করছিলেন। এটি করা তাদের বিশ্বাসে দৃঢ় থাকার জন্য তাদের স্থিরসংকল্পকে শক্তিশালী করবে। তাহলে, যীশুর ভূমিকা কী ছিল আর আমাদের কেন তাঁর প্রতি ‘দৃষ্টি রাখা’ উচিত?
৯. কেন পৌল যীশুকে “প্রেরিত” এবং ‘মহাযাজক’ বলে উল্লেখ করেছিলেন?
৯ পৌল যীশুর প্রতি “প্রেরিত” ও ‘মহাযাজক’ এই দুটি অভিধা ব্যবহার করেছিলেন। এক “প্রেরিত” এমন একজন ব্যক্তি যাকে পাঠানো হয়েছে ও এখানে এটি মানবজাতির সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য ঈশ্বরের মাধ্যম হিসাবে নির্দেশিত হয়েছে। এক ‘মহাযাজক’ হচ্ছেন এমন একজন যার মাধ্যমে মানুষেরা ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে পারেন। সত্য উপাসনার জন্য এই দুটি ব্যবস্থা খুবই জরুরি আর যীশু এই উভয় বিষয়েরই মূর্ত প্রতীক। তিনিই হচ্ছেন সেই ব্যক্তি যাঁকে মনুষ্যদের ঈশ্বর সম্বন্ধীয় সত্য শেখানোর জন্য স্বর্গ থেকে প্রেরণ করা হয়েছিল। (যোহন ১:১৮; ৩:১৬; ১৪:৬) এছাড়াও যীশু পাপের ক্ষমা করার জন্য যিহোবার আধ্যাত্মিক মন্দির ব্যবস্থায় রূপক মহাযাজক হিসাবে নিযুক্ত। (ইব্রীয় ৪:১৪, ১৫; ১ যোহন ২:১, ২) আমরা যদি প্রকৃতই যীশুর মাধ্যমে প্রাপ্ত আশীর্বাদের প্রতি উপলব্ধি দেখাই, তাহলে বিশ্বাসে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সাহস ও দৃঢ়সংকল্প আমাদের থাকবে।
১০. (ক) কিভাবে পৌল ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের খ্রীষ্টতত্ত্ব যে যিহূদীবাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ তা উপলব্ধি করতে সাহায্য করেছিলেন? (খ) তার বিষয়কে পুনরুজ্জীবিত করতে পৌল কোন্ ধ্রুব সত্যকে উল্লেখ করেছিলেন?
১০ খ্রীষ্টীয় বিশ্বাসের মূল্যের উপর জোর দিতে গিয়ে পৌল যীশুকে মোশির সঙ্গে তুলনা করেছিলেন, যাকে যিহূদীরা তাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে সর্বমহান ভাববাদী হিসাবে দেখতেন। ইব্রীয় খ্রীষ্টানেরা যদি পূর্ণ হৃদয়ে এই বিষয়টি আত্মস্থ করতে পারতেন যে যীশু মোশির চেয়েও মহান তাহলে যিহূদীবাদের চেয়ে খ্রীষ্টতত্ত্বের শ্রেষ্ঠতার বিষয়ে তাদের সন্দেহ করার কোন কারণই থাকত না। পৌল নির্দেশ করেছিলেন যে মোশি ঈশ্বরের ‘বাটী’—ইস্রায়েল জাতি অথবা সমগ্র মণ্ডলীর মধ্যে বিশ্বাসের পাত্র হওয়ার যোগ্য হিসাবে গণিত হলেও, তিনি কেবল একজন বিশ্বস্ত পরিচারক বা দাস ছিলেন। (গণনাপুস্তক ১২:৭) অপরপক্ষে, যীশু ছিলেন পুত্র, গৃহের অধ্যক্ষ। (১ করিন্থীয় ১১:৩; ইব্রীয় ৩:২, ৩, ৫) এই বিষয়টিকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য পৌল এই ধ্রুব সত্যটিকে উল্লেখ করেছিলেন: “কেননা প্রত্যেক গৃহ কাহারও দ্বারা সংস্থাপিত হয়, কিন্তু যিনি সকলই সংস্থাপন করিয়াছেন, তিনি ঈশ্বর।” (ইব্রীয় ৩:৪) কেউই বিতর্ক করতে পারেন না যে ঈশ্বর অন্য যে কারও চেয়ে মহান কারণ তিনিই হচ্ছেন নির্মাতা অথবা সমস্ত কিছুর সৃষ্টিকর্তা। অতএব, এটি যুক্তিসংগত যে যেহেতু যীশু ছিলেন ঈশ্বরের সহ কার্যকারী, সুতরাং তিনি অবশ্যই মোশি সহ অন্যান্য সমস্ত সৃষ্টির চেয়ে মহান ছিলেন।—হিতোপদেশ ৮:৩০; কলসীয় ১:১৫-১৭.
১১, ১২. “শেষ পর্যন্ত স্থির থাকার জন্য” পৌল ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের কোন্ বিষয়টি ধরে থাকার জন্য আবেদন করেছিলেন আর কিভাবে আমরা তার পরামর্শ প্রয়োগ করতে পারি?
১১ প্রকৃতই, ইব্রীয় খ্রীষ্টানেরা অত্যন্ত অনুকূল পরিস্থিতিতে ছিলেন। পৌল তাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন যে তারা “স্বর্গীয় আহ্বানের অংশিগণ,” এটি এমন এক সুযোগ যেটি যিহূদী ব্যবস্থা যা কিছু প্রদান করেছিল তার চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান বলে গণ্য করা যায়। (ইব্রীয় ৩:১) তাদের যিহূদী ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িত বিষয়গুলি পরিত্যাগ করার জন্য দুঃখিত হওয়ার পরিবর্তে তারা এক নতুন উত্তরাধিকার পাওয়ার উপযুক্ত অবস্থায় ছিল আর তাই পৌলের বাক্যগুলি নিশ্চয়ই সেই অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের কৃতজ্ঞ করে তুলেছিল। (ফিলিপীয় ৩:৮) তাদের এই সুযোগকে ধরে রাখার জন্য ও এটিকে প্রাপ্য বলে ধরে না নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করে পৌল বলেছিলেন: “খ্রীষ্ট [ঈশ্বরের] গৃহের উপরে পুত্ত্রবৎ [বিশ্বস্ত]; আর যদি আমরা আমাদের সাহস ও আমাদের প্রত্যাশার শ্লাঘা শেষ পর্য্যন্ত দৃঢ়রূপে ধারণ করি, তবে তাঁহার গৃহ আমরাই।”—ইব্রীয় ৩:৬.
১২ হ্যাঁ, ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের যিহূদী বিধিব্যবস্থার আসন্ন পরিসমাপ্তি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য, তাদের ঈশ্বর দত্ত আশাকে “শেষ পর্য্যন্ত দৃঢ়রূপে” ধরে রাখার প্রয়োজন হয়েছিল। আজকে আমাদেরও অবশ্যই একই কাজ করতে হবে, যদি আমরা এই বিধিব্যবস্থার শেষ থেকে রক্ষা পেতে চাই। (মথি ২৪:১৩) আমরা জীবনের উদ্বেগ, লোকেদের উদাসীনতা অথবা আমাদের নিজেদের অসিদ্ধ প্রবণতাগুলির দ্বারা ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার প্রতি আমাদের বিশ্বাসকে কম্পমান হতে দেব না। (লূক ২১:১৬-১৯) আমরা কিভাবে নিজেদের শক্তিশালী করতে পারি তা দেখার জন্য আসুন পৌলের পরবর্তী বাক্যগুলির প্রতি মনোযোগ দিই।
“আপন আপন হৃদয় কঠিন করিও না”
১৩. পৌল কোন্ সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন আর কিভাবে তিনি গীতসংহিতা ৯৫ অধ্যায়টি প্রয়োগ করেছিলেন?
১৩ ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের অনুকূল পরিস্থিতি সম্বন্ধে বিবেচনা করার পর পৌল এই সতর্কবাণী দিয়েছিলেন: “পবিত্র আত্মা যেমন বলেন, ‘অদ্য যদি তোমরা তাঁহার রব শ্রবণ কর, তবে আপন আপন হৃদয় কঠিন করিও না, যেমন সেই বিদ্রোহ-স্থানে, প্রান্তরের মধ্যে সেই পরীক্ষার দিবসে ঘটিয়াছিল।’” (ইব্রীয় ৩:৭, ৮) পৌল ৯৫তম গীতটি থেকে উদ্ধৃতি করছিলেন আর তারপর বলতে পেরেছিলেন “পবিত্র আত্মা যেমন বলেন।”b (গীতসংহিতা ৯৫: ৭, ৮; যাত্রাপুস্তক ১৭:১-৭) শাস্ত্রাবলি তাঁর পবিত্র আত্মার দ্বারা ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত।—২ তীমথিয় ৩:১৬.
১৪. যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের জন্য যা করেছিলেন তার প্রতি তারা কিভাবে সাড়া দিয়েছিল আর কেন?
১৪ মিশরের দাসত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার পর ইস্রায়েলীয়দের যিহোবার সঙ্গে চুক্তির সম্পর্কে প্রবেশ করার সুযোগ দিয়ে মহৎ সম্মান প্রদান করা হয়েছিল। (যাত্রাপুস্তক ১৯:৪, ৫; ২৪:৭, ৮) তাদের জন্য ঈশ্বর যা করেছিলেন তার প্রতি উপলব্ধি দেখানোর পরিবর্তে তারা শীঘ্রই বিদ্রোহমূলক আচরণ করেছিল। (গণনাপুস্তক ১৩:২৫–১৪:১০) কিভাবে এটি ঘটেছিল? পৌল কারণটি নির্দেশ করেছিলেন: তারা তাদের হৃদয় কঠিন করেছিল। কিন্তু কিভাবে ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি অনুভূতিশীল ও প্রতিক্রিয়াশীল হৃদয় কঠিন হয়ে পড়তে পারে? আর তা প্রতিরোধ করার জন্য আমরা কী করতে পারি?
১৫. (ক) কিভাবে ‘ঈশ্বরের নিজস্ব রব’ অতীতে শোনা গিয়েছিল ও বর্তমানে শোনা যায়? (খ) ‘ঈশ্বরের রব’ সম্বন্ধে কোন্ প্রশ্নগুলি আমাদের নিজেদের জিজ্ঞাসা করা প্রয়োজন?
১৫ পৌল তার সতর্কবার্তা এই উপবাক্যগুলি দ্বারা শুরু করেছিলেন “যদি তোমরা তাঁহার রব শ্রবণ কর।” ঈশ্বর, মোশি ও অন্যান্য ভাববাদীদের মাধ্যমে তাঁর লোকেদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তারপর যিহোবা, তাঁর পুত্র যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। (ইব্রীয় ১:১, ২) আজকে আমাদের ঈশ্বরের সম্পূর্ণ অনুপ্রাণিত বাক্য, পবিত্র বাইবেল আছে। এছাড়া আমাদের যীশুর দ্বারা নিযুক্তিকৃত “বিশ্বস্ত বুদ্ধিমান্ দাস” আছেন যারা “উপযুক্ত সময়ে” আধ্যাত্মিক “খাদ্য” সরবরাহ করেন। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) তাই ঈশ্বর এখনও কথা বলছেন। কিন্তু আমরা কি শুনছি? উদাহরণস্বরূপ, পোশাক ও বেশভূষা অথবা আমোদপ্রমোদ ও সংগীত নির্বাচন সম্বন্ধীয় পরামর্শের প্রতি আমরা কিভাবে সাড়া দিই? আমরা কি ‘শ্রবণ করি,’ যার অর্থ মনোযোগ দেওয়া ও যা শুনছি তার বাধ্য হওয়া? যদি পরামর্শের প্রতি অজুহাত খাড়া করা বা আপত্তি করা আমাদের স্বভাব হয়, আমরা আমাদের হৃদয় কঠিন করার সূক্ষ্ণ বিপদের প্রতি নিজেদের উন্মুক্ত করছি।
১৬. একটি উপায় কী যার দ্বারা আমাদের হৃদয় কঠিন হয়ে পড়তে পারে?
১৬ আমাদের হৃদয় তখনও কঠিন হয়ে পড়তে পারে যদি আমরা যা করতে পারি ও যা করা উচিত, তা থেকে নিষ্কৃতি খুঁজি। (যাকোব ৪:১৭) ইস্রায়েলীয়দের জন্য যিহোবা সমস্ত কিছু করা সত্ত্বেও তারা বিশ্বাস অনুশীলন করতে ব্যর্থ হয়েছিল, মোশির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল, কনান সম্বন্ধে মন্দ বিবরণ বিশ্বাস করাকে বেছে নিয়েছিল আর প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করতে প্রত্যাখ্যান করেছিল। (গণনাপুস্তক ১৪:১-৪) তাই যিহোবা অনুশাসন দিয়েছিলেন যে তাদের প্রান্তরে ৪০ বছর অতিবাহিত করতে হবে—সেই বংশের অবিশ্বাসী সদস্যদের একে একে মারা যাওয়ার জন্য যথেষ্ট সময়। তাদের প্রতি বিরক্ত হয়ে ঈশ্বর বলেছিলেন: “ইহারা সর্ব্বদা হৃদয়ে ভ্রান্ত হয়; আর তাহারা আমার পথ জ্ঞাত হইল না; তখন আমি আপন ক্রোধে এই শপথ করিলাম, ইহারা আমার বিশ্রামে প্রবেশ করিবে না।” (ইব্রীয় ৩:৯-১১) আমরা কি এটি থেকে নিজেদের জন্য কোন শিক্ষা পাই?
আমাদের জন্য শিক্ষা
১৭. এমনকি যদিও তারা যিহোবার পরাক্রম কার্য দেখেছিল এবং তাঁর ঘোষণা শুনেছিল, কেন ইস্রায়েলীয়দের বিশ্বাসের অভাব ঘটেছিল?
১৭ ইস্রায়েলীয়দের যে বংশ মিশর থেকে বের হয়ে এসেছিল তারা যিহোবার পরাক্রমী কাজ ও ঘোষণা নিজের চোখে দেখেছিল ও নিজের কানে শুনেছিল। তবুও তাদের বিশ্বাস ছিল না যে ঈশ্বর তাদের নিরাপদে প্রতিজ্ঞাত দেশের উদ্দেশে পরিচালনা করতে পারেন। কেন? “তাহারা আমার পথ জ্ঞাত হইল না” যিহোবা বলেছিলেন। যিহোবা যা বলেছিলেন ও যা করেছিলেন তা তারা জানত কিন্তু তাদের যত্ন নেওয়ার জন্য তাঁর সামর্থ্যের প্রতি তারা প্রত্যয় ও আস্থা গড়ে তোলেনি। তারা তাদের ব্যক্তিগত প্রয়োজন ও চাহিদাগুলির দ্বারা এত বেশি ভারগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল যে ঈশ্বরের পথ ও উদ্দেশ্য সম্বন্ধে অল্পই মনোযোগ দিয়েছিল। হ্যাঁ, তারা তাঁর প্রতিজ্ঞার প্রতি বিশ্বাসের অভাব দেখিয়েছিল।
১৮. পৌলের কথানুসারে কোন্ জীবনধারার ফলে “অবিশ্বাসের এক মন্দ হৃদয়” গড়ে উঠবে?
১৮ ইব্রীয়দের উদ্দেশে এই পরবর্তী বাক্যগুলি আমাদের প্রতিও সমান জোরালোভাবে প্রযোজ্য: “ভাইরা, সতর্ক থাক, যেন তোমাদের মধ্যে কারও, জীবন্ত ঈশ্বর থেকে সরে পড়ার ফলে অবিশ্বাসের এক মন্দ হৃদয় গড়ে না ওঠে।” (ইব্রীয় ৩:১২) পৌল বিষয়টির গভীরে পৌঁছেছিলেন এই বিষয়টি নির্দেশ করার দ্বারা যে ‘জীবন্ত ঈশ্বর থেকে সরে পড়ার’ ফলে “অবিশ্বাসের এক মন্দ হৃদয়” গড়ে উঠতে পারে। তার এই চিঠিতে পূর্বে পৌল ‘ভাসিয়া চলিয়া যাওয়া’ সম্বন্ধে বলেছিলেন যা মনোযোগের অভাবের ফলে ঘটে থাকে। (ইব্রীয় ২:১) কিন্তু, যে গ্রীক পরিভাষাটি এখানে ‘সরে পড়া’ হিসাবে অনুবাদিত হয়েছে তার অর্থ “বিচ্ছিন্নভাবে উঠে দাঁড়ানো” আর সেটি “ধর্মভ্রষ্টতার” সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত। এটি এক ইচ্ছাকৃত ও সচেতন প্রতিরোধ, প্রত্যাখ্যান এবং বিচ্যুতিকে ইঙ্গিত করে যার সঙ্গে ঘৃণার এক ধারণা যুক্ত।
১৯. কিভাবে পরামর্শ শুনতে ব্যর্থ হওয়া গুরুতর পরিণতিতে নিয়ে যেতে পারে? ব্যাখ্যা করুন।
১৯ তাই, শিক্ষাটি হচ্ছে যে আমরা যদি তাঁর বাক্য ও বিশ্বস্ত দাসশ্রেণীর পরামর্শকে অবজ্ঞা করে “তাঁহার রব শ্রবণ” করতে ব্যর্থ হওয়াকে অভ্যাসে পরিণত করি, তাহলে আমাদের হৃদয় শক্ত বা কঠিন হয়ে পড়তে বেশি সময় নেবে না। উদাহরণস্বরূপ, এক অবিবাহিত জুটি হয়ত একটু বেশি ঘনিষ্ঠ হতে পারেন। কী হবে যদি তারা সাধারণভাবে বিষয়টি অবজ্ঞা করেন? এটি কি তাদের তারা যা করেছিলেন তার পুনরাবৃত্তি করা থেকে সুরক্ষিত করবে অথবা এটি তাদের জন্য আবার তা করাকে আরও সহজ করে তুলবে? অনুরূপভাবে, দাসশ্রেণী যখন সংগীত, আমোদপ্রমোদ ও এইধরনের বিষয়গুলির ক্ষেত্রে আমাদের বাছাইকারী হওয়ার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে পরামর্শ দেন, আমরা কি তা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে গ্রহণ করি ও যেখানে প্রয়োজন সেখানে রদবদল করি? পৌল আমাদের উৎসাহ দিয়েছিলেন যেন ‘আমরা সমাজে সভাস্থ হওয়া পরিত্যাগ না করি।’ (ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) এই পরামর্শ সত্ত্বেও, কিছুজন খ্রীষ্টীয় সভাগুলির প্রতি এক উদাসীন মনোভাব পোষণ করেন। তারা হয়ত ভাবেন যে এগুলির কয়েকটিতে না আসা বা নির্দিষ্ট কিছু সভা বাদ দেওয়া অত্যন্ত গুরুতর কিছু নয়।
২০. শাস্ত্রীয় পরামর্শের প্রতি আমাদের ইতিবাচকভাবে সাড়া দেওয়া জরুরি কেন?
২০ যদি আমরা যিহোবার “রব” যা স্পষ্টভাবে শাস্ত্র ও বাইবেল ভিত্তিক প্রকাশনাগুলিতে বর্ণিত রয়েছে তার প্রতি ইতিবাচকভাবে সাড়া না দিই, শীঘ্রই আমরা নিজেদের “জীবন্ত ঈশ্বর থেকে সরে” পড়ার অবস্থায় দেখতে পাব। পরামর্শের প্রতি পরোক্ষ অবজ্ঞা সহজেই সক্রিয়ভাবে এটিকে খর্ব করা, সমালোচনা করা ও বিরোধিতা করায় পরিণত হতে পারে। যদি তা অসংশোধিত অবস্থাতেই থেকে যায় তাহলে তার ফলে “অবিশ্বাসের এক মন্দ হৃদয়” উৎপন্ন হবে আর এইধরনের এক পরিস্থিতি থেকে পুনরুদ্ধার পাওয়া সাধারণত খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। (ইফিষীয় ৪:১৯ পদের সাথে তুলনা করুন।) উপযুক্তভাবেই যিরমিয় লিখেছিলেন: “অন্তঃকরণ সর্ব্বাপেক্ষা বঞ্চক, তাহার রোগ অপ্রতিকার্য্য, কে তাহা জানিতে পারে?” (যিরমিয় ১৭:৯) এই কারণে পৌল তার ইব্রীয় সহবিশ্বাসীদের বলেছিলেন: “তোমরা দিন দিন পরস্পর চেতনা দেও, যাবৎ ‘অদ্য’ নামে আখ্যাত সময় থাকে, যেন তোমাদের মধ্যে কেহ পাপের প্রতারণায় কঠিনীভূত না হয়।”—ইব্রীয় ৩:১৩.
২১. আমাদের সকলকে কী করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে আর আমাদের কোন্ প্রত্যাশা আছে?
২১ আমরা কতই না আনন্দিত যে যিহোবা আজও তাঁর বাক্য ও তাঁর সংগঠনের মাধ্যমে আমাদের সঙ্গে কথা বলছেন! আমরা কৃতজ্ঞ যে “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস” ক্রমাগতভাবে ‘আদি হইতে আমাদের নিশ্চয়জ্ঞান শেষ পর্য্যন্ত দৃঢ় করিয়া ধারণ করিবার’ জন্য আমাদের সাহায্য করে চলেছেন। (ইব্রীয় ৩:১৪) ঈশ্বরের প্রেম ও নির্দেশনার প্রতি সাড়া দেওয়ার জন্য আমাদের এখনই সময়। আমরা যখন তা করি, আমরা যিহোবার অন্য এক অপূর্ব প্রতিজ্ঞাকে উপভোগ করতে পারি—তাঁর বিশ্রামে ‘প্রবেশ করা।’ (ইব্রীয় ৪:৩, ১০) এই বিষয়টি পৌল ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের সঙ্গে এর পরে আলোচনা করেছিলেন আর এই বিষয়টিই আমরা পরবর্তী প্রবন্ধে আলোচনা করব।
[পাদটীকাগুলো]
a যোষেফাস বিবৃতি দিয়েছিলেন যে ফীষ্টের মৃত্যুর অল্প কিছু পরে সদ্দূকী সম্প্রদায়ের অ্যানানাস (অনানীয়) মহাযাজক হয়েছিলেন। তিনি যীশুর অর্ধভ্রাতা যাকোব ও অন্যান্য শিষ্যদের মহাসভার সম্মুখে উপস্থিত করেছিলেন এবং তাদের মৃত্যু ও পাথর মারার যোগ্য বলে অভিযুক্ত করেছিলেন।
b স্পষ্টতই পৌল গ্রীক সেপ্টুয়াজেন্ট থেকে উদ্ধৃতি করেছিলেন যা ইব্রীয় শব্দ “মরীবা” এবং “মঃসা”-কে যথাক্রমে “বিবাদ” এবং “পরীক্ষা” হিসাবে অনুবাদ করে। ওয়াচ টাওয়ার বাইবেল অ্যান্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটি দ্বারা প্রকাশিত শাস্ত্রের প্রতি অন্তর্দৃষ্টি (ইংরাজি) খণ্ড ২ এর ৩৫০ এবং ৩৭৯ পৃষ্ঠা দেখুন।
আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?
◻ কেন পৌল ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের এইধরনের কঠিন পরামর্শের বিষয়ে লিখেছিলেন?
◻ কিভাবে পৌল ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের উপলব্ধি করতে সাহায্য করেছিলেন যে যিহূদীবাদের অধীনস্থ জীবনের চেয়ে উত্তম কিছু তাদের ছিল?
◻ কিভাবে একজনের হৃদয় কঠিন হতে পারে?
◻ “অবিশ্বাসের এক মন্দ হৃদয়” গড়ে তোলাকে এড়ানোর জন্য আমাদের অবশ্যই কী করা উচিত?
[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]
আপনি কি মহান মোশি যীশুর প্রতি বিশ্বাস অনুশীলন করছেন?