আপনি কি ঈশ্বরের বিশ্রামে প্রবেশ করেছেন?
“যে ব্যক্তি তাঁহার বিশ্রামে প্রবেশ করিয়াছে, সেও আপনার কর্ম্ম হইতে বিশ্রাম করিতে পাইল।”—ইব্রীয় ৪:১০.
১. কেন বিশ্রাম খুবই আকাঙ্ক্ষিত?
বিশ্রাম। কতই না শ্রুতিমধুর ও আকাঙ্ক্ষিত শব্দ! আজকের এই দ্রুতগামী ও অস্থির জগতে বসবাসকারী আমাদের অধিকাংশই একমত হবেন যে স্বল্প বিশ্রামও সাদরে অভ্যর্থিত। যুবক অথবা বৃদ্ধ, বিবাহিত অথবা অবিবাহিত যাই হই না কেন, আমরা হয়ত আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নিজেদের নিষ্পেষিত ও পরিশ্রান্ত বলে বোধ করতে পারি। আর যাদের শারীরিক সীমাবদ্ধতা ও অসুস্থতা রয়েছে তাদের জন্য প্রতিটি দিন প্রকৃতই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক। শাস্ত্র যেমন বলে “সমস্ত সৃষ্টি এখন পর্য্যন্ত একসঙ্গে আর্ত্তস্বর করিতেছে, ও একসঙ্গে ব্যথা খাইতেছে।” (রোমীয় ৮:২২) একজন ব্যক্তি যিনি বিশ্রাম নিচ্ছেন তিনি অবশ্যই অলস নন। বিশ্রাম নেওয়া মানুষের একটি চাহিদা আর তা মেটানো প্রয়োজন।
২. যিহোবা কখন থেকে বিশ্রাম নিয়ে চলেছেন?
২ যিহোবা ঈশ্বর স্বয়ং বিশ্রাম নিয়েছেন। আদিপুস্তকে আমরা পড়ি: “আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী এবং তদুভয়স্থ সমস্ত বস্তুব্যূহ সমাপ্ত হইল। পরে ঈশ্বর সপ্তম দিনে আপনার কৃত কার্য্য হইতে নিবৃত্ত হইলেন, সেই সপ্তম দিনে আপনার কৃত সমস্ত কার্য্য হইতে বিশ্রাম করিলেন।” যিহোবা ‘সেই সপ্তম দিনের’ সঙ্গে বিশেষ তাৎপর্য যুক্ত করেছিলেন যে কারণে অনুপ্রাণিত নথি বলে চলে: “ঈশ্বর সেই সপ্তম দিনকে আশীর্ব্বাদ করিয়া পবিত্র করিলেন।”—আদিপুস্তক ২:১-৩.
ঈশ্বর তাঁর কাজ থেকে বিশ্রাম নেন
৩. ঈশ্বরের বিশ্রাম নেওয়ার কারণ কী হতে পারে না?
৩ কেন ‘সেই সপ্তম দিনে’ ঈশ্বর বিশ্রাম নিয়েছিলেন? অবশ্যই তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন বলে বিশ্রাম নেননি। যিহোবা “সামর্থ্যের আধিক্য” উপভোগ করেন এবং “ক্লান্ত হন না, শ্রান্ত হন না।” (যিশাইয় ৪০:২৬, ২৮) অথবা ঈশ্বর এই কারণেও বিশ্রাম নেননি যে তাঁর সাময়িক অবসর নেওয়া বা পদক্ষেপ পরিবর্তন করার প্রয়োজন ছিল কারণ যীশু আমাদের বলেছিলেন: “আমার পিতা এখন পর্য্যন্ত কার্য্য করিতেছেন, আমিও করিতেছি।” (যোহন ৫:১৭) যাই হোক না কেন, “ঈশ্বর আত্মা” ও শারীরিক চক্র ও আক্ষরিক প্রাণীদের প্রয়োজনীয়তাগুলি দ্বারা সীমাবদ্ধ নন।—যোহন ৪:২৪.
৪. কোন্ অর্থে ‘সেই সপ্তম দিন’ পূর্ববর্তী ছয়টি ‘দিন’ থেকে পৃথক?
৪ “সেই সপ্তম দিনে” কেন ঈশ্বর বিশ্রাম নিয়েছিলেন সে সম্বন্ধে যুক্তি করার দ্বারা কিভাবে আমরা কিছু অন্তর্দৃষ্টি লাভ করতে পারি? এটি লক্ষ্য করে যে, দীর্ঘ সময়কাল ব্যাপী প্রতিটি সৃষ্টির ‘দিনে’ তিনি যা সম্পাদন করেছিলেন তার জন্য ঈশ্বর যদিও খুবই সন্তুষ্ট ছিলেন, ‘সেই সপ্তম দিনটিকে’ তিনি বিশেষভাবে আশীর্বাদ করেছিলেন এবং “পবিত্র” বলে ঘোষণা করেছিলেন। সংক্ষিপ্ত অক্সফোর্ড শব্দকোষ (ইংরাজি) “পবিত্র” শব্দটিকে (এক ঈশ্বরের প্রতি বা কোন ধর্মীয় উদ্দেশ্যে) একাগ্রভাবে উৎসর্গীকৃত অথবা পৃথকীকৃত হিসাবে সংজ্ঞায়িত করে। তাই ‘সেই সপ্তম দিনকে’ যিহোবার আশীর্বাদ ও এটিকে পবিত্র বলে ঘোষণা করা, ইঙ্গিত করে যে তাঁর নিজস্ব কোন প্রয়োজনীয়তার চেয়ে বরঞ্চ এটি ও তাঁর “বিশ্রাম,” এর সঙ্গে তাঁর পবিত্র ইচ্ছা এবং উদ্দেশ্যের অবশ্যই কোন সম্বন্ধ আছে। সেই সম্বন্ধটি কী?
৫. প্রথম ছয়টি সৃষ্টির ‘দিনে’ ঈশ্বর কোন্ বিষয়গুলিকে গতিশীল করেছিলেন?
৫ পূর্বের ছয়টি সৃষ্টির ‘দিনগুলিতে’ ঈশ্বর সমস্ত চক্র ও নিয়মগুলিকে তৈরি ও গতিশীল করেছিলেন যা পৃথিবী ও এর চতুর্দিকের কার্যপ্রণালীকে নিয়ন্ত্রণ করে। বৈজ্ঞানিকেরা এখন আবিষ্কার করছেন যে এগুলি কত অপূর্বভাবে তৈরি করা হয়েছিল। ‘ষষ্ঠ দিবসের’ পরিসমাপ্তিতে ঈশ্বর প্রথম মনুষ্যযুগল সৃষ্টি করেছিলেন আর তাদের ‘পূর্ব্বদিকে, এদনে, এক উদ্যানে’ রেখেছিলেন। পরিশেষে, ঈশ্বর মানব পরিবার ও পৃথিবী সম্বন্ধে তাঁর উদ্দেশ্য এই ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বাক্যগুলির দ্বারা ঘোষণা করেছিলেন: “তোমরা প্রজাবন্ত ও বহুবংশ হও, এবং পৃথিবী পরিপূর্ণ ও বশীভূত কর, আর সমুদ্রের মৎস্যগণের উপরে, আকাশের পক্ষিগণের উপরে, এবং ভূমিতে গমনশীল যাবতীয় জীবজন্তুর উপরে কর্ত্তৃত্ব কর।”—আদিপুস্তক ১:২৮, ৩১; ২:৮.
৬. (ক) ‘ষষ্ঠ দিবসের’ শেষে যে সমস্ত কিছু তিনি সৃষ্টি করেছিলেন সেই সম্বন্ধে ঈশ্বর কেমন বোধ করেছিলেন? (খ) কোন্ অর্থে ‘সেই সপ্তম দিন’ পবিত্র?
৬ সৃষ্টির “ষষ্ঠ দিবস” যখন শেষ হয়ে এসেছিল বিবরণ আমাদের জানায়: “ঈশ্বর আপনার নির্ম্মিত বস্তু সকলের প্রতি দৃষ্টি করিলেন, আর দেখ, সে সকলই অতি উত্তম।” (আদিপুস্তক ১:৩১) ঈশ্বর যা কিছু তৈরি করেছিলেন তার সমস্ত কিছুতে তিনি পরিতৃপ্ত ছিলেন। তিনি তাই পৃথিবী সম্বন্ধীয় আরও সৃষ্টিমূলক কাজ করা থেকে বিশ্রাম নিয়েছিলেন বা বিরত হয়েছিলেন। পরমদেশ বাগান তখন সম্পূর্ণ সিদ্ধ ও সুন্দর ছিল কিন্তু তা একটি ক্ষুদ্র এলাকা জুড়ে ছিল আর সেই সময় পৃথিবীতে কেবল দুইজন মনুষ্য প্রাণী ছিল। ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ অবস্থায় পৌঁছাতে পৃথিবী ও মনুষ্য পরিবারের জন্য সময়ের প্রয়োজন ছিল। এই উদ্দেশ্যে তিনি ‘সেই সপ্তম দিনটি’ নিযুক্ত করেছিলেন যে এটি পূর্ববর্তী ছয় দিনে সৃষ্ট সমস্ত কিছুকে তাঁর পবিত্র ইচ্ছার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বিকশিত হতে সুযোগ করে দেবে। (ইফিষীয় ১:১১ পদের সাথে তুলনা করুন।) যখন ‘সেই সপ্তম দিনটি’ পরিসমাপ্তিতে আসবে এই পৃথিবী এক বিশ্বব্যাপী পরমদেশে পরিণত হবে যেখানে সিদ্ধ মানুষদের একটি পরিবার অনন্ত কাল বসবাস করবে। (যিশাইয় ৪৫:১৮) ‘সেই সপ্তম দিন’ পৃথিবী ও মানবজাতি সম্বন্ধে ঈশ্বরের ইচ্ছাকে সম্পূর্ণ ও পরিপূর্ণ করার জন্য পৃথক করে রাখা হয়েছে বা উৎসর্গ করা হয়েছে। এই অর্থে এটি “পবিত্র।”
৭. (ক) কোন্ অর্থে “সেই সপ্তম দিনে” ঈশ্বর বিশ্রাম নিয়েছিলেন? (খ) ‘সেই সপ্তম দিন’ শেষ হওয়ার সঙ্গে কিভাবে সমস্ত কিছু পরিবর্তিত হবে?
৭ সুতরাং ঈশ্বর “সেই সপ্তম দিনে” তাঁর সৃষ্টিকাজ থেকে বিশ্রাম নিয়েছিলেন। এটি যেন এমন যে তিনি বিরত হয়েছিলেন ও গতিশীল যা কিছু তিনি স্থাপন করেছিলেন সেগুলিকে তাদের ধারা পূর্ণ করতে সুযোগ দিয়েছিলেন। তাঁর পূর্ণ প্রত্যয় আছে যে ‘সেই সপ্তম দিনের’ শেষে সমস্ত কিছু ঠিক সেইরকমই হবে যেমন তিনি উদ্দেশ্য করেছেন। এমনকি কিছু বাধা থাকলেও, সেগুলি অতিক্রম করা যাবে। যখন ঈশ্বরের ইচ্ছা সম্পূর্ণভাবে বাস্তবে রূপায়িত হবে তখন সমস্ত বাধ্য মানবজাতি উপকৃত হবে। কোন কিছুই এটিকে প্রতিরোধ করতে পারবে না কারণ ‘সেই সপ্তম দিনের’ উপর ঈশ্বরের আশীর্বাদ রয়েছে ও তিনি এটিকে “পবিত্র” করেছেন। বাধ্য মানবজাতির জন্য কতই না এক চমৎকার প্রত্যাশা!
ইস্রায়েল ঈশ্বরের বিশ্রামে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয়েছিল
৮. কখন ও কিভাবে ইস্রায়েলীয়রা বিশ্রামবার পালন করতে শুরু করে?
৮ ইস্রায়েল জাতি ঈশ্বরের কাজ ও বিশ্রামের ব্যবস্থা থেকে উপকৃত হয়েছিল। এমনকি সীনয় পর্বতে ইস্রায়েলীয়দের ব্যবস্থা দেওয়ার আগেই, ঈশ্বর মোশির মাধ্যমে তাদের বলেছিলেন: “দেখ, সদাপ্রভুই তোমাদিগকে বিশ্রামবার দিয়াছেন, তাই তিনি ষষ্ঠ দিনে দুই দিনের খাদ্য তোমাদিগকে দিয়া থাকেন; তোমরা প্রতিজন স্ব স্ব স্থানে থাক; সপ্তম দিনে কেহ নিজ স্থান হইতে বাহিরে না যাউক।” ফলস্বরূপ “লোকেরা সপ্তম দিনে বিশ্রাম করিল।”—যাত্রাপুস্তক ১৬:২২-৩০.
৯. নিঃসন্দেহে বিশ্রামবার সংক্রান্ত ব্যবস্থা ইস্রায়েলীয়দের কাছে কেন এক আনন্দদায়ক পরিবর্তন হয়েছিল?
৯ ইস্রায়েলীয়দের জন্য ব্যবস্থাটি নতুন ছিল যারা সবেমাত্র মিশরের দাসত্ব থেকে মুক্তিলাভ করেছিল। মিশ্রীয় ও অন্যান্যেরা যদিও তাদের সপ্তাহকে পাঁচ থেকে দশ দিনের সীমায় পরিমাপ করত কিন্তু ক্রীতদাস ইস্রায়েলীয়দের একদিনের জন্য বিশ্রাম নিতে অনুমিত প্রদান করা অস্বাভাবিক বিষয় ছিল। (যাত্রাপুস্তক ৫:১-৯ পদের সাথে তুলনা করুন।) অতএব, এই উপসংহারে আসা যুক্তিসংগত যে ইস্রায়েলের লোকেরা এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়েছিল। বিশ্রামবারের ব্যবস্থাকে এক বোঝা বা বাধা হিসাবে দেখার পরিবর্তে এটি পালন করতে তাদের আনন্দিত হওয়া উচিত ছিল। বস্তুতপক্ষে, ঈশ্বর পরে তাদের বলেছিলেন যে বিশ্রামবার মিশরে তাদের দাসত্ব ও তা থেকে তাঁর উদ্ধার সম্বন্ধে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার উপায় হিসাবে কাজ করেছিল।—দ্বিতীয় বিবরণ ৫:১৫.
১০, ১১. (ক) বাধ্য হওয়ার দ্বারা ইস্রায়েলীয়রা কোন্ বিষয়গুলি উপভোগ করার জন্য প্রতীক্ষা করতে পারত? (খ) ইস্রায়েলীয়রা কেন ঈশ্বরের বিশ্রামে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয়েছিল?
১০ যে ইস্রায়েলীয়রা মোশির সঙ্গে মিশর থেকে বের হয়ে এসেছিল তারা যদি বাধ্য হত, তবে প্রতিজ্ঞাত “দুগ্ধমধুপ্রবাহী দেশে” প্রবেশ করার সুযোগ তাদের থাকত। (যাত্রাপুস্তক ৩:৮) সেখানে তারা কেবল বিশ্রামবারেই নয় কিন্তু তাদের সম্পূর্ণ জীবনব্যাপী প্রকৃত বিশ্রাম উপভোগ করতে পারত। (দ্বিতীয় বিবরণ ১২:৯, ১০) কিন্তু তাদের ক্ষেত্রে বিষয়টি এইরকম প্রমাণিত হয়নি। তাদের সম্বন্ধে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “কাহারা শুনিয়া বিদ্রোহ করিয়াছিল? মোশি দ্বারা মিসর হইতে আনীত সমস্ত লোক কি নয়? কাহাদের প্রতিই বা তিনি চল্লিশ বৎসর অসন্তুষ্ট ছিলেন? তাহাদের প্রতি কি নয়, যাহারা পাপ করিয়াছিল, যাহাদের শব প্রান্তরে পতিত হইল? তিনি কাহাদের বিরুদ্ধেই বা এই শপথ করিয়াছিলেন যে, ‘ইহারা আমার বিশ্রামে প্রবেশ করিবে, না,’ অবাধ্যদের বিরুদ্ধে কি নয়? ইহাতে আমরা দেখিতে পাইতেছি যে, অবিশ্বাস প্রযুক্তই তাহারা প্রবেশ করিতে পারিল না।”—ইব্রীয় ৩:১৬-১৯.
১১ আমাদের জন্য কতই না জোরালো শিক্ষা! যিহোবার প্রতি তাদের বিশ্বাসের অভাবের কারণে সেই বংশ বিশ্রাম লাভ করতে পারেনি যা তিনি তাদের জন্য প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। পরিবর্তে, তারা প্রান্তরে ধ্বংস হয়েছিল। অব্রাহামের বংশধর হিসাবে পৃথিবীর সমস্ত জাতির প্রতি আশীর্বাদ আনয়নের ক্ষেত্রে তারা যে ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত ছিল, তা উপলব্ধি করতে তারা ব্যর্থ হয়েছিল। (আদিপুস্তক ১৭:৭, ৮; ২২:১৮) ঐশিক ইচ্ছার সঙ্গে সংগতিপূর্ণভাবে কাজ করার পরিবর্তে তারা তাদের জাগতিক ও স্বার্থপর আকাঙ্ক্ষার দ্বারা সম্পূর্ণভাবে বিক্ষিপ্ত হয়েছিল। আমরা যেন কখনও এইধরনের জীবনধারায় জড়িয়ে না পড়ি!—১ করিন্থীয় ১০:৬, ১০.
এক বিশ্রাম অবশিষ্ট আছে
১২. প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানদের জন্য তখনও কোন্ প্রত্যাশা বিদ্যমান ছিল আর কিভাবে তারা এটি অর্জন করতে পারত?
১২ বিশ্বাসের অভাবে ঈশ্বরের বিশ্রামে প্রবেশে ইস্রায়েলের ব্যর্থতা সম্বন্ধে উল্লেখ করার পর, পৌল তার সহবিশ্বাসীদের প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেন। ইব্রীয় ৪:১-৫ পদে যেমন উল্লেখ করা আছে, পৌল তাদের পুনর্নিশ্চিত করেছিলেন যে “[ঈশ্বরের] বিশ্রামে প্রবেশ করিবার প্রতিজ্ঞা” বাকি আছে। পৌল তাদের ‘সুসমাচারে’ বিশ্বাস অনুশীলন করতে উৎসাহিত করেছিলেন কারণ “বিশ্বাস করিয়াছি যে আমরা, আমরা সেই বিশ্রামে প্রবেশ করিতে পাইতেছি।” যেহেতু ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই যীশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের দ্বারা স্থানান্তরিত হয়েছিল, তাই পৌল এখানে শারীরিক বিশ্রামের কথা উল্লেখ করছিলেন না যা বিশ্রামবারে পাওয়া যেত। (কলসীয় ২:১৩, ১৪) আদিপুস্তক ২:২ ও গীতসংহিতা ৯৫:১১ পদ উদ্ধৃতি করে পৌল ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের ঈশ্বরের বিশ্রামে প্রবেশ করার জন্য উৎসাহিত করেছিলেন।
১৩. গীতসংহিতা ৯৫ অধ্যায় থেকে উদ্ধৃতি করে কেন পৌল “অদ্যই” শব্দটির উপর মনোযোগ আকর্ষণ করিয়েছিলেন?
১৩ ঈশ্বরের বিশ্রামে প্রবেশ করার সম্ভাবনা ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের জন্য “সুসমাচার” ছিল যেমন বিশ্রামবার ইস্রায়েলীদের কাছে “সুসমাচার” ছিল। সুতরাং, ইস্রায়েলীয়রা প্রান্তরে যে ভুল করেছিল সেই একই ভুল না করার জন্য পৌল তার সহবিশ্বাসীদের উৎসাহিত করেছিলেন। এখন যা গীতসংহিতা ৯৫:৭, ৮ পদে লিপিবদ্ধ আছে তা উল্লেখ করে তিনি “অদ্যই” শব্দটির প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করিয়েছিলেন, যদিও এটি ঈশ্বর যে সময় সৃষ্টি থেকে বিশ্রাম নিয়েছিলেন সেই সময়ের চেয়ে অনেক পরে ঘটেছিল। (ইব্রীয় ৪:৬, ৭) পৌলের বিষয়টি কী ছিল? এটি ছিল যে ‘সেই সপ্তম দিন’ যা ঈশ্বর পৃথিবী ও মানবজাতি সম্বন্ধে তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণভাবে সম্পন্ন হওয়ার জন্য পৃথক রেখেছিলেন, তখনও এর ধারা এগিয়ে চলেছিল। তাই তার সহবিশ্বাসীদের জন্য এটি জরুরি ছিল যে তারা যেন স্বার্থপরতার দ্বারা অধিকৃত না হয়ে বরঞ্চ সেই উদ্দেশ্যের সঙ্গে সংগতি রেখে কাজ করেন। তাই আবারও একবার তিনি সতর্কবাণী শুনিয়েছিলেন: “আপন আপন হৃদয় কঠিন করিও না।”
১৪. কিভাবে পৌল দেখিয়েছিলেন যে ঈশ্বরের “বিশ্রাম” এখনও অবশিষ্ট রয়েছে?
১৪ এছাড়াও, পৌল দেখিয়েছিলেন যে প্রতিজ্ঞাত “বিশ্রাম” কেবল যিহোশূয়ের নেতৃত্বের অধীনে প্রতিজ্ঞাত দেশে বসবাস করা নয়। (যিহোশূয় ২১:৪৪) “বস্তুতঃ যিহোশূয় যদি তাহাদিগকে বিশ্রাম দিতেন,” পৌল যুক্তি দেখিয়েছিলেন তবে “ঈশ্বর তৎপরে অন্য দিনের কথা কহিতেন না।” এই দৃষ্টিকোণ থেকে পৌল আরও যোগ করেছিলেন: “ঈশ্বরের প্রজাদের নিমিত্ত বিশ্রামকালের ভোগ বাকী রহিয়াছে।” (ইব্রীয় ৪:৮, ৯) এই “বিশ্রামকালের ভোগ” কী?
ঈশ্বরের বিশ্রামে প্রবেশ করা
১৫, ১৬. (ক) “বিশ্রামবারের ভোগ” পরিভাষাটির তাৎপর্য কী? (খ) ‘একজনের আপনার কর্ম্ম হইতে বিশ্রাম নেওয়ার’ অর্থ কী?
১৫ “বিশ্রামকালের ভোগ” এই অভিব্যক্তিটি যে গ্রীক শব্দটি থেকে অনূদিত হয়েছে তার অর্থ “বিশ্রাম নেওয়া।” (কিংডম ইন্টারলিনিয়ার) অধ্যাপক উইলিয়াম লেন উল্লেখ করেন: “বিশ্রামবার নির্দেশনা থেকে এই পরিভাষাটি এর বিশেষ অর্থ লাভ করে যা যিহূদীবাদে যাত্রা ২০:৮-১০ পদের ভিত্তিতে বিকাশ লাভ করেছিল যেখানে এই বিষয়টির উপর জোর দেওয়া হয়েছিল যে বিশ্রাম আর প্রশংসা একসঙ্গে যুক্ত . . . [এটি] উৎসব ও আনন্দের বিশেষ দিকের উপর জোর দেয় যা ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধা ও প্রশংসা থেকে ব্যক্ত হয়।” সুতরাং প্রতিজ্ঞাত বিশ্রাম কেবল সাধারণভাবে কাজ থেকে নিষ্কৃতি ছিল না। এটি ছিল ক্লান্তিকর, উদ্দেশ্যহীন পরিশ্রম থেকে আনন্দপূর্ণ সেবায় এক পরিবর্তন যা ঈশ্বরের প্রতি সম্মান আনত।
১৬ এর অর্থ পৌলের পরবর্তী বাক্যগুলি দ্বারা স্পষ্ট হয়: “ফলতঃ যেরূপ ঈশ্বর আপন কর্ম্ম হইতে বিশ্রাম করিয়াছিলেন, তেমনি যে ব্যক্তি তাঁহার বিশ্রামে প্রবেশ করিয়াছে, সেও আপনার কর্ম্ম হইতে বিশ্রাম করিতে পাইল।” (ইব্রীয় ৪:১০) ক্লান্ত হয়ে পড়ায় ঈশ্বর সৃষ্টির সপ্তম দিনে বিশ্রাম করেননি। বরং তিনি তাঁর হস্তনির্মিত কাজের বিকাশ ও সেটিকে পূর্ণ গৌরবে নিয়ে আসার জন্য পৃথিবীতে সৃষ্টিকাজ থেকে বিরত হয়েছিলেন যা তাঁর প্রশংসা ও সম্মান নিয়ে আসবে। ঈশ্বরের সৃষ্টির অংশ হিসাবে, আমাদেরও এই ব্যবস্থার সঙ্গে মানানসই হওয়া উচিত। আমাদের নিজেদের ‘কাজ থেকে বিশ্রাম নেওয়া’ উচিত অর্থাৎ পরিত্রাণ লাভের চেষ্টায় ঈশ্বরের সম্মুখে আমাদের নিজেদের ন্যায্যতা প্রতিপাদন করা বন্ধ করা উচিত। পরিবর্তে, আমাদের বিশ্বাস থাকা উচিত যে আমাদের পরিত্রাণ যীশু খ্রীষ্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের উপর নির্ভর করে যার মাধ্যমে সমস্ত কিছু আবার ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ অবস্থায় নিয়ে আসা হবে।—ইফিষীয় ১:৮-১৪; কলসীয় ১:১৯, ২০.
ঈশ্বরের বাক্য কার্যসাধক
১৭. মাংসিক ইস্রায়েলীয়দের দ্বারা অনুসৃত কোন্ পথ আমাদের অবশ্যই এড়িয়ে চলা উচিত?
১৭ ইস্রায়েলীয়রা তাদের অবাধ্যতা ও বিশ্বাসের অভাবের কারণে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাত বিশ্রামে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয়েছিল। সুতরাং, পৌল ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের উৎসাহিত করেছিলেন: “অতএব আইস, আমরা সেই বিশ্রামে প্রবেশ করিতে যত্ন করি, যেন কেহ অবাধ্যতার সেই দৃষ্টান্ত অনুসারে পতিত না হয়।” (ইব্রীয় ৪:১১) অধিকাংশ প্রথম শতাব্দীর যিহূদীরা যীশুর প্রতি বিশ্বাস অনুশীলন করেননি আর যখন সা.কা. ৭০ সালে যিহূদী বিধিব্যবস্থার শেষ এসেছিল, তাদের অনেকে অত্যন্ত কষ্টভোগ করেছিলেন। আজকে আমাদের ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাত বাক্যে বিশ্বাস থাকা কতই না জরুরি!
১৮. (ক) ঈশ্বরের বাক্যে বিশ্বাস অনুশীলন করার পক্ষে পৌল কোন্ যুক্তি দেখিয়েছিলেন? (খ) কিভাবে ঈশ্বরের বাক্য “সমস্ত দ্বিধার খড়্গ অপেক্ষা তীক্ষ্ণ”?
১৮ যিহোবার বাক্যে বিশ্বাস অনুশীলন করার জন্য আমাদের উপযুক্ত কারণ রয়েছে। পৌল লিখেছিলেন: “ঈশ্বরের বাক্য জীবন্ত ও কার্য্যসাধক, এবং সমস্ত দ্বিধার খড়্গ অপেক্ষা তীক্ষ্ণ, এবং প্রাণ ও আত্মা, গ্রন্থি ও মজ্জা, এই সকলের বিভেদ পর্য্যন্ত মর্ম্মবেধী, এবং হৃদয়ের চিন্তা ও বিবেচনার সূক্ষ্ম বিচারক।” (ইব্রীয় ৪:১২) হ্যাঁ, ঈশ্বরের বাক্য অথবা বার্তা “সমস্ত দ্বিধার খড়্গ অপেক্ষা তীক্ষ্ণ।” ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের স্মরণ করা প্রয়োজন ছিল যে তাদের পিতৃপুরুষদের ক্ষেত্রে কী ঘটেছিল। তারা প্রান্তরে ধ্বংস হবে যিহোবার এই বিচারকে অবজ্ঞা করে, প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করতে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু মোশি তাদের সতর্ক করেছিলেন: “অমালেকীয়েরা ও কনানীয়েরা সে স্থানে তোমাদের সম্মুখে আছে; তোমরা খড়্গে পতিত হইবে।” ইস্রায়েলীয়রা যখন একগুঁয়েভাবে সামনে এগিয়ে গিয়েছিল তখন “ঐ পর্ব্বতবাসী অমালেকীয়েরা ও কনানীয়েরা নামিয়া আসিয়া তাহাদিগকে আঘাত করিল ও হর্মা পর্য্যন্ত তাহাদিগকে তাড়াইয়া দিল।” (গণনাপুস্তক ১৪:৩৯-৪৫) যিহোবার বাক্য সমস্ত দ্বিধার খড়্গের চেয়ে তীক্ষ্ণ আর যে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এটি অবজ্ঞা করে তারা নিশ্চিতভাবেই তার পরিণতি ভোগ করবে।—গালাতীয় ৬:৭-৯.
১৯. ঈশ্বরের বাক্য কত শক্তিশালীভাবে ‘ভেদ’ করতে পারে আর কেন ঈশ্বরের কাছে আমাদের নিকাশযোগ্যতা স্বীকার করা উচিত?
১৯ ঈশ্বরের বাক্য কতই না শক্তিশালীভাবে “প্রাণ ও আত্মা, গ্রন্থি ও মজ্জা, এই সকলের বিভেদ পর্য্যন্ত মর্ম্মবেধী”! এটি এক ব্যক্তির চিন্তাধারা ও অভিপ্রায়কে স্পর্শ করে, যেন আক্ষরিকভাবে হাড়ের একেবারে ভিতরের অংশে পৌঁছে মজ্জাকে সম্পূর্ণরূপে ভেদ করে! যদিও মিশ্রীয় দাসত্ব থেকে ইস্রায়েলীয়রা মুক্ত কিন্তু তারা ব্যবস্থা পালন করে চলবে বলে সম্মত হয়েছিল, যিহোবা জানতেন যে হৃদয়ের গভীর থেকে তারা তাঁর ব্যবস্থা ও চাহিদাগুলিকে উপলব্ধি করেনি। (গীতসংহিতা ৯৫:৭-১১) তাঁর ইচ্ছা পালন করার পরিবর্তে, তারা তাদের মাংসিক আকাঙ্ক্ষাকে পরিতৃপ্ত করার জন্য বেশি ব্যস্ত ছিল। তাই তারা ঈশ্বরের বিশ্রামে প্রবেশ করেনি কিন্তু প্রান্তরে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। এই বিষয়টিকে আমাদের অন্তরে গ্রহণ করা প্রয়োজন কারণ “[ঈশ্বরের] সাক্ষাতে কোন সৃষ্ট বস্তু অপ্রকাশিত নয়; কিন্তু তাঁহার চক্ষুর্গোচরে সকলই নগ্ন ও অনাবৃত রহিয়াছে, যাঁহার কাছে আমাদিগকে নিকাশ দিতে হইবে।” (ইব্রীয় ৪:১৩) তাই আমরা যেন “বিনাশের জন্য সরিয়া পড়িবার লোক” না হই কিন্তু যিহোবার প্রতি আমাদের উৎসর্গীকরণকে পূর্ণ করি।—ইব্রীয় ১০:৩৯.
২০. আমাদের সম্মুখে কোন্ বিষয়টি রয়েছে আর ঈশ্বরের বিশ্রামে প্রবেশ করার জন্য এখন আমাদের অবশ্যই কী করতে হবে?
২০ ‘সেই সপ্তম দিন’—ঈশ্বরের বিশ্রাম দিন যদিও এখনও চলছে, পৃথিবী ও মানবজাতি সম্বন্ধে তাঁর উদ্দেশ্যের পূর্ণতার বিষয়ে তিনি সচেতন। খুব শীঘ্র মশীহ রাজা, যীশু খ্রীষ্ট ঈশ্বরের ইচ্ছার সমস্ত বিরোধীদের প্রভাব থেকে পৃথিবীকে মুক্ত করার জন্য পদক্ষেপ নেবেন, যার অন্তর্ভুক্ত শয়তান দিয়াবল। খ্রীষ্টের হাজার বছর রাজত্বের সময়ে যীশু এবং তাঁর ১,৪৪,০০০ জন সহশাসক পৃথিবী ও মানবজাতিকে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ অবস্থায় নিয়ে আসবেন। (প্রকাশিত বাক্য ১৪:১; ২০:১-৬) আমাদের জীবন যিহোবা ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ তা প্রমাণ করার এখনই উপযুক্ত সময়। ঈশ্বরের সম্মুখে আমাদের নিজেদের ন্যায্যতা ও নিজেদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করার পরিবর্তে, ‘নিজেদের কাজ থেকে বিশ্রাম নেওয়ার’ এবং সর্বান্তঃকরণে রাজ্যের আগ্রহের জন্য কাজ করার জন্য এখনই সময়। এটি করা ও আমাদের স্বর্গস্থ পিতা যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকার দ্বারা আমরা ঈশ্বরের বিশ্রামের উপকারগুলি এখন ও চিরকালের জন্য উপভোগ করার সুযোগ পাব।
আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?
◻ কোন্ উদ্দেশ্যে ঈশ্বর “সেই সপ্তম দিনে” বিশ্রাম নিয়েছিলেন?
◻ ইস্রায়েলীয়রা কোন্ বিশ্রাম উপভোগ করতে পারত কিন্তু কেন তারা এতে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয়েছিল?
◻ ঈশ্বরের বিশ্রামে প্রবেশ করতে হলে আমাদের অবশ্যই কী করতে হবে?
◻ কিভাবে ঈশ্বরের বাক্য জীবন্ত, শক্তিশালী এবং দ্বিধার খড়্গের চেয়েও তীক্ষ্ণ?
[১৬, ১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
ইস্রায়েলীয়রা বিশ্রামবার পালন করেছিল কিন্তু তারা ঈশ্বরের বিশ্রামে প্রবেশ করেনি। আপনি কি জানেন কেন?