অপর মেষ এবং নতুন চুক্তি
“বিজাতি-সন্তানগণ . . . যে কেহ বিশ্রামবার পালন করে, অপবিত্র করে না, ও আমার নিয়ম [“চুক্তি,” “NW”] দৃঢ় করিয়া রাখে, তাহাদিগকে আমি আপন পবিত্র পর্ব্বতে আনিব।”—যিশাইয় ৫৬:৬, ৭.
১. (ক) যোহনের দর্শন অনুসারে, যিহোবার বিচারের ধ্বংসাত্মক বায়ুকে ধরে রাখার সময়ে কী সম্পাদিত হয়েছে? (খ) যোহন কোন্ উল্লেখযোগ্য জনতাকে দেখেছিলেন?
প্রকাশিত বাক্য পুস্তকের চতুর্থ দর্শনে, প্রেরিত যোহন যিহোবার বিচারের ধ্বংসাত্মক বায়ুকে ততক্ষণ পর্যন্ত ধরে রাখতে দেখেছিলেন যতক্ষণ না “ঈশ্বরের ইস্রায়েলের” সকল সদস্যের মুদ্রাঙ্কন সমাপ্ত হয়েছিল। অব্রাহামের বংশের প্রধান অংশ, যীশুর মাধ্যমে আশীর্বাদপ্রাপ্ত হওয়ার জন্য এরাই প্রথম। (গালাতীয় ৬:১৬; আদিপুস্তক ২২:১৮; প্রকাশিত বাক্য ৭:১-৪) সেই একই দর্শনে, যোহন দেখেছিলেন “প্রত্যেক জাতির ও বংশের ও প্রজাবৃন্দের ও ভাষার বিস্তর লোক, তাহা গণনা করিতে সমর্থ কেহ ছিল না; . . . তাহারা উচ্চ রবে চীৎকার করিয়া কহিতেছে, ‘পরিত্রাণ আমাদের ঈশ্বরের, যিনি সিংহাসনে বসিয়া আছেন, এবং মেষশাবকের দান।’” (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১০) “পরিত্রাণ . . . মেষশাবকের দান” কথাগুলি বলার দ্বারা বিরাট জনতা প্রদর্শন করেন যে অব্রাহামের বংশের মাধ্যমে তারাও আশীর্বাদপ্রাপ্ত।
২. কখন বিরাট জনতার আবির্ভাব ঘটেছিল আর কিভাবে এটি শনাক্তিকৃত হয়েছে?
২ বিগত ১৯৩৫ সালে এই বিরাট জনতা শনাক্তিকৃত হয়েছিল এবং আজকে এর সংখ্যা পঞ্চাশ লক্ষেরও অধিক। মহাক্লেশে রক্ষা পাওয়ার জন্য চিহ্নিত, এর সদস্যেরা যীশু যখন “ছাগ” থেকে “মেষ” বাছাই করবেন তখন অনন্ত জীবনের জন্য পৃথকীকৃত হবেন। বিরাট জনতার খ্রীষ্টানেরা মেষের খোঁয়াড় সম্বন্ধীয় যীশুর দৃষ্টান্তের “অপর মেষ” এর অন্তর্ভুক্ত। তারা এক পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্তকাল বেঁচে থাকার আশা করেন।—মথি ২৫:৩১-৪৬; যোহন ১০:১৬, NW; প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪.
৩. নতুন চুক্তির ক্ষেত্রে অভিষিক্ত খ্রীষ্টান ও অপর মেষেরা কিভাবে পৃথক?
৩ ১,৪৪,০০০ জনের ক্ষেত্রে, অব্রাহামের সাথে কৃত চুক্তির আশীর্বাদটি নতুন চুক্তির মাধ্যমে সম্পাদিত হয়েছে। এই চুক্তির অংশী হিসাবে, তারা “অনুগ্রহের অধীন” ও “খ্রীষ্টের ব্যবস্থার অনুগত” হন। (রোমীয় ৬:১৫; ১ করিন্থীয় ৯:২১) তাই, ঈশ্বরের ইস্রায়েলের ১,৪৪,০০০ জন সদস্যেরাই কেবল যীশুর মৃত্যুর স্মরণার্থকের প্রতীকগুলিতে যথাযথভাবে অংশগ্রহণ করে থাকেন এবং কেবল তাদের সাথেই যীশু তাঁর রাজ্য চুক্তিটি করেছিলেন। (লূক ২২:১৯, ২০, ২৯) বিরাট জনতার সদস্যেরা নতুন চুক্তির অংশী নন। কিন্তু, তারা ঈশ্বরের ইস্রায়েলের সাহচর্যে আসেন ও তাদের সাথে তাদের ‘দেশে’ বসবাস করেন। (যিশাইয় ৬৬:৮) সুতরাং এটি বলা যুক্তিসংগত যে তারাও যিহোবার অনুগ্রহের অধীন ও খ্রীষ্টের ব্যবস্থার অনুগত। যদিও নতুন চুক্তির অংশী নন, তবুও তারা এর উপকারভোগী।
“বিজাতি-সন্তানগণ” এবং ‘ঈশ্বরের ইস্রায়েল’
৪, ৫. (ক) যিশাইয়ের বাক্য অনুসারে, কোন্ দলটি যিহোবার পরিচর্যা করবেন? (খ) বিরাট জনতার প্রতি যিশাইয় ৫৬:৬, ৭ পদ কিভাবে পরিপূর্ণ হয়েছিল?
৪ ভাববাদী যিশাইয় লিখেছিলেন: “যে বিজাতি-সন্তানগণ সদাপ্রভুর পরিচর্য্যা করিবার জন্য, তাঁহার নামের প্রতি প্রেম দেখাইবার জন্য ও তাঁহার দাস হইবার জন্য সদাপ্রভুতে আসক্ত হয়, অর্থাৎ যে কেহ বিশ্রামবার পালন করে, অপবিত্র করে না, ও আমার চুক্তি দৃঢ় করিয়া রাখে, তাহাদিগকে আমি আপন পবিত্র পর্ব্বতে আনিব, এবং আমার প্রার্থনা-গৃহে আনন্দিত করিব; তাহাদের হোমবলি ও অন্য বলি সকল আমার যজ্ঞবেদির উপরে গ্রাহ্য হইবে।” (যিশাইয় ৫৬:৬, ৭) ইস্রায়েলে, এর অর্থ ছিল যে “বিজাতি-সন্তানগণ,” ন-ইস্রায়েলীয়রা যিহোবার উপাসনা করবেন—তাঁর নামের প্রতি প্রেম দেখাবেন, নিয়ম চুক্তির শর্তাবলীর প্রতি বাধ্য থাকবেন, বিশ্রামবার পালন এবং ঈশ্বরের “প্রার্থনা-গৃহে” অর্থাৎ মন্দিরে হোমবলি উৎসর্গ করবেন।—মথি ২১:১৩.
৫ আমাদের দিনে, “যে বিজাতি-সন্তানগণ . . . সদাপ্রভুতে আসক্ত হয়” তারাই বিরাট জনতা। ঈশ্বরের ইস্রায়েলের সাহচর্যে এরা যিহোবার পরিচর্যা করেন। (সখরিয় ৮:২৩) তারা ঈশ্বরের ইস্রায়েলের মত একই গ্রহণযোগ্য বলি উৎসর্গ করে থাকেন। (ইব্রীয় ১৩:১৫, ১৬) ঈশ্বরের আত্মিক মন্দিরে, তাঁর “প্রার্থনা-গৃহে” তারা উপাসনা করেন। (প্রকাশিত বাক্য ৭:১৫ পদের সাথে তুলনা করুন।) তারা কি সাপ্তাহিক বিশ্রামবার পালন করেন? অভিষিক্ত বা অপর মেষ কেউই এটি পালন করার জন্য নির্দেশপ্রাপ্ত হননি। (কলসীয় ২:১৬, ১৭) কিন্তু, পৌল অভিষিক্ত ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের বলেছিলেন: “ঈশ্বরের প্রজাদের নিমিত্ত বিশ্রামকালের ভোগ বাকী রহিয়াছে। ফলতঃ যেরূপ ঈশ্বর আপন কর্ম্ম হইতে বিশ্রাম করিয়াছিলেন, তেমনি যে ব্যক্তি তাঁহার বিশ্রামে প্রবেশ করিয়াছে, সেও আপনার কর্ম্ম হইতে বিশ্রাম করিতে পাইল।” (ইব্রীয় ৪:৯, ১০) ওই ইব্রীয়েরা যখন নিজেদের “ঈশ্বরের ধার্ম্মিকতার” প্রতি বশীভূত করেছিলেন এবং ব্যবস্থার কাজগুলি দ্বারা নিজেদের ন্যায্যতা প্রমাণ করার চেষ্টা থেকে নিবৃত্ত হয়েছিলেন তখন এই “বিশ্রামকালের ভোগ”-এ প্রবেশ করেছিলেন। (রোমীয় ১০:৩, ৪) অভিষিক্ত পরজাতীয় খ্রীষ্টানেরা যিহোবার ধার্মিকতার প্রতি নিজেদের বশীভূত করার মাধ্যমে একই বিশ্রাম উপভোগ করেন। বিরাট জনতা তাদের সাথে এই বিশ্রামে যোগ দেন।
৬. আজকে অপর মেষেরা কিভাবে নতুন চুক্তি দৃঢ়রূপে ধরে রাখেন?
৬ অধিকন্তু, প্রাচীনকালের বিজাতি-সন্তানগণ যেমন নিয়ম চুক্তি দৃঢ়রূপে ধরে রেখেছিলেন তেমনি অপর মেষেরাও নতুন চুক্তিকে দৃঢ়রূপে ধরে রাখেন। কিভাবে? এর অংশী হওয়ার দ্বারা নয় কিন্তু এর অন্তর্ভুক্ত ব্যবস্থাগুলির প্রতি বশ্যতাস্বীকার এবং এর ব্যবস্থাগুলি থেকে উপকার লাভ করার দ্বারা। (যিরমিয় ৩১:৩৩, ৩৪ পদের সাথে তুলনা করুন।) তাদের অভিষিক্ত সঙ্গীদের মত, অপর মেষেদেরও যিহোবার ব্যবস্থা “তাহাদের অন্তরে” লিখিত আছে। তারা যিহোবার আদেশ ও নীতিগুলিকে গভীরভাবে প্রেম করেন ও সেগুলি পালন করেন। (গীতসংহিতা ৩৭:৩১; ১১৯:৯৭) অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের মত, তারা যিহোবাকে জানেন। (যোহন ১৭:৩) ত্বকছেদ সম্বন্ধে কী বলা যায়? নতুন চুক্তি করার প্রায় ১,৫০০ বছর পূর্বে, মোশি ইস্রায়েলীয়দের পরামর্শ দিয়েছিলেন: “তোমরা আপন আপন হৃদয়ের ত্বগগ্র ছেদন কর।” (দ্বিতীয় বিবরণ ১০:১৬; যিরমিয় ৪:৪) যদিও ব্যবস্থার সাথে বাধ্যতামূলক মাংসিক ত্বকছেদেরও অবসান হয়েছে, তবুও অভিষিক্ত ও অপর মেষ উভয়কেই তাদের হৃদয়ের “ত্বগগ্র ছেদন” করতে হবে। (কলসীয় ২:১১) পরিশেষে, যীশুর পাতিত “নিয়মের [“চুক্তির,” “NW”] রক্ত” এর ভিত্তিতে যিহোবা অপর মেষেদের ভুল ক্ষমা করেন। (মথি ২৬:২৮; ১ যোহন ১:৯; ২:২) যিহোবা এদের আত্মিক পুত্র হিসাবে দত্তক নেন না যেমন ১,৪৪,০০০ জনের প্রতি করেন। কিন্তু তিনি অপর মেষেদের এই অর্থে ধার্মিক ঘোষণা করেন, যেভাবে অব্রাহাম ঈশ্বরের বন্ধু হিসাবে ধার্মিক ঘোষিত হয়েছিলেন।—মথি ২৫:৪৬; রোমীয় ৪:২, ৩; যাকোব ২:২৩.
৭. আজকে অপর মেষেদের জন্য কোন্ প্রত্যাশা উন্মুক্ত হয়, যারা অব্রাহামের মত ধার্মিক ঘোষিত হয়েছেন?
৭ ১,৪৪,০০০ জনের ক্ষেত্রে, ধার্মিক ঘোষিত হওয়া স্বর্গীয় রাজ্যে যীশুর সাথে শাসন করা সম্বন্ধীয় তাদের আশার পথ খুলে দেয়। (রোমীয় ৮:১৬, ১৭; গালাতীয় ২:১৬) অপর মেষেদের ক্ষেত্রে, ঈশ্বরের বন্ধু হিসাবে ধার্মিক ঘোষিত হওয়া তাদেরকে এক পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্ত জীবনের আশা হৃদয়ে পোষণ করতে অনুমোদন করে—হয় বিরাট জনতার অংশ হিসাবে হর্মাগিদোন থেকে রক্ষা পাওয়ার দ্বারা কিংবা ‘ধার্ম্মিক লোকের পুনরুত্থানের’ মাধ্যমে। (প্রেরিত ২৪:১৫) এইধরনের একটি আশা থাকা ও নিখিল বিশ্বের সার্বভৌমের বন্ধু হওয়া, “[তাঁহার] তাম্বুতে . . . প্রবাস” করার কী এক সুযোগ! (গীতসংহিতা ১৫:১, ২) হ্যাঁ, অভিষিক্ত ও অপর মেষেরা উভয়েই, অব্রাহামের বংশ, যীশুর মাধ্যমে এক চমৎকার উপায়ে আশীর্বাদপ্রাপ্ত হন।
এক মহান প্রায়শ্চিত্তের দিন
৮. ব্যবস্থার অধীনে প্রায়শ্চিত্তের দিনের হোমবলিগুলির দ্বারা কী পূর্ব চিহ্নিত হয়েছিল?
৮ নতুন চুক্তি সম্বন্ধে আলোচনা করার সময়, পৌল তার পাঠকদের নিয়ম চুক্তির অধীনস্থ বাৎসরিক প্রায়শ্চিত্তের দিন সম্বন্ধে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন। ওই দিন, পৃথক হোমবলিগুলি উৎসর্গ করা হত—একটি লেবীর যাজকীয় গোষ্ঠী এবং অন্যটি ন-যাজকীয় ১২ গোষ্ঠীর জন্য। এটি দীর্ঘ দিন যাবৎ যীশুর মহান বলিদানের পূর্ব চিহ্ন হিসাবে বোধগম্য হয়ে এসেছে যা স্বর্গীয় আশা সহ ১,৪৪,০০০ জন এবং পার্থিব আশা সহ লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি উভয়কে উপকৃত করে।a পৌল দেখিয়েছিলেন যে এই দিনটির পরিপূর্ণতায় যীশুর বলিদানের উপকারগুলি, নতুন চুক্তির অধীনে এক মহান প্রায়শ্চিত্তের দিনের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়েছিল। এই মহান দিনের মহাযাজক হিসাবে, যীশু মানবজাতির জন্য “অনন্তকালীয় মুক্তি” অর্জন করতে তাঁর সিদ্ধ জীবন প্রায়শ্চিত্ত বলিরূপে প্রদান করেছিলেন।—ইব্রীয় ৯:১১-২৪.
৯. নতুন চুক্তিভুক্ত হওয়ায়, ইব্রীয় অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা কী সাগ্রহে গ্রহণ করতে পারতেন?
৯ প্রথম শতাব্দীর অনেক ইব্রীয় খ্রীষ্টানেরা তখনও পর্যন্ত “[মোশির] ব্যবস্থার পক্ষে উদ্যোগী” ছিলেন। (প্রেরিত ২১:২০) সেই সময়ে, উপযুক্তরূপেই পৌল তাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন: “[যীশু] এক নূতন নিয়মের [“চুক্তির,” “NW”] মধ্যস্থ; যেন, প্রথম নিয়ম [“চুক্তি,” “NW”] সম্বন্ধীয় অপরাধ সকলের মোচনার্থ মৃত্যু ঘটিয়াছে বলিয়া, যাহারা আহূত হইয়াছে, তাহারা অনন্তকালীয় দায়াধিকার বিষয়ক প্রতিজ্ঞার ফল প্রাপ্ত হয়।” (ইব্রীয় ৯:১৫) নতুন চুক্তি, ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের পুরাতন চুক্তি যা তাদের পাপকে প্রকাশ করত তা থেকে মুক্ত করেছিল। নতুন চুক্তির প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে, তারা “অনন্তকালীয় [স্বর্গীয়] দায়াধিকার বিষয়ক প্রতিজ্ঞার ফল” সাগ্রহে গ্রহণ করতে পারত।
১০. কিসের জন্য অভিষিক্ত এবং অপর মেষেরা যিহোবাকে ধন্যবাদ দেন?
১০ “যে কেহ পুত্ত্রে বিশ্বাস করে” তারা সকলে মুক্তির মূল্যরূপ বলিদান থেকে উপকৃত হবেন। (যোহন ৩:১৬, ৩৬) পৌল বলেছিলেন: “খ্রীষ্টও ‘অনেকের পাপভার তুলিয়া লইবার’ নিমিত্ত এক বার উৎসৃষ্ট হইয়াছেন; তিনি দ্বিতীয় বার, বিনা পাপে, তাহাদিগকে দর্শন দিবেন, যাহারা পরিত্রাণের নিমিত্ত তাঁহার অপেক্ষা করে।” (ইব্রীয় ৯:২৮) আজকে, যারা সাগ্রহে যীশুর অপেক্ষা করছেন তাদের অন্তর্ভুক্তেরা হলেন, ঈশ্বরের ইস্রায়েলের জীবিত অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা এবং বিরাট জনতা গঠনকারী লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি, যাদেরও এক অনন্তকালীন উত্তরাধিকার আছে। মহান প্রায়শ্চিত্তের দিন ও স্বর্গীয় মহাপবিত্র স্থানে মহাযাজক যীশুর পরিচর্যা সহ, নতুন চুক্তি ও এর সাথে যুক্ত জীবন-দায়ক আশীর্বাদগুলির জন্য উভয় শ্রেণী ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেন।
পবিত্র সেবায় রত
১১. যীশুর বলিদানের মাধ্যমে সংবেদ শুচি করে অভিষিক্ত এবং অপর মেষেরা উভয়েই আনন্দের সাথে কী করেন?
১১ ইব্রীয়দের প্রতি তার পত্রে, পৌল পুরাতন চুক্তির অধীনে পাপার্থক বলি উৎসর্গের তুলনায় নতুন চুক্তি ব্যবস্থায় যীশুর বলিদানের উৎকৃষ্ট মূল্যের উপর জোর দিয়েছিলেন। (ইব্রীয় ৯:১৩-১৫) যীশুর শ্রেষ্ঠ বলিদান ‘আমাদের সংবেদকে মৃত ক্রিয়াকলাপ হইতে অধিক নিশ্চয় শুচি করিতে’ সমর্থ ‘যেন আমরা জীবন্ত ঈশ্বরের আরাধনা করিতে পারি।’ ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের ক্ষেত্রে, “মৃত ক্রিয়াকলাপ” এর অন্তর্ভুক্ত ছিল “প্রথম চুক্তি সম্বন্ধীয় অপরাধ।” আজকে খ্রীষ্টানদের ক্ষেত্রে, সেগুলি অতীতে কৃত পাপগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে যার প্রতি প্রকৃত অনুতাপ দেখানো হয়েছে এবং যা ঈশ্বর ক্ষমা করেছেন। (১ করিন্থীয় ৬:৯-১১) শুচি সংবেদ সহ, অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা “জীবন্ত ঈশ্বরের আরাধনা” করেন। আর বিরাট জনতাও তা করেন। “মেষশাবকের রক্তে” তাদের সংবেদ শুচি করার মাধ্যমে, তারা ঈশ্বরের মহান আত্মিক মন্দিরে রয়েছেন, “দিবারাত্র . . . তাঁহার আরাধনা” করছেন।—প্রকাশিত বাক্য ৭:১৪, ১৫.
১২. কিভাবে আমরা প্রদর্শন করি যে আমাদের ‘বিশ্বাসের কৃতনিশ্চয়তা’ রয়েছে?
১২ পৌল আরও বলেছিলেন: “এই জন্য আইস, আমরা সত্য হৃদয় সহকারে বিশ্বাসের কৃতনিশ্চয়তায় [ঈশ্বরের] নিকটে উপস্থিত হই; আমরা ত হৃদয়প্রোক্ষণ-পূর্ব্বক মন্দ হইতে মুক্ত, এবং শুচি জলে স্নাত দেহবিশিষ্ট হইয়াছি।” (ইব্রীয় ১০:২২) আমরা কিভাবে প্রদর্শন করতে পারি যে আমাদের ‘বিশ্বাসের কৃতনিশ্চয়তা’ রয়েছে? পৌল ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের পরামর্শ দিয়েছিলেন: “আইস, আমাদের [স্বর্গীয়] প্রত্যাশার অঙ্গীকার অটল করিয়া ধরি, কেননা যিনি প্রতিজ্ঞা করিয়াছেন, তিনি বিশ্বস্ত; এবং আইস, আমরা পরস্পর মনোযোগ করি, যেন প্রেম ও সৎক্রিয়ার সম্বন্ধে পরস্পরকে উদ্দীপিত করিয়া তুলিতে পারি; এবং আপনারা সমাজে সভাস্থ হওয়া পরিত্যাগ না করি—যেমন কাহারও কাহারও অভ্যাস—বরং পরস্পরকে চেতনা দিই; আর তোমরা সেই দিন যত অধিক সন্নিকট হইতে দেখিতেছ, ততই যেন অধিক এ বিষয়ে তৎপর হই।” (ইব্রীয় ১০:২৩-২৫) আমাদের বিশ্বাস যদি জীবন্ত হয়, তবে আমরাও “সমাজে সভাস্থ হওয়া পরিত্যাগ” করব না। আমরা প্রেম ও সৎক্রিয়া সম্বন্ধে আমাদের ভাইদের উদ্দীপিত করতে এবং তাদের দ্বারা নিজেরাও উদ্দীপিত হতে আর পার্থিব বা স্বর্গীয় যাই হোক না কেন, জনসাধারণ্যে আমাদের আশা ঘোষণা করার অত্যাবশ্যক কাজের জন্য শক্তিশালী হতে আনন্দিত হব।—যোহন ১৩:৩৫.
‘অনন্তকালস্থায়ী চুক্তি’
১৩, ১৪. কোন্ কোন্ উপায়ে নতুন চুক্তি অনন্তকাল স্থায়ী?
১৩ ১,৪৪,০০০ জনের শেষ ব্যক্তিরা যখন তাদের স্বর্গীয় আশা লাভ করবেন তখন কী হবে? নতুন চুক্তির প্রয়োগ কি শেষ হয়ে যাবে? সেই সময়ে, পৃথিবীতে ঈশ্বরের ইস্রায়েলের অবশিষ্ট কোন সদস্য থাকবেন না। চুক্তির সকল অংশীদারেরা যীশুর সাথে “[তাঁহার] পিতার রাজ্যে” থাকবেন। (মথি ২৬:২৯) কিন্তু ইব্রীয়দের প্রতি তার পত্রে পৌলের বাক্যগুলি আমরা স্মরণে রাখি: “শান্তির ঈশ্বর, . . . অনন্তকালস্থায়ী নিয়মের [“চুক্তির,” “NW”] রক্ত প্রযুক্ত সেই মহান্ পাল-রক্ষককে, . . . মৃতগণের মধ্য হইতে উঠাইয়া আনিয়াছেন।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (ইব্রীয় ১৩:২০; যিশাইয় ৫৫:৩) কোন্ অর্থে নতুন চুক্তিটি অনন্তকাল স্থায়ী?
১৪ প্রথমত, নিয়ম চুক্তির বৈসাদৃশ্যে, এটি কখনও স্থানান্তরিত হবে না। দ্বিতীয়ত, যীশুর রাজপদের মত, এর কার্যকারিতার ফলগুলিও স্থায়ী। (১ করিন্থীয় ১৫:২৭, ২৮ পদের সাথে লূক ১:৩৩ পদের তুলনা করুন।) যিহোবার উদ্দেশ্যগুলিতে স্বর্গীয় রাজ্যের একটি চিরস্থায়ী স্থান রয়েছে। (প্রকাশিত বাক্য ২২:৫) আর তৃতীয়ত, অপর মেষেরা নতুন চুক্তি ব্যবস্থা থেকে ক্রমাগত উপকার লাভ করবেন। খ্রীষ্টের হাজার বছর রাজত্বের সময়ে, বিশ্বস্ত মানুষেরা ঠিক যেমন এখন করছেন তেমনি “দিবারাত্র তাঁহার মন্দিরে [যিহোবার] আরাধনা” করে যাবেন। যিহোবা তাদের অতীত পাপগুলি আর স্মরণে আনবেন না যা যীশুর “চুক্তির রক্ত” এর ভিত্তিতে ক্ষমা করা হয়েছিল। তারা যিহোবার বন্ধু হিসাবে ক্রমাগত এক ধার্মিক অবস্থান উপভোগ করবেন এবং তাঁর ব্যবস্থা তখনও তাদের হৃদয়ে লিখিত থাকবে।
১৫. নতুন জগতে তাঁর পার্থিব উপাসনাকারীদের সাথে যিহোবার সম্পর্ক বর্ণনা করুন।
১৫ তখন কি যিহোবা এই মানব দাসেদের বলতে পারবেন: ‘আমি তাহাদের ঈশ্বর, ও তাহারা আমার প্রজা’? হ্যাঁ। “তিনি তাহাদের সহিত বাস করিবেন, এবং তাহারা তাঁহার প্রজা হইবে; এবং ঈশ্বর আপনি তাহাদের সঙ্গে থাকিবেন।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (প্রকাশিত বাক্য ২১:৩) তারা “পবিত্রগণের শিবির” এবং যীশু খ্রীষ্টের স্বর্গীয় বধূ, “প্রিয় নগরটী”-র পার্থিব প্রতিনিধি হবেন। (প্রকাশিত বাক্য ১৪:১; ২০:৯; ২১:২) যীশুর পাতিত “চুক্তির রক্ত”-এ তাদের বিশ্বাস এবং স্বর্গীয় রাজা ও যাজক, যারা পৃথিবীতে থাকাকালে ঈশ্বরের ইস্রায়েল ছিলেন তাদের প্রতি বশ্যতার কারণে এই সমস্ত কিছু সম্ভব হবে।—প্রকাশিত বাক্য ৫:১০.
১৬. (ক) পৃথিবীতে পুনরুত্থিতদের জন্য কোন্ সম্ভাবনাগুলি অপেক্ষা করে আছে? (খ) হাজার বছরের শেষে কোন্ আশীর্বাদগুলি আসবে?
১৬ মৃতেরা যারা পৃথিবীতে পুনরুত্থিত হবেন তাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? (যোহন ৫:২৮, ২৯) তারাও অব্রাহামের বংশ, যীশুর মাধ্যমে “আশীর্ব্বাদপ্রাপ্ত” হওয়ার জন্য আমন্ত্রিত হবেন। (আদিপুস্তক ২২:১৮) তাদেরও যিহোবার নামকে প্রেম, তাঁর পরিচর্যা, গ্রহণযোগ্য বলি উৎসর্গ এবং তাঁর প্রার্থনা গৃহে পবিত্র সেবা প্রদান করতে হবে। যারা তা করবেন তারা ঈশ্বরের বিশ্রামে প্রবেশ করবেন। (যিশাইয় ৫৬:৬, ৭) হাজার বছরের শেষে, সকল বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের যীশু খ্রীষ্ট ও তাঁর ১,৪৪,০০০ জন সহযাজকদের পরিচর্যার মাধ্যমে মানব সিদ্ধতায় নিয়ে আসা হবে। তারা কেবল ঈশ্বরের বন্ধু হিসাবে ধার্মিক ঘোষিত হবেন না বরং ধার্মিক হবেন। তারা আদমের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া পাপ ও মৃত্যু থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত হয়ে, “জীবিত” হবেন। (প্রকাশিত বাক্য ২০:৫; ২২:২) কী এক আশীর্বাদই না তা হবে! আজকে আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে, এটি মনে হয় যে যীশু ও ১,৪৪,০০০ জনের যাজকীয় কাজ তখন সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। মহান প্রায়শ্চিত্তের দিনের আশীর্বাদগুলি সম্পূর্ণরূপে কার্যকর হবে। অধিকন্তু, যীশু “পিতা ঈশ্বরের হস্তে রাজ্য সমর্পণ করিবেন।” (১ করিন্থীয় ১৫:২৪) মানবজাতির জন্য একটি চূড়ান্ত পরীক্ষা ঘটবে এবং তখন শয়তান ও তাঁর মন্দ দূতেরা চিরকালের জন্য ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।—প্রকাশিত বাক্য ২০:৭, ১০.
১৭. আমাদের জন্য যে আনন্দ অপেক্ষা করে আছে তার পরিপ্রেক্ষিতে, আমাদের প্রত্যেকের কী করার জন্য দৃঢ়সংকল্প হওয়া উচিত?
১৭ এই ‘অনন্তকালস্থায়ী চুক্তি’ রোমাঞ্চকর যুগে কোন্ ভূমিকা পালন করবে যা তখন শুরু হবে? আমরা সেটি বলতে পারি না। যিহোবা যতটুকু প্রকাশ করেছেন তা এখনকার জন্য যথেষ্ট। এটি আমাদের বিস্ময়াভিভূত করে। কেবল ভাবুন—“নূতন আকাশমণ্ডলের ও নূতন পৃথিবীর” অংশ হিসাবে অনন্ত জীবন! (২ পিতর ৩:১৩) সেই প্রতিজ্ঞা লাভ করতে আমাদের আকাঙ্ক্ষাকে যেন কোন কিছুই দুর্বল করে না দেয়। অটল থাকা হয়ত সহজ নয়। পৌল বলেছিলেন: “ধৈর্য্যে তোমাদের প্রয়োজন আছে, যেন ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করিয়া প্রতিজ্ঞার ফল প্রাপ্ত হও।” (ইব্রীয় ১০:৩৬) কিন্তু মনে রাখুন, অতিক্রম করার জন্য যে কোন সমস্যা ও কাটিয়ে ওঠার জন্য যে কোন বিরোধিতা, আমাদের জন্য যে আনন্দ অপেক্ষা করে আছে তার তুলনায় অত্যন্ত তুচ্ছ। (২ করিন্থীয় ৪:১৭) অতএব, আমরা যেন কেউই “বিনাশের জন্য সরিয়া পড়িবার লোক” না হই। বরঞ্চ, আমরা যেন নিজেদের “প্রাণের রক্ষার জন্য বিশ্বাসের লোক” হিসাবে প্রমাণ করি। (ইব্রীয় ১০:৩৯) আমাদের প্রত্যেকের অনন্তকালীন আশীর্বাদের জন্য যেন আমরা সকলে চুক্তির ঈশ্বর, যিহোবার উপর পূর্ণ আস্থা রাখি।
[পাদটীকাগুলো]
a ওয়াচটাওয়ার বাইবেল অ্যান্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটি দ্বারা প্রকাশিত এক নতুন পৃথিবীতে পরিত্রাণ (ইংরাজি) বইটির ১৩ অধ্যায় দেখুন।
আপনি কি বুঝতে পেরেছেন?
◻ অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের পাশাপাশি আর কারা অব্রাহামের বংশের মাধ্যমে আশীর্বাদপ্রাপ্ত হচ্ছেন?
◻ নতুন চুক্তির মাধ্যমে আশীর্বাদপ্রাপ্ত হওয়ায়, কিভাবে অপর মেষেরা পুরাতন চুক্তির অধীনস্থ ধর্মান্তরিতদের মত?
◻ মহান প্রায়শ্চিত্তের দিনের ব্যবস্থার মাধ্যমে অপর মেষেরা কিভাবে আশীর্বাদপ্রাপ্ত হন?
◻ কেন পৌল নতুন চুক্তিকে ‘অনন্তকালস্থায়ী চুক্তি’ বলেছিলেন?
[২১ পৃষ্ঠার বাক্স]
মন্দিরে পবিত্র সেবা
বিরাট জনতা যিহোবার মহান আত্মিক মন্দিরের পার্থিব প্রাঙ্গণে অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের সাথে উপাসনা করেন। (প্রকাশিত বাক্য ৭:১৪, ১৫; ১১:২) তাই এই উপসংহারে আসার কোন কারণ নেই যে তারা পরজাতীয়দের পৃথক প্রাঙ্গণে রয়েছেন। যীশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন মন্দিরে পরজাতীয়দের একটি প্রাঙ্গণ ছিল। কিন্তু, শলোমন ও যিহিষ্কেলের মন্দিরগুলির ঐশিকভাবে অনুপ্রাণিত নক্শায়, পরজাতীয়দের প্রাঙ্গণের কোন ব্যবস্থা ছিল না। শলোমনের মন্দিরে, একটি বহিঃস্থ প্রাঙ্গণ ছিল যেখানে ইস্রায়েলীয় ও ধর্মান্তরিতেরা, নারী ও পুরুষেরা একত্রে উপাসনা করতেন। এটি আত্মিক মন্দিরের পার্থিব প্রাঙ্গণের ভবিষ্যদ্বাণীরূপ নমুনা, যেখানে যোহন বিরাট জনতাকে পবিত্র সেবা অর্পণ করতে দেখেছিলেন।
কিন্তু, কেবল যাজক ও লেবীয়েরা ভিতরের প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারতেন, যেখানে বৃহৎ বেদীটি স্থাপিত ছিল; কেবল যাজকেরা পবিত্র স্থানে আর মহাযাজকেরা মহাপবিত্র স্থানে প্রবেশ করতে পারতেন। ভিতরের প্রাঙ্গণ এবং পবিত্র স্থান পৃথিবীতে অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের অনুপম আধ্যাত্মিক অবস্থার পূর্বাভাষ হিসাবে ধরে নেওয়া হয়। আর মহাপবিত্র স্থান স্বয়ং স্বর্গকে চিত্রিত করে, যেখানে অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা তাদের স্বর্গীয় মহাযাজকের সাথে অমর জীবন লাভ করেন।—ইব্রীয় ১০:১৯, ২০.
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
আমাদের জন্য যে আনন্দ অপেক্ষা করে আছে তার পরিপ্রেক্ষিতে, আমাদের ‘প্রাণের রক্ষার জন্য বিশ্বাস’ থাকুক