অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১২
কখন কথা বলা সঠিক হবে?
‘নীরব থাকিবার কাল ও কথা কহিবার কাল আছে।’—উপ. ৩:১, ৭.
গান সংখ্যা ১৮ ঈশ্বরের অনুগত প্রেম
সারাংশa
১. উপদেশক ৩:১, ৭ পদ আমাদের কী শেখায়?
আমাদের মধ্যে কেউ কেউ অনেক বেশি কথা বলতে ভালোবাসে। অন্যেরা আবার কম কথা বলতে ভালোবাসে। এই প্রবন্ধের মূল শাস্ত্রপদ যেমন দেখায়, কথা বলার সময় আছে আবার নীরব থাকারও সময় আছে। (পড়ুন, উপদেশক ৩:১, ৭.) আর আমরা হয়তো চাই যেন কোনো কোনো ভাই-বোন আরও বেশি কথা বলে এবং কোনো কোনো ভাই-বোন কম কথা বলে।
২. আমাদের কখন ও কীভাবে কথা বলা উচিত, সেই বিষয়ে মান নির্ধারণ করার অধিকার কার রয়েছে?
২ কথা বলার ক্ষমতা হল একটা উপহার, যা আমরা যিহোবার কাছ থেকে পেয়েছি। (যাত্রা. ৪:১০-১২; প্রকা. ৪:১১) তিনি তাঁর বাক্যের মাধ্যমে আমাদের বুঝতে সাহায্য করেন, কীভাবে এই উপহারকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়। এই প্রবন্ধে আমরা বাইবেলের কিছু উদাহরণ নিয়ে বিবেচনা করব, যেগুলো আমাদের বুঝতে সাহায্য করবে যে, কখন কথা বলতে হবে এবং কখন নীরব থাকতে হবে। এ ছাড়া, আমরা দেখব, আমরা অন্যদের যা বলি, সেই বিষয়ে যিহোবা কেমন অনুভব করেন। প্রথমে আসুন, আমরা বিবেচনা করে দেখি, কখন আমাদের কথা বলা উচিত।
কখন আমাদের কথা বলা উচিত?
৩. রোমীয় ১০:১৪ পদ অনুযায়ী কখন আমাদের কথা বলা উচিত?
৩ যিহোবা ও রাজ্যের বিষয়ে কথা বলার জন্য আমাদের সবসময় প্রস্তুত থাকা উচিত। (মথি ২৪:১৪; পড়ুন, রোমীয় ১০:১৪.) আমরা যখন এমনটা করি, তখন আমরা যিশুকে অনুকরণ করি। যিশু অন্যদের কাছে তাঁর পিতার বিষয়ে সত্য জানিয়েছিলেন আর পৃথিবীতে তাঁর আসার পিছনে এটাই ছিল একটা প্রধান কারণ। (যোহন ১৮:৩৭) কিন্তু, আমাদের মনে রাখতে হবে যে, কীভাবে আমরা কথা বলি, সেটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই, আমাদের অবশ্যই যিহোবা সম্বন্ধে “মৃদুতা ও ভয় সহকারে [“শ্রদ্ধার সঙ্গে,” ইজি-টু-রিড ভারশন]” অন্যদের সঙ্গে কথা বলতে হবে এবং অন্যদের অনুভূতি ও বিশ্বাসের প্রতি বিবেচনা দেখাতে হবে। (১ পিতর ৩:১৫) এভাবে আমরা সেই ব্যক্তির সঙ্গে কেবল কথাই বলব না কিন্তু সেইসঙ্গে তাকে সত্য শেখাব এবং সেই সত্য তার হৃদয়কে স্পর্শ করবে।
৪. হিতোপদেশ ৯:৯ পদ যেমন বলে, কীভাবে আমাদের কথা অন্যদের সাহায্য করতে পারে?
৪ প্রাচীনরা যদি বুঝতে পারেন যে, কোনো ভাই অথবা বোনকে পরামর্শ দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে, তা হলে প্রাচীনদের ইতস্তত করা উচিত নয়। অবশ্য, তারা কথা বলার জন্য সঠিক সময় বেছে নেবেন, যাতে সেই ব্যক্তি অস্বস্তিতে না পড়ে। এই কারণে সেই ব্যক্তির সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলার জন্য প্রাচীনরা হয়তো সেইসময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চাইবেন, যতক্ষণ না অন্যেরা সেখান থেকে চলে না যায়। প্রাচীনরা সবসময় এমনভাবে কথা বলার জন্য যথাসাধ্য করবেন, যাতে শ্রোতার সম্মান বজায় থাকে। তবে, অন্যেরা যাতে বিজ্ঞতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিতে পারে, সেইজন্য প্রাচীনরা বাইবেলের নীতিগুলো তাদের জানানোর ক্ষেত্রে পিছপা হবেন না। (পড়ুন, হিতোপদেশ ৯:৯.) প্রয়োজনে সাহসের সঙ্গে কথা বলা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? উত্তর জানার জন্য আসুন, আমরা দুটো ভিন্ন উদাহরণ নিয়ে বিবেচনা করি। প্রথম উদাহরণে একজন বাবাকে তার ছেলেদের পরামর্শ দিতে হতো এবং দ্বিতীয় উদাহরণে একজন মহিলাকে এমন একজন ব্যক্তির কাছে গিয়ে তার ভুল ধরিয়ে দিতে হতো, যিনি ভবিষ্যতে রাজা হবেন।
৫. কখন মহাযাজক এলি কথা বলতে ব্যর্থ হয়েছিলেন?
৫ মহাযাজক এলির দুই ছেলে ছিল আর তিনি তাদের খুব ভালোবাসতেন। কিন্তু, সেই ছেলেরা যিহোবাকে একটুও সম্মান করতেন না। তারা আবাসে যাজক হিসেবে সেবা করার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতেন। কিন্তু, তারা তাদের কর্তৃত্বের অপব্যবহার করেছিলেন, যিহোবার কাছে উৎসর্গীকৃত বলিদানের প্রতি চরম অসম্মান প্রকাশ করেছিলেন এবং খোলাখুলিভাবে যৌন অনৈতিকতায় লিপ্ত হয়েছিলেন। (১ শমূ. ২:১২-১৭, ২২) মোশির ব্যবস্থা অনুযায়ী এলির ছেলেরা মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য ছিলেন কিন্তু এলি তাদের খুব সামান্যই বকাঝকা করেছিলেন এবং আবাসে সেবা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন। (দ্বিতীয়. ২১:১৮-২১) এলির এই কাজকে যিহোবা কীভাবে দেখেছিলেন? তিনি এলিকে বলেছিলেন: “তুমি কেন আমা অপেক্ষা আপন পুত্ত্রদিগকে অধিক গৌরবান্বিত করিতেছ?” এরপর যিহোবা সেই দুই দুষ্ট ছেলেকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।—১ শমূ. ২:২৯, ৩৪.
৬. এলির কাছ থেকে আমরা কী শিখি?
৬ এলির কাছ থেকে আমরা একটা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা লাভ করি। আমরা যদি জানতে পারি যে, আমাদের কোনো বন্ধু অথবা আত্মীয় যিহোবার আইন লঙ্ঘন করেছেন, তা হলে আমাদের অবশ্যই তার সঙ্গে কথা বলতে হবে এবং যিহোবার মান সম্বন্ধে স্মরণ করিয়ে দিতে হবে। তারপর, আমাদের অবশ্যই এই বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে যেন তিনি প্রভু যিহোবার প্রতিনিধিদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সাহায্য লাভ করেন। (যাকোব ৫:১৪) আমরা কখনোই যিহোবার চেয়ে আমাদের কোনো বন্ধু অথবা আত্মীয়কে বেশি সম্মান দেওয়ার মাধ্যমে এলির মতো হতে চাইব না। কোনো ব্যক্তিকে সংশোধন করার উদ্দেশে তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলার জন্য সাহসের প্রয়োজন হয় কিন্তু তা উত্তম ফল নিয়ে আসে। এলির উদাহরণ এবং অবীগল নামে একজন ইস্রায়েলীয় মহিলার উদাহরণের মধ্যে পার্থক্য লক্ষ করুন।
৭. কেন অবীগল দায়ূদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন?
৭ অবীগলের স্বামীর নাম ছিল নাবল আর তিনি একজন ধনী জমিদার ছিলেন। দায়ূদ ও তার লোকেরা যখন রাজা শৌলের কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন, তখন তারা নাবলের মেষপালকদের সঙ্গে কিছু সময় কাটিয়েছিলেন এবং দস্যুদের হাত থেকে নাবলের মেষপালকে সুরক্ষিত রেখেছিলেন। নাবল কি তাদের সাহায্যের জন্য কৃতজ্ঞ হয়েছিলেন? না। দায়ূদ যখন নিজের জন্য এবং তার লোকেদের জন্য নাবলের কাছে অল্প পরিমাণ খাবার ও জল চেয়ে লোক পাঠিয়েছিলেন, তখন নাবল ভীষণ রেগে গিয়েছিলেন এবং অত্যন্ত খারাপভাবে তাদের অপমান করেছিলেন। (১ শমূ. ২৫:৫-৮, ১০-১২, ১৪) এর ফলে, দায়ূদ নাবলকে ও তার পরিবারের প্রত্যেক পুরুষকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। (১ শমূ. ২৫:১৩, ২২) কীভাবে এই বিপর্যয় এড়ানো যেতে পারত? অবীগল এটা উপলব্ধি করেছিলেন, তাকে কথা বলতে হবে আর তাই তিনি সাহসের সঙ্গে ৪০০ জন ক্ষুধার্ত, ক্রুদ্ধ ও সশস্ত্র লোকের সাথে দেখা করেছিলেন এবং দায়ূদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন।
৮. অবীগলের উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখি?
৮ অবীগল যখন দায়ূদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন, তখন তিনি সাহস, সম্মান ও আস্থার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। অবীগল যদিও এই সমস্যার জন্য দায়ী ছিলেন না কিন্তু তারপরও তিনি দায়ূদের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন। তিনি দায়ূদের উত্তম গুণাবলির জন্য তার প্রশংসা করেছিলেন এবং সাহায্যের জন্য যিহোবার উপর নির্ভর করেছিলেন। (১ শমূ. ২৫:২৪, ২৬, ২৮, ৩৩, ৩৪) অবীগলের মতো আমরাও যদি লক্ষ করি যে, কোনো ব্যক্তি বিপদে পড়তে চলেছে, তা হলে আমাদের সাহসের সঙ্গে কথা বলতে হবে। (গীত. ১৪১:৫) আমাদের অবশ্যই সম্মান দেখিয়ে কিন্তু দৃঢ়তার সঙ্গে কথা বলতে হবে। আমরা যখন একজন ব্যক্তিকে প্রেমের সঙ্গে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিই, তখন আমরা প্রকৃত বন্ধু হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করি।—হিতো. ২৭:১৭.
৯-১০. অন্যদের পরামর্শ দেওয়ার সময়ে প্রাচীনদের কী মনে রাখা উচিত?
৯ বিশেষভাবে প্রাচীনদের অবশ্যই মণ্ডলীর সেই ব্যক্তিদের সঙ্গে সাহস দেখিয়ে কথা বলতে হবে, যারা কোনো ভুল পদক্ষেপ নেয়। (গালা. ৬:১) প্রাচীনরা নম্রভাবে এটা স্বীকার করেন যে, তারা নিজেরাও অসিদ্ধ এবং তাদেরও হয়তো একদিন পরামর্শের প্রয়োজন হবে। কিন্তু, প্রাচীনরা এই সমস্ত কিছু ভেবে সেই ব্যক্তিদের অনুযোগ প্রদান করার থেকে পিছপা হন না, যাদের শাসনের প্রয়োজন রয়েছে। (২ তীম. ৪:২; তীত ১:৯) কোনো ব্যক্তিকে পরামর্শ দেওয়ার সময়ে প্রাচীনরা দক্ষতা ও ধৈর্যের সঙ্গে তাদের কথা বলার উপহারকে ব্যবহার করার চেষ্টা করেন। তারা তাদের ভাইদের ভালোবাসেন এবং এই ভালোবাসা তাদের কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে। (হিতো. ১৩:২৪) তবে, তাদের প্রধান লক্ষ হল যিহোবার মানগুলোকে সমর্থন করার এবং মণ্ডলীকে ক্ষতির হাত থেকে সুরক্ষিত রাখার মাধ্যমে তাঁকে গৌরব প্রদান করা।—প্রেরিত ২০:২৮.
১০ এখনও পর্যন্ত আমরা আলোচনা করেছি, কখন আমাদের কথা বলতে হবে। কিন্তু, এমন কিছু কিছু সময় রয়েছে, যখন একেবারে নীরব থাকাই সর্বোত্তম। সেই সমস্ত পরিস্থিতিতে আমরা কোন কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে পারি?
কখন আমাদের নীরব থাকা উচিত?
১১. যাকোব কোন দৃষ্টান্ত ব্যবহার করেছিলেন এবং কেন সেটা উপযুক্ত?
১১ কথাবার্তা নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের জন্য কঠিন হতে পারে। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়ে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বাইবেল লেখক যাকোব একটা উপযুক্ত দৃষ্টান্ত ব্যবহার করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “যদি কেহ বাক্যে উছোট না খায়, তবে সে সিদ্ধ পুরুষ, সমস্ত শরীরকেই বল্গা দ্বারা বশে রাখিতে সমর্থ।” (যাকোব ৩:২, ৩) একটি ঘোড়ার মুখে বল্গা বা লাগাম লাগানো হয়। আর লাগাম টানার মাধ্যমে একজন অশ্বারোহী একটি ঘোড়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। তিনি যদি শক্ত করে লাগাম ধরে না রাখেন, তা হলে সেই ঘোড়াটি অনিয়ন্ত্রিতভাবে দৌড়াতে শুরু করবে। আর এর ফলে, সেই ঘোড়াটির পাশাপাশি অশ্বারোহীও আহত হবেন। একইভাবে, আমাদের কথার উপর যদি নিয়ন্ত্রণ না থাকে, তা হলে এটা অনেক সমস্যার সৃষ্টি করবে। আসুন, আমরা কয়েকটা পরিস্থিতি নিয়ে বিবেচনা করে দেখি, যখন আমাদের কথা বলার ক্ষেত্রে “লাগাম টানতে” হবে।
১২. কখন আমাদের কথা বলার ক্ষেত্রে “লাগাম টানা” উচিত?
১২ কোনো ভাই অথবা বোনের কাছে গোপন তথ্য থাকলে আমাদের কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত? উদাহরণ স্বরূপ, আপনার যদি এমন কোনো দেশের ভাই-বোনের সঙ্গে দেখা হয়, যে-দেশে আমাদের কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তা হলে আপনি কি তাদের দেশে আমাদের কাজের খুঁটিনাটি বিষয় জানার জন্য প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে প্রলুব্ধ হন? এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই, আপনি ভালো উদ্দেশ্য নিয়েই এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেন। আমরা আমাদের ভাই-বোনদের ভালোবাসি এবং তাদের প্রতি কী ঘটছে, সেই বিষয়ে জানতে চাই। এ ছাড়া, আমরা তাদের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে নির্দিষ্টভাবে প্রার্থনা করতে চাই। তবে, এটাই সেই সময়, যখন আমাদের কথা বলার ক্ষেত্রে “লাগাম টানা” উচিত। কোনো ভাই অথবা বোনের কাছে যদি গোপন তথ্য থাকে আর আমরা যদি তা প্রকাশ করার জন্য জোরাজুরি করি, তা হলে আমরা তার প্রতি প্রেম দেখাব না। এর পাশাপাশি আমরা সেই ভাই-বোনদের প্রতিও প্রেম দেখাব না, যাদের সেই ভাই অথবা বোনের প্রতি এই আস্থা রয়েছে যে, তিনি তাদের কাজের বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করবেন না। নিশ্চিতভাবেই আমরা কেউই সেই ভাই-বোনদের সমস্যা বাড়াতে চাই না, যারা এমন কোনো দেশে বাস করে, যেখানে আমাদের কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। একইভাবে, এইরকম কোনো দেশের ভাই-বোনও তাদের দেশের সাক্ষিদের খ্রিস্টীয় কার্যকলাপ সম্বন্ধে খুঁটিনাটি তথ্য প্রকাশ করতে চাইবে না।
১৩. হিতোপদেশ ১১:১৩ পদ অনুযায়ী প্রাচীনদের কী করা উচিত এবং কেন?
১৩ হিতোপদেশ ১১:১৩ পদে পাওয়া নীতি বিশেষভাবে প্রাচীনদের অবশ্যই কাজে লাগাতে হবে। (পড়ুন।) গোপন তথ্য জানার অধিকার নেই, এমন ব্যক্তিদের কাছে সেই তথ্য প্রকাশ না করার মাধ্যমে প্রাচীনরা এই নীতি কাজে লাগিয়ে থাকেন। একজন বিবাহিত প্রাচীনের জন্য এটা একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে। এক বিবাহিত দম্পতি প্রায়ই একে অপরের সঙ্গে কথা বলার এবং তাদের ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনা, অনুভূতি ও উদ্বিগ্নতা ভাগ করে নেওয়ার মাধ্যমে তাদের সম্পর্ককে দৃঢ় রাখেন। কিন্তু, একজন প্রাচীন এটা উপলব্ধি করেন যে, মণ্ডলীর কোনো ব্যক্তির “গুপ্ত কথা” স্ত্রীর সামনে প্রকাশ করা উচিত নয়। তিনি যদি তা করেন, তা হলে তিনি সেই ব্যক্তির আস্থা হারিয়ে ফেলবেন এবং নিজের সুনাম নষ্ট করবেন। মণ্ডলীর দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের “দ্বিবাক্যবাদী” অথবা প্রতারণাপূর্ণ হওয়া উচিত নয়। (১ তীম. ৩:৮) এর অর্থ হল তারা যেন অন্যদের প্রতারিত না করেন অথবা সমালোচনা না করেন। একজন প্রাচীন যদি তার স্ত্রীকে ভালোবাসেন, তা হলে তিনি তার স্ত্রীকে এমন তথ্য জানানোর মাধ্যমে ভারগ্রস্ত করে তুলবেন না, যেগুলো তার স্ত্রীর জানার প্রয়োজন নেই।
১৪. কীভাবে একজন প্রাচীনের স্ত্রী তার স্বামীকে সুনাম বজায় রাখার জন্য সাহায্য করতে পারেন?
১৪ একজন স্ত্রী তার স্বামীর কাছ থেকে গোপন তথ্য জানার জন্য জোরাজুরি না করার মাধ্যমে তার স্বামীকে সুনাম বজায় রাখার জন্য সাহায্য করতে পারেন। একজন স্ত্রী যখন এই পরামর্শ কাজে লাগান, তখন তিনি যে শুধু তার স্বামীকে সমর্থন করেন, এমন নয় কিন্তু সেইসঙ্গে তিনি সেই ব্যক্তিদের প্রতি সম্মান দেখান, যারা বিশ্বাস করে তার স্বামীকে গোপন বিষয়গুলো জানিয়েছেন। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল তিনি যিহোবাকে আনন্দিত করেন কারণ তিনি মণ্ডলীর শান্তি ও একতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে অবদান রাখছেন।—রোমীয় ১৪:১৯.
আমরা যা বলি, সেই বিষয়ে যিহোবা কেমন অনুভব করেন?
১৫. ইয়োবের তিন জন বন্ধু সম্বন্ধে যিহোবা কেমন অনুভব করেছিলেন এবং কেন?
১৫ কীভাবে কথা বলতে হবে এবং কখন কথা বলতে হবে, সেই বিষয়ে আমরা ইয়োবের বই থেকে অনেক কিছু শিখতে পারি। ইয়োবের জীবনে একের পর এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর চার জন ব্যক্তি তাকে সান্ত্বনা ও পরামর্শ দিতে এসেছিলেন। সেই ব্যক্তিরা অনেক সময় ধরে নীরব থেকেছিলেন। তাদের মধ্যে ইলীফস, বিল্দদ ও সোফর নামে তিন জন ব্যক্তি ছিলেন। তবে, পরবর্তী সময়ে তারা যা বলেছিলেন, সেটা থেকে বোঝা যায় যে, তারা নীরব থাকার সময়ে এটা নিয়ে ভাবেননি যে, কীভাবে ইয়োবকে সাহায্য করা যেতে পারে। এর পরিবর্তে, তারা এই বিষয়ে চিন্তা করেছিলেন যে, কীভাবে তারা ইয়োবকে দোষী বলে প্রমাণিত করতে পারেন। যদিও তারা ইয়োব ও যিহোবা সম্বন্ধে কিছু সত্যি কথা বলেছিলেন কিন্তু তাদের বলা কথাগুলোর বেশিরভাগই নির্দয় ও মিথ্যা ছিল। তারা ইয়োবকে একজন দুষ্ট ব্যক্তি হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। (ইয়োব ৩২:১-৩) কীভাবে যিহোবা প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? তিনি সেই তিন জন ব্যক্তির প্রতি ভীষণ রেগে গিয়েছিলেন। তিনি তাদের মূর্খ বলে অভিহিত করেছিলেন এবং তাদের দিয়েই ইয়োবকে বলিয়েছিলেন যেন ইয়োব তাদের হয়ে প্রার্থনা করেন।—ইয়োব ৪২:৭-৯.
১৬. ইলীফস, বিল্দদ ও সোফর যে-মন্দ উদাহরণ স্থাপন করেছেন, সেখান থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
১৬ ইলীফস, বিল্দদ ও সোফর যে-মন্দ উদাহরণ স্থাপন করেছেন, সেখান থেকে আমরা একাধিক বিষয় শিখি। প্রথমত, আমরা যেন আমাদের ভাইদের বিচার না করি। (মথি ৭:১-৫) এর পরিবর্তে, কথা বলার আগে আমরা যেন মন দিয়ে তাদের কথা শুনি। একমাত্র এভাবেই আমরা তাদের পরিস্থিতি বুঝতে পারব। (১ পিতর ৩:৮) দ্বিতীয়ত, অন্যদের সঙ্গে কথা বলার সময়ে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যেন আমরা সদয়ভাবে ও সত্যি কথা বলি। (ইফি. ৪:২৫) আর তৃতীয়ত, আমরা একে অপরের সঙ্গে যে-কথা বলি, সেই বিষয়ে যিহোবা খুবই আগ্রহী।
১৭. ইলীহূর উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
১৭ ইয়োবের সঙ্গে দেখা করতে আসা চতুর্থ ব্যক্তি ছিলেন ইলীহূ, যিনি অব্রাহামের একজন আত্মীয় ছিলেন। ইয়োব এবং অন্য তিন জন ব্যক্তি যখন কথা বলছিলেন, তখন তিনি তা শুনছিলেন। এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই, তিনি তাদের কথা মন দিয়ে শুনেছিলেন কারণ তিনি ইয়োবকে সদয়ভাবে অথচ স্পষ্ট পরামর্শ দিতে পেরেছিলেন, যেগুলো ইয়োবকে নিজের চিন্তাভাবনা সংশোধন করতে সাহায্য করেছিল। (ইয়োব ৩৩:১, ৬, ১৭) ইলীহূর প্রধান চিন্তার বিষয় ছিল যিহোবার প্রশংসা করা, নিজের অথবা অন্য কোনো মানুষের প্রশংসা করা নয়। (ইয়োব ৩২:২১, ২২; ৩৭:২৩, ২৪) ইলীহূর উদাহরণ থেকে আমরা শিখি যে, নীরব থাকার এবং কথা শোনার সময় রয়েছে। (যাকোব ১:১৯) আমরা এও শিখি যে, আমরা যখন অন্যদের পরামর্শ দিই, তখন আমাদের প্রধান লক্ষ যেন যিহোবার গৌরব করা হয়, নিজেদের গৌরব করা নয়।
১৮. আমরা কথা বলার উপহারকে যে মূল্যবান হিসেবে দেখি, সেটা আমরা কীভাবে দেখাতে পারি?
১৮ আমরা কীভাবে কথা বলব এবং কখন কথা বলব, সেই বিষয়ে বাইবেলের পরামর্শ অনুসরণ করার মাধ্যমে কথা বলার উপহারের প্রতি সম্মান দেখাতে পারি। জ্ঞানী রাজা শলোমন এই কথাগুলো লিখতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন: “উপযুক্ত সময়ে কথিত বাক্য রৌপ্যের ডালিতে সুবর্ণ নাগরঙ্গ ফলের [“সোনার আপেলের,” ইজি-টু-রিড ভারশন] তুল্য।” (হিতো. ২৫:১১) আমরা যখন অন্যদের কথা মন দিয়ে শুনি এবং ভেবে-চিন্তে কথা বলি, তখন আমাদের কথাগুলো সোনার আপেলের মতো মূল্যবান ও সুন্দর হবে। তাই, আমরা কম কথা বলি অথবা বেশি, আমাদের কথা অন্যদের গেঁথে তুলবে এবং যিহোবা আমাদের জন্য গর্বিত হবেন। (হিতো. ২৩:১৫; ইফি. ৪:২৯) ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া এই উপহারের প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখানোর এটাই হল সর্বোত্তম উপায়।
গান সংখ্যা ৪৫ এগিয়ে চলো!
a ঈশ্বরের বাক্যে বিভিন্ন নীতি রয়েছে, যেগুলো আমাদের জানতে সাহায্য করে যে, কখন কথা বলতে হবে এবং কখন নীরব থাকতে হবে। বাইবেল যা বলে, আমরা যখন তা জানব এবং সেই অনুযায়ী জীবনযাপন করব, তখন আমাদের কথার দ্বারা যিহোবা সন্তুষ্ট হবেন।
b ছবি সম্বন্ধে: একজন বোন আরেকজন বোনকে বিজ্ঞ পরামর্শ দিচ্ছেন।
c ছবি সম্বন্ধে: একজন ভাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার উপর পরামর্শ দিচ্ছেন।
d ছবি সম্বন্ধে: অবীগল উপযুক্ত সময়ে দায়ূদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন আর এটা উত্তম ফল নিয়ে এসেছিল।
e ছবি সম্বন্ধে: আমাদের কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, এমন এক দেশে কীভাবে আমাদের কাজ করা হয়। সেই সম্বন্ধে এক দম্পতি খুঁটিনাটি বিষয় প্রকাশ করছেন না।
f ছবি সম্বন্ধে: অন্য কেউ যাতে মণ্ডলীর কোনো গোপন বিষয় শুনতে না পারে, সেই বিষয়ে একজন প্রাচীন খেয়াল রাখছেন।