যিহোবাকে কখনোই ভুলে যাবেন না
দলের মধ্যে কিছু লোক এর আগেও এইরকম কিছু করেছে। কিন্তু, অধিকাংশ লোক এই প্রথম বার এবং মাত্র এই এক বারই না ভিজে নদীগর্ভের ওপর দিয়ে হেঁটে যাবে। যিহোবা সবেমাত্র যর্দন নদীর জলের প্রবাহকে থামিয়ে দিয়েছেন। এখন লক্ষ লক্ষ ইস্রায়েলীয় এক দীর্ঘ ও প্রশস্ত শোভাযাত্রা করে নদীরগর্ভের ওপর দিয়ে প্রতিজ্ঞাত দেশে এগিয়ে গিয়েছে। ৪০ বছর আগে সূফসাগরে তাদের পূর্বপুরুষদের মতো এখন যর্দন পার হওয়ার সময় অনেকেই নিশ্চয়ই চিন্তা করেছে, ‘যিহোবা এখানে যা করেছেন, তা আমি কখনোই ভুলে যাব না।’—যিহো. ৩:১৩-১৭.
কিন্তু, যিহোবা জানতেন যে, কিছু ইস্রায়েলীয় ‘ত্বরায় তাঁহার কার্য্য সকল ভুলিয়া’ যাবে। (গীত. ১০৬:১৩) তাই, তিনি ইস্রায়েলের নেতা যিহোশূয়কে নদীগর্ভ থেকে ১২টা পাথর নিয়ে যেখানে তারা প্রথম শিবির স্থাপন করবে, সেখানে রাখার আদেশ দিয়েছিলেন। যিহোশূয় ব্যাখ্যা করেছিলেন: “এই প্রস্তরগুলি চিরকাল ইস্রায়েল-সন্তানগণের স্মরণার্থে থাকিবে।” (যিহো. ৪:১-৮) সেই পাথরগুলোর স্তম্ভ সেই জাতিকে যিহোবার পরাক্রমী কাজগুলো সম্বন্ধে স্মরণ করিয়ে দেবে এবং কেন তাদের সবসময় অনুগতভাবে তাঁর সেবা করা উচিত, সেই বিষয়ের ওপর জোর দেবে।
আজকে ঈশ্বরের লোকেদের জন্য কি এই বিবরণের কোনো গুরুত্ব রয়েছে? হ্যাঁ, রয়েছে। আমরাও যিহোবাকে কখনোই ভুলে যাব না; আমাদের ক্রমাগত অনুগতভাবে তাঁর সেবা করে যেতে হবে। ইস্রায়েল জাতির প্রতি অন্যান্য সতর্কবাণী বর্তমানে যিহোবার দাসদের প্রতি প্রযোজ্য হতে পারে। মোশির কথাগুলো বিবেচনা করুন: “সাবধান, তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভুলিয়া যাইও না; . . . তাঁহার যে সকল আজ্ঞা, শাসন ও বিধি . . . সে সকল পালন করিতে ত্রুটি করিও না।” (দ্বিতীয়. ৮:১১) এটা দেখায় যে, যিহোবাকে ভুলে যাওয়ার ফলে একজন ব্যক্তি ঈশ্বরের অবাধ্য হয়ে পড়তে পারেন। এই বিপদটা আমাদের দিনেও সত্য। খ্রিস্টানদের উদ্দেশে লেখার সময় প্রেরিত পৌল প্রান্তরে ইস্রায়েলীয়দের প্রদর্শিত ‘অবাধ্যতার সেই দৃষ্টান্তের’ বিরুদ্ধে সাবধান করেছিলেন।—ইব্রীয় ৪:৮-১১.
আসুন আমরা ইস্রায়েলের ইতিহাসের কিছু ঘটনা বিবেচনা করি, যেগুলো এই বিষয়ের ওপর জোর দেবে যে, আমাদের ঈশ্বরকে ভুলে যাওয়া উচিত নয়। এ ছাড়া, দুজন অনুগত ইস্রায়েলীয় পুরুষের জীবন থেকে শিক্ষা আমাদেরকে ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতা সহকারে যিহোবার সেবা করতে সাহায্য করবে।
যিহোবাকে স্মরণে রাখার কারণগুলো
ইস্রায়েলীয়রা মিশরে যত বছর ছিল, সেই সময়ে যিহোবা কখনোই তাদের ভুলে যাননি। তিনি “অব্রাহামের, ইস্হাকের ও যাকোবের সহিত কৃত আপনার নিয়ম স্মরণ করিলেন।” (যাত্রা. ২:২৩, ২৪) সেই সময় তিনি তাদেরকে দাসত্ব থেকে মুক্ত করার জন্য যা করেছিলেন, তা সত্যিই স্মরণীয় ছিল।
যিহোবা মিশরের ওপর নয়টা আঘাত নিয়ে এসেছিলেন। ফরৌণের মন্ত্রবেত্তারা সেগুলো বন্ধ করতে অক্ষম হয়েছিল। তারপরও, ফরৌণ যিহোবাকে অবজ্ঞা করেছিলেন, ইস্রায়েলীয়দের যেতে দিতে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। (যাত্রা. ৭:১৪–১০:২৯) কিন্তু, দশম আঘাতের প্রভাব সেই অহংকারী শাসককে ঈশ্বরের ইচ্ছা মেনে নিতে বাধ্য করেছিল। (যাত্রা. ১১:১-১০; ১২:১২) মোশির নেতৃত্বে ইস্রায়েল জাতি এবং মিশ্রিত লোকেদের মহাজনতা, সম্ভবত মোট ৩০,০০,০০০ লোক মিশর ত্যাগ করেছিল। (যাত্রা. ১২:৩৭, ৩৮) কিছুদূর যেতে না যেতেই ফরৌণ মন পরিবর্তন করেছিলেন। তিনি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত তার রথবাহিনী ও অশ্বারোহীবাহিনীকে—সেই সময়ে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে—তার প্রাক্তন দাসদের পুনরায় ধরার জন্য আদেশ দিয়েছিলেন। ইতিমধ্যে যিহোবা মোশিকে ইস্রায়েলীয়দেরকে সূফসাগর ও পাহাড়ের চূড়ার মাঝামাঝি ঢালু স্থানে নিয়ে যেতে বলেছিলেন, যেটাকে পী-হহীরোত বলা হতো আর সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার কোনো রাস্তা ছিল না বলে মনে হয়।—যাত্রা. ১৪:১-৯.
ফরৌণ মনে করেছিলেন যে, ইস্রায়েলীয়রা ফাঁদে আটকা পড়েছে আর তার সেনাবাহিনী তাদেরকে আক্রমণ করতে যাচ্ছে। কিন্তু, যিহোবা তাদের ও ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে এক মেঘস্তম্ভ এবং এক আগুনস্তম্ভ স্থাপন করে মিশরীয়দেরকে পিছনে রেখেছিলেন। এরপর ঈশ্বর সূফসাগরকে দু-ভাগ করেছিলেন এবং দুই পাশে সম্ভবত প্রায় ১৫ মিটার উঁচু জলের দেওয়ালসহ সমুদ্রের মাঝ দিয়ে একটা পথ খুলে দিয়েছিলেন। ইস্রায়েলীয়রা শুষ্ক ভূমির ওপর দিয়ে সমুদ্র পার হতে শুরু করেছিল। মিশরীয়রা শীঘ্র সমুদ্রের তীরে পৌঁছেছিল, ইস্রায়েলীয়দের অন্য পারের দিকে যেতে দেখেছিল।—যাত্রা. ১৩:২১; ১৪:১০-২২.
আরও বিচক্ষণ কোনো নেতা হলে এই পরিস্থিতিতে পিছু তাড়া করা বন্ধ করতেন—কিন্তু তাই বলে ফরৌণ করবেন না। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে তিনি তার রথবাহিনী ও অশ্বারোহীবাহিনীকে সমুদ্রগর্ভে নামতে আদেশ দিয়েছিলেন। মিশরীয়রা এগিয়ে যেতেই থাকে। কিন্তু ইস্রায়েলীয়দের কাছে পৌঁছানোর আগেই তারা থেমে যায়। মিশরীয়দের রথ আর চলতে পারে না! যিহোবা তাদের রথের চাকা সরিয়ে বা খুলে দিয়েছিলেন।—যাত্রা. ১৪:২৩-২৫; ১৫:৯.
মিশরীয়রা যখন তাদের ভেঙে যাওয়া যুদ্ধবাহন চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছিল, তখন ইতিমধ্যেই সমস্ত ইস্রায়েল পূর্ব তীরে পৌঁছে গিয়েছিল। সেই সময় মোশি সূফসাগরের ওপর তার হস্ত বিস্তার করেছিলেন। ফলে, যিহোবা জলের দেওয়ালগুলোকে সেই পথের ওপর পতিত হতে দিয়েছিলেন। লক্ষ লক্ষ টন জল ফরৌণ ও তার যোদ্ধাদের ওপর গর্জে উঠে আছড়ে পড়েছিল, তারা ডুবে গিয়েছিল। এই শত্রুদের মধ্যে কেউই রক্ষা পায়নি। ইস্রায়েল স্বাধীন হয়ে গিয়েছিল!—যাত্রা. ১৪:২৬-২৮; গীত. ১৩৬:১৩-১৫.
এই ঘটনার খবর আশেপাশের জাতিগুলোর মধ্যে দীর্ঘ সময়ের জন্য ভয় জাগিয়ে তুলেছিল। (যাত্রা. ১৫:১৪-১৬) চল্লিশ বছর পর যিরীহোর রাহব দুজন ইস্রায়েলীয় পুরুষকে বলেছিলেন: “আমাদের উপরে মহাভয় উপস্থিত হইয়াছে, ও তোমাদের সম্মুখে এই দেশনিবাসী সমস্ত লোক গলিয়া গিয়াছে। কেননা মিসর হইতে তোমরা বাহির হইয়া আসিলে সদাপ্রভু তোমাদের সম্মুখে কি প্রকারে সূফসাগরের জল শুষ্ক করিয়াছিলেন, . . . তাহা আমরা শুনিলাম।” (যিহো. ২:৯, ১০) এমনকী সেই পৌত্তলিক জাতিগুলোও ভুলে যায়নি যে, কীভাবে যিহোবা তাঁর লোকেদের উদ্ধার করেছিলেন। স্পষ্টতই, স্মরণে রাখার জন্য ইস্রায়েলীয়দের এমনকী আরও বেশি কারণ ছিল।
‘নয়ন-তারার ন্যায় তাহাদের রক্ষা করিয়াছিলেন’
সূফসাগরের মধ্যে দিয়ে পার হয়ে যাওয়ার পর ইস্রায়েল এক “ভয়ানক মহাপ্রান্তর” সীনয় মরুভূমিতে প্রবেশ করেছিল। তারা সেই ‘নির্জল মরুভূমিতে’ ও এত এত লোকেদের জন্য খাদ্যবিহীন সেই স্থানে সুদীর্ঘ পথ অতিক্রম করার সময়, যিহোবা তাঁর হাতকে খাটো করেননি। মোশি স্মরণ করেছিলেন: “[সদাপ্রভু ইস্রায়েলকে] পাইলেন প্রান্তর-দেশে, পশুগর্জ্জনময় ঘোর মরুভূমিতে; তিনি তাহাকে বেষ্টন করিলেন, তাহার তত্ত্ব লইলেন, নয়ন-তারার ন্যায় তাহাকে রক্ষা করিলেন।” (দ্বিতীয়. ৮:১৫; ৩২:১০) ঈশ্বর কীভাবে তাদের যত্ন নিয়েছিলেন?
যিহোবা তাদের মান্না বলে অভিহিত “স্বর্গ হইতে খাদ্য দ্রব্য” দিয়েছিলেন, যে-খাবারকে অলৌকিকভাবে “প্রান্তরের উপরে পড়িয়া” থাকতে দেখা গিয়েছিল। (যাত্রা. ১৬:৪, ১৪, ১৫, ৩৫) এ ছাড়া, যিহোবা “চক্মকিপ্রস্তরময় শৈল হইতে” জল নির্গত করেছিলেন। ঈশ্বরের আশীর্বাদে, প্রান্তরে থাকাকালীন ৪০ বছরে তাদের বস্ত্র জীর্ণ হয়নি কিংবা তাদের পা-ও ফুলে যায়নি। (দ্বিতীয়. ৮:৪) এর প্রতিদানে যিহোবা উপযুক্তভাবে তাদের কাছ থেকে কী আশা করেছিলেন? মোশি ইস্রায়েলকে বলেছিলেন: “তুমি নিজের-বিষয়ে সাবধান, তোমার প্রাণের বিষয়ে অতি সাবধান থাক; পাছে তুমি যে সকল ব্যাপার স্বচক্ষে দেখিয়াছ, তাহা ভুলিয়া যাও; আর পাছে জীবন থাকিতে তোমার হৃদয় হইতে তাহা লুপ্ত হয়।” (দ্বিতীয়. ৪:৯) যদি ইস্রায়েলীয়রা যিহোবার সুরক্ষামূলক কাজগুলোকে কৃতজ্ঞতা সহকারে স্মরণে রাখত, তাহলে তারা সবসময় তাঁর সেবা করে যেত এবং তাঁর আইনগুলো পালন করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করত। ইস্রায়েল কী করবে?
ভুলে যাওয়া অকৃতজ্ঞতার দিকে পরিচালিত করে
মোশি ঘোষণা করেছিলেন: “তুমি আপন জন্মদাতা শৈলের প্রতি উদাসীন, আপন জনক ঈশ্বরকে বিস্মৃত হইলে।” (দ্বিতীয়. ৩২:১৮) সূফসাগরে যিহোবার কাজগুলো, প্রান্তরে সেই জাতিকে বাঁচিয়ে রেখেছিল এমন খাদ্যভাণ্ডার এবং যিহোবা অন্যান্য যে-ভালো বিষয়গুলো সম্পাদন করেছিলেন, সেই সমস্তকিছু শীঘ্র উপেক্ষা করা বা ভুলে যাওয়া হয়েছিল। ইস্রায়েলীয়রা বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিল।
এক পর্যায়ে ইস্রায়েলীয়রা তথাকথিত জলের অভাবের কারণে মোশিকে তিরস্কার করেছিল। (গণনা. ২০:২-৫) যে-মান্না তাদের বাঁচিয়ে রেখেছিল, সেটার বিষয়ে তারা এই অভিযোগ করেছিল: “আমাদের প্রাণ এই লঘু ভক্ষ্য ঘৃণা করে।” (গণনা. ২১:৫) তারা এই বলে ঈশ্বরের বিচার এবং নেতা হিসেবে মোশিকে প্রত্যাখ্যান করেছিল: “হায় হায়, আমরা কেন মিসর দেশে মরি নাই; এই প্রান্তরেই বা কেন মরি নাই? . . . আইস, আমরা এক জনকে সেনাপতি করিয়া মিসরে ফিরিয়া যাই।”—গণনা. ১৪:২-৪.
ইস্রায়েলের অবাধ্যতা যিহোবাকে কীভাবে প্রভাবিত করেছিল? সেই ঘটনাগুলোর বিষয়ে চিন্তা করে পরে একজন গীতরচক লিখেছিলেন: “তাহারা প্রান্তরে কতবার তাঁহার বিরুদ্ধে দ্রোহ করিল, মরুভূমিতে কতবার তাঁহাকে মনঃপীড়া দিল। তাহারা ফিরিয়া ঈশ্বরের পরীক্ষা করিল, ইস্রায়েলের পবিত্রতমকে অসন্তুষ্ট করিল। তাহারা তাঁহার হস্ত স্মরণ করিল না, সেই দিনকে স্মরণ করিল না, যে দিনে তিনি তাহাদিগকে বিপক্ষের হস্ত হইতে মুক্ত করিলেন। তিনি মিসরে আপন চিহ্ন সকল, . . . স্থাপন করিলেন।” (গীত. ৭৮:৪০-৪৩) হ্যাঁ, ইস্রায়েলের ভুলে যাওয়া যিহোবাকে গভীর দুঃখ দিয়েছিল।
যে-দুজন ব্যক্তি ভুলে যায়নি
কিন্তু, কিছু ইস্রায়েলীয় যিহোবাকে ভুলে যায়নি। এদের মধ্যে দুজন ছিল যিহোশূয় এবং কালেব। ১২ জনের একটা দলের সঙ্গে তাদেরকে কাদেশ-বর্ণেয় থেকে প্রতিজ্ঞাত দেশ পর্যবেক্ষণ করতে পাঠানো হয়েছিল। দশ জন নেতিবাচক তথ্য দিয়েছিল কিন্তু যিহোশূয় ও কালেব লোকেদের বলেছিল: “আমরা যে দেশ নিরীক্ষণ করিতে গিয়াছিলাম, সে যার পর নাই উত্তম দেশ। সদাপ্রভু যদি আমাদিগেতে প্রীত হন, তবে তিনি আমাদিগকে সেই দেশে প্রবেশ করাইবেন, ও সেই দুগ্ধমধুপ্রবাহী দেশ আমাদিগকে দিবেন। কিন্তু তোমরা কোন মতে সদাপ্রভুর বিদ্রোহী হইও না।” লোকেরা যখন সেই কথা শুনেছিল, তখন তারা যিহোশূয় ও কালেবকে পাথর মারতে বলেছিল। কিন্তু, সেই দুজন যিহোবার ওপর আস্থা রেখে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিল।—গণনা. ১৪:৬-১০.
কয়েক বছর পর, কালেব যিহোশূয়কে বলেছিলেন: “সদাপ্রভুর দাস মোশি দেশ অনুসন্ধান করিতে কাদেশ-বর্ণেয় হইতে আমাকে প্রেরণ করিয়াছিলেন, আর আমি সরল অন্তঃকরণে তাঁহার নিকটে সংবাদ আনিয়া দিয়াছিলাম। আমার যে ভ্রাতৃগণ আমার সহিত গিয়াছিল, তাহারা লোকদের হৃদয় [ভয়ে] গলাইয়া দিয়াছিল; কিন্তু আমি সম্পূর্ণরূপে আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর অনুগামী ছিলাম।” (যিহো. ১৪:৬-৮) ঈশ্বরের ওপর নির্ভরতা রেখে কালেব ও যিহোশূয় অনেক কষ্ট সহ্য করেছিল। তারা জীবনভর যিহোবাকে স্মরণে রাখার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিল।
এ ছাড়া, কালেব ও যিহোশূয় কৃতজ্ঞতা দেখিয়েছিল, স্বীকার করেছিল যে, যিহোবা তাঁর লোকেদের এক উর্বর ভূমি দেওয়ার বিষয়ে তাঁর প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ করেছেন। হ্যাঁ, ইস্রায়েলীয়রা তাদের জীবনের জন্য তাঁর কাছে ঋণী ছিল। যিহোশূয় লিখেছিলেন: “সদাপ্রভু লোকদের পিতৃপুরুষদের কাছে যে দেশের বিষয় দিব্য করিয়াছিলেন, সেই সমগ্র দেশ তিনি ইস্রায়েলকে দিলেন, . . . সদাপ্রভু ইস্রায়েলকুলের কাছে যে সকল মঙ্গলবাক্য বলিয়াছিলেন, তাহার মধ্যে একটী বাক্যও নিষ্ফল হইল না; সকলই সফল হইল।” (যিহো. ২১:৪৩, ৪৫) আজকে আমরা কীভাবে কালেব ও যিহোশূয়ের মতো কৃতজ্ঞতা দেখাতে পারি?
কৃতজ্ঞ হোন
একজন ঈশ্বরভয়শীল ব্যক্তি এক বার জিজ্ঞেস করেছিলেন: “আমি সদাপ্রভু হইতে যে সকল মঙ্গল পাইয়াছি, তাহার পরিবর্ত্তে তাঁহাকে কি ফিরাইয়া দিব?” (গীত. ১১৬:১২) ঈশ্বরের কাছ থেকে বস্তুগত আশীর্বাদের জন্য, তাঁর আধ্যাত্মিক নির্দেশনার জন্য এবং ভবিষ্যৎ পরিত্রাণের বিষয়ে তাঁর উপায়ের জন্য, তাঁর কাছে আমাদের এত বড়ো ঋণ রয়েছে যে, তা তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়ার বা শোধ করার জন্য অনন্তকালও যথেষ্ট নয়। সত্যি বলতে কী, আমরা কখনোই যিহোবার ঋণ শোধ করতে পারি না। কিন্তু, কৃতজ্ঞতা দেখানোর মনোভাব আমাদের সকলের নাগালের মধ্যেই রয়েছে।
যিহোবার পরামর্শ কি আপনাকে সমস্যাগুলো এড়াতে সাহায্য করেছে? তাঁর কাছ থেকে ক্ষমা পাওয়া কি আপনাকে পুনরায় এক শুদ্ধ বিবেক লাভ করতে সাহায্য করেছে? ঈশ্বরের সেইসমস্ত কাজের উপকারগুলো দীর্ঘ সময় ধরে স্থায়ী হয় আর আপনারও তাঁর প্রতি ঠিক সেইরকমভাবেই কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত। স্যান্ড্রা নামে ১৪ বছর বয়সি একটা মেয়ে গুরুতর সমস্যায় পড়েছিল কিন্তু যিহোবার সাহায্যে সে সেগুলো কাটিয়ে উঠেছিল। সে বলে: “আমি সাহায্যের জন্য যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছি আর তিনি যে-উপায়ে সাহায্য করেছেন, তা আমার ওপর গভীর ছাপ ফেলেছে। এখন আমি বুঝতে পারি যে কেন আমার বাবা প্রায়ই আমাকে হিতোপদেশ ৩:৫, ৬ পদ সম্বন্ধে বলতেন: ‘তুমি সমস্ত চিত্তে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস কর; তোমার নিজ বিবেচনায় নির্ভর করিও না; তোমার সমস্ত পথে তাঁহাকে স্বীকার কর; তাহাতে তিনি তোমার পথ সকল সরল করিবেন।’ আমি নিশ্চিত যে, যিহোবা এই পর্যন্ত যেভাবে আমাকে সাহায্য করে এসেছেন, সেভাবে তিনি সবসময় আমাকে সাহায্য করে যাবেন।”
ধৈর্য ধরার মাধ্যমে দেখান যে আপনি যিহোবাকে স্মরণ করেন
বাইবেল যিহোবাকে স্মরণ করার সঙ্গে আরেকটা গুণকে সংযুক্ত করে: “ধৈর্য্য সিদ্ধ কার্য্যবিশিষ্ট হউক, যেন তোমরা সিদ্ধ ও সম্পূর্ণ হও, কোন বিষয়ে তোমাদের অভাব না থাকে।” (যাকোব ১:৪) “সিদ্ধ ও সম্পূর্ণ” হওয়ার সঙ্গে কী জড়িত? এর সঙ্গে সেই গুণাবলি গড়ে তোলা জড়িত, যেগুলো আমাদেরকে হাল ছেড়ে না দিয়ে বরং যিহোবার ওপর বিশ্বাস বা নির্ভরতা রেখে ও দৃঢ়সংকল্প সহকারে পরীক্ষাগুলো সহ্য করতে সাহায্য করবে। এই ধরনের ধৈর্য প্রচুর পরিতৃপ্তি নিয়ে আসে, যখন বিশ্বাসের পরীক্ষাগুলো শেষ হয়ে যায়। আর পরীক্ষাগুলো একসময় না একসময় শেষ হয়।—১ করি. ১০:১৩.
যিহোবার একজন দীর্ঘসময়ের দাস, যিনি চরম স্বাস্থ্যগত সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হয়েছিলেন, তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, কী তাকে ধৈর্য ধরতে সাহায্য করেছে: “আমি কী চাই তা নিয়ে নয় বরং যিহোবা কী করছেন, সেটা নিয়ে আমি চিন্তা করার চেষ্টা করি। নীতিনিষ্ঠার অর্থ হল, আমার ইচ্ছেগুলোর ওপর নয় বরং ঈশ্বরের উদ্দেশ্যগুলোর ওপর দৃষ্টি রাখা। সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হলে আমি কখনো বলি না যে, ‘যিহোবা, কেন আমার প্রতিই ঘটছে?’ এমনকী অপ্রত্যাশিত সমস্যা এসে পড়লেও আমি তাঁর সেবা করে চলি ও তাঁর নিকটবর্তী হই।”
বর্তমানে খ্রিস্টীয় মণ্ডলী “আত্মায় ও সত্যে” যিহোবার উপাসনা করে। (যোহন ৪:২৩, ২৪) সত্য খ্রিস্টানরা দলগতভাবে কখনোই ঈশ্বরকে ভুলে যাবে না, যেমনটা ইস্রায়েল জাতি ভুলে গিয়েছিল। কিন্তু, মণ্ডলীর অংশ হওয়া এই নিশ্চয়তা দেয় না যে, আমরা ব্যক্তিগতভাবে নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখব। কালেব ও যিহোশূয়ের মতো, আমাদের প্রত্যেককে যিহোবার সেবায় কৃতজ্ঞতা ও ধৈর্য দেখাতে হবে। তা করার জন্য আমাদের যথেষ্ট কারণ রয়েছে, যেহেতু এই কঠিন শেষ সময়ে যিহোবা ব্যক্তিগতভাবে আমাদের নির্দেশনা দিচ্ছেন ও যত্ন নিচ্ছেন।
যিহোশূয় যে-পাথরের স্তম্ভ স্থাপন করেছিলেন সেটার মতো, ঈশ্বরের সুরক্ষামূলক কাজের নথি আমাদের আশ্বাস দেয় যে, তিনি তাঁর লোকেদের পরিত্যাগ করবেন না। তাই আপনি হয়তো গীতরচকের মতো অনুভব করতে পারেন, যিনি লিখেছিলেন: “আমি সদাপ্রভুর কর্ম্ম সকল উল্লেখ করিব; তোমার পূর্ব্বকালীন আশ্চর্য্য ক্রিয়া সকল স্মরণ করিব। আমি তোমার সমস্ত কর্ম্ম ধ্যানও করিব, তোমার ক্রিয়া সকল আলোচনা করিব।”—গীত. ৭৭:১১, ১২.
[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
পুরো জাতিকে “নির্জল মরুভূমি” অতিক্রম করতে হয়েছিল
[সৌজন্যে]
Pictorial Archive (Near Eastern History) Est.
[৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
ইস্রায়েল যখন কাদেশ-বর্ণেয়তে শিবির স্থাপন করেছিল, তখন প্রতিজ্ঞাত দেশে গুপ্তচর পাঠানো হয়েছিল
[সৌজন্যে]
Pictorial Archive (Near Eastern History) Est.
[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
প্রান্তরে অনেক বছর কাটানোর পর, উর্বর প্রতিজ্ঞাত দেশের জন্য ইস্রায়েলীয়রা কৃতজ্ঞ হতে পারত
[সৌজন্যে]
Pictorial Archive (Near Eastern History) Est.
[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিহোবার উদ্দেশ্যের প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা আমাদেরকে যেকোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে সমর্থ করে