আপনি কি সর্ববিষয়ে বিশ্বস্ত?
“যে ক্ষুদ্রতম বিষয়ে বিশ্বস্ত, সে প্রচুর বিষয়েও বিশ্বস্ত।”—লূক ১৬:১০.
১. বিভিন্ন উপায়ের মধ্যে কোন একটা উপায়ে যিহোবা বিশ্বস্ত?
মাটিতে একটা গাছের ছায়া পড়লে, দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটা কীরকম হতে থাকে, তা কি আপনি কখনো লক্ষ করেছেন? আসলে, সেই ছায়ার আকার এবং দিক পরিবর্তিত হতে থাকে! মানুষের প্রচেষ্টা এবং প্রতিজ্ঞাগুলো বেশির ভাগ সময়ই ছায়ার মতোই অস্থির হয়ে থাকে। অন্যদিকে, যিহোবা ঈশ্বর সময়ের আবর্তনে পরিবর্তিত হন না। তাঁকে “জ্যোতির্গণের সেই পিতা” হিসেবে উল্লেখ করে, শিষ্য যাকোব বলেন: ‘তাঁহাতে অবস্থান্তর কিম্বা পরিবর্ত্তনজনিত ছায়া হইতে পারে না।’ (যাকোব ১:১৭) যিহোবা এমনকি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়গুলোর ক্ষেত্রেও অপরিবর্তনীয় এবং নির্ভরযোগ্য। তিনি বিশ্বস্ত বা “বিশ্বাস্য ঈশ্বর।”—দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪.
২. (ক) আমরা বিশ্বস্ত কি না, তা নির্ধারণ করার জন্য কেন আমাদের নিজেদেরকে পরীক্ষা করা উচিত? (খ) বিশ্বস্ততা সম্বন্ধে কোন প্রশ্নগুলো আমরা বিবেচনা করব?
২ ঈশ্বর তাঁর উপাসকদের নির্ভরযোগ্যতাকে কীভাবে দেখেন? দায়ূদের মতো করে দেখেন, যিনি তাদের সম্বন্ধে বলেছিলেন: “দেশের বিশ্বস্ত লোকদের প্রতি আমার দৃষ্টি থাকিবে; তাহারা আমার সহিত বাস করিবে; যে সিদ্ধ পথে চলে, সেই আমার পরিচারক হইবে।” (গীতসংহিতা ১০১:৬) হ্যাঁ, যিহোবা তাঁর দাসদের বিশ্বস্ততায় আনন্দিত হন। উপযুক্ত কারণেই প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “ধনাধ্যক্ষের এই গুণ চাই, যেন তাহাকে বিশ্বস্ত দেখিতে পাওয়া যায়।” (১ করিন্থীয় ৪:২) বিশ্বস্ত হওয়ার সঙ্গে কী জড়িত? জীবনের কোন ক্ষেত্রগুলোতে আমাদের বিশ্বস্তভাবে কাজ করা উচিত? ত্রুটিহীন বা ‘সিদ্ধ পথে চলিবার’ আশীর্বাদগুলো কী?
বিশ্বস্ত হওয়া বলতে যা বোঝায়
৩. কোন বিষয়টা নির্ধারণ করে যে, আমরা বিশ্বস্ত কি না?
৩ ‘মোশি সেবকবৎ বিশ্বস্ত ছিলেন,’ ইব্রীয় ৩:৫ পদ বলে। কোন বিষয়টা মোশিকে বিশ্বস্ত করে তুলেছিল? আবাস নির্মাণ এবং তা স্থাপন করার সময় “মোশি এইরূপ করিলেন; তিনি সদাপ্রভুর সমস্ত আজ্ঞানুসারে কার্য্য করিলেন।” (যাত্রাপুস্তক ৪০:১৬) যিহোবার উপাসক হিসেবে, বাধ্যতার সঙ্গে তাঁর সেবা করার মাধ্যমে আমরা বিশ্বস্ততা দেখাই। নিশ্চিতভাবে এর অন্তর্ভুক্ত কঠিন বা চরম পরীক্ষাগুলোর মুখেও যিহোবার প্রতি অনুগত থাকা। কিন্তু, বড় বড় পরীক্ষার সঙ্গে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে সফল হওয়াই একমাত্র বিষয় নয়, যা আমাদের বিশ্বস্ততাকে নির্ধারণ করে। “যে ক্ষুদ্রতম বিষয়ে বিশ্বস্ত, সে প্রচুর বিষয়েও বিশ্বস্ত,” যিশু বলেছিলেন, “আর যে ক্ষুদ্রতম বিষয়ে অধার্ম্মিক, সে প্রচুর বিষয়েও অধার্ম্মিক।” (লূক ১৬:১০) আমাদের এমনকি আপাতদৃষ্টিতে ক্ষুদ্র বলে মনে হয়, এমন বিষয়গুলোতেও বিশ্বস্ত থাকতে হবে।
৪, ৫. “ক্ষুদ্রতম বিষয়ে” আমাদের বিশ্বস্ততা কী দেখায়?
৪ প্রতিদিন “ক্ষুদ্রতম বিষয়ে” বাধ্য থাকা, দুটো কারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমটা হল, এটা প্রকাশ করে যে যিহোবার সার্বভৌমত্ব সম্বন্ধে আমরা কীরকম বোধ করি। প্রথম মানব দম্পতি আদম ও হবার সামনে আনুগত্যের যে-পরীক্ষা এসেছিল, সেটার কথা চিন্তা করুন। এটা তাদের জন্য কোনো কঠিন চাহিদা ছিল না। যদিও তারা এদন উদ্যানের সমস্ত ধরনের খাবার খেতে পারত কিন্তু মাত্র একটা বৃক্ষের—‘সদসদ্-জ্ঞানদায়ক বৃক্ষের’—ফল খাওয়া থেকে তাদের বিরত থাকতে বলা হয়েছিল। (আদিপুস্তক ২:১৬, ১৭) সেই সহজ আজ্ঞাটি মেনে চলার বিষয়ে তাদের বিশ্বস্ততা দেখাত যে, প্রথম মানব দম্পতি যিহোবার শাসনব্যবস্থাকে সমর্থন করে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যিহোবার নির্দেশনা মেনে চলা দেখায় যে, আমরা যিহোবার সার্বভৌমত্বের পক্ষে রয়েছি।
৫ দ্বিতীয়টা হল, “ক্ষুদ্রতম বিষয়ে” আমাদের আচরণ “প্রচুর বিষয়েও” অর্থাৎ জীবনে আমরা যখন বড় বড় বিচার্য বিষয়ের মুখোমুখি হই, তখন আমরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাব, তাতে প্রভাব ফেলে। এই ক্ষেত্রে, দানিয়েল এবং তার বিশ্বস্ত তিন ইব্রীয় সঙ্গীর—হনানিয়, মীশায়েল ও অসরিয়ের—প্রতি কী ঘটেছিল, তা বিবেচনা করুন। তাদেরকে সা.কা.পূ. ৬১৭ সালে বাবিলে বন্দি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। অল্পবয়সে, সম্ভবত কিশোর বয়সে, এই চার জনকে রাজা নবূখদ্নিৎসরের রাজদরবারে রাখা হয়েছিল। সেখানে তাদেরকে “রাজার আহারীয় দ্রব্য ও তাঁহার পানীয় দ্রাক্ষারস হইতে প্রতিদিনের অংশ দিতে, এবং তাহাদিগকে তিন বৎসর পরিপোষণ করিতে” বলা হয়েছিল “যেন সেই সময়ের শেষে তাহারা রাজার নিকটে দাঁড়াইতে পারে।”—দানিয়েল ১:৩-৫.
৬. বাবিলের রাজদরবারে দানিয়েল এবং তার তিন ইব্রীয় সঙ্গী কোন পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছিল?
৬ কিন্তু, বাবিলীয় রাজার খাবার চার জন অল্পবয়সি ইব্রীয়ের সামনে এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে এসেছিল। মোশির ব্যবস্থায় নিষিদ্ধ খাবারগুলো সম্ভবত রাজার আহারীয় দ্রব্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। (দ্বিতীয় বিবরণ ১৪:৩-২০) বধ করা পশুপাখি থেকে হয়তো সঠিকভাবে রক্ত ঝরানো হতো না এবং এই ধরনের মাংস খাওয়া ঈশ্বরের ব্যবস্থাকে লঙ্ঘন করত। (দ্বিতীয় বিবরণ ১২:২৩-২৫) এ ছাড়া, সেই খাবার হয়তো প্রতিমার সামনে উৎসর্গ করা হতো, যা মঙ্গলার্থক ভোজ গ্রহণের আগে বাবিলীয় উপাসকদের মধ্যে প্রথা ছিল।
৭. দানিয়েল এবং তার তিন ইব্রীয় বন্ধুর বাধ্যতা কী দেখিয়েছিল?
৭ খাদ্য সংক্রান্ত বিধিনিষেধ নিঃসন্দেহে বাবিলীয় রাজপরিবারে তেমন কোনো গুরুতর সমস্যা ছিল না। কিন্তু, দানিয়েল এবং তার বন্ধুরা ইস্রায়েলকে দেওয়া ঈশ্বরের ব্যবস্থায় নিষিদ্ধ খাবার খাওয়ার মাধ্যমে নিজেদের কলুষিত না করার বিষয়ে সংকল্পবদ্ধ ছিল। এটা এমন এক বিচার্য বিষয় ছিল, যার সঙ্গে যিহোবার প্রতি তাদের আনুগত্য এবং বিশ্বস্ততা জড়িত ছিল। তাই, তারা খাবার হিসেবে শাকসবজি এবং জল দেওয়ার অনুরোধ করেছিল আর তাদেরকে সেই খাবার দেওয়া হয়েছিল। (দানিয়েল ১:৯-১৪) সেই চার যুবক যা করেছিল, তা আজকে কিছু লোকের কাছে তুচ্ছ বিষয় বলে মনে হতে পারে। কিন্তু, ঈশ্বরের প্রতি তাদের বাধ্যতা দেখিয়েছিল যে, যিহোবার সার্বভৌমত্বের বিচার্য বিষয়ে তাদের অবস্থান কোথায়।
৮. (ক) তিন জন ইব্রীয় আনুগত্যের কোন কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছিল? (খ) পরীক্ষার ফল কী হয়েছিল এবং এটা কী দেখায়?
৮ তুচ্ছ বলে মনে হতে পারে এমন বিষয়ে বিশ্বস্ততা প্রমাণ করা দানিয়েলের তিন ইব্রীয় বন্ধুকে এক বড় পরীক্ষার সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করতে প্রস্তুত করেছিল। দানিয়েল পুস্তকের ৩ অধ্যায় খুলুন এবং নিজে পড়ে দেখুন যে, রাজা নবূখদ্নিৎসরের দ্বারা স্থাপিত সোনার প্রতিমা উপাসনা করতে প্রত্যাখ্যান করায় কীভাবে তিন জন ইব্রীয় মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হয়েছিল। তাদেরকে যখন রাজার সামনে নিয়ে আসা হয়েছিল, তখন তারা আস্থা সহকারে তাদের এই দৃঢ়সংকল্প সম্বন্ধে জানিয়েছিল: “যদি হয়, আমরা যাঁহার সেবা করি, আমাদের সেই ঈশ্বর আমাদিগকে প্রজ্বলিত অগ্নিকুণ্ড হইতে উদ্ধার করিতে সমর্থ আছেন, আর, হে রাজন্, তিনি আপনার হস্ত হইতে আমাদিগকে উদ্ধার করিবেন; আর যদি নাও হয়, তবু হে রাজন্ আপনি জানিবেন, আমরা আপনার দেবগণের সেবা করিব না, এবং আপনার স্থাপিত স্বর্ণ-প্রতিমাকে প্রণাম করিব না।” (দানিয়েল ৩:১৭, ১৮) যিহোবা কি তাদের রক্ষা করেছিলেন? যে-রক্ষীরা যুবকদের জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করেছিল, তারা প্রাণ হারিয়েছিল কিন্তু সেই তিন জন বিশ্বস্ত ইব্রীয় জীবন্ত বের হয়ে এসেছিল—অগ্নিকুণ্ডের তাপে এমনকি সামান্যও পোড়েনি! তাদের বিশ্বস্ততার এক সুপ্রতিষ্ঠিত আদর্শ তাদেরকে সেই কঠিন পরীক্ষার সময়ে বিশ্বস্ত থাকার জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করেছিল। এটা কি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়ে বিশ্বস্ত থাকার গুরুত্ব সম্বন্ধে তুলে ধরে না?
‘অধার্ম্মিকতার ধনের’ বিষয়ে বিশ্বস্ততা
৯. লূক ১৬:১০ পদে লিপিবদ্ধ যিশুর কথাগুলোর প্রাসঙ্গিক বিষয় কী?
৯ যে-ব্যক্তি আপাতদৃষ্টিতে ক্ষুদ্র বলে মনে হয় এমন বিষয়ে বিশ্বস্ত, তিনি যে প্রচুর বিষয়েও বিশ্বস্ত, এই নীতি সম্বন্ধে বলার আগে যিশু তাঁর শ্রোতাদের পরামর্শ দিয়েছিলেন: “আপনাদের জন্যে অধার্ম্মিকতার ধন দ্বারা মিত্র লাভ কর, যেন উহা শেষ হইলে তাহারা তোমাদিগকে সেই অনন্ত আবাসে গ্রহণ করে।” এর পরেই তিনি ক্ষুদ্র বিষয়ে বিশ্বস্ত থাকার ব্যাপারে বলেছিলেন। তারপর যিশু বলেছিলেন: “অতএব তোমরা যদি অধার্ম্মিকতার ধনে বিশ্বস্ত না হইয়া থাক, তবে কে বিশ্বাস করিয়া তোমাদের কাছে সত্য ধন রাখিবে? . . . কোন ভৃত্য দুই কর্ত্তার দাসত্ব করিতে পারে না, কেননা সে হয় এক জনকে ঘৃণা করিবে, অন্যকে প্রেম করিবে, নয় ত এক জনে অনুরক্ত হইবে, অন্যকে তুচ্ছ করিবে। তোমরা ঈশ্বর এবং ধন উভয়ের দাসত্ব করিতে পার না।”—লূক ১৬:৯-১৩.
১০. ‘অধার্ম্মিকতার ধন’ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কীভাবে আমরা বিশ্বস্ততা দেখাতে পারি?
১০ প্রসঙ্গ অনুযায়ী, লূক ১৬:১০ পদে বলা যিশুর কথাগুলোর মূল প্রয়োগ ‘অধার্ম্মিকতার ধন’ অর্থাৎ আমাদের বস্তুগত ধনসম্পদ অথবা বিষয়সম্পত্তি ব্যবহারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। সেগুলোকে অধার্মিক বলা হয় কারণ বস্তুগত ধনসম্পদ—বিশেষ করে টাকাপয়সা—পাপী মানুষের নিয়ন্ত্রণাধীন রয়েছে। এ ছাড়া, ধনসম্পদ অর্জন করার আকাঙ্ক্ষা অধার্মিক কাজগুলোর দিকে পরিচালিত করতে পারে। আমাদের বস্তুগত বিষয়সম্পত্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রজ্ঞা অনুশীলন করে আমরা বিশ্বস্ততা দেখাই। স্বার্থপর উদ্দেশ্যে সেগুলো ব্যবহার করার পরিবর্তে আমরা সেগুলোকে রাজ্যের বিষয়গুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এবং যাদের প্রয়োজন তাদের সাহায্য করার জন্য ব্যবহার করতে চাই। এভাবে বিশ্বস্ত থেকে আমরা ‘অনন্ত আবাসের’ অধিকারী যিহোবা ঈশ্বর এবং যিশু খ্রিস্টের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পারি। তারা আমাদের এই আবাসগুলোতে গ্রহণ করে নেবেন, হয় স্বর্গে অথবা পরমদেশ পৃথিবীতে আমাদের অনন্তজীবন দান করবেন।
১১. যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা সম্পাদিত শিক্ষামূলক কাজে আমরা যে-দান গ্রহণ করি, সেটা গৃহকর্তার কাছে ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে কেন আমাদের ইতস্তত করা উচিত নয়?
১১ এ ছাড়া, যে-লোকেদের কাছে আমরা বাইবেল অথবা বাইবেলভিত্তিক সাহিত্যাদি অর্পণ করি, তাদের কাছে রাজ্যের বার্তা ঘোষণা করার এবং যিহোবার লোকেদের দ্বারা সম্পাদিত শিক্ষামূলক কাজে আমরা যে-দান গ্রহণ করি, তা ব্যাখ্যা করার সময় তাদেরকে আমরা কোন সুযোগ করে দিই, সেটাও বিবেচনা করুন। আমরা কি তাদেরকে তাদের বস্তুগত ধনসম্পদ বিজ্ঞতার সঙ্গে ব্যবহার করার সুযোগ করে দিচ্ছি না? যদিও লূক ১৬:১০ পদের মূল প্রয়োগ বস্তুগত ধনসম্পদ ব্যবহারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কিন্তু সেখানে যে-নীতি রয়েছে, তা জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
সততা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ
১২, ১৩. কোন ক্ষেত্রগুলোতে আমরা সততা দেখাতে পারি?
১২ প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “আমরা নিশ্চয় জানি, আমাদের সৎসংবেদ আছে, সর্ব্ববিষয়ে সদাচরণ করিতে বাঞ্ছা করিতেছি।” (ইব্রীয় ১৩:১৮) নিশ্চিতভাবে, ‘সর্ব্ববিষয়ের’ অন্তর্ভুক্ত টাকাপয়সা সংক্রান্ত সমস্ত বিষয় পরিচালনা করা। আমরা আমাদের ঋণ এবং কর অবিলম্বে এবং সততার সঙ্গে পরিশোধ করি। কেন? আমরা আমাদের সংবেদের কারণে এবং মূলত ঈশ্বরের প্রতি প্রেম এবং তাঁর নির্দেশনাগুলোর প্রতি বাধ্যতার কারণে তা করে থাকি। (রোমীয় ১৩:৫, ৬) আমরা যখন এমন কোনো জিনিস খুঁজে পাই, যা আমাদের নয় তখন আমরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাই? আমরা সেটা এর বৈধ মালিককে ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করি। কোন বিষয়টা আমাদেরকে সেই ব্যক্তির জিনিসটা ফেরত দিতে অনুপ্রাণিত করেছে, তা যখন আমরা ব্যাখ্যা করি তখন তা কত উত্তম সাক্ষ্যই না দেয়!
১৩ সর্ববিষয়ে বিশ্বস্ত এবং সৎ থাকার জন্য আমাদের কাজের জায়গায় সততার প্রয়োজন। আমাদের কাজের ক্ষেত্রে সততা, আমরা যে-ঈশ্বরকে প্রতিনিধিত্ব করি, তাঁর দয়ার প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করায়। আমরা অলস হওয়ার দ্বারা সময় “চুরি” করি না। বরং, যিহোবার জন্য আমরা কঠোর পরিশ্রম করি। (ইফিষীয় ৪:২৮; কলসীয় ৩:২৩) ইউরোপের একটা দেশে আনুমানিক এক তৃতীয়াংশ কর্মচারী, যারা অসুস্থতাজনিত ছুটি মঞ্জুর করার জন্য ডাক্তারের কাছ থেকে চিঠির আবেদন করে, তারা তা মিথ্যেভাবে করে থাকে। ঈশ্বরের প্রকৃত দাসেরা কাজে না যাওয়ার জন্য মিথ্যা অজুহাত দাঁড় করায় না। কখনো কখনো, যিহোবার সাক্ষিদের সততা এবং কঠোর পরিশ্রম দেখে তাদেরকে পদোন্নতি দেওয়া হয়।—হিতোপদেশ ১০:৪.
আমাদের খ্রিস্টীয় পরিচর্যায় বিশ্বস্ততা
১৪, ১৫. কয়েকটা ক্ষেত্র কী, যেখানে আমরা খ্রিস্টীয় পরিচর্যায় নিজেদের বিশ্বস্ত প্রমাণ করতে পারি?
১৪ আমরা কীভাবে পরিচর্যার ক্ষেত্রে বিশ্বস্ততা দেখাই, যা আমাদের ওপর আস্থা সহকারে অর্পণ করা হয়েছে? বাইবেল বলে, “আইস, আমরা তাঁহারই দ্বারা ঈশ্বরের উদ্দেশে নিয়ত স্তব-বলি, অর্থাৎ তাঁহার নাম স্বীকারকারী ওষ্ঠাধরের ফল, উৎসর্গ করি।” (ইব্রীয় ১৩:১৫) ক্ষেত্রের পরিচর্যায় বিশ্বস্ততা দেখানোর প্রধান উপায় হল, নিয়মিতভাবে এতে অংশগ্রহণ করা। যিহোবা এবং তাঁর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেওয়া ব্যতিরেকে কেনই বা আমরা একটা মাস অতিক্রম করতে দেব? এ ছাড়া, নিয়মিতভাবে প্রচার কাজে অংশ নেওয়া আমাদের দক্ষতা এবং কার্যকারিতাকেও বাড়াতে সাহায্য করে।
১৫ ক্ষেত্রের পরিচর্যায় বিশ্বস্ততা দেখানোর আরেকটা উত্তম উপায় হল, প্রহরীদুর্গ পত্রিকা এবং আমাদের রাজ্যের পরিচর্যা-য় পাওয়া পরামর্শগুলোকে কাজে লাগানো। আমরা যখন প্রস্তাবিত বা অন্যান্য বাস্তবধর্মী উপস্থাপনা প্রস্তুত করি এবং ব্যবহার করি, তখন আমরা কি দেখতে পাই না যে আমাদের পরিচর্যা আরও ফলপ্রসূ হয়েছে? আমরা যখন এমন কারো সঙ্গে সাক্ষাৎ করি, যিনি রাজ্যের বার্তার প্রতি আগ্রহ দেখান, তখন আমরা কি অবিলম্বে সেই আগ্রহকে আরও বাড়িয়ে তুলি? আর গৃহ বাইবেল অধ্যয়নের বিষয়ে কী বলা যায়, যা আমরা আগ্রহী ব্যক্তিদের সঙ্গে শুরু করতে পারি? তাদের যত্ন নেওয়ার জন্য আমরা কি নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত? পরিচর্যায় নিজেদের বিশ্বস্ত প্রমাণ করা আমাদেরকে ও সেইসঙ্গে যারা আমাদের কথা শোনে, তাদেরকে জীবনের দিকে পরিচালিত করতে পারে।—১ তীমথিয় ৪:১৫, ১৬.
জগৎ থেকে পৃথক থাকা
১৬, ১৭. কোন কোন উপায়ে আমরা দেখাতে পারি যে, আমরা জগৎ থেকে পৃথক?
১৬ ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনায় যিশু তাঁর অনুসারীদের সম্বন্ধে বলেছিলেন: “আমি তাহাদিগকে তোমার বাক্য দিয়াছি; আর জগৎ তাহাদিগকে দ্বেষ করিয়াছে, কারণ তাহারা জগতের নয় যেমন আমিও জগতের নই। আমি নিবেদন করিতেছি না যে, তুমি তাহাদিগকে জগৎ হইতে লইয়া যাও, কিন্তু তাহাদিগকে সেই পাপাত্মা হইতে রক্ষা কর। তাহারা জগতের নয়, যেমন আমিও জগতের নই।” (যোহন ১৭:১৪-১৬) নিরপেক্ষতা, ধর্মীয় ছুটির দিন ও প্রথা এবং অনৈতিকতার মতো বড় বড় বিচার্য বিষয়ে জগৎ থেকে পৃথক থাকার ব্যাপারে আমরা হয়তো অটল এবং দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। কিন্তু, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয় সম্বন্ধে কী বলা যায়? এমনটা কি হতে পারে যে, এমনকি নিজেদের অজান্তেই আমরা হয়তো জগতের পথগুলোর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়েছি? উদাহরণস্বরূপ, আমরা যদি সতর্ক না থাকি, তা হলে কত সহজেই আমাদের পোশাক-আশাকের ধরন অমার্জিত এবং অনুপযুক্ত হয়ে পড়তে পারে! বিশ্বস্ত হওয়ার জন্য পোশাক-আশাক এবং সাজগোজের ব্যাপারে আমাদের শালীন বা ‘সলজ্জ ও সুবুদ্ধি’ হওয়ার প্রয়োজন। (১ তীমথিয় ২:৯, ১০) হ্যাঁ, “আমরা কোন বিষয়ে কোন ব্যাঘাত জন্মাই না, যেন সেই পরিচর্য্যা-পদ কলঙ্কিত না হয়; কিন্তু ঈশ্বরের পরিচারক বলিয়া সর্ব্ববিষয়ে আপনাদিগকে যোগ্যপাত্র দেখাইতেছি।”—২ করিন্থীয় ৬:৩, ৪.
১৭ যিহোবাকে সম্মান করার ইচ্ছায় আমরা আমাদের মণ্ডলীর সভাগুলোতে মার্জিত পোশাক-আশাক পরি। আমাদের বড় বড় সম্মেলনে মিলিত হওয়ার বেলায়ও একই বিষয় সত্য। আমাদের পোশাক-আশাক উপযুক্ত এবং পরিপাটী হতে হবে। এটা যারা আমাদের লক্ষ করে, তাদের কাছে এক সাক্ষ্য হিসেবে কাজ করে। এমনকি দূতেরাও আমাদের কাজকর্ম লক্ষ করে, যেমনটা তারা পৌল এবং তার খ্রিস্টীয় সহযোগীদের লক্ষ করেছিল। (১ করিন্থীয় ৪:৯) বস্তুত, আমাদের সর্বদা উপযুক্ত পোশাক-আশাক পরা উচিত। কারো কারো কাছে পোশাক-আশাক বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত থাকার বিষয়টাকে ক্ষুদ্র বিষয় বলে মনে হতে পারে কিন্তু ঈশ্বরের চোখে তা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বিশ্বস্ত হওয়ার আশীর্বাদগুলো
১৮, ১৯. বিশ্বস্ত হওয়ার ফলে কোন আশীর্বাদগুলো আসে?
১৮ সত্য খ্রিস্টানদের ‘ঈশ্বরের বহুবিধ অনুগ্রহ-ধনের উত্তম অধ্যক্ষ’ বলা হয়। প্রকৃতপক্ষে, তারা ‘ঈশ্বর-দত্ত শক্তির’ ওপর নির্ভর করে। (১ পিতর ৪:১০, ১১) এ ছাড়া, অধ্যক্ষ হিসেবে আমাদের ওপর আস্থা সহকারে সেই বিষয়গুলোর ভার দেওয়া হয়েছে, যেগুলো আমাদের নয়—ঈশ্বরের অনুগ্রহ বা অযাচিত দয়া ও সেইসঙ্গে পরিচর্যা। নিজেদের উত্তম অধ্যক্ষ প্রমাণ করার জন্য আমরা ঈশ্বরদত্ত শক্তি অর্থাৎ ‘পরাক্রমের উৎকর্ষের’ ওপর নির্ভর করি। (২ করিন্থীয় ৪:৭) ভবিষ্যতে আমাদের ওপর যে-পরীক্ষাই আসুক না কেন, তার মুখোমুখি হওয়ার জন্য আমাদেরকে সাহায্য করতে কতই না উত্তম প্রশিক্ষণ!
১৯ গীতরচক গেয়েছিলেন: “হে সদাপ্রভুর সমস্ত সাধু, তোমরা তাঁহাকে প্রেম কর; সদাপ্রভু বিশ্বস্তদিগকে রক্ষা করেন, কিন্তু গর্ব্বচারীকে অনেক প্রতিফল দেন।” (গীতসংহিতা ৩১:২৩) আসুন আমরা নিজেদের বিশ্বস্ত প্রমাণ করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই, পূর্ণরূপে আস্থা রাখি যে, যিহোবা হলেন, “সমস্ত মনুষ্যের, বিশেষতঃ বিশ্বাসীবর্গের ত্রাণকর্ত্তা।”—১ তীমথিয় ৪:১০.
আপনি কি মনে করতে পারেন?
• কেন আমাদের “ক্ষুদ্রতম বিষয়ে” বিশ্বস্ত হওয়া উচিত?
• কীভাবে আমরা বিশ্বস্ত প্রমাণিত হতে পারি:
সততার ক্ষেত্রে?
পরিচর্যায়?
জগৎ থেকে পৃথক থাকার ক্ষেত্রে?
[২৬ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
ক্ষুদ্র বিষয়ে বিশ্বস্ত হোন, প্রচুর বিষয়েও বিশ্বস্ত হোন
[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
‘সর্ব্ববিষয়ে সদাচরণ করুন’
[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
বিশ্বস্ততা দেখানোর এক উত্তম উপায় হল, ক্ষেত্রের পরিচর্যার জন্য ভালভাবে প্রস্তুত হওয়া
[৩০ পৃষ্ঠার চিত্র]
পোশাক-আশাক এবং সাজগোজের ব্যাপারে শালীন হোন