আপনার বিশ্বাসের গুণগত মান—এখন পরীক্ষিত
“হে আমার ভ্রাতৃগণ, তোমরা যখন নানাবিধ পরীক্ষায় পড়, তখন তাহা সর্ব্বতোভাবে আনন্দের বিষয় জ্ঞান করিও; জানিও, তোমাদের বিশ্বাসের পরীক্ষাসিদ্ধতা ধৈর্য্য সাধন করে।”—যাকোব ১:২, ৩.
১. কেন খ্রীষ্টানদের তাদের বিশ্বাসের পরীক্ষা প্রত্যাশা করা উচিত?
সত্য খ্রীষ্টানেরা কষ্টভোগ করার জন্য উৎসুক নন আর তারা ব্যথা অথবা অবমাননা ভোগ করে আনন্দও পান না। তবুও, তারা যীশুর অর্ধভ্রাতা যাকোবের দ্বারা লিখিত উপরের এই বাক্যগুলিকে মনে রাখেন। খ্রীষ্ট তাঁর শিষ্যদের কাছে এই বিষয়টি পরিষ্কার করেছিলেন যে ঈশ্বরের মানের প্রতি তাদের আনুগত্যের কারণে তারা তাড়না ও অন্যান্য কঠিন পরিস্থিতির প্রত্যাশা করতে পারেন। (মথি ১০:৩৪; ২৪:৯-১৩; যোহন ১৬:৩৩) তৎসত্ত্বেও, এইধরনের পরীক্ষা ফলস্বরূপ আনন্দ নিয়ে আসে। কিভাবে এটি হতে পারে?
২. (ক) কিভাবে আমাদের বিশ্বাসের পরীক্ষা আনন্দ নিয়ে আসতে পারে? (খ) আমাদের ক্ষেত্রে কিভাবে ধৈর্য তার কাজ সম্পূর্ণ করতে পারে?
২ বিশ্বাসের পরীক্ষা অথবা ক্লেশের মধ্যেও যে আমরা আনন্দ খুঁজে পাই তার একটি মুখ্য কারণ হল এগুলি উত্তম ফল উৎপন্ন করতে পারে। যাকোব যেমন বলেন পরীক্ষা ও কঠিন পরিস্থিতির মুখে সহ্য করা “ধৈর্য্য সাধন করে।” এই মূল্যবান খ্রীষ্টীয় গুণাবলি বিকশিত করার দ্বারা আমরা উপকৃত হতে পারি। যাকোব লিখেছিলেন: “ধৈর্য্য সিদ্ধ কার্য্যবিশিষ্ট হউক, যেন তোমরা সিদ্ধ ও সম্পূর্ণ হও, কোন বিষয়ে তোমাদের অভাব না থাকে।” (যাকোব ১:৪) ধৈর্যের কিছু ভূমিকা আছে আর তা হল ‘কার্য্য।’ এর কার্যভারটি হল সমস্ত ক্ষেত্রে আমাদের সম্পূর্ণ করে তোলা, খ্রীষ্টান হিসাবে আমাদের পরিপূর্ণ হয়ে উঠতে সহায়তা করা। তাই কোন অশাস্ত্রীয় পদ্ধতি অবলম্বন করে ক্লেশ দ্রুত লাঘব করার চেষ্টার বিপরীতে সেগুলিকে সম্পূর্ণভাবে ঘটতে দেওয়ার দ্বারা আমাদের বিশ্বাস পরীক্ষিত ও পরিশোধিত হয়ে থাকে। পরিস্থিতির মোকাবিলায় অথবা সহমানবদের সাথে ব্যবহারে যদি আমাদের সহিষ্ণুতা, সহানুভূতি, দয়া অথবা প্রেমের অভাব থাকে, তাহলে সেই ক্ষেত্রে ধৈর্য আমাদের আরও সম্পূর্ণ করে তুলতে পারে। হ্যাঁ, পরিণতিটি হল: পরীক্ষা ধৈর্য উৎপন্ন করে; ধৈর্য খ্রীষ্টীয় গুণাবলির বৃদ্ধি দান করে আর এগুলি আনন্দের এক কারণ হয়ে ওঠে।—১ পিতর ৪:১৪; ২ পিতর ১:৫-৮.
৩. বিশ্বাসের পরীক্ষা অথবা ক্লেশের ভয়ে কেন আমাদের পিছিয়ে যাওয়া উচিত নয়?
৩ বিশ্বাসের পরীক্ষার প্রতি কেন আমাদের ভীত হওয়া বা তার থেকে পিছিয়ে আসার প্রয়োজন নেই সেই সম্বন্ধে প্রেরিত পিতরও জোর দিয়েছিলেন। তিনি লিখেছিলেন: “ইহাতে তোমরা উল্লাস করিতেছ, যদিও অবকাশমতে এখন অল্প কাল নানাবিধ পরীক্ষায় দুঃখার্ত্ত হইতেছ, যেন, যে সুবর্ণ নশ্বর হইলেও অগ্নি দ্বারা পরীক্ষিত হয়, তাহা অপেক্ষাও মহামূল্য তোমাদের বিশ্বাসের পরীক্ষাসিদ্ধতা যীশু খ্রীষ্টের প্রকাশকালে প্রশংসা, গৌরব ও সমাদরজনক হইয়া প্রত্যক্ষ হয়।” (১ পিতর ১:৬, ৭) এই বাক্যগুলি বিশেষত বর্তমান সময়ে উৎসাহজনক কারণ “মহাক্লেশ”—যেটি প্রশংসা, গৌরব, প্রতাপ ও সুরক্ষার সময়—হয়ত কিছুজন যা মনে করেন তার চেয়ে অনেক বেশি নিকটবর্তী আর আমরা যখন বিশ্বাসী হয়েছিলাম সেই সময় থেকে অনেক বেশি নিকটে।—মথি ২৪:২১; রোমীয় ১৩:১১, ১২.
৪. সেই পরীক্ষাগুলি সম্বন্ধে একজন ভাই কেমন অনুভব করেছিলেন যা তিনি ও অন্যান্য অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা ভোগ করেছিলেন?
৪ পূর্ববর্তী প্রবন্ধে, ১৯১৪ সাল থেকে শুরু করে অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশেরা যে পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিলেন আমরা সেই সম্বন্ধে বিবেচনা করেছি। এগুলি কি আনন্দের ভিত্তিস্বরূপ ছিল? এ. এইচ. ম্যাকমিলান অতীতের দিকে তাকিয়ে এই দৃশ্য উপস্থিত করেছিলেন: “আমি সংগঠনের উপর অনেক চরম ক্লেশ আসতে আর যারা এর মধ্যে রয়েছেন তাদের বিশ্বাস পরীক্ষিত হতে দেখেছি। ঈশ্বরের আত্মার সাহায্যে এটি রক্ষা পেয়েছিল এবং ক্রমাগত বিস্তারলাভ করে চলেছিল। একটি নতুন চিন্তাধারার কারণে বিমর্ষ হয়ে পড়ার বিপরীতে শাস্ত্রীয় বিষয়গুলির প্রতি আমাদের বোধগম্যতা স্পষ্ট করার ক্ষেত্রে যিহোবার উপর সহিষ্ণুতাসহ অপেক্ষা করার প্রজ্ঞা আমি দেখেছি। . . . কখনও কখনও আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিগুলির যে সমন্বয়ই করতে হোক না কেন, সেটি মুক্তির মূল্যের মহৎ ব্যবস্থা ও অনন্ত জীবন সম্বন্ধীয় ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাকে পরিবর্তিত করেনি। সুতরাং অপরিপূর্ণ প্রত্যাশা অথবা দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দ্বারা আমাদের বিশ্বাসকে দুর্বল হতে দেওয়ার কোন কারণ আমাদের ছিল না।”—প্রহরীদুর্গ (ইংরাজি), আগস্ট ১৫, ১৯৬৬ পৃষ্ঠা ৫০৪.
৫. (ক) অবশিষ্টাংশের প্রতি ঘটা পরীক্ষার ফলস্বরূপ কোন্ উপকারগুলি এসেছিল? (খ) কেন পরীক্ষার বিষয়টি এখন আমাদের আগ্রহান্বিত করে?
৫ অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা যারা ১৯১৪-১৯ সালের পরীক্ষামূলক সময় থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন, তারা জগৎ ও অনেক বাবিলনীয় ধর্মীয় অভ্যাসগুলির কর্তৃত্বপরায়ণ প্রভাব থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। অবশিষ্টাংশেরা এক পরিচ্ছন্ন ও পরিশোধিত লোক হিসাবে, স্বেচ্ছায় ঈশ্বরের প্রতি প্রশংসাজনক বলিদান অর্পণ করেন আর তারা যে ঈশ্বরের গ্রহণযোগ্য লোক সেই নিশ্চয়তা নিয়ে সম্মুখে অগ্রসর হয়েছিলেন। (যিশাইয় ৫২:১১; ২ করিন্থীয় ৬:১৪-১৮) ঈশ্বরের গৃহে বিচার শুরু হয়েছিল কিন্তু এটি একটি নির্দিষ্ট সময়কালের মধ্যে শেষ হয়ে যায়নি। ঈশ্বরের লোকেদের প্রতি পরীক্ষা ও সূক্ষ্ম বাছাই চলেছে। যারা “বিস্তর লোক” এর অংশ হিসাবে আসন্ন “মহাক্লেশ” থেকে রক্ষা পাওয়ার আশা রাখেন তাদেরও বিশ্বাসের পরীক্ষা হচ্ছে। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১৪) অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশেরা যে পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিলেন ও সেইসাথে অন্যান্য উপায়েও তা ঘটে চলেছে।
আপনি কিভাবে পরীক্ষিত হতে পারেন?
৬. কোন্ ধরনের নিদারুণ পরীক্ষা অনেকে ভোগ করেছেন?
৬ অনেক খ্রীষ্টান সরাসরি প্রত্যক্ষ আক্রমণের মত পরীক্ষাগুলিতে অটল থাকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা সম্বন্ধে চিন্তা করেছেন। তারা এই বিবৃতিটি স্মরণ করেন: “[যিহূদী নেতারা] প্রেরিতদিগকে কাছে ডাকিয়া প্রহার করিলেন, এবং যীশুর নামে কোন কথা কহিতে নিষেধ করিয়া ছাড়িয়া দিলেন। তখন তাঁহারা মহাসভার সম্মুখ হইতে চলিয়া গেলেন, আনন্দ করিতে করিতে গেলেন, কারণ তাঁহারা সেই নামের জন্য অপমানিত হইবার যোগ্যপাত্র গণিত হইয়াছিলেন।” (প্রেরিত ৫:৪০, ৪১) আর ঈশ্বরের লোকেদের আধুনিক ইতিহাস, বিশেষ করে বিশ্বযুদ্ধের সময়ে এই বিষয়টি পরিষ্কার করে যে অনেক যিহোবার সাক্ষীরা প্রকৃতপক্ষে তাড়নাকারীদের হাতে প্রহারিত হয়েছিলেন, এমনকি তার চেয়েও খারাপ অবস্থা অভিজ্ঞতা করেছিলেন।
৭. কিছু আধুনিক দিনের খ্রীষ্টানেরা কতদূর পর্যন্ত তাদের বিশ্বাস প্রদর্শন করেছেন?
৭ খ্রীষ্টানদের তাড়না করার ক্ষেত্রে, জগৎ অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশ ও “অপর মেষদের” (NW) ক্ষেত্রে কোন রকম পার্থক্য করে না। (যোহন ১০:১৬) বছরের পর বছর ধরে উভয় দলের সদস্যেরাই ঈশ্বরের জন্য তাদের প্রেম ও বিশ্বাসের কারণে কারারুদ্ধ হয়েছেন আর এমনকি শহীদ হয়ে নিদারুণভাবে পরীক্ষিত হয়েছেন। তাদের আশা নির্বিশেষে উভয় দলের জন্যই ঈশ্বরের আত্মার প্রয়োজন রয়েছে। (প্রহরীদুর্গ, জুন ১৫, ১৯৯৬, পৃষ্ঠা ৩১-এ দেওয়া বিষয়ের সাথে তুলনা করুন।) ১৯৩০ থেকে ১৯৪০ এর দশকের মধ্যবর্তী সময়ে নাৎসী জার্মানীর অধীনে যিহোবার সেবকদের অনেকে যার অন্তর্ভুক্ত ছিল ছোট সন্তানেরা অসাধারণ বিশ্বাস প্রদর্শন করেছিলেন আর অনেকেই চরমভাবে পরীক্ষিত হয়েছিলেন। অতি সম্প্রতিকালে, বুরুণ্ডি এরিট্রিয়া, ইথিওপিয়া, মালাওই, মোজাম্বিক, রুয়াণ্ডা, সিঙ্গাপুর এবং জাইর প্রভৃতি দেশগুলিতে যিহোবার লোকেরা পরীক্ষা হিসাবে তাড়নার সম্মুখীন হয়েছেন। আর এইপ্রকার পরীক্ষা ঘটেই চলেছে।
৮. কিভাবে আফ্রিকার এক ভায়ের মন্তব্য দেখায় যে প্রহারের মত তাড়না সহ্য করা ছাড়াও আমাদের বিশ্বাসের পরীক্ষা আরও বেশি কিছুকে জড়িত করে থাকে?
৮ কিন্তু, ইতিমধ্যেই যেমন উল্লেখ করা হয়েছে আমাদের বিশ্বাস আরও কৌশলপূর্ণ উপায়ে পরীক্ষিত হচ্ছে। কোন কোন পরীক্ষা সরাসরি আসে না আর তা সহজে শনাক্ত করাও যায় না। নিম্নলিখিত এই কয়েকটি ক্ষেত্রে আপনি কিভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবেন সেই বিষয়ে চিন্তা করুন। অ্যাঙ্গোলায়, দশ সন্তানসহ একজন ভাই এমন একটি মণ্ডলীতে ছিলেন যেটির সাথে কিছু সময়ের জন্য সমস্ত দায়িত্বশীল ভাইদের যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। পরে অন্যদের পক্ষে মণ্ডলীটি পরিদর্শন করা সম্ভব হয়েছিল। তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে তিনি কিভাবে তার পরিবারের প্রতিপালন করেছিলেন। উত্তর দেওয়া তার পক্ষে সহজ ছিল না, তিনি শুধু এইটুকুই বলেছিলেন যে পরিস্থিতি খুবই কঠিন ছিল। তিনি কি তার সন্তানদের জন্য দিনে অন্তত একবার খাবার যোগাতে পেরেছিলেন? তিনি উত্তর দিয়েছিলেন: “প্রায়ই নয়। আমাদের যা আছে তার দ্বারাই আমরা চলতে শিখেছিলাম।” তারপর অত্যন্ত দৃঢ়কণ্ঠে তিনি বলেছিলেন: “কিন্তু এই শেষ কালে এটিই কি আমরা আশা করি না।?” জগতে এইধরনের বিশ্বাস লক্ষণীয় কিন্তু বিশ্বস্ত খ্রীষ্টানদের কাছে এটি অস্বাভাবিক কিছু নয়, কারণ তাদের দৃঢ় প্রত্যয় আছে যে রাজ্যের প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ হবে।
৯. ১ করিন্থীয় ১১:৩ পদ অনুসারে আমরা কিভাবে পরীক্ষিত হচ্ছি?
৯ ঈশতান্ত্রিক ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলি জন্য বিরাট জনতা পরীক্ষিত হচ্ছেন। জগদ্ব্যাপী খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী ঐশিক নীতি ও ঈশতান্ত্রিক মান দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। এর অর্থ হল সর্বপ্রথমে যীশুকে নেতা হিসাবে শনাক্ত করা, যিনি মণ্ডলীর মস্তক হিসাবে অভিষিক্ত। (১ করিন্থীয় ১১:৩) তাঁর এবং তাঁর পিতার প্রতি স্বেচ্ছাপূর্বক বশীভূত হওয়া, ঐক্যবদ্ধভাবে যিহোবার ইচ্ছা সম্পন্ন করার সাথে সম্পর্কিত ঈশতান্ত্রিক নিযুক্তি ও সিদ্ধান্তগুলির প্রতি আমাদের বিশ্বাস দ্বারা প্রদর্শিত হয়ে থাকে। এছাড়াও প্রত্যেকটি স্থানীয় মণ্ডলীতে সেই পুরুষেরা আছেন যারা নেতৃত্ব নেওয়ার জন্য নিযুক্ত। তারা অসিদ্ধ মানুষ যাদের ভুলভ্রান্তিগুলি আমরা হয়ত খুব সহজেই দেখতে পাই; তবুও এইধরনের অধ্যক্ষদের শ্রদ্ধা করা ও তাদের বশীভূত হওয়ার জন্য আমাদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। (ইব্রীয় ১৩:৭, ১৭) আপনি কি কখনও কখনও এটিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বলে মনে করেন? আপনার জন্য এটি কি প্রকৃতই একটি পরীক্ষা? যদি তাই হয়, তাহলে আপনি কি আপনার বিশ্বাসের এই পরীক্ষা থেকে উপকৃত হচ্ছেন?
১০. ক্ষেত্রের পরিচর্যার সাথে সম্পর্কিত কোন্ পরীক্ষার সম্মুখীন আমরা হই?
১০ ক্ষেত্রের পরিচর্যায় নিয়মিতভাবে রত থাকার সুযোগ ও প্রয়োজনীয়তার সাথে সম্বন্ধযুক্ত কারণেও আমরা পরীক্ষিত হয়ে থাকি। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য আমরা অবশ্যই উপলব্ধি করি যে পরিচর্যায় এক পূর্ণ অংশ থাকা কেবল এক ন্যূনতম বা নামমাত্র প্রচার করার চেয়েও আরও বেশি কিছুকে জড়িত করে। দরিদ্রা বিধবা যিনি তার সর্বস্ব দিয়েছিলেন তার সম্বন্ধে যীশুর অনুমোদনীয় মন্তব্যের বিষয়ে স্মরণ করুন। (মার্ক ১২:৪১-৪৪) আমরা হয়ত নিজেদের জিজ্ঞাসা করতে পারি ‘আমার ক্ষেত্রের পরিচর্যার বিষয়ে আমি কি নিজেকে অনুরূপভাবে দিচ্ছি?’ আমাদের সকলের সবসময় যিহোবার সাক্ষী হতে হবে, আমাদের দীপ্তি উজ্জ্বল করার জন্য প্রতিটি সুযোগে প্রস্তুত থাকতে হবে।—মথি ৫:১৬.
১১. কিভাবে বোধগম্যতার পরিবর্তন ও অভ্যাস সম্বন্ধীয় পরামর্শ এক পরীক্ষাস্বরূপ হতে পারে?
১১ বাইবেল সত্যের উপর বিকীর্ণ বৃদ্ধিরত আলো ও বিশ্বস্ত বুদ্ধিমান দাসশ্রেণী দ্বারা সরবরাহকৃত পরামর্শের প্রতি আমাদের উপলব্ধিবোধের মাত্রার সাথে সম্পর্কিত আরেকটি বিশ্বাসের পরীক্ষার সম্মুখীন হয়ত আমরা হতে পারি। (মথি ২৪:৪৫) কখনও কখনও এটি ব্যক্তিগত অভ্যাসের ক্ষেত্রে সমন্বয় সাধনের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয় যেমন যখন এই বিষয়টি পরিষ্কার করা হয়েছিল যে যারা তামাক ব্যবহার করেন, মণ্ডলীতে থাকতে হলে তাদের তা পরিত্যাগ করতে হবে।a (২ করিন্থীয় ৭:১) অথবা পরীক্ষাটি হয়ত সংগীত বা অন্যধরনের আমোদপ্রমোদের বিষয়ে আমাদের রুচিকে পরিবর্তিত করার প্রয়োজনীয়তাকে মেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে হতে পারে।b অর্পিত পরামর্শটি কতখানি সঠিক আমরা কি সেই বিষয়ে সন্দেহ করব? অথবা আমরা কি আমাদের চিন্তাধারাকে পরিচালিত করতে এবং খ্রীষ্টীয় ব্যক্তিত্ব পরিধানে আমাদের সাহায্য করার জন্য ঈশ্বরের আত্মাকে সুযোগ দেব?—ইফিষীয় ৪:২০-২৪; ৫:৩-৫.
১২. একজনের বাপ্তিস্মিত হওয়ার পর বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার জন্য কী প্রয়োজন?
১২ দশকগুলি ধরে, বিরাট জনতার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে আর তাদের বাপ্তিস্মের পরে তারা যিহোবার সাথে তাদের সম্পর্ক ক্রমাগত দৃঢ়তর করে চলেছেন। এটি খ্রীষ্টীয় সম্মেলনে উপস্থিত হওয়া, কিংডম হলের কিছু সভায় আসা অথবা মাঝে মাঝে ক্ষেত্রের পরিচর্যায় অংশ নেওয়ার চেয়ে আরও বেশি কিছুকে জড়িত করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়: একজন ব্যক্তি হয়ত শারীরিকভাবে মিথ্যা ধর্মের বিশ্ব সাম্রাজ্য, মহতী বাবিলের বাইরে আছেন কিন্তু তিনি কি প্রকৃতই এটিকে পিছনে পরিত্যাগ করে এসেছেন? তিনি কি এখনও সেই বিষয়গুলির প্রতি আসক্ত যা মহতী বাবিলের মনোভাবকে প্রতিফলিত করে—যে মনোভাব ঈশ্বরের ধার্মিক মানকে অবজ্ঞা করে? তিনি কি নৈতিকতা ও বৈবাহিক বিশ্বস্ততাকে হাল্কাভাবে নেন? তিনি কি ব্যক্তিগত ও বস্তুগত বিষয়কে আধ্যাত্মিক আগ্রহের চেয়ে বেশি মূল্য দেন? হ্যাঁ, তিনি কি জগৎ থেকে নিষ্কলঙ্ক রয়েছেন?—যাকোব ১:২৭.
পরীক্ষিত বিশ্বাসের উপকার
১৩, ১৪. সত্য উপাসনার পথে চলা শুরু করার পর অনেকে কী করেছেন?
১৩ আমরা যদি প্রকৃতই মহতী বাবিল থেকে পালিয়ে ও জগৎ থেকে বের হয়ে এসেছি, তাহলে আসুন আমরা যেন পিছনের বিষয়গুলির দিকে ফিরে না তাকাই। আমরা যে কেউ লূক ৯:৬২ পদে দেওয়া নীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে পিছনের দিকে ফিরে তাকালে ঈশ্বরের রাজ্যের একজন প্রজা হওয়ার সুযোগ হারাতে পারি। যীশু বলেছিলেন: “যে কোন ব্যক্তি লাঙ্গলে হাত দিয়া পিছনে ফিরিয়া চায়, সে ঈশ্বরের রাজ্যের উপযোগী নয়।”
১৪ কিন্তু কিছুজন যারা পূর্বে খ্রীষ্টান হয়েছিলেন তারা তখনও পর্যন্ত এই বিধিব্যবস্থার প্রথানুসারে নিজেদের চলতে দিয়েছিলেন। তারা জগতের মনোভাবকে প্রতিহত করেননি। (২ পিতর ২:২০-২২) জাগতিক বিক্ষেপগুলি তাদের আগ্রহ ও সময়কে শোষণ করে নিয়েছে আর এভাবে তাদের অগ্রগতিকে ব্যাহত করেছে। ঈশ্বরের রাজ্য ও ধার্মিকতার প্রতি তাদের মন ও হৃদয়কে দৃঢ়ভাবে নিবদ্ধ রাখার পরিবর্তে এগুলি জীবনে প্রথম স্থানে রেখে তারা বস্তুগত লক্ষ্যগুলি অনুধাবন করার জন্য অন্যদিকে ফিরেছিলেন। যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা তাদের দুর্বল বিশ্বাস ও কদুষ্ণ অবস্থাকে স্বীকার করার জন্য পরিচালিত হচ্ছেন ও ঐশিক পরামর্শ অনুসরণ করার দ্বারা তাদের জীবনধারা পরিবর্তন করছেন, তারা যিহোবা ও তাঁর সংগঠনের সাথে মূল্যবান সম্পর্ক হারানোর সম্ভাবনার মধ্যে রয়েছেন।—প্রকাশিত বাক্য ৩:১৫-১৯.
১৫. ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য থাকার জন্য কী করা প্রয়োজন?
১৫ আমাদের অনুমোদনযোগ্য অবস্থায় থাকা ও দ্রুত-সন্নিকট মহাক্লেশে রক্ষা পাওয়া, নিজেদের পরিচ্ছন্ন রাখা ও আমাদের বস্ত্র ‘মেষশাবকের রক্তে ধৌত করার’ উপর নির্ভর করে। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯-১৪; ১ করিন্থীয় ৬:১১) যদি আমরা ঈশ্বরের সম্মুখে এক পরিচ্ছন্ন ধার্মিক মান বজায় না রাখি, আমাদের পবিত্র সেবা গ্রহণযোগ্য হবে না। নিশ্চিতভাবেই, আমাদের প্রত্যেকের উপলব্ধি করা উচিত যে বিশ্বাসের পরীক্ষিত গুণগত মান আমাদের ধৈর্য বজায় রাখতে আর আমাদেরকে ঈশ্বরের অসন্তুষ্টি ভোগ করা এড়াতে সাহায্য করবে।
১৬. কিভাবে মিথ্যা হয়ত আমাদের বিশ্বাসের এক পরীক্ষা হিসাবে প্রমাণিত হতে পারে?
১৬ কখনও কখনও সংবাদ মাধ্যম ও জাগতিক কর্তৃপক্ষ আমাদের খ্রীষ্টীয় বিশ্বাস ও জীবনধারাকে ভুলভাবে উপস্থাপিত করে ঈশ্বরের লোকেদের সম্বন্ধে মিথ্যা উক্তি করে থাকে। এটি আমাদের আশ্চর্য করে না কারণ যীশু স্পষ্টভাবে দেখান যে ‘জগৎ তাহাদিগকে দ্বেষ করিবে, কারণ তাহারা জগতের নয়।’ (যোহন ১৭:১৪) যারা আমাদের আতঙ্কিত ও মনোভঙ্গ করার জন্য শয়তানের দ্বারা অন্ধ এবং আমাদের সুসমাচার সম্বন্ধে লজ্জিত করাতে চায়, তাদের কি আমরা অনুমোদন করব? সত্য সম্বন্ধে মিথ্যা রটনাকে আমরা কি আমাদের সভায় উপস্থিতি ও প্রচার কাজের উপর প্রভাব বিস্তার করতে দেব? অথবা আমরা কি যিহোবা ও তাঁর রাজ্য সম্বন্ধীয় সত্য ঘোষণা করার ক্ষেত্রে অটলভাবে দাঁড়িয়ে থাকব, সাহসী হব ও যে কোন সময়ের চেয়ে আরও বেশি স্থিরসংকল্প হব?
১৭. ক্রমাগত বিশ্বাস প্রদর্শন করে চলার ক্ষেত্রে কোন্ আশ্বাস আমাদের উদ্দীপিত করতে পারে?
১৭ বাইবেলের পরিপূর্ণ ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে আমরা শেষ সময়ের গভীরে বাস করছি। এক ধার্মিক নতুন জগৎ সম্বন্ধে আমাদের বাইবেল-ভিত্তিক প্রত্যাশাগুলি নিশ্চিতভাবেই এক আনন্দপূর্ণ বাস্তবে পরিণত হবে। যতদিন পর্যন্ত না সেই দিন আসে আমরা সকলে যেন ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি অকম্পনীয় বিশ্বাস অনুশীলন করি আর ক্ষান্ত না হয়ে রাজ্য সম্বন্ধীয় সুসমাচার জগদ্ব্যাপী প্রচার করার দ্বারা আমাদের বিশ্বাসের প্রমাণ দিই। প্রতি সপ্তাহে যে সহস্রাধিক নতুন শিষ্যেরা বাপ্তিস্মিত হচ্ছেন তাদের কথা চিন্তা করুন। আমাদের এই বিষয়টি উপলব্ধি করার জন্য এটিই কি যথেষ্ট কারণ নয় যে তাঁর বিচারাজ্ঞা নিষ্পন্ন করার ক্ষেত্রে যিহোবার সহিষ্ণুতা আরও অনেক লোকেদের পরিত্রাণের কারণ হতে পারে? আমরা কি আনন্দিত নই যে ঈশ্বর এই জীবনরক্ষাকারী রাজ্য প্রচার কাজকে ক্রমাগত চলতে অনুমতি দিয়েছেন? আর আমরা কি উল্লসিত নই যে লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিরা সত্য গ্রহণ করেছেন ও তাদের বিশ্বাসকে প্রদর্শন করছেন?
১৮. যিহোবাকে সেবা করা সম্বন্ধে আপনার স্থিরসংকল্প কী?
১৮ বর্তমানে ঘটতে থাকা আমাদের এই বিশ্বাসের পরীক্ষা কতদিন চলতে থাকবে আমরা তা জানি না। কিন্তু এই বিষয়টি নিশ্চিত যে: বর্তমান দুষ্ট আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর বিচারের জন্য যিহোবার নির্ধারিত একটি দিন রয়েছে। এর মধ্যে আসুন আমরা আমাদের বিশ্বাসের সিদ্ধিকর্তা, যীশুর দ্বারা প্রদর্শিত পরীক্ষিত বিশ্বাসের অত্যুজ্জ্বল গুণগত মানকে অনুকরণ করতে স্থিরসংকল্প হই। আর আমরা বয়স্ক অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশ ও অন্যান্যদের উদাহরণ অনুসরণ করি যারা সাহসের সাথে আমাদের মধ্যে সেবা করে চলেছেন।
১৯. কী এই জগৎকে জয় করবে বলে আপনি নিশ্চিত হতে পারেন?
১৯ ক্ষান্ত না হয়ে আকাশের মধ্যপথে উড়ন্ত দূতের সাথে সহযোগীভাবে প্রত্যেক জাতি ও বংশ ও ভাষা ও প্রজাবৃন্দের কাছে অনন্তকালীন সুসমাচার ঘোষণা করার জন্য আমাদের স্থিরসংকল্পবদ্ধ হওয়া উচিত। দূতের ঘোষণাটি তাদের শুনতে দিন: “ঈশ্বরকে ভয় কর ও তাঁহাকে গৌরব প্রদান কর, কেননা তাঁহার বিচার-সময় উপস্থিত।” (প্রকাশিত বাক্য ১৪:৬, ৭) সেই ঐশিক বিচার যখন সম্পাদন করা হবে আমাদের বিশ্বাসের পরীক্ষিত গুণগত মানের পরিণতি কী হবে? বর্তমান বিধিব্যবস্থা থেকে ঈশ্বরের ধার্মিক নতুন জগতে উদ্ধার—এটি কি এক গৌরবজনক বিজয়োৎসব নয়? আমাদের বিশ্বাসের পরীক্ষায় সহিষ্ণু হওয়ার দ্বারা আমরা বলতে সক্ষম হব, যেভাবে প্রেরিত যোহন বলেছিলেন: “যে জয় জগৎকে জয় করিয়াছে, তাহা এই, আমাদের বিশ্বাস।”—১ যোহন ৫:৪.
[পাদটীকাগুলো]
a ১৯৭৩ সালের প্রহরীদুর্গ (ইংরাজি), জুন ১, পৃষ্ঠা ৩৩৬-৪৩ এবং জুলাই, ১ পৃষ্ঠা ৪০৯-১১ দেখুন।
b ১৯৮৩ সালের প্রহরীদুর্গ (ইংরাজি), জুলাই ১৫ পৃষ্ঠা ২৭-৩১ দেখুন।
আপনি কি স্মরণ করতে পারেন?
◻ কিভাবে আমাদের বিশ্বাসের পরীক্ষা আনন্দের কারণ হতে পারে?
◻ আমাদের বিশ্বাসের কিছু পরীক্ষাগুলি কী যা হয়ত সহজে শনাক্ত করা যায় না?
◻ আমাদের বিশ্বাসের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার দ্বারা আমরা কিভাবে স্থায়ী উপকার লাভ করতে পারি?
[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
সেই সময়, যখন এ. এইচ. ম্যাকমিলান (সামনে বাম দিকে) ও ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটির আধিকারিকেরা অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ হয়েছিলেন
১৯২৮ সালে ডেট্রোইট মিশিগান সম্মেলনে তিনি একজন প্রতিনিধি ছিলেন
তার জীবনের অন্তিম বছরগুলিতেও ভাই ম্যাকমিলান বিশ্বাস প্রদর্শন করেছিলেন
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
এই পরিবারের মত, আফ্রিকার অনেক খ্রীষ্টান বিশ্বাসের পরীক্ষিত গুণগত মান প্রদর্শন করেছেন