খ্রীষ্টীয় নৈতিকতা শিখুন ও শিক্ষা দিন
“ভাল, তুমি যে পরকে শিক্ষা দিতেছ, তুমি কি আপনাকে শিক্ষা দেও না?”—রোমীয় ২:২১.
১, ২. বাইবেল অধ্যয়ন করতে চাওয়ার পিছনে আপনার কী কী কারণ আছে?
ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করার অনেক কারণ আপনার রয়েছে। সম্ভবত এর মধ্যে যে-তথ্যগুলো রয়েছে—লোকেদের সম্বন্ধে, ঘটনা, জায়গা ও অন্যান্য বিষয়ে আপনি জানতে চান। আপনি ত্রিত্ব বা নরকাগ্নির শিক্ষার মতো ধর্মীয় ভুলভ্রান্তিগুলোর বিরুদ্ধে মতবাদসংক্রান্ত সত্য জানতে চান। (যোহন ৮:৩২) এ ছাড়া, যিহোবাকে আপনার আরও ভালভাবে জানা উচিত, যাতে আপনি আরও বেশি তাঁর মতো হতে পারেন এবং ন্যায্যভাবে তাঁর পথে চলতে পারেন।—১ রাজাবলি ১৫:৪, ৫.
২ ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করার পিছনে একটা সম্পর্কযুক্ত ও তাৎপর্যপূর্ণ কারণ হল অন্যদের—আপনার প্রিয়জন, পরিচিত ব্যক্তি ও এমনকি যাদের হয়তো আপনি এখনও চেনেন না তাদের—শিক্ষা দেওয়ার জন্য নিজেকে সজ্জিত করা। এটা সত্য খ্রীষ্টানদের জন্য বেছে নেওয়ার মতো কোন বিষয় নয়। যীশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “অতএব তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর, . . . আমি তোমাদিগকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিয়াছি সে সমস্ত পালন করিতে তাহাদিগকে শিক্ষা দেও।”—মথি ২৮:১৯, ২০.
৩, ৪. যীশুর আদেশ অনুযায়ী শিক্ষা দেওয়া কেন আপনার পক্ষে সম্মানীয়?
৩ অন্যদের শিক্ষা দেওয়ার ইচ্ছায় বাইবেল অধ্যয়ন করা সম্মানীয় এবং স্থায়ী পরিতৃপ্তির এক উৎস হতে পারে। শিক্ষা দেওয়া অনেক দিন ধরেই এক সম্মানীয় পেশা হিসেবে গণিত হয়ে এসেছে। এনকার্টা এনসাইক্লোপিডিয়া বলে: “যিহুদিদের মধ্যে অনেক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরা শিক্ষকদের পরিত্রাণের নির্দেশক হিসেবে দেখে থাকে আর ছেলেমেয়েদের পরামর্শ দেয়, যাতে তারা তাদের শিক্ষকদের এমনকি বাবামার চেয়েও বেশি সম্মান দেখায়।” বাইবেল অধ্যয়ন করে প্রথমে নিজেকে ও পরে অন্যদের শিক্ষা দেওয়া বিশেষভাবে খ্রীষ্টানদের জন্য সম্মানীয়।
৪ “অন্য যেকোন পেশার চেয়ে বেশি লোক শিক্ষকতা করেন। সারা পৃথিবীতে প্রায় ৪ কোটি ৮০ লক্ষ নারী-পুরুষ শিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন।” (দ্যা ওয়ার্ল্ড বুক এনসাইক্লোপিডিয়া) ছেলেমেয়েদের শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব শিক্ষকদের ওপর অর্পণ করা হয় এবং তারা তাদের ভবিষ্যতের ওপর প্রভাব ফেলতে পারেন। আপনি যখন অন্যদের শিক্ষা দেওয়ার বিষয়ে যীশুর আদেশের বাধ্য হন, তখন এর প্রভাব এমনকি আরও বেশি সুদূরপ্রসারী হয়; আপনার শিক্ষা তাদের অনন্ত ভবিষ্যতের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। প্রেরিত পৌল এই বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছিলেন, যখন তিনি তীমথিয়কে অনুরোধ করেছিলেন: “আপনার বিষয়ে ও তোমার শিক্ষার বিষয়ে সাবধান হও, এ সকলে স্থির থাক; কেননা তাহা করিলে তুমি আপনাকে ও যাহারা তোমার কথা শুনে, তাহাদিগকেও পরিত্রাণ করিবে।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (১ তীমথিয় ৪:১৬) হ্যাঁ, আপনার শিক্ষার সঙ্গে পরিত্রাণ জড়িত।
৫. কেন খ্রীষ্টীয় শিক্ষা সবচেয়ে উৎকৃষ্ট?
৫ নিজেকে ও এরপর অন্যদের শিক্ষা দেওয়ার বিষয়টা সর্বোচ্চ উৎস নিখিলবিশ্বের সার্বভৌম ব্যক্তির কাছ থেকে এসেছে ও পরিচালিত হয়েছে। এই বিষয়টাই শিক্ষার এই ক্ষেত্রকে জগতের অন্য যেকোন শিক্ষার চেয়ে আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলে, তা সে মৌলিক বিষয়ই হোক, চাকরির দক্ষতার ক্ষেত্রেই হোক বা এমনকি বিশেষ কোন চিকিৎসাগত শিক্ষাই হোক। খ্রীষ্টীয় শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত হল যে, একজন ছাত্র যেন ব্যক্তিগতভাবে ঈশ্বরের পুত্র খ্রীষ্ট যীশুকে অনুকরণ করে এবং অন্যদেরও একই বিষয় করতে শেখায়।—যোহন ১৫:১০.
কেন নিজেকে শিক্ষা দেবেন?
৬, ৭. (ক) কেন আমাদের প্রথমে নিজেদের শিক্ষা দেওয়া উচিত? (খ) কোন্ অর্থে প্রথম শতাব্দীর যিহুদিরা শিক্ষক হিসেবে ব্যর্থ হয়েছিল?
৬ কেন বলা হয় যে, আমাদের প্রথমে নিজেকে শিক্ষা দিতে হবে? আমরা যদি প্রথমে নিজেদের শিক্ষা না দিই, তা হলে অন্যদের সঠিকভাবে শিক্ষা দিতে পারব না। পৌল এক আগ্রহজনক কথা বলে এই বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছিলেন যা সেই সময়ের যিহুদিদের জন্য বিরাট অর্থ রেখেছিল আর তা আজকের খ্রীষ্টানদের জন্যও এক গুরুত্বপূর্ণ অর্থ রাখে। পৌল জিজ্ঞেস করেছিলেন: “ভাল, তুমি যে পরকে শিক্ষা দিতেছ, তুমি কি আপনাকে শিক্ষা দেও না? তুমি যে চুরি করিতে নাই বলিয়া প্রচার করিতেছ, তুমি কি চুরি করিতেছ? তুমি যে ব্যভিচার করিতে নাই বলিতেছ, তুমি কি ব্যভিচার করিতেছ? তুমি যে প্রতিমা ঘৃণা করিতেছ, তুমি কি দেবালয় লুট করিতেছ? তুমি যে ব্যবস্থার শ্লাঘা করিতেছ, তুমি কি ব্যবস্থালঙ্ঘন দ্বারা ঈশ্বরের অনাদর করিতেছ?”—রোমীয় ২:২১-২৩.
৭ উত্তর চাওয়া হয় না এমন দুটো প্রশ্ন করে পৌল দুটো অন্যায়ের কথা উল্লেখ করেছিলেন, যে-বিষয়ে দশ আজ্ঞায় সরাসরি উল্লেখ করা হয়েছে: চুরি কর না এবং ব্যভিচার কর না। (যাত্রাপুস্তক ২০:১৪, ১৫) তাদের কাছে ঈশ্বরের ব্যবস্থা ছিল বলে পৌলের দিনের কিছু যিহুদিরা অহংকার করেছিল। তারা ‘ব্যবস্থা হইতে শিক্ষাপ্রাপ্ত হইয়াছিল এবং নিশ্চয়ই বুঝিয়াছিল যে, তাহারা অন্ধদের পথ-দর্শক, অন্ধকারবাসীদের দীপ্তি, শিশুদের শিক্ষক।’ (রোমীয় ২:১৭-২০) কিন্তু, এদের মধ্যে কেউ কেউ ভণ্ড ছিল কারণ তারা গোপনে চুরি বা ব্যভিচার করেছিল। এটা ব্যবস্থা ও এর উদ্ভাবক যিনি স্বর্গে আছেন, উভয়েরই অসম্মান করা হয়। আপনি বুঝতে পারছেন যে, তারা অন্যদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য একেবারেই যোগ্য ছিল না; এমনকি তারা নিজেরাও শিক্ষা নিচ্ছিল না।
৮. পৌলের দিনের কিছু যিহুদিরা হয়তো কীভাবে ‘দেবালয় লুট করিয়াছিল’?
৮ পৌল মন্দির লুট করার বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন। কিছু যিহুদিরা কি সত্যিই তা করছিল? পৌল আসলে কী বোঝাতে চেয়েছিলেন? শাস্ত্রপদের এই সীমিত তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা একেবারে নিশ্চিত করে বলতে পারি না যে, কিছু যিহুদিরা আসলে কীভাবে ‘দেবালয় লুট করিয়াছিল।’ আগে ইফিষ শহরের সম্পাদক ঘোষণা করেছিলেন যে, পৌলের সহকারীরা ‘মন্দির-অপহারক’ নয়, যার থেকে বোঝা যায় যে, অন্তত কিছু লোকেরা ভেবেছিল যে, যিহুদিরা সেই অভিযোগের জন্য দায়ী। (প্রেরিত ১৯:২৯-৩৭) তারা কি আক্রমণকারী বা ধর্মীয় গোঁড়া ব্যক্তিদের দ্বারা পৌত্তলিক মন্দির থেকে লুট করে আনা কোন মূল্যবান বস্তু ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করছিল বা সেগুলো দিয়ে ব্যাবসা করছিল? ঈশ্বরের ব্যবস্থা অনুসারে, সোনা ও রুপোর প্রতিমাগুলোকে আসলে ধ্বংস করে ফেলা উচিত ছিল, সেগুলো ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য ছিল না। (দ্বিতীয় বিবরণ ৭:২৫)a তাই পৌল হয়তো পরোক্ষভাবে সেই যিহুদিদের প্রতি বলছিলেন, যারা ঈশ্বরের আদেশকে অমান্য করেছিল এবং পৌত্তলিক মন্দির থেকে আনা জিনিসপত্র ব্যবহার করছিল বা নিজেরা লাভবান হচ্ছিল।
৯. যিরূশালেম মন্দিরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোন্ অন্যায় অভ্যাসগুলো মন্দির লুট করার সমান ছিল?
৯ অন্যদিকে জোসেফাস রোমে ঘটিত একটা কলঙ্কজনক বিষয়ের কথা বলেছিলেন, যা চারজন যিহুদির কারণে ঘটেছিল এবং যাদের নেতা ছিল ব্যবস্থার একজন শিক্ষক। ওই চার জন ব্যক্তি যিহুদি ধর্মে ধর্মান্তরিত এক রোমীয় মহিলাকে যিরূশালেম মন্দিরের জন্য সোনা এবং অন্যান্য মূল্যবান বিষয়গুলো দান করতে রাজি করিয়েছিল। মহিলার কাছ থেকে একবার সেগুলো পাওয়ার পর, তারা সেগুলো নিজেদের জন্য খরচ করেছিল, যা মন্দির লুট করারই সমান।b অন্যেরা খুঁতযুক্ত বলি উৎসর্গ করে এবং প্রাঙ্গণে লোভী ব্যাবসাবাণিজ্য করে মন্দিরকে “দস্যুগণের গহ্বর” করার মাধ্যমে ঈশ্বরের মন্দির লুট করছিল।—মথি ২১:১২, ১৩; মালাখি ১:১২-১৪; ৩:৮, ৯.
খ্রীষ্টীয় নৈতিকতা শিক্ষা দিন
১০. রোমীয় ২:২১-২৩ পদে লেখা পৌলের কথাগুলোর কোন্ মূল বিষয়টা আমাদের উপেক্ষা করা উচিত নয়?
১০ প্রথম শতাব্দীতে প্রচলিত অভ্যাসগুলো যেমন চুরি, ব্যভিচার ও মন্দির লুটের মতো যে-বিষয়গুলোর কথাই পৌল পরোক্ষভাবে বলুন না কেন, আসুন আমরা যেন তার কথার মূল বিষয়টা উপেক্ষা না করি। তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন: “ভাল, তুমি যে পরকে শিক্ষা দিতেছ, তুমি কি আপনাকে শিক্ষা দেও না?” এটা লক্ষণীয় যে, পৌল যে-উদাহরণগুলোর কথা তুলেছিলেন সেগুলোর সঙ্গে নৈতিকতা জড়িত ছিল। এখানে প্রেরিত বাইবেলের বিভিন্ন মতবাদ বা ইতিহাসের ওপর জোর দেননি। নিজেকে এবং অন্যদের শিক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে পৌল যে-বিষয় উল্লেখ করেছিলেন, তার সঙ্গে খ্রীষ্টীয় নৈতিকতা জড়িত ছিল।
১১. ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করার সময় কেন আপনার খ্রীষ্টীয় নৈতিকতার দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত?
১১ আমাদের জন্য রোমীয় ২:২১-২৩ পদের শিক্ষা কাজে লাগানোর মানে হল, ঈশ্বরের বাক্য থেকে খ্রীষ্টীয় নৈতিকতা শেখা, আমরা যা শিখি তার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করা এবং এরপর অন্যদেরও একই বিষয় করতে শিক্ষা দেওয়া। তাই, বাইবেল অধ্যয়ন করার সময় যিহোবার মানগুলো সম্বন্ধে যে-ইঙ্গিত পাওয়া যায় সেই বিষয়ে সতর্ক থাকুন, যেটা প্রকৃত খ্রীষ্টীয় নৈতিকতার ভিত্তি। বাইবেলে আপনি যে-পরামর্শ ও শিক্ষাগুলো খুঁজে পান, সেই বিষয়ে ধ্যান করুন। এরপর আপনি যা শিখেছেন, তা সাহসের সঙ্গে কাজে লাগান। আর তা করার জন্য সাহস ও সেইসঙ্গে দৃঢ়সংকল্পের দরকার। কোন একটা নির্দিষ্ট বিষয়ে যে-কারণে খ্রীষ্টীয় নৈতিকতাকে তুচ্ছ করতে হয়েছে বা তা করার দরকার পড়েছে, সেই বিষয়ে অসিদ্ধ মানুষের পক্ষে অজুহাত বা যুক্তি গড়ে তোলা খুবই সহজ। সম্ভবত যিহুদিরা যাদের বিষয়ে পৌল উল্লেখ করেছেন, তারা হয়তো কোন বিষয়কে ব্যাখ্যা করার জন্য ধূর্ত যুক্তি দেখানোয় বা অন্যদের ভ্রান্ত করায় পটু ছিল। কিন্তু পৌলের কথাগুলো দেখায় যে, খ্রীষ্টীয় নৈতিকতা ছোট করে দেখার মতো বা ব্যক্তিগত পছন্দ অনুযায়ী অগ্রাহ্য করার মতো কোন বিষয় নয়।
১২. কীভাবে ভাল আচরণ বা খারাপ আচরণ যিহোবা ঈশ্বরের ওপর প্রভাব ফেলে আর এই বিষয়টা মনে রাখা কেন সাহায্যকারী?
১২ বাইবেলে আপনি যে-নৈতিকতা খুঁজে পান, সেই সম্বন্ধে শেখার ও তা কাজে লাগানোর একটা মূল কারণের ওপর প্রেরিত জোর দিয়েছিলেন। যিহুদিদের অন্যায় আচরণ যিহোবার ওপর প্রভাব ফেলেছিল: “তুমি যে ব্যবস্থার শ্লাঘা করিতেছ, তুমি কি ব্যবস্থালঙ্ঘন দ্বারা ঈশ্বরের অনাদর করিতেছ? কেননা যেমন লিখিত আছে, সেইরূপ ‘তোমাদের হইতে জাতিগণের মধ্যে ঈশ্বরের নাম নিন্দিত হইতেছে’।” (রোমীয় ২:২৩, ২৪) এটা আজও প্রযোজ্য যে, আমরা যদি খ্রীষ্টীয় নৈতিকতাকে তুচ্ছ করি, তা হলে আমরা এর উৎসের অসম্মান করি। অন্যদিকে, আমরা যদি ঈশ্বরের মানগুলোকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখি, তা হলে এটা তাঁর ওপর ভাল প্রভাব ফেলে, তাঁকে সমাদর করা হয়। (যিশাইয় ৫২:৫; যিহিষ্কেল ৩৬:২০) এই বিষয়টা জানা আপনার সংকল্পকে দৃঢ় করতে পারে যদি আপনি এমন প্রলোভন বা পরিস্থিতির মুখোমুখি হন, যেখানে খ্রীষ্টীয় নৈতিকতাকে তুচ্ছ করা হয়তো সবচেয়ে সহজ বা সবচেয়ে সুবিধাজনক উপায় বলে মনে হতে পারে। এ ছাড়া, পৌলের কথাগুলো আমাদের আরেকটা বিষয় শেখায়। আপনার আচরণ যিহোবার ওপর প্রভাব ফেলে তা শুধু ব্যক্তিগতভাবে জানা ছাড়াও অন্যদের শিক্ষা দেওয়ার সময় তাদের বুঝতে সাহায্য করুন যে, তারা যে-নৈতিক মানগুলো শিখছে সেগুলো কাজে লাগালে তা কীভাবে যিহোবার ওপর প্রভাব ফেলবে। এটা নয় যে, খ্রীষ্টীয় নৈতিকতা শুধুমাত্র সন্তুষ্টি নিয়ে আসে বা একজনের স্বাস্থ্যকে রক্ষা করে। সেইসঙ্গে এটা সেই ব্যক্তির ওপরও প্রভাব ফেলে যিনি এই নৈতিকতা জোগান বা উৎসাহিত করেন।—গীতসংহিতা ৭৪:১০; যাকোব ৩:১৭.
১৩. (ক) নৈতিকতার বিষয়ে বাইবেল আমাদের কীভাবে সাহায্য করে? (খ) ১ থিষলনীকীয় ৪:৩-৭ পদের পরামর্শের সারমর্ম বলুন।
১৩ নৈতিকতা অন্য মানুষদেরও প্রভাবিত করে। আপনি তা বুঝতে পারেন ঈশ্বরের বাক্যের সেই উদাহরণগুলো থেকে যেগুলো ঈশ্বরের নৈতিক মানগুলো মেনে চলার মূল্য ও সেগুলোকে তুচ্ছ করার ফল স্পষ্টভাবে তুলে ধরে। (আদিপুস্তক ৩৯:১-৯, ২১; যিহোশূয়ের পুস্তক ৭:১-২৫) এ ছাড়াও, নৈতিকতার ওপর আপনি এইরকম স্পষ্ট পরামর্শ খুঁজে পেতে পারেন: “ঈশ্বরের ইচ্ছা এই, তোমাদের পবিত্রতা;—যেন তোমরা ব্যভিচার হইতে দূরে থাক, তোমাদের প্রত্যেক জন যেন, যাহারা ঈশ্বরকে জানে না, সেই পরজাতীয়দের ন্যায় কামাভিলাষে নয়, কিন্তু পবিত্রতায় ও সমাদরে নিজ নিজ পাত্র লাভ করিতে জানে। কেহ যেন সীমা অতিক্রম করিয়া এই ব্যাপারে আপন ভ্রাতাকে না ঠকায়; [“যাতে কেউ এই ব্যাপারে তার ভাইয়ের ক্ষতি ও তার অধিকারে অবৈধভাবে হস্তক্ষেপ না করে,” NW] . . . কারণ ঈশ্বর আমাদিগকে অশুচিতার নিমিত্ত নয়, কিন্তু পবিত্রতায় আহ্বান করিয়াছেন।”—১ থিষলনীকীয় ৪:৩-৭.
১৪. ১ থিষলনীকীয় ৪:৩-৭ পদের পরামর্শ সম্বন্ধে আপনি নিজেকে কী জিজ্ঞেস করতে পারেন?
১৪ এই কথাগুলো থেকে প্রায় সবাই-ই বুঝতে পারে যে, যৌন অনৈতিকতা খ্রীষ্টীয় নৈতিকতার ব্যবস্থাকে লঙ্ঘন করে। কিন্তু, এই ব্যাপারে আপনি আরও ভালভাবে জানতে পারেন। কিছু কিছু শাস্ত্রপদ আরও বেশি অধ্যয়ন ও ধ্যান করার সুযোগ দেয় আর এর ফলে সেই পদগুলোর ওপর গভীর অন্তর্দৃষ্টি পাওয়া যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ব্যভিচার করে একজন কীভাবে “এই ব্যাপারে ভাইয়ের ক্ষতি ও তার অধিকারে অবৈধভাবে হস্তক্ষেপ . . . করে” বলার দ্বারা পৌল আসলে কী বুঝিয়েছেন, তা নিয়ে আপনি হয়তো চিন্তা করতে পারেন। এর মধ্যে কোন্ কোন্ অধিকার জড়িত আর এটা আরও ভালভাবে বোঝা কীভাবে খ্রীষ্টীয় নৈতিকতা বজায় রাখার জন্য আপনাকে আরও বেশি প্রেরণা জোগাতে পারে? এভাবে গবেষণা কীভাবে অন্যদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য আপনাকে আরও সুসজ্জিত করে তুলতে পারে এবং ঈশ্বরকে সম্মান করার বিষয়ে তাদের সাহায্য করতে পারে?
শিক্ষা দেওয়ার জন্য অধ্যয়ন করুন
১৫. ব্যক্তিগত অধ্যয়নের মাধ্যমে নিজেকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য আপনি কোন্ কোন্ হাতিয়ার ব্যবহার করতে পারেন?
১৫ যিহোবার সাক্ষিদের কাছে বিভিন্ন হাতিয়ার রয়েছে, যেগুলো তারা নিজেরা অধ্যয়ন করার বা অন্যদেরকে শিক্ষা দেওয়ার সময় যে-প্রশ্ন বা বিষয়গুলো আসে তা গবেষণা করার জন্য ব্যবহার করেন। অনেক ভাষায় পাওয়া যায়, এমন একটা হাতিয়ার হল ওয়াচ টাওয়ার পাবলিকেশনস্ ইনডেক্স। আপনার যদি এটা থাকে, তা হলে যিহোবার সাক্ষিদের বাইবেল-ভিত্তিক প্রকাশনাগুলোর কোথায় তথ্য রয়েছে, তা জানার জন্য আপনি এটা ব্যবহার করতে পারেন। আপনি কোন বিষয় অনুসারে অথবা বাইবেলের পদের তালিকা থেকে তা খুঁজে বের করতে পারেন। যিহোবার সাক্ষিদের কাছে রয়েছে এমন আরেকটা হাতিয়ার হল, প্রধান কয়েকটা ভাষায় ওয়াচটাওয়ার লাইব্রেরি। সিডি-রমে এই কমপিউটার প্রোগ্রামে অনেক প্রকাশনা রয়েছে। এর প্রোগ্রাম একজনকে বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করতে এবং শাস্ত্রপদগুলো আলোচনা করতে সাহায্য করে। এই দুটো হাতিয়ারের একটা বা দুটোই যদি আপনার কাছে থাকে, তা হলে ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করার সময় নিয়মিত এগুলোকে কাজে লাগান, যাতে অন্যদের শিক্ষা দিতে পারেন।
১৬, ১৭. (ক) ১ থিষলনীকীয় ৪:৬ পদে উল্লেখিত অধিকারগুলোর ওপর তথ্যবহুল মন্তব্য আপনি কোথায় পেতে পারেন? (খ) কীভাবে ব্যভিচার অন্যদের অধিকারগুলোর ওপর অবৈধভাবে হস্তক্ষেপ করে?
১৬ আসুন আমরা ওপরে উল্লেখিত ১ থিষলনীকীয় ৪:৩-৭ পদে বলা উদাহরণটা বিবেচনা করি। এখানে অধিকারগুলো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কার অধিকার? আর কীভাবে সেই অধিকারগুলোর ওপর অবৈধভাবে হস্তক্ষেপ করা হয়? অধ্যয়নের যে-হাতিয়ারগুলোর বিষয়ে বলা হয়েছে, সেগুলোর সাহায্যে আপনি হয়তো এই পদগুলোর ওপর অনেক তথ্যবহুল উত্তর পেতে পারেন, এমনকি সেই অধিকারগুলোর বিষয়েও যে-সম্বন্ধে পৌল উল্লেখ করেছেন। আপনি শাস্ত্রের প্রতি অন্তর্দৃষ্টি (ইংরেজি), খণ্ড ১ এর ৮৬৩-৪ পৃষ্ঠায়; প্রকৃত শান্তি ও নিরাপত্তা—আপনি কিভাবে তা পেতে পারেন? (ইংরেজি) এর ১৪৫ পৃষ্ঠায়; প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি), নভেম্বর ১৫, ১৯৮৯ এর ৩১ পৃষ্ঠায় এই মন্তব্যগুলো পড়তে পারেন।
১৭ ওই প্রকাশনাগুলো অধ্যয়ন করে চললে আপনি দেখতে পাবেন যে, পৌলের কথাগুলো কত সত্য। একজন ব্যভিচারী ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ করে এবং বিভিন্ন রোগের শিকার হয়। (১ করিন্থীয় ৬:১৮, ১৯; ইব্রীয় ১৩:৪) একজন পুরুষ যে-নারীর সঙ্গে ব্যভিচার করে, সে ওই নারীর বিভিন্ন অধিকারের ওপর অবৈধভাবে হস্তক্ষেপ করে। সেই পুরুষ তাকে ঈশ্বরের শুদ্ধ নৈতিক মান এবং এক শুদ্ধ বিবেক থেকে বঞ্চিত করে। সেই নারী যদি অবিবাহিতা হয়, তা হলে ওই ব্যক্তি তার কুমারি হিসেবে বিয়ে করার অধিকারকে নষ্ট করে দেয় এবং তার ভাবী স্বামী তার কাছ থেকে যে-শুদ্ধতা আশা করে, সেই অধিকারের ক্ষতি করে। ওই পুরুষ সেই মেয়ের বাবামাকে ও সে যদি বিবাহিতা হয়, তা হলে তার স্বামীকে কষ্ট দেয়। দুশ্চরিত্র পুরুষ তার নিজের পরিবারের শুদ্ধ নৈতিক সুনামের অধিকারকে নষ্ট করে দেয়। যদি সে খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর সদস্য হয়ে থাকে, তা হলে সে সেই মণ্ডলীর ওপর নিন্দা নিয়ে আসে, এর সুনাম নষ্ট করে।—১ করিন্থীয় ৫:১.
১৮. খ্রীষ্টীয় নৈতিকতা সম্বন্ধে বাইবেল অধ্যয়নের মাধ্যমে আপনি কীভাবে উপকার পেতে পারেন?
১৮ অধিকার সম্বন্ধে এইরকম মন্তব্যগুলো কি ওই পদ সম্বন্ধে আপনার কাছে আরও তথ্য স্পষ্ট করে তুলে ধরে না? এইরকম অধ্যয়নের নিশ্চয়ই বিরাট মূল্য রয়েছে। এভাবে করে চলে আপনি নিজেকে শিক্ষা দিচ্ছেন। সত্যতা সম্বন্ধে এবং ঈশ্বরের বার্তার জোরালো প্রভাব সম্বন্ধে আপনার বোঝার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। যেকোন প্রলোভনই আসুক না কেন, খ্রীষ্টীয় নৈতিকতা ধরে রাখার জন্য আপনার সংকল্পকে আপনি শক্তিশালী করতে পারেন। আর ভেবে দেখুন যে, শিক্ষক হিসেবে আপনি কত বেশি কার্যকারী হতে পারেন! উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অন্যদের বাইবেলের সত্য শিক্ষা দেওয়ার সময়, আপনি ১ থিষলনীকীয় ৪:৩-৭ পদের ওপর অন্তর্দৃষ্টি প্রয়োগ করতে পারেন, খ্রীষ্টীয় নৈতিকতার প্রতি তাদের বোঝার ক্ষমতা ও উপলব্ধি বাড়াতে পারেন। এভাবে, আপনার অধ্যয়ন আপনাকে এবং অন্যান্য অনেক ব্যক্তিদের ঈশ্বরকে সম্মান দেখাতে সাহায্য করতে পারে। আমরা এখানে থিষলনীকীয়দের প্রতি লেখা পৌলের চিঠি থেকে মাত্র একটা উদাহরণ উল্লেখ করেছি। খ্রীষ্টীয় নৈতিকতার আরও অনেক দিক রয়েছে এবং বাইবেলে এইরকম আরও অনেক উদাহরণ আছে এবং পরামর্শ দেওয়ার মতো বিভিন্ন বিষয় রয়েছে, যা আপনি অধ্যয়ন করতে, কাজে লাগাতে ও শিক্ষা দিতে পারেন।
১৯. খ্রীষ্টীয় নৈতিকতাকে ধরে রাখা কেন অপরিহার্য?
১৯ এটা করার পিছনে যে-প্রজ্ঞা রয়েছে, সেই সম্বন্ধে কোন প্রশ্নই থাকতে পারে না। যাকোব ৩:১৭ পদ বলে, “যে জ্ঞান উপর হইতে আইসে,” অর্থাৎ স্বয়ং যিহোবা ঈশ্বরের কাছ থেকে তা “প্রথমে শুচি।” সেটা স্পষ্টভাবে ঈশ্বরের নৈতিক মানগুলো মেনে চলার গুরুত্ব তুলে ধরে। আসলে যিহোবা চান যে, যারা বাইবেল শিক্ষা দেওয়ার সময় তাঁকে তুলে ধরেন, তারা নিজেরা ‘শুদ্ধতার’ এক ভাল উদাহরণ রাখবেন। (১ তীমথিয় ৪:১২) পৌল ও তীমথিয়ের মতো প্রাথমিক শিষ্যরা ঠিক এভাবেই জীবনযাপন করেছিলেন; তারা অনৈতিকতা থেকে বিরত ছিলেন, এমনকি পৌল লিখেছিলেন: “কিন্তু বেশ্যাগমনের ও সর্ব্বপ্রকার অশুদ্ধতার বা লোভের নামও যেন তোমাদের মধ্যে না হয়, যেমন পবিত্রগণের উপযুক্ত। আর কুৎসিত ব্যবহার এবং প্রলাপ কিম্বা শ্লেষোক্তি, এই সকল অনুচিত ব্যবহার যেন না হয়।”—ইফিষীয় ৫:৩, ৪.
২০, ২১. প্রেরিত যোহন ১ যোহন ৫:৩ পদে যা বলেছিলেন, তার সঙ্গে আপনি কেন একমত হন?
২০ যদিও ঈশ্বরের বাক্যে তুলে ধরা নৈতিক মানগুলো স্পষ্ট ও নির্দিষ্ট কিন্তু সেগুলো কোন দুঃসহ বোঝা নয়। সবচেয়ে বেশি দিন বেঁচে ছিলেন সেই প্রেরিত যোহনের বেলায় এটা সত্য প্রমাণিত হয়েছিল। দশকের পর দশক ধরে তিনি যা কিছু করেছিলেন তার ওপর ভিত্তি করে তিনি জানতেন যে, খ্রীষ্টীয় নৈতিকতা ক্ষতিকর ছিল না। অন্যদিকে, এটা ভাল, উপকারী এবং আশীর্বাদস্বরূপ প্রমাণিত হয়েছিল। যোহন এই বিষয়ের ওপর জোর দিয়ে লিখেছিলেন: “ঈশ্বরের প্রতি প্রেম এই, যেন আমরা তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করি; আর তাঁহার আজ্ঞা সকল দুর্ব্বহ নয়।”—১ যোহন ৫:৩.
২১ কিন্তু লক্ষ করুন যোহন বলেননি যে, খ্রীষ্টীয় নৈতিকতা মেনে চলে ঈশ্বরের বাধ্য হওয়া সর্বোত্তম পথ কারণ এটা আমাদের সমস্যাগুলো থেকে, কিছু খারাপ পরিণতিগুলো থেকে রক্ষা করে। তিনি ঈশ্বরের প্রতি বাধ্য হওয়ার বিষয়ে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছিলেন, প্রথমে এই কথা স্বীকার করে যে, এটা যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি প্রেমের প্রকাশ ও তাঁর প্রতি আমাদের প্রেম প্রকাশের এক মূল্যবান সুযোগ। সত্যিই, নিজেকে শিক্ষা দেওয়া বা অন্যদের যিহোবাকে ভালবাসতে শেখানোর জন্য তাঁর উচ্চ মানগুলোকে গ্রহণ ও কাজে লাগানো দরকার। হ্যাঁ, এর মানে নিজেকে ও অন্যদের খ্রীষ্টীয় নৈতিকতা শিক্ষা দেওয়া।
[পাদটীকাগুলো]
a যিহুদিরা যে পবিত্র বস্তুকে অপবিত্র করেনি তা বলার সময় জোসেফাস ঈশ্বরের ব্যবস্থা সম্বন্ধে পুনরাবৃত্তি করে বলেছিলেন: “কেউ সেই দেবতাদের নিন্দা না করুক, যাদের অন্য শহরের লোকেরা পুজো করে কিংবা কেউ বিজাতীয় মন্দির লুট না করুক, কেউ দেবতার নামে উৎসর্গীকৃত কোন ধনসম্পদ না নিক।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।)—জুয়িশ আ্যন্টিকুইটিস, ৪ বই, অধ্যায় ৮, অনুচ্ছেদ ১০.
b জুয়িশ আ্যন্টিকুইটিস্, বই ১৮, অধ্যায় ৩, অনুচ্ছেদ ৫.
আপনার কি মনে আছে?
• অন্যদের শিক্ষা দেওয়ার আগে কেন আমাদের নিজেদের শিক্ষা দেওয়া উচিত?
• আমাদের আচরণ কীভাবে যিহোবার ওপর প্রভাব ফেলে?
• একজন ব্যভিচারী কাদের অধিকারগুলোর ওপর অবৈধভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারে?
• খ্রীষ্টীয় নৈতিকতা সম্বন্ধে আপনার সংকল্প কী?
[২২ পৃষ্ঠার চিত্র]
“তাঁহার আজ্ঞা সকল দুর্ব্বহ নয়”