‘বিশ্বাসের পক্ষে প্রাণপণ লড়াই কর’!
‘পবিত্রগণের কাছে একবারে সমর্পিত বিশ্বাসের পক্ষে প্রাণপণ লড়াই কর।’—যিহূদা ৩.
১. কোন্ অর্থে সত্য খ্রীষ্টানেরা আজকে যুদ্ধে রত?
যুদ্ধে রত সৈনিকদের সর্বদা কষ্টকর পরিস্থিতি ভোগ করতে হয়। কল্পনা করুন সম্পূর্ণ যুদ্ধসজ্জা পরিধান করা ও যে কোন আবহাওয়ার মধ্য দিয়েই দীর্ঘ পথ অতিক্রম করা, অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহারের চরম প্রশিক্ষণ লাভ করা এবং জীবন ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে সকল প্রকার হিংস্র আক্রমণগুলি থেকে রক্ষা করা। কিন্তু, সত্য খ্রীষ্টানেরা জাতিগণের যুদ্ধে অংশ নেন না। (যিশাইয় ২:২-৪; যোহন ১৭:১৪) তথাপি, আমরা কখনও ভুলে যাব না যে এক অর্থে আমরা সকলেই যুদ্ধে রত আছি। যীশু খ্রীষ্ট ও পৃথিবীতে তাঁর অনুসারীদের প্রতি শয়তান ঘৃণায় পূর্ণ। (প্রকাশিত বাক্য ১২:১৭) যারা যিহোবা ঈশ্বরকে সেবা করার সিদ্ধান্ত নেন, এক আধ্যাত্মিক যুদ্ধে রত হওয়ার জন্য কার্যত তারা সকলেই তালিকাভুক্ত হন।—২ করিন্থীয় ১০:৪.
২. খ্রীষ্টীয় যুদ্ধকে যিহূদা কিভাবে বর্ণনা করেন এবং তার পত্র কিভাবে আমাদের এতে স্থির থাকতে সাহায্য করে?
২ উপযুক্তরূপেই, যীশুর অর্ধ ভ্রাতা যিহূদা লেখেন: “প্রিয়তমেরা, আমাদের সাধারণ পরিত্রাণের বিষয়ে তোমাদের কিছু লিখতে যদিও আমি নিতান্ত যত্নবান ছিলাম, তবুও পবিত্রগণের কাছে একবারে সমর্পিত বিশ্বাসের পক্ষে প্রাণপণ লড়াই করতে তোমাদের আশ্বাস দিয়ে লেখা আবশ্যক মনে করলাম।” (যিহূদা ৩, NW) যিহূদা যখন খ্রীষ্টানদের “প্রাণপণ লড়াই করতে” পরামর্শ দেন, তিনি “নিদারুণ যন্ত্রণা”-র সঙ্গে যুক্ত একটি পরিভাষা ব্যবহার করেন। হ্যাঁ, এটি কঠিন লড়াই, এমনকি নিদারুণ যন্ত্রণাদায়কও হতে পারে! আপনি কি কখনও কখনও এই যুদ্ধে স্থির থাকা কষ্টকর বলে মনে করেন? যিহূদার ছোট কিন্তু ক্ষমতাসম্পন্ন পত্রটি আমাদের সাহায্য করতে পারে। এটি আমাদের অনৈতিকতাকে প্রতিরোধ, ঐশিকভাবে নিযুক্ত কর্তৃপক্ষের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও ঈশ্বরের প্রেমে নিজেদের রক্ষা করতে পরামর্শ দেয়। আসুন আমরা দেখি এই পরামর্শ কিভাবে প্রয়োগ করা যায়।
অনৈতিকতাকে প্রতিরোধ করুন
৩. যিহূদার দিনে খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী কোন্ জরুরি অবস্থার মুখোমুখি হয়েছিল?
৩ যিহূদা দেখতে পেয়েছিলেন যে তার সকল সহখ্রীষ্টানই শয়তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হচ্ছিলেন না। পালেরা এক জরুরি অবস্থার মুখোমুখি হয়েছিলেন। কলুষিত লোকেরা “গোপনে প্রবিষ্ট” হয়েছিলেন, যিহূদা লেখেন। এই লোকেরা সুচতুরভাবে অনৈতিকতাকে উন্নীত করছিলেন। আর “আমাদের ঈশ্বরের অনুগ্রহ লম্পটতায় পরিণত করে” তারা চতুরতার সঙ্গে তাদের কাজের উপর যুক্তিপ্রয়োগ করেছিলেন। (যিহূদা ৪) সম্ভবত প্রাচীনকালের কিছু রহস্যবাদী খ্রীষ্টানের মত তারা যুক্তি দেখিয়েছিলেন যে একজন যত বেশি পাপ করবেন, তিনি ঈশ্বরের অনুগ্রহ তত বেশি লাভ করবেন—তাই, ফলস্বরূপ, বেশি পাপ করা অধিক উপকারী ছিল! কিংবা সম্ভবত তারা উপসংহার করেছিলেন যে একজন দয়ালু ঈশ্বর কখনও তাদের শাস্তি দেবেন না। যে কোন ভাবেই হোক, তারা ভুল ছিলেন।—১ করিন্থীয় ৩:১৯.
৪. অতীতে যিহোবার বিচারের কোন্ তিনটি শাস্ত্রীয় উদাহরণ যিহূদা উল্লেখ করেন?
৪ অতীতে যিহোবার বিচারের তিনটি দৃষ্টান্ত উল্লেখ করার দ্বারা যিহূদা তাদের মন্দ যুক্তিকে খণ্ডন করেছিলেন: ‘অবিশ্বাসী’ ইস্রায়েলীয়দের বিরুদ্ধে; স্ত্রীলোকেদের সঙ্গে পাপ করার জন্য “যে স্বর্গদূতেরা . . . নিজ বাসস্থান ত্যাগ করিয়াছিল” তাদের বিরুদ্ধে; এবং সদোম ঘমোরার অধিবাসীদের বিরুদ্ধে যারা “নিতান্ত বেশ্যাগামী এবং বিজাতীয় মাংসের চেষ্টায় বিপথগামী” হয়েছিল। (যিহূদা ৫-৭; আদিপুস্তক ৬:২-৪; ১৯:৪-২৫; গণনাপুস্তক ১৪:৩৫) প্রতিটি ক্ষেত্রেই যিহোবা পাপীদের বিরুদ্ধে এক আলোড়ন-সৃষ্টিকারী বিচার এনেছিলেন।
৫. কোন্ প্রাচীন ভাববাদীর কথা যিহূদা উদ্ধৃতি করেন আর সেই ভবিষ্যদ্বাণী কিভাবে এর পরিপূর্ণতা সম্বন্ধে চূড়ান্ত নিশ্চয়তা প্রকাশ করে?
৫ পরে, যিহূদা এমনকি আরও সুদূরপ্রসারী এক বিচার সম্বন্ধে উল্লেখ করেন। তিনি হনোকের এক ভবিষ্যদ্বাণী উদ্ধৃতি করেন—একটি বিষয় যা অনুপ্রাণিত শাস্ত্রের আর কোথাও পাওয়া যায় না।a (যিহূদা ১৪, ১৫) হনোক একটি সময় সম্বন্ধে ভাববাণী করেছিলেন, যখন যিহোবা সমস্ত ঈশ্বরবিহীন ব্যক্তি ও তাদের ঈশ্বরবিহীন কাজগুলির বিচার করবেন। আগ্রহজনকভাবে, হনোক অতীতকালের আকারে বলেছিলেন কারণ ঈশ্বরের বিচার এতটাই নিশ্চিত ছিল যে সেগুলি যেন ইতিমধ্যেই পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। লোকেরা হয়ত হনোককে এবং পরে নোহকে বিদ্রূপ করেছিলেন কিন্তু এই সমস্ত উপহাসকারীরা পৃথিবীব্যাপী জলপ্লাবনে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলেন।
৬. (ক) যিহূদার দিনে খ্রীষ্টানদের কোন্ বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন ছিল? (খ) যিহূদার অনুস্মারকের প্রতি কেন আমাদের মনোযোগ দেওয়া উচিত?
৬ এই ঐশিক বিচার সম্বন্ধে যিহূদা কেন লিখেছিলেন? কারণ তিনি জানতেন যে তার সময়ে, খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর অংশী কিছু ব্যক্তি এমন জঘন্য ও নিন্দনীয় পাপ করছিলেন যে সেগুলি অতীতে যারা সেই বিচারগুলিকে আহ্বান করেছিলেন সেই ব্যক্তিদের সমরূপ। তাই, যিহূদা লেখেন যে মণ্ডলীগুলিকে কিছু মৌলিক আধ্যাত্মিক সত্য স্মরণ করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। (যিহূদা ৫) স্পষ্টতই তারা ভুলে গিয়েছিলেন যে তারা যা করছিলেন, যিহোবা ঈশ্বর তা দেখছেন। হ্যাঁ, তাঁর দাসেরা যখন স্বেচ্ছায় তাঁর আইনগুলি লঙ্ঘন করেন, নিজেদের ও অন্যান্যদের কলুষিত করেন, তিনি দেখতে পান। (হিতোপদেশ ১৫:৩) এইধরনের কাজ তাঁকে গভীরভাবে দুঃখিত করে। (আদিপুস্তক ৬:৬; গীতসংহিতা ৭৮:৪০) এটি আশ্চর্যজনক যে আমরা ক্ষুদ্র মানুষেরা, মহাবিশ্বের সার্বভৌম প্রভুর অনুভূতিকে প্রভাবিত করতে পারি। তিনি প্রতিদিন আমাদের লক্ষ্য করেন আর যখন আমরা তাঁর পুত্র যীশু খ্রীষ্টের পদচিহ্ন অনুসরণ করার জন্য আমাদের যথাসম্ভব সর্বোত্তম করি, তখন আমাদের আচরণ তাঁর হৃদয়কে আনন্দিত করে তোলে। তাই আসুন, যিহূদা যে অনুস্মারক প্রদান করেন তাতে আমরা বিরক্ত না হয়ে বরং মনোযোগ দিই।—হিতোপদেশ ২৭:১১; ১ পিতর ২:২১.
৭. (ক) যারা গুরুতর অপরাধে জড়িত তাদের পক্ষে অবিলম্বেই সাহায্যের অন্বেষণ করা কঠিন কেন? (খ) আমরা সকলে কিভাবে অনৈতিকতা এড়াতে পারি?
৭ যিহোবা কেবল দেখেনই না কিন্তু তিনি কাজও করেন। একজন ন্যায়বিচারক ঈশ্বর হিসাবে, তিনি দুষ্কর্মকারীদের উপর শীঘ্র বা পরে—শাস্তি নিয়ে আসেন। (১ তীমথিয় ৫:২৪) যারা যুক্তি দেখান যে তাঁর বিচার কেবল অতীত ইতিহাস আর তারা যে দুষ্কর্ম করেন সেই সম্বন্ধে তিনি সতর্ক নন, তারা নিজেদের কেবল বোকাই বানাচ্ছেন। আজকে অনৈতিকতায় জড়িত যে কোন ব্যক্তিরই খ্রীষ্টীয় প্রাচীনদের কাছ থেকে অবিলম্বে সাহায্য পাওয়ার জন্য চেষ্টা করা কতই না গুরুত্বপূর্ণ! (যাকোব ৫:১৪, ১৫) আমাদের আধ্যাত্মিক যুদ্ধে অনৈতিকতা যে হুমকি নিয়ে আসে তার সম্মুখে আমরা সকলে সতর্ক হতে পারি। প্রতি বছর ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা থাকেন—যে ব্যক্তিবিশেষেরা অধিকাংশই অনুতাপহীনভাবে অনৈতিক কাজ করায় আমাদের মাঝ থেকে বহিষ্কৃত হন। যে কোন ধরনের প্রলোভন যা আমাদের এমনকি এইধরনের পথে পরিচালিত করতে শুরু করতে পারে, সেগুলি প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের অবশ্যই দৃঢ়ভাবে স্থিরসংকল্প হতে হবে।—মথি ২৬:৪১ পদের সাথে তুলনা করুন।
ঐশিকভাবে নিযুক্ত কর্তৃপক্ষের প্রতি সম্মান দেখান
৮. যিহূদা ৮ পদে উল্লেখিত “গৌরবের পাত্র” কারা ছিলেন?
৮ যিহূদা অপর যে সমস্যাটির কথা উল্লেখ করেন তা হল ঐশিকভাবে নিযুক্ত কর্তৃপক্ষের প্রতি সম্মানের অভাব। উদাহরণস্বরূপ, ৮ পদে একই দুষ্ট ব্যক্তিদের তিনি অভিযুক্ত করেন যারা “যাহারা গৌরবের পাত্র, তাহাদের নিন্দা করে।” এই “গৌরবের পাত্র” কারা ছিলেন? তারা অসিদ্ধ মানুষ ছিলেন কিন্তু যিহোবার পবিত্র আত্মার মাধ্যমে তাদের উপর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, মণ্ডলীগুলিতে প্রাচীনেরা ছিলেন যাদের ঈশ্বরের পালকে পালন করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। (১ পিতর ৫:২) এছাড়া ভ্রমণ অধ্যক্ষেরাও ছিলেন, যেমন প্রেরিত পৌল। আর যিরূশালেমে প্রাচীনগোষ্ঠী পরিচালক গোষ্ঠী হিসাবে কাজ করতেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন, যা সামগ্রিকভাবে খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীগুলিকে প্রভাবিত করত। (প্রেরিত ১৫:৬) যিহূদা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হয়েছিলেন কারণ মণ্ডলীতে নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি তাদের নিন্দা অথবা দোষারোপ করছিলেন।
৯. কর্তৃপক্ষের প্রতি অসম্মান সম্বন্ধে যিহূদা কোন্ উদাহরণগুলি উল্লেখ করেন?
৯ এইধরনের অসম্মানীয় কথাবার্তা বর্জন করার জন্য যিহূদা অনুস্মারক হিসাবে ১১ পদে আরও তিনটি উদাহরণ উল্লেখ করেন: কয়িন, বিলিয়ম ও কোরহ। কয়িন যিহোবার প্রেমপূর্ণ পরামর্শ অবজ্ঞা করেছিলেন এবং ইচ্ছাকৃতভাবে তার নিজস্ব হত্যায় পরিচালনাকারী ঘৃণার পথ অনুধাবন করেছিলেন। (আদিপুস্তক ৪:৪-৮) বিলিয়ম এক পুনরাবৃত্তিমূলক সতর্কবাণী লাভ করেছিলেন, যা নিঃসন্দেহে এক অতিমানবীয় উৎস থেকে এসেছিল—এমনকি তার নিজ গর্দভী তার সঙ্গে কথা বলেছিল! কিন্তু বিলিয়ম স্বার্থপরভাবে ঈশ্বরের লোকেদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে যাচ্ছিলেন। (গণনাপুস্তক ২২:২৮, ৩২-৩৪; দ্বিতীয় বিবরণ ২৩:৫) কোরহের তার নিজস্ব দায়িত্বপূর্ণ অবস্থান ছিল কিন্তু তাতে তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন না। তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে মৃদুশীল ব্যক্তি, মোশির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন।—গণনাপুস্তক ১২:৩; ১৬:১-৩, ৩২.
১০. আজকে কিভাবে কেউ কেউ “যাহারা গৌরবের পাত্র, তাহাদের নিন্দা” করার ফাঁদে পড়তে পারেন আর কেন এইধরনের কথাবার্তা এড়ানো উচিত?
১০ দায়িত্বপূর্ণ অবস্থানে যিহোবা যাদের ব্যবহার করেন, তাদের পরামর্শ শ্রবণ ও তাদের সম্মান করতে এই উদাহরণগুলি কতই না সুস্পষ্টভাবে আমাদের শিক্ষা দেয়! (ইব্রীয় ১৩:১৭) নিযুক্ত প্রাচীনদের দোষ দেখতে পাওয়া খুবই সহজ কারণ তারা অসিদ্ধ, যেমন আমরা সকলে অসিদ্ধ। কিন্তু আমরা যদি ক্রমাগত তাদের দোষ ধরতে থাকি ও তাদের প্রতি অসম্মান দেখাই তাহলে কি আমরা ‘যাহারা গৌরবের পাত্র, তাহাদের নিন্দা করছি’ না? ১০ পদে যিহূদা তাদের বিষয় উল্লেখ করেন, যারা “যাহা যাহা না বুঝে, তাহারই নিন্দা করে।” কখনও কখনও কেউ হয়ত প্রাচীনগোষ্ঠী অথবা বিচার সংক্রান্ত কমিটি কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্তের সমালোচনা কর থাকেন। যদিও একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে প্রাচীনদের যে সকল বিস্তারিত বিষয়গুলি বিবেচনা করতে হয়েছিল তা তারা জানেন না। তাহলে যে সম্বন্ধে তারা আসলে জানেন না, কেন তারা তার নিন্দা করেন? (হিতোপদেশ ১৮:১৩) যারা এইধরনের নেতিবাচক কথাবার্তায় রত থাকেন, তারা মণ্ডলীতে দলভেদ সৃষ্টি করতে পারেন এবং সম্ভবত সহবিশ্বাসীদের মেলামেশায় তারা বিপদজনক “ব্যাঘাতক” এর অনুরূপ। (যিহূদা ১২, ১৬, ১৯) আমরা কখনও অন্যদের জন্য আধ্যাত্মিক বিপদ উপস্থিত করতে চাই না। পরিবর্তে, আসুন আমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গকে ঈশ্বরের পালের প্রতি তাদের কঠোর পরিশ্রম ও বিশ্বস্ত সেবার জন্য উপলব্ধি প্রকাশ করতে স্থিরসংকল্প হই।—১ তীমথিয় ৫:১৭.
১১. শয়তানের উপর নিন্দামূলক উপায়ে বিচার আনা থেকে মীখায়েল কেন বিরত হয়েছিলেন?
১১ যিহূদা এমন একজন ব্যক্তির উদাহরণ উল্লেখ করেন, যিনি যথার্থভাবে নিযুক্ত কর্তৃপক্ষের প্রতি সম্মান করেছিলেন। তিনি লেখেন: “প্রধান স্বর্গদূত মীখায়েল যখন মোশির দেহের বিষয়ে দিয়াবলের সহিত বাদনুবাদ করিলেন, তখন নিন্দাযুক্ত নিষ্পত্তি করিতে সাহস করিলেন না, কিন্তু কহিলেন, প্রভু [“যিহোবা,” “NW”] তোমাকে ভর্ৎসনা করুন।” (যিহূদা ৯) এই চমৎকার বিবরণটি অনুপ্রাণিত শাস্ত্রের কেবল যিহূদা পুস্তকেই রয়েছে, যেটি আমাদের দুটি স্বতন্ত্র বিষয় শিক্ষা দেয়। একদিকে এটি আমাদের বিচারের ভার যিহোবার উপর অর্পণ করতে শেখায়। স্পষ্টতই শয়তান মিথ্যা উপাসনা উন্নীত করার জন্য বিশ্বস্ত পুরুষ মোশির দেহের অপব্যবহার করতে চেয়েছিল। কতই না দুষ্ট! তথাপি মীখায়েল বিচার আনা থেকে বিরত থেকেছিলেন কারণ একমাত্র যিহোবারই সেই কর্তৃত্ব ছিল। তাহলে আমাদের আরও কতই না বেশি সেই বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের বিচার করা থেকে বিরত থাকা উচিত যারা যিহোবাকে সেবা করার চেষ্টা করছেন।
১২. খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে যারা দায়িত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছেন তারা মীখায়েলের উদাহরণ থেকে কী শিখতে পারেন?
১২ অন্যদিকে, মণ্ডলীতে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাও, মীখায়েলের কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করতে পারেন। সর্বোপরি, মীখায়েল যদিও সমস্ত দূতেদের মুখ্য, “প্রধান স্বর্গদূত” ছিলেন, তবুও তিনি এমনকি উত্তেজনার বশেও তাঁর ক্ষমতাসম্পন্ন অবস্থানের অপব্যবহার করেননি। তাদের কর্তৃত্বের অপব্যবহার যিহোবার সার্বভৌমত্বের প্রতি অসম্মানজনক তা উপলব্ধি করে, বিশ্বস্ত প্রাচীনেরা নিবিড়ভাবে সেই উদাহরণ অনুসরণ করেন। মণ্ডলীতে যাদের সম্মানজনক অবস্থান ছিল কিন্তু ক্ষমতার অপব্যবহার করেছিলেন, তাদের সম্বন্ধে বলার জন্য যিহূদার পত্রে অনেক কিছু ছিল। উদাহরণস্বরূপ, ১২ থেকে ১৪ পদে, যিহূদা তাদের সম্বন্ধে একটি চরম ঘোষণা লিপিবদ্ধ করেন যারা “এমন পালক যে নির্ভয়ে আপনাদিগকেই চরায়।” (যিহিষ্কেল ৩৪:৭-১০ পদের সাথে তুলনা করুন।) অন্য কথায়, তাদের প্রথম আগ্রহ ছিল নিজেদের উপকৃত করা, যিহোবার পালকে নয়। এইধরনের নেতিবাচক উদাহরণ থেকে বর্তমানে প্রাচীনেরা অনেক কিছু শিখতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে, যিহূদার বাক্যগুলি আমরা যা হতে চাই না সেই সম্বন্ধে এক সুস্পষ্ট চিত্র তুলে ধরে। যখন আমরা স্বার্থপরতার প্রতি বশ্যতা স্বীকার করি, আমরা খ্রীষ্টের সৈনিক হতে পারি না; আমরা নিজেদের জন্য যুদ্ধ করতে অত্যন্ত ব্যস্ত হয়ে পড়ি। পরিবর্তে, আসুন আমরা যীশুর বাক্যানুসারে জীবনযাপন করি: “গ্রহণ করা অপেক্ষা বরং দান করা ধন্য হইবার বিষয়।”—প্রেরিত ২০:৩৫.
“ঈশ্বরের প্রেমে আপনাদিগকে রক্ষা কর”
১৩. আমরা সকলে ঈশ্বরের প্রেমে থাকতে কেন আকুলভাবে আকাঙ্ক্ষা করব?
১৩ তার পত্রের শেষের দিকে যিহূদা এই হৃদয়উষ্ণকারী পরামর্শ প্রদান করেন: “ঈশ্বরের প্রেমে আপনাদিগকে রক্ষা কর।” (যিহূদা ২১) যিহোবা ঈশ্বরের প্রেমের পাত্র হিসাবে থাকা, খ্রীষ্টীয় যুদ্ধ চালিয়ে যেতে আমাদের সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে। সর্বোপরি, প্রেম হল যিহোবার মুখ্য গুণ। (১ যোহন ৪:৮) রোমের খ্রীষ্টানদের উদ্দেশে পৌল লিখেছিলেন: “আমি নিশ্চয় জানি, কি মৃত্যু, কি জীবন, কি দূতগণ, কি আধিপত্য সকল, কি উপস্থিত বিষয় সকল, কি ভাবী বিষয় সকল, কি পরাক্রম সকল, কি ঊর্দ্ধ্ব স্থান, কি গভীর স্থান, কি অন্য কোন সৃষ্ট বস্তু কিছুই আমাদের প্রভু খ্রীষ্ট যীশুতে অবস্থিত ঈশ্বরের প্রেম হইতে আমাদিগকে পৃথক্ করিতে পারিবে না।” (রোমীয় ৮:৩৮, ৩৯) তাহলে কিভাবে আমরা সেই প্রেমে থাকতে পারি? যিহূদার কথা অনুসারে তিনটি বিষয় লক্ষ্য করুন যেগুলি আমরা গ্রহণ করতে পারি।
১৪, ১৫. (ক) “পরম পবিত্র বিশ্বাসের” উপরে নিজেদের গেঁথে তোলার অর্থ কী? (খ) আমাদের আধ্যাত্মিক সজ্জার অবস্থা আমরা কিভাবে পরীক্ষা করতে পারি?
১৪ প্রথমত, যিহূদা আমাদের “পরম পবিত্র বিশ্বাসের” উপর নিজেদের ক্রমাগত গেঁথে উঠতে বলেন। (যিহূদা ২০) পূর্ববর্তী অধ্যায়ে যেমন আমরা দেখেছি যে এটি একটি ক্রমাগত প্রক্রিয়া। আমরা সেই সমস্ত অট্টালিকার মত যেগুলির আবহাওয়ার প্রতিকূল আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য অনেক দুর্গের প্রয়োজন। (মথি ৭:২৪, ২৫ পদের সাথে তুলনা করুন।) তাই আসুন, আমরা কখনও যেন অত্যধিক প্রত্যয়ী না হই। পরিবর্তে, আসুন আমরা দেখি কোথায় আমরা আমাদের বিশ্বাসের ভিত্তি গেঁথে তুলতে পারি, অধিকতর শক্তিশালী হতে পারি, খ্রীষ্টের অধিক বিশ্বস্ত সৈনিক হতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, আমরা হয়ত ইফিষীয় ৬:১১-১৮ পদে বর্ণিত আধ্যাত্মিক যুদ্ধসজ্জার অংশসমূহ বিবেচনা করতে পারি।
১৫ আমাদের নিজস্ব আধ্যাত্মিক সজ্জার অবস্থা কী? আমাদের ‘বিশ্বাসের ঢাল’ কি ঠিক যতটা প্রয়োজন ততটা শক্তিশালী? আমরা যখন অতিবাহিত সাম্প্রতিক বছরগুলির দিকে ফিরে তাকাই, আমরা কি কিছু শিথিলতা দেখতে পাই যেমন সভায় উপস্থিতিতে হ্রাস, পরিচর্যার জন্য উদ্যমের অভাব অথবা ব্যক্তিগত অধ্যয়নের জন্য উদ্দীপনা ম্লান হয়ে পড়া? এইধরনের লক্ষণগুলি গুরুতর! সত্যে নিজেদের গেঁথে তোলার ও শক্তিশালী করার জন্য আমাদের এখনই কাজ করা প্রয়োজন।—১ তীমথিয় ৪:১৫; ২ তীমথিয় ৪:২; ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫.
১৬. পবিত্র আত্মায় প্রার্থনা করার অর্থ কী এবং একটি বিষয় কী যেটি আমাদের নিয়মিতভাবে যিহোবার কাছে চাওয়া উচিত?
১৬ ঈশ্বরের প্রেমে থাকার দ্বিতীয় উপায়টি হল ক্রমাগত “পবিত্র আত্মাতে প্রার্থনা” করে চলা। (যিহূদা ২০) এর অর্থ হল, যিহোবার আত্মার সাহায্যে ও তাঁর আত্মায়-অনুপ্রাণিত বাক্যের সাথে সংগতি রেখে প্রার্থনা করা। ব্যক্তিগতভাবে যিহোবার নিকটবর্তী হওয়া ও তাঁর প্রতি আমাদের ভক্তি প্রকাশ করার জন্য প্রার্থনা একটি অত্যাবশ্যক মাধ্যম। আমাদের কখনও এই অপূর্ব সুযোগকে অবহেলা করা উচিত নয়! আর যখন আমরা প্রার্থনা করি, আমরা হয়ত যা চাইতে পারি—বস্তুত ক্রমাগত চেয়ে যেতে পারি তা হল পবিত্র আত্মা। (লূক ১১:১৩) আমাদের কাছে সহজলভ্য এটি সর্বাধিক বলবান শক্তি। এইধরনের সাহায্যের দ্বারা আমরা সর্বদা ঈশ্বরের প্রেমে থাকতে পারি এবং খ্রীষ্টের যোদ্ধা হিসাবে স্থির থাকতে পারি।
১৭. (ক) করুণার ক্ষেত্রে যিহূদার উদাহরণ কিভাবে অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য? (খ) আমরা প্রত্যেকে কিভাবে ক্রমাগত করুণা দেখিয়ে চলতে পারি?
১৭ তৃতীয়ত, যিহূদা আমাদের ক্রমাগত করুণা প্রদর্শন করে যেতে পরামর্শ দেন। (যিহূদা ২২) এই ক্ষেত্রে তার নিজের উদাহরণও উল্লেখযোগ্য। সর্বোপরি, খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে প্রবিষ্ট কলুষতা, অনৈতিকতা এবং ধর্মভ্রষ্টতার দ্বারা তিনি প্রকৃতই বিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন। তাসত্ত্বেও, তিনি আতঙ্কের নিকট বশ্যতা স্বীকার করেননি, এই দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলেননি যে করুণার মত “কোমল” গুণ প্রদর্শন করার জন্য বর্তমান পরিস্থিতি খুবই বিপদজনক। না, তিনি তার ভাইদের যখনই সম্ভব করুণা প্রদর্শন করে যেতে, যারা সন্দেহে ভুগছে তাদের সদয়ভাবে যুক্তি দেখাতে এবং যারা গুরুতর পাপের দ্বারা পথভ্রষ্টতার দিকে যাচ্ছে, তাদের ‘অগ্নি হইতে টানিয়া লইতে’ পরামর্শ দিয়েছিলেন। (যিহূদা ২৩; গালাতীয় ৬:১) এই সমস্যাসংকুল সময়ে প্রাচীনদের জন্য কী এক উত্তম পরামর্শ! যেখানে এইরূপ করার কারণ রয়েছে সেখানে তারা করুণা দেখানোর জন্য প্রচেষ্টা করলেও আবার যেখানে প্রয়োজন সেখানে তারা দৃঢ় থাকেন। অনুরূপভাবে আমরা সকলে একে অন্যের প্রতি করুণা দেখাতে চাই। উদাহরণস্বরূপ, ক্ষুদ্র বিষয়গুলি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করার পরিবর্তে, ক্ষমাশীলতার ক্ষেত্রে আমরা উদার হতে পারি।—কলসীয় ৩:১৩.
১৮. আমাদের আধ্যাত্মিক যুদ্ধে বিজয় সম্বন্ধে কিভাবে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি?
১৮ আমরা যে যুদ্ধে রত তা সহজ নয়। যিহূদা যেমন বলেন যে এটি ‘একটি প্রাণপণ লড়াই।’ (যিহূদা ৩) আমাদের শত্রুরা ক্ষমতাসম্পন্ন। কেবল শয়তানই নয় কিন্তু তার দুষ্ট জগৎ ও আমাদের নিজস্ব অসিদ্ধতা সমস্তই সারিবদ্ধভাবে আমাদের বিরুদ্ধে অগ্রসরমান। তথাপি, বিজয় সম্বন্ধে নিশ্চিতরূপে আমরা দৃঢ়প্রত্যয়ী থাকতে পারি! কেন? কারণ আমরা যিহোবার পক্ষে রয়েছি। যিহূদা তার পত্রটি এই অনুস্মারক দিয়ে শেষ করেন যে যিহোবার প্রতি উপযুক্তরূপেই “প্রতাপ, মহিমা, পরাক্রম ও কর্ত্তৃত্ব হউক, সকল যুগের পূর্ব্বাবধি, আর এখন, এবং সমস্ত যুগপর্য্যায়ে” আরোপ করা যায়। (যিহূদা ২৫) সেটি কি একটি শ্রদ্ধামিশ্রিত ভয় উদ্রেককারী চিন্তাধারা নয়? তাহলে এই ক্ষেত্রে কি কোন প্রশ্ন থাকতে পারে যে ঈশ্বরই “তোমাদিগকে উছোট খাওয়া হইতে রক্ষা করিতে . . . পারেন”? (যিহূদা ২৪) অবশ্যই না! আসুন আমরা সকলে অনৈতিকতাকে প্রতিরোধ করতে, ঐশিকভাবে নিযুক্ত কর্তৃপক্ষের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও নিজেদের ঈশ্বরের প্রেমে রক্ষা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হই। এভাবে আমরা একত্রে এক মহিমান্বিত বিজয় উপভোগ করতে পারব।
[পাদটীকাগুলো]
a কিছু গবেষণাকারীরা দাবি করেন যে যিহূদা অপ্রামাণিক হনোকের পুস্তক (ইংরাজি) থেকে উদ্ধৃতি করেছিলেন। কিন্তু আর. সি. এইচ, লেন্সকি উল্লেখ করেন: “আমরা জিজ্ঞাসা করি: ‘হনোকের পুস্তক নামক এই শিল্পকর্মের উৎস কী?’ এই বইটি হল একটি সংযোজন এবং এর বিভিন্ন অংশের তারিখ সম্বন্ধে কেউই নিশ্চিত নন . . . ; কেউই নিশ্চিত হতে পারেন না যে এর কিছু অভিব্যক্তি সম্ভবত স্বয়ং যিহূদার পত্র থেকে নেওয়া হয়নি।”
পুনরালোচনার প্রশ্নগুলি
◻ অনৈতিকতাকে প্রতিরোধ করতে যিহূদার পত্র কিভাবে আমাদের শিক্ষা দেয়?
◻ ঐশিকভাবে নিযুক্ত কর্তৃপক্ষের প্রতি সম্মান করা এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?
◻ মণ্ডলীগত কর্তৃত্বকে অপব্যবহার করা সম্বন্ধে গুরুতর বিষয়টি কী?
◻ ঈশ্বরের প্রেমে থাকতে আমরা কিভাবে কাজ করতে পারি?
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
রোমীয় সৈন্যদের বিপরীতে, খ্রীষ্টানেরা এক আধ্যাত্মিক যুদ্ধে রত
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
খ্রীষ্টীয় পালকেরা স্বার্থপরতার জন্য নয় কিন্তু প্রেমের কারণে সেবা করেন