মহান দায়ূদ ও মহান শলোমন হিসেবে যিশুকে স্বীকার করা
“দেখ, শলোমন হইতে মহান্ এক ব্যক্তি এখানে আছেন।” —মথি ১২:৪২.
১, ২. মানব দৃষ্টিকোণ থেকে এটা কেন আশ্চর্যজনক যে, দায়ূদকে রাজা হিসেবে অভিষেক করার জন্য শমূয়েল নির্দেশনা পেয়েছিলেন?
তাকে দেখতে একজন রাজার মতো লাগেনি। এর পরিবর্তে, ভাববাদী শমূয়েলের কাছে তাকে সামান্য এক মেষপালক বালক বলেই মনে হয়েছিল। এ ছাড়া, তার নিজ নগর বৈৎলেহম কোনো বিখ্যাত নগর ছিল না। এটাকে “যিহূদার সহস্রগণের মধ্যে ক্ষুদ্রা বলিয়া অগণিতা” হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছিল। (মীখা ৫:২) তা সত্ত্বেও, এক ক্ষুদ্র নগর থেকে আসা এই সামান্য যুবককে ভাববাদী শমূয়েল ইস্রায়েলের ভাবী রাজা হিসেবে অভিষেক করতে যাচ্ছিলেন।
২ শমূয়েল ভাবতেই পারেননি যে, দায়ূদই ছিলেন সেই ব্যক্তি, যাকে যিহোবা রাজা হওয়ার জন্য মনোনীত করেছিলেন। যিশয়ের আট পুত্রের মধ্যে সবচেয়ে ছোটো পুত্র দায়ূদ এমনকী সেই সময়ে উপস্থিতও ছিলেন না, যখন শমূয়েল যিশয়ের বাড়িতে সেই বিশ্বস্ত ব্যক্তির পুত্রদের মধ্যে একজনকে, সেই দেশের পরবর্তী রাজা হিসেবে অভিষেক করার জন্য উপস্থিত হয়েছিলেন। কিন্তু, দায়ূদই ছিলেন যিহোবার মনোনীত ব্যক্তি এবং সেটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।—১ শমূ. ১৬:১-১০.
৩. (ক) একজন ব্যক্তিকে পরীক্ষা করার সময় কোন বিষয়টাকে যিহোবা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখেন? (খ) দায়ূদের অভিষেকের সময়ে, তার ওপর কী কার্যকর হতে শুরু করেছিল?
৩ যিহোবা সেই বিষয়টা দেখেছিলেন, যা শমূয়েল দেখতে পাননি। ঈশ্বর দায়ূদের হৃদয়ের অবস্থা নির্ণয় করতে পেরেছিলেন আর এটা তাঁর কাছে প্রীতিজনক ছিল। ঈশ্বরের কাছে বাহ্যিক চেহারা গুরুত্বপূর্ণ নয়; একজন ব্যক্তি অন্তর থেকে প্রকৃতপক্ষে কেমন, সেটাই তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ। (পড়ুন, ১ শমূয়েল ১৬:৭.) তাই, শমূয়েল যখন বুঝতে পেরেছিলেন যে, যিহোবা যিশয়ের বড়ো সাত পুত্রের মধ্যে কাউকে মনোনীত করেননি, তখন তিনি ছোটো পুত্রকে মাঠ থেকে নিয়ে আসতে বলেছিলেন। সেই বিবরণ বলে: “পরে [যিশয়] লোক পাঠাইয়া [দায়ূদকে] আনাইলেন। তিনি ঈষৎ রক্তবর্ণ, সুনয়ন ও দেখিতে সুন্দর ছিলেন। তখন সদাপ্রভু কহিলেন, উঠ, ইহাকে অভিষেক কর, কেননা এ সেই ব্যক্তি। অতএব শমূয়েল তৈলশৃঙ্গ লইয়া তাঁহার ভ্রাতৃগণের মধ্যে তাঁহাকে অভিষেক করিলেন। আর সেই দিন হইতে সদাপ্রভুর আত্মা দায়ূদের উপরে আসিলেন” বা কার্যকর হতে শুরু করল।—১ শমূ. ১৬:১২, ১৩.
দায়ূদ খ্রিস্টকে চিত্রিত করেছিলেন
৪, ৫. (ক) দায়ূদ ও যিশুর মধ্যে কিছু সাদৃশ্য বর্ণনা করুন। (খ) কেন যিশুকে মহান দায়ূদ বলা যেতে পারে?
৪ দায়ূদের মতো যিশুও বৈৎলেহমে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, দায়ূদের সময়ের চেয়ে প্রায় ১,১০০ বছর পর। অনেকের চোখে যিশুকেও একজন রাজার মতো লাগেনি। অর্থাৎ তিনি সেইরকম রাজা ছিলেন না, যাঁর জন্য ইস্রায়েলের অনেকে অপেক্ষা করে ছিল। তা সত্ত্বেও, দায়ূদের মতো তাঁকেই যিহোবা মনোনীত করেছিলেন। দায়ূদের মতো তিনিও যিহোবার প্রিয়পাত্র ছিলেন।a (লূক ৩:২২) যিশুকেও যখন অভিষেক করা হয়েছিল, তখন ‘সদাপ্রভুর আত্মা তাহার উপরে আসিলেন।’
৫ এই দুজনের মধ্যে আরও সাদৃশ্য রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, দায়ূদের সঙ্গে তার মন্ত্রী অহীথোফল বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন আর যিশুর সঙ্গে তাঁর প্রেরিত ঈষ্করিয়োতীয় যিহূদা বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন। (গীত. ৪১:৯; যোহন ১৩:১৮) দায়ূদ ও যিশু উভয়েরই যিহোবার উপাসনাস্থলের জন্য প্রচণ্ড উদ্যোগ ছিল। (গীত. ২৭:৪; ৬৯:৯; যোহন ২:১৭) এ ছাড়া, যিশু দায়ূদের উত্তরাধিকারীও ছিলেন। যিশুর জন্মের আগে, একজন স্বর্গদূত তাঁর মাকে বলেছিলেন: “প্রভু ঈশ্বর তাঁহার পিতা দায়ূদের সিংহাসন তাঁহাকে দিবেন।” (লূক ১:৩২; মথি ১:১) কিন্তু, মশীহ সংক্রান্ত সমস্ত প্রতিজ্ঞা যেহেতু যিশুতে পূর্ণ হয়েছে, তাই তিনি দায়ূদের চেয়ে আরও অনেক মহান। তিনি হলেন মহান দায়ূদ, দীর্ঘ প্রতীক্ষিত মশীহ রাজা।—যোহন ৭:৪২.
মেষপালক-রাজাকে অনুসরণ করুন
৬. কোন কোন উপায়ে দায়ূদ একজন উত্তম মেষপালক ছিলেন?
৬ এ ছাড়া, যিশু একজন মেষপালকও। একজন উত্তম মেষপালকের বৈশিষ্ট্যগুলো কী? তিনি হলেন এমন কেউ, যিনি বিশ্বস্তভাবে ও সাহসের সঙ্গে তাঁর পালের যত্ন নেন, খাওয়ান ও রক্ষা করেন। (গীত. ২৩:২-৪) তরুণ বয়সে দায়ূদ একজন মেষপালক ছিলেন আর তিনি তার বাবার মেষগুলোর খুব ভালোভাবে যত্ন নিতেন। মেষপাল যখন হুমকির মুখে পড়েছিল, তখন তিনি সাহসী হয়েছিলেন এবং একটা সিংহ ও একটা ভল্লুকের কবল থেকে মেষদের রক্ষা করতে নিজের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছিলেন।—১ শমূ. ১৭:৩৪, ৩৫.
৭. (ক) কী দায়ূদকে রাজা হিসেবে তার কর্তব্যগুলোর জন্য প্রস্তুত করেছিল? (খ) কীভাবে যিশু উত্তম মেষপালক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিলেন?
৭ মেষের যত্ন নেওয়ার জন্য দায়ূদ যে-সময়গুলোতে মাঠে ও পাহাড়ে কাজ করেছিলেন, সেই কাজ তাকে ইস্রায়েল জাতিকে পালন করার কষ্টসাধ্য কর্তব্য ও দায়িত্বগুলোর জন্য প্রস্তুত করেছিল।b (গীত. ৭৮:৭০, ৭১) যিশুও নিজেকে একজন আদর্শ মেষপালক হিসেবে প্রমাণ করেছিলেন। তিনি তাঁর “ক্ষুদ্র মেষপাল” ও ‘আরও মেষকে’ পালন করার সময় যিহোবার কাছ থেকে শক্তি ও নির্দেশনা লাভ করেন। (লূক ১২:৩২; যোহন ১০:১৬) এভাবে যিশু উত্তম মেষপালক হিসেবে প্রমাণিত হন। তিনি তাঁর মেষদের এত ভালোভাবে জানেন যে, তিনি তাঁর প্রত্যেক মেষকে নাম ধরে ডাকেন। তিনি তাঁর মেষদের এত ভালোবাসেন যে, পৃথিবীতে থাকাকালে তিনি তাদের মঙ্গলের জন্য স্বেচ্ছায় নিজেকে বলি দিয়েছিলেন। (যোহন ১০:৩, ১১, ১৪, ১৫) উত্তম মেষপালক হিসেবে, যিশু এমন কিছু সম্পাদন করেন, যা দায়ূদ কখনোই করতে পারতেন না। তাঁর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদান মানবজাতির জন্য মৃত্যু থেকে উদ্ধার পাওয়ার পথ খুলে দিয়েছিল। কোনো কিছুই তাঁকে তাঁর ‘ক্ষুদ্র মেষপালকে’ স্বর্গে অমর জীবনের দিকে চালিত করা এবং তাঁর ‘আরও মেষকে’ নেকড়েতুল্য শিকারীদের কাছ থেকে মুক্ত এক ধার্মিক নতুন জগতে অনন্তজীবন লাভ করার দিকে পরিচালিত করা থেকে বিরত করতে পারবে না।—পড়ুন, যোহন ১০:২৭-২৯.
বিজয়ী রাজাকে অনুসরণ করুন
৮. কীভাবে দায়ূদ একজন বিজয়ী রাজা হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিলেন?
৮ রাজা হিসেবে দায়ূদ একজন দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ যোদ্ধা ছিলেন, যিনি ঈশ্বরের লোকেদের দেশকে সুরক্ষা করেছিলেন আর “দায়ূদ যে কোন স্থানে যাইতেন, সেই স্থানে সদাপ্রভু তাঁহাকে বিজয়ী করিতেন।” দায়ূদের নেতৃত্বে, সেই জাতির সীমানা মিশরের নদী থেকে শুরু করে ফরাৎ নদী পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছিল। (২ শমূ. ৮:১-১৪) যিহোবার শক্তিতে, তিনি সবচেয়ে ক্ষমতাধর শাসক হয়ে উঠেছিলেন। বাইবেল বলে: “দায়ূদের কীর্ত্তি সমস্ত দেশে ব্যাপিল, এবং সদাপ্রভু সর্ব্ব জাতির মধ্যে তাঁহা হইতে ভয় উপস্থিত করিলেন।”—১ বংশা. ১৪:১৭.
৯. ব্যাখ্যা করুন যে, কীভাবে নিযুক্ত রাজা যিশু একজন বিজয়ী ছিলেন।
৯ রাজা দায়ূদের মতো মনুষ্য যিশু নির্ভীক ছিলেন। নিযুক্ত রাজা হিসেবে, তিনি ভূতদের বা মন্দদূতদের ওপর তাঁর আধিপত্য দেখিয়েছিলেন, লোকেদেরকে সেগুলোর কবল থেকে উদ্ধার করেছিলেন। (মার্ক ৫:২, ৬-১৩; লূক ৪:৩৬) এমনকী প্রধান শত্রু শয়তান দিয়াবলেরও তার ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। যিহোবার সাহায্যে, যিশু জগৎকে জয় করেছিলেন, যেটা শয়তানের ক্ষমতায় শুয়ে রয়েছে।—যোহন ১৪:৩০; ১৬:৩৩; ১ যোহন ৫:১৯.
১০, ১১. স্বর্গে যোদ্ধা-রাজা হিসেবে যিশুর ভূমিকা কী?
১০ যিশু মৃত্যুবরণ করার, পুনরুত্থিত হওয়ার ও স্বর্গে আরোহণ করার প্রায় ৬০ বছর পর, প্রেরিত যোহন যিশু সম্বন্ধে এক ভবিষ্যদ্বাণীমূলক দর্শন লাভ করেছিলেন, যেটা দেখিয়েছিল যে, যিশু স্বর্গে যোদ্ধা-রাজার ভূমিকায় আছেন। যোহন লেখেন: “দেখ, এক শুক্লবর্ণ অশ্ব, এবং তাহার উপরে যিনি বসিয়া আছেন, তিনি ধনুর্ধারী, ও তাঁহাকে এক মুকুট দত্ত হইল; এবং তিনি জয় করিতে করিতে ও জয় করিবার [“সম্পন্ন করার,” NW] জন্য বাহির হইলেন।” (প্রকা. ৬:২) শ্বেতবর্ণ অশ্বের আরোহী হলেন যিশু। ১৯১৪ সালে “তাঁহাকে এক মুকুট দত্ত হইল,” যখন তিনি স্বর্গীয় রাজ্যে রাজা হিসেবে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। এরপর, “তিনি জয় করিতে করিতে . . . বাহির হইলেন।” হ্যাঁ, দায়ূদের মতো যিশুও হলেন একজন বিজয়ী রাজা। ঈশ্বরের রাজ্যের রাজা হিসেবে অধিষ্ঠিত হওয়ার অল্প কিছুসময় পর, তিনি যুদ্ধে শয়তানকে পরাজিত করেছিলেন এবং তাকে ও তার মন্দদূতদের পৃথিবীতে নিক্ষেপ করেছিলেন। (প্রকা. ১২:৭-৯) তাঁর বিজয়ী পরিভ্রমণ সেই পর্যন্ত চলতে থাকবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না তিনি “জয় সম্পন্ন” করবেন, শয়তানের দুষ্ট বিধিব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করবেন।—পড়ুন, প্রকাশিত বাক্য ১৯:১১, ১৯-২১.
১১ তবে, দায়ূদের মতো যিশু হলেন একজন সমবেদনাময় রাজা আর তিনি ‘বিস্তর লোককে’ আরমাগিদোনের মধ্যে দিয়ে রক্ষা করবেন। (প্রকা. ৭:৯, ১৪) অধিকন্তু, যিশু ও তাঁর সহদায়াদ অর্থাৎ পুনরুত্থিত ১,৪৪,০০০ জনের শাসনাধীনে, “ধার্ম্মিক অধার্ম্মিক উভয় প্রকার লোকের পুনরুত্থান হইবে।” (প্রেরিত ২৪:১৫) যারা পৃথিবীতে পুনরুত্থিত হবে, তাদের চিরকাল বেঁচে থাকার প্রত্যাশা থাকবে। তাদের জন্য কী এক চমৎকার ভবিষ্যৎই না অপেক্ষা করছে! আসুন আমরা সবাই যেন ‘সদাচরণ করিয়া’ চলার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই, যাতে আমরা সেই সময়ে বেঁচে থাকতে পারি, যখন এই পৃথিবী মহান দায়ূদের ধার্মিক, সুখী প্রজাদের দ্বারা পরিপূর্ণ হবে।—গীত. ৩৭:২৭-২৯.
প্রজ্ঞার জন্য শলোমনের প্রার্থনার উত্তর দেওয়া হয়
১২. শলোমন কীসের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন?
১২ দায়ূদের পুত্র শলোমনও যিশুকে চিত্রিত করেছিলেন।c শলোমন যখন রাজা হয়েছিলেন, তখন যিহোবা এক স্বপ্নের মাধ্যমে তার কাছে আবির্ভূত হয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যে, তিনি তাকে এমন যেকোনো কিছু দেবেন, যা তিনি চাইবেন। শলোমন আরও বেশি ধনসম্পদ, ক্ষমতা ও দীর্ঘায়ু চাইতে পারতেন। এর পরিবর্তে, তিনি নিঃস্বার্থভাবে যিহোবার কাছে বলেছিলেন: “আমি যেন এই লোকদের সাক্ষাতে বাহিরে যাইতে ও ভিতরে আসিতে পারি, সে জন্য এখন আমাকে বুদ্ধি [“প্রজ্ঞা,” NW] ও জ্ঞান দেও; কারণ তোমার এমন বৃহৎ প্রজাবৃন্দের বিচার করা কাহার সাধ্য?” (২ বংশা. ১:৭-১০) যিহোবা শলোমনের প্রার্থনার উত্তর দিয়েছিলেন।—পড়ুন, ২ বংশাবলি ১:১১, ১২.
১৩. শলোমনের প্রজ্ঞা কীভাবে অতুলনীয় ছিল আর এটার উৎস কে ছিলেন?
১৩ শলোমন যতদিন পর্যন্ত যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন, তার প্রজ্ঞার বাক্য তার সমসাময়িক ব্যক্তিদের মধ্যে অদ্বিতীয় ছিল। শলোমন “তিন সহস্র প্রবাদ বাক্য” বলেছিলেন। (১ রাজা. ৪:৩০, ৩২, ৩৪) এগুলোর মধ্যে অনেকগুলো লিখে রাখা হয়েছিল এবং এখনও সেই ব্যক্তিরা এগুলোকে মূল্যবান গণ্য করে, যারা প্রজ্ঞা অন্বেষণ করে। শিবার রানি “গূঢ়বাক্য” বা প্রশ্ন দ্বারা শলোমনের প্রজ্ঞা পরীক্ষা করার জন্য প্রায় ২,৪০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এসেছিলেন। শলোমন যা বলেছিলেন, তা শুনে ও তার রাজ্যের সমৃদ্ধি দেখে তিনি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। (১ রাজা. ১০:১-৯) বাইবেল এই কথা বলে শলোমনের প্রজ্ঞার উৎসকে শনাক্ত করে: “ঈশ্বর শলোমনের চিত্তে যে জ্ঞান [“প্রজ্ঞা,” NW] দিয়াছিলেন, তাঁহার সেই জ্ঞানের [“প্রজ্ঞার,” NW] উক্তি শুনিবার জন্য সর্ব্বদেশীয় লোক তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে চেষ্টা করিত।”—১ রাজা. ১০:২৪.
প্রজ্ঞাবান রাজাকে অনুসরণ করুন
১৪. কোন কোন দিক দিয়ে যিশু “শলোমন হইতে মহান্ এক ব্যক্তি”?
১৪ কেবলমাত্র একজন ব্যক্তিই স্পষ্টভাবে শলোমনের প্রজ্ঞাকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন যিশু খ্রিস্ট, যিনি নিজেকে “শলোমন হইতে মহান্ এক ব্যক্তি” হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। (মথি ১২:৪২) যিশু “অনন্ত জীবনের কথা” বলেছিলেন। (যোহন ৬:৬৮) উদাহরণস্বরূপ, পর্বতেদত্ত উপদেশে যিশু অনেক নীতি শিক্ষা দিয়েছিলেন, যেগুলো শলোমনের প্রবাদগুলোকে আরও বিশদভাবে বর্ণনা করে এবং সেগুলো সম্বন্ধে বোধগম্যতাকে আরও গভীর করে। শলোমন বেশ কিছু বিষয় বর্ণনা করেছিলেন, যা যিহোবার একজন উপাসককে “ধন্য [“সুখী,” NW]” করে। (হিতো. ৩:১৩; ৮:৩২, ৩৩; ১৪:২১; ১৬:২০) যিশু জোর দিয়েছিলেন যে, এমন বিষয়গুলো প্রকৃত সুখী করে, যেগুলো যিহোবার উপাসনার সঙ্গে এবং ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলোর পরিপূর্ণতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তিনি বলেছিলেন: “ধন্য [“সুখী,” NW] যাহারা আত্মাতে দীনহীন, কারণ স্বর্গ-রাজ্য তাহাদেরই।” (মথি ৫:৩) যারা যিশুর শিক্ষাগুলোতে প্রাপ্ত নীতিগুলোকে কাজে লাগায়, তারা যিহোবার আরও নিকটবর্তী হয়, যিনি হলেন “জীবনের উনুই।” (গীত. ৩৬:৯; হিতো. ২২:১১; মথি ৫:৮) খ্রিস্ট ‘ঈশ্বরের জ্ঞানের [‘প্রজ্ঞার,’ NW]’ মূর্ত প্রতীক। (১ করি. ১:২৪, ৩০) মশীহ রাজা হিসেবে, যিশু খ্রিস্টের ‘প্রজ্ঞার আত্মা’ রয়েছে।—যিশা. ১১:২.
১৫. কীভাবে আমরা ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা থেকে উপকৃত হতে পারি?
১৫ মহান শলোমনের অনুসারী হিসেবে, কীভাবে আমরা ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা থেকে উপকৃত হতে পারি? যেহেতু যিহোবার প্রজ্ঞা তাঁর বাক্যে প্রকাশিত হয়েছে, তাই আমাদের মনোযোগপূর্বক বাইবেল অধ্যয়ন করার, বিশেষ করে যিশুর লিপিবদ্ধ বাক্যগুলো অধ্যয়ন করার এবং আমরা যা পড়ি, তা নিয়ে ধ্যান করার দ্বারা এটা খুঁজে বের করার জন্য প্রচেষ্টা করতে হবে। (হিতো. ২:১-৫) অধিকন্তু, আমাদের ঈশ্বরের কাছে প্রজ্ঞা চাওয়ার ব্যাপারে অধ্যবসায়ী হতে হবে। ঈশ্বরের বাক্য আমাদের আশ্বাস দেয় যে, সাহায্য চেয়ে করা আমাদের আন্তরিক প্রার্থনাগুলোর উত্তর দেওয়া হবে। (যাকোব ১:৫) পবিত্র আত্মার সাহায্যে আমরা ঈশ্বরের বাক্যের অত্যন্ত মূল্যবান প্রজ্ঞা খুঁজে পাব, যা আমাদেরকে বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে মোকাবিলা করতে এবং বিজ্ঞ সিদ্ধান্তগুলো নিতে সাহায্য করতে পারে। (লূক ১১:১৩) এ ছাড়া, শলোমনকে “উপদেশক” বলা হয়েছিল, যিনি “লোকদিগকে জ্ঞান শিক্ষা দিতেন।” (উপ. ১২:৯, ১০) খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর মস্তক হিসেবে, যিশুও তাঁর লোকেদের একজন উপদেশক। (যোহন ১০:১৬; কল. ১:১৮) তাই, আমাদের মণ্ডলীর সভাগুলোতে উপস্থিত থাকা উচিত, যেখানে আমাদের ‘শিক্ষা দেওয়া’ হয়।
১৬. শলোমন ও যিশুর মধ্যে কোন সাদৃশ্য রয়েছে?
১৬ শলোমন ছিলেন একজন অত্যন্ত সক্রিয় রাজা। তিনি সারা দেশজুড়ে নির্মাণ কাজ সংগঠিত করেছিলেন, প্রাসাদ, রাস্তা, জলসরবরাহ প্রণালী, ভাণ্ডার-নগর, রথসমূহের ও অশ্বারোহীদের নগর নির্মাণের কাজ তত্ত্বাবধান করেছিলেন। (১ রাজা. ৯:১৭-১৯) সমগ্র রাজ্য তাঁর নির্মাণ কাজ থেকে উপকৃত হয়েছিল। যিশুও একজন নির্মাতা। তিনি “এই পাথরের” অর্থাৎ তাঁর নিজের ওপর মণ্ডলী গেঁথেছিলেন। (মথি ১৬:১৮) এ ছাড়া, তিনি নতুন জগতে সম্পাদিত হবে এমন নির্মাণ কাজ তত্ত্বাবধান করবেন।—যিশা. ৬৫:২১, ২২.
শান্তিরাজকে অনুসরণ করুন
১৭. (ক) শলোমনের শাসনের এক উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য কী ছিল? (খ) শলোমন কী সম্পাদন করতে পারেননি?
১৭ শলোমন নামটা এমন এক মূল অর্থ থেকে এসেছে, যেটা হল “শান্তি।” রাজা শলোমন যিরূশালেম থেকে শাসন করতেন, যে-নামের অর্থ, “দ্বিগুণ শান্তির অধিকারী।” তার ৪০ বছরের শাসনের সময় ইস্রায়েল জাতি নজিরবিহীন মাত্রায় শান্তি উপভোগ করেছিল। সেই বছরগুলো সম্বন্ধে বাইবেল বলে: “শলোমনের সমস্ত অধিকার-সময়ে দান অবধি বের্-শেবা পর্য্যন্ত যিহূদা ও ইস্রায়েল প্রত্যেক জন আপন আপন দ্রাক্ষালতার ও আপন আপন ডুমুর বৃক্ষের তলে নির্ভয়ে বাস করিত।” (১ রাজা. ৪:২৫) তবুও, শলোমন তার সমস্ত প্রজ্ঞা দিয়েও, তার প্রজাদেরকে অসুস্থতা, পাপ ও মৃত্যুর দাসত্ব থেকে মুক্ত করতে পারেননি। কিন্তু, মহান শলোমন তাঁর প্রজাদেরকে সেই সমস্তকিছু থেকে মুক্ত করবেন।—পড়ুন, রোমীয় ৮:১৯-২১.
১৮. খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে আমরা কোন আশীর্বাদগুলো উপভোগ করি?
১৮ এমনকী বর্তমানেও খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিদ্যমান। বাস্তবিকপক্ষে, আমরা এক প্রকৃত আধ্যাত্মিক পরমদেশ উপভোগ করছি। ঈশ্বরের সঙ্গে ও সহমানবদের সঙ্গে আমাদের শান্তি রয়েছে। আজকে আমরা যে-আশীর্বাদগুলো উপভোগ করছি, সেই বিষয়ে ভাববাদী যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী লক্ষ করুন: “তাহারা আপন আপন খড়্গ ভাঙ্গিয়া লাঙ্গলের ফাল গড়িবে, ও আপন আপন বড়শা ভাঙ্গিয়া কাস্তা গড়িবে; এক জাতি অন্য জাতির বিপরীতে আর খড়্গ তুলিবে না, তাহারা আর যুদ্ধ শিখিবে না।” (যিশা. ২:৩, ৪) ঈশ্বরের আত্মার সঙ্গে সংগতি রেখে কাজ করার মাধ্যমে আমরা আধ্যাত্মিক পরমদেশের সৌন্দর্যে অবদান রাখি।
১৯, ২০. আনন্দ করার কোন কারণগুলো আমাদের রয়েছে?
১৯ কিন্তু, ভবিষ্যৎ এমনকী আরও ভালো হবে। বাধ্য মানুষেরা যখন যিশুর শাসনাধীনে এমন শান্তি উপভোগ করবে, যা আগে কখনো করেনি, তখন তারা ধীরে ধীরে “ক্ষয়ের দাসত্ব হইতে মুক্ত” হবে, যতদিন পর্যন্ত না তারা মানব সিদ্ধতায় পৌঁছায়। (রোমীয় ৮:২১) সহস্র বছরের রাজত্বের শেষে যখন তারা চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে, তখন “মৃদুশীলেরা দেশের অধিকারী হইবে, এবং শান্তির বাহুল্যে আমোদ করিবে।” (গীত. ৩৭:১১; প্রকা. ২০:৭-১০) সত্যিই, খ্রিস্ট যিশুর শাসন এমন দিকগুলো দিয়ে শলোমনের শাসনকে ছাড়িয়ে যাবে, যা আমরা এখন কল্পনাও করতে পারি না!
২০ মোশি, দায়ূদ ও শলোমনের তত্ত্বাবধানে যেমন ইস্রায়েল আনন্দ করেছিল, তেমনই আমরা খ্রিস্টের শাসনাধীনে আরও বেশি আনন্দ উপভোগ করব। (১ রাজা. ৮:৬৬) যিহোবা আমাদের জন্য তাঁর একজাত পুত্রকে—মহান মোশি, দায়ূদ ও শলোমনকে—জুগিয়েছেন বলে আমরা সমস্ত ধন্যবাদ যিহোবাকে প্রদান করি!
[পাদটীকাগুলো]
a দায়ূদ নামের অর্থ সম্ভবত “প্রিয়।” যিশুর বাপ্তিস্ম এবং আবার তাঁর রূপান্তরের সময়ে যিহোবা স্বর্গ থেকে কথা বলেছিলেন, তাঁকে “আমার প্রিয় পুত্ত্র” বলে সম্বোধন করেছিলেন।—মথি ৩:১৭; ১৭:৫.
b একইসময়ে দায়ূদ এমন এক মেষশাবকের মতো হয়ে উঠেছিলেন, যেটা এর পালকের ওপর নির্ভর করে। তিনি সুরক্ষা ও নির্দেশনার জন্য সর্বমহান মেষপালক যিহোবার ওপর নির্ভর করেছিলেন। “সদাপ্রভু আমার পালক,” পূর্ণ আস্থা সহকারে তিনি বলেছিলেন। “আমার অভাব হইবে না।” (গীত. ২৩:১) যোহন বাপ্তাইজক যিশুকে “ঈশ্বরের মেষশাবক” হিসেবে শনাক্ত করেছিলেন।—যোহন ১:২৯.
c আগ্রহজনক বিষয় হল, শলোমনের আরেকটা নাম ছিল যিদীদীয়, যেটার অর্থ হল “সদাপ্রভুর প্রিয়।”—২ শমূ. ১২:২৪, ২৫.
আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?
• কীভাবে যিশু হলেন মহান দায়ূদ?
• কীভাবে যিশু হলেন মহান শলোমন?
• মহান দায়ূদ, যিনি আবার মহান শলোমনও, তাঁর কোন বিষয়টাকে আপনি মূল্যবান বলে মনে করেন?
[৩১ পৃষ্ঠার চিত্র]
শলোমনের ঈশ্বরদত্ত প্রজ্ঞা মহান শলোমনের প্রজ্ঞার পূর্বাভাস দিয়েছিল
[৩২ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিশুর শাসন এমন দিকগুলো দিয়ে শলোমনের ও দায়ূদের শাসনকে ছাড়িয়ে যাবে, যা আমরা এখন কল্পনাও করতে পারি না!