এক বিভক্ত জগতে আপনার নিরপেক্ষতা বজায় রাখুন
“ঈশ্বরের যাহা যাহা, ঈশ্বরকে দেও।”—মথি ২২:২১.
১. কীভাবে আমরা ঈশ্বর এবং মানবসরকার উভয়ের প্রতি বাধ্যতা দেখাতে পারি?
বাইবেল আমাদেরকে মানবসরকারের বাধ্য হতে শিক্ষা দেয়। তবে বাইবেল এটাও বলে, আমাদের সবসময় ঈশ্বরের বাধ্য থাকতে হবে। (প্রেরিত ৫:২৯; তীত ৩:১) কীভাবে তা সম্ভব? যিশু একটা নীতি সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করেছিলেন, যেটা আমাদের বুঝতে সাহায্য করে, আমাদের কার বাধ্য হওয়া উচিত। তিনি বলেছিলেন, “কৈসরের যাহা যাহা, কৈসরকে দেও, আর ঈশ্বরের যাহা যাহা, ঈশ্বরকে দেও।”[১] (মথি ২২:২১) আমরা যখন সরকারের আইন মান্য করি, সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্মানপূর্ণ আচরণ করি এবং কর প্রদান করি, তখন আমরা “কৈসরের যাহা যাহা, কৈসরকে” দিয়ে থাকি। (রোমীয় ১৩:৭) কিন্তু, সরকার যদি আমাদের এমন কিছু করতে বলে যা ঈশ্বরের ইচ্ছার বিরুদ্ধে, তা হলে আমরা সবসময় সম্মানের সঙ্গে তা করা প্রত্যাখ্যান করি।
২. কীভাবে আমরা দেখাই, আমরা জগতের রাজনীতিতে কোনো পক্ষ নিই না?
২ “ঈশ্বরের যাহা যাহা, ঈশ্বরকে” দেওয়ার একটা উপায় হল, এই জগতের রাজনৈতিক বিষয়গুলোতে কোনো পক্ষ না নেওয়া। আমরা এই বিষয়গুলোতে নিরপেক্ষ থাকি। (যিশা. ২:৪) যিহোবা যেহেতু মানবসরকারকে শাসন করার সুযোগ দিয়েছেন, তাই আমরা তাদের বিরোধিতা করি না। এ ছাড়া, আমরা দেশাত্ববোধক বা জাতীয়াতাবাদী কোনো কার্যকলাপে জড়িত হই না। (রোমীয় ১৩:১, ২) আমরা সরকার পরিবর্তন করার চেষ্টা করি না অথবা রাজনীতিবিদদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করি না। আর আমরা রাজনৈতিক নির্বাচনে ভোট দিই না কিংবা নিজেরা রাজনীতিবিদ হই না।
৩. কেন আমাদের নিরপেক্ষ থাকতে হবে?
৩ ঈশ্বর বিভিন্ন কারণে আমাদের নিরপেক্ষ থাকতে বলেছেন। এর মধ্যে একটা কারণ হল, আমরা যিশুকে অনুকরণ করি, যিনি বলেছিলেন, ‘আমি জগতের নই।’ তিনি কখনো রাজনৈতিক বিষয়ে অথবা যুদ্ধে কোনো পক্ষকে সমর্থন করেননি। (যোহন ৬:১৫; ১৭:১৬) আরেকটা কারণ হল, আমরা ঈশ্বরের রাজ্যকে সমর্থন করি। আমরা যেহেতু মানবসরকারকে সমর্থন করি না, তাই আমরা শুদ্ধ বিবেক নিয়ে এটা প্রচার করতে পারি, একমাত্র ঈশ্বরের রাজ্যের মাধ্যমে মানবজাতির সমস্ত সমস্যা দূর হবে। মিথ্যা ধর্মগুলো রাজনৈতিক বিষয়ে বিভিন্ন পক্ষকে সমর্থন করে থাকে আর এটা লোকেদের বিভক্ত করে। কিন্তু আমরা যেহেতু নিরপেক্ষ, তাই আমরা বিশ্বব্যাপী আমাদের ভাই-বোনদের সঙ্গে একতাবদ্ধ থাকি।—১ পিতর ২:১৭.
৪. (ক) নিরপেক্ষ থাকার বিষয়টা যে আরও কঠিন হয়ে পড়বে, তা আমরা কীভাবে জানি? (খ) কেন নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য আমাদের এখনই প্রস্তুত হতে হবে?
৪ আমরা হয়তো এমন জায়গায় বাস করতে পারি, যেখানে লোকেরা এমনটা আশা করে না, রাজনৈতিক বিষয়গুলোতে আমাদের কোনো একটা পক্ষ নিতেই হবে। কিন্তু, যতই আমরা শয়তানের বিধিব্যবস্থার ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, আমাদের জন্য নিরপেক্ষ থাকা ততই কঠিন হয়ে পড়বে। বর্তমানে লোকেরা ‘ঝগড়া করে আপোস করে না’ এবং তারা “হঠকারী” বা ভেবে-চিন্তে কাজ করে না। তাই এটা বলা যায়, দিন দিন তারা আরও বিভক্ত হয়ে পড়বে। (২ তীম. ৩:৩, ৪, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন) আমাদের কোনো কোনো ভাই-বোন তাদের দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি হঠাৎ পরিবর্তন হওয়ার কারণে ইতিমধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়েছে। তাই, এমনকী কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও নিরপেক্ষ থাকার জন্য আমাদের এখন থেকেই প্রস্তুত হতে হবে। আসুন, আমরা প্রস্তুত হওয়ার জন্য চারটে বিষয় নিয়ে আলোচনা করি।
মানবসরকারকে যিহোবা যেভাবে দেখেন, সেভাবে দেখুন
৫. মানবসরকার সম্বন্ধে যিহোবা কী মনে করেন?
৫ নিরপেক্ষ থাকার প্রথম উপায় হল, মানবসরকারকে যিহোবা যেভাবে দেখেন, সেভাবে দেখা। যিহোবা যখন মানুষ সৃষ্টি করেছিলেন, তখন তিনি তাদের অন্য মানুষের উপর শাসন করার অধিকার দেননি। (যির. ১০:২৩) তিনি সকল মানুষকে একটা পরিবার হিসেবে দেখেন। কিন্তু, বিভিন্ন মানবসরকার লোকেদের বিভক্ত করেছে কারণ তারা এমনটা দাবি করে, তাদের জাতিই সর্বশ্রেষ্ঠ। এমনকী কোনো কোনো সরকারকে যদিও ভালো বলে মনে হয়, কিন্তু তারা সমস্ত সমস্যা সমাধান করতে পারে না। এ ছাড়া, ১৯১৪ সালে ঈশ্বরের রাজ্য শাসন শুরু করার পর থেকে মানবসরকারগুলো এই রাজ্যের শত্রু হয়ে উঠেছে। খুব শীঘ্র এই রাজ্য সমস্ত মানবসরকারকে দূর করে দেবে।—পড়ুন, গীতসংহিতা ২:২, ৭-৯.
৬. সরকারি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের কেমন আচরণ করা উচিত?
৬ ঈশ্বর মানবসরকারকে থাকার সুযোগ দিয়েছেন কারণ তারা কিছুটা শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষা করতে পারে। এর ফলে আমরা ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করতে পারি। (রোমীয় ১৩:৩, ৪) আমরা যাতে শান্তিতে ঈশ্বরের উপাসনা করতে পারি, সেইজন্য তিনি এমনকী কর্তৃত্বে থাকা ব্যক্তিদের জন্য আমাদের প্রার্থনা করতে বলেন। (১ তীম. ২:১, ২) আমাদের সঙ্গে যখন ন্যায্য আচরণ করা হয় না, তখন আমরা হয়তো সাহায্যের জন্য সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে পারি। পৌল ঠিক এটাই করেছিলেন। (প্রেরিত ২৫:১১) বাইবেল যদিও বলে, মানবসরকারগুলো শয়তানের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, কিন্তু বাইবেল কখনো এটা বলে না, সরকারি কর্তৃপক্ষের প্রত্যেক ব্যক্তিকে শয়তান নিয়ন্ত্রণ করে। (লূক ৪:৫, ৬) তাই, আমরা কখনো কাউকে এমন ধারণা দেব না, নির্দিষ্ট কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে দিয়াবল নিয়ন্ত্রণ করছে। বাইবেল বলে, আমাদের কাউকে অপমান করা উচিত নয়।—তীত ৩:১, ২.
৭. কোন ধরনের চিন্তাভাবনা আমাদের এড়িয়ে চলতে হবে?
৭ কোনো রাজনীতিবিদ অথবা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষসমর্থন না করার মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরের বাধ্য থাকি। আমরা সেই সময়েও তাদের পক্ষসমর্থন করি না, যখন তাদের ধারণা বা দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের জন্য উপকারজনক বলে মনে হয়। কখনো কখনো তা করা আমাদের জন্য সহজ না-ও হতে পারে। মনে করুন, লোকেরা এমন এক সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছে, যে-সরকারের কারণে লোকেদের আর এমনকী যিহোবার সাক্ষিদেরও কষ্টভোগ করতে হচ্ছে। আপনি নিশ্চয়ই সেই বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগ দেবেন না। কিন্তু আপনি কি এমনটা চিন্তা করবেন, বিদ্রোহীরা ঠিক কাজই করছে আর এটা আশা করবেন, তাদের বিদ্রোহ সফল হোক? (ইফি. ২:২) আমরা যদি নিরপেক্ষ থাকতে চাই, তা হলে কোনো একটা পক্ষ অন্য পক্ষের চেয়ে সঠিক অথবা ভালো এমন চিন্তাভাবনা আমাদের এড়িয়ে চলতে হবে। আর এটা আমাদের কথা ও কাজের মাধ্যমে স্পষ্ট হবে।
“সতর্ক” ও “অমায়িক” হোন
৮. নিরপেক্ষতা বজায় রাখা যখন কঠিন হয়ে পড়ে, তখন আমরা কীভাবে “সতর্ক” ও “অমায়িক” হতে পারি?
৮ নিরপেক্ষ থাকার দ্বিতীয় উপায় হল, “সর্পের ন্যায় সতর্ক ও কপোতের ন্যায় অমায়িক” হওয়া। (পড়ুন, মথি ১০:১৬, ১৭.) আমরা যখন আগে থেকে কঠিন পরিস্থিতির বিষয়ে চিন্তা করি, তখন আমরা দেখাই, আমরা “সতর্ক” আছি। আর আমরা যখন সেই কঠিন পরিস্থিতিতে নিরপেক্ষ থাকি, তখন আমরা “অমায়িক” বা নিরীহ অবস্থান বজায় রাখি। আসুন আমরা এখন এইরকম কিছু পরিস্থিতির বিষয়ে আর কীভাবে আমরা সেই পরিস্থিতিতে নিরপেক্ষ থাকতে পারি, সেই বিষয়ে আলোচনা করি।
৯. অন্যদের সঙ্গে কথাবার্তা বলার সময় আমাদের কোন ধরনের সতর্কতা বজায় রাখতে হবে?
৯ কথাবার্তা। লোকেরা যখন রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে শুরু করে, তখন আমাদের অবশ্যই খুব সতর্ক থাকতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ, আমরা যখন কারো সঙ্গে ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে কথা বলি, তখন আমরা এইরকম কিছু বলব না, নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দল অথবা নেতার ধারণা কিংবা মতামতের সঙ্গে আমরা একমত বা দ্বিমত পোষণ করি। মানবজাতির সমস্যাগুলো সমাধান করার জন্য মানুষ কী করবে তা আলোচনা করার পরিবর্তে, তাদেরকে বাইবেল থেকে দেখান, ঈশ্বরের রাজ্য কীভাবে সেই সমস্যাগুলো স্থায়ীভাবে সমাধান করবে। আবার লোকেরা যদি অন্য কোনো বিষয়, যেমন গর্ভপাত অথবা সমলিঙ্গের ব্যক্তিদের মধ্যে বিয়ে নিয়ে যুক্তিতর্ক করতে চায়, তা হলে ঈশ্বরের বাক্য এই বিষয়ে কী বলে আর আপনি কীভাবে নিজের জীবনে তা অনুসরণ করার চেষ্টা করছেন, সেই বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলুন। কেউ যদি বলে, নির্দিষ্ট কোনো আইন পরিবর্তন করা উচিত, তা হলে সেই সময়ে আমরা কোনো পক্ষ নেব না এবং সেই ব্যক্তিকে নিজের মতামত পরিবর্তন করার জন্য জোরাজুরি করব না।
১০. প্রচারমাধ্যমে কিছু দেখার অথবা পড়ার সময়, আমরা কীভাবে নিশ্চিত হতে পারি, আমরা নিরপেক্ষতা বজায় রাখছি?
১০ প্রচারমাধ্যম। মাঝে মাঝে, কোনো সংবাদ এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়, যেন দৃঢ়ভাবে কোনো একটা পক্ষকে সমর্থন করা হচ্ছে। এটা বিশেষভাবে সেই দেশগুলোর ক্ষেত্রে সত্য, যেখানে সংবাদমাধ্যম সরকারের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। যদি সংবাদ সংস্থা অথবা সংবাদদাতা কোনো পক্ষকে সমর্থন করে, তা হলে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যেন আমরাও তাদের মতো করে চিন্তা করতে শুরু না করি। উদাহরণ স্বরূপ, নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘আমি কি এমন কোনো সংবাদদাতার কথা শুনতে পছন্দ করি, যার রাজনীতি বিষয়ক আলোচনার সঙ্গে আমিও একমত?’ নিরপেক্ষ থাকার জন্য এমন সংবাদ দেখা অথবা পড়া এড়িয়ে চলুন, যেগুলো রাজনৈতিক বিষয়ে কোনো একটা পক্ষকে সমর্থন করে। এর পরিবর্তে, এমন সংবাদ খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন, যেগুলো পক্ষপাতদুষ্ট নয়। আর আপনি যা শোনেন, সেগুলোকে সবসময় বাইবেলে প্রাপ্ত ‘নিরাময় বাক্য সমূহের আদর্শের’ সঙ্গে তুলনা করুন।—২ তীম. ১:১৩.
১১. নিজেদের বস্তুগত বিষয়গুলো যখন আমাদের কাছে অতীব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, তখন নিরপেক্ষতা বজায় রাখা কেন কঠিন হয়ে উঠতে পারে?
১১ বস্তুবাদিতা। আমাদের কাছে যখন টাকাপয়সা ও বস্তুগত বিষয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, তখন নিরপেক্ষতা বজায় রাখা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে উঠতে পারে। ১৯৭০ সালের পর, মালাউইর অনেক সাক্ষি একটা রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে প্রত্যাখ্যান করেছিল আর তাই তাদেরকে নিজেদের সমস্ত কিছু পরিত্যাগ করতে হয়েছিল। দুঃখের বিষয় হল, কেউ কেউ তাদের আরামদায়ক জীবন পরিত্যাগ করেনি। রূথ নামে একজন বোন স্মরণ করে বলেন, “কেউ কেউ প্রথমে আমাদের সঙ্গে নির্বাসনে গিয়েছিল, কিন্তু পরে রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়ে ঘরে ফিরে গিয়েছিল। তারা শরণার্থী শিবিরের কষ্টকর জীবনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেনি।” কিন্তু ঈশ্বরের অধিকাংশ দাস তাদের মতো নয়। নিরপেক্ষ থাকার কারণে তাদের যদি আর্থিক সমস্যায় পড়তে হয় অথবা নিজেদের সমস্ত কিছু পরিত্যাগ করতে হয়, তারপরও তারা নিরপেক্ষ থাকে।—ইব্রীয় ১০:৩৪.
১২, ১৩. (ক) সমস্ত মানুষকে যিহোবা কীভাবে দেখেন? (খ) নিজেদের দেশ সম্বন্ধে আমরা অতিরিক্ত গর্বিত হয়ে পড়ছি কি না, তা আমরা কীভাবে জানতে পারি?
১২ গর্ব। লোকেরা সাধারণত তাদের জাতি, গোত্র, সংস্কৃতি, শহর অথবা দেশ নিয়ে গর্ব করে থাকে। কিন্তু, যিহোবা কোনো ব্যক্তি অথবা দলকে, অন্য কোনো ব্যক্তি অথবা দলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করেন না। তাঁর কাছে আমরা সবাই সমান। অবশ্য, যিহোবা আমাদেরকে একে অন্যের চেয়ে আলাদাভাবে সৃষ্টি করেছেন আর আমরা এই বৈচিত্র্য উপভোগ করতে পারি ও এর প্রতি সম্মান দেখাতে পারি। তিনি চান না, আমরা নিজেদের সংস্কৃতি ভুলে যাই। আর তিনি এটাও চান না, আমরা নিজেদেরকে অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করি।—রোমীয় ১০:১২.
১৩ আমাদের কখনোই নিজেদের দেশ অথবা জাতি সম্বন্ধে এতটাই গর্বিত হওয়া উচিত নয় যে, আমরা অন্যদের চেয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠ বলে মনে করি। আমরা যদি নিজেদেরকে অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করি, তা হলে আমাদের পক্ষে নিরপেক্ষ থাকা খুব কঠিন হয়ে উঠতে পারে। প্রথম শতাব্দীতে ঠিক এটাই ঘটেছিল। ইব্রীয় ভাইদের মধ্যে কেউ কেউ গ্রিক বিধবাদের সঙ্গে ন্যায্য আচরণ করেনি। (প্রেরিত ৬:১) আমাদের মধ্যেও এইরকম গর্বিত মনোভাব গড়ে উঠতে শুরু করেছে কি না, তা আমরা কীভাবে জানতে পারি? মনে করুন, অন্য জায়গা থেকে আসা কোনো ভাই অথবা বোন আপনাকে কোনো পরামর্শ দিয়েছেন। ‘আমরা আরও ভালো জানি’ এমন চিন্তা করে আপনি কি সঙ্গেসঙ্গে সেই পরামর্শ বাতিল করে দেন? যদি তা-ই হয়, তা হলে এই গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ মনে রাখুন: “নম্রভাবে প্রত্যেক জন আপনা হইতে অন্যকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান কর।”—ফিলি. ২:৩.
যিহোবা আপনাকে সাহায্য করবেন
১৪. কীভাবে প্রার্থনা আমাদের সাহায্য করতে পারে আর বাইবেলের কোন উদাহরণ এর প্রমাণ দেয়?
১৪ নিরপেক্ষ থাকার তৃতীয় উপায় হল, যিহোবার উপর নির্ভর করা। পবিত্র আত্মা চেয়ে প্রার্থনা করুন, যা আপনাকে ধৈর্য ও আত্মসংযম প্রদান করতে পারে। সরকার যদি অসৎ বা অন্যায্য কোনো কাজ করে, তা হলে এই গুণগুলো আপনাকে সাহায্য করবে। যিহোবার কাছে এমন পরিস্থিতি শনাক্ত করার জন্য প্রজ্ঞা চেয়ে প্রার্থনা করুন, যে-পরিস্থিতিতে আপনার পক্ষে হয়তো নিরপেক্ষ থাকা কঠিন হতে পারে। সেই পরিস্থিতিতে আপনি যাতে সঠিক কাজ করতে পারেন, সেইজন্য তাঁর কাছে সাহায্য চান। (যাকোব ১:৫) যিহোবার প্রতি অনুগত থাকার কারণে আপনাকে হয়তো কারাগারে পাঠানো হতে পারে অথবা অন্য কোনো শাস্তি দেওয়া হতে পারে। যদি তা-ই হয়, তা হলে সাহস চেয়ে প্রার্থনা করুন, যাতে আপনি অন্যদের কাছে স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেন, কেন আপনি নিরপেক্ষতা বজায় রাখছেন। আপনি এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারেন, যিহোবা আপনাকে ধৈর্য ধরতে সাহায্য করবেন।—পড়ুন, প্রেরিত ৪:২৭-৩১.
১৫. কীভাবে বাইবেল আমাদেরকে নিরপেক্ষ থাকতে সাহায্য করতে পারে? (এ ছাড়া, “ঈশ্বরের বাক্য তাদের বিশ্বাসকে দৃঢ় করেছে” শিরোনামের বাক্স দেখুন।)
১৫ যিহোবা আমাদের শক্তিশালী করার জন্য বাইবেল দিয়েছেন। তাই সেইসমস্ত শাস্ত্রপদ নিয়ে ধ্যান করুন, যেগুলো আপনাকে নিরপেক্ষ থাকতে সাহায্য করবে। এই শাস্ত্রপদগুলো মুখস্থ করার ও মনে রাখার চেষ্টা করুন কারণ এগুলো আপনাকে সেই সময়েও সাহায্য করবে, যখন আপনার কাছে হয়তো কোনো বাইবেল থাকবে না। এ ছাড়া, বাইবেল ভাবী আশীর্বাদের বিষয়ে আপনার আশাকে আরও দৃঢ় করতে পারে। তাড়না সহ্য করার জন্য আমাদের এই আশা প্রয়োজন। (রোমীয় ৮:২৫) তাই সেইসমস্ত শাস্ত্রপদ বাছাই করুন, যেখানে নতুন জগতে আপনি যা উপভোগ করতে চান, সেই বিষয়ে বর্ণনা করা আছে আর এরপর নিজেকে সেখানে কল্পনা করুন।
যিহোবার বিশ্বস্ত দাসদের উদাহরণ থেকে উপকৃত হোন
১৬, ১৭. ঈশ্বরের যে-বিশ্বস্ত দাসেরা নিরপেক্ষতা বজায় রেখেছিলেন, তাদের উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)
১৬ চতুর্থ যে-বিষয়টা আমাদের নিরপেক্ষ থাকতে সাহায্য করবে তা হল, যিহোবার বিশ্বস্ত দাসদের উদাহরণ নিয়ে চিন্তা করা। বাইবেলের সময়ে অনেক ব্যক্তি সাহসী ছিলেন আর তারা এমন বিজ্ঞতাপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যা তাদেরকে নিরপেক্ষ থাকতে সাহায্য করেছিল। শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগোর কথা চিন্তা করুন। তারা এমন প্রতিমার উপাসনা করা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, যে-প্রতিমা বাবিলের সরকারকে চিত্রিত করেছিল। (পড়ুন, দানিয়েল ৩:১৬-১৮.) বাইবেলের এই বিবরণ বর্তমানে অনেক সাক্ষিকে সাহসী হতে এবং তারা যেখানে বাস করে সেই দেশের পতাকা অভিবাদন করা প্রত্যাখ্যান করতে সাহায্য করেছে। যিশু রাজনীতিতে অথবা লোকেদের বিভক্ত করে এমন বিষয়গুলোতে জড়িত হননি। তিনি জানতেন, তাঁর উত্তম উদাহরণ তাঁর শিষ্যদের সাহায্য করবে। তিনি বলেছিলেন: “সাহস কর, আমিই জগৎকে জয় করিয়াছি।”—যোহন ১৬:৩৩.
১৭ আমাদের সময়েও অনেক সাক্ষি নিরপেক্ষতা বজায় রেখেছে। যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকার কারণে তাদের মধ্যে কাউকে কাউকে নির্যাতন করা হয়েছে, কারাগারে পাঠানো হয়েছে আর এমনকী হত্যা করা হয়েছে। তাদের উদাহরণ আমাদের সাহস বজায় রাখার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে। তুরস্কের একজন ভাই বলেছিলেন: “হিটলারের সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে প্রত্যাখ্যান করার কারণে ফ্রাঞ্জ রেইটার নামে একজন যুবক ভাইকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। মৃত্যুর আগের রাতে তার মাকে লেখা একটা চিঠিতে তিনি যিহোবার প্রতি অসাধারণ বিশ্বাস ও আস্থা প্রকাশ করেছিলেন। আমি যদি এই ধরনের পরীক্ষার মুখোমুখি হই, তা হলে আমিও তাকে অনুসরণ করতে চাই।”[২]
১৮, ১৯. (ক) কীভাবে আপনার মণ্ডলীর সদস্যরা আপনাকে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে? (খ) আপনি কী করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ?
১৮ আপনার মণ্ডলীর ভাই-বোনেরা আপনাকে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে। আপনি যদি কোনো কঠিন পরিস্থিতিতে থাকেন, তা হলে সেটা প্রাচীনদের জানান। তারা আপনাকে বাইবেল থেকে উত্তম পরামর্শ দিতে পারবেন। এ ছাড়া, মণ্ডলীর সদস্যরা যদি আপনার পরিস্থিতি সম্বন্ধে জানতে পারে, তা হলে তারাও আপনাকে উৎসাহিত করতে পারবে। তাদেরকে আপনার জন্য প্রার্থনা করতে বলুন। অবশ্য আমাদেরও ভাই-বোনদেরকে সাহায্য করা উচিত ও তাদের জন্য প্রার্থনা করা উচিত। (মথি ৭:১২) কারাগারে বন্দি রয়েছে এমন ভাই-বোনদের নামের তালিকা খুঁজে বের করার জন্য jw.org ওয়েবসাইটের ইংরেজি সংস্করণে “Jehovah’s Witnesses Imprisoned for Their Faith—By Location” শিরোনামের প্রবন্ধ দেখুন। এই প্রবন্ধ NEWSROOM > LEGAL DEVELOPMENTS-এর অধীনে খুঁজে পাওয়া যাবে। কয়েকটা নাম বাছাই করুন এবং যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন, যেন তিনি এই ভাই-বোনদের সাহসী হতে ও তাঁর প্রতি অনুগত থাকতে সাহায্য করেন।—ইফি. ৬:১৯, ২০.
১৯ আমরা জানি, শেষ যতই এগিয়ে আসছে, সরকারগুলো তাদের পক্ষসমর্থন করার জন্য আমাদের আরও বেশি চাপ দেবে। তাই, এই বিভক্ত জগতে এখনই নিরপেক্ষ থাকার জন্য প্রস্তুত হওয়া আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ!
^ [১] (১ অনুচ্ছেদ) যিশু যখন কৈসর সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন, তখন তিনি সরকারকে বুঝিয়েছিলেন। সেই সময়ে কৈসরই ছিলেন লোকেদের শাসক এবং সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ।
^ [২] (১৭ অনুচ্ছেদ) যিহোবার সাক্ষিরা—ঈশ্বরের রাজ্যের ঘোষণাকারী (ইংরেজি) বইয়ের ৬৬২ পৃষ্ঠা দেখুন এবং ঈশ্বরের রাজ্য শাসন করছে! (ইংরেজি) বইয়ের ১৫০ পৃষ্ঠায় দেওয়া “তিনি ঈশ্বরের গৌরবের জন্য মৃত্যুবরণ করেছেন” শিরোনামের বাক্স দেখুন।