পাঠ ৬
শাস্ত্রপদ পড়া ও প্রয়োগ করা
১-৩. বক্তৃতা দেওয়ার সময় কীভাবে আমাদের শাস্ত্রপদ পড়া উচিত?
১ যখন আপনি অন্যদেরকে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বলেন, তা সেটা একান্তে বা প্ল্যাটফর্ম থেকে জনসাধারণের উদ্দেশে যেভাবেই হোক, তখন আপনার আলোচনা সেই শাস্ত্রপদগুলোকে কেন্দ্র করেই হয়ে থাকে, যেগুলো আপনি বাইবেল থেকে পড়ে থাকেন। তাই, সেই শাস্ত্রপদগুলো পড়ার সময় ভালভাবে তা করা উচিত। এটা নীরসভাবে করা উচিত নয়। এর পরিবর্তে, পড়ার মাধ্যমে যদি এর উদ্দেশ্য সাধন করতে হয়, তাহলে এটা আপনার উপস্থাপনায় অতিরিক্ত উদ্দীপনা নিয়ে আসা উচিত। এই কারণে, স্পিচ কাউন্সেল স্লিপ-এ “জোর দিয়ে শাস্ত্রপদ পড়া” বিষয়টা তালিকাবদ্ধ করা হয়েছে, যেটার প্রতি এমন প্রত্যেকে বিশেষ বিবেচনা দেখাতে পারে, যারা একজন যোগ্য পরিচারক হতে চায়।
২ শাস্ত্রপদ অনুভূতির সঙ্গে পড়া উচিত কিন্তু তা অতিরঞ্জিত করা উচিত নয়। কোনো পদে কতটা অনুভূতি প্রদান করা হবে, তা স্বয়ং পদ ও বক্তৃতার মধ্যে এর অবস্থানের ওপর নির্ভর করে। এটা করার দ্বারা যুক্তিতর্ককে উপভোগ্য করে তোলা উচিত কিন্তু পড়ার প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করানো উচিত নয়।
৩ অধিকন্তু, পড়া এমন হওয়া উচিত যেন তা পদের সেই অংশের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে, যেটা আপনার যুক্তিতর্ককে সমর্থন করে। পড়ার দ্বারা বিষয়টাকে এমন স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেওয়া উচিত, যাতে শ্রোতারা দৃঢ়প্রত্যয়ী হয়। এভাবে, সঠিক জোর দিয়ে শাস্ত্রপদ পড়া আস্থা স্থাপন করে। এটা পড়া বিষয়বস্তুকে নির্ভরযোগ্য করে তোলে।
৪, ৫. ‘সঠিক শব্দগুলোর ওপর জোর দেওয়ার’ অর্থ কী? উদাহরণের সাহায্যে বলুন।
৪ সঠিক শব্দগুলোর ওপর জোর দেওয়া। যেকারণে একটি পদ পড়া হচ্ছে, সেটার দ্বারা কোন বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হবে, তা নির্ণয় করা উচিত। যদি পদের প্রতিটা ধারণার ওপর সমভাবে জোর দেওয়া হয়, তাহলে কোনোকিছুই লক্ষণীয় হবে না এবং আপনার যুক্তিতর্কের বিষয়টা হারিয়ে যাবে। তাই, এই ব্যাপারটা নিশ্চিত করুন যে, যে-শব্দগুলোর ওপর প্রাথমিকভাবে জোর দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো হল সেই মূল ধারণা বহনকারী শব্দ, যেগুলোর জন্য শাস্ত্রপদটি ব্যবহার করা হয়েছে।
৫ উদাহরণস্বরূপ, যে-বিষয়টা পরিত্রাণের দিকে পরিচালিত করে, তা দেখানোর জন্য আপনি যদি ১ যোহন ২:১৭ পদ ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে আপনি বাঁকা অক্ষরগুলোর ওপর বিশেষ জোর দিয়ে এভাবে পড়বেন: “যে ব্যক্তি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, সে অনন্তকালস্থায়ী।” কিন্তু আপনি যদি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার আর্শীবাদের বিষয়টা বোঝাতে চান, তাহলে জোর দেওয়ার বিষয়টা পালটে এভাবে পড়া হবে: “যে ব্যক্তি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, সে অনন্তকালস্থায়ী।” আপনার জোর দেওয়ার বিষয়টা, আপনি যেকারণে শাস্ত্রপদটি পড়ছেন, সেটার দ্বারা দ্বারা নির্ণীত হবে।
৬-১২. কোন কোন উপায়ে আমরা কোনো একটি পদের ধারণা বহনকারী শব্দগুলোর ওপর জোর দিতে পারি?
৬ জোর দেওয়ার কার্যকারী পদ্ধতি ব্যবহার করা। ধারণা বহনকারী যে-শব্দগুলোকে আপনি লক্ষণীয়ভাবে তুলে ধরতে চান, সেগুলো বিভিন্ন উপায়ে জোর দেওয়া যেতে পারে এবং আপনি যে-উপায় ব্যবহার করেন, সেটা শাস্ত্রপদ ও বক্তৃতার সেটিংয়ের সঙ্গে মিল রেখে হওয়া উচিত।
৭ “জোর দিয়ে শাস্ত্রপদ পড়া” গুণগত মানের এই বৈশিষ্ট্যটা, মৌখিকভাবে জোর দেওয়ার সম্ভাব্য সব রকমের উপায় প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়নি। আপনি যখন অর্থের ওপর জোর দেওয়ার বিষয়টা অধ্যয়ন করবেন, তখন এই বিষয়ে আরও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানবেন। কিন্তু, শাস্ত্রপদ কার্যকারীভাবে পড়ার ক্ষমতা অর্জন করতে আপনাকে সাহায্য করার জন্য এখানে শুধু অল্প কয়েকটি পদ্ধতি তালিকাবদ্ধ করা হয়েছে।
৮ কণ্ঠস্বরের ওপর জোর দেওয়া। এর সঙ্গে কণ্ঠস্বরের যেকোনো পরিবর্তন জড়িত, তা সেটা ধ্বনির তীব্রতায়, গতিতে বা প্রবলতায় যেটাতেই হোক না কেন, সেটা ধারণা বহনকারী শব্দগুলোকে বাক্যের বাকি অংশ থেকে লক্ষণীয় করে তোলে।
৯ থামা। এটা হয়তো আপনার শাস্ত্রপদের মূল অংশের আগে বা পরে অথবা উভয় ক্ষেত্রেই করা যেতে পারে। কোনো প্রধান ধারণা পড়ার ঠিক আগে থামা প্রত্যাশার সৃষ্টি করে; পরে থামা যে-ধারণা দেওয়া হয়েছে, সেটাকে আরও গভীর করে।
১০ পুনরাবৃত্তি। মাঝপথে থেমে সেই শব্দ বা বাক্যাংশ পুনরায় পড়ে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া যেতে পারে। এই পদ্ধতিটা বিচক্ষণতার সঙ্গে প্রয়োগ করা উচিত।
১১ অঙ্গভঙ্গি। দেহভঙ্গি ও সেইসঙ্গে মৌখিক অভিব্যক্তি প্রায়ই কোনো শব্দ বা বাক্যাংশের ওপর জোর দিতে সাহায্য করতে পারে।
১২ কণ্ঠস্বরের ধরন। মাঝে মাঝে যে-কণ্ঠস্বরের ধরনে শব্দগুলোকে পড়া হয়, তা শব্দগুলোর অর্থকে প্রভাবিত করতে পারে এবং সেগুলোকে আলাদা করে তুলতে পারে কিন্তু এখানেও বিচক্ষণতা কাজে লাগানো উচিত, বিশেষ করে ব্যঙ্গোক্তি ব্যবহার করার ব্যাপারে।
১৩, ১৪. একজন গৃহকর্তা যখন একটি পদ পড়েন, তখন কীভাবে আমরা এর মূল বিষয়গুলোর ওপর জোর দিতে পারি?
১৩ গৃহকর্তা যে-শাস্ত্রপদগুলো পড়েন। একজন গৃহকর্তা যখন কোনো শাস্ত্রপদ পড়েন, তখন তিনি হয়তো ভুল শব্দগুলোর ওপর জোর দিতে পারেন বা কোনোটার ওপরই হয়তো জোর না-ও দিতে পারেন। তখন আপনি কী করতে পারেন? সাধারণত এইরকম ক্ষেত্রে, যে-বিষয়গুলোর ওপর জোর দেওয়া হোক বলে আপনি চেয়েছিলেন, সেগুলোর ওপর জোর দেওয়ার জন্য শাস্ত্রপদের প্রয়োগ দেখানো সবচেয়ে ভাল। পড়া শেষ হয়ে যাওয়ার পর, আপনি হয়তো সেই শব্দগুলোকে পুনরাবৃত্তি করে বা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে, সেগুলোর প্রতি গৃহকর্তার মনোযোগ আকর্ষণ করাতে পারেন।
১৪ আরেকটা উপায়ে তা করা যেতে পারে কিন্তু সেইক্ষেত্রে সাবধানতা ও কৌশলতা প্রয়োজন। আপনি হয়তো পড়ার সময় সঠিক জায়গাতে এসে বাধা দিতে পারেন, তা করার জন্য ক্ষমা চাইতে পারেন ও এরপর পড়া হচ্ছে এমন শব্দ বা বাক্যাংশের ওপর মনোযোগ আকর্ষণ করাতে পারেন, যেটার ওপর আপনি জোর দিতে চান। গৃহকর্তাকে বিব্রত বা বিরক্ত না করে যদি এটা করা যায়, তাহলে সেটা কার্যকর হতে পারে, তবে তা সংযতভাবে করা উচিত।
**********
১৫-১৭. শাস্ত্রপদের প্রয়োগ স্পষ্ট করা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
১৫ কোনো একটি পদ এমনকি জোর দিয়ে পড়াও সাধারণত আপনার উদ্দেশ্য সম্পাদন করার জন্য যথেষ্ট নয়। এটা ঠিক যে, মাঝে মাঝে স্বয়ং শাস্ত্রপদটিই আপনার যুক্তিতর্কে আপনি যে-ধারণাটা জানাতে চান, সেটার প্রয়োগ হিসেবে কাজ করতে পারে। কিন্তু, অধিকাংশ ক্ষেত্রে পদের মধ্যে ধারণা বহনকারী শব্দগুলোর প্রতি আবারও মনোযোগ আকর্ষণ করা আবশ্যক এবং এরপর দেখান যে, কীভাবে তা যুক্তিতর্কের প্রতি প্রযোজ্য হয়। স্পিচ কাউন্সেল স্লিপ-এ এটাই “শাস্ত্রপদের প্রয়োগ স্পষ্ট করা” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মনে রাখবেন যে, বেশির ভাগ লোকই বাইবেলের সঙ্গে পরিচিত নয় এবং শুধু একবার পড়েই আপনি যা বলতে চান, সেই বিষয়টা বুঝে উঠতে পারে না। মূল শব্দগুলোর ওপর পুনরায় জোর দেওয়া এবং সেগুলোকে প্রয়োগ করা ধারণাগুলোকে মনে গেঁথে নেওয়ার সুযোগ করে দেয়।
১৬ কোনো একটি পদের প্রয়োগ দেখানো হলে, সেটাকে আপনার যুক্তিতর্কের উপযুক্ত হতে হবে এবং সাধারণত সেটাকে সঠিকভাবে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। এরপর, শিক্ষা দেওয়ার বিষয়টা মনে রেখে আপনি আপনার প্রয়োগকে যথাসম্ভব সরল রাখতে চাইবেন।
১৭ অধিকন্তু, শাস্ত্রপদ সম্বন্ধে আপনার এক স্পষ্ট বোধগম্যতা থাকতে হবে এবং আপনি যেভাবে প্রয়োগ করেন, তা সঠিক হতে হবে। আপনার শাস্ত্রপদ ব্যবহার করার সময় যখন প্রয়োজন পড়ে, তখন সেটার প্রসঙ্গ, সম্পর্কযুক্ত নীতিগুলো অথবা জড়িত ব্যক্তিদের বিষয় বিবেচনা করুন। কোনো শাস্ত্রপদকে কখনো এমনভাবে ব্যবহার করবেন না, যা লেখকের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। প্রয়োগ করার ব্যাপারে যিহোবার সাক্ষিদের প্রকাশনাগুলো মনোযোগ সহকারে অনুসরণ করুন।
১৮. কীভাবে আমরা মূল শব্দগুলোকে কার্যকারীভাবে আলাদা করতে পারি, যাতে সেগুলো প্রয়োগ করা যায়?
১৮ শব্দগুলোর আলাদাভাবে প্রয়োগ। পদ প্রয়োগ করার আগে বা প্রয়োগ করার সময় মূল শব্দগুলোর ওপর সাধারণত পুনরায় জোর দেওয়া উচিত। এটা এই বিষয়টাকে নিশ্চিত করার জন্য যে, পদের যেসমস্ত বিষয় আপনার যুক্তিতর্কের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয়, সেগুলো অপ্রধান বা গৌণ হবে। এটা সম্পাদন করার জন্য পদের মধ্যে যে-শব্দগুলো রয়েছে, সেগুলোকে আসলে পুনরাবৃত্তি করার প্রয়োজন নেই, যদিও সাধারণত এভাবেই তা করা হয়ে থাকে। কিন্তু, কোনো কোনো ক্ষেত্রে, আপনি অন্যান্য উপায়ে বিবেচ্য আলাদা আলাদা ধারণাগুলোর ওপর কার্যকারীভাবে আপনার শ্রোতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করাতে পারেন। একটা যে-উপায়ে আপনি তা করতে পারেন, সেটা হচ্ছে আপনার ধারণাকে পুনরায় বলার সময় সমার্থ শব্দ ব্যবহার করা। আরেকটা হচ্ছে, প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা। আপনার উপস্থাপনায় যদি একজন গৃহকর্তা জড়িত থাকেন, তাহলে আপনার প্রশ্নগুলোকে এমনভাবে প্রকাশ করা যেতে পারে, যাতে অন্য ব্যক্তির মুখ থেকে মূল ধারণাগুলো বের করে আনা যায়।
১৯-২২. ‘ভূমিকার বিষয়টা স্পষ্ট বুঝিয়ে দেওয়ার’ দ্বারা কোন প্রয়োগের বিষয় নির্দেশ করা হয়?
১৯ ভূমিকার বিষয়টা স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেওয়া। সাধারণভাবে এর অর্থ হচ্ছে, এই বিষয়টা নিশ্চিত করা যে, পদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আপনার উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে বোঝা গিয়েছে ও উপলব্ধি করা হয়েছে। এইরকম হতে পারে যে, কোনো কারণে আপনি হয়তো পদের এক প্রচলিত ভূমিকা করাকে আবশ্যক বা কাঙ্ক্ষিত বলে মনে করেননি। তবে, তার মানে এই নয় যে, পদের মূল বিষয় স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু, সাধারণত আপনি পদ পড়ার আগেই আপনার যুক্তিতর্কের জন্য অন্তত আগে থেকে কিছু প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। এখন আপনাকে দেখতে হবে যে, পদ ব্যবহারের উপসংহার দেওয়ার জন্য এর মধ্যে কিছু প্রয়োগ রয়েছে।
২০ বিষয়বস্তুর সার্বিক উপস্থাপনায় আপনার শ্রোতা এবং মূল বিষয়ের গুরুত্ব নির্ধারণ করবে যে, কতদূর পর্যন্ত প্রয়োগ দেখাতে হবে। সাধারণত শুধু পদটি আলোচনা করাই যথেষ্ট নয়। পদে যে-ধারণাগুলোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর সঙ্গে আপনার ভূমিকামূলক যুক্তিতর্কের যোগসূত্র দেখাতে হবে। আপনাকে সাধারণভাবে বলতে হবে যে, সেই যোগসূত্রটা কী।
২১ আপনার উদ্দেশ্যকে সম্পাদন করে আপনার প্রয়োগ যত সরল হবে, এটা তত ভাল হবে। এটা সম্পর্কযুক্ত নয় এমন সমস্ত বিস্তারিত বর্ণনা থেকে মুক্ত হওয়া উচিত। আপনার যুক্তিতর্ককে যথাসম্ভব অল্প কয়েকটা তথ্যে পরিণত করে ও এরপর সেগুলোকে বোধগম্য করে তোলার জন্য যা অত্যাবশ্যক, শুধুমাত্র সেটুকু যুক্ত করে তা সম্পাদন করা যেতে পারে। যদি ভূমিকাতে কিছুর উত্তর না দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে আপনার প্রয়োগে তা সরবরাহ করতে হবে।
২২ বক্তৃতাদানের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে উন্নতির এই পর্যায়ে, সরলতা ও সরাসরি বলা আপনার লক্ষ্য হওয়া উচিত। যখন আপনি তা অর্জন করেন, তখন আপনার শাস্ত্রপদ পড়া ও প্রয়োগ করা একজন দক্ষ শিক্ষকের ক্ষমতাকে প্রতিফলিত করবে।