যিহোবার ন্যায়বিচার ও করুণা অনুকরণ করুন
“প্রকৃত ন্যায়ের সঙ্গে বিচার করো এবং একে অপরের প্রতি অনুগত প্রেম ও করুণা দেখিয়ে আচরণ করো।”—সখ. ৭:৯, NW.
১, ২. (ক) ঈশ্বরের ব্যবস্থার প্রতি যিশুর অনুভূতি কেমন ছিল? (খ) কীভাবে অধ্যাপক ও ফরীশীরা ব্যবস্থাকে ভুলভাবে প্রয়োগ করেছিল?
যিশু খ্রিস্ট মোশির ব্যবস্থাকে ভালোবাসতেন। এতে আমরা অবাক হই না কারণ ব্যবস্থা তাঁর পিতা যিহোবার কাছ থেকে এসেছিল, যিনি হলেন তাঁর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। গীতসংহিতা ৪০:৮ পদে বাইবেল ঈশ্বরের ব্যবস্থার প্রতি যিশুর গভীর ভালোবাসার বিষয়ে এই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল: “হে আমার ঈশ্বর, তোমার অভীষ্ট সাধনে আমি প্রীত, আর তোমার ব্যবস্থা আমার অন্তরে আছে।” যিশু তাঁর কথা ও কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করেছিলেন যে, ঈশ্বরের ব্যবস্থা নিখুঁত ও উপকারী এবং সেটার মধ্যে লেখা সমস্ত কথা অবশ্যই পরিপূর্ণ হবে।—মথি ৫:১৭-১৯.
২ যিশু সেইসময় নিশ্চয়ই দুঃখ পেয়েছিলেন, যখন তিনি দেখেছিলেন যে, অধ্যাপক ও ফরীশীরা তাঁর পিতার ব্যবস্থাকে ভুলভাবে প্রয়োগ করছিল, যে-কারণে ব্যবস্থাকে অযৌক্তিক বলে মনে হয়েছিল। তিনি তাদের বলেছিলেন: “তোমরা পোদিনা, মৌরি ও জিরার দশমাংশ দিয়া থাক” অর্থাৎ তারা ব্যবস্থার সবচেয়ে ছোটো বিষয়গুলো পালন করার ব্যাপারে খুবই সতর্ক ছিল। তা হলে, সমস্যাটা কী ছিল? যিশু ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন: “তোমরা . . . ব্যবস্থার মধ্যে গুরুতর বিষয়—ন্যায়বিচার, দয়া” বা করুণা “ও বিশ্বাস—পরিত্যাগ করিয়াছ।” (মথি ২৩:২৩) ফরীশীরা ব্যবস্থার পিছনে থাকা অর্থ বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিল এবং তারা অন্যদের চেয়ে নিজেদের উত্তম বলে মনে করত। কিন্তু, যিশু বুঝেছিলেন যে, ব্যবস্থার পিছনে কোন উদ্দেশ্য ছিল এবং প্রতিটা আজ্ঞা যিহোবা সম্বন্ধে কী প্রকাশ করেছিল।
৩. এই প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?
৩ খ্রিস্টান হিসেবে আমরা মোশির ব্যবস্থার অধীন নই। (রোমীয় ৭:৬) তা হলে, কেন যিহোবা তাঁর বাক্য বাইবেলে এই ব্যবস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করিয়েছেন? কারণ তিনি চান যেন আমরা সেটার ‘গুরুতর বিষয়গুলো’ অর্থাৎ ব্যবস্থার পিছনে থাকা নীতিগুলো বুঝি ও প্রয়োগ করি। উদাহরণ স্বরূপ, আশ্রয় নগরের ব্যবস্থা থেকে আমরা কোন নীতিগুলো শিখি? আগের প্রবন্ধে, পলাতককে কী করতে হতো তা অধ্যয়ন করার মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন শিক্ষা লাভ করেছি। আর এই প্রবন্ধে, আশ্রয় নগরগুলো যিহোবা সম্বন্ধে আমাদের কী শিক্ষা দেয় এবং কীভাবে আমরা তাঁর গুণাবলি অনুকরণ করতে পারি, সেই বিষয়ে শিক্ষা লাভ করব। আমরা এই তিনটে প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আলোচনা করব: কীভাবে আশ্রয় নগরগুলো দেখায় যে, যিহোবা হলেন করুণাময়? সেগুলো জীবনের প্রতি ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গি সম্বন্ধে আমাদের কী শিক্ষা দেয়? আর কীভাবে সেগুলো তাঁর নিখুঁত ন্যায়বিচারকে প্রকাশ করে? প্রতিটা ক্ষেত্রে দেখার চেষ্টা করুন যে, কীভাবে আপনি আপনার স্বর্গীয় পিতাকে অনুকরণ করতে পারেন।—পড়ুন, ইফিষীয় ৫:১.
আশ্রয় নগরগুলোর অবস্থান ঈশ্বরের করুণা সম্বন্ধে প্রকাশ করেছিল
৪, ৫. (ক) একজন পলাতক যাতে সহজেই দৌড়ে আশ্রয় নগরে যেতে পারেন, সেই জন্য কী করা হয়েছিল এবং কেন? (খ) এটা যিহোবা সম্বন্ধে আমাদের কী শিক্ষা দেয়?
৪ যিহোবা ছ-টা আশ্রয় নগরের ব্যবস্থা এমন জায়গাগুলোতে করেছিলেন যেন সহজেই সেখানে পৌঁছানো যায়। তিনি ইস্রায়েলীয়দের যর্দন নদীর উভয় দিকেই তিনটে করে নগর বেছে নিতে বলেছিলেন। কেন? যাতে একজন পলাতক খুব দ্রুত ও সহজেই সেগুলোর মধ্যে কোনো একটা নগরে গিয়ে পৌঁছাতে পারতেন। (গণনা. ৩৫:১১-১৪) সেই নগরে যাওয়ার রাস্তাগুলোকে ভালো অবস্থায় রাখা হতো। (দ্বিতীয়. ১৯:৩) যিহুদি রীতি অনুসারে, রাস্তার পাশে বিভিন্ন চিহ্ন দেওয়া থাকত, যাতে পলাতকরা সহজেই সেই নগরগুলো খুঁজে পেতে পারত। যেহেতু ইস্রায়েলে আশ্রয় নগরের ব্যবস্থা ছিল, তাই একজন ইস্রায়েলীয় যদি দুর্ঘটনাবশত কাউকে হত্যা করতেন, তা হলে তাকে সুরক্ষা লাভ করার জন্য বিদেশে যেতে হতো না, যেখানে তিনি হয়তো মিথ্যা দেবতাদের উপাসনা করার জন্য প্রলুব্ধ হতে পারতেন।
৫ এই বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করুন: যিহোবা হত্যাকারী ব্যক্তিদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার আজ্ঞা দিয়েছিলেন। কিন্তু, তিনি এই বিষয়টাও নিশ্চিত করেছিলেন যে, কোনো ব্যক্তি যদি দুর্ঘটনাবশত কাউকে হত্যা করেন, তা হলে তিনি যেন করুণা, সমবেদনা ও সুরক্ষা লাভ করতে পারেন। একজন বাইবেল পণ্ডিত বলেছিলেন: “সমস্ত কিছু যথাসম্ভব সাধারণ ও সহজসরলভাবে করা হয়েছিল।” যিহোবা এমন কোনো নিষ্ঠুর বিচারক নন, যিনি তার দাসদের শাস্তি দেওয়ার সুযোগ খোঁজেন। এর পরিবর্তে, তিনি “দয়াধনে” বা করুণায় “ধনবান্।”—ইফি. ২:৪.
৬. ফরীশীরা কি যিহোবার করুণাকে অনুকরণ করেছিল? ব্যাখ্যা করুন।
৬ অপরদিকে, ফরীশীরা অন্যদের করুণা দেখানোর বিষয়ে ইচ্ছুক ছিল না। উদাহরণ স্বরূপ, যিহুদি রীতি অনুসারে ফরীশীরা এমন একজন ব্যক্তিকে ক্ষমা করতে প্রত্যাখ্যান করত, যিনি একই ভুল তিন বারের বেশি করতেন। তাদের মনোভাব যে কতটা ভুল ছিল, তা দেখানোর জন্য যিশু একটা দৃষ্টান্ত ব্যবহার করেছিলেন, যেখানে একজন ফরীশী একজন করগ্রাহীর পাশে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করছিলেন। সেই ফরীশী বলেছিলেন: “হে ঈশ্বর, আমি তোমার ধন্যবাদ করি যে, আমি অন্য সকল লোকের—উপদ্রবী, অন্যায়ী ও ব্যভিচারীদের—মত কিম্বা ঐ করগ্রাহীর মত নহি।” যিশু কী বোঝাতে চেয়েছিলেন? ফরীশীরা “অন্য সকলকে হেয়জ্ঞান করিত” এবং তারা মনে করত না যে, তাদের করুণা দেখানোর প্রয়োজন রয়েছে।—লূক ১৮:৯-১৪.
৭, ৮. (ক) কীভাবে আপনি যিহোবার করুণাকে অনুকরণ করতে পারেন? (খ) অন্যদের ক্ষমা করার জন্য কেন আমাদের নম্র হতে হবে?
৭ যিহোবাকে অনুকরণ করুন, ফরীশীদের নয়। করুণা ও সমবেদনা দেখান। (পড়ুন, ইফিষীয় ৪:৩২.) অন্যদের পক্ষে আপনার কাছে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টাকে সহজ করার চেষ্টা করুন। (লূক ১৭:৩, ৪) নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘আমি কি অন্যদের দ্রুত ও সহজেই ক্ষমা করি, এমনকী সেইসময়ও যখন তারা অনেক বার আমাকে অসন্তুষ্ট করে? আমি কি এমন কোনো ব্যক্তির সঙ্গে শান্তি স্থাপন করার বিষয়ে উৎসুক, যিনি আমাকে অসন্তুষ্ট করেছেন অথবা কষ্ট দিয়েছেন?’
৮ ক্ষমা করার জন্য আমাদের অবশ্যই নম্র হতে হবে। ফরীশীরা মনে করত, তারা অন্য সকলের চেয়ে উত্তম আর তাই তারা ক্ষমা করার বিষয়ে ইচ্ছুক ছিল না। কিন্তু, খ্রিস্টান হিসেবে আমরা নম্রভাবে নিজেদের চেয়ে ‘অন্যদের শ্রেষ্ঠ জ্ঞান করি’ এবং তাদের মন থেকে ক্ষমা করি। (ফিলি. ২:৩) আমরা নিজেদের জিজ্ঞেস করতে পারি, ‘আমি কি যিহোবাকে অনুকরণ করছি এবং নম্রতা দেখাচ্ছি?’ আমরা যদি নম্র হই, তা হলে অন্যদের পক্ষে আমাদের কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং আমাদের পক্ষে তাদের ক্ষমা করা আরও সহজ হবে। করুণা দেখানোর বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিন এবং তাড়াতাড়ি বিরক্ত বা অসন্তুষ্ট হওয়া পরিত্যাগ করুন।—উপ. ৭:৮, ৯.
জীবনকে সম্মান করুন, যাতে ‘আপনার উপরে রক্তপাতের অপরাধ না বর্ত্তে’
৯. কীভাবে যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের বুঝতে সাহায্য করেছিলেন যে, জীবন হল পবিত্র?
৯ আশ্রয় নগরের ব্যবস্থার পিছনে একটা যে-প্রধান কারণ ছিল, তা হল নির্দোষ ব্যক্তিদের হত্যা করার মাধ্যমে রক্তপাতের দোষে দোষী হওয়া থেকে ইস্রায়েলীয়দের সুরক্ষিত রাখা। (দ্বিতীয়. ১৯:১০) যিহোবা জীবনকে ভালোবাসেন এবং তিনি নরহত্যা ঘৃণা করেন। (হিতো. ৬:১৬, ১৭) একজন ন্যায়পরায়ণ ও পবিত্র ঈশ্বর হিসেবে তিনি এমনকী দুর্ঘটনাবশত করা কোনো হত্যাকেও উপেক্ষা করতে পারতেন না। এটা ঠিক যে, কোনো ব্যক্তি যদি দুর্ঘটনাবশত কাউকে হত্যা করতেন, তা হলে তিনি করুণা লাভ করতে পারতেন। কিন্তু, প্রথমে তাকে প্রাচীনদের কাছে নিজের পরিস্থিতি সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করতে হতো। প্রাচীনরা বিচার করে যদি এই সিদ্ধান্তে আসতেন যে, মৃত্যুটা দুর্ঘটনাবশত ঘটেছিল, তা হলে সেই পলাতককে মহাযাজকের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত আশ্রয় নগরে থাকতে হতো। এর অর্থ হতে পারত, সেই পলাতককে তার বাকি জীবন আশ্রয় নগরেই থাকতে হবে। এই ব্যবস্থা সমস্ত ইস্রায়েলীয়কে ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করেছিল যে, জীবন হল পবিত্র। জীবনের উৎস যিহোবাকে সম্মান করার জন্য তাদের এই বিষয়ে প্রাণপণ চেষ্টা করতে হতো, যাতে তারা অন্যদের জীবন বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া এড়াতে পারে।
১০. যিশুর কথা অনুযায়ী কীভাবে অধ্যাপক ও ফরীশীরা দেখিয়েছিল যে, তারা অন্যদের জীবনকে মূল্যবান বলে মনে করে না?
১০ যিহোবার বিপরীতে অধ্যাপক ও ফরীশীরা দেখিয়েছিল যে, তারা অন্যদের জীবনকে মূল্যবান বলে মনে করে না। যিশু তাদের বলেছিলেন: “তোমরা জ্ঞানের চাবি হরণ করিয়া লইয়াছ; আপনারা প্রবেশ করিলে না, এবং যাহারা প্রবেশ করিতেছিল, তাহাদিগকে বাধা দিলে।” (লূক ১১:৫২) যিশু কী বোঝাতে চেয়েছিলেন? অধ্যাপক ও ফরীশীদের উচিত ছিল লোকেদের কাছে ঈশ্বরের বাক্য ব্যাখ্যা করা এবং তাদের অনন্তজীবন লাভ করতে সাহায্য করা। কিন্তু এর বিপরীতে, তারা লোকেদের ‘জীবনের আদিকর্ত্তা’ যিশুকে অনুসরণ করার বিষয়ে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। (প্রেরিত ৩:১৫) এভাবে তারা লোকেদের ধ্বংসের দিকে পরিচালিত করেছিল। অধ্যাপক ও ফরীশীরা অহংকারী ও স্বার্থপর ছিল এবং তারা লোকেদের জীবনের প্রতি চিন্তা দেখাত না। কতই-না নিষ্ঠুর ও নির্দয় এক বিষয়!
১১. (ক) কীভাবে প্রেরিত পৌল দেখিয়েছিলেন যে, তিনি জীবনকে যিহোবার মতো করে দেখেন? (খ) কী আমাদের পরিচর্যার প্রতি পৌলের উদ্যোগকে অনুকরণ করতে সাহায্য করবে?
১১ কীভাবে আমরা যিহোবাকে অনুকরণ করতে পারি এবং অধ্যাপক ও ফরীশীদের মতো হওয়া এড়িয়ে চলতে পারি? আমরা জীবনের প্রতি সম্মান দেখানোর ও এটাকে মূল্যবান বলে গণ্য করার মাধ্যমে তা করতে পারি। প্রেরিত পৌল যতটা সম্ভব বেশি লোকের কাছে রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করার মাধ্যমে তা করেছিলেন। এই কারণেই তিনি বলতে পেরেছিলেন: “সকলের রক্তের দায় হইতে আমি শুচি।” (পড়ুন, প্রেরিত ২০:২৬, ২৭.) কিন্তু, পৌল কি কেবল অপরাধবোধ এড়ানোর জন্য অথবা যিহোবা বলেছেন বলে প্রচার করেছিলেন? না। পৌল লোকেদের ভালোবাসতেন। তিনি তাদের জীবনকে মূল্যবান হিসেবে দেখতেন এবং তিনি চেয়েছিলেন যেন তারা অনন্তজীবন পায়। (১ করি. ৯:১৯-২৩) আমাদেরও জীবনকে যিহোবার মতো করে দেখা উচিত। তিনি চান যেন সকলে মন পরিবর্তন করে বা অনুতপ্ত হয়, যাতে তারা বেঁচে থাকতে পারে। (২ পিতর ৩:৯) যিহোবাকে অনুকরণ করার জন্য লোকেদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা দেখাতে হবে। এক করুণাপূর্ণ মনোভাব আমাদের উদ্যোগের সঙ্গে প্রচার করতে অনুপ্রাণিত করবে এবং তা করার সময় আনন্দ নিয়ে আসবে।
১২. কেন নিরাপত্তার বিষয়টা ঈশ্বরের লোকেদের কাছে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়?
১২ জীবনকে যিহোবার মতো করে দেখার জন্য আমাদের নিরাপত্তার বিষয়েও সঠিক মনোভাব বজায় রাখতে হবে। আমাদের সবসময় নিরাপদ উপায়ে গাড়ি চালাতে ও কাজ করতে হবে আর তা এমনকী উপাসনার কোনো স্থান নির্মাণ করার, সেগুলো মেরামত করার অথবা সেগুলোতে যাওয়ার সময়ও। টাকাপয়সা অথবা সময় বাঁচানোর চেয়ে লোকজন, নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সবসময়ই আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের ঈশ্বর সবসময় যা সঠিক, তা-ই করেন এবং আমরাও তাঁর মতো হতে চাই। বিশেষ করে প্রাচীনদের নিজেদের ও সেইসঙ্গে অন্যদের নিরাপত্তার বিষয়ে চিন্তা করতে হবে। (হিতো. ২২:৩) একজন প্রাচীন যদি আপনাকে নিরাপত্তা বিষয়ক নিয়ম অথবা মান সম্বন্ধে স্মরণ করিয়ে দেন, তা হলে তার কথা শুনুন। (গালা. ৬:১) জীবনকে যিহোবার মতো করে দেখুন, যাতে ‘আপনার উপরে রক্তপাতের অপরাধ না বর্ত্তে।’
“এই সকল বিচারমতে” বিচার করুন
১৩, ১৪. কোন কোন উপায়ে ইস্রায়েলীয় প্রাচীনরা যিহোবার ন্যায়বিচারকে অনুকরণ করতে পারতেন?
১৩ যিহোবা ইস্রায়েলীয় প্রাচীনদের তাঁর ন্যায়বিচার অনুকরণ করার আজ্ঞা দিয়েছিলেন। প্রথমে, প্রাচীনদের সমস্ত তথ্যের সত্যতা যাচাই করে দেখতে হতো। এরপর, তারা করুণা দেখাবেন কি না, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় তাদের হত্যাকারী ব্যক্তির উদ্দেশ্য, মনোভাব ও পূর্বের কাজগুলো খুবই সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করতে হতো। প্রাচীনদের এই বিষয়টা খুঁজে বের করতে হতো যে, সেই পলাতক যাকে হত্যা করেছেন, তাকে তিনি ঘৃণা করতেন কি না এবং তিনি তাকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন কি না। (পড়ুন, গণনাপুস্তক ৩৫:২০-২৪.) যদি সেই ঘটনার সাক্ষি থাকত, তা হলে সেই হত্যাকারী ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য অন্তত দু-জন সাক্ষির প্রয়োজন হতো।—গণনা. ৩৫:৩০.
১৪ প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছে, তা খুঁজে বের করার পর প্রাচীনদের কেবল সেই ব্যক্তির কাজ নিয়ে নয় কিন্তু সেইসঙ্গে ব্যক্তি হিসেবে তিনি কেমন, সেই বিষয়েও চিন্তা করতে হতো। আপাতদৃষ্টিতে যেগুলো দেখা যেত, সেগুলো ছাড়াও ঘটনার পিছনে থাকা বিভিন্ন কারণ দেখার জন্য প্রাচীনদের অন্তর্দৃষ্টির প্রয়োজন হতো। সবচেয়ে বড়ো বিষয় হল, তাদের যিহোবার পবিত্র আত্মার সাহায্যের প্রয়োজন হতো, যাতে তারা তাঁর অন্তর্দৃষ্টি, স্নেহ বা করুণা ও ন্যায়বিচার অনুকরণ করতে পারেন।—যাত্রা. ৩৪:৬, ৭.
১৫. কীভাবে পাপীদের বিষয়ে যিশুর দৃষ্টিভঙ্গি ফরীশীদের চেয়ে আলাদা ছিল?
১৫ ফরীশীরা বিচার করার সময় করুণা দেখাত না। যে-ব্যক্তি পাপ করেছেন, তিনি ব্যক্তি হিসেবে আসলে কেমন, সেটার উপর মনোযোগ দেওয়ার পরিবর্তে ফরীশীরা সেই ব্যক্তি যা করেছেন, সেটার উপর মনোযোগ দিত। তারা যখন যিশুকে মথির বাড়িতে খাবার খেতে দেখেছিল, তখন তারা শিষ্যদের জিজ্ঞেস করেছিল: “তোমাদের গুরু কি জন্য করগ্রাহী ও পাপীদের সহিত ভোজন করেন?” উত্তরে যিশু বলেছিলেন: “সুস্থ লোকদের চিকিৎসকে প্রয়োজন নাই, বরং পীড়িতদেরই প্রয়োজন আছে। কিন্তু তোমরা গিয়া শিক্ষা কর, এই বচনের মর্ম্ম কি, ‘আমি দয়াই’” বা করুণাই “‘চাই, বলিদান নয়’; কেননা আমি ধার্ম্মিকদিগকে নয়, কিন্তু পাপীদিগকে ডাকিতে আসিয়াছি।” (মথি ৯:৯-১৩) যিশু কি পাপী ব্যক্তিদের পক্ষে অজুহাত দিচ্ছিলেন? একেবারেই না। তিনি চেয়েছিলেন যেন তারা মন ফেরায় বা অনুতপ্ত হয়। এটা তাঁর প্রচারের বার্তার একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। (মথি ৪:১৭) যিশু উপলব্ধি করেছিলেন যে, “করগ্রাহী ও পাপী” ব্যক্তিদের মধ্যে অন্ততপক্ষে কেউ কেউ পরিবর্তিত হতে চেয়েছিল। তারা কেবল খাবার খাওয়ার জন্য মথির বাড়িতে আসেনি। তারা সেখানে এসেছিল কারণ তারা যিশুকে অনুসরণ করছিল। (মার্ক ২:১৫) দুঃখের বিষয় হল, বেশিরভাগ ফরীশী লোকেদের যিশুর মতো করে দেখেনি। লোকেরা যে পরিবর্তিত হতে পারে, এই বিষয়টা ফরীশীরা বিশ্বাস করেনি এবং তারা তাদের এমন পাপী হিসেবে দেখেছিল, যাদের কোনো আশা নেই। তারা যিহোবার চেয়ে কতই-না আলাদা ছিল, যিনি হলেন ন্যায়পরায়ণ ও করুণাপূর্ণ!
১৬. কোনো বিচার সংক্রান্ত কমিটিকে কী নির্ণয় করতে হবে?
১৬ বর্তমানে প্রাচীনদের অবশ্যই যিহোবাকে অনুকরণ করতে হবে, যিনি “ন্যায়বিচার ভালবাসেন।” (গীত. ৩৭:২৮) প্রথমে, তাদের এই বিষয়টা নিশ্চিত করার জন্য “অনুসন্ধান [“ভাল করে খোঁজ-খবর,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন]” করতে হবে যে, সত্যিই কোনো পাপ করা হয়েছে কি না। যদি কোনো পাপ করা হয়ে থাকে, তা হলে কী করা উচিত, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তারা বাইবেল থেকে প্রাপ্ত নির্দেশনা অনুসরণ করবেন। (দ্বিতীয়. ১৩:১২-১৪) তারা যখন কোনো বিচার সংক্রান্ত কমিটির সদস্য হিসেবে সেবা করেন, তখন তাদের এই বিষয়টা নির্ণয় করার জন্য অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে যে, যিনি গুরুতর পাপ করেছেন, তিনি সত্যিই অনুতপ্ত কি না। তা নির্ণয় করা সবসময় সহজ নয়। মন ফেরানোর বা অনুতপ্ত হওয়ার অন্তর্ভুক্ত হল, একজন পাপী তার করা কাজকে কীভাবে দেখেন এবং তার হৃদয়ে কী রয়েছে। (প্রকা. ৩:৩) করুণা লাভ করার জন্য একজন পাপীকে অবশ্যই অনুতপ্ত হতে হবে।a
১৭, ১৮. কীভাবে প্রাচীনরা বুঝবেন যে, একজন ব্যক্তি সত্যিই অনুতপ্ত কি না? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)
১৭ যিহোবা ও যিশু যেহেতু হৃদয় পড়তে পারেন, তাই তাঁরা একেবারে সঠিকভাবে জানেন যে, একজন ব্যক্তি কী চিন্তা করছেন ও কেমন অনুভব করছেন। কিন্তু, প্রাচীনরা হৃদয় পড়তে পারেন না। তাই, আপনি যদি একজন প্রাচীন হয়ে থাকেন, তা হলে কীভাবে আপনি বুঝবেন যে, একজন ব্যক্তি সত্যিই অনুতপ্ত কি না? প্রথমত, প্রজ্ঞা ও বোধগম্যতা চেয়ে প্রার্থনা করুন। (১ রাজা. ৩:৯) দ্বিতীয়ত, “জগতের মনোদুঃখ” এবং ‘ঈশ্বরের মতানুযায়ী মনোদুঃখ’ অর্থাৎ প্রকৃত অনুতাপের মধ্যে পার্থক্য দেখার জন্য ঈশ্বরের বাক্য ও বিশ্বস্ত দাসের কাছ থেকে পাওয়া প্রকাশনার সাহায্য নিন। (২ করি. ৭:১০, ১১) বিবেচনা করে দেখুন যে, বাইবেল সেইসমস্ত ব্যক্তির বিষয়ে কীভাবে বর্ণনা করে, যারা অনুতপ্ত হয়েছিল ও যারা অনুতপ্ত হয়নি এবং তাদের অনুভূতি, চিন্তাধারা ও কাজ ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখুন।
১৮ তৃতীয়ত, কেবল সেই ব্যক্তির করা কাজের বিষয়ে নয় কিন্তু সেইসঙ্গে ব্যক্তি হিসেবে তিনি কেমন, সেই বিষয়েও চিন্তা করুন। তিনি কোন ধরনের পটভূমি থেকে এসেছেন? কেন তিনি নির্দিষ্ট কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন? তিনি কোন কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হন এবং তার কোন কোন সীমাবদ্ধতা রয়েছে? বাইবেল ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল যে, খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর মস্তক যিশু “চক্ষুর দৃষ্টি অনুসারে বিচার করিবেন না, কর্ণের শ্রবণানুসারে নিষ্পত্তি করিবেন না; কিন্তু ধর্ম্মশীলতায় দীনহীনদের বিচার করিবেন, সরলতায় পৃথিবীস্থ নম্রদের জন্য নিষ্পত্তি করিবেন।” (যিশা. ১১:৩, ৪) প্রাচীনরা, যিশু আপনাদের তাঁর মণ্ডলীর যত্ন নেওয়ার জন্য নিযুক্ত করেছেন এবং তিনি আপনাদের ন্যায় ও করুণার সঙ্গে বিচার করতে সাহায্য করবেন। (মথি ১৮:১৮-২০) আমরা খুবই কৃতজ্ঞ যে, আমাদের জন্য প্রাচীনরা রয়েছেন, যারা আমাদের জন্য চিন্তা করেন! এ ছাড়া, তারা আমাদের একে অন্যের প্রতি ন্যায়বিচার ও করুণা দেখাতে সাহায্য করে থাকেন।
১৯. আশ্রয় নগর থেকে প্রাপ্ত কোন শিক্ষা আপনি প্রয়োগ করার পরিকল্পনা করছেন?
১৯ মোশির ব্যবস্থায় “জ্ঞানের ও সত্যের অবয়ব” বা মৌলিক বোধগম্যতা রয়েছে। এটা যিহোবা ও তাঁর নীতিগুলো সম্বন্ধে আমাদের শিক্ষা দেয়। (রোমীয় ২:২০) ব্যবস্থায় বর্ণিত আশ্রয় নগরগুলো প্রাচীনদের শেখায়, কীভাবে “প্রকৃত ন্যায়ের সঙ্গে বিচার” করতে হয়। এ ছাড়া, সেগুলো আমাদের সকলকে একে অপরের প্রতি “অনুগত প্রেম ও করুণা” দেখাতে শেখায়। (সখ. ৭:৯) এমনকী যদিও আমাদের মোশির ব্যবস্থা অনুসরণ করতে হয় না কিন্তু যিহোবা পরিবর্তিত হননি। ন্যায়বিচার ও করুণা এখনও তাঁর কাছে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এটা কতই-না বিশেষ এক সুযোগ যে, আমরা এমন এক ঈশ্বরের উপাসনা করি, যাঁর প্রতিমূর্তিতে আমরা সৃষ্ট, যাঁর গুণাবলি আমরা অনুকরণ করতে পারি এবং যাঁর কাছে আমরা আশ্রয় নিতে পারি!
a ২০০৬ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ৩০ পৃষ্ঠায় দেওয়া “পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল” দেখুন।