আশ্রয় নগরগুলি—ঈশ্বরের এক করুণাময় ব্যবস্থা
“এই ছয়টী নগর আশ্রয়স্থান হইবে; যেন কেহ প্রমাদবশতঃ মনুষ্যকে বধ করিলে সেই স্থানে পলাইতে পারে।”—গণনাপুস্তক ৩৫:১৫.
১. জীবন ও রক্তের দায় সম্বন্ধে ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গি কী?
যিহোবা ঈশ্বর মানুষের জীবনকে পবিত্র জ্ঞান করেন। আর এই জীবন রক্তের মধ্যেই থাকে। (লেবীয় পুস্তক ১৭:১১, ১৪) কয়িন, পৃথিবীতে যে মানুষটি প্রথম জন্মগ্রহণ করে, সে তার ভাই হেবলকে হত্যা করার ফলে রক্তের দায়ে দায়ী হয়। বস্তুতপক্ষে, ঈশ্বর কয়িনকে বলেছিলেন: “তোমার ভ্রাতার রক্ত ভূমি হইতে আমার কাছে ক্রন্দন করিতেছে।” হত্যার এই দৃশ্যে মাটিতে পড়ে থাকা রক্তের চিহ্ন নিঃশব্দে অথচ স্পষ্টভাবে সেই জীবনের সাক্ষ্য দেয় যাকে নৃশংসতার সাথে সংক্ষিপ্ত করে দেওয়া হয়। হেবলের রক্ত ঈশ্বরের কাছে প্রতিশোধের জন্য কেঁদে উঠেছিল।—আদিপুস্তক ৪:৪-১১.
২. জলপ্লাবনের পর যিহোবা কিভাবে জীবনের প্রতি সম্মানকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন?
২ মানব জীবনের প্রতি ঈশ্বরের সম্মান আরও গভীরভাবে প্রকাশ পায় যখন ধার্মিক নোহ ও তার পরিবার পৃথিবীব্যাপী জলপ্লাবন থেকে রক্ষা পেয়ে জাহাজ থেকে বের হয়ে আসে। সেই সময় যিহোবা ঈশ্বর মানবজাতির খাদ্য তালিকা প্রসারিত করে তার মধ্যে পশুর মাংস অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন, কিন্তু রক্ত নয়। এছাড়াও তিনি ঘোষণা করেছিলেন: “তোমাদের রক্তপাত হইলে আমি তোমাদের প্রাণের পক্ষে তাহার পরিশোধ অবশ্য লইব; সকল পশুর নিকটে তাহার পরিশোধ লইব, এবং মনুষ্যের ভ্রাতা মনুষ্যের নিকটে আমি মনুষ্যের প্রাণের পরিশোধ লইব। যে কেহ মনুষ্যের রক্তপাত করিবে, মনুষ্য কর্ত্তৃক তাহার রক্তপাত করা যাইবে; কেননা ঈশ্বর আপন প্রতিমূর্ত্তিতে মনুষ্যকে নির্ম্মাণ করিয়াছেন।” (আদিপুস্তক ৯:৫, ৬) যিহোবা উপলব্ধি করেছিলেন যে নিহত ব্যক্তির সবচাইতে নিকটতম আত্মীয়ের অধিকার আছে নরঘাতককে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার।—গণনাপুস্তক ৩৫:১৯.
৩. রক্তের পবিত্রতার উপর মোশির নিয়ম কিভাবে জোর দিয়েছিল?
৩ ভাববাদী মোশির মাধ্যমে ইস্রায়েল জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া নিয়মের মধ্যে জীবনের পবিত্রতার উপর বারংবার জোর দেওয়া হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, ঈশ্বর আদেশ দিয়েছিলেন: “নরহত্যা করিও না।” (যাত্রাপুস্তক ২০:১৩) গর্ভবতী নারীর মৃত্যু সম্ভাবনাকে কেন্দ্র করে মোশির নিয়মে যা বলা হয়েছিল তার মধ্যেও জীবনের প্রতি সম্মান প্রতীয়মান হয়েছিল। নিয়মে নির্দিষ্টভাবে বলা ছিল যে, যদি দুইজন পুরুষের সংঘর্ষের ফলে স্ত্রীলোকটির অথবা তার অজাত শিশুটির মৃত্যুজনক দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলে বিচারকদের উচিত পরিস্থিতি ও স্বেচ্ছাকৃত অপরাধের গভীরতাকে বিবেচনা করা, কিন্তু এর জন্য “প্রাণের পরিশোধে প্রাণ” অর্থাৎ জীবনের বিনিময়ে জীবন দিতে হতে পারে। (যাত্রাপুস্তক ২১:২২-২৫) কিন্তু, এই ইস্রায়েলীয় হত্যাকারী কি কোন রকমভাবে তার এই দৌরাত্ম্যমূলক কাজের পরিণামকে এড়াতে পারে?
হত্যাকারীদের জন্য আশ্রয়স্থল?
৪. অতীতে ইস্রায়েলের বাইরে, কোথায় আশ্রয়স্থলগুলি ছিল?
৪ ইস্রায়েল দেশ ছাড়াও অন্যান্য দেশে, হত্যাকারী ও অন্যান্য অপরাধীদের জন্য আশ্রয়স্থলের ব্যবস্থা থাকত। প্রাচীন ইফিষীয়তে আর্টেমিস দেবীর মন্দিরের সামনে এইধরনের একটি ব্যবস্থা ছিল। অনুরূপ স্থান সম্বন্ধে বলতে গিয়ে, এই তথ্যটিতে জানানো হয়: “কয়েকটি উপাসনালয় ছিল অপরাধীদের আস্তানা; আর প্রায়ই এই আশ্রয়স্থলগুলির সংখ্যাকে সীমিত রাখার প্রয়োজন হয়ে উঠত। এথেন্সে কেবলমাত্র কয়েকটি স্থানকে আইনতভাবে আশ্রয়স্থল হিসাবে গণ্য করা হত (উদাহরণস্বরূপ, দাসদের জন্য থিসিয়াসের মন্দির); টাইবেরিয়াসের সময় উপাসনালয়ের মধ্যে অপরাধীদের মণ্ডলী এতই বিপজ্জনক হয়ে উঠেছিল যে আশ্রয়স্থল রাখার অধিকার কেবলমাত্র কয়েকটি শহরকেই দেওয়া হয়েছিল (২২শ সালে)।” (দ্যা জিউইস এনসাইক্লোপিডিয়া, ১৯০৯, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ২৫৬) পরবর্তীকালে, খ্রীষ্টীয়জগতের গির্জাগুলি আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়, কিন্তু এর ফলে ক্ষমতা, অসামরিক কর্তৃপক্ষের থেকে সরিয়ে নিয়ে তা পুরোহিত শ্রেণীর কাছে অর্পণ করা হয় আর এটি ন্যায়ের সঠিক পদ্ধতির বিরুদ্ধে কাজ করতে থাকে। ক্ষমতার এই অপব্যবহার পরিশেষে এই ব্যবস্থার বিলোপসাধন ঘটায়।
৫. কী প্রমাণ আছে যে যখন অসতর্কতার ফলে কারও মৃত্যু হয় তখন দয়া দাবি করার কোন সুযোগ নিয়ম দেয় না?
৫ ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে, স্বেচ্ছাকৃতভাবে যারা হত্যা করে তাদের আশ্রয়স্থলে জায়গা দেওয়া হত না। এমনকি ঈশ্বরের বেদীর সামনে সেবারত লেবীয় পুরোহিতও যদি কৌশলে কোন হত্যা করত তাহলে তাকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হত। (যাত্রাপুস্তক ২১:১২-১৪) এছাড়াও, যখন অসতর্কতার ফলে কারও মৃত্যু ঘটে তখন তার জন্য ক্ষমা দাবি করার কোন সুযোগ নিয়মের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। উদাহরণস্বরূপ, একজন ব্যক্তিকে তার নতুন গৃহের প্রাচীরবিহীন ছাদের জন্য দেওয়াল নির্মাণ করতে হত। তা না হলে, যদি সেই ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে কারও মৃত্যু হয় তাহলে সেই গৃহ রক্তের দায়ে দায়ী হবে। (দ্বিতীয় বিবরণ ২২:৮) এছাড়াও, যদি কোন ষাঁড়ের শৃঙ্গাঘাত করার স্বভাব থাকে আর তার মালিককে সতর্ক করে দেওয়া সত্ত্বেও সে যদি পশুটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হয় আর পশুটি যদি কাউকে মেরে ফেলে তাহলে সেই ষাঁড়ের মালিক রক্তের দায়ে দায়ী হবে এবং তাকে মৃত্যু দণ্ড দেওয়া যেতে পারে। (যাত্রাপুস্তক ২১:২৮-৩২) জীবনের প্রতি ঈশ্বরের উচ্চসম্মানের আরেকটি নিদর্শন হল যে যদি কেউ দিনদুপুরে, যখন সবকিছু দেখা যায় ও শনাক্ত করা যায়, সেই সময়ে চোরকে আঘাত করে ও তার মৃত্যু ঘটায় তাহলে তার উপর রক্তের দায় আসবে। (যাত্রাপুস্তক ২২:২, ৩) অতএব, এটা স্পষ্ট যে, ঈশ্বরের এই সমতাপূর্ণ নিয়মগুলি কোন রকমভাবেই স্বেচ্ছাকৃত হত্যাকারীকে মৃত্যুদণ্ড এড়াতে সুযোগ দেয় না।
৬. প্রাচীন ইস্রায়েলে কিভাবে ‘জীবনের বিনিময়ে জীবন’ এই নিয়মটি পালন করা হত?
৬ প্রাচীন ইস্রায়েলে যদি কাউকে হত্যা করা হত তাহলে সেই নিহত ব্যক্তির হত্যার পরিশোধ নেওয়া হত। ‘জীবনের বিনিময়ে জীবন’ এই নিয়মটি তখনই পালিত হত যখন “রক্তের প্রতিশোধদাতা” কর্তৃক হত্যাকারীকে মেরে ফেলা হত। (গণনাপুস্তক ৩৫:১৯) এই প্রতিশোধদাতা হল নিহত ব্যক্তির সবচাইতে নিকটতম পুরুষ আত্মীয়। কিন্তু অনিচ্ছাকৃত নরঘাতকদের সম্পর্কে কী বলা যায়?
যিহোবার এক করুণাময় ব্যবস্থা
৭. যারা অনিচ্ছাকৃতভাবে কাউকে হত্যা করত তাদের জন্য ঈশ্বর কী ব্যবস্থা রেখেছিলেন?
৭ যারা দুর্ঘটনাবশতঃ অথবা অনিচ্ছাকৃতভাবে কাউকে হত্যা করত, তাদের জন্য ঈশ্বর প্রেমসহকারে আশ্রয় নগরের ব্যবস্থা রেখেছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে, মোশিকে বলা হয়েছিল: “তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে কহ, তাহাদিগকে বল, যখন তোমরা যর্দ্দন পার হইয়া কনান দেশে উপস্থিত হইবে, তখন তোমাদের আশ্রয়-নগর হইবার জন্য কতকগুলি নগর নিরূপণ করিবে; যে জন প্রমাদবশতঃ কাহারও প্রাণ নষ্ট করে, এমন নরহন্তা যেন তথায় পলায়ন করিতে পারে। ফলতঃ সেই সকল নগর প্রতিশোধদাতার হস্ত হইতে তোমাদের আশ্রয়স্থান হইবে; যেন নরহন্তা বিচারার্থে মণ্ডলীর সম্মুখে উপস্থিত হইবার পূর্ব্বে মারা না পড়ে। তোমরা যে সকল নগর দিবে, তাহার মধ্যে ছয়টী আশ্রয় নগর হইবে। তোমরা যর্দ্দনের পূর্ব্বপারে তিন নগর ও কনান দেশে তিন নগর দিবে; সেগুলি আশ্রয় নগর হইবে। . . . যেন কেহ প্রমাদবশতঃ মনুষ্যকে বধ করিলে সেই স্থানে পলাইতে পারে।”—গণনাপুস্তক ৩৫:৯-১৫.
৮. কোথায় আশ্রয় নগরগুলি অবস্থিত ছিল এবং অনিচ্ছাকৃত নরঘাতককে সেগুলিতে পৌঁছানোর জন্য কিভাবে সাহায্য করা হত?
৮ প্রতিজ্ঞাত দেশে ইস্রায়েলীয়রা প্রবেশ করার পর তারা বাধ্যতাসহকারে ছয়টি আশ্রয় নগর প্রতিষ্ঠা করে। এদের মধ্যে তিনটি নগর—কেদশ, শিখিম ও ইব্রোণ—যর্দন নদীর পশ্চিমদিকে অবস্থিত ছিল। আর যর্দনের পূর্বদিকে অবস্থিত আশ্রয় নগরগুলি ছিল গোলন, রামোৎ ও বেৎসর। এই ছয়টি আশ্রয় নগর এক সুবিধাজনক স্থানে উত্তম রাস্তার উপর অবস্থিত ছিল। রাস্তার ধারে একটি যথার্থ স্থানে, চিহ্নস্বরূপ লিখে রাখা হত “আশ্রয়।” এই চিহ্নগুলি আশ্রয় নগরের প্রতি নির্দেশ করত আর অনিচ্ছাকৃত নরঘাতক তার জীবন নিয়ে সবচাইতে নিকটতম নগরটিতে পালিয়ে আসতে পারত। সেখানে সে রক্তের প্রতিশোধদাতার হাত থেকে রেহাই পেত।—যিহোশূয়ের পুস্তক ২০:২-৯.
৯. কেন যিহোবা আশ্রয় নগরগুলির ব্যবস্থা রেখেছিলেন আর কাদের উপকারের জন্য?
৯ ঈশ্বর কেন এই আশ্রয় নগরগুলির ব্যবস্থা করেছিলেন? এই কারণে যে, যাতে করে নির্দোষের রক্তের দ্বারা দেশটি দূষিত না হয় আর লোকেদের উপর রক্তের দায় যাতে না আসে। (দ্বিতীয় বিবরণ ১৯:১০) কাদের উপকারার্থে এই আশ্রয় নগরগুলির ব্যবস্থা করা হয়েছিল? নিয়মটি জানায়: “ইস্রায়েল-সন্তানদের জন্য, এবং তাহাদের মধ্যে প্রবাসী ও বিদেশীর জন্য এই ছয়টী নগর আশ্রয়স্থান হইবে; যেন কেহ প্রমাদবশতঃ মনুষ্যকে বধ করিলে সেই স্থানে পলাইতে পারে।” (গণনাপুস্তক ৩৫:১৫) অতএব, ন্যায্যতা বজায় রাখার জন্য এবং দয়া প্রদর্শনের সাথে সাথে ন্যায় বিচারকে অক্ষুণ্য রাখার উদ্দেশ্যে যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের বলেছিলেন, অনিচ্ছাকৃত নরঘাতকেরা যার অন্তর্ভুক্ত হল (১) স্থানীয় ইস্রায়েলীরা, (২) ইস্রায়েলে বসবাসকারী বিদেশীরা, অথবা (৩) অন্যদেশ থেকে আগত লোকেরা যারা সেই দেশে বাস করছে, তাদের জন্য আশ্রয় নগরগুলিকে আলাদা করে রাখতে।
১০. কেন বলা যেতে পারে যে আশ্রয় নগরগুলি ছিল ঈশ্বরের এক করুণাপূর্ণ ব্যবস্থা?
১০ এটি উল্লেখযোগ্য যে এমনকি যদি কোন ব্যক্তি অনিচ্ছাকৃতভাবে নরহত্যা করে থাকে, তাহলেও ঈশ্বরের ঘোষণার অধীনে তার মৃত্যু দণ্ড আবশ্যক, যা জানায় “যে কেহ মনুষ্যের রক্তপাত করিবে, মনুষ্য কর্ত্তৃক তাহার রক্তপাত করা যাইবে।” সুতরাং, কেবলমাত্র যিহোবা ঈশ্বরের এই করুণাপূর্ণ ব্যবস্থার দ্বারাই একজন অনিচ্ছাকৃত নরঘাতক যে কোন একটি আশ্রয় নগরে পালাতে পারত। আপাতদৃষ্টিতে, সাধারণ লোকেরা সেই সব ব্যক্তিদের প্রতি করুণা বোধ করত যাদের রক্তের প্রতিশোধকারীদের হাত থেকে পালাতে হত, কারণ সকলেই সচেতন ছিল যে অনিচ্ছাকৃতভাবে তারাও এইধরনের অপরাধ করতে পারে এবং তাদেরও আশ্রয় ও দয়ার প্রয়োজন হবে।
আশ্রয়ের জন্য পলায়ন
১১. প্রাচীন ইস্রায়েলে, একজন ব্যক্তি কী করতে পারত যদি সে দুর্ঘটনাবশতঃ সহকর্মীকে মেরে ফেলত?
১১ আশ্রয় সম্বন্ধীয় ঈশ্বরের এই করুণাময় ব্যবস্থার প্রতি আপনার উপলব্ধিবোধকে গড়ে তুলতে একটি দৃষ্টান্ত হয়ত সাহায্য করতে পারে। কল্পনা করুন যে প্রাচীন ইস্রায়েলে আপনি এমন এক ব্যক্তি যিনি কাঠ কাটছিলেন। ধরুন কুঠারের মাথাটি হঠাৎ আপনার হাত থেকে ছিঁটকে গিয়ে আপনার সহকর্মীর উপর মৃত্যুজনক আঘাত আনল। আপনি কী করবেন? নিয়মের মধ্যে এইধরনের পরিস্থিতিরও উল্লেখ আছে। নিঃসন্দেহে, আপনি অবশ্যই ঈশ্বর-দত্ত এই ব্যবস্থাটির সুযোগ নেবেন: “যে নরহন্তা সেই স্থানে পলাইয়া বাঁচিতে পারে, তাহার বিবরণ এই; কেহ যদি পূর্ব্বে প্রতিবাসীকে দ্বেষ না করিয়া অজ্ঞানতঃ তাহাকে বধ করে; যথা, কেহ আপন প্রতিবাসীর সহিত কাষ্ঠ কাটিতে বনে গিয়া গাছ কাটিবার জন্য কুড়ালি তুলিলে যদি ফলক বাঁট হইতে খসিয়া প্রতিবাসীর গায় এমন লাগে যে, তাহাতেই সে মারা পড়ে, সে ঐ তিনটীর মধ্যে কোন একটী নগরে পলাইয়া বাঁচিতে পারিবে।” (দ্বিতীয় বিবরণ ১৯:৪, ৫) কিন্তু এমনকি, আশ্রয় নগরে প্রবেশ করার পরও, যা ঘটেছে তার দায়িত্ব থেকে আপনি নিজেকে মুক্ত করতে পারবেন না।
১২. অনিচ্ছাকৃত নরঘাতক আশ্রয়-নগরে পৌঁছানোর পর কোন্ নিয়ম পদ্ধতি পালন করা হত?
১২ যদিও আপনাকে সাদরে আমন্ত্রণ জানানো হবে, কিন্তু আশ্রয় নগরের প্রবেশ দ্বারে ঢোকার আগে প্রাচীনদের কাছে আপনাকে ঘটনাটির বিবৃতি দিতে হবে। নগরে ঢোকবার পর আপনাকে প্রাচীনদের সামনে বিচার কক্ষে দাঁড়াতে হবে যারা নগরদ্বারে ইস্রায়েলের মণ্ডলীর প্রতিনিধিত্ব করছে এবং যেখানে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছে সেই এলাকার উপর যাদের বিচার সংক্রান্ত অধিকার আছে। আপনি যে নির্দোষ তা প্রতিপন্ন করার সুযোগ আপনি সেখানে পাবেন।
যখন নরঘাতকেরা বিচারের সম্মুখীন হয়
১৩, ১৪. নরঘাতকের বিচার করার সময় প্রাচীনের কোন্ বিষয়গুলিকে বিবেচনা করা উচিত?
১৩ বিচারের নগরদ্বারে প্রাচীনদের সামনে পরীক্ষার সময় আপনি অবশ্যই কৃতজ্ঞতার সাথে লক্ষ্য করবেন যে আপনার পূর্ববর্তী আচরণের উপর বিশেষভাবে জোর দেওয়া হচ্ছে। নিহত ব্যক্তিটির সাথে আপনার সম্পর্ককে প্রাচীনেরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বিবেচনা করে দেখবেন। আপনি কি সেই ব্যক্তিটিকে ঘৃণা করতেন, তার জন্য অপেক্ষা করেছিলেন এবং জেনেবুঝে তাকে হত্যা করেছেন? যদি তাই হয়, তাহলে প্রাচীনেরা আপনাকে রক্ত প্রতিশোধকারীর হাতে তুলে দেবেন এবং আপনাকে মৃত্যু বরণ করতেই হবে।
এই দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা নিয়মের এই মান সম্বন্ধে সচেতন থাকবে যা বলে যে ‘ইস্রায়েলের মধ্যে থেকে নিরপরাধের রক্তপাতের দোষ দূর করবে।’ (দ্বিতীয় বিবরণ ১৯:১১-১৩) তুলনামূলকভাবে বলা যায়, আজকের দিনে বিচারের ক্ষেত্রে, খ্রীষ্টীয় প্রাচীনদের উচিত শাস্ত্র সম্বন্ধে ভালভাবে অবগত থাকা এবং এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করার সময় অন্যায়কারীর পূর্ববর্তী মনোভাব ও আচরণ সম্বন্ধে বিবেচনা করা।
১৪ নম্রভাবে, নগরের প্রাচীনেরা গভীরে প্রবেশ করে জানতে চাইবেন যে আপনি সেই নিহত ব্যক্তিটির পশ্চাদনুসরণ করেছিলেন কি না। (যাত্রাপুস্তক ২১:১২, ১৩) আপনি কি গোপনে তাকে আক্রমণ করেছিলেন? (দ্বিতীয় বিবরণ ২৭:২৪) আপনি কি সেই ব্যক্তিটির উপর এতই রেগে গিয়েছিলেন যে তাকে বধ করার জন্য আপনি কৌশলতার সাহায্য নিয়েছিলেন? যদি তাই হয়, তাহলে আপনার মৃত্যুই প্রাপ্য। (যাত্রাপুস্তক ২১:১৪) বিশেষকরে প্রাচীনেরা জানতে চাইবেন যে সেই নিহত ব্যক্তিটির সাথে আপনার কোন শত্রুতা বা বিদ্বেষের সম্পর্ক ছিল কি না। (দ্বিতীয় বিবরণ ১৯:৪, ৬, ৭; যিহোশূয়ের পুস্তক ২০:৫) ধরুন প্রাচীনেরা আপনাকে নিরপরাধ মনে করলেন এবং আপনাকে আশ্রয় নগরে যেতে দিলেন। এই দয়ার জন্য আপনি কতই না কৃতজ্ঞ বোধ করবেন!
আশ্রয় নগরের জীবন
১৫. অনিচ্ছাকৃত নরঘাতকের উপর কোন্ নিয়মগুলি বলবৎ করা হত?
১৫ অনিচ্ছাকৃত নরঘাতককে আশ্রয় নগরের মধ্যে অথবা তার বাইরের দেওয়াল থেকে ১,০০০ কিউবিট (প্রায় ১,৪৫০ ফুট) দূরত্বের মধ্যে থাকতে হত। (গণনাপুস্তক ৩৫:২-৪) সেই সীমানার বাইরে যদি তাকে ঘুরতে দেখা যেত তাহলে সে যে কোন মুহূর্তে রক্ত প্রতিশোধকারীর মুখোমুখি হতে পারত। এইরকম কোন পরিস্থিতিতে রক্ত প্রতিশোধকারী অবশ্যই নরঘাতককে কোন প্রকার শাস্তির ঝুঁকি না নিয়েই হত্যা করতে পারত। কিন্তু নরঘাতককে শৃঙ্খলাবদ্ধ বা কারারুদ্ধ করে রাখা হত না। আশ্রয় নগরের বাসিন্দা হিসাবে, তাকে কোন বৃত্তি শিখতে হত, কর্মী হিসাবে কাজ করতে হত এবং সমাজের এক সাহায্যকারী ব্যক্তি হিসাবে সেবা করতে হত।
১৬. (ক) কতদিন অনিচ্ছাকৃত নরঘাতকদের আশ্রয় নগরে থাকতে হত? (খ) মহাযাজকের মৃত্যু কেন একজন নরঘাতককে আশ্রয় নগরগুলি পরিত্যাগ করার সুযোগ দিত?
১৬ কতদিন পর্যন্ত এই অনিচ্ছাকৃত নরঘাতককে আশ্রয় নগরে থাকতে হত? সম্ভবত সারা জীবন। যে কোন ক্ষেত্রেই হোক না কেন, নিয়মটি জানায়: “মহাযাজকের মৃত্যু পর্য্যন্ত আপন আশ্রয়-নগরে থাকা তাহার উচিত ছিল; কিন্তু মহাযাজকের মৃত্যু হইলে পর সেই নরহন্তা আপন অধিকার-ভূমিতে ফিরিয়া যাইতে পারিবে।” (গণনাপুস্তক ৩৫:২৬-২৮) মহাযাজকের মৃত্যু কেন অনিচ্ছাকৃত নরঘাতককে আশ্রয় নগর ছেড়ে চলে যাওয়ার অনুমতি দিত? মহাযাজক ছিল সেই দেশের সবচাইতে খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তি। অতএব তার মৃত্যু হবে এমন এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা যার সম্বন্ধে ইস্রায়েলের সমগ্র জাতির মধ্যে আলোচনা হবে। তখন আশ্রয় নগরের সমস্ত আশ্রিত ব্যক্তিরা রক্ত প্রতিশোধকারীর কাছ থেকে কোন ভয়ের আশঙ্কা না নিয়ে নিজেদের ঘরে ফিরে যেতে পারত। কেন? কারণ ঈশ্বরের নিয়ম ঘোষণা করে যে মহাযাজকের মৃত্যুর সাথে সাথে প্রতিশোধকারীর, নরঘাতককে হত্যা করার অধিকারও বিলুপ্ত হয় আর এটি সকলেই জানত। যদি তার নিকটতম আত্মীয় এর পরেও মৃত্যুর পরিশোধ নিত, তাহলে সে খুনি সাব্যস্ত হত ও তাকে হত্যা করার দণ্ড পেতে হত।
স্থায়ী প্রভাবগুলি
১৭. অনিচ্ছাকৃত নরঘাতকের উপর বলবৎ করা নিষেধাজ্ঞাগুলি সম্ভবত কিধরনের প্রভাব এনেছিল?
১৭ অনিচ্ছাকৃত নরঘাতকের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার পিছনে সম্ভবত কোন্ প্রভাবগুলি পড়ত? এগুলি তাকে মনে করিয়ে দিত যে সে একজনের মৃত্যুর জন্য দায়ী। সম্ভবত এরপর থেকে সে সর্বদা মানুষের জীবনকে পবিত্র জ্ঞান করবে। এছাড়াও, সে কখনই ভুলে যাবে না যে তার প্রতি দয়া দেখানো হয়েছিল। যেহেতু সে নিজে দয়া পেয়েছিল তাই সে অবশ্যই অপরের প্রতি দয়া প্রদর্শন করবে। বিধি নিয়ম সমেত এই আশ্রয় নগরগুলির ব্যবস্থা সাধারণ লোকের পক্ষেও উপকারী ছিল। কিভাবে? এটা অবশ্যই তাদের মনে ছাপ ফেলত যে তারা যেন কখনও মনুষ্য জীবন সম্পর্কে সতর্কতাহীন এক উদাসীন মনোভাব প্রকাশ না করে। সুতরাং খ্রীষ্টানদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে যে তারা যেন অসতর্কতামূলক কার্যকলাপকে এড়িয়ে চলে যার ফলে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু হতে পারে। এছাড়াও, আশ্রয় নগরগুলি সম্বন্ধে ঈশ্বরের এই করুণাপূর্ণ ব্যবস্থা আমাদের অনুপ্রাণিত করা উচিত দয়া প্রদর্শন করতে যখন তা দেখানো যথার্থ।—যাকোব ২:১৩.
১৮. আশ্রয় নগরগুলি সম্বন্ধে ঈশ্বরের এই ব্যবস্থা কোন্ দিক দিয়ে উপকারজনক ছিল?
১৮ আশ্রয় নগরগুলি সম্বন্ধে যিহোবা ঈশ্বরের ব্যবস্থা অন্যদিক দিয়েও খুব সুবিধাজনক ছিল। বিচারের আগে লোকেরা নরঘাতককে দোষী ভেবে নিয়ে তার পিছনে তদন্ত চালাত না। বরঞ্চ, তারা তাকে ইচ্ছাকৃত হত্যার পরিপ্রেক্ষিতে নির্দোষ বলে বিবেচনা করত, এমনকি সুরক্ষা পেতে তাকে সাহায্য করত। এছাড়াও, আশ্রয় নগরগুলির এই ব্যবস্থা, বর্তমানে কারাগার ও চরিত্র-সংশোধক জেলের মধ্যে হত্যাকারীদের রাখার ব্যবস্থার থেকে একেবারেই বিপরীত, যেখানে জনসাধারণেরা এগুলিকে আর্থিক সাহায্য দিয়ে থাকে এবং অপরাধীরা অন্যান্য অন্যায়কারীদের সংস্পর্শে আসার দরুন আরও খারাপ রূপ ধারণ করে। আশ্রয় নগরের ব্যবস্থার মধ্যে, লোহার কারাগারের জন্য বহু মূল্য প্রাচীর তৈরি করা ও তার দেখাশোনা করার কোন প্রয়োজন ছিল না, সাধারণত যেখান থেকে কারাবদ্ধ বন্দীরা প্রায়ই পালানোর চেষ্টা করে থাকে। বস্তুতপক্ষে, নরঘাতক এই “কারাগার”-এ থাকাই পছন্দ করত আর সেখানে সে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত থাকত। তাকে কর্মীও হতে হত যাতে করে সে সহমানুষের কোন উপকারে আসতে পারে।
১৯. আশ্রয় নগরগুলি সম্বন্ধে কোন্ প্রশ্নগুলি উত্থাপিত হয়?
১৯ অনিচ্ছাকৃত নরঘাতকদের সুরক্ষার জন্য ইস্রায়েলের এই আশ্রয় নগরগুলি ছিল অবশ্যই যিহোবার করুণাপূর্ণ ব্যবস্থার এক নমুনা। এই ব্যবস্থা অবশ্যই জীবনের প্রতি সম্মানকে বাড়িয়ে তোলে। কিন্তু, প্রাচীন ইস্রায়েলের আশ্রয় নগরগুলি বিংশ শতাব্দীর মানুষদের জন্য কি কোন অর্থ রাখে? আমরা কি যিহোবা ঈশ্বরের কাছে রক্তের দায়ে দায়ী হতে পারি এটি উপলব্ধি না করে যে তাঁর দয়ার প্রয়োজন আমাদের আছে? ইস্রায়েলের আশ্রয় নগরগুলি আধুনিক কালে আমাদের জন্য কি কোন তাৎপর্য রাখে?
আপনি কিভাবে উত্তর দেবেন?
◻ মানুষের জীবনকে যিহোবা কোন্ দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখেন?
◻ অনিচ্ছাকৃত নরঘাতকদের জন্য ঈশ্বর কোন্ করুণাপূর্ণ ব্যবস্থা রেখেছিলেন?
◻ কিভাবে একজন নরঘাতক আশ্রয় নগরে প্রবেশ করতে পারত এবং তাকে কতদিন সেখানে থাকতে হত?
◻ অনিচ্ছাকৃত নরঘাতকের উপর বলবৎ করা নিষেধাজ্ঞাগুলি সম্ভবত কিধরনে প্রভাব এনেছিল?
[১২ পৃষ্ঠার মানচিত্র]
ইস্রায়েলের আশ্রয় নগরগুলি এক সুবিধাজনক স্থানে অবস্থিত ছিল
(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)
কেদশ যর্দন নদী গোলন
শিখিম রামোৎ
হিব্রোণ বেৎসর