অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৯
প্রাচীন ইস্রায়েলে প্রেম ও ন্যায়বিচার (প্রথম অংশ)
“তিনি ধার্ম্মিকতা ও ন্যায়বিচার ভালবাসেন; পৃথিবী সদাপ্রভুর দয়াতে [‘অটল ভালবাসায়,’ বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন] পরিপূর্ণ।”—গীত. ৩৩:৫.
গান সংখ্যা ২৩ যিহোবা, মোদের বল
সারাংশa
১-২. (ক) আমরা সবাই কী চাই? (খ) আমরা কোন বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারি?
আমরা সবাই অন্যদের কাছ থেকে ভালোবাসা পেতে এবং ন্যায্য আচরণ লাভ করতে চাই। আমরা যদি বার বার প্রেম ও ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হই, তা হলে আমরা হয়তো নিজেদের মূল্যহীন ও আশাহীন বলে মনে করতে পারি।
২ যিহোবা জানেন যে, আমরা ভালোবাসা ও ন্যায়বিচার লাভ করার জন্য আকুল আকাঙ্ক্ষী। (গীত. ৩৩:৫) আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, আমাদের ঈশ্বর আমাদের প্রচুর ভালোবাসেন এবং তিনি চান যেন আমাদের সঙ্গে ন্যায্য আচরণ করা হয়। আমরা যখন মোশির মাধ্যমে ইস্রায়েল জাতিকে দেওয়া যিহোবার ব্যবস্থা ভালোভাবে লক্ষ করি, তখন এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আপনি যদি অন্যদের কাছ থেকে প্রেম ও ন্যায়বিচার না পাওয়ার কারণে অত্যন্ত দুঃখিত হয়ে থাকেন, তা হলে দয়া করে বিবেচনা করুন যে, কীভাবে মোশির ব্যবস্থাb যিহোবার লোকেদের প্রতি তাঁর চিন্তাকে প্রকাশ করে।
৩. (ক) রোমীয় ১৩:৮-১০ পদে যেমন ব্যাখ্যা করা হয়েছে, আমরা যখন মোশির ব্যবস্থা অধ্যয়ন করি, তখন আমরা কী খুঁজে পাই? (খ) এই প্রবন্ধে কোন প্রশ্নগুলোর উত্তর পাব?
৩ আমরা যখন মোশির ব্যবস্থা অধ্যয়ন করি, তখন আমরা সেখানে আমাদের প্রেমময় ঈশ্বর যিহোবার উষ্ণ অনুভূতি খুঁজে পাই। (পড়ুন, রোমীয় ১৩:৮-১০.) এই প্রবন্ধে আমরা ইস্রায়েলীয়দের দেওয়া আইনগুলোর মধ্যে কয়েকটা পরীক্ষা করব এবং এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাব: কেন আমরা বলতে পারি, ব্যবস্থার ভিত্তি ছিল প্রেম? কেন আমরা বলতে পারি, ব্যবস্থা ন্যায়বিচার করতে উৎসাহিত করেছিল? কীভাবে কর্তৃত্বে থাকা ব্যক্তিদের ব্যবস্থা পালন করতে হতো? আর ব্যবস্থা বিশেষভাবে কাদের সুরক্ষিত রেখেছিল? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আমাদের সান্ত্বনা ও আশা প্রদান করতে পারে এবং আমাদের প্রেমময় পিতার নিকটবর্তী করতে পারে।—প্রেরিত ১৭:২৭; রোমীয় ১৫:৪.
ব্যবস্থার ভিত্তি ছিল প্রেম
৪. (ক) কেন আমরা বলতে পারি, মোশির ব্যবস্থার ভিত্তি ছিল প্রেম? (খ) মথি ২২:৩৬-৪০ পদে যেমন লেখা আছে, যিশু কোন আজ্ঞাগুলো তুলে ধরেছিলেন?
৪ আমরা এটা বলতে পারি, মোশির ব্যবস্থার ভিত্তি ছিল প্রেম কারণ প্রেম যিহোবাকে সমস্ত কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে। (১ যোহন ৪:৮) যিহোবা মোশির ব্যবস্থার সমস্ত আইন দুটো মৌলিক আজ্ঞার উপর ভিত্তি করে গড়ে তুলেছিলেন—ঈশ্বরকে প্রেম করো এবং প্রতিবেশীকে প্রেম করো। (লেবীয়. ১৯:১৮; দ্বিতীয়. ৬:৫; পড়ুন, মথি ২২:৩৬-৪০.) তাই, আমরা আশা করতে পারি যে, ব্যবস্থায় পাওয়া প্রত্যেকটা আজ্ঞাই যিহোবার প্রেম সম্বন্ধে আমাদের কিছু-না-কিছু শেখায়। আসুন, আমরা কয়েকটা উদাহরণ লক্ষ করি।
৫-৬. বিবাহিত দম্পতিরা কী করুক বলে যিহোবা চান এবং তিনি কী জানেন? একটা উদাহরণ দিন।
৫ আপনার বিবাহসাথির প্রতি অনুগত থাকুন এবং আপনার সন্তানদের যত্ন নিন। যিহোবা চান, বিবাহিত দম্পতিরা একে অপরকে এতটাই ভালোবাসুক যেন তাদের ভালোবাসা সারাজীবন টিকে থাকে। (আদি. ২:২৪; মথি ১৯:৩-৬) ব্যভিচার হল একজন ব্যক্তির করা সবচেয়ে নিষ্ঠুর অপরাধগুলোর মধ্যে একটা। এই কারণে দশ আজ্ঞার মধ্যে সপ্তম আজ্ঞায় ব্যভিচার না করতে বলা হয়েছে। (দ্বিতীয়. ৫:১৮) এটা হল “ঈশ্বরের বিরুদ্ধে” পাপ এবং বিবাহসাথির প্রতি করা এক নিষ্ঠুর আচরণ। (আদি. ৩৯:৭-৯) যে-বিবাহিত ব্যক্তি ব্যভিচার করেছেন, তার নির্দোষ সাথি হয়তো বহু দশক ধরে বিশ্বাসঘাতকতার যন্ত্রণা ভোগ করতে পারেন।
৬ বিবাহিত দম্পতিরা একে অপরের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করে, সেই বিষয়ে যিহোবা খুব ভালোভাবে জানেন। তিনি বিশেষভাবে চেয়েছিলেন যেন ইস্রায়েলীয় স্ত্রীদের সঙ্গে ভালোভাবে আচরণ করা হয়। যে-স্বামী ব্যবস্থার প্রতি সম্মান দেখাতেন, তিনি তার স্ত্রীকে ভালোবাসতেন এবং সামান্য কারণে স্ত্রীকে পরিত্যাগ বা তার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করতেন না। (দ্বিতীয়. ২৪:১-৪; মথি ১৯:৩, ৮) কিন্তু, যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনো গুরুতর সমস্যা দেখা দিত এবং স্বামী বিবাহবিচ্ছেদ করতেন, তা হলে তাকে তার স্ত্রীকে ত্যাগপত্র দিতে হতো। এই ত্যাগপত্র স্ত্রীকে অনৈতিকতার মিথ্যা অপবাদ থেকে সুরক্ষিত রাখত। শুধু তা-ই নয়, সেই ত্যাগপত্র দেওয়ার আগে স্বামীকে নগরের প্রাচীনদের সঙ্গে আলোচনা করতে হতো। এর ফলে, প্রাচীনদের কাছে সেই দম্পতিকে সাহায্য করার সুযোগ থাকত, যাতে তারা তাদের বিয়েকে রক্ষা করতে পারে। যখন একজন ইস্রায়েলীয় পুরুষ স্বার্থপর কারণে বিবাহবিচ্ছেদ করতেন, তখন যিহোবা সবসময় হস্তক্ষেপ করতেন না। তা সত্ত্বেও, তিনি সেই স্ত্রীর চোখের জল লক্ষ করতেন এবং তার যন্ত্রণা অনুভব করতেন।—মালাখি ২:১৩-১৬.
৭-৮. (ক) যিহোবা বাবা-মায়েদের কী করার আজ্ঞা দিয়েছেন? (প্রচ্ছদে দেওয়া ছবিটা দেখুন।) (খ) আমরা কোন কোন শিক্ষা লাভ করি?
৭ ব্যবস্থা এও প্রকাশ করেছিল যে, যিহোবা সন্তানদের মঙ্গলের বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেন। তিনি বাবা-মায়েদের আজ্ঞা দিয়েছিলেন যেন তারা তাদের সন্তানদের ভরণ-পোষণ জোগান আর এর পাশাপাশি ঈশ্বরের সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক বজায় রাখতে সাহায্য করেন। সন্তানদের যিহোবার ব্যবস্থাকে বুঝতে, মূল্যবান বলে গণ্য করতে এবং ভালোবাসতে সাহায্য করার জন্য বাবা-মায়েদের সমস্ত সুযোগকে কাজে লাগাতে হতো। (দ্বিতীয়. ৬:৬-৯; ৭:১৩) একটা যে-কারণে যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের শাস্তি দিয়েছিলেন, সেটা হল তারা তাদের কোনো কোনো সন্তানের সঙ্গে অত্যন্ত জঘন্য আচরণ করেছিল। (যির. ৭:৩১, ৩৩) বাবা-মায়েদের তাদের সন্তানদের গুরুত্বহীন সম্পত্তি হিসেবে নয়, যেটাকে তারা উপেক্ষা করতে অথবা অপব্যবহার করতে পারতেন বরং এক উত্তরাধিকার হিসেবে অর্থাৎ যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া অধিকার বা পুরস্কার হিসেবে যত্ন নিতে হতো।—গীত. ১২৭:৩.
৮ শিক্ষা: বিবাহিত দম্পতিরা একে অপরের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করে, যিহোবা তা লক্ষ করেন। তিনি চান যেন বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের ভালোবাসেন। বাবা-মায়েরা যদি তাদের সন্তানদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন, তা হলে যিহোবা তাদের বিচার করবেন।
৯-১১. কেন যিহোবা লোভ না করার আইন দিয়েছিলেন?
৯ লোভ করবেন না। দশ আজ্ঞার শেষ আজ্ঞায় লোভ না করতে অর্থাৎ অন্য ব্যক্তির কোনো কিছু পাওয়ার মন্দ আকাঙ্ক্ষা গড়ে না তুলতে বলা হয়েছে। (দ্বিতীয়. ৫:২১; রোমীয় ৭:৭) যিহোবা এই আইন একটা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রদান করার জন্য দিয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন যেন তাঁর লোকেরা অবশ্যই তাদের হৃদয়কে অর্থাৎ তাদের চিন্তাভাবনা, অনুভূতি ও যুক্তি করার ক্ষমতাকে রক্ষা করে। তিনি জানেন যে, একটা মন্দ কাজ মন্দ চিন্তাভাবনা ও অনুভূতি থেকে শুরু হয়। (হিতো. ৪:২৩) একজন ইস্রায়েলীয় যদি তার হৃদয়ে মন্দ কামনা গড়ে উঠতে দিতেন, তা হলে তিনি সম্ভবত অন্যদের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করতেন। উদাহরণ স্বরূপ, রাজা দায়ূদ এই ফাঁদে পা দিয়েছিলেন। সাধারণভাবে দেখলে, তিনি একজন ভালো মানুষ ছিলেন। কিন্তু, এক বার তিনি অন্য একজনের স্ত্রীর প্রতি লোভ করেছিলেন। তার কামনা তাকে পাপ করতে পরিচালিত করেছিল। (যাকোব ১:১৪, ১৫) দায়ূদ ব্যভিচার করেছিলেন, সেই মহিলার স্বামীকে প্রতারিত করার চেষ্টা করেছিলেন এবং পরে তাকে হত্যা করিয়েছিলেন।—২ শমূ. ১১:২-৪; ১২:৭-১১.
১০ যিহোবা জানতেন কখন একজন ইস্রায়েলীয় লোভ না করার বিষয়ে তাঁর আইন লঙ্ঘন করেন কারণ তিনি অন্তঃকরণ বা হৃদয় পড়তে পারেন। (১ বংশা. ২৮:৯) লোভ না করার বিষয়ে দেওয়া আইনে যিহোবা তাঁর লোকেদের বলেছিলেন, তারা যেন সেই সমস্ত চিন্তাভাবনা এড়িয়ে চলে, যেগুলো তাদের খারাপ আচরণ করতে পরিচালিত করে। যিহোবা কতই-না বিজ্ঞ ও প্রেমময় পিতা!
১১ শিক্ষা: যিহোবা একজন ব্যক্তির মুখশ্রী বা বাহ্যিক বিষয়গুলোর চেয়ে আরও বেশি কিছু দেখেন। আমাদের অন্তঃকরণে অর্থাৎ আমাদের হৃদয়ে আসলে কী রয়েছে, তিনি তা লক্ষ করেন। (১ শমূ. ১৬:৭) আমরা কোনো চিন্তাভাবনা, কোনো অনুভূতি, কোনো কাজ যিহোবার কাছ থেকে গোপন রাখতে পারি না। তিনি আমাদের মধ্যে ভালো বিষয়গুলো খোঁজার চেষ্টা করেন এবং চান যেন আমাদের মধ্যে সেগুলো বৃদ্ধি পায়। কিন্তু, তিনি এও চান যেন আমাদের মন্দ চিন্তাভাবনাগুলো মন্দ কাজে পরিণত হওয়ার আগেই আমরা সেগুলো শনাক্ত করি এবং নিয়ন্ত্রণ করি।—২ বংশা. ১৬:৯; মথি ৫:২৭-৩০.
ব্যবস্থা ন্যায়বিচার করতে উৎসাহিত করেছিল
১২. মোশির ব্যবস্থা কোন বিষয়ে জোর দিয়েছিল?
১২ মোশির ব্যবস্থা এই বিষয়েও জোর দিয়েছিল যে, যিহোবা ন্যায়বিচার ভালোবাসেন। (গীত. ৩৭:২৮; যিশা. ৬১:৮) কীভাবে অন্যদের সঙ্গে ন্যায্য আচরণ করা যায়, সেই বিষয়ে তিনি নিখুঁত উদাহরণ স্থাপন করেছেন। ইস্রায়েলীয়রা যখন যিহোবার দেওয়া আইনগুলো পালন করত, তখন তিনি তাদের আশীর্বাদ করতেন। তারা যখন তাঁর সঠিক ও ন্যায্য মানগুলো উপেক্ষা করত, তখন তারা কষ্ট ভোগ করত। দশ আজ্ঞায় পাওয়া আরও দুটো আজ্ঞা সম্বন্ধে বিবেচনা করুন।
১৩-১৪. দশ আজ্ঞার প্রথম দুটো আজ্ঞায় কী বলা হয়েছিল এবং কীভাবে সেই আজ্ঞাগুলো পালন করা ইস্রায়েলীয়দের উপকৃত করেছিল?
১৩ একমাত্র যিহোবার উপাসনা করুন। দশ আজ্ঞার প্রথম দুটো আজ্ঞায় বলা হয়েছিল যেন ইস্রায়েলীয়রা একমাত্র যিহোবার উপাসনা করে এবং তাদের সতর্ক করা হয়েছিল যেন তারা প্রতিমার উপাসনা না করে। (যাত্রা. ২০:৩-৬) এই আজ্ঞাগুলো যিহোবার উপকারের জন্য ছিল না। এর পরিবর্তে, সেগুলো তাঁর লোকেদের উপকারের জন্য ছিল। তাঁর লোকেরা যখন তাঁর প্রতি অনুগত ছিল, তখন তারা সমৃদ্ধি লাভ করেছিল। তারা যখন অন্যান্য জাতির দেবতাদের উপাসনা করেছিল, তখন তারা কষ্ট ভোগ করেছিল।
১৪ কনানীয়দের বিষয়ে চিন্তা করুন। তারা সত্য ও জীবন্ত ঈশ্বরের উপাসনা করার পরিবর্তে নিষ্প্রাণ প্রতিমার উপাসনা করত। এর ফলে, তারা মন্দ কাজ করেছিল। (গীত. ১১৫:৪-৮) তাদের উপাসনার অংশ হিসেবে তারা জঘন্য যৌন ক্রিয়াকলাপে লিপ্ত হতো এবং নৃশংসভাবে সন্তানদের বলি দিত। একইভাবে, ইস্রায়েলীয়রা যখন যিহোবাকে উপেক্ষা করেছিল এবং প্রতিমার উপাসনা করা বেছে নিয়েছিল, তখন তারা মন্দ কাজ করেছিল এবং নিজেদের পরিবারের সদস্যদের কষ্ট দিয়েছিল। (২ বংশা. ২৮:১-৪) কর্তৃত্বে থাকা ব্যক্তিরা ন্যায়বিচার সম্বন্ধে যিহোবার মান প্রত্যাখ্যান করেছিল। তারা তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করেছিল এবং দুর্বল ও অসহায় ব্যক্তিদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করেছিল। (যিহি. ৩৪:১-৪) যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের সতর্ক করে বলেছিলেন, যারা অসহায় মহিলা ও সন্তানদের প্রতি দুর্ব্যবহার করে, বিচারে তিনি তাদের শাস্তি দেবেন। (দ্বিতীয়. ১০:১৭, ১৮; ২৭:১৯) এর বিপরীতে, যিহোবার লোকেরা যখন তাঁর প্রতি অনুগত ছিল এবং একে অপরের প্রতি ন্যায্য আচরণ করেছিল, তখন তিনি তাদের আশীর্বাদ করেছিলেন।—১ রাজা. ১০:৪-৯.
১৫. যিহোবা সম্বন্ধে আমরা কোন কোন শিক্ষা লাভ করি?
১৫ শিক্ষা: যিহোবার উপাসনা করার দাবি করে এমন ব্যক্তিরা যখন তাঁর মান উপেক্ষা করে এবং তাঁর লোকেদের ক্ষতি করে, তখন সেটার জন্য যিহোবাকে দোষ দেওয়া যেতে পারে না। যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন এবং আমরা যখন অবিচার ভোগ করি, তখন তিনি সেই বিষয়ে অবগত থাকেন। একজন মা তার সন্তানের কষ্ট যতটা অনুভব করেন, তার চেয়েও বেশি তিনি আমাদের কষ্ট অনুভব করেন। (যিশা. ৪৯:১৫) যদিও তিনি হয়তো সঙ্গেসঙ্গে হস্তক্ষেপ করেন না, তবে তিনি উপযুক্ত সময়ে অনুতাপহীন পাপীদের বিচার করবেন, যারা অন্যদের সঙ্গে মন্দ আচরণ করে।
ব্যবস্থা কীভাবে পালন করতে হতো?
১৬-১৮. মোশির ব্যবস্থা জীবনের কোন কোন ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল এবং আমরা কোন কোন শিক্ষা লাভ করি?
১৬ মোশির ব্যবস্থা একজন ইস্রায়েলীয়ের জীবনের বিভিন্ন দিককে অন্তর্ভুক্ত করেছিল। তাই, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যেন নিযুক্ত বয়স্ক পুরুষরা যিহোবার লোকেদের ন্যায্য বিচার করেন। তাদের দায়িত্ব কেবল যিহোবার উপাসনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিষয়ে বিচার করাই ছিল না কিন্তু সেইসঙ্গে দ্বন্দ্ব ও অপরাধ সংক্রান্ত বিষয়ে বিচার করাও ছিল। পরবর্তী উদাহরণগুলো লক্ষ করুন।
১৭ একজন ইস্রায়েলীয় যদি কাউকে হত্যা করতেন, তা হলে তাকে সঙ্গেসঙ্গে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতো না। তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া উপযুক্ত হবে কি না, তা নির্ধারণ করার জন্য তার নগরের প্রাচীনরা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতেন। (দ্বিতীয়. ১৯:২-৭, ১১-১৩) এ ছাড়া, প্রাচীনরা দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন বিষয়ের বিচার করতেন যেমন, সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়ে বিতর্কের মীমাংসা থেকে শুরু করে বৈবাহিক সমস্যা মেটানোর কাজও তারা করতেন। (যাত্রা. ২১:৩৫; দ্বিতীয়. ২২:১৩-১৯) প্রাচীনরা যখন ন্যায়বিচার করতেন এবং ইস্রায়েলীয়রা যখন ব্যবস্থা অনুযায়ী কাজ করত, তখন প্রত্যেকে উপকৃত হতো এবং একটা জাতি হিসেবে তারা যিহোবার গৌরব নিয়ে আসত।—লেবীয়. ২০:৭, ৮; যিশা. ৪৮:১৭, ১৮.
১৮ শিক্ষা: আমাদের জীবনের প্রতিটা দিকই যিহোবার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি চান যেন আমরা অন্যদের সঙ্গে ন্যায্যভাবে ও প্রেমময় উপায়ে আচরণ করি। আমরা যা বলি ও করি, তিনি সেটা লক্ষ করেন আর তা এমনকী সেইসময়েও, যখন আমরা বাড়িতে একা থাকি।—ইব্রীয় ৪:১৩.
১৯-২১. (ক) কীভাবে প্রাচীন ও বিচারকর্তাদের ঈশ্বরের লোকেদের সঙ্গে আচরণ করতে হতো? (খ) কীভাবে মোশির ব্যবস্থা বিশেষভাবে লোকেদের সুরক্ষিত রেখেছিল এবং আমরা কোন কোন শিক্ষা লাভ করতে পারি?
১৯ যিহোবা আশেপাশের জাতিগুলোর মন্দ প্রভাব থেকেও তাঁর লোকেদের রক্ষা করতে চেয়েছিলেন। তাই, তিনি প্রাচীন ও বিচারকর্তাদের কাছ থেকে আশা করেছিলেন যেন তারা নিরপেক্ষভাবে ব্যবস্থা প্রয়োগ করেন। তবে, বিচারকর্তারা তাঁর লোকেদের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করতে পারতেন না। এর পরিবর্তে, তাদের প্রেমের সঙ্গে ন্যায়বিচার করতে হতো।—দ্বিতীয়. ১:১৩-১৭; ১৬:১৮-২০.
২০ যিহোবা তাঁর লোকেদের জন্য সমবেদনা বোধ করেন আর তাই তিনি অন্যায্য আচরণের হাত থেকে ব্যক্তি বিশেষ হিসেবে তাদের রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন আইন দিয়েছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ, ব্যবস্থার কারণে একজন ব্যক্তিকে কোনো অপরাধের মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করার সম্ভাবনা কম ছিল। অভিযুক্ত ব্যক্তির এটা জানার অধিকার ছিল যে, কে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। (দ্বিতীয়. ১৯:১৬-১৯; ২৫:১) আর সেই ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করার আগে অন্ততপক্ষে দু-জন সাক্ষিকে প্রমাণ দিতে হতো। (দ্বিতীয়. ১৭:৬; ১৯:১৫) কিন্তু, কোনো ইস্রায়েলীয় যদি পাপ করতেন আর সেটার কেবলমাত্র এক জন সাক্ষি থাকতেন, তা হলে? তিনি কখনোই এটা ধরে নিতে পারতেন না যে, তার মন্দ কাজের জন্য তিনি কোনো শাস্তি পাবেন না। যিহোবা তার কাজ লক্ষ করেছেন। পরিবারে, বাবাকে যিহোবা কর্তৃত্ব দিয়েছেন কিন্তু সেই কর্তৃত্বের কিছু সীমা আছে। পরিবারের কোনো কোনো সমস্যার সময়ে নগরের প্রাচীনদের দায়িত্ব ছিল যেন তারা তাতে হস্তক্ষেপ করেন এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন।—দ্বিতীয়. ২১:১৮-২১.
২১ শিক্ষা: যিহোবা নিখুঁত উদাহরণ স্থাপন করেন; তিনি কখনোই অন্যায্য কিছু করেন না। (গীত. ৮৯:১৪) তিনি সেই ব্যক্তিদের পুরস্কার দেন, যারা অনুগতভাবে তাঁর মানগুলো পালন করে কিন্তু তিনি সেই ব্যক্তিদের শাস্তি দেন, যারা নিজেদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে। (২ শমূ. ২২:২১-২৩; যিহি. ৯:৯, ১০) কেউ কেউ হয়তো মন্দ কাজ করে এবং মনে হতে পারে যেন তারা কোনো শাস্তি পাবে না। কিন্তু, যিহোবা উপযুক্ত সময়ে ন্যায়বিচার করার বিষয়টা নিশ্চিত করবেন। (হিতো. ২৮:১৩) আর তারা যদি অনুতপ্ত না হয়, তা হলে শীঘ্রই জানতে পারবে যে, “জীবন্ত ঈশ্বরের হস্তে পতিত হওয়া ভয়ানক বিষয়।”—ইব্রীয় ১০:৩০, ৩১.
ব্যবস্থা বিশেষভাবে কাদের সুরক্ষিত রেখেছিল?
২২-২৪. (ক) ব্যবস্থা বিশেষভাবে কাদের সুরক্ষিত রেখেছিল এবং যিহোবা সম্বন্ধে আমরা কী শিখি? (খ) যাত্রাপুস্তক ২২:২২-২৪ পদে কোন সতর্কবাণী রয়েছে?
২২ ব্যবস্থা বিশেষভাবে সেই ব্যক্তিদের সুরক্ষিত রেখেছিল, যারা নিজেদের রক্ষা করতে পারতেন না, যার অন্তর্ভুক্ত হল অনাথ, বিধবা ও বিদেশিরা। ইস্রায়েলের বিচারকর্তাদের বলা হয়েছিল: “বিদেশীর কিম্বা পিতৃহীনের বিচারে অন্যায় করিবে না, এবং বিধবার বস্ত্র বন্ধক লইবে না।” (দ্বিতীয়. ২৪:১৭) যিহোবা সমাজের সবচেয়ে অসহায় ব্যক্তিদের প্রতি স্নেহের সঙ্গে ব্যক্তিগত আগ্রহ দেখাতেন। আর যারা সেই ব্যক্তিদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করত, তাদের তিনি শাস্তি দিতেন।—পড়ুন, যাত্রাপুস্তক ২২:২২-২৪.
২৩ ব্যবস্থা যৌন অপরাধের হাত থেকেও পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষিত রেখেছিল। (লেবীয়. ১৮:৬-৩০) ইস্রায়েলের আশেপাশের জাতির লোকেরা এই ধরনের অপরাধকে মেনে নিত অথবা তা ঘটার অনুমতি দিত। কিন্তু, যিহোবার লোকেদের এই ধরনের অপরাধকে যিহোবার মতো করে অর্থাৎ ঘৃণার চোখে দেখতে হতো।
২৪ শিক্ষা: যিহোবা যাদের বিভিন্ন পদে নিযুক্ত করেছেন, তাদের কাছ থেকে তিনি আশা করেন যেন তারা তাদের যত্নাধীনে থাকা সমস্ত ব্যক্তির প্রতি প্রেমের সঙ্গে আগ্রহ দেখান। তিনি যৌন অপরাধকে ঘৃণা করেন এবং চান যেন সবাই, বিশেষভাবে সবচেয়ে অসহায় ব্যক্তিরা, সুরক্ষা ও ন্যায়বিচার লাভ করে।
ব্যবস্থা, “আগামী উত্তম উত্তম বিষয়ের ছায়াবিশিষ্ট”
২৫-২৬. (ক) কেন আমরা বলতে পারি, প্রেম ও ন্যায়বিচার শ্বাস-প্রশ্বাস ও জীবনের মতো? (খ) এই ধারাবাহিক প্রবন্ধের পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?
২৫ ঠিক যেমন শ্বাস-প্রশ্বাস ও জীবন একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, একইভাবে প্রেম ও ন্যায়বিচারও একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমরা যখন এই বিষয়ে প্রত্যয়ী হই যে, যিহোবা আমাদের সঙ্গে ন্যায্য আচরণ করছেন, তখন তাঁর প্রতি আমাদের ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। আর আমরা যখন আমাদের ঈশ্বর ও তাঁর ন্যায্য মানকে ভালোবাসি, তখন আমরা অন্যদের ভালোবাসতে এবং তাদের সঙ্গে ন্যায্য আচরণ করতে অনুপ্রাণিত হই।
২৬ মোশির ব্যবস্থা ইস্রায়েলীয়দের যিহোবার সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতে সাহায্য করেছিল। তবে, যিশুর দ্বারা ব্যবস্থা পরিপূর্ণ হওয়ার পর থেকে ঈশ্বরের লোকেদের আর ব্যবস্থা পালন করতে হয় না এবং এটা আরও উত্তম কিছুর সঙ্গে পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছে। (রোমীয় ১০:৪) প্রেরিত পৌল এই ব্যবস্থাকে ‘আগামী উত্তম উত্তম বিষয়ের ছায়া’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। (ইব্রীয় ১০:১) এই ধারাবাহিক প্রবন্ধের পরবর্তী প্রবন্ধে, এই উত্তম উত্তম বিষয়ের কিছু দিক নিয়ে আর সেইসঙ্গে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে প্রেম ও ন্যায়বিচারের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হবে।
গান সংখ্যা ২৫ শিষ্যত্বের প্রমাণ
a এই প্রবন্ধ হল চার অংশের ধারাবাহিক প্রবন্ধের প্রথম প্রবন্ধ, যেটা আলোচনা করবে, কেন আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, যিহোবা আমাদের জন্য চিন্তা করেন। পরবর্তী তিনটে প্রবন্ধ প্রহরীদুর্গ পত্রিকার মে ২০১৯ সংখ্যায় প্রকাশ করা হবে। এই প্রবন্ধগুলোর শিরোনাম হল “খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে প্রেম ও ন্যায়বিচার,” “দুষ্টতার মুখোমুখি হওয়ার সময়ে প্রেম ও ন্যায়বিচার” এবং “দুর্ব্যবহারের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের সান্ত্বনা প্রদান করা।”
b এর অর্থ কী?: যিহোবা মোশির মাধ্যমে ইস্রায়েলীয়দের ৬০০রও বেশি আইন দিয়েছিলেন। এই সমস্ত আইনকে “ব্যবস্থা,” “মোশির ব্যবস্থা” ও “আজ্ঞা” বলা হয়। এ ছাড়া, বাইবেলের প্রথম পাঁচটা বইকে (আদিপুস্তক থেকে দ্বিতীয় বিবরণ) প্রায়ই ব্যবস্থা বলা হয়ে থাকে। কখনো কখনো সমগ্র অনুপ্রাণিত ইব্রীয় শাস্ত্রকে বোঝানোর জন্য এই অভিব্যক্তিটা ব্যবহার করা হয়েছে।
c ছবি সম্বন্ধে: একজন ইস্রায়েলীয় মা খাবার প্রস্তুত করার সময়ে তার মেয়েদের সঙ্গে হাসি মুখে কথা বলছেন। তাদের পিছনে বাবা তার ছেলেকে মেষদের যত্ন নিতে শেখাচ্ছেন।
d ছবি সম্বন্ধে: নগরদ্বারে প্রাচীনরা একজন বিধবা ও তার সন্তানকে সাহায্য করছেন, যাদের সঙ্গে একজন স্থানীয় বণিক দুর্ব্যবহার করেছেন।