আমাদের আর্কাইভ থেকে রাজা অত্যন্ত আনন্দিত হন!
ঘটনাটা ঘটেছিল ১৯৩৬ সালের আগস্ট মাসে। জায়গাটা ছিল সোয়াজিল্যান্ডের রয়াল ক্রাল বা রাজ প্রাঙ্গণ। রবার্ট এবং জর্জ নিজবেট সবেমাত্র সাউন্ড কার থেকে যন্ত্রসংগীত বাজানোর পর, ভাই জে. এফ. রাদারফোর্ডের রেকর্ডকৃত বক্তৃতা বাজিয়ে শুনিয়েছে। রাজা সোবুজা ২য় অত্যন্ত আনন্দিত হন। “সেই সময় আমরা অনেক বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যাই,” জর্জ ব্যাখ্যা করেন, “যখন তিনি ট্রান্সক্রিপশন মেশিন, রেকর্ড এবং রাজ্যের বার্তা জানানোর লাউডস্পিকারটা কিনতে চান!”
রবার্ট ক্ষমা চেয়ে বলেন যে, এগুলো বিক্রির জন্য নয়। কেন? কারণ এই যন্ত্রগুলো অন্য একজন ব্যক্তির। রাজা জানতে চান যে, সেই ব্যক্তি কে।
রবার্ট উত্তর দেন “এই সমস্তকিছুই আরেকজন রাজার।” সোবুজা তখন জিজ্ঞেস করেন, কে সেই রাজা। “তিনি হচ্ছেন যিশু খ্রিস্ট, ঈশ্বরের রাজ্যের রাজা,” রবার্ট উত্তর দেন।
“ওহ্, তিনি একজন মহান রাজা” সোবুজা গভীর সম্মানের সঙ্গে স্বীকার করেন। “আমি এমন কোনো কিছুই নিতে চাই না, যা তাঁর।”
রবার্ট লেখেন: ‘প্রধান নেতা, রাজা সোবুজার এইরকম মনোভাব দেখে আমি অত্যন্ত অভিভূত হয়ে যাই। তিনি কোনোরকম দম্ভ বা গর্ব না দেখিয়ে একেবারে সঠিক ইংরেজিতে কথা বলেন আর সেইসঙ্গে তিনি ছিলেন পুরোপুরি অকপট ও অত্যন্ত বন্ধুত্বপরায়ণ। আমি প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে তার সঙ্গে তার অফিসে বসে ছিলাম আর জর্জ বাইরে যন্ত্রসংগীত বাজাচ্ছিল।
‘পরে সেই দিনই,’ রবার্ট বলে চলেন, ‘আমরা সোয়াজি ন্যাশনাল স্কুলে যাই, যেখানে আমাদের সবচেয়ে মজার অভিজ্ঞতা হয়। আমরা প্রধান শিক্ষকের কাছে সাক্ষ্য দিই, যিনি অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে আমাদের কথা শোনেন। আমরা যখন তাকে মেশিনটা সম্বন্ধে বলি এবং স্কুলের সবাইকে রেকর্ডিং শোনানোর প্রস্তাব দিই, তখন তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হন এবং প্রায় এক-শো জন ছাত্র-ছাত্রীকে ডেকে পাঠান, যেন তারা ঘাসের ওপর বসে তা শুনতে পারে। আমাদের বলা হয়েছিল যে, এই হাইস্কুলে ছেলেদেরকে কৃষিকাজ, বাগানের কাজ, কাঠ মিস্ত্রির কাজ, নির্মাণের কাজ ও সেইসঙ্গে ইংরেজি এবং গণিত শেখানো হয়; আর মেয়েদেরকে নার্সিংয়ের কাজ, গৃহস্থালীর কাজ এবং অন্যান্য ব্যবহারিক কাজ শেখানোর হয়। সেই প্রধান নেতার ঠাকুরমা এই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
১৯৩৩ সালের শুরুর দিকে, রাজা সোবুজা অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে সেই অগ্রগামীদের কথা শুনতেন, যারা রাজ প্রাঙ্গণে সাক্ষাৎ করতে আসত। একবার, তিনি এমনকী রেকর্ডকৃত রাজ্যের বার্তা শোনার জন্য ১০০ জন সৈনিক নিয়ে গঠিত তার ব্যক্তিগত দেহরক্ষীর একটা দলকে একত্রিত করেছিলেন। তিনি আমাদের পত্রিকার গ্রাহক হয়েছিলেন এবং সাহিত্যাদি গ্রহণ করেছিলেন। অল্পসময়ের মধ্যেই রাজা বিরাট এক ঈশতান্ত্রিক লাইব্রেরি গড়ে তুলেছিলেন! এ ছাড়া, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকার যখন আমাদের সাহিত্যাদির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে, তখনও তিনি এই লাইব্রেরিটাকে অক্ষত অবস্থায় রেখেছিলেন!
রাজা সোবুজা ২য় দীর্ঘসময় ধরে লোবামবার রাজ প্রাঙ্গণে এভাবে সাক্ষিদের সাদরে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, এমনকী বাইবেলভিত্তিক বক্তৃতা শোনার জন্য পাদরিদেরও ডেকে এনেছিলেন। হেলভি মাশাজি নামে একজন স্থানীয় সাক্ষি যখন মথি ২৩ অধ্যায় নিয়ে আলোচনা করছিলেন, তখন এক দল পাদরি রাগান্বিত হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে তাকে জোর করে বসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু, রাজা বাধা দিয়েছিলেন এবং ভাই মাশাজিকে আলোচনা চালিয়ে যেতে বলেছিলেন। এ ছাড়া, রাজা শ্রোতাদের বলেছিলেন, যেন তারা বক্তৃতায় উল্লেখিত বাইবেলের সমস্ত পদ লিখে রাখে!
আরেক বার, একজন অগ্রগামী ভাইয়ের একটা বক্তৃতা শোনার পর, সেখানে উপস্থিত চার জন পাদরি এই ঘোষণা করেছিল: “এখন থেকে আমরা আর পাদরি নই বরং যিহোবার সাক্ষি।” এরপর তারা অগ্রগামী ভাইকে জিজ্ঞেস করেছিল যে, প্রধান নেতার কাছে যে-বইগুলো রয়েছে, সেইরকম কোনো বই তার কাছে আর আছে কি না।
১৯৩০-এর দশক থেকে শুরু করে ১৯৮২ সালে তার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত এই প্রধান নেতা যিহোবার সাক্ষিদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছিলেন এবং সোয়াজি রীতিনীতি পালন না করার কারণে তাদেরকে তাড়িত হতে দেননি। তাই, তার প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার উত্তম কারণ সাক্ষিদের ছিল আর তারা তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছিল।
২০১৩ সালের শুরুর দিকে, সোয়াজিল্যান্ডে ৩,০০০-এরও বেশি রাজ্য ঘোষণাকারী ছিল। এই দেশে যেহেতু দশ লক্ষেরও কিছু বেশি অধিবাসী ছিল, তাই প্রতি ১ জন প্রকাশকের মাথাপিছু ব্যক্তি ছিল ৩৮৪ জন। ২৬০ জনেরও বেশি অগ্রগামী ৯০-টা মণ্ডলীতে নিয়োজিত ছিল এবং ২০১২ সালে স্মরণার্থ সভায় ৭,৪৯৬ জনেরও বেশি ব্যক্তি উপস্থিত হয়েছিল। স্পষ্টতই, সেখানে আরও বৃদ্ধি হওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। ১৯৩০-এর দশকে সোয়াজিল্যান্ডে সেই প্রাথমিক পরিদর্শনগুলো নিশ্চিতভাবেই এক দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করেছিল।—দক্ষিণ আফ্রিকায়, আমাদের আর্কাইভ থেকে।
[৩১ পৃষ্ঠার চিত্র]
১৯৩৬ সালে রবার্ট নিজবেটের তোলা রাজা সোবুজা ২য়-র ছবি, যেটা তিনি ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটিকে দান করেছেন
[৩২ পৃষ্ঠার চিত্র]
(ওপরে) হাইস্কুলের যে-ছাত্র-ছাত্রীরা ১৯৩৬ সালে সোয়াজিল্যান্ডে জনসাধারণের উদ্দেশে একটা বক্তৃতায় উপস্থিত ছিল
[৩২ পৃষ্ঠার চিত্র]
(ডান দিকে) জর্জ নিজবেট তার সাউন্ড কারের সঙ্গে