ইব্রীয়দের প্রতি চিঠি
১১ বিশ্বাসের অর্থ হল, যা প্রত্যাশা করা হয়, তা যে ঘটবেই, সেই বিষয়ে দৃঢ়নিশ্চয়তা এবং বাস্তবে যা দেখা যায় না, সেটার স্পষ্ট প্রমাণ। ২ এই বিশ্বাসের কারণেই অতীতের লোকদের* সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেওয়া হয়েছিল।
৩ বিশ্বাসের কারণেই আমরা এই বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারি যে, ঈশ্বরের বাক্যের মাধ্যমে বিভিন্ন বিধিব্যবস্থা* রচিত হয়েছে আর আমরা যে-বিষয়গুলো দেখতে পাই, সেগুলো এমন বিষয়গুলো থেকে এসেছে, যেগুলো আমরা দেখতে পাই না।
৪ বিশ্বাসের কারণেই হেবল ঈশ্বরের কাছে কয়িনের চেয়ে আরও উত্তম এক বলি উৎসর্গ করেছিলেন এবং সেই বিশ্বাসের কারণেই তার সম্বন্ধে এই সাক্ষ্য দেওয়া হয়েছিল যে, তিনি ধার্মিক ছিলেন, কারণ ঈশ্বর তার উপহার গ্রহণ করেছিলেন।* যদিও তিনি মারা গিয়েছেন, কিন্তু বিশ্বাসের কারণে তিনি এখনও কথা বলছেন।
৫ বিশ্বাসের কারণেই হনোককে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, যেন তিনি মৃত্যু না দেখেন। তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি, কারণ ঈশ্বর তাকে অন্য স্থানে নিয়ে গিয়েছিলেন; আর তাকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়ার আগে তার সম্বন্ধে এই সাক্ষ্য দেওয়া হয়েছিল যে, তিনি ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করেছেন। ৬ বিশ্বাস ছাড়া ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করা অসম্ভব, কারণ যিনি ঈশ্বরের কাছে আসেন, তার এই বিশ্বাস থাকতে হবে যে, ঈশ্বর আছেন* এবং যারা আন্তরিকভাবে তাঁর অন্বেষণ করে, তিনি তাদের পুরস্কার দেন।
৭ বিশ্বাসের কারণেই নোহ, যে-বিষয়গুলো দেখা যাচ্ছিল না, সেগুলো সম্বন্ধে ঈশ্বরের কাছ থেকে সাবধানবাণী পেয়ে তাঁর প্রতি ভয় দেখিয়েছিলেন এবং তার পরিবারের লোকদের রক্ষার জন্য একটা জাহাজ নির্মাণ করেছিলেন; এই বিশ্বাসের মাধ্যমেই তিনি জগৎকে দোষী করেছিলেন আর বিশ্বাসের কারণেই তাকে ধার্মিক বলে গণ্য করা হয়েছিল।
৮ বিশ্বাসের কারণেই অব্রাহাম, যখন তাকে আহ্বান করা হয়েছিল, তখন তিনি বাধ্যতা দেখিয়ে সেই স্থানে গিয়েছিলেন, যা উত্তরাধিকার হিসেবে তার পাওয়ার কথা ছিল; তিনি কোথায় যাচ্ছেন, তা না জানা সত্ত্বেও তিনি রওনা হয়েছিলেন। ৯ বিশ্বাসের কারণেই তিনি সেই দেশে একজন বিদেশির মতো বাস করেছিলেন, যে-দেশ সম্বন্ধে তার কাছে প্রতিজ্ঞা করা হয়েছিল। তার সঙ্গে যারা একই প্রতিজ্ঞার উত্তরাধিকারী ছিলেন, সেই ইস্হাক ও যাকোবের সঙ্গে তিনি তাঁবুতে বাস করেছিলেন। ১০ কারণ তিনি এমন এক নগরের জন্য অপেক্ষা করছিলেন, যেটার প্রকৃত ভিত্তি রয়েছে এবং যেটার নকশাবিদ* ও নির্মাণকর্তা হলেন স্বয়ং ঈশ্বর।
১১ বিশ্বাসের কারণেই সারাও গর্ভধারণ করার শক্তি লাভ করেছিলেন, যদিও তার সন্তান জন্ম দেওয়ার বয়স পেরিয়ে গিয়েছিল; কারণ যিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তাঁকে তিনি বিশ্বস্ত বলে গণ্য করেছিলেন। ১২ এই কারণে অব্রাহামের অর্থাৎ এক জন ব্যক্তির কাছ থেকে, যিনি বলতে গেলে মৃতপ্রায় ছিলেন, অনেক অর্থাৎ আকাশের তারার মতো অসংখ্য এবং সমুদ্রতীরের বালির মতো অগণিত সন্তানের জন্ম হয়েছিল।
১৩ তারা সকলে মৃত্যু পর্যন্ত বিশ্বাস বজায় রেখেছিলেন, এমনকী যদিও তারা প্রতিজ্ঞাত বিষয়গুলো লাভ করেননি; কিন্তু তারা দূর থেকে সেগুলো দেখতে পেয়ে সেগুলোর জন্য আনন্দ করেছিলেন এবং জনসমক্ষে ঘোষণা করেছিলেন যে, তারা এই দেশে বিদেশি এবং অস্থায়ী অধিবাসী। ১৪ কারণ যারা এই ধরনের কথা বলেন, তারা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেন যে, তারা আন্তরিকভাবে এমন একটা স্থানের অন্বেষণ করছেন, যেটা তাদের নিজেদের বাসস্থান হয়ে উঠবে। ১৫ আর তারা যে-স্থান ছেড়ে চলে এসেছিলেন, সেই স্থানের কথা যদি চিন্তা করতেই থাকতেন, তা হলে তো তাদের ফিরে যাওয়ার সুযোগ থাকত। ১৬ কিন্তু, তারা আরও উত্তম একটা স্থানের অর্থাৎ স্বর্গের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এক স্থানের জন্য আকাঙ্ক্ষা করছেন। তাই, ঈশ্বর তাদের ঈশ্বর বলে অভিহিত হওয়ার বিষয়ে লজ্জিত নন, কারণ তিনি তাদের জন্য একটা নগর প্রস্তুত করেছেন।
১৭ বিশ্বাসের কারণেই অব্রাহাম, তাকে যখন পরীক্ষা করা হয়েছিল, তখন তিনি ইস্হাককে উৎসর্গ করতে যাচ্ছিলেন; হ্যাঁ, যিনি আনন্দের সঙ্গে প্রতিজ্ঞাগুলো গ্রহণ করেছিলেন, তিনিই তার একমাত্র ছেলেকে উৎসর্গ করতে যাচ্ছিলেন, ১৮ যদিও ঈশ্বর তাকে বলেছিলেন: “যে-বংশধরকে* তোমার বংশধর* বলা হবে, তা ইস্হাকের মাধ্যমেই আসবে।” ১৯ তিনি এই যুক্তি করেছিলেন, ঈশ্বর ইস্হাককে পুনরুত্থিত* করতে সমর্থ আর তাই তিনি ইস্হাককে দৃষ্টান্তস্বরূপ মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে পেয়েছিলেন।
২০ বিশ্বাসের কারণেই ইস্হাকও আসন্ন বিষয়গুলো সম্বন্ধে যাকোব ও এষৌকে আশীর্বাদ করেছিলেন।
২১ বিশ্বাসের কারণেই যাকোব মারা যাওয়ার সময় যোষেফের প্রত্যেক ছেলেকে আশীর্বাদ করেছিলেন এবং তার লাঠিতে ভর দিয়ে ঈশ্বরের উপাসনা করেছিলেন।
২২ বিশ্বাসের কারণেই যোষেফ মারা যাওয়ার সময় মিশর থেকে ইজরায়েলীয়দের যাত্রার বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন আর সেইসঙ্গে তিনি সেখান থেকে তার হাড়গোড় নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আদেশ দিয়েছিলেন।
২৩ বিশ্বাসের কারণেই মোশির বাবা-মা তার জন্মের পর তাকে তিন মাস ধরে লুকিয়ে রেখেছিলেন, কারণ তারা দেখেছিলেন, শিশুটি সুন্দর আর তাই তারা রাজার আইন অমান্য করতে ভয় পাননি। ২৪ বিশ্বাসের কারণেই মোশি বড়ো হওয়ার পর ফরৌণের* মেয়ের ছেলে বলে পরিচিত হওয়াকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন; ২৫ তিনি পাপের ক্ষণস্থায়ী সুখ ভোগ করার চেয়ে বরং ঈশ্বরের লোকদের সঙ্গে অত্যাচার ভোগ করা বেছে নিয়েছিলেন; ২৬ তিনি মিশরের ধনসম্পদের চেয়ে বরং অভিষিক্ত ব্যক্তি* হিসেবে নিন্দা সহ্য করাকে আরও বেশি মূল্যবান বলে গণ্য করেছিলেন, কারণ তিনি পুরস্কারদানের প্রতি মনোযোগ স্থির রেখেছিলেন। ২৭ বিশ্বাসের কারণেই তিনি মিশর ত্যাগ করেছিলেন, রাজার ক্রোধকে ভয় পাননি, কারণ যিনি অদৃশ্য তাঁকে যেন দেখেই তিনি স্থির থেকেছিলেন। ২৮ বিশ্বাসের কারণেই তিনি নিস্তারপর্ব উদ্যাপন করেছিলেন এবং দরজার কপাটে রক্ত লেপন করেছিলেন, যাতে ঈশ্বরের স্বর্গদূত তাদের প্রথমজাত সন্তানের ক্ষতি* করতে না পারেন।
২৯ বিশ্বাসের কারণেই ঈশ্বরের লোকেরা শুকনো ভূমির মধ্য দিয়ে হেঁটে যাওয়ার মতো করে লোহিত সাগর পার হয়েছিল, কিন্তু মিশরীয়েরা যখন তা করতে গিয়েছিল, তখন তারা ডুবে মারা গিয়েছিল।
৩০ বিশ্বাসের কারণেই ইজরায়েলীয়েরা যিরীহো নগরের প্রাচীরের চারপাশে সাত দিন ধরে ঘুরেছিল এবং এরপর সেই প্রাচীর ভেঙে পড়েছিল। ৩১ বিশ্বাসের কারণেই বেশ্যা রাহব অবাধ্য লোকদের সঙ্গে ধ্বংস হয়ে যায়নি, কারণ সে গুপ্তচরদের সাদরে গ্রহণ করেছিল।
৩২ আমি আর কার কার কথা বলব? কারণ আমি যদি গিদিয়োন, বারক, শিম্শোন, যিপ্তহ, দায়ূদ আর সেইসঙ্গে শমূয়েল এবং অন্যান্য ভাববাদীর কথা বলতে থাকি, তা হলে সময়ে কুলোবে না। ৩৩ বিশ্বাসের কারণেই তারা বিভিন্ন রাজ্য পরাজিত করেছিলেন, ঈশ্বরের ধার্মিক মান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, প্রতিজ্ঞা লাভ করেছিলেন, সিংহের মুখ বন্ধ করেছিলেন, ৩৪ আগুনের তেজ থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন, খড়্গ দ্বারা হত হওয়া থেকে রেহাই পেয়েছিলেন, দুর্বল অবস্থা থেকে শক্তিশালী হয়েছিলেন, যুদ্ধে পরাক্রমী হয়েছিলেন, আক্রমণ করতে আসা সৈন্যবাহিনীকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। ৩৫ মহিলারা নিজেদের মৃত আত্মীয়স্বজনকে পুনরুত্থানের* মাধ্যমে ফিরে পেয়েছিলেন; কিন্তু অন্যদের অত্যাচার করে মেরে ফেলা হয়েছিল, কারণ তারা মুক্ত হওয়ার বিনিময়ে বিশ্বাস পরিত্যাগ করতে রাজি হননি, যাতে তারা আরও শ্রেষ্ঠ পুনরুত্থান লাভ করতে পারেন। ৩৬ আবার অন্যেরা উপহাস ও প্রহার সহ্য করেছিলেন। শুধু তা-ই নয়, এমনকী তাদের শিকলেও বাঁধা হয়েছিল এবং কারাগারেও রাখা হয়েছিল। ৩৭ তাদের কাউকে কাউকে পাথর ছুড়ে হত্যা করা হয়েছিল, কাউকে বিশ্বাসের পরীক্ষা সহ্য করতে হয়েছিল, কাউকে করাত দিয়ে দু-ভাগ করা হয়েছিল, কাউকে খড়্গ দিয়ে হত্যা করা হয়েছিল, কেউ কেউ মেষের ও ছাগের চামড়ার পোশাক পরতেন আর তারা অভাবের মধ্যে ছিলেন, ক্লেশ ভোগ করেছিলেন এবং অত্যাচার সহ্য করেছিলেন; ৩৮ এই জগৎ তাদের যোগ্য ছিল না। তারা প্রান্তরে প্রান্তরে, পর্বতে পর্বতে, গুহায় গুহায় এবং পৃথিবীর গহ্বরে গহ্বরে পালিয়ে বেড়াতেন।
৩৯ আর যদিও তাদের বিশ্বাসের কারণে তাদের সবার সম্বন্ধে ভালো সাক্ষ্য দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তারা প্রতিজ্ঞাত বিষয়গুলো লাভ করেননি, ৪০ কারণ ঈশ্বর আমাদের জন্য আরও উত্তম কিছু ভেবে রেখেছিলেন, যাতে আমাদের ছাড়াই তারা পূর্ণতা লাভ না করেন।