রূতের বিবরণ
৩ এরপর নয়মী তার বউমা রূৎকে বলল: “মেয়ে আমার, এটা কি আমার কর্তব্য নয় যে, আমি তোমার জন্য এমন এক বিবাহসাথি খুঁজি, যার সঙ্গে তুমি সুখে শান্তিতে বাস করতে পারবে? ২ তুমি যার খেতের মহিলাদের সঙ্গে শস্য কুড়িয়েছ, সেই বোয়স আমাদের আত্মীয়। আজ সন্ধ্যায় শস্য মাড়াই করার জায়গায় যব ঝাড়া হবে আর বোয়সও সেখানে থাকবেন। ৩ তুমি স্নান করে, সুগন্ধি তেল মেখে এবং ভালো পোশাক পরে শস্য মাড়াই করার জায়গায় যাও। কিন্তু, ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি তার কাছে যেয়ো না, যতক্ষণ না তার খাওয়া-দাওয়া শেষ হয়। ৪ তিনি যখন শুতে যান, তখন লক্ষ রেখো, তিনি কোথায় শুচ্ছেন। পরে সেখানে গিয়ে তার পায়ের উপর থেকে কাপড় সরিয়ে দিয়ো আর তারপর তার পায়ের কাছে শুয়ে পোড়ো। এরপর তিনি তোমাকে বলবেন, তোমাকে কী করতে হবে।”
৫ তখন রূৎ বলল: “ঠিক আছে মা, তুমি যা বললে, আমি সবই করব।” ৬ এরপর সে শস্য মাড়াই করার জায়গায় গেল আর তার শাশুড়ি তাকে যা বলেছিল, সে ঠিক তা-ই করল। ৭ খাওয়া-দাওয়ার পর বোয়স বেশ খুশি হয়ে শস্যের গাদার পাশে শুতে গেলেন। তারপর রূৎ চুপি চুপি এসে বোয়সের পায়ের উপর থেকে কাপড় সরিয়ে সেখানেই শুয়ে পড়ল। ৮ মাঝরাতে বোয়স ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে উঠে বসলেন। সামনের দিকে ঝুঁকে তিনি দেখতে পেলেন, একজন মহিলা তার পায়ের কাছে শুয়ে রয়েছে। ৯ বোয়স জিজ্ঞেস করলেন: “কে তুমি?” সেই মহিলা বলল: “আমি আপনার দাসী রূৎ। দয়া করে আমাকে সাহায্য করুন* কারণ আপনি আমাদের মুক্তিকর্তা।” ১০ তখন বোয়স বললেন: “মেয়ে আমার, যিহোবা তোমাকে আশীর্বাদ করুন। তুমি আগেও তোমার অটল প্রেম দেখিয়েছ, কিন্তু এ-বার তা আরও বেশি করে দেখিয়েছ। তুমি কোনো ধনী কিংবা গরিব যুবককে বিয়ে করতে পারতে, কিন্তু তুমি তা করনি। ১১ মেয়ে আমার, ভয় পেয়ো না। তুমি আমাকে যা-কিছু বললে, আমি সবই করব। কারণ নগরের সবাই জানে, তুমি একজন গুণবতী মহিলা। ১২ এটা ঠিক যে, আমি তোমার একজন মুক্তিকর্তা। কিন্তু, তোমার আরও ঘনিষ্ঠ এক আত্মীয় রয়েছে, যার তোমাকে মুক্ত করার প্রথম অধিকার রয়েছে। ১৩ তুমি আজ রাতে এখানেই থেকে যাও। কাল সকালে আমি ওই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলব। সে যদি তোমাকে মুক্ত করতে রাজি হয়, তা হলে খুব ভালো! কিন্তু সে যদি রাজি না হয়, তা হলে জীবন্ত ঈশ্বর যিহোবার নামে আমি দিব্য করে বলছি, আমি তোমাকে মুক্ত করব। তুমি ভোর হওয়া পর্যন্ত এখানেই শুয়ে থাকো।”
১৪ তাই, ভোররাত পর্যন্ত রূৎ তার পায়ের কাছেই শুয়ে থাকল। পরে ভোরের আলো ফোটার আগেই রূৎ উঠে পড়ল, যাতে কেউ তাকে দেখতে না পায়। বোয়স চাননি কেউ জানতে পারুক, কোনো মহিলা শস্য মাড়াই করার জায়গায় এসেছিল। ১৫ পরে তিনি রূৎকে বললেন: “তোমার গায়ের চাদরটা পেতে ধরো।” তখন রূৎ নিজের চাদর পেতে ধরল আর বোয়স তাতে প্রায় ২৫ কিলোগ্রাম* যব ঢেলে সেটা রূৎকে দিয়ে দিলেন। এরপর বোয়স নগরে চলে গেলেন।
১৬ রূৎ তার শাশুড়ির কাছে ফিরে এল। তখন নয়মী রূৎকে জিজ্ঞেস করল: “মেয়ে আমার, তাড়াতাড়ি বলো কী হল?”* তখন রূৎ সমস্ত ঘটনা তাকে খুলে বলল। ১৭ রূৎ এও বলল: “উনি আমাকে প্রায় ২৫ কিলোগ্রাম* যব দিয়ে বললেন, ‘তোমার শাশুড়ির কাছে খালি হাতে যেয়ো না।’” ১৮ একথা শুনে নয়মী রূৎকে বলল: “মেয়ে আমার, এখানেই বসে অপেক্ষা করো আর দেখো কী হয়। কারণ আজ এই বিষয়টার মীমাংসা না করা পর্যন্ত উনি শান্ত হবেন না।”