দ্বিতীয় বিবরণ
৩২ “হে আকাশমণ্ডল, আমার কথায় কান দাও,
হে পৃথিবী আমার কথা শোনো।
২ আমার নির্দেশনা বৃষ্টির মতো নেমে আসবে,
আমার কথা শিশিরবিন্দুর মতো পড়বে,
ঠিক যেমন সবুজ ঘাসের উপর ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হয়
আর গাছপালার উপর মুষলধারে বৃষ্টি হয়।
৩ আমি যিহোবার নাম ঘোষণা করব।
আমাদের ঈশ্বরের মহত্ত্ব প্রকাশ করব!
৪ তিনি শৈল, তাঁর কাজ নিখুঁত
কারণ তাঁর সমস্ত কাজই ন্যায্য।
তিনি বিশ্বাসযোগ্য ঈশ্বর, যিনি কখনো অন্যায় করেন না,
তিনি ন্যায়পরায়ণ ও সৎ।
৫ কিন্তু, এই লোকেরাই মন্দ কাজ করেছে।
এরা ঈশ্বরের সন্তান নয়, এদের মধ্যেই ত্রুটি রয়েছে।
এরা কুটিল প্রজন্মের লোক, এদের মন সরল নয়!
৬ হে মূর্খ ও নির্বোধ লোকেরা,
তোমরা কি এভাবে যিহোবার দয়ার প্রতিদান দেবে?
তিনি কি তোমার পিতা নন, যিনি তোমাকে অস্তিত্ব এনেছেন?
তিনিই কি তোমাকে সৃষ্টি করেননি? তিনিই কি তোমাকে একটা জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেননি?
৭ অতীতের কথা একটু স্মরণ করো,
পুরোনো দিনগুলোর কথা একটু ভেবে দেখো;
তোমার বাবাকে জিজ্ঞেস করো, তিনি তোমাকে বলবেন,
তোমার প্রাচীনদের জিজ্ঞেস করো, তারা তোমাকে জানাবেন।
৮ যখন সর্বমহান ঈশ্বর সমস্ত জাতিকে তাদের উত্তরাধিকার দিলেন,
যখন তিনি আদমের সন্তানদের* একে অন্যের থেকে আলাদা করলেন,
তখন তিনি ইজরায়েলীয়দের জনসংখ্যা অনুসারে
সমস্ত জাতির সীমারেখা নির্ধারণ করলেন।
৯ কারণ যিহোবার লোকেরা তাঁরই,
হ্যাঁ, যাকোব তাঁরই।
১০ তিনি যাকোবকে প্রান্তরে খুঁজে পেলেন,
এক জনশূন্য মরুভূমিতে, যেখানে বন্যপশুদের ডাক শোনা যায়।
তিনি তাকে ঘিরে রেখে সুরক্ষিত রাখলেন, তার যত্ন নিলেন,
নিজের চোখের মণির মতো তিনি তাকে রক্ষা করলেন।
১১ ঠিক যেভাবে একটা ঈগল তার বাচ্চাদের উড়তে শেখায়
আর সেই সময়ে তার বাচ্চাদের উপর উড়তে থাকে,
তার ডানা মেলে তাদের তুলে নেয়
এবং নিজের ডানায় তাদের বহন করে,
১২ সেভাবেই যিহোবা একাই তাকে* নেতৃত্ব দিলেন,
কোনো বিজাতীয় দেবতা তার সঙ্গে ছিল না।
১৩ ঈশ্বর তাকে পৃথিবীর উঁচু উঁচু জায়গা দখল করতে সাহায্য করলেন,
যার ফলে সে খেতের ফসল খেল।
ঈশ্বর তাকে শৈল থেকে মধু খাওয়ালেন
আর শক্ত শিলা থেকে তেল খাওয়ালেন।
১৪ তিনি তাকে গরুর দুধের মাখন, মেষ ও ছাগলের দুধ,
মোটাসোটা মেষের মাংস, বাশনের পুংমেষের মাংস, পাঁঠার মাংস
ও সেইসঙ্গে সবচেয়ে উচ্চ মানের গম খেতে দিলেন।
আর তুমি রসালো আঙুরের* দ্রাক্ষারসও* খেলে।
১৫ যখন যিশুরূণ* মোটাসোটা হয়ে গেল, তখন সে বিদ্রোহী হয়ে লাথি মারতে লাগল।
তোমার চর্বি জমেছে, তুমি মোটা হয়ে গিয়েছ, ফুলেফেঁপে উঠেছ।
এইজন্য সে তার সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরকে ছেড়ে দিল,
সে তার পরিত্রাণের শৈলকে তুচ্ছ বলে মনে করল।
১৬ তারা বিজাতীয় দেবতাদের উপাসনা করে তাঁর ক্রোধ জাগিয়ে তুলল,
তারা তাদের জঘন্য বস্তুর দ্বারা তাঁকে রাগাতে থাকল।
১৭ তারা মন্দ স্বর্গদূতদের উদ্দেশে বলি উৎসর্গ করত, ঈশ্বরের উদ্দেশে নয়,
এমন দেবতাদের উদ্দেশে, যাদের তারা জানত না,
নতুন নতুন দেবতাদের উদ্দেশে, যারা হঠাৎ করে উঠে এসেছে,
যাদের তোমার পূর্বপুরুষেরা জানত না।
১৮ তুমি সেই শৈলকে ভুলে গেলে, যিনি তোমার পিতা,
তুমি সেই ঈশ্বরকে মনে রাখলে না, যিনি তোমাকে জীবন* দিয়েছেন।
১৯ যিহোবা যখন এটা দেখলেন, তখন তিনি তাদের পরিত্যাগ করলেন
কারণ তাঁর ছেলে-মেয়েরা তাঁকে রাগিয়ে তুলেছিল।
২০ এই কারণে তিনি বললেন, ‘আমি তাদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেব,
দেখি তাদের পরিণতি কী হয়।
এই প্রজন্মের লোকেরা কুটিল স্বভাবের,
এই সন্তানেরা একেবারেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।
২১ যেটা ঈশ্বরই নয়, সেটার উপাসনা করে তারা আমার ক্রোধ জাগিয়ে তুলেছে,
তারা তাদের অপদার্থ মূর্তিগুলোর উপাসনা করে আমাকে রাগিয়ে তুলেছে।
এইজন্য আমি এমন লোকদের ব্যবহার করে তাদের ঈর্ষা জাগিয়ে তুলব, যাদের কোনো মূল্য নেই,
একটা মূর্খ জাতিকে ব্যবহার করে তাদের রাগিয়ে তুলব।
২২ আমার ক্রোধের আগুন জ্বলে উঠেছে,
যেটা কবরের* গভীরতম স্থান পর্যন্ত জ্বলতে থাকবে,
পৃথিবী এবং তাতে উৎপাদিত ফসল ভস্ম করে দেবে,
পর্বতের মূলেও আগুন লাগিয়ে দেবে।
২৩ আমি তাদের সমস্যা বাড়িয়ে তুলব,
তাদের দিকে আমার তির ছুড়ব।
২৪ তারা খিদের জ্বালায় ক্লান্ত হয়ে যাবে,
প্রচণ্ড জ্বর এবং ভয়ংকর বিনাশের দ্বারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
আমি তাদের পিছনে হিংস্র পশু
এবং ধুলোর উপর চলে এমন বিষধর সাপ ছেড়ে দেব।
২৫ বাইরে তলোয়ার তাদের সন্তানদের কেড়ে নেবে
আর ভিতরে তারা ভয়েই মারা যাবে।
ছেলে হোক অথবা মেয়ে,
শিশু হোক অথবা পাকা চুলওয়ালা ব্যক্তি, সবার পরিণতি একই হবে।
২৬ আমি অবশ্যই বলতাম: “আমি তাদের ছিন্নভিন্ন করে দেব,
লোকদের মন থেকে তাদের স্মৃতি মুছে দেব,”
২৭ যদি আমার এই ভয় না থাকত, শত্রুরা কী বলবে
কারণ আমার বিরোধীরা এর ভুল অর্থ বের করবে।
তারা হয়তো বলবে: “আমরা নিজেদের ক্ষমতায় জিতেছি,
এতে যিহোবার কোনো হাত নেই।”
২৮ ইজরায়েল এমন এক জাতি, যার মাথায় বিন্দুমাত্র বুদ্ধি নেই,*
তাদের একটুও বোধশক্তি নেই।
২৯ কতই-না ভালো হত, যদি তারা একটু বিজ্ঞ হত! তা হলে, তারা এই বিষয়ে ভালোভাবে চিন্তা করত।
তারা তাদের পরিণতি নিয়ে চিন্তা করত।
৩০ কীভাবে এক জন ব্যক্তি ১,০০০ জন লোকের পিছু ধাওয়া করতে পারে?
আর কীভাবেই-বা দু-জন ব্যক্তি ১০,০০০ জন লোককে তাড়াতে পারে?
এটা এইজন্যই হয়েছে কারণ ইজরায়েলের শৈল তাদের বিক্রি করে দিয়েছেন,
যিহোবা শত্রুদের হাতে তাদের তুলে দিয়েছেন।
৩১ শত্রুদের শৈল আমাদের শৈলের মতো নয়,
আমাদের শত্রুরাও এটা ভালোভাবে বুঝে গিয়েছে।
৩২ তাদের আঙুর গাছ সদোমের আঙুর গাছ থেকে
এবং ঘমোরার খেত থেকে উৎপন্ন হয়েছে।
তাদের আঙুর বিষাক্ত,
তাদের আঙুরের থোকা তেতো।
৩৪ আমি তাদের সমস্ত কুকর্ম জমা করে রেখেছি,
সেগুলোকে আমার গোলাঘরে সীলমোহর দিয়ে বন্ধ করে রেখেছি।
৩৫ প্রতিশোধ নেওয়া এবং শাস্তি দেওয়া আমারই কাজ,
সময় এলে মন্দ ব্যক্তিদের পা পিছলাবে
কারণ তাদের বিপর্যয়ের দিন কাছে এসে গিয়েছে,
তাদের জন্য যা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা তাদের উপর শীঘ্রই আসতে চলেছে।’
৩৬ যিহোবা তাঁর লোকদের বিচার করবেন,
তাঁর দাসদের প্রতি গভীর সমবেদনা দেখাবেন,*
যখন তিনি দেখবেন, তাদের শক্তি ফুরিয়ে গিয়েছে,
কেবল অসহায় ও দুর্বল লোকেরা অবশিষ্ট রয়েছে।
৩৭ তখন তিনি বলবেন, ‘কোথায় গেল তাদের দেবতারা,
সেই শৈল, যার কাছে তারা আশ্রয় নিয়েছিল,
৩৮ যারা তাদের বলিদানের চর্বি* খেত,
তাদের পেয় নৈবেদ্যের দ্রাক্ষারস* খেত?
তারাই এসে তোমাদের সাহায্য করুক।
তারাই তোমাদের আশ্রয়স্থান হোক।
৩৯ এবার তো বোঝো, আমিই ঈশ্বর,
আমি ছাড়া আর কোনো ঈশ্বর নেই।
আমিই মেরে ফেলি এবং আমিই জীবিত করি।
আমিই আঘাত করি এবং আমিই সুস্থ করি,
আমার হস্ত থেকে কেউই বাঁচাতে পারবে না।
৪০ আমি স্বর্গের দিকে হাত তুলে বলছি:
“আমি অনন্তকালীন ঈশ্বর, আমি নিজের দিব্য করে বলছি,”
৪১ আমি যখন আমার চকচকে তলোয়ারে ধার দেব,
শাস্তি দেওয়ার জন্য আমার হস্ত তুলব,
তখন আমি আমার শত্রুদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নেব,
যারা আমাকে ঘৃণা করে, তাদের শাস্তি দেব।
৪২ আমি নিহতদের এবং বন্দিদের রক্ত দিয়ে
আমার তিরগুলোকে মাতাল করে তুলব,
শত্রুদের নেতাদের মাথা কেটে
আমি সেগুলো আমার তলোয়ারকে খাওয়াব।’
৪৩ হে সমস্ত জাতির লোকেরা, ঈশ্বরের লোকদের সঙ্গে আনন্দ করো
কারণ তিনি তাঁর দাসদের রক্তের প্রতিশোধ নেবেন,
তাঁর শত্রুদের শাস্তি দেবেন
আর তাঁর লোকদের দেশের জন্য প্রায়শ্চিত্ত* করবেন।”
৪৪ এভাবে মোশি এই গানের সমস্ত কথা লোকদের শোনালেন। তিনি এবং নূনের ছেলে হোশেয়* লোকদের এই গান শোনালেন। ৪৫ মোশি সমস্ত ইজরায়েলীয়কে এই কথাগুলো বলার পর ৪৬ তাদের বললেন: “আজ আমি তোমাদের যে-সমস্ত সতর্কবাণী দিয়েছি, সেগুলো তোমরা তোমাদের হৃদয়ে গেঁথে নাও, যাতে তোমরা তোমাদের ছেলেদের এই ব্যবস্থার সমস্ত কথা ভালোভাবে পালন করার জন্য আজ্ঞা দিতে পার। ৪৭ এগুলো কোনো অর্থহীন কথা নয়, এগুলোর উপরই তোমাদের জীবন নির্ভর করছে। তোমরা যদি এই কথা পালন কর, তা হলে তোমরা জর্ডন পার হয়ে যে-দেশ দখল করতে চলেছ, সেই দেশে দীর্ঘসময় বেঁচে থাকতে পারবে।”
৪৮ সেই দিনেই যিহোবা মোশিকে বললেন: ৪৯ “তুমি এই অবারীম পর্বতে যাও, যেটা মোয়াব দেশে যিরীহোর সামনে অবস্থিত আর নবো পর্বতের চূড়ায় ওঠো। সেখান থেকে তুমি কনান দেশ দেখো, যেটা আমি ইজরায়েলীয়দের দখল করার জন্য দিতে চলেছি। ৫০ তারপর, সেই পর্বতেই তুমি মারা যাবে আর তোমাকে কবর দেওয়া হবে,* ঠিক যেমন হোর পর্বতে তোমার দাদা হারোণের মৃত্যুর পর তাকেও কবর দেওয়া হয়েছিল। ৫১ কারণ তোমরা দু-জনে সীন প্রান্তরে কাদেশের মরীবার জলাশয়ের কাছে ইজরায়েলীয়দের মাঝে আমার প্রতি অবিশ্বস্ত হয়ে পড়েছিলে আর তোমরা তাদের সামনে আমাকে পবিত্র বলে গণ্য করনি। ৫২ যে-দেশ আমি ইজরায়েলীয়দের দিতে চলেছি, সেটা তুমি দূর থেকে দেখবে। কিন্তু, তুমি সেখানে পা রাখতে পারবে না।”