অধ্যায় ১৪
কাদের কর্তৃত্বকে আপনার স্বীকার করা উচিত?
১, ২. সকল প্রকারের কর্তৃত্বই কি ক্ষতিকারক? ব্যাখ্যা করুন।
“কর্তৃত্ব” শব্দটি বহু লোকের কাছেই বিরক্তিকর। এটি বোধসাধ্য, কারণ কর্তৃত্বের প্রায়ই অপব্যবহার করা হয়ে থাকে—চাকুরি ক্ষেদুত্র, পরিবারের মধ্যে এবং সরকারগুলি দ্বারা। বাইবেল বাস্তববাদী রূপেই বলে: “এক জন অন্যের উপরে তাহার অমঙ্গলার্থে কর্ত্তৃত্ব করে।” (উপদেশক ৮:৯) হ্যাঁ, অনেকেই অন্যদের উপরে এক অত্যাচারমূলক এবং নিজ-প্রয়োজন সাধক কার্যাদি দ্বারা কর্তৃত্ব করেছে।
২ কিন্তু সকল কর্তৃত্বই ক্ষতিকারক নয়। উদাহরণস্বরূপ, বলা যেতে পারে যে আমাদের দেহ আমাদের উপরে কর্তৃত্ব করে। এটি আমাদের “আদেশ” দেয় নিঃশ্বাস নিতে, খেতে, জলপান করতে এবং ঘুমাতে। তা কি অত্যাচার? না। এই দাবিগুলি পালন করা আমাদের মঙ্গলের জন্যই। যদিও আমাদের দেহের চাহিদাগুলির প্রতি বশ্যতাস্বীকার হয়ত অনিচ্ছাকৃত, অন্য প্রকারের কর্তৃত্ব রয়েছে যার জন্য প্রয়োজন ইচ্ছাপূর্বক বশ্যতাস্বীকার। কিছু উদাহরণ বিবেচনা করুন।
সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব
৩. যথার্থরূপেই যিহোবাকে “সার্ব্বভৌম প্রভু” বলা হয় কেন?
৩ বাইবেলে ৩০০ বারেরও বেশি, যিহোবাকে “সার্ব্বভৌম প্রভু” বলা হয়েছে। একজন সার্বভৌম হলেন তিনি যার অধিকারে রয়েছে সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব। কী যিহোবাকে এই পদমর্যাদার অধিকার দিয়েছে? প্রকাশিত বাক্য ৪:১১ পদ উত্তর দেয়: “হে আমাদের প্রভু ও আমাদের ঈশ্বর, তুমিই প্রতাপ ও সমাদর ও পরাক্রম গ্রহণের যোগ্য; কেননা তুমিই সকলের সৃষ্টি করিয়াছ, এবং তোমার ইচ্ছাহেতু সকলই অস্তিত্বপ্রাপ্ত ও সৃষ্ট হইয়াছে।”
৪. যিহোবা কিভাবে তাঁর কর্তৃত্ব প্রয়োগ করা পছন্দ করেন?
৪ আমাদের সৃষ্টিকর্তা রূপে, যিহোবার অধিকার রয়েছে তাঁর কর্তৃত্বকে ব্যবহার করার যেমন তিনি উপযুক্ত মনে করবেন। এটি আতঙ্কজনক মনে হতে পারে, বিশেষত যখন আমরা বিবেচনা করি যে ঈশ্বরের “সামর্থ্যের আধিক্য” রয়েছে। তাঁকে বলা হয়েছে “সর্ব্বশক্তিমান্ ঈশ্বর”—একটি আখ্যা যা ইব্রীয়তে অতীব শকক্তিমান্ এই ধারণা প্রদান করে। (যিশাইয় ৪০:২৬; আদিপুস্তক ১৭:১) তবুও, যিহোবা এক পরহিতাকাঙ্ক্ষী উপায়ে তাঁর শক্তি প্রদর্শন করেন, যেহেতু তাঁর প্রধান গুণ হল প্রেম।—১ যোহন ৪:১৬.
৫. যিহোবার কর্তৃত্বের প্রতি বশ্যতাস্বীকার করা কঠিন নয় কেন?
৫ যদিও যিহোবা সাবধান করেছিলেন যে অনুতপ্তহীন অন্যায়কারীদের উপরে তিনি শাস্তি আনবেন, মোশি মূলত তাঁকে জানতেন এইভাবে “সদাপ্রভুই ঈশ্বর; তিনি বিশ্বসনীয় ঈশ্বর, যাহারা তাঁহাকে প্রেম করে, ও তাঁহার আজ্ঞা পালন করে, তাহাদের পক্ষে সহস্র পুরুষ পর্য্যন্ত নিয়ম ও দয়া রক্ষা করেন।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৭:৯) শুধু ভাবুন! বিশ্বের সর্বোচ্চ কর্তৃত্বের অধিকারী তাঁর পরিচর্যা করবার জন্য আমাদের জোর করেন না। বরং, আমরা তাঁর প্রেমের জন্য তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হই। (রোমীয় ২:৪; ৫:৮) যিহোবার কর্তৃত্বের প্রতি বশ্যতাস্বীকার এমনকি এক আনন্দ, কারণ তাঁর বিধি সকল সর্বদা আমাদেরই চূড়ান্ত উপকার করে থাকে।—গীতসংহিতা ১৯:৭, ৮.
৬. কর্তৃত্বের বিচার্য বিষয় এদন উদ্যানে কিভাবে উত্থাপিত হয়েছিল এবং কী ফল হয়?
৬ আমাদের প্রথম পিতামাতা ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। নিজেদের জন্য তারাই বেছে নিতে চেয়েছিল কী ভাল আর কী মন্দ। (আদিপুস্তক ৩:৪-৬) পরিণতিস্বরূপ, তাদের পরমদেশ গৃহ থেকে তারা বহিষ্কৃত হয়েছিল। তারপরে যিহোবা মানুষকে অনুমতি দেন কর্তৃত্ব কাঠামোগুলি গঠন করতে যা তাদের সমর্থ করবে যদিও অসিদ্ধ, এক শৃঙ্খলাপূর্ণ সমাজে বাস করতে। এই কর্তৃত্বগুলির কয়েকটি কী এবং কোন্ মাত্রা পর্যন্ত ঈশ্বর চান যে আমরা সেগুলির প্রতি বশ্যতাস্বীকার করি?
“প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্ত্তৃপক্ষ”
৭. ‘প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্ত্তৃপক্ষ’ কারা এবং ঈশ্বরের কর্তৃত্বের সঙ্গে তাদের স্থান কিভাবে সম্পর্কযুক্ত?
৭ প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “প্রত্যেক প্রাণী প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্ত্তৃপক্ষদের বশীভূত হউক; কেননা ঈশ্বরের নিরূপণ ব্যতিরেকে কোন কর্ত্তৃত্ব হয় না।” “প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্ত্তৃপক্ষ” কারা? পরবর্তী পদগুলিতে পৌলের কথাগুলি দেখায় যে তারা হল মনুষ্য সরকারের কর্তৃপক্ষগুলি। (রোমীয় ১৩:১-৭; তীত ৩:১) মানুষের সরকারী কর্তৃপক্ষদের যিহোবা উৎপত্তি করেননি, কিন্তু তারা অস্তিত্বে আছে তিনি অনুমতি দিয়েছেন বলে। তাই পৌল লিখতে পেরেছিলেন: “যে সকল কর্ত্তৃপক্ষ আছেন, তাঁহারা ঈশ্বর-নিযুক্ত।” এটি এরূপ পার্থিব কর্তৃপক্ষদের সম্পর্কে কী ইঙ্গিত দেয়? এই যে তারা ঈশ্বরের কর্তৃত্বের অধীনস্থ, অথবা নিম্নতর। (যোহন ১৯:১০, ১১) সুতরাং, যখন মানুষের নিয়ম এবং ঈশ্বরের নিয়মের মধ্যে সংঘাত বাধে, খ্রীষ্টানদের অবশ্যই বাইবেল-শিক্ষিত বিবেক দ্বারা পরিচালিত হতে হবে। তাদের “মনুষ্যদের অপেক্ষা বরং ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করিতে হইবে।”—প্রেরিত ৫:২৯.
৮. প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষদের থেকে আপনি কিভাবে উপকৃত হন এবং কিভাবে আপনি তাদের প্রতি বশ্যতা দেখাতে পারেন?
৮ কিন্তু, অধিকাংশ সময়েই, সরকারের প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষেরা ‘আমাদের পক্ষে মঙ্গলের নিমিত্তে ঈশ্বরের পরিচারক রূপে কাজ করে।’ (রোমীয় ১৩:৪, NW) কী কী উপায়ে? হ্যাঁ, ভেবে দেখুন প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষেরা কত উপায়ে মানুষকে সুযোগসুবিধা দেয়, যেমন চিঠিপত্র বিলিব্যবস্থা, পুলিশী এবং অগ্নি-নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা, ময়লা-নিষ্কাশন এবং শিক্ষা ব্যবস্থা। “এইজন্য তোমরা রাজকরও দিয়া থাক,” পৌল লিখেছিলেন, “কেননা তাঁহারা ঈশ্বরের সেবাকারী, সেই কার্য্যে নিবিষ্ট রহিয়াছেন।” (রোমীয় ১৩:৬) কর অথবা অন্য কোন বৈধ বাধ্যতা সম্পর্কে, আমাদের উচিত “সদাচরণ” করা।—ইব্রীয় ১৩:১৮.
৯, ১০. (ক) প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষেরা কিভাবে ঈশ্বরের ব্যবস্থার মধ্যে উপযোগী হয়েছে? (খ) প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষদের বিরোধিতা করা কেন অন্যায় হবে?
৯ কখনও কখনও, প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষেরা তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে। তাদের প্রতি বশ্যতাস্বীকারের দায়িত্ব থেকে তা কি আমাদের মুক্তি দেয়? না, তা দেয় না। যিহোবা এই কর্তৃপক্ষদের অন্যায় কাজগুলি লক্ষ্য করেন। (হিতোপদেশ ১৫:৩) মানুষের শাসন সম্পর্কে তাঁর সহনশীলতার অর্থ এই নয় যে তিনি এর দুর্নীতিকে উপেক্ষা করেন; অথবা আশা করেন না যে আমরা তা করব। বাস্তবিকই, ঈশ্বর শীঘ্রই “ঐ সকল রাজ্য চূর্ণ ও বিনষ্ট করিয়া,” তাঁর নিজের ধার্মিক সরকারের শাসন দ্বারা সেগুলিকে বদলে দেবেন। (দানিয়েল ২:৪৪) কিন্তু যতদিন পর্যন্ত না তা ঘদুট, প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষেরা উপযোগী উদ্দেশ্য সাধন করে।
১০ পৌল ব্যাখ্যা করেছিলেন: “যে কেহ কর্ত্তৃত্বের প্রতিরোধী হয়, সে ঈশ্বরের নিয়োগের প্রতিরোধ করে।” (রোমীয় ১৩:২) প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষেরা ঈশ্বরের ‘নিয়োগ’ এইভাবে যে তারা কিছুটা শৃঙ্খলা রক্ষা করে, যা না থাকলে বিশৃঙ্খলা এবং অরাজকতা রাজত্ব করবে। তাদের বিরোধিতা করা হবে অশাস্ত্রীয় এবং নির্বুদ্ধিতা। উদাহরণস্বরূপ: মনে করুন যে আপনার উপরে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে এবং সেলাইগুলি ক্ষতস্থানকে সারিয়ে তুলছে। যদিও সেলাইগুলি দেহের অংশ নয়, তারা সীমিত সময়ের জন্য এক উদ্দেশ্য সাধন করে। অকালে সেলাই কেটে ফেললে তা ক্ষতিকারক হতে পারে। অনুরূপে, মনুষ্য সরকারী কর্তৃপক্ষেরা ঈশ্বরের আদি উদ্দেশ্যের অংশ ছিল না। যতক্ষণ পর্যন্ত না তাঁর রাজ্য পৃথিবীকে সম্পূর্ণরূপে শাসন করছে, মনুষ্য সরকারগুলি কিন্তু সমাজব্যবস্থাকে ধরে রেখেছে, এক কার্য সাধন করছে যা বর্তমান সময়ের জন্য ঈশ্বরের ইচ্ছার উপযোগী হয়েছে। এইভাবে আমাদের উচিত প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষদের প্রতি বশ্যতাস্বীকার করে চলা, কিন্তু ঈশ্বরের নিয়ম ও কর্তৃত্বকে প্রথম স্থান দিয়ে।
পরিবারের মধ্যে কর্তৃত্ব
১১. মস্তক-ব্যবস্থার নীতিকে আপনি কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
১১ পরিবার হচ্ছে মনুষ্য সমাজের মৌলিক ভিত্তি। এর পরিধির মধ্যে স্বামী এবং স্ত্রী পুরস্কারদায়ক সাহচর্য পেতে পারে, আর সন্তানেরা সুরক্ষিত থাকতে এবং সাবালক হওয়ার জন্য শিক্ষালাভ করতে পারে। (হিতোপদেশ ৫:১৫-২১; ইফিষীয় ৬:১-৪) এরূপ এক আদর্শ ব্যবস্থা সংগঠিত হওয়া প্রয়োজন এমন এক উপায়ে যা পরিবারের সদস্যদের শান্তি এবং সংহতির মধ্যে বাস করতে সমর্থ করে। এটি সম্পাদনের জন্য যিহোবার পথ হল মস্তক-ব্যবস্থা নীতির মাধ্যম, যা ১ করিন্থীয় ১১:৩ পদে পাওয়া যায়, এই কথাগুলির দ্বারা সংক্ষিপ্তসার করা হয়েছে: “প্রত্যেক পুরুষের মস্তকস্বরূপ খ্রীষ্ট, এবং স্ত্রীর মস্তকস্বরূপ পুরুষ, আর খ্রীষ্টের মস্তকস্বরূপ ঈশ্বর।”
১২, ১৩. পরিবারের কর্তা কে এবং মস্তক-ব্যবস্থা প্রয়োগের যীশুর পন্থা থেকে কী শেখা যেতে পারে?
১২ স্বামী পরিবারের কর্তা। কিন্তু, তার উপরে একজন কর্তা রয়েছেন—যীশু খ্রীষ্ট। পৌল লিখেছিলেন: “স্বামীরা, তোমরা আপন আপন স্ত্রীকে সেইরূপ প্রেম কর, যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীকে প্রেম করিলেন, আর তাহার নিমিত্ত আপনাকে প্রদান করিলেন।” (ইফিষীয় ৫:২৫) একজন স্বামী খ্রীষ্টের প্রতি তার বশ্যতা দেখান যখন তিনি তার স্ত্রীয়ের সঙ্গে সেইরূপ আচরণ করেন যেমন যীশু মণ্ডলীর প্রতি সর্বদা করেছিলেন। (১ যোহন ২:৬) ব্যাপক কর্তৃত্ব অর্পণ করা হয়েছে যীশুর উপরে, কিন্তু তিনি তা প্রয়োগ করেন সর্বাধিক মৃদুতা, প্রেম এবং যুক্তি সহকারে। (মথি ২০:২৫-২৮) একজন মানুষ হিসাবে, যীশু কখনও তাঁর কর্তৃত্ব-স্থানের অপব্যবহার করেননি। তিনি ছিলেন “মৃদুশীল ও নম্রচিত্ত,” আর তিনি তাঁর অনুগামীদের “দাস” বলার পরিবর্তে, “বন্ধু” বলতেন। “আমি তোমাদিগকে বিশ্রাম দিব,” তিনি তাদের প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, আর তাই তিনি দিয়েছিলেন।—মথি ১১:২৮, ২৯; যোহন ১৫:১৫.
১৩ যীশুর উদাহরণ স্বামীদের শেখায় যে খ্রীষ্টীয় মস্তক-ব্যবস্থা কোন কদুঠার কর্তৃত্ব-স্থান নয়। পরিবর্তে, এটি সম্মান ও নিঃস্বার্থ প্রেমের এক স্থান। এক সাথীর প্রতি কোনরূপ দৈহিক অথবা মৌখিক অন্যায় আচরণকে এটি স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করে। (ইফিষীয় ৪:২৯, ৩১, ৩২; ৫:২৮, ২৯; কলসীয় ৩:১৯) যদি কোন খ্রীষ্টীয় পুরুষ তার স্ত্রীর সাথে এইভাবে অন্যায় আচরণ করে, তার অন্য সকল সৎকাজ মূল্যহীন হয়ে যাবে এবং তার প্রার্থনা সকল ব্যাহত হবে।—১ করিন্থীয় ১৩:১-৩; ১ পিতর ৩:৭.
১৪, ১৫. ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান কিভাবে এক স্ত্রীকে তার স্বামীর বশীভূত হতে সাহায্য করে?
১৪ যখন কোন স্বামী খ্রীষ্টের উদাহরণ অনুকরণ করেন, তার স্ত্রীর পক্ষে ইফিষীয় ৫:২২, ২৩ পদের কথাগুলি পালন করা সহজ হয়: “নারীগণ, তোমরা যেমন প্রভুর, তেমনি নিজ নিজ স্বামীর বশীভূতা হও। কেননা স্বামী স্ত্রীর মস্তক, যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীর মস্তক।” যেমন এক স্বামীকে খ্রীষ্টের প্রতি বশীভূত থাকতে হবে, একজন স্ত্রীও অবশ্যই তার স্বামীর বশীভূতা থাকবেন। বাইবেল এও পরিষ্কার করে দেয় যে গুণবতী স্ত্রীয়েরা তাদের ঐশিক প্রজ্ঞা এবং পরিশ্রমের জন্য সম্মান ও প্রশংসার যোগ্য।—হিতোপদেশ ৩১:১০-৩১.
১৫ এক খ্রীষ্টীয় স্ত্রীর তার স্বামীর প্রতি বশ্যতা আপেক্ষিক। এর অর্থ এই যে যদি কোন বিষয়ে বশ্যতাস্বীকারের ফল হয় ঐশিক নিয়ম লঙ্ঘন, তাহলে মানুষের পরিবর্তে বরং অবশ্যই ঈশ্বরের বাধ্য হতে হবে। কিন্তু তখনও, এক স্ত্রীর ঐশিক নিয়মের প্রতি দৃঢ় সমর্থন এক “মৃদু ও প্রশান্ত আত্মার” সাথে মিশ্রিত হওয়া উচিত। এটি স্পষ্ট হওয়া উচিত যে ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান তাকে এক অধিক উত্তম স্ত্রীতে পরিণত করেছে। (১ পিতর ৩:১-৪) একই বিষয় সত্য হবে এক খ্রীষ্টীয় স্বামীর জন্য যার স্ত্রী একজন অবিশ্বাসী। বাইবেলের নীতিসমূহ পালন তাকে করে তুলবে এক অধিক উত্তম স্বামী।
১৬. কৈশোরাবস্থায় যীশু যে উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন তা সন্তানেরা কিভাবে অনুকরণ করতে পারে?
১৬ ইফিষীয় ৬:১ পদ সন্তানদের ভূমিকা বর্ণনা করে, এই বলে: “তোমরা প্রভুতে পিতামাতার আজ্ঞাবহ হও, কেননা তাহা ন্যায্য।” খ্রীষ্টীয় ছেলেমেয়েরা যীশুর উদাহরণ অনুসরণ করে, যিনি বয়োবৃদ্ধি সময়ে তাঁর পিতামাতার বশীভূত ছিলেন। এক বাধ্য বালক রূপে, তিনি “জ্ঞানে ও বয়সে, এবং ঈশ্বরের ও মনুষ্যের নিকদুট অনুগ্রহে বৃদ্ধি পাইতে থাকিলেন।”—লূক ২:৫১, ৫২.
১৭. যেভাবে পিতামাতারা কর্তৃত্বের ব্যবহার করেন সন্তানদের উপরে তার প্রভাব কিরূপ হতে পারে?
১৭ যেভাবে পিতামাতা তাদের দায়িত্ব সকল পালন করেন তা তাদের সন্তানদের প্রভাবিত করতে পারে যে তারা কর্তৃত্বকে সম্মান করবে অথবা তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে। (হিতোপদেশ ২২:৬) তাই পিতামাতাদের নিজেদের জিজ্ঞাসা করা উচিত, ‘আমি কি আমার কর্তৃত্বের ব্যবহার প্রেম সহকারে অথবা রূঢ়ভাবে করি? আমি কি সবকিছুই মেনে নিই?’ এক ঈশ্বরীয় পিতামাতার কাছে আশা করা যায় তারা প্রেমময় এবং বিবেচক হবেন, কিন্তু সেইসঙ্গে ধার্মিক নীতিসমূহকে দৃঢ়ভাবে ধরেও রাখবেন। উপযুক্তরূপেই, পৌল লিখেছিলেন: “পিতারা, তোমরা আপন আপন সন্তানদিগকে ক্রুদ্ধ করিও না [আক্ষরিকভাবে, ‘ক্রোধপ্রকাশে তাদের উত্তেজিত করা’], বরং প্রভুর শাসনে ও চেতনা প্রদানে তাহাদিগকে মানুষ করিয়া তুল।”—ইফিষীয় ৬:৪; কলসীয় ৩:২১.
১৮. পিতামাতাদের শাসন কিভাবে প্রয়োগ করা উচিত?
১৮ পিতামাতাদের উচিত তাদের প্রশিক্ষণ পদ্ধতিগুলিকে পরীক্ষা করা, বিশেষত যদি তারা চান যে তাদের সন্তানেরা বাধ্য হোক ও এইভাবে তাদের আনন্দ নিয়ে আসুক। (হিতোপদেশ ২৩:২৪, ২৫) বাইবেলে, শাসন হল মূলত এক ধরনের নির্দেশ। (হিতোপদেশ ৪:১; ৮:৩৩) এটি যুক্ত রয়েছে প্রেম ও কোমলতার সঙ্গে, ক্রোধ ও বর্বরতার সঙ্গে নয়। সুতরাং, খ্রীষ্টীয় পিতামাতাদের প্রয়োজন তাদের সন্তানদের শাসন করবার সময়ে প্রজ্ঞাসহকারে কাজ করা এবং নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখা।—হিতোপদেশ ১:৭.
মণ্ডলীর মধ্যে কর্তৃত্ব
১৯. খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে সুশৃঙ্খলা বজায় রাখতে ঈশ্বর কী ব্যবস্থা করেছেন?
১৯ যেহেতু যিহোবা শৃঙ্খলার ঈশ্বর, এটি যুক্তিপূর্ণ যে তাঁর প্রজাদের জন্য তিনি কর্তৃত্বপূর্ণ এবং সুসংগঠিত নেতৃত্ব প্রদান করবেন। তদনুযায়ী, তিনি যীশুকে খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর মস্তকরূপে নিযুক্ত করেছেন। (১ করিন্থীয় ১৪:৩৩, ৪০; ইফিষীয় ১:২০-২৩) খ্রীষ্টের অদৃশ্য নেতৃত্বের অধীনে, ঈশ্বর এক ব্যবস্থার অনুমোদন করেছেন যার দ্বারা প্রতিটি মণ্ডলীতে নিযুক্ত প্রাচীনেরা উৎসুকভাবে, ইচ্ছাপূর্বক এবং প্রেমসহকারে পালের রক্ষণাবেক্ষণ করেন। (১ পিতর ৫:২, ৩) পরিচারক দাসগণ বিভিন্ন উপায়ে তাদের সাহায্য এবং মণ্ডলীর মধ্যে মূল্যবান সেবাকার্য করেন।—ফিলিপীয় ১:১.
২০. কেন আমরা নিযুক্ত খ্রীষ্টীয় প্রাচীনদের বশীভূত থাকব এবং এটি উপকারজনক কেন?
২০ খ্রীষ্টীয় প্রাচীনদের সম্পর্কে, পৌল লিখেছিলেন: “তোমরা তোমাদের নেতাদিগের আজ্ঞাগ্রাহী ও বশীভূত হও, কারণ নিকাশ দিতে হইবে বলিয়া তাঁহারা তোমাদের প্রাণের নিমিত্ত প্রহরি-কার্য্য করিতেছেন,—যেন তাঁহারা আনন্দপূর্ব্বক সেই কার্য্য করেন, আর্ত্তস্বরপূর্ব্বক না করেন; কেননা ইহা তোমাদের পক্ষে মঙ্গলজনক নয়।” (ইব্রীয় ১৩:১৭) প্রজ্ঞাসহকারেই, মণ্ডলীতে যারা রয়েছে তাদের আধ্যাত্মিক চাহিদাগুলির যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব ঈশ্বর খ্রীষ্টীয় অধ্যক্ষদের উপরে বিশ্বাসভরে অর্পণ করেছেন। এই প্রাচীনবর্গ এক যাজক শ্রেণী গঠন করে না। তারা ঈশ্বরের সেবক এবং দাস, তাদের সহউপাসকদের প্রয়োজনগুলির পরিচর্যা করেন, ঠিক যেমন আমাদের প্রভু, যীশু খ্রীষ্ট, করেছিলেন। (যোহন ১০:১৪, ১৫) আমাদের উন্নতি এবং আধ্যাত্মিক বৃদ্ধির জন্য শাস্ত্রসম্মতভাবে যোগ্য ব্যক্তিগণ আগ্রহ নেন তা জানা আমাদের সহযোগী হতে এবং বশীভূত থাকতে উৎসাহ দেবে।—১ করিন্থীয় ১৬:১৬.
২১. নিযুক্ত প্রাচীনগণ কিভাবে সহখ্রীষ্টানদের আধ্যাত্মিকরূপে সাহায্য করার প্রচেষ্টা করেন?
২১ কখনও কখনও, মেষ বিপথগামী হতে পারে অথবা ক্ষতিকারক জাগতিক বিষয় দ্বারা বিপদগ্রস্ত হতে পারে। প্রধান পালকের নেতৃত্বের অধীনে, অধীনস্থ পালকরূপে প্রাচীনেরা তাদের তত্ত্বাবধানে যারা রয়েছে তাদের প্রয়োজনগুলির প্রতি সদা-সতর্ক থাকেন ও পরিশ্রম সহকারে তাদের প্রতি ব্যক্তিগত মনোযোগ দেন। (১ পিতর ৫:৪) তারা মণ্ডলীর সদস্যদের সাথে সাক্ষাৎ করেন ও উৎসাহজনক কথা বলেন। দিয়াবল ঈশ্বরের প্রজাদের শান্তি ভঙ্গ করার চেষ্টা করে জেনে, প্রাচীনগণ কোন সমস্যার সমাধান করতে যে জ্ঞান উপর থেকে আসে তা ব্যবহার করেন। (যাকোব ৩:১৭, ১৮) তারা কদুঠার প্রচেষ্টা করেন একতা ও বিশ্বাসে ঐক্যতা রক্ষা করতে, একটি বিষয় যার জন্য যীশু নিজে প্রার্থনা করেছিলেন।—যোহন ১৭:২০-২২; ১ করিন্থীয় ১:১০.
২২. অন্যায় কাজের ক্ষেত্রগুলিতে প্রাচীনেরা কী সাহায্য দিয়ে থাকেন?
২২ যদি কোন খ্রীষ্টান কোন পাপ করার জন্য কষ্টভোগ করে অথবা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ে তাহলে কী হবে? সান্ত্বনাদায়ক বাইবেল উপদেশ এবং তার তরফে প্রাচীনদের আন্তরিক প্রার্থনা সেই ব্যক্তিকে আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারে সাহায্য করতে পারে। (যাকোব ৫:১৩-১৫) আরও, পবিত্র আত্মা দ্বারা নিযুক্ত, এই ব্যক্তিদের কর্তৃত্ব রয়েছে সেই ব্যক্তির প্রতি শাসন ব্যবস্থা প্রয়োগ করার এবং ভর্ৎসনা করার, যে এক অন্যায়ের পথ অনুসরণ করে অথবা যে মণ্ডলীর আধ্যাত্মিক এবং নৈতিক পবিত্রতাকে বিপদাপন্ন করে। (প্রেরিত ২০:২৮; তীত ১:৯; ২:১৫) মণ্ডলীকে পবিত্র রাখতে, সদস্যদের ব্যক্তিগতভাবে গুরুতর অন্যায় কাজকে প্রকাশ করে দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। (লেবীয়পুস্তক ৫:১) যদি কোন খ্রীষ্টান, যে কোন গুরুতর পাপ করেছে, শাস্ত্রসম্মত শাসন ও ভর্ৎসনা গ্রহণ করে এবং প্রকৃত অনুতাপের প্রমাণ দেয়, তাকে সাহায্য করা হবে। অবশ্যই, ক্রমাগত করে চলে এবং অনুতপ্তহীন ঈশ্বরের আইন লঙ্ঘনকারীদের বহিষ্কৃত করা হয়।—১ করিন্থীয় ৫:৯-১৩.
২৩. মণ্ডলীর মঙ্গলের জন্য খ্রীষ্টীয় অধ্যক্ষগণ কী প্রদান করেন?
২৩ বাইবেল ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল যে যীশু খ্রীষ্টের অধীনে, রাজা হিসাবে আধ্যাত্মিকরূপে পরিপক্ব ব্যক্তিদের ঈশ্বরের লোকেদের সান্ত্বনা, সুরক্ষা এবং সতেজতা দেওয়ার জন্য নিযুক্ত করা হবে। (যিশাইয় ৩২:১, ২) আধ্যাত্মিক বৃদ্ধির জন্য সুসমাচার-প্রচারক, পালক এবং শিক্ষাগুরু রূপে তারা নেতৃত্ব নেবেন। (ইফিষীয় ৪:১১, ১২, ১৬) যদিও খ্রীষ্টীয় অধ্যক্ষগণ কোন কোন সময়ে সহবিশ্বাসীদের ভর্ৎসনা, সর্বসমক্ষে তিরস্কার এবং পরামর্শ দান করতে পারেন, ঈশ্বরের বাক্যের উপরে ভিত্তি করা প্রাচীনদের উপকারমূলক শিক্ষার প্রয়োগ সকলকে জীবনের পথে রাখতে সাহায্য করে।—হিতোপদেশ ৩:১১, ১২; ৬:২৩; তীত ২:১.
কর্তৃত্ব সম্বন্ধে যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করুন
২৪. কোন্ বিচার্য বিষয়ের উপরে আমরা প্রতিদিন পরীক্ষিত হই?
২৪ কর্তৃত্বের প্রতি বশ্যতাস্বীকার এই বিচার্য বিষয়ের উপরে প্রথম পুরুষ এবং নারীকে পরীক্ষা করা হয়েছিল। আশ্চর্য নয়, আমরা প্রতিদিন অনুরূপ এক পরীক্ষার সম্মুখীন হই। শয়তান দিয়াবল মানবজাতির মধ্যে অবাধ্যতার এক আত্মাকে প্রবিষ্ট করে দিয়েছে। (ইফিষীয় ২:২) বশ্যতাস্বীকারের পথের চেয়ে স্বাধীনতার পথকে অনেক বেশি আকর্ষণীয় করে উপস্থিত করা হয়েছে।
২৫. জগতের অবাধ্যতার আত্মাকে পরিহার করা এবং ঈশ্বর যে কর্তৃত্বের ব্যবহার করেন অথবা অনুমতি দেন, তার বশীভূত হওয়ার উপকার সকল কী?
২৫ কিন্তু, আমরা অবশ্যই, জগতের বিদ্রোহী আত্মাকে পরিহার করব। তা করার ফলে, আমরা দেখব ঈশ্বরীয় বশ্যতাস্বীকার বহু মূল্যবান পুরস্কারসমূহ নিয়ে আসে। উদাহরণস্বরূপ, যারা জাগতিক কর্তৃপক্ষদের সাথে সমস্যার সৃষ্টি করে তাদের মধ্যে যে উদ্বেগ এবং নৈরাশ্যতা আসে তা আমরা এড়াতে পারব যা অতি সাধারণ। আমরা সেই সংঘর্ষকে কমাতে পারব যা বহু পরিবারের মধ্যে ব্যাপকরূপে বিদ্যমান। আর আমরা আমাদের খ্রীষ্টীয় সহবিশ্বাসীদের সাথে প্রগাঢ়, প্রেমময় সাহচর্যের উপকার সকল উপভোগ করব। সবার উপরে, আমাদের ঈশ্বরীয় বশ্যতাস্বীকারের ফল হবে সর্বোচ্চ কর্তৃত্বের অধিকারী, যিহোবার সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক লাভ।
আপনার জ্ঞান পরীক্ষা করুন
যিহোবা কিভাবে তাঁর কর্তৃত্ব ব্যবহার করেন?
‘প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্ত্তৃপক্ষ’ কারা এবং তাদের প্রতি আমরা কিভাবে বশীভূত থাকি?
মস্তক-ব্যবস্থা নীতি পরিবারের প্রতিটি সদস্যের উপরে কী দায়িত্ব অর্পণ করে?
খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে আমরা কিভাবে বশ্যতা দেখাতে পারি?
[১৩৪ পৃষ্ঠার বাক্স]
বশ্য, বিনাশক নয়
জনসাধারণ্যে তাদের প্রচার কাজের মাধ্যমে, যিহোবার সাক্ষীরা প্রকৃত শান্তি এবং নিরাপত্তার জন্য মানবজাতির একমাত্র আশা হিসাবে ঈশ্বরের রাজ্যের প্রতি নির্দেশ করে। কিন্তু ঈশ্বরের রাজ্যের এই উদ্যমী ঘোষণাকারীরা যে সরকারের অধীনে তারা বাস করে কোনক্রমেই তাদের বিনাশক নয়। পরিবর্তে, সর্বাধিক সশ্রদ্ধ এবং আইন-মান্যকারী নাগরিকদের মধ্যে সাক্ষীরা অন্তর্ভুক্ত। “যদি সমস্ত ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলি যিহোবার সাক্ষীদের ন্যায় হত,” আফ্রিকার একটি দেশে একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেছিলেন, “কোন হত্যা, চুরি, অপরাধ, কয়েদী এবং পারমাণবিক বোমা থাকত না। দিনে এবং রাতে দরজা বন্ধ রাখতে হত না।”
এটি উপলব্ধি করে, বহু দেশে সরকারি কর্মকর্তারা সাক্ষীদের প্রচার কাজকে বিনা বাধায় অগ্রসর হতে অনুমতি দিয়েছেন। অন্যান্য দেশে, নিষেধাজ্ঞা অথবা নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়া হয়েছে যখন কর্তৃপক্ষেরা উপলব্ধি করেছেন যে যিহোবার সাক্ষীদের প্রভাব মঙ্গলজনক হয়। এটি সেরূপ যেমন প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষদের প্রতি বাধ্য হওয়া সম্বন্ধে: “সদাচরণ কর, করিলে তাঁহার নিকট হইতে প্রশংসা পাইবে।”—রোমীয় ১৩:১, ৩.