এখনই কেন সত্য ঈশ্বরকে ভয় করবেন?
“ঈশ্বরকে ভয় কর, ও তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন কর, কেননা ইহাই সকল মনুষ্যের কর্ত্তব্য।”—উপদেশক ১২:১৩.
১, ২. ঈশ্বরের প্রতি যথার্থ ভয় থাকা কেন যুক্তিযুক্ত?
ঈশ্বরের প্রতি স্বাস্থ্যকর ও সশ্রদ্ধ ভয় থাকা মানুষের পক্ষে উত্তম। হ্যাঁ, যদিও এটা ঠিক যে অনেক ধরনের মানবিক ভীতি মনের দিক দিয়ে অশান্তিকর, এমনকি তা মঙ্গলের পক্ষেও ক্ষতিকর, কিন্তু যিহোবা ঈশ্বরকে ভয় করা আমাদের জন্য মঙ্গল।—গীতসংহিতা ১১২:১; উপদেশক ৮:১২.
২ সৃষ্টিকর্তা তা জানেন। তাঁর সৃষ্টির প্রতি প্রেমের প্রকাশস্বরূপ, তিনি সকলকে তাঁকে ভয় করতে ও তাঁর উপাসনা করতে আদেশ দেন। আমরা পড়ি: “আমি আর এক দূতকে দেখিলাম, তিনি আকাশের মধ্যপথে উড়িতেছেন, তাঁহার কাছে অনন্তকালীন সুসমাচার আছে, যেন তিনি পৃথিবী-নিবাসীদিগকে, প্রত্যেক জাতি ও বংশ ও ভাষা ও প্রজাবৃন্দকে, সুসমাচার জানান; তিনি উচ্চ রবে এই কথা কহিলেন, ঈশ্বরকে ভয় কর, ও তাঁহাকে গৌরব প্রদান কর, কেননা তাঁহার বিচার-সময় উপস্থিত; যিনি স্বর্গ, পৃথিবী, . . . উৎপন্ন করিয়াছেন, তাঁহার ভজনা কর।”—প্রকাশিত বাক্য ১৪:৬, ৭.
৩. আমাদের প্রথম পিতামাতার জন্য সৃষ্টিকর্তা কী করেছিলেন?
৩ সমস্ত কিছুর স্রষ্টা, যিনি হলেন জীবনের উৎস, তাঁকে আমাদের কখনই উপেক্ষা করা উচিত নয়, কারণ তিনি আমাদের ও এই গ্রহটির মালিক। (গীতসংহিতা ২৪:১) তাঁর মহান প্রেমের প্রকাশস্বরূপ, যিহোবা তাঁর পার্থিব সন্তানদের জীবন ও তাদের বসবাসের জন্য এক অপূর্ব স্থান দিয়েছিলেন—এক সুন্দর পরমদেশ। তবুও, এই উত্তম উপহারটি শর্তহীনভাবে দেওয়া হয়নি। বস্তুতপক্ষে, এটিকে এক আস্থার ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছিল। আমাদের প্রথম পিতামাতার দায়িত্ব ছিল তাদের এই গৃহটিকে রক্ষণাবেক্ষণ ও সম্প্রসারিত করা যতক্ষণ না তারা সমগ্র পৃথিবীকে পরিপূর্ণ ও বশীভূত করছে। তাদের সুযোগ ও দায়িত্ব ছিল স্থলাঞ্চলের পশু, পক্ষী ও মাছ—অন্যান্য সমস্ত জীবিত প্রাণীদের প্রতি যারা তাদের সাথে ও তাদের সন্তানদের সাথে পৃথিবীতে বসবাস করবে। এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে, মানুষকেই জবাবদিহি করতে হবে।
৪. ঈশ্বরের সৃষ্টির প্রতি মানুষ কী করেছে?
৪ কিন্তু সুন্দরভাবে সমস্ত কিছুর সূত্রপাত হওয়া সত্ত্বেও, লক্ষ্য করে দেখুন যে মানুষ কিভাবে তার এই অপূর্ব পার্থিব গৃহটিকে দূষিত করে তুলেছে! এই রত্নটির মালিক ঈশ্বরের প্রতি, এক ঔদ্ধত্যমূলক অসম্মান প্রদর্শনের নমুনা হিসাবে, মানুষ এই পৃথিবীকে পঙ্কিল করে ফেলেছে। দূষণ এমন এক পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যে তা আরও অধিক সংখ্যায় পশু, পক্ষী ও মৎস্যদের প্রজাতিগুলির অস্তিত্বকে বিপর্যস্ত করে তুলছে। আমাদের ন্যায়বান ও প্রেমময় ঈশ্বর চিরকালের জন্য এটি সহ্য করবেন না। পৃথিবীর এই বিধ্বস্ততা বিচারের জন্য আর্তনাদ করছে, যার জন্য অনেকেরই ভয় পাওয়ার কারণ আছে। অন্যদিকে আবার যারা সম্মানপূর্বক ঈশ্বরের উপর নির্ভর করে তাদের পক্ষে, কী হবে, এটা জানা খুবই সান্ত্বনাদায়ক। যিহোবা অবশ্যই নিকাশ চাইবেন আর এই পৃথিবী পুনর্স্থাপিত হবে। এটা পৃথিবীতে বসবাসকারী সমস্ত সহৃদয় ব্যক্তিদের জন্য প্রকৃতই এক আনন্দদায়ক সংবাদ।
৫, ৬. মানুষ তাঁর সৃষ্টিকে যা করেছে তার প্রতি যিহোবা কিধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাবেন?
৫ ঈশ্বর কিসের মাধ্যমে তাঁর বিচার আনবেন? যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে, যিনি হলেন এখন ঈশ্বরের স্বর্গীয় সিংহাসনের অধিষ্ঠিত রাজা। তাঁর ঐ স্বর্গীয় পুত্রের মাধ্যমে, যিহোবা এই বর্তমান অপরিচ্ছন্ন, বিদ্রোহী বিধিব্যবস্থার শেষ আনবেন। (২ থিষলনীকীয় ১:৬-৯; প্রকাশিত বাক্য ১৯:১১) এইভাবে তিনি তাদের নিস্তার করবেন যারা তাঁকে ভয় করে আর তারই সাথে আমাদের এই পার্থিব গৃহকে উদ্ধার ও সংরক্ষিত করবেন।
৬ এটা কিভাবে হবে? বাইবেল আসন্ন এক মহাক্লেশের কথা বলে যা হর্মাগিদোন যুদ্ধের মধ্য দিয়ে চরম পর্যায়ে পৌঁছাবে। (প্রকাশিত বাক্য ৭:১৪; ১৬:১৬) এই দূষিত বিধিব্যবস্থা এবং এর দূষণকারীদের বিরুদ্ধে এটাই হবে ঈশ্বরের বিচার। কোন মানুষ কি বেঁচে থাকবে? হ্যাঁ! তারাই থাকবে যাদের ঈশ্বরের প্রতি কোন বিষাদগ্রস্ত বা অস্বাস্থ্যকর ভীতি নেই, কিন্তু তাঁর প্রতি এক সম্মানসূচক ও সশ্রদ্ধ ভয় রয়েছে। তাদেরই রক্ষা করা হবে।—হিতোপদেশ ২:২১, ২২.
শক্তির এক বিস্ময়কর প্রকাশ
৭. মোশির সময়ে ইস্রায়েলদের পক্ষে ঈশ্বর কেন হস্তক্ষেপ করেছিলেন?
৭ আমাদের সাধারণ শতাব্দীর প্রায় ১,৫০০ বছর আগে তাঁর উপাসকদের পক্ষে তিনি যে মহান কর্মটি করেছিলেন সেটিই হল যিহোবা ঈশ্বরের দ্বারা এই নাটকীয় কীর্তির এক পূর্বাভাস। মিশরের বিশাল সামরিক শক্তি ইস্রায়েলীয় কর্মী অভিবাসীদের দাসত্বের এক বন্দীত্বে রেখেছিল, এমনকি তারা চেষ্টা করেছিল একধরনের সাম্প্রদায়িক বিলোপসাধন করতে যখন তাদের শাসক ফরৌণ ইস্রায়েলীয়দের সমস্ত সদ্যজাত পুরুষ সন্তানদের হত্যা করার আদেশ দেন। মিশরের উপর ঈশ্বরের বিজয়লাভের অন্তর্ভুক্ত ছিল সেই অত্যাচারী রাজনৈতিক বিধিব্যবস্থার থেকে ইস্রায়েলকে মুক্ত করা, হ্যাঁ, সেই জাতির হাত থেকে তাদের স্বাধীন করা যারা অন্যান্য দেবগুলিকে উপাসনা করার দ্বারা কলুষিত ছিল।
৮, ৯. ঈশ্বরের এই হস্তক্ষেপের প্রতি মোশি ও ইস্রায়েল কিভাবে সাড়া দিয়েছিল?
৮ যাত্রাপুস্তক ১৫ অধ্যায় মিশর থেকে স্বাধীন হওয়ার প্রতি ইস্রায়েলীয়দের প্রতিক্রিয়ার কথা লিপিবদ্ধ করে। এই বিবরণটির বিবেচনা আমাদের উপলব্ধি করতে সাহায্য করবে যে আধ্যাত্মিক ও দৈহিকভাবে কলুষিত এই বর্তমান বিধিব্যবস্থা থেকে কিভাবে খ্রীষ্টানেরা রক্ষা পেতে পারে। আসুন আমরা যাত্রাপুস্তক ১৫ অধ্যায়ের কয়েকটি নির্দিষ্ট পদ বিবেচনা করে দেখি এটা জানার জন্য যে কেন আমরা সত্য ঈশ্বর যিহোবাকে ভয় করা বেছে নেব। আমরা ১ ও ২ পদ দিয়ে শুরু করব:
৯ “তখন মোশি ও ইস্রায়েল-সন্তানেরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে এই গীত গান করিলেন; তাঁহারা বলিলেন, আমি সদাপ্রভুর উদ্দেশে গান করিব; কেননা তিনি মহিমান্বিত হইলেন, তিনি অশ্ব ও তদারোহীকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করিলেন। সদাপ্রভু আমার বল ও গান, তিনি আমার পরিত্রাণ হইলেন।”
১০. কী ঈশ্বরকে পরিচালিত করেছিল মিশরের সৈন্যবাহিনীকে ধ্বংস করতে?
১০ কিভাবে মিশর থেকে যিহোবা ইস্রায়েলকে মুক্ত করেছিলেন এই বিবরণটির সাথে সমগ্র পৃথিবীর লোকেরা পরিচিত। তিনি সেই মহান বিশ্বশক্তির উপর আঘাত এনেছিলেন যতক্ষণ না পরিশেষে ফরৌণ ইস্রায়েলীয়দের চলে যাওয়ার অনুমতি দেন। কিন্তু এরপর ফরৌণের সামরিক বাহিনী এই অরক্ষিত লোকেদের পিছনে ধাওয়া করে এবং লোহিত সমুদ্রের ধারে তাদের প্রায় ফাঁদের মধ্যে জড়িয়ে ফেলে। যদিও এটা মনে হয়েছিল যে ইস্রায়েল সন্তানেরা তাদের এই সদ্যপ্রাপ্ত স্বাধীনতাটি খুব শীঘ্রই হারিয়ে ফেলতে চলেছিল, কিন্তু যিহোবার উদ্দেশ্য ছিল একটু ভিন্ন। অলৌকিকভাবে তিনি সমুদ্রের মধ্য থেকে একটি রাস্তা করে দেন যা তাঁর লোকেদের এক সুরক্ষিত স্থানে নিয়ে আসে। যখন মিশরীয়রা তাদের পশ্চাদ্ধাবন করে, তখন তিনি লোহিত সমুদ্রকে তাদের উপর বর্ষিত করেন আর ফরৌণ ও তার সামরিক বাহিনী জলের তলায় ডুবে যায়।—যাত্রাপুস্তক ১৪:১-৩১.
১১. মিশরের বিরুদ্ধে ঈশ্বরের কাজের কী ফল দাঁড়ায়?
১১ মিশরীয় সামরিক শক্তির উপর যিহোবার আনা এই ধ্বংস, তাঁর উপাসকদের সামনে তাঁকে মহিমান্বিত করে আর তাঁর নাম ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করে। (যিহোশূয়ের পুস্তক ২:৯, ১০; ৪:২৩, ২৪) হ্যাঁ, তাঁর নাম অনেক উচ্চীকৃত হয় বিশেষকরে মিশরীয়দের সেই সব শক্তিহীন, মিথ্যা দেবতাদের চাইতে, যারা তাদের উপাসকদের রক্ষা করতে অসমর্থ প্রমাণিত হয়। নিজেদের দেবতা, মরণশীল মানুষ আর সামরিক শক্তির উপর নির্ভরতার ফল দাঁড়ায় এক তিক্ত হতাশাব্যঞ্জক পরিস্থিতি। (গীতসংহিতা ১৪৬:৩) এটা কোন আশ্চর্যের বিষয় নয় যে ইস্রায়েলীয়রা সেই প্রশংসা গীত করতে অনুপ্রাণিত হয়েছিল যা জীবন্ত ঈশ্বর, যিনি শক্তির সাথে তাঁর লোকেদের উদ্ধার করেন, তাঁর প্রতি এক স্বাস্থ্যকর ভীতিকে প্রতিফলিত করে!
১২, ১৩. লোহিত সমুদ্রে ঈশ্বরের বিজয় থেকে আমাদের কী শেখা উচিত?
১২ ঠিক একইরকমভাবে, আমাদেরও স্বীকার করা উচিত যে, আমাদের এই কালের কোন মিথ্যা দেবতা আর এমনকি পারমাণবিক অস্ত্রসমেত কোন মহান শক্তিকে যিহোবার সাথে তুলনা করা সম্ভব নয়। তাঁর লোকেদের উদ্ধার করতে তিনি পারেন এবং তিনি তা করবেন। “তিনি স্বর্গীয় বাহিনীর ও পৃথিবীনিবাসীদের মধ্যে আপন ইচ্ছানুসারে কার্য্য করেন; এবং এমন কেহ নাই যে, তাঁহার হস্ত থামাইয়া দিবে, কিম্বা তাঁহাকে বলিবে, তুমি কি করিতেছ?” (দানিয়েল ৪:৩৫) যখন আমরা এই কথাগুলির প্রকৃত অর্থ বুঝতে পারি, তখন আমরাও আনন্দের সাথে তাঁর প্রশংসার গান গাইতে অনুপ্রাণিত হই।
১৩ লোহিত সমুদ্রের সেই বিজয় গান চলতে থাকে: “সদাপ্রভু যুদ্ধবীর; সদাপ্রভু তাঁহার নাম।” অতএব, এই অদৃশ্য যোদ্ধা মানুষের কল্পনার কোন অস্পষ্ট প্রকাশ নয়। তাঁর একটি নাম আছে! তিনি হলেন ‘সেই ব্যক্তি যিনি সমস্ত কিছু অস্তিত্বে আনেন,’ এক মহান নির্মাতা, “যাঁর নাম যিহোবা, . . . সমস্ত পৃথিবীর উপরে পরাৎপর।” (যাত্রাপুস্তক ৩:১৪; ১৫:৩-৫; গীতসংহিতা ৮৩:১৮, NW) আপনি কি একমত হবেন না যে মিশরীয়দের পক্ষে সেই সর্বশক্তিমানকে অবজ্ঞা করার পরিবর্তে তাঁর প্রতি যুক্তিসঙ্গত ও সম্মানসূচক ভয় দেখানো বিজ্ঞতার কাজ হত?
১৪. লোহিত সমুদ্রে ঈশ্বরীয় ভীতির মূল্যটি কিভাবে প্রকাশ পেয়েছিল?
১৪ পৃথিবীর নক্শাকারী ও সমুদ্রের নির্মাতা হিসাবে জলস্রোতের উপর তাঁর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আছে। (যাত্রাপুস্তক ১৫:৮) এমনকি বাতাসের উপর তাঁর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাকে ব্যবহার করার দ্বারা তিনি এমন কিছু সম্পাদন করেন যা আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব বলে মনে হয়েছিল। একটি বিশেষ স্থানে তিনি জলপ্রবাহকে বিভক্ত করে সেটিকে বিপরীতমুখি করে দেন যাতে করে একটি জলপথের সৃষ্টি হতে পারে যার মধ্যে দিয়ে তাঁর লোকেরা বেরিয়ে যেতে পারবে। সেই দৃশ্যটি কল্পনা করে দেখুন: লক্ষ লক্ষ টন সমুদ্রের জল একটি বিশাল প্রাচীরের আকার ধারণ করে ইস্রায়েলদের জন্য পালাবার এক সুরক্ষিত পথ করে দিচ্ছে। হ্যাঁ, যারা ঈশ্বরের প্রতি এক স্বাস্থ্যকর ভয় প্রদর্শন করেছিল তারাই রক্ষা পেয়েছিল। এরপর যিহোবা সেই জলস্রোতকে ছেড়ে দেন, আর সেটি এক ভয়ঙ্কর প্লাবনের রূপ ধারণ করে ফরৌণের বাহিনী ও তাদের অস্ত্রশস্ত্রকে ডুবিয়ে দেয়। মূল্যহীন দেবতা ও মানুষের সামরিক শক্তির উপর কতই না এক বিস্ময়কর ঐশিক ক্ষমতার প্রকাশ! অবশ্য, যিহোবাই সেই ব্যক্তি যাঁকে ভয় করা উচিত, তাই নয় কি?—যাত্রাপুস্তক ১৪:২১, ২২, ২৮; ১৫:৮.
ঈশ্বরের প্রতি আমাদের ভয় প্রদর্শন করা
১৫. ঈশ্বরের এই শক্তিশালী রক্ষা কাজের প্রতি আমাদের কিধরনের প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত?
১৫ সেই সময় আমরা যদি সুদৃঢ়ভাবে মোশির পাশে দাঁড়াতাম, তাহলে আমরাও সেই গান গাইতে অবশ্যই অনুপ্রাণিত হতাম: “হে সদাপ্রভু, দেবগণের মধ্যে কে তোমার তুল্য? কে তোমার ন্যায় পবিত্রতায় আদরণীয়, প্রশংসায় ভয়ার্হ, আশ্চর্য্য ক্রিয়াকারী?” (যাত্রাপুস্তক ১৫:১১) সেই সময় থেকে শতাব্দীগুলি ধরে এই অভিব্যক্তিটি প্রতিধ্বনিত হয়ে আসছে। বাইবেলের শেষ বইটিতে প্রেরিত যোহন, ঈশ্বরের বিশ্বস্ত অভিষিক্ত দাসেদের একটি দলকে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন: “তাহারা ঈশ্বরের দাস মোশির গীত ও মেষশাবকের গীত গায়।” এই মহান গীতটি কী? “‘মহৎ ও আশ্চর্য্য তোমার ক্রিয়া সকল, হে প্রভু ঈশ্বর, সর্ব্বশক্তিমান্; ন্যায্য ও সত্য তোমার মার্গ সকল, হে জাতিগণের রাজন্! হে প্রভু, কে না ভীত হইবে? এবং তোমার নামের গৌরব কে না করিবে? কেননা একমাত্র তুমিই সাধু।’”—প্রকাশিত বাক্য ১৫:২-৪.
১৬, ১৭. আজকে আমরা কোন্ অভূতপূর্ব ঘটনাগুলি ঘটতে দেখছি?
১৬ তাই আজকের দিনেও স্বাধীন উপাসকেরা আছে যারা কেবলমাত্র ঈশ্বরের হস্তকৃত সৃষ্টিকেই নয়, কিন্তু তাঁর বিধিনিয়মকেও উপলব্ধি করে। সমস্ত জাতির লোকেরা আধ্যাত্মিকভাবে স্বাধীনপ্রাপ্ত হয়েছে, দূষিত জগৎ থেকে সরে এসেছে, কারণ তারা ঈশ্বরের ধার্মিক বিধিনিয়মকে স্বীকার করেছে ও তা প্রয়োগ করেছে। বছরে লক্ষাধিক ব্যক্তিরা যিহোবার উপাসকদের এক পরিচ্ছন্ন, ধার্মিক সংগঠনের মধ্যে বসবাস করার জন্য এই দূষিত জগৎ থেকে রক্ষা করছে। খুব শীঘ্রই, মিথ্যা ধর্ম ও বাদবাকি দুষ্ট বিধিব্যবস্থার উপর ঈশ্বরের অগ্নিরূপ বিচার বলবৎ হওয়ার পর, তারা এক ধার্মিক নতুন জগতে চিরকাল বেঁচে থাকতে পারবে।
১৭ প্রকাশিত বাক্য ১৪:৬, ৭ পদের সাথে সামঞ্জস্য রেখে, মানবজাতি এখন বিচারের সেই সতর্কবাণী শুনছে যা যিহোবার সাক্ষীরা দূতেদের পরিচালনায় ঘোষণা করে আসছে। গত বছরে ২৩০টির বেশি দেশে, প্রায় ৫০ লক্ষ সাক্ষীরা ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার ও তাঁর বিচারের দিন সম্বন্ধে প্রচার করেছে। রক্ষার জন্য তাদের সহমানবদের শিক্ষিত করে তোলার অভিপ্রায়ে, সাক্ষীরা নিয়মিত লোকেদের বাড়িতে যায় ও তাদের সাথে বিনামূল্যে বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করে। এইভাবে প্রতি বছর লক্ষাধিক লোক বুদ্ধি সহকারে সত্য ঈশ্বরকে ভয় করা সম্বন্ধে যথেষ্ট জ্ঞান লাভ করে, তাঁর কাছে নিজেদের জীবনকে তারা উৎসর্গ করে এবং বাপ্তাইজিত হয়। এটা কতই না আনন্দজনক যে সেই সব ব্যক্তিরা সত্য ঈশ্বরকে ভয় করতে আরম্ভ করেছে!—লূক ১:৪৯-৫১; প্রেরিত ৯:৩১; তুলনা করুন ইব্রীয় ১১:৭.
১৮. কী প্রমাণ করে যে দূতেরা আমাদের প্রচার কাজের সাথে যুক্ত?
১৮ এটা কি সত্য যে দূতেরা এই প্রচার কাজের সাথে যুক্ত? হ্যাঁ, এটা খুবই স্পষ্ট যে দূতেদের পরিচালনার ফলে প্রায়ই যিহোবার সাক্ষীরা এমন কিছু ঘরে গিয়ে উপস্থিত হয়েছে যেখানে কোন পীড়িত ব্যক্তি আধ্যাত্মিক সাহায্যের জন্য ব্যাকুল হয়ে এমনকি প্রার্থনা পর্যন্ত জানিয়েছে! উদাহরণস্বরূপ, দুজন সাক্ষী একটি ছোট শিশুকে সঙ্গে নিয়ে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে সুসমাচার প্রচার করছিল। যতই দুপুর হয়ে আসে, এই দুই প্রাপ্তবয়স্ক সাক্ষী ঠিক করে যে তারা ঘরে ফিরে যাবে। কিন্তু শিশুটি পরের ঘরটিতে যাওয়ার জন্য অসাধারণভাবে ব্যগ্রতা প্রকাশ করতে থাকে। যখন শিশুটি লক্ষ্য করল যে বড়রা সেখানে যেতে নারাজ, তখন সেই মুহূর্তে সে একলা এগিয়ে গিয়ে সেই ঘরটির দরজায় কড়া নাড়ে। একটি যুবতী মেয়ে দরজা খুলে দেয়। ঐ দুইজন সাক্ষী যখন এটা দেখতে পায় তখন তারা এগিয়ে মেয়েটির সাথে কথা বলতে আরম্ভ করে। মেয়েটি তাদের ভিতরে আমন্ত্রণ জানায় এবং বলে যে, সে যখন দরজার আওয়াজ শোনে তখন সে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছিল যে তিনি যেন সাক্ষীদের তার কাছে পাঠিয়ে দেন তাকে বাইবেল শেখানোর জন্য। এরপর বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
১৯. ঈশ্বরকে ভয় করার একটি উপকারকে আমরা কিভাবে শনাক্ত করতে পারি?
১৯ যখন আমরা বিশ্বস্ততার সাথে ঈশ্বরের বিচার বার্তা ঘোষণা করি তখন আমরা তাঁর ধার্মিক বিধিনিয়মগুলিকেও শিক্ষা দিই। যখন এগুলি লোকেদের জীবনে প্রয়োগ করা হয়, তখন এর ফল হয় দৈহিক ও আধ্যাত্মিক আশীর্বাদ। উদাহরণস্বরূপ, বাইবেল স্পষ্টভাবে সমস্ত ধরনের যৌন অনৈতিকতার নিন্দা করে। (রোমীয় ১:২৬, ১৭, ৩২) আজকের জগতে ঐশিক মানগুলিকে ব্যাপকভাবে অগ্রাহ্য করা হয়। এর ফল কী দাঁড়ায়? বিবাহগুলি ভেঙে যায়। অপরাধগুলি বৃদ্ধি পায়। অসমর্থ করে দেয় এমন যৌন সংক্রামক ব্যাধিগুলি, যা এই বিংশ শতাব্দীতে মহামারীর আকার নিয়েছে, সেগুলি ছড়িয়ে পড়ছে। অবশ্য ভয়াবহ এই এইডস ব্যাধি অনেকাংশে যৌন অনৈতিকতার ফলেই ছড়িয়ে থাকে। কিন্তু, ঈশ্বরের প্রতি এই সম্মানসূচক ভয় সত্য উপাসকদের জন্য কি এক মহান সংরক্ষণ প্রমাণিত হয়নি?—২ করিন্থীয় ৭:১; ফিলিপীয় ২:১২; এছাড়াও দেখুন প্রেরিত ১৫:২৮, ২৯.
এখনই ঈশ্বরকে ভয় করার ফলগুলি
২০. কী দেখায় যে অন্যেরা যিহোবার সাক্ষীদের সুনামের সাথে পরিচিত?
২০ যারা ঈশ্বরকে ভয় করে ও তাঁর বিধিনিয়মগুলি পালন করছে তাদের জন্য অপর্যাপ্ত পরিমাণে আশীর্বাদ রযেছে। একটি ঘটনার কথা বিবেচনা করুন যা ক্রমাগতভাবে প্রমাণ করে যে যিহোবার সাক্ষীরা নৈতিকভাবে ন্যায়পরায়ণ খ্রীষ্টান হিসাবে এক শান্তিপূর্ণ ভ্রাতৃসমাজ গড়ে তুলছে। দক্ষিণ আমেরিকার একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে কিছু সাক্ষী এমন একটি হোটেলে ছিল যেটি এক রাত্রের জন্য একটি ন-সাক্ষীদের দল ব্যবহার করেছিল যাদের উদ্দেশ্যে দেশের প্রেসিডেন্ট কিছু বক্তৃতা দিতে এসেছিলেন। যখন নিরাপত্তার দলটি প্রেসিডেন্টকে সঙ্গে নিয়ে দ্রুতগতিতে লিফ্টে ঢোকে, তখন একজন সাক্ষী সেই লিফ্টে কে আছেন তা না জেনে হঠাৎ করে সেখানে ঢুকে পড়েন। তিনি যা করেছেন তা বুঝতে পারার পরেই, সাক্ষীটি হঠাৎ করে ঢুকে পড়ার জন্য ক্ষমা চান। তিনি তার সম্মেলনের ব্যাজ্টি দেখান ও নিজেকে যিহোবার সাক্ষী হিসাবে শনাক্ত করেন আর বলেন যে প্রেসিডেন্টের তার বিষয় ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। একটু হেসে একজন গার্ড বলে: “যদি সকলেই যিহোবার সাক্ষী হত, তাহলে আমাদের এধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রয়োজন থাকত না।”—যিশাইয় ২:২-৪.
২১. কোন্ পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ আজ লোকেদের সামনে খোলা আছে?
২১ এইধরনের লোকেরাই হল তারা যাদের যিহোবা এখন একত্রীকৃত করেছেন ও প্রস্তুত করছেন ‘মহাক্লেশ থেকে বের হয়ে আসতে’ যার মাধ্যমে এই বিধিব্যবস্থার শেষ হবে। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১০, ১৪) এই সংরক্ষণ হঠাৎ করে আসার কোন ব্যাপার নয়। রক্ষা পেতে হলে একজন ব্যক্তিকে যিহোবাকে ভয় করতে হবে, যথার্থ সার্বভৌম হিসাবে তাঁকে স্বীকার করতে হবে এবং তাঁর কাছে উৎসর্গীকৃত হতে হবে। কিন্তু, আসল বিষয়টি হল যে অধিকাংশই এইধরনের ভীতিকে গড়ে তুলবে না যা হল রক্ষা পাওয়ার চাবিকাঠি। (গীতসংহিতা ২:১-৬) যতগুলি প্রাপ্ত প্রমাণ আছে, তার ভিত্তিতে বলা যায় যে, যিহোবার মনোনীত শাসক, যীশু খ্রীষ্ট, ১৯১৪ সালের সেই সংকটময় বছর থেকে রাজা হিসাবে শাসন করে আসছেন। এর অর্থ হল যে যিহেবার প্রতি স্বাস্থ্যকর ভয় গড়ে তোলা ও তা প্রকাশ করার জন্য ব্যক্তিবিশেষদের যে সুযোগের প্রয়োজন তা দ্রুতগতিতে কমে যাচ্ছে। তবুও, সৃষ্টিকর্তা এই ব্যক্তিবিশেষদের, এমনকি যারা ক্ষমতার পদে রয়েছে, তাদের সাড়া দেওয়ার জন্য অনুমতি দিচ্ছেন: “এখন, রাজগণ! বিবেচক হও; পৃথিবীর বিচারকগণ! শাসন গ্রাহ্য কর। তোমরা সভয়ে সদাপ্রভুর আরাধনা কর, সকম্পে উল্লাস কর। পুত্ত্রকে চুম্বন কর, পাছে তিনি ক্রুদ্ধ হন ও তোমরা পথে বিনষ্ট হও, কারণ ক্ষণমাত্রে তাঁহার ক্রোধ প্রজ্বলিত হইবে। ধন্য তাহারা সকলে, যাহারা তাঁহার শরণাপন্ন।”—গীতসংহিতা ২:৭-১২.
২২. যারা এখনই ঈশ্বরকে ভয় করছে তাদের জন্য কিধরনের ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে?
২২ আসুন আমরা যেন তাদের মধ্যে সামিল হই যারা আমাদের সৃষ্টিকর্তার প্রশংসা করবে যিনি আমাদের রক্ষা করেছেন। অবশ্য, এর জন্য আমাদের প্রয়োজন এখনই সত্য ঈশ্বরকে ভয় করা! (তুলনা করুন গীতসংহিতা ২:১১; ইব্রীয় ১২:২৮; ১ পিতর ১:১৭.) আমাদের অবশ্যই তাঁর ধার্মিক বিধিনিয়মগুলিকে শেখা ও তা মেনে চলা উচিত। প্রকাশিত বাক্য ১৫:৩, ৪ পদে লিখিত মোশি এবং মেষশাবকের গান এক চরম পর্যায় পৌঁছাবে যখন যিহোবা পৃথিবী থেকে সমস্ত দুষ্টতাকে মুছে ফেলবেন এবং পাপের এই দূষিত প্রভাব থেকে মানুষকে ও তার পার্থিব গৃহটিকে রক্ষা করবেন। তারপর, আমরা সমস্ত হৃদয় দিয়ে গাইব: “‘মহৎ ও আশ্চর্য্য তোমার ক্রিয়া সকল, হে প্রভু ঈশ্বর, সর্ব্বশক্তিমান্; ন্যায্য ও সত্য তোমার মার্গ সকল, হে জাতিগণের রাজন্! হে প্রভু, কে না ভীত হইবে? এবং তোমার নামের গৌরব কে না করিবে?’”
আপনার কি মনে আছে?
◻ আমাদের স্বাস্থ্যকর ভয় পাওয়ার যোগ্যতা কেন যিহোবার আছে?
◻ লোহিত সমুদ্রে ঈশ্বর যা করেছিলেন তার দ্বারা কী প্রকাশ পেয়েছিল?
◻ যিহোবার প্রতি সম্মানসূচক ভয় প্রদর্শন করার ফলে কোন্ উপকারগুলি আসে?
◻ এখনই যারা সত্য ঈশ্বরকে ভয় করে তাদের জন্য কোন্ ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে?