“আশ্রয়-নগরে” থাকুন ও জীবন উপভোগ করুন!
“মহাযাজকের মৃত্যু পর্য্যন্ত আপন আশ্রয়-নগরে থাকা তাহার উচিত ছিল।”—গণনাপুস্তক ৩৫:২৮.
১. রক্তের প্রতিশোধকারী কে আর শীঘ্রই তিনি কোন্ পদক্ষেপ নেবেন?
যিহোবার মনোনীত রক্ত প্রতিশোধকারী, যীশু খ্রীষ্ট, সংঘাত করতে এগিয়ে আসছেন। তাঁর দূতবাহিনীর সাহায্যে, এই প্রতিশোধকারী সেই সব ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শীঘ্রই পদক্ষেপ নেবেন যারা অনুতপ্তহীনরূপে রক্তের দায়ে দায়ী। হ্যাঁ, শীঘ্রই আগত “মহাক্লেশ” এর সময় যীশু ঈশ্বরের ঘাতক হিসাবে কাজ করবেন। (মথি ২৪:২১, ২২; যিশাইয় ২৬:২১) মানবজাতিকে তখন তাদের রক্তের দায়ের মুখোমুখি নিয়ে আসা হবে।
২. একমাত্র প্রকৃত আশ্রয়ের স্থান কোন্টি এবং কোন্ প্রশ্নগুলির উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন?
২ রক্ষা পাওয়ার উপায় হল রূপক আশ্রয় নগরের পথে প্রবেশ করা ও নিজের জীবন নিয়ে সেখানে দৌঁড়ান! যদি সেই নগরে প্রবেশাধিকার পাওয়া যায়, তাহলে আশ্রিতদের সেখানেই থাকতে হবে, যেহেতু সেটাই হল আশ্রয়ের প্রকৃত স্থান। কিন্তু আপনি হয়ত চিন্তা করতে পারেন যে, ‘যেহেতু আমাদের মধ্যে অধিকাংশই কখনও কাউকে হত্যা করেনি, তাহলে কিভাবে আমরা রক্তের দায়ে দায়ী? যীশু কেন রক্তের প্রতিশোধকারী? আধুনিক-কালের আশ্রয় নগরটি কী? কেউ কি কখনও নির্ভয়ে এটিকে পরিত্যাগ করতে পারে?’
আমরা কি প্রকৃতই রক্তের দায়ে দায়ী?
৩. মোশির নিয়মের কোন্ দিকটি আমাদের সাহায্য করবে বুঝতে যে পৃথিবীর কোটি কোটি লোক রক্তের দায়ে দায়ী?
৩ মোশির নিয়মের একটি দিক আমাদের সাহায্য করবে বুঝতে যে পৃথিবীর কোটি কোটি লোকেরা রক্তের দায়ে দায়ী। ঈশ্বর ইস্রায়েলের উপর রক্তপাতের দলগত দায়িত্বটি আরোপ করেন। যদি কাউকে নিহত অবস্থায় পাওয়া যায় আর তার হত্যাকারী যদি অজ্ঞেয় থেকে যায়, তাহলে বিচারকদের পরিমাপ করতে হত যে পারিপার্শ্বিক নগরগুলির মধ্যে কোন্টি সবচাইতে নিকটতম। আপাতদৃষ্টিতে সেই রক্তের দায়ে দায়ী নগরটির উপর থেকে দোষ সরিয়ে নেওয়ার জন্য, প্রাচীনদের একটি অল্পবয়সী, অকর্মণ্য গরুর গলা অনুর্বর এক উপত্যকায় কেটে ফেলতে হত। এটি লেবীয় যাজকদের সামনে করতে হত ‘কারণ সদাপ্রভু বিবাদ ও আঘাতের বিচার করতে তাদের মনোনীত করেছিলেন।’ শহরের প্রাচীনেরা গোহত্যা করার পর হাত ধুয়ে নিয়ে বলতেন: “আমাদের হস্ত এই রক্তপাত করে নাই, আমাদের চক্ষু ইহা দেখে নাই; হে সদাপ্রভু, তুমি আপনার প্রজা যে ইস্রায়েলকে মুক্ত করিয়াছ, তাহাকে ক্ষমা কর; আপনার প্রজা ইস্রায়েলের মধ্যে নিরপরাধের রক্তপাতজন্য দোষ থাকিতে দিও না।” (দ্বিতীয় বিবরণ ২১:১-৯) যিহোবা ঈশ্বর চাননি যে ইস্রায়েল দেশ রক্তের জন্য দূষিত হোক অথবা তার লোকেরা দলগতভাবে রক্তের দায়ে দায়ী হোক।
৪. মহতী বাবিলের রক্তের দায়ে দায়ী হওয়ার কোন্ রেকর্ড রয়েছে?
৪ হ্যাঁ, দলগত বা সাম্প্রদায়িকভাবে রক্তের দায়ে দায়ী হওয়ার একটা বিষয় আছে। বিবেচনা করে দেখুন যে মহতী বাবিল, মিথ্যা ধর্মের বিশ্ব সাম্রাজ্যের উপর কী সাংঘাতিক রক্তের দায় রয়েছে। এমনকি, সে যিহোবার দাসেদের রক্ত পান করে মত্ত হয়েছে! (প্রকাশিত বাক্য ১৭:৫, ৬; ১৮:২৪) খ্রীষ্টজগতের ধর্মগুলি দাবি করে যে তারা শান্তিরাজকে অনুসরণ করে, কিন্তু যুদ্ধ, ধর্মীয় বিচার, প্রাণঘাতী ক্রুসেডগুলি তাকে ঈশ্বরের চোখে রক্তের দায়ে দায়ী করে তুলেছে। (যিশাইয় ৯:৬; যিরমিয় ২:৩৪) বস্তুতপক্ষে, এই শতাব্দীতে দুটি বিশ্বযুদ্ধে যে কোটি কোটি লোক মারা গেছে তার জন্য সে অবশ্যই দোষী। সুতরাং, মিথ্যা ধর্ম যারা পালন করে এবং মানুষের যুদ্ধকে যারা সমর্থন করে বা তাতে অংশ নেয়, তারা ঈশ্বরের চোখে রক্তের দায়ে দায়ী।
৫. কিছু লোকের সাথে ইস্রায়েলের অনিচ্ছাকৃত নরঘাতকের কী মিল রয়েছে?
৫ কিছু লোক জেনেবুঝে বা অসতর্কতার দরুণ মানুষের মৃত্যু ঘটিয়েছে। অন্যেরা আবার সমষ্টিগতভাবে হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছে, সম্ভবত ধর্মীয় নেতাদের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে, যারা তাদের বলেছে যে এটি হল ঈশ্বরের ইচ্ছা। এছাড়াও আরও কিছু লোক আছে যারা ঈশ্বরের দাসেদের তাড়না ও হত্যা করেছে। এমনকি যদি আমরা এগুলি নাও করে থাকি, তবুও ঈশ্বরের নিয়ম ও ইচ্ছা না জানার ফলে আমরা সাম্প্রদায়িকরূপে মানব জীবন নষ্ট করার জন্য দায়ী। আমরা ঠিক সেই অনিচ্ছাকৃত নরঘাতকের তুল্য ‘যে পূর্ব্বে প্রতিবাসীকে দ্বেষ না করিয়া অজ্ঞানতঃ তাহাকে হত্যা করিয়াছিল।’(দ্বিতীয় বিবরণ ১৯:৪) এই ধরনের ব্যক্তিদের অবশ্যই উচিত ঈশ্বরের করুণার জন্য মিনতি করা এবং রূপক আশ্রয় নগরে পলায়ন করা। তা না হলে তারা মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে রক্তপ্রতিশোধকারীর মুখোমুখি হবে।
যীশুর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাগুলি
৬. কেন বলা যেতে পারে যে যীশু হলেন মানবজাতির সবচাইতে নিকটতম আত্মীয়?
৬ ইস্রায়েলে, রক্তের প্রতিশোধকারী ছিল নিহত ব্যক্তির সবচাইতে নিকটতম আত্মীয়। পৃথিবীতে যাদের হত্যা করা হয়েছে এবং বিশেষকরে যিহোবার নিহত দাসেদের হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য, আজকের দিনে রক্তের প্রতিশোধকারীকে সমগ্র মানবজাতির আত্মীয় হতে হবে। আর সেই ভূমিকা যীশু খ্রীষ্টের দ্বারা পালিত হচ্ছে। তিনি সিদ্ধ মানুষ হিসাবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। মুক্তির মূল্য হিসাবে যীশু তাঁর নিষ্পাপ জীবন মৃত্যুতে বিসর্জন দেন এবং স্বর্গে পুনরুত্থিত হওয়ার পর, তিনি পাপী আদমের মৃতপ্রায় বংশধরদের জন্য ঈশ্বরের কাছে তাঁর জীবনের মূল্য প্রদান করেন। এইভাবে খ্রীষ্ট মানবজাতির পরিত্রাতা, আমাদের সবচাইতে নিকটতম আত্মীয় হন—এক যোগ্য রক্তের প্রতিশোধকারী। (রোমীয় ৫:১২; ৬:২৩; ইব্রীয় ১০:১২) তাঁর অভিষিক্ত পদচিহ্ন অনুগামীদের কাছে যীশু, ভাই হিসাবে পরিচিত ছিলেন। (মথি ২৫:৪০, ৪৫; ইব্রীয় ২:১১-১৭) স্বর্গীয় রাজা হিসাবে তিনি তাদের কাছে “সনাতন পিতা” হন যারা তাঁর পার্থিব প্রজা হিসাবে তাঁর মুক্তির মূল্যের দ্বারা উপকৃত হবে। এরা চিরকাল বেঁচে থাকবে। (যিশাইয় ৯:৬, ৭) অতএব যিহোবা যথার্থভাবে মানবজাতির এই আত্মীয়কে রক্তের প্রতিশোধকারী হিসাবে মনোনীত করেছেন।
৭. মহান মহাযাজক হিসাবে, যীশু মানবজাতির জন্য কী করেন?
৭ এছাড়াও যীশু হলেন একজন নিষ্পাপ, পরীক্ষিত এবং সংবেদনশীল মহাযাজক (ইব্রীয় ৪:১৫) এই যোগ্যতা নিয়েই তিনি তাঁর পাপের-প্রায়শ্চিত্তমূলক বলিদানের মূল্যটি মানবজাতির উপর প্রয়োগ করেন। আশ্রয় নগরগুলি তৈরি করা হয়েছিল “ইস্রায়েল-সন্তানদের জন্য, এবং তাহাদের মধ্যে প্রবাসী ও বিদেশীর জন্য।” (গণনাপুস্তক ৩৫:১৫) অতএব এই মহান মহাযাজক প্রথমে তাঁর মুক্তির মূল্যরূপের প্রয়োগ তাঁর অভিষিক্ত অনুগামীদের, “ইস্রায়েল-সন্তানদের” উপর করেন। এখন এটি রূপক আশ্রয় নগরে অবস্থিত ‘প্রবাসীদের’ এবং ‘বিদেশীরদের’ উপর প্রয়োগ করা হচ্ছে। প্রভু যীশু খ্রীষ্টের এই “অপর মেষ” আশা করে যে তারা পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকবে।—যোহন ১০:১৬, NW; গীতসংহিতা ৩৭:২৯, ৩৪.
আজকের দিনের আশ্রয় নগর
৮. রূপক আশ্রয় নগরটি কী?
৮ রূপক আশ্রয় নগরটি কী? এটি ছয়টি লেবীয়দের আশ্রয় নগরের মধ্যে একটি এবং ইস্রায়েলের মহাযাজকের গৃহ হিব্রোণের মত কোন ভৌগলিক স্থান নয়। রক্তের পবিত্রতা সম্পর্কিত তাঁর আদেশ অমান্য করার ফলে যে মৃত্যু, তার থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ঈশ্বরের যে ব্যবস্থা সেটিই হল আজকের দিনের আশ্রয় নগর। (আদিপুস্তক ৯:৬) ইচ্ছাকৃতই হোক বা অনিচ্ছাকৃতই হোক এই নিয়মের প্রত্যেক লঙ্ঘনকারীকে মহাযাজক যীশু খ্রীষ্টের রক্তের উপর বিশ্বাস স্থাপন করার দ্বারা ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা এবং তার পাপমোচন সম্বন্ধে প্রার্থনা করতেই হবে। অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা যাদের স্বর্গীয় আশা রয়েছে এবং “বিস্তর লোক” যাদের পার্থিব প্রত্যাশা আছে তারা যীশুর এই পাপের-প্রায়শ্চিত্তমূলক বলিদানের উপকার গ্রহণ করেছে এবং তারাই এই রূপক আশ্রয় নগরে রয়েছে।—প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১৪; ১ যোহন ১:৭; ২:১, ২.
৯. কিভাবে তার্ষের শৌল রক্ত সম্বন্ধীয় ঈশ্বরের আজ্ঞা লঙ্ঘন করেছিলেন এবং কিভাবে তিনি তার মনোভাবের পরিবর্তন দেখিয়েছিলেন?
৯ খ্রীষ্টান হওয়ার আগে প্রেরিত পৌল রক্ত সম্বন্ধীয় আদেশটি লঙ্ঘন করেছিলেন। তার্ষের শৌল হিসাবে, তিনি যীশুর অনুগামীদের তাড়না করেছিলেন এবং এমনকি তাদের হত্যাকেও অনুমোদন করেছিলেন। “কিন্তু,” পৌল বলেছিলেন, “দয়া পাইয়াছি, কেননা না বুঝিয়া অবিশ্বাসের বশে সেই সকল কর্ম্ম করিতাম।” (১ তীমথিয় ১:১৩; প্রেরিত ৯:১-১৯) শৌলের যে অনুতাপের মনোভাব ছিল তা পরবর্তীকালে তার বিশ্বাসের বহু কর্মের দ্বারা প্রমাণিত হয়েছিল। কিন্তু রূপক আশ্রয় নগরে প্রবেশ করার জন্য মুক্তির মূল্যের উপর বিশ্বাস করা ছাড়াও আরও অতিরিক্ত কিছুর প্রয়োজন আছে।
১০. কিভাবে উত্তম বিবেক অর্জন করা যায় এবং এটিকে বজায় রাখার জন্য কী করতে হবে?
১০ একজন অনিচ্ছাকৃত নরঘাতক ইস্রায়েলের যে কোন একটি আশ্রয় নগরে থাকতে পারত যদি সে প্রমাণ করত যে রক্তপাতের ক্ষেত্রে ঈশ্বরের সামনে তার উত্তম বিবেক আছে। এই উত্তম বিবেক পাওয়ার জন্য, আমাদের অবশ্যই যীশুর মুক্তির মূল্যের উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে, নিজেদের পাপ সম্বন্ধে অনুতপ্ত হতে হবে এবং আমাদের জীবনধারার পরিবর্তন করতে হবে। খ্রীষ্টের মাধ্যমে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনাসহকারে উৎসর্গ করার দ্বারা আমরা উত্তম বিবেকের জন্য অনুরোধ জানাতে পারি এবং জলে বাপ্তিস্ম নেওয়ার দ্বারা তা চিত্রিত করতে পারি। (১ পিতর ৩:২০, ২১) এই উত্তম বিবেক আমাদের যিহোবার সাথে পবিত্র সম্পর্ক বজায় রাখতে সাহায্য করবে। উত্তম বিবেক বজায় রাখার একমাত্র উপায় হল, ঈশ্বরের আজ্ঞা মেনে চলা এবং রূপক আশ্রয় নগরে আমাদের যে কাজ করতে দেওয়া হয়েছে তা করা ঠিক যেমন প্রাচীন ইস্রায়েল নগরগুলিতে, আশ্রিতদের নিয়ম মেনে চলতে হত এবং তাদের নির্বাচিত কাজগুলি করতে হত। আজকে যিহোবার লোকেদের প্রধান কাজ হল রাজ্যের বার্তা প্রচার করা। (মথি ২৪:১৪; ২৮:১৯, ২০) এই কাজ করা আমাদের সাহায্য করবে বর্তমান দিনের আশ্রয় নগরে এক কার্যকারী অধিবাসী হিসাবে বসতি করতে।
১১. আজকের দিনের আশ্রয় নগরে সুরক্ষিত অবস্থায় থাকার জন্য কোন্ বিষয়টিকে এড়িয়ে চলা অবশ্যই উচিত?
১১ আজকের এই আশ্রয় নগরকে পরিত্যাগ করার অর্থ হবে নিজেদের ধ্বংসের মুখে উন্মুক্ত করা, কারণ রক্তের প্রতিশোধকারী শীঘ্রই সেই সব ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবেন যারা রক্তের দায়ে দায়ী। এই নগরের সুরক্ষিত প্রাচীরের অথবা এর চারণভূমির বাইরে এক বিপজ্জনক এলাকায় নিজেদের ধরা দেওয়ার সময় এটি নয়। যদি আমরা মহাযাজকের পাপের প্রায়শ্চিত্তমূলক বলিদানের উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলি তাহলে আমরা নিজেদের এই রূপক আশ্রয় নগরের বাইরে দেখতে পাব। (ইব্রীয় ২:১; ৬:৪-৬) এছাড়াও যদি আমরা জাগতিক ধারাগুলিকে গ্রহণ করি, যিহোবার সংগঠনের সীমারেখায় দাঁড়িয়ে থাকি অথবা আমাদের স্বর্গীয় পিতার ধার্মিক মানগুলি থেকে সরে যাই, তাহলে অবশ্যই আমরা নিরাপদে থাকতে পারব না।—১ করিন্থীয় ৪:৪.
আশ্রয় নগর থেকে মুক্তি পাওয়া
১২. পূর্বেকার রক্তের দায়ে দায়ী ব্যক্তিকে কতদিন রূপক আশ্রয় নগরে থাকতে হবে?
১২ “মহাযাজকের মৃত্যু পর্য্যন্ত” একজন অনিচ্ছাকৃত নরঘাতককে ইস্রায়েলের আশ্রয় নগরে থাকতে হত। (গণনাপুস্তক ৩৫:২৮) অতএব কতদিন একজন পূর্বেকার রক্তের দায়ে দোষী ব্যক্তিকে রূপক আশ্রয় নগরে থাকতে হবে? যতক্ষণ না মহাযাজক যীশু খ্রীষ্টের পরিচর্যার প্রয়োজন আর তাদের হবে না। “যাহারা তাঁহা দিয়া ঈশ্বরের নিকটে উপস্থিত হয়, তাহাদিগকে তিনি সম্পূর্ণরূপে পরিত্রাণ করিতে পারেন,” পৌল বলেছিলেন। (ইব্রীয় ৭:২৫) যতদিন পাপের কোন লেশ এবং পূর্বেকার রক্তের দায়ে দায়ী হওয়ার বিষয়টি চলতে থাকবে, ততদিন মহাযাজকের সাহায্যের প্রয়োজন হবে যাতে করে অসিদ্ধ মানুষেরা ঈশ্বরের কাছে ধার্মিক মান নিয়ে দাঁড়াতে পারে।
১৩. বর্তমান-দিনের ‘ইস্রায়েল সন্তান,’ কারা এবং তাদের কতদিন “আশ্রয় নগরে” থাকতে হবে?
১৩ মনে রাখবেন যে প্রাচীন কালের আশ্রয় নগরগুলি “ইস্রায়েল-সন্তানদের” জন্য, প্রবাসী ও বিদেশীদের জন্য স্থাপন করা হয়েছিল। ‘ইস্রায়েল সন্তানেরা’ হল আত্মিক ইস্রায়েল। (গালাতীয় ৬:১৬) যতদিন তারা এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে ততদিন তাদের এই রূপক আশ্রয় নগরে থাকতে হবে। কেন? কারণ তারা এখনও অসিদ্ধ দেহে রয়েছে এবং তাই তাদের স্বর্গীয় মহাযাজকের প্রায়শ্চিত্তমূলক বলিদানের প্রয়োজন আছে। কিন্তু যখন এই অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের মৃত্যু হয় আর আত্মিক জীবন নিয়ে স্বর্গে পুনরুত্থিত হয়, তখন তাদের আর মহাযাজকের প্রায়শ্চিত্তমূলক বলিদানের প্রয়োজন হয় না; তারা চিরকালের জন্য তাদের দেহ এবং রক্তের দায় থেকে মুক্তি পায়। এই অভিষিক্ত পুনরুত্থিত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে, মহাযাজক প্রায়শ্চিত্ত ও সুরক্ষামূলক ভূমিকার পরিপ্রেক্ষিতে মৃত্যু বরণ করেন।
১৪. যাদের স্বর্গীয় আশা আছে তাদের বর্তমান দিনের আশ্রয় নগরে থাকতে আর কী বাধ্য করে?
১৪ মানবিক স্বভাবই তাদের বাধ্য করায় যে, যে সব ব্যক্তিরা স্বর্গে “খ্রীষ্টের সহদায়াদ” হবে তাদের রূপক আশ্রয় নগরে থাকতে হবে যতক্ষণ না তারা বিশ্বস্ততার সাথে তাদের পার্থিব কাজ শেষ করার পর মৃত্যু বরণ করে। যখন তাদের মৃত্যু হয় তখন তারা চিরকালের জন্য মানবিক স্বভাব পরিত্যাগ করে। (রোমীয় ৮:১৭; প্রকাশিত বাক্য ২:১০) কেবলমাত্র যাদের মানবিক স্বভাব রয়েছে শুধু তাদেরই উপর যীশুর বলিদান প্রযোজ্য। অতএব, মহাযাজকের মৃত্যু সেই সব আত্মিক ইস্রায়েলের অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেই ঘটে যখন তারা আত্মিক প্রাণী হিসাবে পুনরুত্থিত হয়ে অনন্তকালের জন্য স্বর্গে “ঈশ্বরীয় স্বভাবের সহভাগী” হবে।—২ পিতর ১:৪.
১৫. আধুনিক দিনের “প্রবাসী” ও “বিদেশী” কারা এবং মহান মহাযাজক তাদের জন্য কী করবেন?
১৫ আধুনিক-কালের ‘প্রবাসী’ ও ‘বিদেশীদের’ ক্ষেত্রে কখন মহাযাজকের “মৃত্যু” ঘটে, যাতে করে তারা রূপক আশ্রয় নগরটি ত্যাগ করতে পারে? বিস্তর লোকের এই সদস্যেরা মহাক্লেশের ঠিক পরেই আশ্রয় নগর থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। কেন? কারণ তখনও তারা তাদের অসিদ্ধ, পাপপূর্ণ দেহে অবস্থান করবে এবং তাদের মহাযাজকের রক্ষণের প্রয়োজন থাকবে। সহস্র বছর ধরে তাঁর রাজকীয় ও যাজকীয় ক্ষমতার অধীনে প্রায়শ্চিত্তমূলক পরিচর্যার সুযোগ গ্রহণ করার দ্বারা, তারা মানবিক সিদ্ধতায় পৌঁছাবে। এরপর যীশু, শয়তান ও তার মন্দ দূতেদের অল্পসময়ের জন্য শৃঙ্খলমুক্ত করার দ্বারা ঈশ্বরের সামনে বিশ্বস্ততার এক শেষ ও অনন্তকালীন সিদ্ধান্তমূলক পরীক্ষার জন্য তাদের পেশ করবেন। যেহেতু তারা এই পরীক্ষা ঐশিক অনুমোদনের দ্বারা অতিক্রম করতে পারবে, তাই যিহোবা তাদের ধার্মিক বলে ঘোষণা করবেন। এইভাবে তারা সম্পূর্ণরূপে মানব সিদ্ধতায় পৌঁছাতে পারবে।—১ করিন্থীয় ১৫:২৮; প্রকাশিত বাক্য ২০:৭-১০.a
১৬. কখন মহাক্লেশ থেকে রক্ষাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের আর মহাযাজকের প্রায়শ্চিত্তমূলক পরিচর্যার প্রয়োজন হবে না?
১৬ অতএব, মহাক্লেশ থেকে রক্ষাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের খ্রীষ্টের সহস্র বছর শাসনের শেষ অবধি এই রূপক আশ্রয় নগরে থাকার দ্বারা তাদের উত্তম বিবেককে বজায় রাখতে হবে। সিদ্ধ মানুষ হিসাবে, তাদের আর মহাযাজকের প্রায়শ্চিত্তমূলক কাজের প্রয়োজন হবে না এবং তারা তাঁর রক্ষণ থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। তখনই যীশু মহাযাজক হিসাবে তাদের ক্ষেত্রে মৃত্যু বরণ করবেন এবং তাঁকে আর তাদের হয়ে বলিদানের দ্বারা রক্তের শোধন করতে হবে না। সেই সময় তারা এই রূপক আশ্রয় নগর পরিত্যাগ করতে পারবে।
১৭. খ্রীষ্টের সহস্র বছর রাজত্ব কালে যারা পুনরুত্থিত হবে তাদের রূপক আশ্রয় নগরে প্রবেশ করা ও সেখানে থাকার কেন প্রয়োজন হবে না?
১৭ যীশুর সহস্র বছর শাসনের সময় যারা পুনরুত্থিত হবে তাদেরও কি মহাযাজকের মৃত্যু পর্যন্ত এই রূপক আশ্রয় নগরে থাকতে হবে? না, কারণ মৃত্যুর মাধ্যমে তারা তাদের পাপের দণ্ড দিয়ে ফেলেছে। (রোমীয় ৬:৭; ইব্রীয় ৯:২৭) যাই হোক না কেন, মহাযাজক তাদের সিদ্ধতায় পৌঁছাতে সাহায্য করবেন। যদি তারা সফলতার সাথে সহস্র বছরের শেষে অন্তিম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে, তাহলে ঈশ্বরও তাদের ধার্মিক বলে ঘোষণা করবেন এবং পৃথিবীতে অনন্ত জীবনের নিশ্চয়তা দেবেন। অবশ্য, ঈশ্বরের যোগ্যতা অনুসারে চলার ক্ষেত্রে ব্যর্থতা সেই সমস্ত মানুষের উপর দণ্ডনীয় বিচার ও ধ্বংস নিয়ে আসবে যারা বিশ্বস্ততা রক্ষাকারী হিসাবে শেষ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারবে না।
১৮. যীশুর রাজত্ব ও যাজকত্বের পরিপ্রেক্ষিতে কোন্ বিষয়টি মানবজাতির সাথে চিরকাল থাকবে?
১৮ পরিশেষে ইস্রায়েলীয় মহাযাজদের মৃত্যু হয়। কিন্তু যীশু “মল্কীষেদকের রীতি অনুযায়ী অনন্তকালীন মহাযাজক হইয়াছেন।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (ইব্রীয় ৬:১৯, ২০; ৭:৩) সুতরাং মহাযাজক হিসাবে মানবজাতির মধ্যস্থতা করার ক্ষেত্রে যীশুর যে অধিকার তার বিলুপ্তির অর্থ নয় যে তাঁর জীবনের শেষ। রাজা ও মহাযাজক হিসাবে তাঁর পরিচর্যার উত্তম প্রভাব মানবজাতির উপর চিরকাল থাকবে এবং এই ক্ষমতায় তাদের সাহায্য করার জন্য মানুষেরা চিরকাল তাঁর কাছে ঋণী থাকবে। এছাড়াও, অনন্তকাল ধরে যিহোবার পবিত্র উপাসনায় যীশু নেতৃত্ব নিয়ে যাবেন।—ফিলিপীয় ২:৫-১১.
আমাদের জন্য মূল্যবান শিক্ষাগুলি
১৯. আশ্রয় নগরগুলির এই ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ঘৃণা ও প্রেম সম্বন্ধে কোন্ শিক্ষা লাভ করা যেতে পারে?
১৯ আশ্রয় নগরগুলির ব্যবস্থা থেকে আমরা অনেক শিক্ষা পেতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, নিহত ব্যক্তির প্রতি হত্যা করার বিদ্বেষ নিয়ে কোন নরঘাতককে আশ্রয় নগরে থাকার অনুমতি দেওয়া হত না। (গণনাপুস্তক ৩৫:২০, ২১) সুতরাং কিভাবে একজন, রূপক আশ্রয় নগরে থেকে হৃদয়ের মধ্যে ভাইয়ের প্রতি বিদ্বেষ গড়ে তোলার প্রশ্রয় দিতে পারে? “যে আপন ভ্রাতাকে ঘৃণা করে, সে নরঘাতক,” প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন, “এবং তোমরা জান, অনন্ত জীবন কোন নরঘাতকের অন্তরে অবস্থিতি করে না।” অতএব আসুন, আমরা “পরস্পর প্রেম করি; কারণ প্রেম ঈশ্বরের।”—১ যোহন ৩:১৫; ৪:৭.
২০. রক্তের প্রতিশোধকারীর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তাদের কী করা উচিত যারা এই রূপক আশ্রয় নগরে আছে?
২০ রক্তের প্রতিশোধকারীর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য একজন অনিচ্ছাকৃত নরঘাতককে আশ্রয় নগরের মধ্যে থাকতে হত এবং এর চারণভূমির বাইরে সে ঘুরে বেড়াতে পারত না। রূপক আশ্রয় নগরে যারা থাকে তাদের সম্বন্ধে কী? মহান রক্ত প্রতিশোধকারীর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তাদের অবশ্যই এই নগর ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত নয়। ফাঁদের মধ্যে জড়িয়ে গিয়ে তথাকথিত চারণভূমির সীমারেখায় পৌঁছানোর থেকে তাদের নিশ্চয়ই উচিত নিজেদের রক্ষা করা। তাদের সতর্ক থাকা উচিত যাতে করে শয়তানের জগতের প্রতি প্রেম তাদের হৃদয়ের মধ্যে গড়ে না ওঠে। এর জন্য হয়ত প্রার্থনা ও প্রচেষ্টার প্রয়োজন হতে পারে, কিন্তু এর ওপরে তাদের জীবন নির্ভর করছে।—১ যোহন ২:১৫-১৭; ৫:১৯.
২১. আজকের দিনের আশ্রয় নগরে যারা আছে তাদের দ্বারা কোন্ পুরস্কারদায়ক কাজ সম্পাদিত হচ্ছে?
২১ প্রাচীন আশ্রয় নগরগুলিতে অনিচ্ছাকৃত নরঘাতকদের কর্মশীল ব্যক্তি হতে হত। ঠিক একই রকমভাবে, অভিষিক্ত ‘ইস্রায়েল-সন্তানেরা’ শস্যছেদনকারী কর্মী ও রাজ্যের প্রচারক হিসাবে এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছে। (মথি ৯:৩৭, ৩৮; মার্ক ১৩:১০) বর্তমানের আশ্রয় নগরে “প্রবাসী” ও “বিদেশী” হিসাবে, খ্রীষ্টানেরা, যাদের পার্থিব আশা রয়েছে তারা পৃথিবীতে এখনও অভিষিক্তদের সাথে এই জীবনরক্ষাকারী কাজে অংশ নিতে পারাকে এক সুযোগ বলে মনে করে। আর এটি কতই না পুরস্কারদায়ক কাজ! যারা এই রূপক আশ্রয় নগরে বিশ্বস্ততার সাথে কাজ করবে তারা রক্তপ্রতিশোধকারীর হাতে অনন্ত মৃত্যুকে এড়িয়ে চলতে পারবে। বরঞ্চ, তারা ঈশ্বরের মহাযাজক হিসাবে তাঁর পরিচর্যা থেকে অনন্তকালীন উপকারগুলি লাভ করবে। আপনি কি এই আশ্রয় নগরে থাকবেন আর অনন্তকাল বেঁচে থাকার সুযোগ নেবেন?
[পাদটীকাগুলো]
a প্রহরীদুর্গ (ইংরাজি), ডিসেম্বর ১৫, ১৯৯১, পৃষ্ঠা ১২, অনুচ্ছেদ ১৫, ১৬ দেখুন।
আপনি কিভাবে উত্তর দেবেন?
◻ কেন বলা যেতে পারে যে পৃথিবীর কোটি কোটি লোকেরা রক্তের দায়ে দায়ী?
◻ মানবজাতির ক্ষেত্রে যীশু খ্রীষ্ট কোন্ ভূমিকা পালন করছেন?
◻ রূপক আশ্রয় নগরটি কী এবং কিভাবে একজন সেখানে প্রবেশ করে?
◻ কখন মানুষেরা এই রূপক আশ্রয় নগর থেকে মুক্তি পাবে?
◻ আশ্রয় নগরগুলির ব্যবস্থা থেকে আমরা কোন্ মূল্যবান শিক্ষা পেতে পারি?
[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
আপনি কি জানেন যীশু খ্রীষ্টের দ্বারা কোন্ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাগুলি পালিত হচ্ছে?