সকলে যিহোবার গৌরব করুক!
“দীপ্তির দেশে তারা অবশ্যই যিহোবার গৌরব করবে।”—যিশাইয় ২৪:১৫, NW.
১. যিহোবার নাম তাঁর ভাববাদীদের দ্বারা কিভাবে সম্মানিত হয়েছিল, তা আজকে খ্রীষ্টীয়জগতে কোন্ মনোভাবের সাথে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ?
যিহোবা—ঈশ্বরের কীর্তিমান নাম! প্রাচীন কালের বিশ্বস্ত ভাববাদীরা সেই নামের বিষয়ে কথা বলতে কতই না আনন্দিত হতেন! অতিশয় উল্লাসের সাথে তারা তাদের সার্বভৌম প্রভু, যিহোবাকে গৌরবান্বিত করতেন, যাঁর নাম তাঁকে মহান উদ্দেশ্যকারী হিসাবে শনাক্ত করে। (যিশাইয় ৪০:৫; যিরমিয় ১০:৬, ১০; যিহিষ্কেল ৩৬:২৩) এমনকি তথা-কথিত ক্ষুদ্র ভাববাদীরাও যিহোবাকে গৌরব প্রদানে অত্যন্ত মুখর ছিলেন। এদের মধ্যে একজন ছিলেন হগয়। হগয়ের পুস্তকটি, শুধুমাত্র ৩৮টি পদ নিয়ে গঠিত হয়েছে, যার মধ্যে ঈশ্বরের নাম ৩৫ বার ব্যবহৃত হয়েছে। এইরূপ ভবিষ্যদ্বাণী নিষ্প্রাণ বলে মনে হয় যখন যিহোবার মূল্যবান নামটি “প্রভু” উপাধি দ্বারা স্থানান্তরিত হয়, যেমন খ্রীষ্টীয়জগতের অত্যন্ত উচ্চমানের প্রেরিতেরা তাদের বাইবেল অনুবাদগুলিতে ভাষান্তরিত করে থাকেন।—তুলনা করুন ২ করিন্থীয় ১১:৫.
২, ৩. (ক) ইস্রায়েলের পুনঃস্থাপন সম্পর্কিত একটি উল্লেখযোগ্য ভবিষ্যদ্বাণী কিভাবে পরিপূর্ণ হয়েছিল? (খ) যিহূদী অবশিষ্টাংশেরা এবং তাদের সঙ্গীরা কোন্ আনন্দে অংশ গ্রহণ করেছিল?
২ যিশাইয় ১২:২ পদে নামটির একটি দ্বৈত রূপ ব্যবহৃত হয়েছে।a ভাববাদী ঘোষণা করেন: “দেখ, ঈশ্বর আমার পরিত্রাণ; আমি সাহস করিব, ভীত হইব না; কেননা সদাপ্রভু [“যাঃ,” NW] যিহোবা আমার বল ও গান; তিনি আমার পরিত্রাণ হইয়াছেন।” (এছাড়াও যিশাইয় ২৬:৪ পদ দেখুন।) এই কারণে, বাবিলনীয় বন্দীত্ব থেকে ইস্রায়েলীয়দের মুক্তির প্রায় ২০০ বছর পূর্বে, যাঃ যিহোবা তাঁর ভাববাদী যিশাইয়ের মাধ্যমে আশ্বাস দিচ্ছিলেন যে তিনি তাদের পরাক্রমশালী পরিত্রাতা। সেই বন্দীত্ব সা.শ.পূ. ৬০৭ থেকে ৫৩৭ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। যিশাইয় এও লিখেছিলেন: “আমি সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW] সর্ব্ববস্তু-নির্ম্মাতা, . . . তিনি কোরসের উদ্দেশে কহেন, আমার পালরক্ষক, সে আমার সমস্ত মনোরথ সিদ্ধ করিবে। তিনি যিরূশালেমের বিষয়ে বলেন, সে পুনর্নির্ম্মিত হইবে, এবং মন্দিরকে বলেন, তোমার ভিত্তিমূল স্থাপিত হইবে।” এই কোরস কে ছিলেন? উল্লেখযোগ্যভাবে, তিনি পারস্য-রাজ কোরস প্রমাণিত হয়েছিলেন, যিনি সা.শ.পূ. ৫৩৯ সালে বাবিলন জয় করেছিলেন।—যিশাইয় ৪৪:২৪, ২৮.
৩ যিশাইয় দ্বারা লিপিবদ্ধকৃত যিহোবার বাক্যগুলির সত্যতাস্বরূপ, কোরস বন্দী ইস্রায়েলদের প্রতি এই ঘোষণা জারি করেছিলেন: “তোমাদের মধ্যে, তাঁহার সমস্ত প্রজার মধ্যে, যে কেহ হউক, তাহার ঈশ্বর তাহার সহবর্ত্তী হউন; সে যিহূদা দেশস্থ যিরূশালেমে যাউক, ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর যিরূশালেমস্থ গৃহ নির্ম্মাণ করুক; তিনিই ঈশ্বর।” এক অত্যন্ত আনন্দিত যিহূদী অবশিষ্টাংশদের সাথে ন-ইস্রায়েলীয় নথীনীয়বর্গ এবং শলোমনের দাসেদের সন্তানবর্গ যিরূশালেমে ফিরে এসেছিল। তারা কালক্রমে সা.শ.পূ. ৫৩৭ সালে কুটিরোৎসব উদ্যাপন করার সময়ে পৌঁছেছিল এবং যিহোবার উদ্দেশ্যে তাঁর বেদীতে হোমবলি উৎসর্গ করেছিল। পরবর্তী বছরের দ্বিতীয় মাসে, উচ্চৈঃস্বরে জয়ধ্বনি এবং যিহোবার প্রশংসাসহ তারা দ্বিতীয় মন্দিরের ভিত্তিমূল স্থাপন করেছিল।—ইষ্রা ১:১-৪; ২:১, ২, ৪৩, ৫৫; ৩:১-৬, ৮, ১০-১৩.
৪. যিশাইয় ৩৫ এবং ৫৫ অধ্যায় কিভাবে বাস্তবে পরিণত হয়েছিল?
৪ যিহোবার পুনঃস্থাপনমূলক ভবিষ্যদ্বাণী ইস্রায়েলে গৌরবজনকভাবে পরিপূর্ণ হওয়ার ছিল: “প্রান্তর ও জলশূন্য স্থান আমোদ করিবে, মরুভূমি উল্লাসিত হইবে, গোলাপের ন্যায় উৎফুল্ল হইবে। . . . তাহারা দেখিতে পাইবে সদাপ্রভুর প্রতাপ, আমাদের ঈশ্বরের শোভা।” “তোমরা আনন্দ সহকারে বাহিরে যাইবে, এবং শান্তিতে তোমাদিগকে লইয়া যাওয়া হইবে। পর্ব্বত ও উপপর্ব্বতগণ তোমাদের সমক্ষে উচ্চৈঃস্বরে আনন্দগান করিবে, . . . আর তাহা সদাপ্রভুর কীর্ত্তিস্বরূপ হইবে, লোপহীন নিত্যস্থায়ী চিহ্ন হইবে।”—যিশাইয় ৩৫:১, ২; ৫৫:১২, ১৩.
৫. ইস্রায়েলীয়দের আনন্দ কেন স্বল্পস্থায়ী ছিল?
৫ কিন্তু, সেই আনন্দ ছিল স্বল্পস্থায়ী। প্রতিবেশী লোকেরা মন্দির নির্মাণের জন্য আন্তধর্মীয় মৈত্রীর অন্বেষণ করেছিল। প্রথমে যিহূদীরা বশ্যতা স্বীকার না করে, ঘোষণা করে: “আমাদের ঈশ্বরের উদ্দেশে গৃহ নির্ম্মাণ করিবার বিষয়ে আমাদের সহিত তোমাদের সম্পর্ক নাই; কিন্তু কোরস রাজা, পারস্য-রাজ, আমাদিগকে যাহা আজ্ঞা করিয়াছেন, তদনুসারে কেবল আমরাই ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে নির্ম্মাণ করিব।” সেই প্রতিবেশীরা তখন তীব্র বিরোধীতে পরিণত হয়েছিল। তারা “যিহূদার লোকদের হস্ত দুর্ব্বল করিতে ও নির্ম্মাণ-ব্যাপারে তাহাদিগকে উদ্বিগ্ন করিতে লাগিল।” এছাড়াও তারা কোরসের উত্তরাধিকারী, অর্তক্ষস্তের কাছে পরিস্থিতিটি ভুলভাবে উপস্থাপিত করেছিল যিনি মন্দির নির্মাণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। (ইষ্রা ৪:১-২৪) ফলে ১৭ বছরের জন্য কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। দুঃখজনকভাবে, সেই সময়ে যিহূদীরা বস্তুবাদী জীবনধারায় লিপ্ত হয়ে পড়েছিল।
“বাহিনীগণের সদাপ্রভু” বলেন
৬. (ক) ইস্রায়েলে পরিস্থিতির প্রতি যিহোবা কিভাবে সাড়া দিয়েছিলেন? (খ) হগয়ের নামের আপাত অর্থ কেন যথাযথ?
৬ এমনকি তবুও, যিহূদীদের তাদের দায়িত্বগুলি সম্বন্ধে সচেতন করতে যিহোবা ইস্রায়েলদের জন্য ভাববাদীদের, বিশেষভাবে হগয় এবং সখরিয়কে পাঠানোর দ্বারা ‘তাঁর শক্তি এবং তাঁর পরাক্রম’ প্রদর্শন করেছিলেন। হগয়ের নামের সাথে উৎসবের সম্বন্ধ রয়েছে, কারণ মনে হয় যে এর অর্থ “উৎসবের সময়ে জন্ম গ্রহণ করা।” যথাযথভাবে, তিনি কুটিরোৎসব মাসের প্রথম দিনে ভবিষ্যদ্বাণী করতে শুরু করেছিলেন, যে সময়ে যিহূদীদের “সম্পূর্ণরূপে আনন্দিত” হওয়া আবশ্যক ছিল। (দ্বিতীয় বিবরণ ১৬:১৫) ১১২ দিনব্যাপী সময়কালের মধ্যে হগয়ের মাধ্যমে যিহোবা চারটি বার্তা বিতরণ করেছিলেন।—হগয় ১:১; ২:১, ১০, ২০.
৭. হগয়ের সূচনার বাক্যগুলি কিভাবে আমাদের উৎসাহিত করে?
৭ তার ভবিষ্যদ্বাণীর সূচনাস্বরূপ, হগয় বলেছিলেন: “বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন।” (হগয় ১:২ক) কারা সেই “বাহিনীগণ” হতে পারে? তারা যিহোবার দূত বাহিনী, বাইবেলে যাদের কখনও কখনও সামরিক বাহিনী হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। (ইয়োব ১:৬; ২:১; গীতসংহিতা ১০৩:২০, ২১; মথি ২৬:৫৩) এটি আজকে কি আমাদের উৎসাহিত করে না যে সার্বভৌম প্রভু যিহোবা নিজে পৃথিবীতে আমাদের সত্য উপাসনা পুনঃস্থাপনের কাজকে পরিচালনা করার জন্য এই অজেয় স্বর্গীয় বাহিনীকে ব্যবহার করছেন?—তুলনা করুন ২ রাজাবলি ৬:১৫-১৭.
৮. কোন্ দৃষ্টিভঙ্গি ইস্রায়েলকে প্রভাবিত করেছিল এবং তার কী ফলাফল হয়?
৮ হগয়ের প্রথম বার্তার সারমর্ম কী ছিল? লোকেরা বলেছিল: “সময়, সদাপ্রভুর গৃহ নির্ম্মাণের সময়, উপস্থিত হয় নাই।” মন্দির নির্মাণ যা ঐশিক উপাসনার পুনঃস্থাপনকে প্রতিনিধিত্ব করে আর তাদের মুখ্য চিন্তার বিষয় ছিল না। তারা নিজেদের জন্য প্রাসাদতুল্য বাড়ি নির্মাণ করতে মনোনিবেশ করেছিল। এক বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গি যিহোবার উপাসনার জন্য তাদের প্রবল আগ্রহকে হ্রাস করেছিল। ফলস্বরূপ, তাঁর আশীর্বাদ সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। তাদের শস্যক্ষেত্র আর ফলবতী থাকল না এবং তীব্র শীতের সময়ে তাদের কাপড়ের অভাব হয়েছিল। তাদের আয় স্বল্প হয়ে গিয়েছিল এবং তা এমন ছিল যেন তারা তাদের টাকা ছিদ্রযুক্ত থলিতে রাখছিল।—হগয় ১:২খ-৬.
৯. যিহোবা কোন্ দৃঢ়, গঠনমূলক পরামর্শ প্রদান করেছিলেন?
৯ দুই বার যিহোবা দৃঢ় পরামর্শ দিয়েছিলেন: “তোমরা আপন আপন পথ আলোচনা কর।” স্পষ্টতই, যিরূশালেমের অধ্যক্ষ, সরুব্বাবিল এবং মহাযাজক যিহোশূয়b সাড়া প্রদান করেছিলেন এবং সকল লোকেদের সাহসিকতার সাথে উৎসাহিত করেছিলেন ‘আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর রবে, এবং আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু কর্ত্তৃক প্রেরিত হগয় ভাববাদীর সকল বাক্যে মনোযোগ করিতে; লোকেরাও সদাপ্রভুর সাক্ষাতে ভীত হইল।’ তদুপরি, “সদাপ্রভুর দূত হগয় সদাপ্রভুর দৌত্য-কার্য্যক্রমে লোকদিগকে কহিলেন, সদাপ্রভু কহেন, আমি তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি।”—হগয় ১:৫, ৭-১৪.
১০. ইস্রায়েলের পক্ষে যিহোবা তাঁর ক্ষমতা কিভাবে ব্যবহার করেছিলেন?
১০ যিরূশালেমের কয়েকজন প্রাচীন ব্যক্তিরা হয়ত মনে করেছিল যে পুনর্নির্মিত মন্দিরের প্রতাপ পূর্বের মন্দিরের তুলনায় “অবস্তুবৎ” হবে। কিন্তু, প্রায় ৫১ দিন পরে, যিহোবা হগয়কে দ্বিতীয় বার্তা ঘোষণা করার জন্য পরিচালিত করেছিলেন। তিনি ঘোষণা করেছিলেন: “হে সরুব্বাবিল, তুমি বলবান হও, ইহা সদাপ্রভু বলেন, আর হে যিহোষাদকের পুত্ত্র যিহোশূয় মহাযাজক, তুমি বলবান হও; এবং দেশের সমস্ত লোক, তোমরা বলবান হও, ইহা সদাপ্রভু বলেন, আর কার্য্য কর; কেননা আমি তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু বলেন। . . . তোমরা ভয় করিও না।” যিহোবা, যিনি যথাসময়ে তাঁর সর্বশক্তিমান ক্ষমতা ‘আকাশমণ্ডল এবং পৃথিবীকে কম্পান্বিত’ করতে ব্যবহার করেন, এটি নিশ্চিত করেছিলেন যে সকল বিরোধিতা, এমনকি সম্রাটের নিষেধাজ্ঞাও পরাভূত করা সম্ভব ছিল। পাঁচ বছরের মধ্যে মন্দির নির্মাণে মহান সফলতা এসেছিল।—হগয় ২:৩-৬.
১১. কিভাবে ঈশ্বর দ্বিতীয় মন্দিরকে ‘গুরুতর প্রতাপে’ পূর্ণ করেছিলেন?
১১ উল্লেখযোগ্য প্রতিজ্ঞাটি তখন পরিপূর্ণ হয়েছিল: “সর্ব্বজাতির মনোরঞ্জন বস্তু সকল আসিবে; আর আমি এই গৃহ প্রতাপে পরিপূর্ণ করিব, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু বলেন।” (হগয় ২:৭) ঐ “মনোরঞ্জন বস্তু” হিসাবে ন-ইস্রায়েলীয়রা প্রমাণিত হয়েছিল যারা সেই মন্দিরে উপাসনা করতে এসেছিল যা তাঁর রাজকীয় উপস্থিতির প্রতাপকে প্রতিফলিত করেছিল। কিভাবে এই পুনর্নির্মিত মন্দিরকে শলোমনের দিনে স্থাপিত মন্দিরের সাথে তুলনা করা যায়? ঈশ্বরের ভাববাদী ঘোষণা করেছিলেন: “এই গৃহের পূর্ব্ব প্রতাপ অপেক্ষা উত্তর প্রতাপ গুরুতর হইবে, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু বলেন।” (হগয় ২:৯) ভবিষ্যদ্বাণীটির প্রাথমিক পরিপূর্ণতাস্বরূপ, পুনর্নির্মিত মন্দির প্রথম গৃহটি অপেক্ষা বেশি দিন অস্তিত্বশীল ছিল। সা.শ. ২৯ সালে মশীহ আবির্ভূত হওয়া পর্যন্ত এটি স্থায়ী ছিল। আরও, তাঁর ধর্মভ্রষ্ট শত্রুরা তাঁকে সা.শ. ৩৩ সালে হত্যা করার পূর্বে, মশীহ নিজে একে প্রতাপান্বিত করেন যখন তিনি সেখানে সত্য প্রচার করেছিলেন।
১২. প্রথম দুটি মন্দির কোন্ উদ্দেশ্য সম্পন্ন করেছিল?
১২ যিরূশালেমের প্রথম এবং দ্বিতীয় মন্দিরটি মশীহের যাজকীয় পরিচর্যার তাৎপর্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলির পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে এবং মশীহের প্রকৃত আবির্ভাব পর্যন্ত পৃথিবীতে যিহোবার বিশুদ্ধ উপাসনা জীবন্ত রাখতে এক গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য সম্পন্ন করেছিল।—ইব্রীয় ১০:১.
প্রতাপান্বিত আত্মিক মন্দির
১৩. (ক) আত্মিক মন্দির সম্পর্কিত কোন্ ঘটনাগুলি সা.শ. ২৯ সাল থেকে ৩৩ সালের মধ্যে ঘটেছিল? (খ) এই সম্প্রসারিত ঘটনাগুলিতে যীশুর মুক্তির মূল্য কোন্ অপরিহার্য ভূমিকা পালন করেছিল?
১৩ পরবর্তী সময়ের জন্য হগয়ের পুনঃস্থাপন সম্পর্কিত ভবিষ্যদ্বাণীর কি কোন বিশেষ অর্থ আছে? নিশ্চিতভাবে আছে! যিরূশালেমের পুনর্নির্মিত মন্দির পৃথিবীর সমস্ত সত্য উপাসনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু এটি আরও অধিক প্রতাপান্বিত আত্মিক মন্দিরের আভাস দিয়েছিল। এটি সা.শ. ২৯ সালে কাজ করতে শুরু করেছিল, যখন যর্দন নদীতে যীশুর বাপ্তিস্মের সময়ে যিহোবা যীশুকে মহাযাজক হিসাবে অভিষিক্ত করেছিলেন, পবিত্র আত্মা কপোতের ন্যায় তাঁর উপর নেমে এসেছিল। (মথি ৩:১৬) বলিদানমূলক মৃত্যুতে যীশু তাঁর পার্থিব পরিচর্যা সম্পন্ন করার পর, তিনি স্বর্গে পুনরুত্থিত হয়েছিলেন যা মন্দিরের অতি পবিত্র স্থান দ্বারা চিত্রিত এবং সেখানে তিনি যিহোবার কাছে তাঁর বলিদানের উৎকর্ষ মূল্য উপস্থাপন করেছিলেন। এটি মুক্তির মূল্য হিসাবে কাজ করে, তাঁর শিষ্যদের পাপ আচ্ছাদিত করে এবং সা.শ. ৩৩ সালে পঞ্চাশত্তমীর দিনে, যিহোবার আত্মিক মন্দিরে সহযাজক হিসাবে তাদের অভিষিক্ত করার জন্য পথ খুলে দেয়। পৃথিবীতে মন্দিরের প্রাঙ্গণে মৃত্যু পর্যন্ত তাদের বিশ্বস্ততাপূর্ণ পরিচর্যা, ক্রমাগত যাজকীয় সেবা চালিয়ে যাওয়ার জন্য এক ভবিষ্যৎ স্বর্গীয় পুনরুত্থানের দিকে তাদের পরিচালিত করবে।
১৪. (ক) প্রাথমিক খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর উদ্দীপনাময় কার্যধারার সাথে কোন্ আনন্দ যুক্ত হয়? (খ) এই আনন্দ কেন স্বল্পস্থায়ী ছিল?
১৪ হাজার হাজার অনুতপ্ত যিহূদীরা—এবং পরবর্তীকালে পরজাতীয়েরা—খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে সমবেত হয় এবং পৃথিবীর উপর ঈশ্বরের আসন্ন রাজ্য যেটি পৃথিবীর উপর শাসন করবে সেটি সম্বন্ধীয় সুসমাচার ঘোষণা করতে অংশগ্রহণ করেছিল। প্রায় ৩০ বছর পরে, প্রেরিত পৌল বলতে পেরেছিলেন যে “আকাশমণ্ডলের অধঃস্থিত সমস্ত সৃষ্টির” কাছে সুসমাচার প্রচারিত হয়েছে। (কলসীয় ১:২৩) কিন্তু প্রেরিতদের মৃত্যুর পরে, লক্ষণীয়ভাবে ধর্মভ্রষ্টতা প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে এবং সত্যের দীপ্তি কাঁপতে শুরু করে। প্রকৃত খ্রীষ্টতত্ত্ব পৌত্তলিক শিক্ষা এবং দর্শনের উপর ভিত্তি করা খ্রীষ্টীয়জগতের সাম্প্রদায়িকতার দ্বারা আচ্ছাদিত হয়ে পড়েছিল।—প্রেরিত ২০:২৯, ৩০.
১৫, ১৬. (ক) ১৯১৪ সালে কিভাবে ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণ হয়েছিল? (খ) উনবিংশ শতাব্দীর শেষে এবং বিংশ শতাব্দীর শুরুতে কোন্ একত্রীকরণের কাজ চিহ্নিত হয়েছিল?
১৫ বহু শতাব্দী অতিক্রান্ত হয়ে যায়। অতঃপর ১৮৭০ এর দশকে, আন্তরিক খ্রীষ্টানদের একটি দল বাইবেলের গভীর অধ্যয়নে নিয়োজিত হয়। শাস্ত্র থেকে, তারা ১৯১৪ সালকে “জাতিগণের সময়” এর শেষ হিসাবে নিখুঁত নির্ণয় করতে সক্ষম হয়। সুতরাং এটি ছিল সেই প্রতীক সাত “কাল” (পশুতুল্য মানব শাসনের ২,৫২০ বছর) যা যীশু খ্রীষ্টের স্বর্গীয় সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার সাথে শেষ হয়—এমন একজন, পৃথিবীর মশীহ রাজা হিসাবে যাঁর “অধিকার” আছে। (লূক ২১:২৪; দানিয়েল ৪:২৫; যিহিষ্কেল ২১:২৬, ২৭) বিশেষভাবে ১৯১৯ সাল থেকে, এই বাইবেল ছাত্রেরা, বর্তমানে যিহোবার সাক্ষী হিসাবে পরিচিত, সারা পৃথিবীব্যাপী আসন্ন রাজ্যের সুসমাচার সক্রিয়ভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য নিয়োজিত রয়েছে। ১৯১৯ সালে এদের মধ্যে অল্প কয়েক হাজার কর্মোদ্যগের আহ্বানে সাড়া প্রদান করেন যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সিডার পয়েন্ট ওহিওতে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রকাশ করা হয়। ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত তারা সংখ্যায় বৃদ্ধি পায় যখন ৫৬,১৫৩ জন ক্ষেত্রের পরিচর্যার রিপোর্ট দেয়। সেই বছরে, ৫২,৪৬৫ জন যীশুর মৃত্যুর বাৎসরিক স্মরণার্থক সভায় রুটি এবং দ্রাক্ষারসের প্রতীকে অংশগ্রহণ করেন আর এইভাবে যিহোবার মহান আত্মিক মন্দিরের স্বর্গীয় অংশ হিসাবে খ্রীষ্ট যীশুর সাথে যাজক হওয়ার তাদের আশাকে প্রতীকস্বরূপ চিত্রিত করেন। এছাড়াও তারা তাঁর মশীহ রাজ্যে সহযোগী রাজা হিসাবে তাঁর সাথে কাজ করবেন।—লূক ২২:২৯, ৩০; রোমীয় ৮:১৫-১৭.
১৬ কিন্তু, প্রকাশিত বাক্য ৭:৪-৮ এবং ১৪:১-৪ পদ দেখায় যে এই অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের সর্বমোট সংখ্যা ১,৪৪,০০০ জনে সীমিত, যাদের মধ্যে অনেককে বৃহৎ ধর্মভ্রষ্টতা আরম্ভ হওয়ার পূর্বে প্রথম শতাব্দীতে একত্রীকৃত করা হয়। উনবিংশ শতাব্দীর শেষ থেকে এবং বিংশ শতাব্দীতে যিহোবা এই দলের একত্রীকরণ সম্পূর্ণ করতে থাকেন যারা তাঁর বাক্যের জল দ্বারা পরিষ্কৃত হয়েছে, যীশুর প্রায়শ্চিত্তমূলক বলিদানে বিশ্বাসের মাধ্যমে ধার্মিক গণিত হয়েছে এবং পরিশেষে ১,৪৪,০০০ সংখ্যাকে পূর্ণ করতে চূড়ান্তভাবে অভিষিক্ত খ্রীষ্টান হিসাবে মুদ্রাঙ্কিত হয়েছে।
১৭. (ক) ১৯৩০ এর দশক থেকে কোন্ একত্রীকরণের কাজ এগিয়ে চলেছে? (খ) এখানে যোহন ৩:৩০ পদ কেন আগ্রহের বিষয়? (এছাড়াও লূক ৭:২৮ পদ দেখুন।)
১৭ অভিষিক্তদের সম্পূর্ণ সংখ্যা মনোনীত হয়ে যাওয়ার পর কী ঘটে? ১৯৩৫ সালে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের, ওয়াশিংটন, ডি.সি.-তে অনুষ্ঠিত এক যুগান্তকারী সম্মেলনে, জানানো হয় যে প্রকাশিত বাক্য ৭:৯-১৭ পদের “বিস্তর লোক” ১,৪৪,০০০ এর “পরে” একটি দল হিসাবে শনাক্তিকৃত হয়, যাদের লক্ষ্য এক পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্ত জীবন পাওয়া। অভিষিক্ত যীশুকে স্পষ্টভাবে চিহ্নিতকরণের পর যোহন বাপ্তাইজক, যার পুনরুত্থান একজন “অপর মেষ” হিসাবে এই পৃথিবীতে হবে, মশীহ সম্বন্ধে বলেছিলেন: “উহাকে বৃদ্ধি পাইতে হইবে, কিন্তু আমাকে হ্রাস পাইতে হইবে।” (যোহন ১:২৯; ৩:৩০; ১০:১৬, NW; মথি ১১:১১) মশীহের জন্য যোহন বাপ্তাইজকের শিষ্য প্রস্তুতকরণের কাজ শেষ হয় কারণ তখন যীশু বৃদ্ধিরত সংখ্যার মনোনয়নের কাজ করেন যারা ১,৪৪,০০০ জনের মধ্যে থাকবে। ১৯৩০ এর দশকে বিপরীত ঘটনা ঘটে। এক হ্রাসপ্রাপ্ত সংখ্যকেরা ১,৪৪,০০০ জনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য “আহূত ও মনোনীত” হয়, পক্ষান্তরে “অপর মেষ” এর “বিস্তর লোক” এর সংখ্যায় বিস্ময়কর বৃদ্ধি শুরু হয়। যতই জগতের দুষ্ট বিধিব্যবস্থা হর্মাগিদোনে তার শেষের নিকটবর্তী হতে থাকে ততই এই বিস্তর লোকেদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে।—প্রকাশিত বাক্য ১৭:১৪খ.
১৮. (ক) আমরা কেন নিশ্চয়তার সাথে আশা করতে পারি যে “লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি যারা এখন জীবিত আছে কখনও মরবে না”? (খ) আমাদের কেন উদ্যোগের সাথে হগয় ২:৪ পদের প্রতি মনোযোগী হওয়া উচিত?
১৮ ১৯২০ এর দশকের প্রথম দিকে, “লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি যারা এখন জীবিত আছে কখনও মরবে না” শিরোনামে একটি বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত জনসাধারণের বক্তৃতা যিহোবার সাক্ষীদের দ্বারা উপস্থাপিত করা হয়। সেই সময়ে এটি হয়ত অত্যধিক আশাবাদকে প্রতিফলিত করেছিল। কিন্তু আজকে সেই মন্তব্য সম্পূর্ণ নিশ্চয়তার সাথে করা যেতে পারে। বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীর বৃদ্ধিরত আলো এবং এই মৃতপ্রায় জগতের অরাজকতা, উভয়ই দৃঢ়ভাবে নির্দেশ করে যে শয়তানের বিধিব্যবস্থার শেষ খুবই নিকটে! ১৯৯৬ সালের স্মরণার্থক সভার রিপোর্ট দেখায় যে ১,২৯,২১,৯৩৩ জন উপস্থিত ছিল, যাদের মধ্যে মাত্র ৮,৭৫৭ (শতকরা .০৬৮ ভাগ) প্রতীক গ্রহণ করার দ্বারা তাদের স্বর্গীয় আশাকে ইঙ্গিত করে। সত্য উপাসনার পুনঃস্থাপন প্রায় সমাপ্ত। তাই আসুন আমরা যেন সেই কাজে কখনও শিথিল হয়ে না পড়ি। হ্যাঁ, হগয় ২:৪ পদ বলে: “দেশের সমস্ত লোক, তোমরা বলবান হও, ইহা সদাপ্রভু বলেন, আর কার্য্য কর; কেননা আমি তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু বলেন।” আমরা যেন দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই যে বস্তুবাদিতা অথবা জাগতিকতার কোন প্রভাব কখনও যিহোবার কাজের জন্য আমাদের উদ্যোগকে নিস্তেজ না করে!—যোহন ২:১৫-১৭.
১৯. আমরা কিভাবে হয়ত হগয় ২:৬, ৭ পদের পরিপূর্ণতায় অংশ গ্রহণ করতে পারি?
১৯ হগয় ২:৬, ৭ পদের আধুনিক-দিনের পরিপূর্ণতায় আমাদের অংশগ্রহণের সুযোগ আনন্দদায়ক: “বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আর এক বার, অল্পকালের মধ্যে, আমি আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীকে এবং সমুদ্র ও শুষ্ক ভূমিকে কম্পাম্বিত করিব। আর আমি সর্ব্বজাতিকে কম্পাম্বিত করিব; এবং সর্ব্বজাতির মনোরঞ্জন বস্তু সকল আসিবে; আর আমি এই গৃহ প্রতাপে পরিপূর্ণ করিব, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু বলেন।” লোভ, দুর্নীতি এবং ঘৃণা এই বিংশ শতাব্দীর জগদ্ব্যাপী ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। বস্তুতপক্ষেই এটি এর শেষকালে রয়েছে এবং যিহোবা তাঁর সাক্ষীদের দ্বারা ‘তাঁর প্রতিশোধের দিন ঘোষণার’ মাধ্যমে ইতিমধ্যেই এটিকে “কম্পান্বিত” করতে শুরু করেছেন। (যিশাইয় ৬১:২) হর্মাগিদোনে জগতের ধ্বংসের দ্বারা এই প্রাথমিক কম্পন চরম পর্যায়ে পৌঁছাবে, কিন্তু সেই সময়ের পূর্বে যিহোবা তাঁর পরিচর্যার জন্য “সর্ব্বজাতির মনোরঞ্জন বস্তু সকল” সংগ্রহ করছেন—পৃথিবীর নম্র এবং মেষতুল্য লোকেদের। (যোহন ৬:৪৪) এই “বিস্তর লোক” এখন তাঁর উপাসনা গৃহের পার্থিব প্রাঙ্গণে “আরাধনা” করছে।—প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১৫.
২০. কোথায় সবচেয়ে মহামূল্যবান ধন পাওয়া যায়?
২০ যিহোবার আত্মিক মন্দিরে পরিচর্যা যে কোন বস্তুগত ধন অপেক্ষা আরও মূল্যবান লাভ নিয়ে আসে। (হিতোপদেশ ২:১-৬; ৩:১৩, ১৪; মথি ৬:১৯-২১) এছাড়াও, হগয় ২:৯ পদ বলে: “এই গৃহের পূর্ব্ব প্রতাপ অপেক্ষা উত্তর প্রতাপ গুরুতর হইবে, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু বলেন; আর এই স্থানে আমি শান্তি প্রদান করিব, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু বলেন।” আজকে আমাদের জন্য এই বাক্যগুলি কী অর্থ রাখে? আমাদের পরবর্তী প্রবন্ধটি তা জানাবে।
[পাদটীকাগুলো]
a “যাঃ যিহোবা” অভিব্যক্তিটি বিশেষ গুরুত্ব প্রদানের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। শাস্ত্রের প্রতি অন্তর্দৃষ্টি (ইংরাজি), খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১২৪৮ দেখুন।
b ইষ্রা এবং বাইবেলের অন্যান্য পুস্তকে যেশূয়।
পুনরালোচনার জন্য প্রশ্নগুলি
◻ যিহোবার নামের বিষয়ে ভাববাদীদের কোন্ উদাহরণ আমাদের অনুসরণ করা উচিত?
◻ ইস্রায়েলের পুনঃস্থাপন বিষয়ে যিহোবার শক্তিশালী বার্তা থেকে আমরা কোন্ উৎসাহ পাই?
◻ আজকে কোন্ প্রতাপান্বিত আত্মিক মন্দির কাজ করে?
◻ উনবিংশ এবং বিংশ শতাব্দীতে কোন্ একত্রীকরণের কাজ ধারাবাহিকভাবে চলছে এবং কোন্ মহান প্রত্যাশা দৃষ্টিগোচর হয়?
[Pictures on page 7]
যিহোবার স্বর্গীয় বাহিনী পৃথিবীতে তাঁর সাক্ষীদের পরিচালনা এবং সংরক্ষণ করে