দাঁড়িয়ে থাকুন এবং শয়তানের ফাঁদগুলো এড়িয়ে চলুন!
‘দিয়াবলের নানাবিধ চাতুরীর সম্মুখে দাঁড়াইয়া থাকো।’—ইফি. ৬:১১.
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
যিহোবার একজন দাস কীভাবে বস্তুবাদিতার ফাঁদে পড়া এড়াতে পারেন?
কোন বিষয়টা বিবাহিত খ্রিস্টানদেরকে পারদারিকতার গর্তে পতিত না হওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে?
কেন আপনি মনে করেন যে, বস্তুবাদিতা এবং যৌন অনৈতিকতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো উপকারজনক?
১, ২. (ক) কেন অভিষিক্ত ব্যক্তি এবং ‘আরও মেষের’ প্রতি শয়তানের কোনো সমবেদনা নেই? (খ) এই প্রবন্ধে শয়তানের কোন ফাঁদগুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে?
মানুষের প্রতি শয়তান দিয়াবলের কোনো সমবেদনা নেই আর তা বিশেষভাবে সেই ব্যক্তিদের প্রতি, যারা যিহোবার সেবা করে। বস্তুতপক্ষে, শয়তান অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলছে। (প্রকা. ১২:১৭) এই অদম্য খ্রিস্টানরা আধুনিক দিনের প্রচার কাজের অগ্রভাগে রয়েছে এবং শয়তান যে এই জগতের শাসক, তা প্রকাশ করে দিয়েছে। এ ছাড়া, সেই ‘আরও মেষের’ প্রতিও দিয়াবলের কোন ভালোবাসা নেই, যারা অভিষিক্ত ব্যক্তিদের সমর্থন করে এবং যারা অনন্তজীবন লাভ করবে, যে-প্রত্যাশা শয়তানের নেই। (যোহন ১০:১৬) তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, সে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ! আমাদের আশা স্বর্গীয় অথবা পার্থিব, যা-ই হোক না কেন, আমাদের মঙ্গলের ব্যাপারে শয়তানের কোনো আগ্রহই নেই। তার লক্ষ্য হল আমাদেরকে তার শিকারে পরিণত করা।—১ পিতর ৫:৮.
২ তার উদ্দেশ্য সম্পাদন করার জন্য শয়তান বিভিন্ন ফাঁদ পেতে রেখেছে। যেহেতু সে অবিশ্বাসীদের মন ‘অন্ধ করিয়া’ রেখেছে, তাই তারা সুসমাচার গ্রহণ করে না এবং সেই ফাঁদগুলো দেখতে পায় না। কিন্তু, দিয়াবল সেই ব্যক্তিদেরও ফাঁদে ফেলে, যারা রাজ্যের বার্তা গ্রহণ করেছে। (২ করি. ৪:৩, ৪) আগের প্রবন্ধে তুলে ধরা হয়েছে যে, কীভাবে আমরা শয়তানের এই তিনটে ফাঁদ এড়াতে পারি: (১) অসংযত কথাবার্তা, (২) ভয় ও চাপ এবং (৩) অত্যধিক অপরাধবোধ। আসুন, এখন আমরা দেখি যে, কীভাবে আমরা শয়তানের আরও দুটো ফাঁদের—বস্তুবাদিতা এবং পারদারিকতায় জড়িয়ে পড়ার প্রলোভনের—সামনে দাঁড়াতে পারি।
বস্তুবাদিতা—যে-ফাঁদ চেপে রাখে
৩, ৪. কীভাবে সংসারের চিন্তা বস্তুবাদিতার দিকে পরিচালিত করতে পারে?
৩ তাঁর একটা দৃষ্টান্তে যিশু কাঁটাবনের মধ্যে উপ্ত বীজ সম্বন্ধে বলেছিলেন। তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে, একজন ব্যক্তি হয়তো বাক্য শুনে থাকে, কিন্তু “সংসারের চিন্তা ও ধনের মায়া সেই বাক্য চাপিয়া রাখে, তাহাতে সে ফলহীন হয়।” (মথি ১৩:২২) হ্যাঁ, আমাদের শত্রু শয়তানের দ্বারা ব্যবহৃত একটা ফাঁদ হল বস্তুবাদিতা।
৪ দুটো বিষয় একত্রে বাক্য চেপে রাখে। একটা বিষয় হল, “সংসারের চিন্তা।” এই ‘বিষম সময়ে’ এমন অনেক বিষয় রয়েছে, যেগুলো আমাদেরকে চিন্তিত করে তোলে। (২ তীম. ৩:১) জীবনযাপনের ব্যয় ও বেকারত্বের হার বৃদ্ধির কারণে আপনাকে হয়তো ভরণপোষণ জোগাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ ছাড়া, আপনি হয়তো ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হতে পারেন এবং এইরকমটা ভাবতে পারেন, ‘অবসর গ্রহণ করার পর, আমার কাছে কি যথেষ্ট আয় থাকবে?’ এই ধরনের চিন্তার কারণে কেউ কেউ ধনসম্পদের পিছনে ছুটতে পরিচালিত হয়েছে এবং এইরকম চিন্তা করেছে যে, টাকাপয়সা নিরাপত্তা প্রদান করবে।
৫. “ধনের মায়া” কীভাবে প্রতারণাপূর্ণ হতে পারে?
৫ যিশু আরেকটা বিষয় সম্বন্ধেও বলেন আর তা হল, “ধনের মায়া।” এই বিষয়টা ও সেইসঙ্গে চিন্তা বাক্য চেপে রাখতে পারে। বাইবেল স্বীকার করে যে, “ধনও আশ্রয় বটে।” (উপ. ৭:১২) কিন্তু, ধনসম্পদের পিছনে ছোটা বিজ্ঞতার কাজ নয়। কেউ কেউ দেখেছে যে, যতই তারা ধনসম্পদ অর্জন করার চেষ্টা করে, ততই তারা বস্তুবাদিতার ফাঁদে পড়ে। কেউ কেউ এমনকী ধনসম্পদের দাস হয়ে উঠেছে।—মথি ৬:২৪.
৬, ৭. (ক) কীভাবে বস্তুবাদিতা একজন ব্যক্তির কর্মক্ষেত্রে বিপদজনক বলে প্রমাণিত হতে পারে? (খ) একজন খ্রিস্টান যখন ওভারটাইম করার প্রস্তাব পান, তখন তার কোন বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত?
৬ ধনসম্পদের প্রতি আকাঙ্ক্ষা আমাদের অজান্তেই শুরু হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, এই দৃশ্যপট বিবেচনা করুন। আপনার নিয়োগকর্তা আপনার কাছে এসে এইরকমটা বলেন: “দারুণ একটা খবর আছে! কোম্পানি একটা বড়ো কনট্র্যাক্ট পেয়েছে। আর তাই আগামী কয়েক মাস প্রায়ই ওভারটাইম করতে হবে। তবে, আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, এই কাজের বিনিময়ে আপনি বেশ মোটা অঙ্কের অর্থ পাবেন।” এইরকম প্রস্তাব পেলে আপনি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবেন? এটা ঠিক যে, আপনার পরিবারের জন্য বস্তুগত ভরণপোষণ জোগানো একটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব কিন্তু এটাই আপনার একমাত্র দায়িত্ব নয়। (১ তীম. ৫:৮) বিবেচনা করার মতো আরও অনেক বিষয় রয়েছে। এই কাজের জন্য কতটা সময় ওভারটাইম করতে হবে? আপনার চাকরির কারণে কি আপনার আধ্যাত্মিক কাজগুলো বিঘ্নিত হবে, যার মধ্যে মণ্ডলীর সভা এবং পারিবারিক উপাসনা সন্ধ্যাও অন্তর্ভুক্ত?
৭ আপনার সিদ্ধান্ত নিয়ে চিন্তা করার সময় আপনি কোন বিষয়টা সবচেয়ে প্রথমে বিবেচনা করবেন? ওভারটাইম করলে আপনি আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কত টাকা জমাতে পারবেন, সেই বিষয়টা, নাকি এটা আপনার আধ্যাত্মিকতার ওপর কোন প্রভাব ফেলতে পারে, সেই বিষয়টা? আরও টাকাপয়সা অর্জন করার আকাঙ্ক্ষার কারণে আপনি কি রাজ্যের বিষয়গুলোকে জীবনে প্রথমে রাখা বন্ধ করে দেবেন? আপনি যদি আপনার ও সেইসঙ্গে আপনার পরিবারের আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যেক উপেক্ষা করেন, তাহলে বস্তুবাদিতা কীভাবে আপনাকে প্রভাবিত করবে, তা কি আপনি লক্ষ করেছেন? আপনার ক্ষেত্রে যদি এখনই এইরকমটা হয়ে থাকে, তাহলে কীভাবে আপনি দাঁড়িয়ে থাকতে এবং বস্তুবাদিতার দ্বারা চাপা পড়ার বিষয়টা এড়িয়ে চলতে পারেন?—পড়ুন, ১ তীমথিয় ৬:৯, ১০.
৮. শাস্ত্রীয় কোন উদাহরণগুলো বিবেচনা করা আমাদের জীবনধারাকে পুনর্বিবেচনা করে দেখতে সাহায্য করতে পারে?
৮ বস্তুবাদিতার দ্বারা চাপা পড়ার বিষয়টা এড়িয়ে চলতে হলে, মাঝে মাঝে আপনার জীবনধারাকে পুনর্বিবেচনা করে দেখুন। আপনি নিশ্চয়ই কখনো এষৌর মতো হতে চাইবেন না, যিনি তার কাজের মাধ্যমে দেখিয়েছিলেন যে, তিনি আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোকে অবজ্ঞা করেছেন! (আদি. ২৫:৩৪; ইব্রীয় ১২:১৬) আর আপনার সেই ধনী ব্যক্তির মতোও হওয়া উচিত হবে না, যাকে তার সমস্ত বিষয়সম্পত্তি বিক্রি করে দরিদ্রদের দিতে এবং এরপর যিশুকে অনুসরণ করতে বলা হয়েছিল। এইরকমটা করার পরিবর্তে সেই ব্যক্তি “দুঃখিত হইয়া চলিয়া গেল, কারণ তাহার বিস্তর সম্পত্তি ছিল।” (মথি ১৯:২১, ২২) ধনসম্পদের ফাঁদে আটকা পড়ে সেই ব্যক্তি একটা বিরাট সুযোগ হারিয়ে ফেলেছিলেন—আর তা হল সর্বকালের সর্বমহান ব্যক্তির অনুসারী হওয়া! যিশু খ্রিস্টের একজন শিষ্য হওয়ার বিশেষ সুযোগ হারিয়ে না ফেলার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
৯, ১০. বস্তুগত বিষয় সম্বন্ধে শাস্ত্রীয় দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারে আপনি কী বলবেন?
৯ বস্তুগত বিষয়গুলো নিয়ে অযথা উদ্বিগ্ন হওয়া পরিহার করার জন্য যিশু এই উপদেশ দিয়েছিলেন: “ইহা বলিয়া ভাবিত হইও না যে, ‘কি ভোজন করিব?’ বা ‘কি পান করিব?’ বা ‘কি পরিব?’ কেননা পরজাতীয়েরাই এই সকল বিষয় চেষ্টা করিয়া থাকে; তোমাদের স্বর্গীয় পিতা ত জানেন যে এই সকল দ্রব্যে তোমাদের প্রয়োজন আছে।”—মথি ৬:৩১, ৩২; লূক ২১:৩৪, ৩৫.
১০ ধনের প্রতারণামূলক ক্ষমতার শিকার হওয়ার পরিবর্তে, বাইবেল লেখক আগূরের মতো দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করুন, যিনি বলেছিলেন: “আমাকে খুব বেশী ধনী বা দরিদ্র কোরো না। আমাকে শুধু আমার নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো দিয়ো।” (হিতো. ৩০:৮, ইজি-টু-রিড ভারসন) স্পষ্টতই, আগূর টাকাপয়সা যে-সুরক্ষা প্রদান করে, সেটার মূল্য ও সেইসঙ্গে ধনের প্রতারণামূলক ক্ষমতা সম্বন্ধে বুঝতে পেরেছিলেন। বোঝার চেষ্টা করুন যে, সংসারের চিন্তা এবং ধনের প্রতারণামূলক ক্ষমতা আধ্যাত্মিক ক্ষতি নিয়ে আসতে পারে। বস্তুগত বিষয় নিয়ে অযথা উদ্বিগ্ন হওয়া আপনার সময় অপচয় করতে পারে, আপনার শক্তি কেড়ে নিতে পারে আর এর ফলে আপনি রাজ্যের বিষয়গুলো অনুধাবন করার ক্ষেত্রে খুব কমই প্রেরণা লাভ করবেন বা একেবারেই করবেন না। তাই, শয়তানের বস্তুবাদিতার ফাঁদে ধৃত না হওয়াকে আপনার দৃঢ়সংকল্প করে তুলুন!—পড়ুন, ইব্রীয় ১৩:৫.
পারদারিকতা —সুচতুরভাবে লুক্কায়িত এক গর্ত
১১, ১২. কীভাবে একজন খ্রিস্টান তার কর্মক্ষেত্রে পারদারিকতার শিকারে পরিণত হতে পারেন?
১১ যে-শিকারিরা শক্তিশালী পশু ধরতে চায়, তারা সাধারণত সেই পশু যে-পথ দিয়ে প্রায়ই চলাফেরা করে, সেই পথে গর্ত খুঁড়ে রাখে। সেই গর্ত সাধারণত ডালপালা এবং মাটির পাতলা আবরণ দিয়ে ঢাকা থাকে। শয়তানের খুবই সফল একটা প্রলোভনের সঙ্গে এই ধরনের ফাঁদের বর্ণনা মিলে যায়। এটা হল অনৈতিকতার পাপ। (হিতো. ২২:১৪; ২৩:২৭) অনেক খ্রিস্টান এমন পরিস্থিতিগুলোর মধ্যে যাওয়ার মাধ্যমে সেই গর্তে পতিত হয়েছে, যে-পরিস্থিতিগুলোতে আপোশ করে ফেলা খুবই সহজ। কিছু বিবাহিত খ্রিস্টান দম্পতি অনুপযুক্ত রোমান্টিক সম্পর্ক গড়ে তোলার পর, পারদারিকতায় জড়িয়ে পড়েছে।
১২ অনুপযুক্ত রোমান্টিক সম্পর্ক আপনার কর্মক্ষেত্রেও গড়ে উঠতে পারে। পারদারিকতায় জড়িয়ে পড়া অর্ধেকেরও বেশি মহিলা এবং বেশিরভাগ পুরুষ তাদের সহকর্মীর সঙ্গে এইরকমটা করেছে। আপনার জাগতিক কাজের কারণে আপনাকে কি বিপরীত লিঙ্গের সদস্যের সঙ্গে মেলামেশা করতে হয়? যদি তা-ই হয়ে থাকে, তাহলে তাদের সঙ্গে আপনার কোন ধরনের সম্পর্ক রয়েছে? আপনি কি এমন কোনো সীমা আরোপ করেছেন, যা আপনাকে কেবল সেই সম্পর্ক পেশাগত পর্যায়েই রাখতে এবং এর চেয়ে বেশি দূর না এগোতে সাহায্য করে? উদাহরণস্বরূপ, একজন পুরুষ সহকর্মীর সঙ্গে কয়েক বার সাধারণ কথাবার্তা বলার পর, একজন খ্রিস্টান বোন হয়তো সেই কর্মীর প্রতি আস্থা গড়ে তুলতে এবং এমনকী তার সঙ্গে বৈবাহিক সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলতে পারেন। অন্যদিকে, একজন মহিলা সহকর্মীর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার পর, একজন খ্রিস্টান পুরুষ হয়তো এই যুক্তি দেখাতে পারেন: “তিনি আমার মতামতকে মূল্য দেন এবং আমার কথা সত্যিই মনোযোগ দিয়ে শোনেন। আর তিনি আমার প্রতি উপলব্ধি দেখান। ইস্, আমি যদি ঘরে একইরকম ব্যবহার পেতাম!” এইরকম পরিস্থিতিতে খ্রিস্টানরা কীভাবে সহজেই পারদারিকতায় জড়িয়ে পড়তে পারে, তা কি আপনি লক্ষ করেছেন?
১৩. কীভাবে মণ্ডলীর মধ্যেও এক অনুপযুক্ত রোমান্টিক সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে?
১৩ অনুপযুক্ত রোমান্টিক সম্পর্ক মণ্ডলীতেও গড়ে উঠতে পারে। একটা বাস্তব উদাহরণ বিবেচনা করুন। ড্যানিয়েল এবং তার স্ত্রী সারাa নিয়মিত অগ্রগামী ছিল। এ ছাড়া, ড্যানিয়েল এমন একজন প্রাচীন ছিলেন, যিনি নিজের সম্বন্ধে এভাবে বলেন যে, তিনি “কখনোই না বলতে পারতেন না।” তিনি প্রতিটা বিশেষ সুযোগই সাদরে গ্রহণ করে নিতেন। তার পরিচর্যার অংশ হিসেবে ড্যানিয়েল পাঁচ জন যুবককে বাইবেল অধ্যয়ন করাতেন, যাদের মধ্যে তিন জনই বাপ্তিস্ম নিয়েছিল। এই নতুন বাপ্তাইজিত ভাইদের যথেষ্ট সাহায্যের প্রয়োজন হয়েছিল। ড্যানিয়েল যখন তার বিভিন্ন ঈশতান্ত্রিক কার্যভার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, তখন সারা প্রায়ই সেই সাহায্য প্রদান করতেন। শীঘ্র বিষয়টা এইরকম হয়ে ওঠে: ড্যানিয়েলের প্রাক্তন বাইবেল ছাত্রদের আবেগগত সমর্থনের প্রয়োজন হলে তারা তা সারার কাছ থেকে লাভ করত। আবার সারার যখন মনোযোগ পাওয়ার প্রয়োজন হতো, তখন তিনি তা ড্যানিয়েলের বাইবেল ছাত্রদের কাছ থেকে লাভ করতেন। এক মারাত্মক ফাঁদ তৈরি হয়েছিল। “কয়েক মাস ধরে এইরকম করার পর, আমার স্ত্রী আধ্যাত্মিকভাবে ও আবেগগতভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিল,” ড্যানিয়েল বলেন। “এটা ও সেইসঙ্গে তার প্রতি আমার অবহেলা এক মারাত্মক ঘটনার দিকে মোড় নিয়েছিল। আমার স্ত্রী আমার একজন প্রাক্তন ছাত্রের সঙ্গে পারদারিকতায় জড়িয়ে পড়েছিল। আমার চোখের সামনেই সে আধ্যাত্মিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিল আর আমি আমার সমস্ত বিশেষ সুযোগ নিয়ে এতটাই চিন্তিত ছিলাম যে, এমনকী সেটা লক্ষও করতে পারিনি।” আপনি কীভাবে এইরকম এক দুঃখজনক ঘটনা এড়িয়ে চলতে পারেন?
১৪, ১৫. কোন বিষয়গুলো বিবাহিত খ্রিস্টানদেরকে পারদারিকতার গর্ত এড়িয়ে চলার জন্য সাহায্য করতে পারে?
১৪ পারদারিকতার গর্ত এড়িয়ে চলার জন্য বৈবাহিক প্রতিশ্রুতির অর্থ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করুন। যিশু বলেছিলেন: “ঈশ্বর যাহার যোগ করিয়া দিয়াছেন, মনুষ্য তাহার বিয়োগ না করুক।” (মথি ১৯:৬) কখনো এইরকম মনে করবেন না যে, আপনার ঈশতান্ত্রিক সুযোগগুলো আপনার সঙ্গীর চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অধিকন্তু, এই বিষয়ে সতর্ক থাকুন যে, আপনার সাথিকে রেখে প্রায়ই অপ্রয়োজনীয় কাজগুলোর জন্য সময় ব্যয় করা এই ইঙ্গিত দিতে পারে যে, আপনার বিয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে আর তা প্রলোভন এবং সম্ভবত গুরুতর পাপের দিকে পরিচালিত করতে পারে।
১৫ কিন্তু, আপনি যদি একজন প্রাচীন হয়ে থাকেন, তাহলে পালের বিষয়ে কী বলা যায়? প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “তোমাদের মধ্যে ঈশ্বরের যে পাল আছে, তাহা পালন কর; অধ্যক্ষের কার্য্য কর, আবশ্যকতা প্রযুক্ত নয়, কিন্তু ইচ্ছাপূর্ব্বক, ঈশ্বরের অভিমতে, কুৎসিত লাভার্থে নয়, কিন্তু উৎসুকভাবে কর।” (১ পিতর ৫:২) মণ্ডলীর যে-সদস্যরা আপনার যত্নাধীনে রয়েছে, তাদেরকে নিশ্চিতভাবেই উপেক্ষা করা উচিত নয়। কিন্তু, একজন পালক হিসেবে আপনার দায়িত্ব পরিপূর্ণ করতে গিয়ে একজন স্বামী হিসেবে আপনার ভূমিকাকে অবহেলা করা উচিত নয়। আপনার সঙ্গীকে ঘরে ক্ষুধার্ত অবস্থায় রেখে মণ্ডলীর আধ্যাত্মিক খাদ্য জোগানোর ওপর আপনার সমস্ত মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করাটা অর্থহীন—এমনকী বিপদজনক—হবে। ড্যানিয়েল বলেন, ‘বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আপনার এতটাই ব্যস্ত হওয়া উচিত নয় যে, এর ফলে আপনার নিজের পরিবার উপেক্ষিত হয়।’
১৬, ১৭. (ক) বিবাহিত খ্রিস্টানরা কর্মক্ষেত্রে কোন ব্যবহারিক পদক্ষেপগুলো নিতে পারে, যেটা স্পষ্ট ইঙ্গিত দেবে যে, চাইলেই তাদের সঙ্গে রোমান্টিক সম্পর্ক গড়ে তোলা যাবে না? (খ) প্রকাশিত বিষয়বস্তু থেকে এমন একটা উদাহরণ দিন, যা খ্রিস্টানদেরকে পারদারিকতা এড়িয়ে চলার জন্য সাহায্য করতে পারে।
১৬ বিবাহিত খ্রিস্টানদেরকে পারদারিকতার ফাঁদে পতিত হওয়া প্রতিরোধ করার জন্য প্রহরীদুর্গ এবং সচেতন থাক! পত্রিকায় অনেক ভালো ভালো পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসের প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় এই উপদেশ দেওয়া হয়েছিল: “কর্মক্ষেত্রে এবং অন্যান্য জায়গায় এমন পরিস্থিতি সম্বন্ধে সাবধান থাকুন, যা অন্তরঙ্গতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, নির্ধারিত সময়ের পর বাড়তি সময় বিপরীত লিঙ্গের কারো সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা প্রলোভনের দিকে পরিচালিত করতে পারে। বিবাহিত পুরুষ অথবা নারী হিসেবে আপনার কথাবার্তা ও আচার-আচরণের মাধ্যমে স্পষ্ট করে দেওয়া উচিত যে, আপনার বিবাহসাথি ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে রোমান্টিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে আপনি আগ্রহী নন। ঈশ্বরীয় ভক্তি অনুধাবনকারী একজন ব্যক্তি হিসেবে নিশ্চিতভাবেই আপনি প্রেমের ভান করার অথবা আপনার পোশাক-আশাক ও সাজগোজের মাধ্যমে অসংগত মনোযোগ আকর্ষণ করাতে চাইবেন না। . . . কর্মক্ষেত্রে আপনার বিবাহসাথির ও সন্তানদের ছবি রাখা আপনার ও অন্যদের জন্য এই প্রত্যক্ষ অনুস্মারক হিসেবে কাজ করবে যে, আপনার কাছে আপনার পরিবারের গুরুত্ব রয়েছে। অন্যদের প্রলুব্ধকর প্রস্তাবগুলোকে কখনো উৎসাহিত না করার—এমনকি প্রশ্রয় না দেওয়ার—বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হোন।”
১৭ দু-হাজার নয় সালের এপ্রিল মাসের সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকায় “বৈবাহিক বিশ্বস্ততা—এর অর্থ আসলে কী?” নামক প্রবন্ধে নিজের বিবাহিত সঙ্গী ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে যৌনসম্পর্কের বিষয়ে চিন্তা করার বিরুদ্ধে সাবধান করা হয়েছে। সেই প্রবন্ধ ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, যৌন স্বপ্নবিলাসে রত হওয়া আপনার পারদারিকতায় জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেবে। (যাকোব ১:১৪, ১৫) আপনি যদি বিবাহিত হয়ে থাকেন, তাহলে মাঝে মাঝে আপনার ও আপনার সাথির জন্য এই ধরনের তথ্য একত্রে পুনরালোচনা করা বিজ্ঞতার কাজ হবে। বিয়ে হচ্ছে এমন একটা ব্যবস্থা, যা স্বয়ং যিহোবা প্রবর্তন করেছেন আর এটা পবিত্র। আপনার বিবাহ সম্বন্ধে আপনার সঙ্গীর সঙ্গে কথা বলার জন্য সময় করে নেওয়া এটা দেখানোর এক উত্তম উপায় যে, আপনি পবিত্র বিষয়গুলোকে মূল্যবান বলে গণ্য করেন।—আদি. ২:২১-২৪.
১৮, ১৯. (ক) পারদারিকতার পরিণতিগুলো কী? (খ) বৈবাহিক বিশ্বস্ততা কোন উপকারগুলো নিয়ে আসে?
১৮ আপনি যদি দেখেন যে, আপনি অনুপযুক্ত রোমান্টিক সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য প্রলুব্ধ হচ্ছেন, তাহলে ব্যভিচার ও পারদারিকতার ক্ষতিকর পরিণতি নিয়ে ধ্যান করুন। (হিতো. ৭:২২, ২৩; গালা. ৬:৭) যারা অনৈতিকতায় রত হয়, তারা যিহোবাকে অসন্তুষ্ট করে এবং তাদের সাথিকে আঘাত দেয় ও নিজেরাও কষ্ট পায়। (পড়ুন, মালাখি ২:১৩, ১৪.) অন্যদিকে, যারা শুদ্ধ আচরণ বজায় রাখে, তারা যে-উপকারগুলো লাভ করে, তা নিয়ে ধ্যান করুন। তাদের যে কেবল চিরকাল বেঁচে থাকার প্রত্যাশাই রয়েছে এমন নয় কিন্তু সেইসঙ্গে তারা এক শুদ্ধ বিবেক নিয়ে এখনই উত্তম জীবন উপভোগ করে।—পড়ুন, হিতোপদেশ ৩:১, ২.
১৯ গীতরচক গেয়েছিলেন: “যাহারা তোমার [ঈশ্বরের] ব্যবস্থা ভালবাসে, তাহাদের পরম শান্তি, তাহাদের উছোট লাগে না।” (গীত. ১১৯:১৬৫) তাই, সত্যকে ভালোবাসুন এবং এই মন্দ সময়ে ‘ভাল করিয়া দেখুন, কিরূপে চলিতেছেন; অজ্ঞানের ন্যায় না চলিয়া জ্ঞানবানের ন্যায় চলুন।’ (ইফি. ৫:১৫, ১৬) বর্তমানে, ঈশ্বরের সত্য উপাসকদের ধরার জন্য শয়তান অনেক ফাঁদ ব্যবহার করে। কিন্তু, নিজেদেরকে সুরক্ষা করার জন্য আমরা সুসজ্জিভূত। যিহোবা আমাদেরকে ‘দাঁড়াইয়া’ থাকার এবং ‘পাপাত্মার সমস্ত অগ্নিবাণ নির্ব্বাণ করিবার’ জন্য যে-বিষয়গুলো প্রয়োজন, সেগুলো প্রদান করেছেন!—ইফি. ৬:১১, ১৬.
[পাদটীকা]
a নামগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে।
[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
বস্তুবাদিতা একজন ব্যক্তির আধ্যাত্মিকতাকে চেপে রাখতে পারে। আপনার বেলায় এমনটা হতে দেবেন না
[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
প্রেমের ভান করা—অথবা এতে সাড়া দেওয়া—পারদারিকতায় জড়িয়ে পড়ার দিকে পরিচালিত করতে পারে