যিহোবা—আমাদের বাসস্থান
“হে [সদাপ্রভু], তুমিই আমাদের বাসস্থান হইয়া আসিতেছ, পুরুষে পুরুষে হইয়া আসিতেছ।”—গীত. ৯০:১.
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
কীভাবে যিহোবা প্রাচীনকালের বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের জন্য “বাসস্থান” হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিলেন?
অব্রাহামের বিশ্বস্ত কাজ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
কীভাবে আমরা দেখাতে পারি যে, যিহোবা আমাদের “বাসস্থান”?
১, ২. বর্তমান বিধিব্যবস্থা সম্বন্ধে ঈশ্বরের দাসেরা কেমন বোধ করে এবং কোন অর্থে তাদের একটা গৃহ রয়েছে?
আপনি কি এই দুষ্ট জগতে নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দ বোধ করেন, এমন মনে করেন যে, আপনি বাড়িতেই আছেন? যদি না করে থাকেন, তাহলে আপনি এক উত্তম দলের মধ্যে রয়েছেন! বিভিন্ন সময়ে, যিহোবাকে প্রকৃতই ভালোবাসে এমন ব্যক্তিরা এই বিধিব্যবস্থায় নিজেদেরকে বিদেশি বলে মনে করেছে। উদাহরণস্বরূপ, কনান দেশে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে শিবির স্থাপন করে থাকার সময় ঈশ্বরের বিশ্বস্ত উপাসকরা “আপনারা যে . . . বিদেশী ও প্রবাসী, ইহা স্বীকার করিয়াছিলেন।”—ইব্রীয় ১১:১৩.
২ একইভাবে খ্রিস্টের অভিষিক্ত অনুসারীরা, যারা “স্বর্গপুরীর প্রজা,” তারাও এই বর্তমান বিধিব্যবস্থায় নিজেদেরকে “বিদেশী ও প্রবাসী” বলে গণ্য করে। (ফিলি. ৩:২০; ১ পিতর ২:১১) খ্রিস্টের ‘আরও মেষও’ এই “জগতের নয়, যেমন [যিশুও] জগতের” ছিলেন না। (যোহন ১০:১৬; ১৭:১৬) কিন্তু, এর অর্থ এই নয় যে, ঈশ্বরের লোকেদের কোনো “গৃহ” নেই। সত্যি বলতে কী, আমরা সম্ভাব্য সবচেয়ে নিরাপদ এবং প্রেমপূর্ণ গৃহের সুরক্ষা উপভোগ করি, যা বিশ্বাসের চোখ দিয়ে উপলব্ধি করা যায়। মোশি লিখেছিলেন: “হে সদাপ্রভু, তুমিই আমাদের বাসস্থান হইয়া আসিতেছ, পুরুষে পুরুষে হইয়া আসিতেছ।”a (গীত. ৯০:১) কীভাবে যিহোবা প্রাচীনকালে তাঁর অনুগত দাসদের “বাসস্থান” হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিলেন? কীভাবে তিনি বর্তমানে তাঁর নামের লোকেদের “বাসস্থান”? আর কীভাবে তিনি ভবিষ্যতে একমাত্র নিরাপদ বাসস্থান হিসেবে প্রমাণিত হবেন?
যিহোবা—তাঁর প্রাচীনকালের দাসদের জন্য “বাসস্থান”
৩. গীতসংহিতা ৯০:১ পদে আমরা আলোচনার কোন বিষয়, প্রতিচ্ছবি এবং সাদৃশ্য খুঁজে পাই?
৩ বাইবেলের অনেক শব্দচিত্রের মতো গীতসংহিতা ৯০:১ পদেও আলোচনার একটা বিষয়, একটা প্রতিচ্ছবি এবং এক সাদৃশ্য রয়েছে। আলোচনার বিষয় হলেন যিহোবা। প্রতিচ্ছবি হল, বাসস্থান বা আশ্রয়স্থান। এই ধরনের স্থানের সঙ্গে যিহোবার অনেক মিল রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, যিহোবা তাঁর লোকেদের জন্য সুরক্ষা জোগান। এটা এই বিষয়টার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ যে, স্বয়ং তিনিই প্রেমের মূর্ত প্রতীক। (১ যোহন ৪:৮) এ ছাড়া, তিনি শান্তির ঈশ্বর, যিনি তাঁর অনুগত ব্যক্তিদের ‘নির্ভয়ে বাস করিতে’ দেন। (গীত. ৪:৮) উদাহরণ হিসেবে, বিশ্বস্ত কুলপতিদের সঙ্গে তাঁর আচরণ বিবেচনা করে দেখুন, যাদের মধ্যে প্রথমে রয়েছেন অব্রাহাম।
৪, ৫. কীভাবে ঈশ্বর অব্রাহামের জন্য “বাসস্থান” হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিলেন?
৪ আমরা কেবল কল্পনা করতে পারি যে, অব্রাহাম, যিনি সেই সময় অব্রাম নামে পরিচিত ছিলেন, তিনি কেমন বোধ করেছিলেন, যখন যিহোবা তাকে এই কথা বলেছিলেন: “তুমি আপন দেশ, জ্ঞাতিকুটুম্ব . . . পরিত্যাগ করিয়া, আমি যে দেশ তোমাকে দেখাই, সেই দেশে চল।” এই কথা শোনার পর অব্রাহাম যদি উদ্বিগ্ন হয়ে থাকেন, তাহলে কোনো সন্দেহ নেই যে, যিহোবার পরবর্তী কথাগুলো শোনার পর তা দূর হয়ে গিয়েছিল: “আমি তোমা হইতে এক মহাজাতি উৎপন্ন করিব, এবং তোমাকে আশীর্ব্বাদ করিয়া তোমার নাম মহৎ করিব, . . . যাহারা তোমাকে আশীর্ব্বাদ করিবে, তাহাদিগকে আমি আশীর্ব্বাদ করিব, যে কেহ তোমাকে অভিশাপ দিবে তাহাকে আমি অভিশাপ দিব।”—আদি. ১২:১-৩.
৫ এই কথাগুলোর মাধ্যমে যিহোবা নিজে অব্রাহাম ও তার বংশধরদের জন্য এক নিরাপদ বাসস্থান হয়ে উঠেছিলেন। (আদি. ২৬:১-৬) যিহোবা তাঁর প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ করেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, তিনি মিশরের ফরৌণ এবং গরারের রাজা অবীমেলককে বাধা দিয়েছিলেন, যেন তারা সারাকে ভ্রষ্টা এবং অব্রাহামকে হত্যা না করে। তিনি ইস্হাক এবং রিবিকাকেও একইভাবে সুরক্ষা করেছিলেন। (আদি. ১২:১৪-২০; ২০:১-১৪; ২৬:৬-১১) আমরা পড়ি: “[সদাপ্রভু] কোন মনুষ্যকে তাহাদের প্রতি উপদ্রব করিতে দিতেন না, বরং তাহাদের জন্য রাজগণকে অনুযোগ করিতেন; ‘আমার অভিষিক্ত ব্যক্তিদিগকে স্পর্শ করিও না, আমার ভাববাদিগণের অপকার করিও না।’”—গীত. ১০৫:১৪, ১৫.
৬. ইস্হাক যাকোবকে কী করতে বলেছিলেন এবং যাকোব হয়তো কেমন অনুভব করেছিলেন?
৬ সেই ভাববাদীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, অব্রাহামের নাতি যাকোব। যাকোবের যখন স্ত্রী গ্রহণ করার সময় হয়েছিল, তখন তার বাবা ইস্হাক তাকে বলেছিলেন: “তুমি কনান দেশীয় কোন কন্যাকে বিবাহ করিও না। উঠ, পদ্দন-অরামে আপন মাতামহ বথূয়েলের বাটীতে গিয়া সে স্থানে আপন মাতুল লাবনের কোন কন্যাকে বিবাহ কর।” (আদি. ২৮:১, ২) যাকোব সঙ্গেসঙ্গে ইস্হাকের কথা অনুযায়ী কাজ করেছিলেন। যাকোব কনানে বসবাসরত নিজ পরিবারের সুরক্ষা ত্যাগ করে স্পষ্টতই একা একা হারণে যাওয়ার জন্য শত শত কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছিলেন। (আদি. ২৮:১০) তিনি হয়তো এইরকমটা ভেবেছিলেন: ‘আমি কতদিন দূরে থাকব? আমার মামা কি আমাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাবেন এবং আমাকে একজন ঈশ্বরভয়শীল স্ত্রী দিতে রাজি হবেন?’ যাকোবের যদি এইরকম উদ্বিগ্নতা থেকে থাকে, তাহলে কোনো সন্দেহ নেই যে, তিনি যখন বের্-শেবা থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার (৬০ মাইল) দূরে অবস্থিত লূসে পৌঁছেছিলেন, তখন তা দূর হয়ে গিয়েছিল। লূসে কী ঘটেছিল?
৭. স্বপ্নের মাধ্যমে ঈশ্বর কীভাবে যাকোবকে আশ্বাস দিয়েছিলেন?
৭ লূসে, যিহোবা স্বপ্নে যাকোবকে দেখা দিয়ে বলেছিলেন: “দেখ, আমি তোমার সহবর্ত্তী, যে যে স্থানে তুমি যাইবে, সেই সেই স্থানে তোমাকে রক্ষা করিব, ও পুনর্ব্বার এই দেশে আনিব; কেননা আমি তোমাকে যাহা যাহা বলিলাম, তাহা যাবৎ সফল না করি, তাবৎ তোমাকে ত্যাগ করিব না।” (আদি. ২৮:১৫) এই সদয় কথাগুলো যাকোবকে নিশ্চয়ই কত আশ্বাস এবং সান্ত্বনাই না দিয়েছিল! আপনি কি কল্পনা করতে পারেন যে, এরপর ঈশ্বর কীভাবে তাঁর বাক্য পরিপূর্ণ করেন, তা দেখার জন্য উৎসাহিত হয়ে তিনি লম্বা পা ফেলে হাঁটছেন? আপনি যদি বাড়ি ত্যাগ করে থাকেন, হতে পারে বিদেশে গিয়ে সেবা করার জন্য, তাহলে আপনি হয়তো যাকোবের অনুভূতি বুঝতে পারেন। কিন্তু, কোনো সন্দেহ নেই যে, আপনি আপনার প্রতি যিহোবার যত্নের প্রমাণ দেখেছেন।
৮, ৯. কোন কোন উপায়ে যিহোবা যাকোবের জন্য “বাসস্থান” হয়েছিলেন এবং এটা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
৮ যাকোব যখন হারণে পৌঁছেছিলেন, তখন তার মামা লাবন তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন এবং পরবর্তী সময়ে লেয়া ও রাহেলকে স্ত্রী হিসেবে দান করেছিলেন। কিন্তু, পরে লাবন যাকোবকে স্বীয়স্বার্থে কাজে লাগিয়েছিলেন, দশ বার তার বেতন অন্যথা করেছিলেন! (আদি. ৩১:৪১, ৪২) তা সত্ত্বেও, যাকোব এই অবিচার সহ্য করেছিলেন, এই আস্থা রেখেছিলেন যে, যিহোবা ক্রমাগত তার যত্ন নেবেন—এবং তিনি নিয়েছিলেন! বস্তুতপক্ষে, ঈশ্বর যখন যাকোবকে কনানে ফিরে যেতে বলেছিলেন, তখন এই কুলপতির ‘পশু ও দাস দাসী এবং উষ্ট্র ও গর্দ্দভ যথেষ্ট হইয়াছিল।’ (আদি. ৩০:৪৩) গভীর উপলব্ধি সহকারে তিনি এই প্রার্থনা করেছিলেন: “তুমি এই দাসের প্রতি যে সমস্ত দয়া ও যে সমস্ত সত্যাচরণ করিয়াছ, আমি তাহার কিছুরই যোগ্য নই; কেননা আমি নিজ যষ্টিখানি লইয়া এই যর্দ্দন পার হইয়াছিলাম, এখন দুই দল হইয়াছি।”—আদি. ৩২:১০.
৯ হ্যাঁ, মোশির এই প্রার্থনার অভিব্যক্তি কতই না সত্য: “হে সদাপ্রভু, তুমিই আমাদের বাসস্থান হইয়া আসিতেছ, পুরুষে পুরুষে হইয়া আসিতেছ”! (গীত. ৯০:১) এই কথাগুলো বর্তমানেও সমভাবে প্রযোজ্য কারণ যিহোবা, “যাঁহাতে অবস্থান্তর কিম্বা পরিবর্ত্তনজনিত ছায়া হইতে পারে না,” তিনি তাঁর অনুগত ব্যক্তিদের জন্য ক্রমাগত এক উষ্ণ ও নিরাপদ বাসস্থান হবেন। (যাকোব ১:১৭) আসুন আমরা বিবেচনা করি যে, কীভাবে।
যিহোবা—বর্তমানে আমাদের “বাসস্থান”
১০. কেন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবা তাঁর দাসদের জন্য ক্রমাগত এক নিরাপদ বাসস্থান হবেন?
১০ এই বিষয়টা কল্পনা করুন: আপনি এক আন্তর্জাতিক অপরাধী সংগঠনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছেন। এর নেতা খুবই ধূর্ত, শক্তিশালী এবং চরম মিথ্যাবাদী ও খুনি। দিনের শেষে আপনি যখন আদালতের বাইরে যাবেন, তখন আপনি কেমন বোধ করবেন? নিরাপদ? একেবারেই না! বাস্তবিকপক্ষে, সুরক্ষার জন্য অনুরোধ করার উত্তম কারণ আপনার রয়েছে। এই দৃশ্যটা যিহোবার সেই দাসদের পরিস্থিতি তুলে ধরে, যারা যিহোবার পক্ষে সাহসের সঙ্গে সাক্ষ্য প্রদান করে এবং তাঁর প্রধান বিদ্বেষী শত্রু শয়তানকে নির্ভীকভাবে প্রকাশ করে দেয়! (পড়ুন, প্রকাশিত বাক্য ১২:১৭.) কিন্তু, শয়তান কি ঈশ্বরের লোকেদের থামাতে পেরেছে? না! এর বিপরীতে, আমরা আধ্যাত্মিকভাবে ক্রমাগত সমৃদ্ধি লাভ করছি—এটা এমন এক বাস্তবতা, যেটার কেবল একটাই ব্যাখ্যা থাকতে পারে: যিহোবা এখনও আমাদের আশ্রয়স্থান, আমাদের জন্য “বাসস্থান” আর তা বিশেষভাবে এই শেষকালে। (পড়ুন, যিশাইয় ৫৪:১৪, ১৭.) কিন্তু, এটা বলা যায় যে, আমরা যদি আমাদের বাসস্থান থেকে প্রলুব্ধ করে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য শয়তানকে সুযোগ দিই, তাহলে যিহোবা আমাদের নিরাপদ বাসস্থান হবেন না।
১১. কুলপতিদের কাছ থেকে আমরা কোন শিক্ষা লাভ করতে পারি?
১১ আসুন, আমরা আরেক বার কুলপতিদের কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করি। যদিও তারা কনান দেশে বাস করত কিন্তু তারা সেই দেশের লোকেদের কাছ থেকে পৃথক ছিল, যাদের মন্দ ও অনৈতিক পথগুলোকে তারা ঘৃণা করত। (আদি. ২৭:৪৬) তারা নীতি অনুসরণকারী ছিল, কী করতে হবে এবং কী করতে হবে না, সেই বিষয়ে পরিচালনা লাভের জন্য কোনো দীর্ঘ তালিকার ওপর নির্ভর করত না। যিহোবা এবং তাঁর ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে তারা যা জানত, সেটাই তাদের জন্য যথেষ্ট ছিল। যেহেতু তিনি তাদের বাসস্থান ছিলেন, তাই তারা এটা দেখতে চাইত না যে, তারা এই জগতের কতটা কাছাকাছি যেতে পারে। এর পরিবর্তে, তারা এই জগৎ থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকত। আমাদের জন্য তারা কতই না চমৎকার এক উদাহরণ স্থাপন করেছে! সঙ্গীসাথি এবং আমোদপ্রমোদ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আপনি কি বিশ্বস্ত কুলপতিদের অনুকরণ করার প্রচেষ্টা করেন? দুঃখের বিষয় হল, খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর কেউ কেউ এই প্রমাণ দিয়েছে যে, অন্ততপক্ষে কিছুটা হলেও তারা শয়তানের জগতে স্বচ্ছন্দ বোধ করে। আপনি যদি সামান্য হলেও এইরকম অনুভব করেন, তাহলে বিষয়টা নিয়ে প্রার্থনা করুন। মনে রাখবেন যে, এই জগৎ শয়তানের। এটা তার উদাসীন ও স্বার্থপর মনোভাবকে প্রতিফলিত করে।—২ করি. ৪:৪; ইফি. ২:১, ২.
১২. (ক) কীভাবে যিহোবা তাঁর আধ্যাত্মিক পরিবারের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জোগান? (খ) এই ব্যবস্থাগুলো সম্বন্ধে আপনি কেমন বোধ করেন?
১২ শয়তানের চাতুরীগুলো প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের সেই আধ্যাত্মিক ব্যবস্থাগুলো থেকে পূর্ণ উপকার লাভ করতে হবে, যেগুলো যিহোবা তাঁর বিশ্বাসবাটীর পরিজনদের জন্য অর্থাৎ তাঁকে বাসস্থান করে এমন ব্যক্তিদের জন্য করেছেন। এই ব্যবস্থাগুলোর অন্তর্ভুক্ত হল, খ্রিস্টীয় সভা, পারিবারিক উপাসনা এবং ‘মনুষ্যদিগের নানা বর’ বা দানরূপ মানুষ—সেই পালকরা, যারা আমাদেরকে জীবনের প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর সঙ্গে লড়াই করার সময় সান্ত্বনা এবং সাহায্য প্রদান করার জন্য ঈশ্বরের দ্বারা নিযুক্ত হয়েছে। (ইফি. ৪:৮-১২) ভাই জর্জ গানগাস, যিনি বেশ কয়েক বছর ধরে পরিচালকগোষ্ঠীর সদস্য ছিলেন, তিনি লিখেছিলেন: “আমি যখন [ঈশ্বরের লোকেদের] মাঝে থাকি, তখন আমার মনে হয় যেন আমি আমার পরিবারের সঙ্গে বাড়িতেই, এক আধ্যাত্মিক পরমদেশে রয়েছি।” আপনিও কি একইরকম অনুভব করেন?
১৩. ইব্রীয় ১১:১৩ পদ থেকে আমরা কোন গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা লাভ করতে পারি?
১৩ কুলপতিদের আরেকটা যে-গুণ অনুকরণযোগ্য, তা হল তাদের চারপাশের লোকেদের চেয়ে আলাদা থাকার ব্যাপারে তাদের ইচ্ছুক মনোভাব। ১ অনুচ্ছেদে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, তারা “আপনারা যে পৃথিবীতে বিদেশী ও প্রবাসী, ইহা স্বীকার করিয়াছিলেন।” (ইব্রীয় ১১:১৩) আপনি কি আলাদা থাকার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ? এটা ঠিক যে, তা করা সবসময় সহজ নয়। কিন্তু, ঈশ্বরের সাহায্যে এবং আপনার সহখ্রিস্টানদের সাহায্যে আপনি সফল হতে পারেন। মনে রাখবেন যে, আপনি একা নন। যিহোবাকে সেবা করে এমন সকলেই মল্লযুদ্ধ করছে! (ইফি. ৬:১২) তা সত্ত্বেও, এটা এমন এক যুদ্ধ, যেটাতে আমরা জয়ী হতে পারি, যদি আমরা যিহোবার ওপর নির্ভর করি এবং তাঁকে আমাদের নিরাপদ বাসস্থান করে তুলি।
১৪. যিহোবার দাসেরা কোন “নগরের” অপেক্ষা করে এসেছে?
১৪ এই বিষয়টাও গুরুত্বপূর্ণ: পুরস্কারের প্রতি চোখ রাখার মাধ্যমে অব্রাহামকে অনুকরণ করুন। (২ করি. ৪:১৮) প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন যে, অব্রাহাম “ভিত্তিমূলবিশিষ্ট সেই নগরের অপেক্ষা করিতেছিলেন, যাহার স্থাপনকর্ত্তা ও নির্ম্মাতা ঈশ্বর।” (ইব্রীয় ১১:১০) সেই ‘নগর’ হল মশীহ রাজ্য। অবশ্য, অব্রাহামকে সেই “নগরের” জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল। এক অর্থে, আমাদের করতে হচ্ছে না। এটা এখন স্বর্গে শাসন করছে। এ ছাড়া, অসংখ্য প্রমাণ দেখায় যে, এটা শীঘ্র পৃথিবীকে পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করবে। সেই রাজ্য কি আপনার কাছে বাস্তব? এটা কি জীবন ও বর্তমান জগৎ সম্বন্ধে আপনার দৃষ্টিভঙ্গিকে এবং আপনার অগ্রাধিকারের বিষয়গুলোকে প্রভাবিত করে?—পড়ুন, ২ পিতর ৩:১১, ১২.
যিহোবা সবসময় আমাদের বাসস্থান হিসেবে থাকবেন
১৫. যারা বর্তমান জগতের ওপর নির্ভর করে, তাদের জন্য কোন ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে?
১৫ শয়তানের জগতের শেষ নিকটবর্তী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর ‘যাতনাও’ বৃদ্ধি পাবে। (মথি ২৪:৭, ৮) নিশ্চিতভাবেই, মহাক্লেশের সময় পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। মৌলিক সুযোগসুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে এবং লোকেরা নিজেদের জীবন নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়বে। (হবক্. ৩:১৬, ১৭) একেবারে নিরাশ হয়ে তারা রূপকভাবে “গুহাতে ও পর্ব্বতীয় শৈলে” আশ্রয় খুঁজবে। (প্রকা. ৬:১৫-১৭) কিন্তু, আক্ষরিক গুহা কিংবা পর্বততুল্য রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক সংগঠন কোনো সুরক্ষা জোগাতে পারবে না।
১৬. খ্রিস্টীয় মণ্ডলীকে আমাদের কীভাবে দেখা উচিত এবং কেন?
১৬ কিন্তু, যিহোবার লোকেরা ক্রমাগত তাদের “বাসস্থান” যিহোবা ঈশ্বরের কাছ থেকে প্রাপ্ত নিরাপত্তা লাভ করবে। ভাববাদী হবক্কূকের মতো তারা ‘সদাপ্রভুতে আনন্দ করিবে।’ তারা ‘তাহাদের ত্রাণেশ্বরে উল্লাসিত হইবে।’ (হবক্. ৩:১৮) সেই অশান্ত সময়ে কোন কোন উপায়ে যিহোবা “বাসস্থান” হিসেবে প্রমাণিত হবেন? কী ঘটে, তা দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু, এই বিষয়ে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি: যাত্রার সময়ের ইস্রায়েলীয়দের মতো, ‘বিস্তর লোকও’ সংগঠিত থাকবে, ঐশিক নির্দেশনার প্রতি আগের চেয়ে আরও বেশি সতর্ক থাকবে। (প্রকা. ৭:৯; পড়ুন, যাত্রাপুস্তক ১৩:১৮.) সেই নির্দেশনা ঈশতান্ত্রিক উপায়ে, সম্ভবত মণ্ডলীর ব্যবস্থার মাধ্যমে আসবে। বস্তুতপক্ষে, সারা পৃথিবীর হাজার হাজার মণ্ডলী, যিশাইয় ২৬:২০ পদে ভবিষ্যদ্বাণীকৃত সুরক্ষামূলক ‘অন্তরাগার’ হিসেবে প্রতীয়মান হবে বলে মনে হয়। (পড়ুন।) মণ্ডলীর সভাগুলোকে কি আপনি মূল্যবান বলে গণ্য করেন? মণ্ডলীর ব্যবস্থার মাধ্যমে যিহোবা যে-নির্দেশনা প্রদান করেন, সেটার প্রতি কি আপনি সঙ্গেসঙ্গে সাড়া দেন?—ইব্রীয় ১৩:১৭.
১৭. কোন উপায়ে যিহোবা এমনকী তাঁর সেই অনুগত দাসদের জন্যও “বাসস্থান,” যারা মারা গিয়েছে?
১৭ এমনকী সেই ব্যক্তিরাও তাদের “বাসস্থান” যিহোবার সঙ্গে নিরাপদে থাকবে, যারা হয়তো মহাক্লেশ শুরু হওয়ার আগে বিশ্বস্তভাবে মারা যায়। কীভাবে? বিশ্বস্ত কুলপতিরা মারা যাওয়ার দীর্ঘসময় পর, যিহোবা মোশিকে এই কথা বলেছিলেন: “আমি . . . অব্রাহামের ঈশ্বর, ইস্হাকের ঈশ্বর ও যাকোবের ঈশ্বর।” (যাত্রা. ৩:৬) এই কথাগুলো উদ্ধৃত করার পর, যিশু আরও বলেছিলেন: “ঈশ্বর ত মৃতদের ঈশ্বর নহেন, কিন্তু জীবিতদের; কেননা তাঁহার সাক্ষাতে সকলেই জীবিত।” (লূক ২০:৩৮) হ্যাঁ, যিহোবার যে-অনুগত দাসেরা তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থেকে মারা গিয়েছে, তারা সকলেই তাঁর কাছে জীবিত; তাদের পুনরুত্থান নিশ্চিত।—উপ. ৭:১.
১৮. নতুন জগতে কীভাবে যিহোবা এক বিশেষ উপায়ে তাঁর লোকেদের জন্য “বাসস্থান” হিসেবে প্রমাণিত হবেন?
১৮ একেবারে সম্মুখস্থ নতুন জগতে যিহোবা আরেক অর্থে তাঁর লোকেদের জন্য “বাসস্থান” হবেন। প্রকাশিত বাক্য ২১:৩ পদ বলে: “দেখ, মনুষ্যদের সহিত ঈশ্বরের আবাস; তিনি তাহাদের সহিত বাস করিবেন।” শুরুতে, যিহোবা খ্রিস্ট যিশুর মাধ্যমে তাঁর পার্থিব প্রজাদের সঙ্গে বাস করবেন। হাজার বছর শেষে, যিশু তাঁর পিতার কাছে রাজ্য সমর্পণ করবেন, পৃথিবীর জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্য পূর্ণরূপে সম্পাদন করবেন। (১ করি. ১৫:২৮) এরপর, সিদ্ধ মানবজাতির জন্য মধ্যস্থতাকারী হিসেবে যিশুর আর প্রয়োজন হবে না; যিহোবা তাদের সঙ্গে থাকবেন। আমাদের সামনে কতই না অপূর্ব প্রত্যাশা রয়েছে! তাহলে, এই সময়ের মধ্যে আসুন আমরা যিহোবাকে আমাদের “বাসস্থান” করার মাধ্যমে প্রাচীনকালের বিশ্বস্ত লোকেদের অনুকরণ করার চেষ্টা করি।
[পাদটীকা]
a ইজি-টু-রিড ভারসন গীতসংহিতা ৯০:১ পদকে এভাবে অনুবাদ করে: “হে প্রভু, আমাদের সমস্ত প্রজন্মের জন্য আপনি আমাদের গৃহ ছিলেন।”
[১৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]
‘আমি তোমাকে ত্যাগ করিব না’
[২২ পৃষ্ঠার চিত্র]
ঈশ্বরের দূতেরা তাঁর দাসদের সাহায্য ও সুরক্ষা করে