অগ্রগামীর কাজ ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে শক্তিশালী করে
“আমাদের ঈশ্বরের প্রশংসা গান করা উত্তম।” —গীত. ১৪৭:১.
ধ্যানের জন্য প্রশ্নগুলো
কীভাবে অগ্রগামীর কাজ যিহোবার সঙ্গে আপনার সম্পর্ককে শক্তিশালী করতে পারে?
আপনি যদি একজন অগ্রগামী হয়ে থাকেন, তাহলে সেবার এই পরিতৃপ্তিদায়ক ক্ষেত্রটাতে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য কী আপনাকে সাহায্য করতে পারে?
আপনি যদি এখন একজন অগ্রগামী না হয়ে থাকেন, তাহলে কোন রদবদল আপনাকে একজন অগ্রগামী হওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে?
১, ২. (ক) কোনো প্রিয় ব্যক্তি সম্বন্ধে চিন্তা করা এবং কথা বলার ফল কী হতে পারে? (শিরোনামের পাশে দেওয়া ছবিটা দেখুন।) (খ) আমরা কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করব?
কোনো প্রিয়জন সম্বন্ধে চিন্তা করা এবং কথা বলা, সেই ব্যক্তির সঙ্গে আমাদের বন্ধনকে শক্তিশালী করতে পারে। যিহোবা ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একই বিষয় সত্য। একজন মেষপালক হিসেবে দায়ূদ অনেক রাত, তারাভরা আকাশ দেখে এবং তাদের অতুলনীয় সৃষ্টিকর্তা সম্বন্ধে ধ্যান করে কাটিয়েছিলেন। তিনি লিখেছিলেন: “আমি তোমার অঙ্গুলি-নির্ম্মিত আকাশমণ্ডল, তোমার স্থাপিত চন্দ্র ও তারকামালা নিরীক্ষণ করি, [বলি], মর্ত্ত্য কি যে, তুমি তাহাকে স্মরণ কর? মনুষ্য-সন্তান বা কি যে, তাহার তত্ত্বাবধান কর?” (গীত. ৮:৩, ৪) আর আধ্যাত্মিক ইস্রায়েল সম্বন্ধে যিহোবার উদ্দেশ্য কীভাবে অপূর্ব উপায়ে পরিপূর্ণ হয়েছে, তা বিবেচনা করার পর, প্রেরিত পৌল উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেছিলেন: “আহা! ঈশ্বরের ধনাঢ্যতা ও প্রজ্ঞা ও জ্ঞান কেমন অগাধ!”—রোমীয় ১১:১৭-২৬, ৩৩.
২ আমরা যখন পরিচর্যায় অংশ নিই, তখন আমরা যিহোবা সম্বন্ধে চিন্তা করি এবং কথা বলি। এর অনেক ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। পূর্ণসময়ের পরিচর্যায় রত হতে সমর্থ হয়েছে এমন অনেকে দেখেছে যে, রাজ্যের সেবায় তাদের অংশটুকু বাড়ানোর ফলে একটা যে-আশীর্বাদ লাভ করা গিয়েছে, তা হল এটা ঈশ্বরের প্রতি তাদের প্রেমকে গভীর করেছে। বর্তমানে আপনি পূর্ণসময়ের সেবায় রত থাকুন কিংবা সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য কাজ করছেন, যা-ই হোক না কেন, এটা বিবেচনা করে দেখুন: কীভাবে পূর্ণসময়ের পরিচর্যা যিহোবার সঙ্গে আপনার সম্পর্ককে শক্তিশালী করতে পারে? আপনি যদি একজন অগ্রগামী হয়ে থাকেন, তাহলে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘কি আমাকে সেবার এই পরিতৃপ্তিদায়ক ক্ষেত্রটাতে কাজ চালিয়ে যেতে সাহায্য করবে?’ আপনি যদি এখনও অগ্রগামীর কাজ না করে থাকেন, তাহলে জিজ্ঞেস করুন, ‘তা শুরু করার জন্য আমি কোন রদবদল করতে পারি?’ আসুন আমরা এমন উপায়গুলো সম্বন্ধে বিবেচনা করি, যেগুলোর মাধ্যমে পূর্ণসময়ের সেবা ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে শক্তিশালী করতে পারে।
পূর্ণসময়ের সেবা এবং ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক
৩. পরিচর্যায় রাজ্যের ভাবী আশীর্বাদগুলো নিয়ে কথা বলার মাধ্যমে আমরা কীভাবে প্রভাবিত হই?
৩ রাজ্যের ভাবী আশীর্বাদগুলো নিয়ে অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করা আমাদেরকে যিহোবার নিকটবর্তী করে। আপনি যখন ঘরে ঘরে প্রচারে যান, তখন কোন শাস্ত্রপদগুলো ব্যবহার করতে আপনার ভালো লাগে? আপনার প্রিয় পদ কি গীতসংহিতা ৩৭:১০, ১১; দানিয়েল ২:৪৪; যোহন ৫:২৮, ২৯; অথবা প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪ পদ? প্রতি বার আমরা যখন অন্যদের সঙ্গে এই ধরনের প্রতিজ্ঞা নিয়ে আলোচনা করি, তখন আমরা নিজেদের মনে করিয়ে দিই যে, আমাদের উদার ঈশ্বর সত্যিই ‘সমস্ত উত্তম দান এবং সিদ্ধ বরের’ দাতা। এটা আমাদেরকে তাঁর আরও নিকটবর্তী করে।—যাকোব ১:১৭.
৪. আমরা যখন অন্যদের চরম আধ্যাত্মিক অবস্থা দেখি, তখন কেন ঈশ্বরের মঙ্গলভাবের প্রতি আমাদের উপলব্ধি গভীর হয়?
৪ আমরা যাদের কাছে প্রচার করি, তাদের চরম আধ্যাত্মিক অবস্থা দেখার পর, সত্যের প্রতি আমাদের উপলব্ধি গভীর হয়। সফলতা এবং সুখ লাভ করার ব্যাপারে সাহায্য করার জন্য জগতের লোকেদের কোনো নির্ভরযোগ্য নির্দেশনা নেই। অধিকাংশ লোকই ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করে এবং তাদের কোনো আশা নেই। তারা জীবনের অর্থ কী, তা জানতে চায়। এমনকী অধিকাংশ ধর্মপ্রাণ লোকেরও শাস্ত্র সম্বন্ধে খুব সামান্যই জ্ঞান রয়েছে। তারা অনেকটা প্রাচীন নীনবীর লোকেদের মতো। (পড়ুন, যোনা ৪:১১.) আমরা যখন পরিচর্যায় আমাদের অংশটুকু বৃদ্ধি করি, তখন যাদের কাছে আমরা প্রচার করি, তাদের আধ্যাত্মিক অবস্থার সঙ্গে যিহোবার লোকেদের আধ্যাত্মিক অবস্থার যে-পার্থক্য রয়েছে, তা আরও স্পষ্টভাবে দেখতে পাই। (যিশা. ৬৫:১৩) আমাদেরকে এই অর্থে যিহোবার মঙ্গলভাব সম্বন্ধে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় যে, তিনি আমাদের আধ্যাত্মিক চাহিদাগুলো জোগানোর চেয়ে আরও বেশি কিছু করেন; তিনি সকলকে আধ্যাত্মিক সতেজতা এবং এক প্রকৃত আশা লাভ করার জন্য আমন্ত্রণ জানান।—প্রকা. ২২:১৭.
৫. কীভাবে অন্যদেরকে আধ্যাত্মিকভাবে সাহায্য করা আমাদেরকে নিজেদের সমস্যাগুলো সম্বন্ধে বুঝতে সাহায্য করে?
৫ অন্যদেরকে আধ্যাত্মিকভাবে সাহায্য করলে আমরা ব্যক্তিগত সমস্যাগুলোর দ্বারা জর্জরিত হওয়ার বিষয়টা আরও সহজে এড়াতে পারি। ত্রিশা নামে একজন নিয়মিত অগ্রগামী এই সত্যতার প্রমাণ পেয়েছিলেন, যখন তার বাবা-মায়ের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছিল। তিনি বলেন: “এটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনার মধ্যে একটা।” একদিন তার মন বেশ খারাপ ছিল এবং ঘরের বাইরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছিল না কিন্তু তারপরও তিনি তিন জন ছোটো ছেলে-মেয়েকে বাইবেল অধ্যয়ন করানোর জন্য বের হয়েছিলেন, যাদের ঘরের পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ ছিল। তাদের বাবা তাদেরকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন এবং তাদের দাদা তাদের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করতেন। ত্রিশা বলেন: “আমি যে-সমস্যা বা দুঃখ ভোগ করছিলাম, তা তাদের তুলনায় কিছুই ছিল না। আমরা যখন অধ্যয়ন করছিলাম, তখন তাদের চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল এবং তারা উচ্ছ্বাস ও আনন্দে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিল। তারা ছিল যিহোবার কাছ থেকে প্রাপ্ত একটা উপহার আর তা বিশেষভাবে সেই দিনটাতে।”
৬, ৭. (ক) আমরা যখন বাইবেলের সত্য সম্বন্ধে শিক্ষা দিই, তখন আমাদের বিশ্বাস কীভাবে শক্তিশালী হয়? (খ) আমরা যখন বাইবেল ছাত্র-ছাত্রীকে শাস্ত্রীয় নীতিগুলো কাজে লাগিয়ে জীবনকে উন্নত করতে দেখি, তখন ঈশ্বরের প্রজ্ঞার প্রতি আমাদের উপলব্ধি কেমন হয়?
৬ বাইবেলের সত্য সম্বন্ধে শেখানো আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে। প্রেরিত পৌল তার দিনের কিছু যিহুদি সম্বন্ধে লিখেছিলেন, যারা তাদের প্রচারিত বার্তা অনুযায়ী কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছিল: “তুমি যে পরকে শিক্ষা দিতেছ, তুমি কি আপনাকে শিক্ষা দেও না?” (রোমীয় ২:২১) বর্তমানে, অগ্রগামীদের ক্ষেত্রে এটা কতই-না আলাদা! সাধারণত অন্যদের সত্য শেখানোর এবং তাদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করার অনেক সুযোগ তাদের রয়েছে। কার্যকারীভাবে তা করার জন্য তাদের প্রতিটা অধ্যয়নের আগে প্রস্তুতি নেওয়ার এবং প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য হয়তো গবেষণা করার প্রয়োজন হয়। জানিন নামে একজন অগ্রগামী ব্যাখ্যা করেন: “প্রতি বার আমি যখন অন্যদের সত্য সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাই, তখন আমি উপলব্ধি করি যে, এই সত্যগুলো আমার মন ও হৃদয়ের একেবারে ভিতরে গভীর ছাপ ফেলেছে। এর ফলে আমার বিশ্বাস থেমে থাকে না বরং ক্রমাগত বৃদ্ধি পায়।”
৭ বাইবেল ছাত্র-ছাত্রীকে বাইবেলের নীতিগুলো কাজে লাগিয়ে জীবনকে উন্নত করতে দেখা, ঈশ্বরের প্রজ্ঞার প্রতি আমাদের উপলব্ধিকে গভীর করে। (যিশা. ৪৮:১৭, ১৮) এর ফলে, এই বিষয়টা নিজেদের জীবনে এই নীতিগুলো ক্রমাগত কাজে লাগানোর জন্য আমাদের আরও দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হতে অনুপ্রাণিত করে। অ্যাড্রিয়ানা নামে আরেকজন অগ্রগামী মন্তব্য করেন: “লোকেরা যখন নিজেদের প্রজ্ঞার ওপর নির্ভর করে, তখন তাদের জীবন বিশৃঙ্খল হয়ে পড়তে পারে। কিন্তু, তারা যখন যিহোবার প্রজ্ঞার ওপর নির্ভর করতে শুরু করে, তখন সঙ্গেসঙ্গে উপকার পাওয়া যায়।” একইভাবে, ফিল নামে একজন অগ্রগামী বলেন: “যে-লোকেরা নিজে নিজে পরিবর্তন হওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছিল, তাদেরকে যিহোবা কীভাবে পরিবর্তন করেন, তা আপনি দেখতে পারেন।”
৮. কীভাবে পরিচর্যায় উত্তম সহযোগীদের সঙ্গে কাজ করা আমাদের প্রভাবিত করে?
৮ পরিচর্যায় উত্তম সহযোগীদের সঙ্গে কাজ করা আধ্যাত্মিকভাবে গড়ে তোলে। (হিতো. ১৩:২০) অধিকাংশ অগ্রগামী পরিচর্যায় সহসুসমাচার প্রচারকদের সঙ্গে যথেষ্ট সময় কাজ করে। এটা “উভয় পক্ষের . . . আশ্বাস” লাভ করার আরও সুযোগ প্রদান করে। (রোমীয় ১:১২; পড়ুন, হিতোপদেশ ২৭:১৭.) লিসা নামে একজন অগ্রগামী বলেন: “কর্মক্ষেত্রে প্রায়ই প্রতিযোগী এবং ঈর্ষাপরায়ণ মনোভাব দেখা যায়। প্রতিদিন আপনাকে গুজব এবং আজেবাজে কথাবার্তার মুখোমুখি হতে হয়। আর এর কারণ হল, যেকোনো মূল্যে হোক অন্যদের আগে যাওয়া। মাঝে মাঝে, আপনার খ্রিস্টীয় আচরণের কারণে আপনাকে উপহাস ও বিদ্রূপ করা হয়। কিন্তু, পরিচর্যায় সহখ্রিস্টানদের সঙ্গে কাজ করা সত্যিই গঠনমূলক। দিনের শেষে আমি যত ক্লান্তই হই না কেন, সতেজ হয়ে ঘরে ফিরতে পারি।”
৯. আমাদের বিবাহসাথির সঙ্গে অগ্রগামীর কাজ করা বিবাহের ত্রিগুণ সূত্রকে কী করতে পারে?
৯ আমাদের বিবাহসাথির সঙ্গে অগ্রগামীর কাজ করা, বিবাহের ত্রিগুণ সূত্রকে শক্তিশালী করে। (উপ. ৪:১২) ম্যাডলিন, যিনি তার স্বামীর সঙ্গে অগ্রগামীর কাজ করেন, তিনি বলেন: “আমি এবং আমার স্বামী, পরিচর্যায় আমাদের দিন কেমন কেটেছে, সেটা নিয়ে অথবা বাইবেল পাঠ থেকে প্রাপ্ত এমন কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য একত্রে সময় কাটাতে পারি, যা আমরা আমাদের পরিচর্যায় কাজে লাগাতে পারি। প্রতি বছর আমরা যখন একত্রে অগ্রগামীর কাজ করি, তখন আমরা পরস্পরের আরও নিকটবর্তী হই।” একইভাবে, ত্রিশা বলেন: “আমরা দু-জনেই লক্ষ রাখি যেন আমরা ঋণের দায়ে জড়িয়ে না পড়ি আর এর ফলে টাকাপয়সা নিয়ে আমাদের মধ্যে ঝগড়া হয় না। আমাদের দু-জনেরই পরিচর্যার একই তালিকা রয়েছে, তাই আমরা পরস্পরের পুনর্সাক্ষাৎ এবং বাইবেল অধ্যয়ন নিয়ে খুবই ব্যস্ত থাকি, যা আমাদেরকে আবেগগতভাবে এবং আধ্যাত্মিকভাবে একই মনোভাব বজায় রাখতে সাহায্য করে।”
১০. আমরা যখন রাজ্যকে প্রথমে রাখি এবং ঈশ্বরের সমর্থন লাভ করি, তখন যিহোবার প্রতি আমাদের নির্ভরতা কীভাবে প্রভাবিত হয়?
১০ আমরা যখন রাজ্যের বিষয়গুলোকে প্রথমে রাখি, যিহোবার সমর্থন লাভ করি এবং তাঁকে আমাদের প্রার্থনার উত্তর দিতে দেখি, তখন যিহোবার প্রতি আমাদের নির্ভরতা বৃদ্ধি পায়। সমস্ত অনুগত খ্রিস্টানের বেলায় এটা সত্য। কিন্তু, যারা পূর্ণসময়ের সেবা করে, তারা দেখেছে যে, যিহোবার ওপর নির্ভর করা তাদেরকে অগ্রগামীর কাজ চালিয়ে যেতে সাহায্য করে। (পড়ুন, মথি ৬:৩০-৩৪.) কার্ট নামে একজন অগ্রগামী এবং বিকল্প সীমা অধ্যক্ষকে যখন তার বাড়ি থেকে আড়াই ঘন্টার পথ দূরে অবস্থিত একটা মণ্ডলী পরিদর্শন করার কথা বলা হয়, তখন তিনি তাতে রাজি হন। তার স্ত্রীও একজন অগ্রগামী আর তাদের কাছে গাড়ির জন্য যতটুকু পেট্রোল ছিল, সেটা দিয়ে তারা সেই মণ্ডলীতে যেতে পারবেন কিন্তু ফিরে আসতে পারবেন না আর ভাইয়ের বেতন পেতে তখনও এক সপ্তাহ বাকি ছিল। কার্ট বলেন: “আমি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি কি না, তা নিয়ে সন্দেহ করতে শুরু করি।” প্রার্থনা করার পর, তারা এই উপসংহারে আসে যে, তারা সেই কার্যভার পালন করবে এবং এই আস্থা রাখে যে, ঈশ্বর তাদের প্রয়োজন মেটাবেন। তারা বের হতে যাচ্ছিল এমন সময় একজন বোন তাদেরকে টেলিফোন করেন এবং বলেন যে, তাদের জন্য একটা উপহার রয়েছে। আর ওই উপহারের মধ্যে ঠিক সেই পরিমাণ টাকাই ছিল, যতটুকু তাদের ফিরে আসার জন্য প্রয়োজন। কার্ট বলেন, “আপনি যখন বার বার একই অভিজ্ঞতা লাভ করেন, তখন সহজেই বোঝা যায় যে, যিহোবা আপনার সঙ্গে আছেন।”
১১. অগ্রগামীর উপভোগ করে এমন কিছু আশীর্বাদ সম্বন্ধে বলুন।
১১ হ্যাঁ, অগ্রগামীরা প্রায়ই দেখেছে যে, তারা যখন যিহোবার সেবায় নিজেদের বিলিয়ে দেয় এবং তাঁর সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক বজায় রাখে, তখন তাদের ওপর আপাতদৃষ্টিতে অপরিমেয় আশীর্বাদ “আশ্রয়” করে। (দ্বিতীয়. ২৮:২) তবে, অগ্রগামী কাজের বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বিতাও রয়েছে। ঈশ্বরের কোনো দাসই আদমের বিদ্রোহের কারণে প্রাপ্ত সমস্যাগুলো থেকে মুক্ত নয়। যদিও কিছু অগ্রগামীকে অল্পসময়ের জন্য সেবা বন্ধ করতে হয়েছে কিন্তু তারা দেখেছে যে, প্রায়ই সেই সমস্যাগুলো সমাধান করা যেতে পারে অথবা এমনকী এড়ানো যেতে পারে। কোন বিষয়টা হয়তো অগ্রগামীদেরকে তাদের বিশেষ সেবা উপভোগ করে চলার জন্য সাহায্য করে?
পূর্ণসময়ের সেবা চালিয়ে যাওয়া
১২, ১৩. (ক) একজন অগ্রগামী যদি তার নির্দিষ্ট ঘন্টা পূরণ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন, তাহলে তার কী করা উচিত? (খ) কেন নিয়মিতভাবে বাইবেল পাঠ, ব্যক্তিগত অধ্যয়ন এবং ধ্যান করার জন্য তালিকা করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ?
১২ অধিকাংশ অগ্রগামীরই অত্যন্ত ব্যস্ত এক তালিকা রয়েছে। সমস্তকিছু সম্পাদন করা মুশকিল হতে পারে, তাই এক উত্তম ব্যক্তিগত পরিকল্পনা করা গুরুত্বপূর্ণ। (১ করি. ১৪:৩৩, ৪০) কোনো অগ্রগামীর পক্ষে যদি নির্দিষ্ট ঘন্টা পূরণ করা কঠিন হয়, তাহলে তিনি কীভাবে তার সময় ব্যবহার করছেন, তা হয়তো পুনরায় পরীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন। (ইফি. ৫:১৫, ১৬) তিনি হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারেন: ‘বিনোদন অথবা অবসর সময় কাটানোর পিছনে আমি আসলে কতটা সময় ব্যয় করছি? আমার কি আরও বেশি আত্মশাসনের প্রয়োজন? আমি কি আমার জাগতিক কাজের তালিকা রদবদল করতে পারি?’ যেকোনো খ্রিস্টানই স্বীকার করবেন যে, কারো তালিকার মধ্যে কোনো কিছু যুক্ত করা সহজ; তাই, যারা পূর্ণসময়ের সেবা করে, তাদের হয়তো বিভিন্ন বিষয় নিয়মিতভাবে মূল্যায়ন করতে এবং প্রয়োজন হলে রদবদল করতে হবে।
১৩ দৈনিক বাইবেল পাঠ, ব্যক্তিগত অধ্যয়ন এবং ধ্যান করার বিষয়টা একজন অগ্রগামীর তালিকার অংশ হতে হবে। একইসঙ্গে, একজন অগ্রগামীর আত্মশাসনের প্রয়োজন, যাতে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর জন্য তিনি যে-সময় আলাদা করে রেখেছেন, সেখানে কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ঢুকে না পড়ে। (ফিলি. ১:১০, পাদটীকা।) উদাহরণ স্বরূপ, কল্পনা করুন যে একজন অগ্রগামী সারাদিন পরিচর্যা শেষে ঘরে ফিরে এসেছেন। তিনি সেই দিন বিকেলে পরবর্তী সভার জন্য প্রস্তুতি নেবেন বলে ঠিক করেছেন। কিন্তু, প্রথমে তিনি তার চিঠি পড়েন। এরপর, কম্পিউটার খোলেন এবং ই-মেইল পড়ে সেগুলোর উত্তর দেন। অনলাইনে থাকাকালীন, তিনি একটা ওয়েবসাইটে যান এটা দেখার জন্য যে, তিনি যে-জিনিসটা কিনতে চান, সেটার দাম কমেছে কি না। তিনি টেরই পান না যে, প্রায় দু-ঘন্টা পার হয়ে গিয়েছে এবং তিনি সেই দিন বিকেলে যা অধ্যয়ন করবেন বলে ঠিক করেছেন, তা শুরুই করতে পারেননি। কেন এটা একটা গুরুতর বিষয়? দক্ষ ক্রীড়াবিদরা যদি দীর্ঘসময় ধরে তাদের কেরিয়ার ধরে রাখতে চায়, তাহলে তাদেরকে অবশ্যই শরীরের যত্ন নিতে হবে। একইভাবে, অগ্রগামীরা যদি পূর্ণসময়ের পরিচর্যার কাজ চালিয়ে যেতে চায়, তাহলে নিজেদেরকে আধ্যাত্মিকভাবে পুষ্ট করার জন্য তাদের ব্যক্তিগত অধ্যয়নের এক উত্তম তালিকা থাকতে হবে।—১ তীম. ৪:১৬.
১৪, ১৫. (ক) কেন অগ্রগামীদের তাদের জীবন সাদাসিধে রাখা উচিত? (খ) একজন অগ্রগামী যদি বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হন, তাহলে তার কী করা উচিত?
১৪ সফল অগ্রগামীরা তাদের জীবনকে সাদাসিধে রাখার প্রচেষ্টা করে। যিশু তাঁর শিষ্যদের সরল চোখ রাখার বিষয়ে উৎসাহিত করেছিলেন। (মথি ৬:২২) তিনি নিজে তার জীবনকে সাদাসিধে রেখেছিলেন, যাতে তিনি কোনো বিক্ষেপ ছাড়াই তাঁর পরিচর্যা সম্পাদন করতে পারেন। তিনি বলতে পেরেছিলেন: “শৃগালদের গর্ত্ত আছে, এবং আকাশের পক্ষিগণের বাসা আছে; কিন্তু মনুষ্যপুত্রের মস্তক রাখিবার স্থান নাই।” (মথি ৮:২০) যিশুর উদাহরণ থেকে শিখতে চাইলে, একজন অগ্রগামীর এই বিষয়টা মনে রাখা উচিত যে, তার যত বেশি বস্তুগত বিষয় থাকবে, তত বেশি তার সেগুলোর যত্ন নিতে, মেরামত অথবা পরিবর্তন করতে হবে।
১৫ অগ্রগামীরা জানে যে, তাদের সেবার এই বিশেষ সুযোগ নিজেদের কোনো বিশেষ যোগ্যতার ফল নয়। এর পরিবর্তে, আমাদের যে-উপহার অথবা সেবার বিশেষ সুযোগই থাকুক না কেন, তা ঈশ্বরের অযাচিত দয়ার কারণে আমরা লাভ করেছি। তাই, অগ্রগামীর কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রত্যেককে যিহোবার ওপর নির্ভর করতে হবে। (ফিলি. ৪:১৩) প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং বিভিন্ন সমস্যা আসবেই। (গীত. ৩৪:১৯) যখন সেগুলো আসবে, তখন অগ্রগামীদের দ্রুত সেই বিশেষ সেবা ছেড়ে না দিয়ে বরং নির্দেশনার জন্য যিহোবার ওপর নির্ভর করা এবং তাঁকে সাহায্য করার সুযোগ দেওয়া উচিত। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৩৭:৫.) তারা যখন ঈশ্বরের কাছ থেকে প্রেমময় সাহায্য লাভ করবে, তখন তারা তাদের যত্নশীল স্বর্গীয় পিতার আরও নিকটবর্তী হবে।—যিশা. ৪১:১০.
আপনি কি একজন অগ্রগামী হতে পারেন?
১৬. আপনি যদি অগ্রগামীর কাজ করতে চান, তাহলে আপনার কী করা উচিত?
১৬ আপনি যদি পূর্ণসময়ের সেবা করছে এমন ব্যক্তিদের মতো আশীর্বাদ লাভ করতে চান, তাহলে যিহোবাকে আপনার ইচ্ছার কথা জানান। (১ যোহন ৫:১৪, ১৫) যারা অগ্রগামীর কাজ করছে, তাদের সঙ্গে কথা বলুন। একজন অগ্রগামী হওয়ার জন্য বিভিন্ন উন্নতিশীল লক্ষ্য স্থাপন করুন। কিথ এবং এরিকা ঠিক তা-ই করেছিল। তারা পূর্ণসময়ের চাকরি করত এবং তাদের বয়সি অনেক দম্পতির মতো তারাও বিয়ের পর পরই একটা বাড়ি এবং একটা নতুন গাড়ি কিনেছিল। তারা বলে: “আমরা মনে করেছিলাম যে, সেই বিষয়গুলো আমাদের জন্য পরিতৃপ্তি নিয়ে আসবে—কিন্তু কখনোই এমনটা হয়নি।” কিথ যখন চাকরি হারিয়েছিলেন, তখন তিনি একজন সহায়ক অগ্রগামী হিসেবে কাজ করেছিলেন। তিনি স্মরণ করে বলেন: “অগ্রগামীর কাজ আমাকে মনে করিয়ে দেয় যে, পরিচর্যায় রত থাকলে কতটা আনন্দ লাভ করা যায়।” তারা এক অগ্রগামী দম্পতির সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে, যারা তাদেরকে সাদাসিধে জীবনযাপন এবং অগ্রগামীর কাজ যে-আনন্দ নিয়ে আসে, তা দেখতে সাহায্য করেছিল। কিথ এবং এরিকা কী করেছিল? “আমরা আমাদের আধ্যাত্মিক লক্ষ্যের একটা তালিকা করি, সেটা আমাদের রেফ্রিজারেটারের গায়ে লাগিয়ে রাখি এবং প্রতিটা লক্ষ্যে পৌঁছানোর পর, তাতে টিক চিহ্ন দিয়ে রাখি।” একসময় তারা অগ্রগামীর কাজ করতে সমর্থ হয়েছিল।
১৭. অগ্রগামীর কাজ করার জন্য কেন আপনার তালিকা অথবা জীবনধারা রদবদল করার বিষয়টা বিবেচনা করা বিজ্ঞতার কাজ হবে?
১৭ আপনি কি একজন অগ্রগামী হতে পারেন? আপনি যদি দেখেন যে, এখন আপনার পক্ষে তা করা সম্ভব নয়, তাহলে পরিচর্যায় পূর্ণরূপে অংশ নিয়ে যিহোবার সঙ্গে আপনার নিকট সম্পর্ক বৃদ্ধি করার জন্য আপনার সর্বোত্তমটা করুন। প্রার্থনা সহকারে বিবেচনা করার পর, আপনি হয়তো দেখতে পাবেন যে, আপনার তালিকায় অথবা জীবনধারায় কিছুটা রদবদল করলে আপনি হয়তো অগ্রগামীর কাজ করতে পারবেন। আপনি যদি অগ্রগামীর কাজ করতে পারেন, তাহলে আপনি যে-আশীর্বাদগুলো লাভ করবেন, সেগুলো আপনার যেকোনো ত্যাগস্বীকারের চেয়ে আরও বেশি মূল্যবান। আপনি আরও বেশি পরিতৃপ্তি লাভ করবেন, যা ব্যক্তিগত বিষয়গুলোর চেয়ে বরং রাজ্যের বিষয়গুলোকে প্রথমে রাখার ফলে আসে। (মথি ৬:৩৩) আপনার সুখ আরও বৃদ্ধি পাবে, যা অন্যদেরকে দান করার মাধ্যমে আসে। এ ছাড়া, যিহোবা সম্বন্ধে চিন্তা করার এবং কথা বলার আরও বেশি সুযোগ আপনি পাবেন, যা তাঁর প্রতি আপনার প্রেমকে গভীর করবে আর এতে তিনিও আনন্দিত হবেন।
[২৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
পূর্ণসময়ের সেবায় সক্রিয় থাকলে পরিতৃপ্তিদায়ক জীবন লাভ করা যায় (৯ অনুচ্ছেদ দেখুন)