তারা প্রতিজ্ঞাত বিষয়গুলো ‘দেখিতে পাইয়াছিলেন’
‘ইহাঁরা প্রতিজ্ঞাকলাপের ফল প্রাপ্ত হন নাই, কিন্তু দূর হইতে তাহা দেখিতে পাইয়াছিলেন।’—ইব্রীয় ১১:১৩.
১. আমরা যা দেখিনি, সেই বিষয়গুলো নিয়ে কল্পনা করতে পারার ক্ষমতা কেন উপকারজনক? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)
যিহোবা আমাদের একটা চমৎকার উপহার দিয়েছেন আর তা হল, আমরা যা দেখিনি, সেই বিষয়গুলো নিয়ে কল্পনা করার ক্ষমতা। এই ক্ষমতা থাকায় আমরা ভবিষ্যতের উত্তম বিষয়গুলোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে পারি এবং আগে থেকে পরিকল্পনা করতে ও সমস্যা এড়াতে পারি। যিহোবা ভবিষ্যৎ জানেন আর তিনি আমাদের এমন কিছু বিষয় জানান, যে-বিষয়গুলোর জন্য আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে পারি। যদিও আমরা এই বিষয়গুলো দেখতে পাই না, কিন্তু আমরা সেগুলো নিয়ে কল্পনা করতে পারি এবং সেগুলো যে ঘটবেই, সেই বিশ্বাস বজায় রাখতে পারি।—২ করি. ৪:১৮.
২, ৩. (ক) আমাদের কল্পনাশক্তি কীভাবে আমাদের সাহায্য করে? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কোন প্রশ্নগুলো আলোচনা করব?
২ অবশ্য, মাঝে মাঝে আমরা এমন বিষয় নিয়ে কল্পনা করি, যা কখনো ঘটবে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একটি ছোট্ট মেয়ে হয়তো কল্পনা করতে পারে, সে প্রজাপতির পিঠে চড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে। সেটা অবশ্য সম্ভব নয়। কিন্তু, শমূয়েলের মা হান্না এমন বিষয় নিয়ে কল্পনা করেছিলেন, যা সম্ভবপর ছিল। তিনি সবসময় সেই দিনের কথা চিন্তা করেছিলেন, যে-দিন তিনি তার ছেলেকে নিয়ে আবাসে যাবেন আর তার ছেলে সেখানে যাজকদের সঙ্গে কাজ করবে। এটা শুধু একটা স্বপ্ন ছিল না। তিনি এই বিষয়ে ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তাই, সেই দিনের বিষয়ে কল্পনা করার মাধ্যমে হান্না যিহোবার উদ্দেশে তার প্রতিজ্ঞা রক্ষা করার জন্য শক্তি লাভ করেছিলেন। (১ শমূ. ১:২২) আর যিহোবা যা করার প্রতিজ্ঞা করেছেন, সেই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা যখন কল্পনা করি, তখন আমরা আসলে এমন কিছু নিয়ে কল্পনা করছি, যা নিশ্চিতভাবেই ঘটবে।—২ পিতর ১:১৯-২১.
৩ বাইবেলের সময়ে যিহোবার অনেক দাস, যিহোবার প্রতিজ্ঞাত বিষয়গুলো নিয়ে কল্পনা করেছিলেন। তা করা তাদের জন্য কেন উপকারজনক ছিল? আর ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলো যখন পরিপূর্ণ হবে, তখন আমাদের জীবন কেমন হবে, তা নিয়ে কল্পনা করা কেন আমাদের জন্যও উপকারজনক?
ভবিষ্যৎ নিয়ে কল্পনা করার সময় তাদের বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়েছিল
৪. কেন হেবল আরও ভালো এক ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে কল্পনা করতে পেরেছিলেন?
৪ হেবল ছিলেন প্রথম ব্যক্তি, যিনি যিহোবার প্রতিজ্ঞায় বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন। আদম ও হবা পাপ করার পর যিহোবা সর্পকে যা বলেছিলেন, তা তিনি জানতেন। যিহোবা বলেছিলেন: “আমি তোমাতে ও নারীতে, এবং তোমার বংশে ও তাহার বংশে পরস্পর শত্রুতা জন্মাইব; সে তোমার মস্তক চূর্ণ করিবে, এবং তুমি তাহার পাদমূল চূর্ণ করিবে।” (আদি. ৩:১৪, ১৫) সেটা আসলে ঠিক কীভাবে ঘটবে, তা হেবল জানতেন না। কিন্তু, তিনি নিশ্চয়ই ঈশ্বরের কথা নিয়ে চিন্তা করেছিলেন। হেবল হয়তো এভাবে চিন্তা করেছিলেন, ‘সেই ব্যক্তি কে, যিনি সর্পকে আঘাত করবেন এবং মানবজাতিকে আবার সিদ্ধ অবস্থায় ফিরে যেতে সাহায্য করবেন?’ হেবলের এই বিশ্বাস ছিল, যিহোবার প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ হবেই আর তাই তিনি যখন বলি উৎসর্গ করেছিলেন, তখন যিহোবা খুশি হয়েছিলেন।—পড়ুন, আদিপুস্তক ৪:৩-৫; ইব্রীয় ১১:৪.
৫. কেন হনোকের জন্য ভবিষ্যতের বিষয়ে কল্পনা করা উপকারজনক ছিল?
৫ আরেকজন ব্যক্তি হলেন হনোক, যিনি ঈশ্বরের প্রতি দৃঢ়বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন। তিনি এমন দুষ্ট লোকেদের মাঝে বাস করতেন, যারা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে “কঠোর বাক্য” বলত। কিন্তু, হনোক সাহসী ছিলেন আর তিনি ঈশ্বরের বার্তা প্রচার করেছিলেন। তিনি লোকেদের বলেছিলেন, যিহোবা দুষ্ট লোকেদের ধ্বংস করতে যাচ্ছেন। (যিহূদা ১৪, ১৫) এক্ষেত্রে কোন বিষয়টা তাকে সাহায্য করেছিল? হনোক হয়তো এমন এক জগতের বিষয়ে কল্পনা করেছিলেন, যখন সকল মানুষ যিহোবার সেবা করবে।—পড়ুন, ইব্রীয় ১১:৫, ৬.
৬. জলপ্লাবনের পর, নোহ হয়তো কোন বিষয় নিয়ে চিন্তা করেছিলেন?
৬ যিহোবার প্রতি নোহের বিশ্বাস ছিল আর তাই তিনি জলপ্লাবন থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। (ইব্রীয় ১১:৭) আর পরবর্তী সময়ে তার বিশ্বাসের কারণে তিনি যিহোবার উদ্দেশে পশু উৎসর্গ করেছিলেন। (আদি. ৮:২০) জলপ্লাবনের পর, এই জগৎ আবার দুষ্টতায় ছেয়ে গিয়েছিল। নিম্রোদ শাসন করতে শুরু করেছিলেন আর চেয়েছিলেন, যেন লোকেরা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। (আদি. ১০:৮-১২) কিন্তু, নোহের বিশ্বাস দৃঢ় ছিল। হেবলের মতো তিনিও নিশ্চিত ছিলেন, ঈশ্বর একদিন পাপ ও মৃত্যু দূর করে দেবেন। নোহ হয়তো সেই সময়ের কথা চিন্তা করেছিলেন, যখন পৃথিবীতে কোনো নিষ্ঠুর শাসক থাকবে না। আমরাও সেই চমৎকার সময়ের কথা কল্পনা করতে পারি, যা খুব শীঘ্র আসবে!—রোমীয় ৬:২৩.
তারা কল্পনায় ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ হতে দেখেছিলেন
৭. অব্রাহাম, ইস্হাক ও যাকোব ভবিষ্যতের কোন বিষয়গুলোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে পেরেছিলেন?
৭ অব্রাহাম, ইস্হাক এবং যাকোব এক চমৎকার ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে কল্পনা করতে পেরেছিলেন। যিহোবা তাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তাদের ‘বংশের’ মাধ্যমে পৃথিবীর সকল জাতি আশীর্বাদ লাভ করবে। (আদি. ২২:১৮; ২৬:৪; ২৮:১৪) ঈশ্বর তাদের কাছে এই প্রতিজ্ঞাও করেছিলেন, তাদের পরিবার একটা বিরাট জাতি হয়ে উঠবে এবং তারা অপূর্ব প্রতিজ্ঞাত দেশে বাস করবে। (আদি. ১৫:৫-৭) যেহেতু অব্রাহাম, ইস্হাক ও যাকোব জানতেন, যিহোবার প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ হবেই, তাই তারা স্পষ্টতই তাদের পরিবারকে সেই প্রতিজ্ঞাত দেশে বসবাসরত অবস্থায় কল্পনা করতে পেরেছিলেন। আসলে, আদম ও হবা পাপ করার পর থেকে যিহোবা তাঁর অনুগত দাসদের এটা বুঝতে সাহায্য করেছেন, কীভাবে মানুষ আবার এক সিদ্ধ জীবন ফিরে পাবে।
৮. কোন বিষয়টা অব্রাহামকে দৃঢ়বিশ্বাস বজায় রাখতে ও বাধ্য থাকতে সাহায্য করেছিল?
৮ যিহোবার প্রতি দৃঢ়বিশ্বাস থাকার কারণে অব্রাহাম এমনকী অনেক কঠিন পরিস্থিতিতেও যিহোবার প্রতি বাধ্য থাকতে পেরেছিলেন। অব্রাহাম এবং অন্যান্য অনুগত ব্যক্তি স্পষ্টতই যিহোবার প্রতিজ্ঞাত বিষয়গুলো কল্পনা করতে পেরেছিলেন, এমনকী যদিও তাদের জীবনকালে সেগুলো পরিপূর্ণ হয়নি। বাইবেল বলে: “ইহাঁরা . . . দূর হইতে তাহা দেখিতে পাইয়া সাদর সম্ভাষণ করিয়াছিলেন।” (পড়ুন, ইব্রীয় ১১:৮-১৩.) অব্রাহাম এটা জানতেন, যিহোবা অতীতে সবসময় তাঁর প্রতিজ্ঞা রক্ষা করেছেন। আর তাই তিনি নিশ্চিত ছিলেন, ভবিষ্যতেও যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ হবে।
৯. ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার প্রতি বিশ্বাস কীভাবে অব্রাহামকে সাহায্য করেছিল?
৯ যিহোবা অব্রাহামের কাছে যা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, সেই প্রতিজ্ঞার প্রতি বিশ্বাস থাকায় অব্রাহাম সবসময় যিহোবার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করেছিলেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তিনি ঊর নগরে নিজের বাড়ি ছেড়ে গিয়েছিলেন এবং জীবনের বাকি সময় কোনো নগরে স্থায়ীভাবে বাস করেননি। তিনি জানতেন, তার আশেপাশের নগরগুলো চিরকাল স্থায়ী হবে না কারণ সেইসমস্ত নগরের শাসকরা যিহোবার সেবা করত না। (যিহো. ২৪:২) এর পরিবর্তে, তিনি সেই সময়ের অপেক্ষায় ছিলেন, যখন যিহোবা ও তাঁর সরকার অনন্তকাল এই পৃথিবীতে শাসন করবেন। এই সরকার হল ‘ভিত্তিমূলবিশিষ্ট সেই নগর, যাহার স্থাপনকর্ত্তা ও নির্ম্মাতা ঈশ্বর।’ (ইব্রীয় ১১:১০) অব্রাহাম ও সেইসঙ্গে হেবল, হনোক, নোহ এবং অন্যেরা পুনরুত্থানে বিশ্বাস করেছিলেন। তারা যখন এক অপূর্ব পৃথিবীতে অনন্তকাল বেঁচে থাকার বিষয়ে চিন্তা করেছিলেন, তখন যিহোবার প্রতি তাদের বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়েছিল।—পড়ুন, ইব্রীয় ১১:১৫, ১৬.
১০. কেন সারার জন্য ভবিষ্যতের বিষয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করা উপকারজনক হয়েছিল?
১০ অব্রাহামের স্ত্রী সারা যিহোবার প্রতিজ্ঞার প্রতি দৃঢ়বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন। ৯০ বছর বয়সে নিঃসন্তান অবস্থায় থাকার সময়ও তিনি অধীর আগ্রহে সেই সময়ের জন্য অপেক্ষা করে ছিলেন, যখন তার একটি সন্তান হবে। এমনকী তিনি কল্পনায় তার সন্তানকে এক বিরাট জাতি হয়ে উঠতে দেখেছিলেন। (ইব্রীয় ১১:১১, ১২) কেন তিনি সেই ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পেরেছিলেন? কারণ যিহোবা সারা সম্বন্ধে তার স্বামীকে বলেছিলেন: “আমি তাহাকে আশীর্ব্বাদ করিব, এবং তাহা হইতে এক পুত্ত্রও তোমাকে দিব; আমি তাহাকে আশীর্ব্বাদ করিব, তাহাতে সে জাতিগণের [আদিমাতা] হইবে, তাহা হইতে লোকবৃন্দের রাজগণ উৎপন্ন হইবে।” (আদি. ১৭:১৬) যিহোবার প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী সারার একটি ছেলে হয়েছিল, যার নাম ইস্হাক। এই অলৌকিক কাজ তার এই বিশ্বাসকে দৃঢ় করেছিল, যিহোবা তাঁর অন্যান্য প্রতিজ্ঞা রক্ষা করবেন। যিহোবা আমাদের জন্য যা প্রতিজ্ঞা করেছেন, সেই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা যখন কল্পনা করি, তখন আমাদের বিশ্বাসও শক্তিশালী হতে পারে।
তিনি সবসময় পুরস্কারের কথা মনে রেখেছিলেন
১১, ১২. কেন যিহোবার প্রতি মোশির ভালোবাসা দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছিল?
১১ মোশিও যিহোবার প্রতিজ্ঞায় বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন। তিনি মিশরে একজন রাজপুত্র হিসেবে বড়ো হয়েছিলেন। কিন্তু, মোশি যেহেতু অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে যিহোবাকে বেশি ভালোবাসতেন, তাই তিনি ক্ষমতা এবং ধনসম্পদ পেতে চাননি। মোশি তার ইব্রীয় বাবা-মায়ের কাছ থেকে যিহোবা সম্বন্ধে জেনেছিলেন। তারা তাকে এই শিক্ষা দিয়েছিলেন, যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছেন, তিনি ইব্রীয়দের দাসত্ব থেকে মুক্ত করবেন এবং তাদের প্রতিজ্ঞাত দেশে নিয়ে যাবেন। (আদি. ১৩:১৪, ১৫; যাত্রা. ২:৫-১০) এই প্রতিজ্ঞাগুলো সম্বন্ধে মোশি যত বেশি কল্পনা করেছিলেন, ততই যিহোবার প্রতি তার ভালোবাসা বৃদ্ধি পেয়েছিল।
১২ মোশি সবসময় যে-বিষয় নিয়ে চিন্তা করতেন, সেই সম্বন্ধে বাইবেল আমাদের জানায়: “বিশ্বাসে মোশি বয়ঃপ্রাপ্ত হইলে পর ফরৌণের কন্যার পুত্র বলিয়া আখ্যাত হইতে অস্বীকার করিলেন; তিনি পাপজাত ক্ষণিক সুখভোগ অপেক্ষা বরং ঈশ্বরের প্রজাবৃন্দের সঙ্গে দুঃখভোগ মনোনীত করিলেন; তিনি মিসরের সমস্ত ধন অপেক্ষা খ্রীষ্টের দুর্নাম মহাধন জ্ঞান করিলেন, কেননা, তিনি পুরস্কারদানের প্রতি দৃষ্টি রাখিতেন।”—ইব্রীয় ১১:২৪-২৬.
১৩. কেন মোশির জন্য যিহোবার প্রতিজ্ঞা নিয়ে চিন্তা করা উপকারজনক ছিল?
১৩ মোশি নিশ্চয়ই ইব্রীয়দের দাসত্ব থেকে মুক্ত করার বিষয়ে যিহোবার প্রতিজ্ঞা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেছিলেন। যিহোবার অন্যান্য দাসের মতো, মোশিও এটা জানতেন, যিহোবা সকল মানুষকে মৃত্যু থেকে স্বাধীন করবেন। (ইয়োব ১৪:১৪, ১৫; ইব্রীয় ১১:১৭-১৯) তাই, যিহোবা যে লোকেদের কতটা ভালোবাসেন, তা মোশি বুঝতে পেরেছিলেন। এই বিষয়টা যিহোবার প্রতি মোশির ভালোবাসাকে আরও বৃদ্ধি করেছিল এবং তাঁর প্রতি মোশির বিশ্বাসকে দৃঢ় করেছিল। এটা তাকে সারাজীবন ধরে যিহোবার সেবা করতে সাহায্য করেছিল। (দ্বিতীয়. ৬:৪, ৫) এমনকী ফরৌণ যখন মোশিকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন, তখনও তিনি ভয় পাননি। তিনি জানতেন, যিহোবা ভবিষ্যতে তাকে পুরস্কার দেবেন।—যাত্রা. ১০:২৮, ২৯.
ঈশ্বরের সরকার যা করবে, সেগুলো নিয়ে কল্পনা করুন
১৪. কোনো কোনো ব্যক্তি ভবিষ্যৎ নিয়ে কী কল্পনা করে?
১৪ অনেক লোক ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করে আর এমন বিষয় নিয়ে কল্পনা করে, যা কখনো ঘটবে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কোনো কোনো দরিদ্র লোক এমন স্বপ্ন দেখে যে, তারা ধনী হয়ে যাবে এবং তাদের আর কোনো উদ্বিগ্নতা থাকবে না। কিন্তু বাইবেল জানায়, শয়তানের জগতে সবসময় ‘ক্লেশ ও দুঃখ’ থাকবে। (গীত. ৯০:১০) অথবা কেউ কেউ কল্পনা করে, কোনো মানবসরকার জগতের সমস্যাগুলো সমাধান করবে। কিন্তু বাইবেল বলে, শুধুমাত্র ঈশ্বরের সরকারই তা করতে পারে। (দানি. ২:৪৪) এ ছাড়া, অনেক লোক মনে করে, এই জগৎ কখনো পরিবর্তন হবে না। কিন্তু বাইবেল জানায়, ঈশ্বর এই দুষ্ট জগৎ ধ্বংস করে দেবেন। (সফ. ১:১৮; ১ যোহন ২:১৫-১৭) যিহোবা যা যা বলেছেন, সেগুলোর বিপরীত বিষয় নিয়ে যারা কল্পনা করে, তারা অনেক হতাশ হবে।
১৫. (ক) ঈশ্বর আমাদের জন্য যে-ভবিষ্যতের বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করেছেন, তা নিয়ে কল্পনা করা কেন আমাদের জন্য উপকারজনক? (খ) আপনি কোন বিষয়টা করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছেন?
১৫ যিহোবা আমাদের জন্য এক চমৎকার ভবিষ্যতের প্রতিজ্ঞা করেছেন। আমরা যখন সেই সময়ের কথা চিন্তা করি, তখন আমরা আরও খুশি হই এবং তাঁকে সেবা করে চলার জন্য প্রয়োজনীয় সাহস অর্জন করি। স্বর্গে অথবা পৃথিবীতে, যেখানেই বেঁচে থাকার আশা থাকুক না কেন, আপনি কি কল্পনায় নিজেকে সেই বিষয়গুলো করতে দেখেন, যা যিহোবা আপনার জন্য প্রতিজ্ঞা করেছেন? আপনি যদি পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন, তাহলে এমন কল্পনা করুন, আপনি আপনার বন্ধুদের সঙ্গে এই পৃথিবীকে এক অপূর্ব বাগানে পরিণত করার জন্য কাজ করছেন। যারা এই কাজ তত্ত্বাবধান করছেন, তারা আপনার সম্বন্ধে চিন্তা করেন। আপনার চারপাশের সকলে আপনার মতোই যিহোবাকে ভালোবাসে। আপনি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী, আপনার প্রচুর কর্মশক্তি রয়েছে আর আপনার কোনো উদ্বিগ্নতা নেই। আপনি অনেক আনন্দিত কারণ আপনি আপনার মেধা ও দক্ষতা অন্যদের সাহায্য করার এবং যিহোবার গৌরব নিয়ে আসার জন্য ব্যবহার করছেন। এমনকী আপনি হয়তো পুনরুত্থিত ব্যক্তিদের সাহায্য করছেন, যেন তারা যিহোবা সম্বন্ধে জানতে পারে। (যোহন ১৭:৩; প্রেরিত ২৪:১৫) আপনি যখন এই বিষয়গুলো নিয়ে কল্পনা করেন, তখন আপনি কোনো স্বপ্ন দেখছেন না। এগুলো পরিপূর্ণ হবেই কারণ এগুলো হচ্ছে ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে বাইবেলের প্রতিজ্ঞা।—যিশা. ১১:৯; ২৫:৮; ৩৩:২৪; ৩৫:৫-৭; ৬৫:২২.
আপনি যে-বিষয়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছেন, তা নিয়ে কথা বলুন
১৬, ১৭. যিহোবা আমাদের জন্য যে-ভবিষ্যতের বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করেছেন, তা নিয়ে কথা বলা কেন উপকারজনক?
১৬ নতুন জগতে কী করব, সেই বিষয় নিয়ে আমরা যখন আমাদের ভাই-বোনদের সঙ্গে কথা বলি, তখন আমরা একে অন্যকে এই চমৎকার ভবিষ্যৎ নিয়ে আরও স্পষ্টভাবে কল্পনা করার জন্য সাহায্য করি। অবশ্য, আমরা প্রত্যেকে ঠিক কী কাজ করব, তা আমরা জানি না। কিন্তু, আমরা যা করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি, সেই বিষয় নিয়ে কথা বলার মাধ্যমে আমরা দেখাই, যিহোবার প্রতিজ্ঞার প্রতি আমাদের বিশ্বাস রয়েছে। এভাবে, আমরা কঠিন পরিস্থিতিতে যিহোবার সেবা করে চলার জন্য পরস্পরকে উৎসাহিত করি, ঠিক যেমনটা প্রেরিত পৌল এবং রোমে তার ভাইয়েরা করেছিলেন।—রোমীয় ১:১১, ১২.
১৭ যিহোবা যে-ভবিষ্যতের বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করেছেন, আপনি যখন তা নিয়ে চিন্তা করবেন, তখন আপনি নিজের সমস্যাগুলো নিয়ে বেশি চিন্তা করবেন না। একবার, পিতর উদ্বিগ্ন হয়ে যিশুকে এই কথা বলেছিলেন: “দেখুন, আমরা সমস্তই পরিত্যাগ করিয়া আপনার পশ্চাদগামী হইয়াছি; আমরা তবে কি পাইব?” যিশু চেয়েছিলেন যেন পিতর ও তাঁর অন্যান্য শিষ্য ভবিষ্যতে যে-চমৎকার বিষয়গুলো করবেন, তা নিয়ে চিন্তা করেন। তাই তিনি তাদের বলেছিলেন: “যখন মনুষ্যপুত্ত্র আপন প্রতাপের সিংহাসনে বসিবেন, তখন তোমরাও দ্বাদশ সিংহাসনে বসিয়া ইস্রায়েলের দ্বাদশ বংশের বিচার করিবে। আর যে কোন ব্যক্তি আমার নামের জন্য বাটী, কি ভ্রাতা, কি ভগিনী, কি পিতা, কি মাতা, কি সন্তান, কি ক্ষেত্র পরিত্যাগ করিয়াছে, সে তাহার শত গুণ পাইবে, এবং অনন্ত জীবনের অধিকারী হইবে।” (মথি ১৯:২৭-২৯) তাই, পিতর ও অন্যান্য প্রেরিত কল্পনা করতে পেরেছিলেন, তারা স্বর্গে যিশুর সঙ্গে শাসন করছেন এবং পৃথিবীর বাধ্য মানবজাতিকে সিদ্ধতায় পৌঁছাতে সাহায্য করছেন।
১৮. ঈশ্বর যখন তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ করবেন, সেই সময়ের বিষয়ে কল্পনা করা কেন আমাদের জন্য উপকারজনক?
১৮ যিহোবার দাসদের বিশ্বাস দৃঢ় করার ক্ষেত্রে কোন বিষয়টা সাহায্য করতে পারে, তা আমরা এই প্রবন্ধে শিখেছি। হেবল আরও ভালো এক ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে যিহোবার প্রতিজ্ঞার বিষয়ে কল্পনা করেছিলেন আর সেই প্রতিজ্ঞার প্রতি তার বিশ্বাসের কারণে তিনি যিহোবাকে খুশি করেছিলেন। অব্রাহাম সেই সময়ের বিষয়ে কল্পনা করেছিলেন, যখন ‘বংশ’ সম্বন্ধে যিহোবার প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ হবে আর তাই তিনি অনেক কঠিন পরিস্থিতিতেও যিহোবার প্রতি বাধ্য ছিলেন। (আদি. ৩:১৫) মোশি সেই পুরস্কারের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে ছিলেন, যা যিহোবা তার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন আর এটা তাকে যিহোবাকে ভালোবাসতে এবং তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে সাহায্য করেছিল। (ইব্রীয় ১১:২৬) আমরা যখন সেই সময়ের কথা কল্পনা করি, যখন যিহোবা তাঁর সমস্ত প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ করবেন, তখন যিহোবার প্রতি আমাদের বিশ্বাস ও ভালোবাসা আরও দৃঢ় হয়। পরের প্রবন্ধে, আমরা আমাদের কল্পনাশক্তিকে কাজে লাগানোর আরেকটা উপায় সম্বন্ধে আমরা শিখব।