রাজ্য শাসনের অধীনে এক-শো বছর!
“শান্তির ঈশ্বর . . . আপনার ইচ্ছা সাধনার্থে তোমাদিগকে সমস্ত উত্তম বিষয়ে পরিপক্ব করুন।”—ইব্রীয় ১৩:২০, ২১.
১. যিশুর কাছে প্রচার কাজ কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল? ব্যাখ্যা করুন।
যিশু ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে কথা বলতে ভালোবাসতেন। যিশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন তিনি অন্য যেকোনো বিষয়ের চেয়ে রাজ্য সম্বন্ধে বেশি কথা বলেছিলেন। তিনি পরিচর্যার সময়ে রাজ্য সম্বন্ধে প্রায় এক-শো বার উল্লেখ করেছিলেন। যিশুর কাছে রাজ্য সত্যিই এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল।—পড়ুন, মথি ১২:৩৪.
২. মথি ২৮:১৯, ২০ পদে উল্লেখিত আজ্ঞা কত জন ব্যক্তি শুনেছিল আর কেন আমরা তা বলতে পারি?
২ যিশু পুনরুত্থিত হওয়ার অল্পসময় পরেই এমন একটা দলের সঙ্গে দেখা করেছিলেন, যেখানে ৫০০ জনেরও বেশিসংখ্যক সম্ভাব্য শিষ্য ছিল। (১ করি. ১৫:৬) সম্ভবত এই সময়েই যিশু ‘সমুদয় জাতির’ লোকের কাছে প্রচার করার আদেশ দিয়েছিলেন। এই কাজ সহজ হবে না।a তিনি তাদের বলেছিলেন, এই প্রচার কাজ দীর্ঘসময় ধরে অর্থাৎ “যুগান্ত” পর্যন্ত চলবে। বর্তমানে আপনি যখন সুসমাচার প্রচার করেন, তখন আপনি আসলে সেই ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণ হওয়ায় সাহায্য করছেন।—মথি ২৮:১৯, ২০.
৩. কোন তিনটে বিষয় আমাদের সুসমাচার প্রচার কাজে সাহায্য করেছে?
৩ প্রচার করার আজ্ঞা দেওয়ার পর যিশু বলেছিলেন: ‘আমিই তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি।’ (মথি ২৮:২০) তাই যিশু তাঁর শিষ্যদের কাছে এই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তিনি প্রচার কাজে তাদের নির্দেশনা দেবেন এবং পুরো পৃথিবীতে প্রচার করতে তাদের সাহায্য করবেন। যিহোবাও আমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছেন। তিনি প্রচার কাজে আমাদের সাহায্য করার জন্য ‘সমস্ত উত্তম বিষয়’ দিয়েছেন। (ইব্রীয় ১৩:২০, ২১) এই প্রবন্ধে আমরা তিনটে উত্তম বিষয় নিয়ে আলোচনা করব: (১) আমাদের যে-সমস্ত হাতিয়ার দেওয়া হয়েছে, (২) আমরা যে-সমস্ত পদ্ধতি ব্যবহার করেছি এবং (৩) আমাদের যে-প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আসুন প্রথমে আমরা এমন কিছু হাতিয়ার সম্বন্ধে বিবেচনা করি, যেগুলো আমরা বিগত ১০০ বছরে ব্যবহার করেছি।
যে-সমস্ত হাতিয়ার ঈশ্বরের দাসদের প্রচার করতে সাহায্য করে
৪. কীভাবে বিভিন্ন হাতিয়ার আমাদের প্রচার কাজে সাহায্য করেছে?
৪ যিশু রাজ্যের বার্তাকে বীজের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন, যে-বীজ বিভিন্ন ধরনের ভূমিতে বপন করা হয়। (মথি ১৩:১৮, ১৯) একজন কৃষক ভূমি প্রস্তুত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের হাতিয়ার ব্যবহার করে থাকেন। একইভাবে, আমাদের রাজা এমন হাতিয়ারগুলো দিয়েছেন, যেগুলো ব্যবহার করে আমরা লোকেদেরকে আমাদের বার্তা গ্রহণ করার জন্য সাহায্য করতে পারি। কিছু হাতিয়ার অল্পসময়ের জন্য সাহায্যকারী হয়েছিল, আবার অন্যগুলো এখনও ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে সমস্ত হাতিয়ারই আমাদের প্রচারের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করেছে।
৫. টেস্টিমনি কার্ড কী আর এটা কীভাবে ব্যবহার করা হতো?
৫ উনিশ-শো তেত্রিশ সালে, প্রকাশকরা টেস্টিমনি কার্ড ব্যবহার করতে শুরু করেছিল। এই হাতিয়ার অনেক সাক্ষিকে প্রচার শুরু করতে সাহায্য করেছিল। এটা ছিল একটা ছোট্ট কার্ড, যেটাতে বাইবেলের সংক্ষিপ্ত এবং সরল বার্তা লেখা থাকত। মাঝে মাঝে, নতুন বার্তা-সহ নতুন কার্ড ছাপানো হতো। ভাই আর্লেনমেয়ার দশ বছর বয়সে প্রথম বার টেস্টিমনি কার্ড ব্যবহার করেছিলেন। তিনি বলেন: “সাধারণ ভূমিকা ছিল এইরকম, ‘আপনি কি দয়া করে এই কার্ড পড়ে দেখবেন?’ গৃহকর্তা কার্ডের বার্তা পড়ার পর আমরা সাহিত্যাদি অর্পণ করে চলে আসতাম।”
৬. টেস্টিমনি কার্ড কীভাবে সাহায্যকারী হয়েছিল?
৬ টেস্টিমনি কার্ড প্রকাশকদের বিভিন্ন উপায়ে সাহায্য করেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, প্রকাশকদের মধ্যে কেউ কেউ লাজুক স্বভাবের ছিল আর যদিও তাদের প্রচার করার আন্তরিক আকাঙ্ক্ষা ছিল, কিন্তু কী বলতে হবে, তা তারা জানত না। আবার অন্যেরা অনেক সাহসী ছিল। তারা কেবল কয়েক মিনিটের মধ্যে গৃহকর্তাকে তাদের জানা সমস্ত বিষয় বলে ফেলত। তবে তারা যা বলত, সেগুলো সবসময় কৌশলতার সঙ্গে তুলে ধরতে পারত না। টেস্টিমনি কার্ড সকল প্রকাশককে স্পষ্ট ও সহজসরল বার্তা তুলে ধরতে সাহায্য করেছিল।
৭. কার্ড ব্যবহারের কিছু প্রতিদ্বন্দ্বিতা কী ছিল?
৭ তবে, এই কার্ড ব্যবহারের কিছু প্রতিদ্বন্দ্বিতাও ছিল। বোন গ্রেস ইস্টেপ বলেছিলেন: “কখনো কখনো, লোকেরা আমাদের বলত, ‘এখানে কী লেখা আছে? আপনিই বলুন না।’” এ ছাড়া, কোনো কোনো গৃহকর্তা পড়তে পারত না। আবার অন্যেরা শুধু কার্ড নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিত। লোকেদের মধ্যে কেউ কেউ, আমাদের বার্তা পছন্দ করত না আর তাই তারা আমাদের কার্ড ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলত। কিন্তু বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বিতা সত্ত্বেও, টেস্টিমনি কার্ড ব্যবহার করে প্রকাশকরা তাদের প্রতিবেশীদের কাছে প্রচার করতে পেরেছিল আর এই কার্ডের কারণে অন্যেরা তাদেরকে রাজ্যের সুসমাচার প্রচারক হিসেবে শনাক্ত করতে পেরেছিল।
৮. বহনযোগ্য ফোনোগ্রাফ কীভাবে ব্যবহার করা হতো? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)
৮ উনিশ-শো ত্রিশের দশকে আরেকটা হাতিয়ার ব্যবহার করা হয়েছিল আর তা হল বহনযোগ্য ফোনোগ্রাফ। সাক্ষিদের মধ্যে কেউ কেউ এটাকে হারোণ নামে ডাকত কারণ তাদের পরিবর্তে এই যন্ত্র কথা বলত। (পড়ুন, যাত্রাপুস্তক ৪:১৪-১৬.) গৃহকর্তা যদি শুনতে রাজি হতেন, তা হলে প্রকাশক একটা ছোটো বাইবেলভিত্তিক বক্তৃতা শোনাতেন আর এরপর কিছু সাহিত্য অর্পণ করতেন। কখনো কখনো, একটা বক্তৃতা শোনার জন্য পুরো পরিবার জড়ো হতো! ১৯৩৪ সালে, ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটি প্রচার কাজে ব্যবহার উপযোগী বহনযোগ্য ফোনোগ্রাফ তৈরি করতে শুরু করেছিল। অবশেষে, ফোনোগ্রাফের মাধ্যমে শোনানোর জন্য ৯২টা বক্তৃতা রেকর্ড করা হয়েছিল।
৯. বহনযোগ্য ফোনোগ্রাফ কতটা কার্যকরী হয়েছিল?
৯ ভাই হিলারি গসলিন যখন ফোনোগ্রাফের মাধ্যমে একটা বক্তৃতা শুনেছিলেন, তখন তিনি সেটা এক সপ্তাহের জন্য ধার নিয়েছিলেন, যেন তার প্রতিবেশীদের কাছে বাইবেলের বার্তা জানাতে পারেন। ফল স্বরূপ, বেশ কয়েক জন ব্যক্তি সত্যের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন এবং বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। একটা সময়ে, ভাই গসলিনের দুই মেয়ে গিলিয়েড স্কুল-এ যোগ দিয়েছিলেন এবং মিশনারি হয়েছিলেন। টেস্টিমনি কার্ডের মতো, বহনযোগ্য ফোনোগ্রাফও অনেক প্রকাশককে প্রচার কাজ শুরু করতে সাহায্য করেছিল। পরবর্তী সময়ে, রাজা ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয়-এর মাধ্যমে তাঁর লোকেদের কার্যকরী শিক্ষক হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।
লোকেদের কাছে পৌঁছানোর জন্য সম্ভাব্য সব ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করা
১০, ১১. সুসমাচার প্রচার করার জন্য সংবাদপত্র ও রেডিও কীভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল আর কেন সেই পদ্ধতিগুলো অনেক কার্যকরী হয়েছিল?
১০ আমাদের রাজার নির্দেশনার অধীনে ঈশ্বরের লোকেরা প্রচার করার সময় যথাসম্ভব বেশি লোকের কাছে পৌঁছানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করেছে। সেইসমস্ত পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ছিল, বিশেষভাবে সেই সময়ে, যখন কার্যকারীর সংখ্যা কম ছিল। (পড়ুন, মথি ৯:৩৭.) উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অনেক বছর আগে, সুসমাচার প্রচার করার জন্য সংবাদপত্র ব্যবহার করা হয়েছিল। প্রতি সপ্তাহে ভাই রাসেল একটা বাইবেলভিত্তিক বক্তৃতা তৈরি করে সংবাদ সংস্থার কাছে পাঠাতেন। এরপর, সংবাদ সংস্থা তার বক্তৃতা কানাডা, ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংবাদপত্রে পাঠাত। ১৯১৩ সালের মধ্যে, ভাই রাসেলের বিভিন্ন বক্তৃতা ২,০০০ সংবাদপত্রে ছাপানো হয়েছিল আর প্রায় ১,৫০,০০,০০০ লোক সেগুলো পড়েছিল!
১১ এ ছাড়া, সুসমাচার প্রচার করার জন্য আরেকটা কার্যকরী পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছিল আর তা হল রেডিও। ১৯২২ সালের ১৬ এপ্রিল, ভাই রাদারফোর্ড রেডিওতে একটা বক্তৃতা দিয়েছিলেন আর প্রায় ৫০,০০০ লোক তা শুনেছিল। শীঘ্রই আমরা নিজস্ব রেডিও স্টেশন ব্যবহার করতে শুরু করেছিলাম, যেটার নাম ছিল ডব্লিউবিবিআর। ১৯২৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি এটার প্রথম অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়েছিল। ১৯২৪ সালের ১ ডিসেম্বর প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকায় বলা হয়েছিল: “আমরা মনে করি, এই পর্যন্ত সত্যের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য যত পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রেডিও হচ্ছে সবচেয়ে সাশ্রয়ী ও কার্যকরী উপায়।” সংবাদপত্রের মতো, রেডিও আমাদের এমন এলাকার লোকেদের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করেছে, যেখানে অল্পসংখ্যক প্রকাশক ছিল।
১২. (ক) আপনি জনসাধারণ্যে প্রচারের কোন উপায়টা উপভোগ করেন? (খ) জনসাধারণ্যে সাক্ষ্যদানের ভয় কাটিয়ে ওঠার জন্য কী আমাদের সাহায্য করতে পারে?
১২ লোকেদের কাছে পৌঁছানোর একটা কার্যকরী পদ্ধতি হল জনসাধারণ্যে সাক্ষ্যদান, আর এই পদ্ধতি এখনও ব্যবহার করা হচ্ছে। বাসস্টপে, ট্রেন স্টেশনে ও পার্কিংয়ের জায়গায় আর সেইসঙ্গে বাজারে এবং জনসমাগম হয় এমন উন্মুক্ত জায়গায় লোকেদের কাছে পৌঁছানোর জন্য আরও বেশি প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। জনসাধারণ্যে সাক্ষ্যদান করতে কি আপনার ভয় লাগে? যদি ভয় লাগে, তা হলে সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করুন এবং মানেরা নামে একজন ভ্রমণ অধ্যক্ষ যা বলেছিলেন, তা বিবেচনা করুন: “প্রতিটা নতুন ব্যবস্থাকে আমরা যিহোবাকে সেবা করার আরেকটা উপায় হিসেবে, তাঁর প্রতি আমাদের আনুগত্য প্রমাণ করার আরেকটা সুযোগ হিসেবে, আমাদের বিশ্বস্ততার আরেকটা পরীক্ষা হিসেবে দেখেছিলাম। আর তিনি যেভাবে বলেন, সেভাবে তাঁকে সেবা করার ব্যাপারে আমরা নিজেদের ইচ্ছুক বলে প্রমাণ করার জন্য আগ্রহী ছিলাম।” আমরা যখন প্রচার করার ভয় কাটিয়ে উঠি এবং নতুন নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করি, তখন আমরা যিহোবার প্রতি আমাদের আস্থা আরও বৃদ্ধি করি এবং আরও ভালো প্রচারক হয়ে উঠি।—পড়ুন, ২ করিন্থীয় ১২:৯, ১০.
১৩. পরিচর্যায় আমাদের ওয়েবসাইট ব্যবহার করা কেন প্রচার করার এক কার্যকরী পদ্ধতি আর আপনি এটা ব্যবহার করে কোন অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন?
১৩ অনেক প্রকাশক লোকেদেরকে আমাদের jw.org ওয়েবসাইট সম্বন্ধে জানাতে পছন্দ করে, যেখান থেকে লোকেরা ৭০০-রও বেশি ভাষায় বাইবেলভিত্তিক সাহিত্যাদি পড়তে ও ডাউনলোড করতে পারে। প্রতি মাসে ১৬ লক্ষেরও বেশি লোক আমাদের ওয়েবসাইট দেখে থাকে। অতীতে, রেডিওর মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন এলাকার লোকেদের কাছে সুসমাচার পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। আর বর্তমানে, আমাদের ওয়েবসাইট একই কাজ করে থাকে।
সুসমাচারের পরিচারকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া
১৪. প্রকাশকদের কোন প্রশিক্ষণ প্রয়োজন আর কোন স্কুল তাদের কার্যকরী শিক্ষক হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে?
১৪ আমরা যে-সমস্ত হাতিয়ার ও পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেছি, সেগুলো অনেক কার্যকরী বলে প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু, পরিচারক হওয়ার জন্য প্রথম দিকের সেই প্রকাশকদের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন ছিল। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মাঝে মাঝে কোনো গৃহকর্তা হয়তো ফোনোগ্রাফে শোনা বিষয়বস্তুর সঙ্গে একমত হতেন না। আবার অন্য সময়ে, গৃহকর্তা হয়তো আগ্রহী হতেন এবং আরও বেশি জানতে চাইতেন। প্রকাশকদের এটা জানা প্রয়োজন ছিল, কীভাবে কৌশলতার সঙ্গে বিভিন্ন মতবিরোধ কাটিয়ে ওঠা যায় এবং কীভাবে আরও ভালো শিক্ষক হওয়া যায়। নিঃসন্দেহে ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার সাহায্যেই ভাই নর এটা বুঝতে পেরেছিলেন, প্রচারে কীভাবে কথা বলা যায়, তা শেখা প্রকাশকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই, ১৯৪৩ সালের শুরুর দিকে মণ্ডলীতে ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয়-এর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এই স্কুল সকল প্রকাশককে কার্যকরী শিক্ষক হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে।
১৫. (ক) ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয়-এ বক্তৃতা দেওয়ার সময় কারো কারো কী অভিজ্ঞতা হয়েছিল? (খ) গীতসংহিতা ৩২:৮ পদে উল্লেখিত যিহোবার প্রতিজ্ঞা আপনার ক্ষেত্রে কীভাবে সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে?
১৫ সাক্ষিদের মধ্যে অনেকে শ্রোতাদের সামনে কথা বলতে অভ্যস্ত ছিল না। ভাই রামু ১৯৪৪ সালে তার প্রথম বক্তৃতার কথা স্মরণ করেন। বক্তৃতার বিষয়বস্তু ছিল বাইবেল চরিত্র দোয়েগ। তিনি বলেছিলেন: “ভয়ে আমার হাত, পা, দাঁত সব কাঁপছিল।” তিনি আরও বলেছিলেন: “সেটাই ছিল আমার মঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দেওয়ার প্রথম অভিজ্ঞতা, কিন্তু আমি তা থামিয়ে দিইনি।” বক্তৃতা দেওয়া যদিও সহজ ছিল না, তবে অল্পবয়সিরাও এই স্কুলে বক্তৃতা দিত। অল্পবয়সি একটি ছেলে তার প্রথম বক্তৃতা দেওয়ার সময় কী ঘটেছিল, তা ভাই মানেরা স্মরণ করেন: “সে এতটাই ভয় পেয়েছিল যে, বক্তৃতা শুরু করার পর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করেছিল। কিন্তু, বক্তৃতা দেওয়ার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হওয়ায় সে ফোঁপাতে ফোঁপাতেই পুরো বক্তৃতা তুলে ধরেছিল।” আপনি হয়তো লজ্জা পান বলে সভাগুলোতে মন্তব্য করেন না অথবা সভায় অংশ নেন না। কিংবা আপনার মনে হয়, আপনি তা করতে পারবেন না। যদি তা-ই হয়, তা হলে ভয় কাটিয়ে ওঠার জন্য যিহোবার কাছে সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করুন। তিনি আপনাকে সাহায্য করবেন, ঠিক যেমনটা তিনি ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয়-এর প্রথম দিকের ছাত্র-ছাত্রীদের সাহায্য করেছিলেন।—পড়ুন, গীতসংহিতা ৩২:৮.
১৬. (ক) অতীতে গিলিয়েড স্কুল-এর লক্ষ্য কী ছিল? (খ) ২০১১ সাল থেকে এই স্কুলের লক্ষ্য কী?
১৬ এ ছাড়া, ঈশ্বরের সংগঠন গিলিয়েড স্কুল-এর মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এই স্কুলের একটা লক্ষ্য হল, সুসমাচার প্রচার করার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের আকাঙ্ক্ষা দৃঢ় করা। ১৯৪৩ সালে গিলিয়েড স্কুল শুরু হয়েছিল আর তখন থেকে ৮,৫০০ জন ছাত্র-ছাত্রীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং তাদের ১৭০টা দেশে পাঠানো হয়েছে। ২০১১ সাল থেকে, গিলিয়েড স্কুলে আগে যোগ দেয়নি এমন বিশেষ পূর্ণসময়ের দাসদের—বিশেষ অগ্রগামীদের, ভ্রমণ অধ্যক্ষদের, বেথেলকর্মীদের অথবা ক্ষেত্রের মিশনারিদের—এই স্কুলে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে।
১৭. গিলিয়েড প্রশিক্ষণ কতটা কার্যকরী হয়েছে?
১৭ গিলিয়েড স্কুল কি কার্যকরী বলে প্রমাণিত হয়েছে? হ্যাঁ হয়েছে। জাপানে কী ঘটেছে, তা বিবেচনা করুন। ১৯৪৯ সালের আগস্ট মাসে, সেই দেশে দশ জনেরও কম প্রকাশক ছিল। সেই বছরের শেষের দিকে স্থানীয় সাক্ষিদের সঙ্গে ১৩ জন মিশনারি সেখানে প্রচার করতে শুরু করেছিলেন। বর্তমানে, জাপানে প্রায় ২,১৬,০০০ প্রকাশক রয়েছে আর তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই অগ্রগামী!
১৮. আমাদের আর কোন কোন স্কুল রয়েছে?
১৮ এ ছাড়া, আমাদের অন্যান্য স্কুল রয়েছে যেমন, রাজ্যের পরিচর্যা বিদ্যালয়, অগ্রগামী পরিচর্যা বিদ্যালয়, রাজ্যের সুসমাচার প্রচারকদের জন্য বিদ্যালয়, সীমা অধ্যক্ষ ও তাদের স্ত্রীদের জন্য স্কুল এবং শাখা কমিটির সদস্য ও তাদের স্ত্রীদের জন্য স্কুল। এই স্কুলগুলো সফলভাবে ভাই-বোনদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং তাদের বিশ্বাস শক্তিশালী করেছে। এটা স্পষ্ট যে, যিশু অনেক লোককে ক্রমাগত প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।
১৯. প্রচার কাজ সম্বন্ধে ভাই রাসেল কী বলেছিলেন আর কীভাবে তা সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে?
১৯ ঈশ্বরের রাজ্য ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শাসন করছে। এই সময়ের মধ্যে আমাদের রাজা যিশু খ্রিস্ট প্রচার কাজে নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। ১৯১৬ সালে, ভাই রাসেলের এই বিশ্বাস ছিল, সুসমাচার সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। তিনি বলেছিলেন: “এই কাজ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে আর তা ক্রমশ বৃদ্ধি পাবে কারণ ‘রাজ্যের সুসমাচার’ প্রচার বিশ্বব্যাপী সম্পন্ন করা হবে।” (বিশ্বাস এগিয়ে চলেছে, এ. এইচ. ম্যাকমিলান, পৃষ্ঠা ৬৯, ইংরেজি) সেই কাজ বর্তমানে সম্পন্ন হচ্ছে! শান্তির ঈশ্বর যিহোবা, তাঁর ইচ্ছা পালন করার জন্য আমাদের প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছু দিয়েছেন বলে আমরা তাঁকে ধন্যবাদ জানাই!
a খুব সম্ভবত সেই দলের অধিকাংশ ব্যক্তিই খ্রিস্টান হয়েছিল। কেন আমরা তা বলতে পারি? কারণ প্রেরিত পৌল তাদেরকে ‘পাঁচ শত ভ্রাতা’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি এটাও বলেন: “তাহাদের অধিকাংশ লোক অদ্যাপি বর্ত্তমান রহিয়াছে, কিন্তু কেহ কেহ নিদ্রাগত হইয়াছে।” তাই মনে হয়, পৌল এবং অন্য খ্রিস্টানরা সেই ব্যক্তিদের মধ্যে অনেককেই চিনতেন, যারা নিজের কানে যিশুকে প্রচার করার আজ্ঞা দিতে শুনেছিল।