শুচি হাত তুলে প্রার্থনা করুন
“আমার বাসনা এই, সকল স্থানে পুরুষেরা বিনা ক্রোধে ও বিনা বিতর্কে শুচি হস্ত তুলিয়া প্রার্থনা করুক।”—১ তীমথিয় ২:৮.
১, ২. (ক) ১ তীমথিয় ২:৮ পদ কিভাবে যিহোবার লোকেদের প্রার্থনার প্রতি প্রযোজ্য? (খ) আমরা এখন কোন্ বিষয় আলোচনা করব?
যিহোবা চান যেন তাঁর লোকেরা তাঁর প্রতি ও একে অন্যের প্রতি নিষ্ঠাবান হন। প্রেরিত পৌল নিষ্ঠাকে প্রার্থনার সঙ্গে যুক্ত করে লিখেছিলেন: “আমার বাসনা এই, সকল স্থানে পুরুষেরা বিনা ক্রোধে ও বিনা বিতর্কে শুচি হস্ত তুলিয়া প্রার্থনা করুক।” (১ তীমথিয় ২:৮) পৌল “সকল স্থানে” বলতে সাধারণত খ্রীষ্টানেরা যখন মিলিত হন তখন সকলের সামনে যে প্রার্থনা করা হয় সেটাকে বুঝিয়েছিলেন। ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে কারা মণ্ডলীর সভায় প্রার্থনা করতেন? কেবল পবিত্র, ধার্মিক, শ্রদ্ধাশীল পুরুষেরা যারা ঈশ্বরের প্রতি তাদের সকল কর্তব্য সতর্কভাবে পালন করতেন। (উপদেশক ১২:১৩, ১৪) তাদের আধ্যাত্মিক ও নৈতিকভাবে শুচি হতে হতো এবং অবশ্যই যিহোবা ঈশ্বরের কাছে নিজেদেরকে উৎসর্গ করতে হতো।
২ বিশেষ করে মণ্ডলীর প্রাচীনদের ‘শুচি হস্ত তুলে প্রার্থনা করা’ উচিত। যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে তাদের আন্তরিক প্রার্থনা ঈশ্বরের প্রতি তাদের নিষ্ঠাকে প্রকাশ করে এবং তর্ক-বিতর্ক ও রাগ এড়াতে সাহায্য করে। আসলে, কোন পুরুষ যদি খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে সকলের সামনে প্রার্থনা করার সুযোগ পান তবে তাকে অবশ্যই রাগ, বিদ্বেষপরায়ণ হওয়া এবং যিহোবা ও তাঁর সংগঠনের প্রতি নিষ্ঠাহীন হওয়া থেকে মুক্ত থাকতে হবে। (যাকোব ১:১৯, ২০) যারা সকলের হয়ে প্রার্থনা করার সুযোগ পান সেই ব্যক্তিদের জন্য বাইবেলে আর কী কী নির্দেশনা রয়েছে? আর কিছু শাস্ত্রীয় নীতি কী যা আমাদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক প্রার্থনার সময় কাজে লাগানো উচিত?
প্রার্থনার আগে পরিকল্পনা করুন
৩, ৪. (ক) লোকেদের সামনে প্রার্থনা করার আগে পরিকল্পনা করা কেন উপকারজনক? (খ) প্রার্থনা কতবড় হবে সেই বিষয়ে শাস্ত্র কী ইঙ্গিত করে?
৩ সকলের সামনে যদি আমাদের প্রার্থনা করতে বলা হয় তাহলে আমরা প্রার্থনার বিষয়ে হয়তো কিছুটা পরিকল্পনা করতে পারি। তা করলে আমরা হয়তো খুব বড়, অসংলগ্ন প্রার্থনা না করে উপযুক্ত ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বলতে পারব। আমাদের ব্যক্তিগত প্রার্থনা আমরা আওয়াজ করে বলেও করতে পারি। সেগুলো বড় বা ছোট দুভাবেই করা যেতে পারে। যীশু তাঁর ১২ জন প্রেরিতকে বাছাই করার আগে সারারাত ধরে প্রার্থনা করেছিলেন। কিন্তু যখন তিনি তাঁর মৃত্যুর স্মরণার্থক সভা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তখন রুটি ও দ্রাক্ষারসের জন্য তাঁর প্রার্থনা তুলনামূলকভাবে ছোট ছিল। (মার্ক ১৪:২২-২৪; লূক ৬:১২-১৬) আর আমরা জানি যে যীশুর ছোট প্রার্থনাগুলিও ঈশ্বর সম্পূর্ণরূপে গ্রাহ্য করেছিলেন।
৪ ধরুন, আমরা পরিবারের সঙ্গে খাবারের আগে প্রার্থনা করার সুযোগ পেয়েছি। এই প্রার্থনা সাধারণত ছোটই হয়ে থাকে—কিন্তু সেখানে যাই বলা হোক না কেন, তাতে খাবারের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা থাকা উচিত। আমরা যদি খ্রীষ্টীয় সভার শুরুতে বা শেষে প্রার্থনা করে থাকি, তবে বিভিন্ন বিষয় জড়িত করে অনেক লম্বা প্রার্থনা করার দরকার নেই। যীশু সেই অধ্যাপকদের তিরস্কার করেছিলেন যারা “কপট ভাবে লম্বা লম্বা প্রার্থনা করে।” (লূক ২০:৪৬, ৪৭) একজন ধার্মিক ব্যক্তি কখনই তা করতে চাইবেন না। কিন্তু, কখনও কখনও লোকেদের সামনে লম্বা প্রার্থনা করা হয়তো উপযুক্ত হতে পারে। যেমন, একজন প্রাচীনকে যদি কোন সম্মেলনের শেষ প্রার্থনা করতে বলা হয় তবে তিনি এই বিষয়ে আগেই পরিকল্পনা করতে পারেন এবং সেখানে হয়তো বেশ কয়েকটি বিষয় বলতে পারেন। তবুও, সেই প্রার্থনা খুব লম্বা হওয়া উচিত নয়।
ঈশ্বরের কাছে সশ্রদ্ধভাবে উপস্থিত হোন
৫. (ক) লোকেদের সামনে প্রার্থনা করার সময় আমাদের কী মনে রাখতে হবে? (খ) কেন মর্যাদাপূর্ণ ও সম্মানের সঙ্গে প্রার্থনা করতে হবে?
৫ সকলের সামনে প্রার্থনা করার সময় আমাদের মনে রাখা উচিত যে আমরা মানুষের কাছে প্রার্থনা করছি না। বরং, আমরা পাপী মানুষেরা আমাদের সার্বভৌম প্রভু যিহোবার কাছে আবেদন করছি। (গীতসংহিতা ৮:৩-৫, ৯; ৭৩:২৮) তাই আমরা কী বলি ও তা কিভাবে বলি তার দ্বারা যেন ঈশ্বরকে অসন্তুষ্ট না করি সেই সম্বন্ধে আমাদের সশ্রদ্ধ ভয় থাকতে হবে। (হিতোপদেশ ১:৭) গীতরচক দায়ূদ গেয়েছিলেন: “আমি তোমার দয়ার বাহুল্যে তোমার গৃহে প্রবেশ করিব, তোমার পবিত্র মন্দিরের অভিমুখে তোমার ভয়ে প্রণিপাত করিব।” (গীতসংহিতা ৫:৭) আমাদের যদি এমন মনোভাব থাকে আর যিহোবার সাক্ষীদের সভায় সকলের সামনে আমাদের যদি প্রার্থনা করতে বলা হয় তবে আমরা তা কিভাবে করব? আমরা যদি কোন রাজার সঙ্গে কথা বলতাম তবে আমরা নিশ্চয়ই খুব সম্মান ও শ্রদ্ধার সঙ্গেই তা বলতাম। অতএব, আমরা যেহেতু “জাতিগণের [অনন্তকালীন] রাজন” যিহোবার কাছে প্রার্থনা করছি তাই সেটা কি আরও মর্যাদাপূর্ণ ও সম্মানের সঙ্গে হওয়া উচিত নয়? (প্রকাশিত বাক্য ১৫:৩) তাই, প্রার্থনা করার সময় আমরা “সুপ্রভাত যিহোবা,” “আমাদের ভালবাসা নিও” কিংবা “ভাল থেকো” এমন কথা বলব না। শাস্ত্র দেখায় যে ঈশ্বরের একজাত পুত্র, যীশু খ্রীষ্ট তাঁর স্বর্গীয় পিতাকে কখনও এভাবে সম্বোধন করেননি।
৬. ‘অনুগ্রহ-সিংহাসনের নিকটে উপস্থিত হওয়ার’ সময় আমাদের কী মনে রাখা উচিত?
৬ পৌল বলেছিলেন: “আইস, আমরা সাহসপূর্ব্বক অনুগ্রহ-সিংহাসনের নিকটে উপস্থিত হই।” (ইব্রীয় ৪:১৬) পাপী হওয়া সত্ত্বেও, যীশু খ্রীষ্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানে বিশ্বাস করার ফলে আমরা “সাহসপূর্ব্বক” যিহোবার নিকট উপস্থিত হতে পারি। (প্রেরিত ১০:৪২, ৪৩; ২০:২০, ২১) তবুও, “সাহসপূর্ব্বক” কথাটি বোঝায় না যে আমরা ঈশ্বরের সঙ্গে গল্প করছি কিংবা তাঁকে এমন কিছু বলতে পারি যা তাঁর জন্য অসম্মানজনক। সকলের সামনে যে প্রার্থনা করা হয় তার দ্বারা আমরা যদি যিহোবাকে খুশি করতে চাই তাহলে তা অবশ্যই যথার্থ সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে করতে হবে এবং এইরকম প্রার্থনায় কোন ঘোষণা করা, কাউকে পরামর্শ দেওয়া কিংবা শ্রোতাদের সামনে বক্তৃতার আকারে বলা ভুল হবে।
নম্র মনোভাব নিয়ে প্রার্থনা করুন
৭. যিহোবার মন্দির উৎসর্গ করার সময় শলোমন তার প্রার্থনার মধ্যে কিভাবে নম্রতা দেখিয়েছিলেন?
৭ আমরা সকলের সামনে কিংবা ব্যক্তিগতভাবে যেভাবেই প্রার্থনা করি না কেন, যে গুরুত্বপূর্ণ শাস্ত্রীয় নীতিটি আমাদের মনে রাখতে হবে তা হল আমাদের প্রার্থনায় অবশ্যই নম্র মনোভাব দেখাতে হবে। (২ বংশাবলি ৭:১৩, ১৪) যিরূশালেমে যিহোবার মন্দির উৎসর্গকালে সকলের সামনে প্রার্থনা করার সময় রাজা শলোমন নম্র মনোভাব দেখিয়েছিলেন। পৃথিবীতে সর্বকালের সবচেয়ে সেরা যে অট্টালিকাগুলো নির্মিত হয়েছিল তার মধ্যে একটা অট্টালিকার নির্মাণ কাজ শলোমন সবেমাত্র শেষ করেছিলেন। কিন্তু তারপরও তিনি নম্রভাবে প্রার্থনা করেছিলেন: “ঈশ্বর কি সত্য সত্যই পৃথিবীতে বাস করিবেন? দেখ, স্বর্গ ও স্বর্গের স্বর্গ তোমাকে ধারণ করিতে পারে না, তবে আমার নির্ম্মিত এই গৃহ কি পারিবে?”—১ রাজাবলি ৮:২৭.
৮. সকলের সামনে প্রার্থনা করার সময়ে নম্রতা দেখানোর কয়েকটি উপায় কী?
৮ শলোমনের মতো আমাদেরও সকলের সামনে প্রার্থনা করার সময় নম্র হওয়া উচিত। যদিও আমাদের নিজেদেরকে অতি ধার্মিক দেখানো উচিত নয় তবুও গলার স্বরের মাধ্যমেও নম্রতা দেখানো যেতে পারে। নম্র প্রার্থনার অর্থ এই নয় যে আমাদের প্রার্থনায় খুব সুন্দর সুন্দর শব্দ বা নাটকীয় ভাষা ব্যবহার করতে হবে। এইরকম প্রার্থনায় যিনি প্রার্থনা করছেন তাকে নয় বরং যার কাছে প্রার্থনা করা হচ্ছে তাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। (মথি ৬:৫) প্রার্থনায় আমরা কী বলি তার মাধ্যমেও নম্রতা দেখানো যেতে পারে। আমরা যদি নম্রভাবে প্রার্থনা করি, তবে আমরা এমনভাবে করব না যাতে মনে হয় যে আমরা চাই ঈশ্বর যেন কিছু বিষয় আমাদের ইচ্ছামতো করেন। পরিবর্তে, আমরা যিহোবাকে এমনভাবে কাজ করার জন্য অনুরোধ করব যেন তা তাঁর পবিত্র ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে হয়। গীতরচক সঠিক মনোভাব দেখিয়েছিলেন যখন তিনি অনুরোধ করেছিলেন: “আহা! সদাপ্রভু, বিনয় করি, পরিত্রাণ কর; আহা! সদাপ্রভু, বিনয় করি, সৌভাগ্য [সাফল্য] দেও।”—গীতসংহিতা ১১৮:২৫; লূক ১৮:৯-১৪.
অন্তর থেকে প্রার্থনা করুন
৯. মথি ৬:৭ পদে যীশুর কোন্ উত্তম পরামর্শ পাওয়া যায় এবং তা কিভাবে কাজে লাগানো যায়?
৯ সকলের সামনে অথবা আমাদের ব্যক্তিগত প্রার্থনায় আমরা যদি যিহোবাকে খুশি করতে চাই তাহলে তা অবশ্যই অন্তর থেকে হতে হবে। অতএব, কী বলছি তা না ভেবেই আমরা শুধু একই প্রার্থনা বারবার বলব না। যীশু পর্বতে দেওয়া তাঁর উপদেশে বলেছিলেন: “প্রার্থনাকালে তোমরা অনর্থক পুনরুক্তি করিও না, যেমন জাতিগণ করিয়া থাকে; কেননা তাহারা [ভুলভাবে] মনে করে, বাক্যবাহুল্যে তাহাদের প্রার্থনার উত্তর পাইবে।” অন্য কথায় যীশু বলেছিলেন: “অনর্থক বক্বক্ করো না; বোকার মতো একই কথা বার বার বলো না।”—মথি ৬:৭; NW, পাদটীকা।
১০. একই বিষয়ের জন্য বারবার প্রার্থনা করা কেন উপযুক্ত?
১০ অবশ্য, কোন বিষয়ের জন্য আমাদের হয়তো বার বার একই প্রার্থনা করার দরকার হতে পারে। তা করা ভুল হবে না কারণ যীশু বলেছিলেন: “যাচ্ঞা কর, তোমাদিগকে দেওয়া যাইবে; অন্বেষণ কর, পাইবে; দ্বারে আঘাত কর, তোমাদের জন্য খুলিয়া দেওয়া যাইবে।” (মথি ৭:৭) যিহোবা স্থানীয় প্রচার কাজে বৃদ্ধি দিচ্ছেন বলে আমাদের হয়তো একটি নতুন কিংডম হলের দরকার হতে পারে। (যিশাইয় ৬০:২২) ব্যক্তিগত কিংবা যিহোবার লোকেদের সভায় সকলের সামনে প্রার্থনা করার সময় এই দরকারের কথা বার বার উল্লেখ করা ঠিক হবে। তা করা বোঝাবে না যে আমরা ‘বোকার মতো একই কথা বার বার বলছি।’
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও প্রশংসা করার কথা মনে রাখুন
১১. ব্যক্তিগত বা লোকেদের সামনে প্রার্থনা করার সময় কিভাবে ফিলিপীয় ৪:৬, ৭ পদ কাজে লাগানো যায়?
১১ অনেকে কেবল কিছু চেয়ে প্রার্থনা করে থাকেন কিন্তু আমরা যিহোবা ঈশ্বরকে ভালবাসি বলে আমাদের ব্যক্তিগত বা প্রকাশ্য প্রার্থনায় তাঁকে ধন্যবাদ দেওয়ার ও তাঁর প্রশংসা করার তাগিদ অনুভব করি। পৌল লিখেছিলেন: “কোন বিষয়ে ভাবিত হইও না, কিন্তু সর্ব্ববিষয়ে প্রার্থনা ও বিনতি দ্বারা ধন্যবাদ সহকারে তোমাদের যাচ্ঞা সকল ঈশ্বরকে জ্ঞাত কর। তাহাতে সমস্ত চিন্তার অতীত যে ঈশ্বরের শান্তি তাহা তোমাদের হৃদয় ও মন খ্রীষ্ট যীশুতে রক্ষা করিবে।” (ফিলিপীয় ৪:৬, ৭) হ্যাঁ, বিনতি ও যাচ্ঞা ছাড়াও, আমাদের যিহোবাকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত কারণ তিনি আমাদের আধ্যাত্মিক চাহিদা পূরণ করছেন আর সেইসঙ্গে বেঁচে থাকার জন্য অন্যান্য জিনিসগুলো যুগিয়ে চলেছেন। (হিতোপদেশ ১০:২২) গীতরচক গেয়েছিলেন: “তুমি ঈশ্বরের উদ্দেশে স্তববলি উৎসর্গ কর, পরাৎপরের নিকটে আপন মানত পূর্ণ কর।” (গীতসংহিতা ৫০:১৪) আর দায়ূদের মর্মস্পর্শী প্রার্থনায় এই কথাগুলোও রয়েছে: “আমি গীত দ্বারা ঈশ্বরের নাম প্রশংসা করিব, স্তব দ্বারা তাঁহার মহিমা স্বীকার করিব।” (গীতসংহিতা ৬৯:৩০) সকলের সামনে ও ব্যক্তিগত প্রার্থনায় আমাদেরও কি তাই করা উচিত নয়?
১২. গীতসংহিতা ১০০:৪, ৫ পদ কিভাবে আজকে পরিপূর্ণ হচ্ছে আর তাই কিসের জন্য আমাদের ঈশ্বরের ধন্যবাদ ও প্রশংসা করা উচিত?
১২ ঈশ্বর সম্বন্ধে গীতরচক গেয়েছিলেন: “তোমরা স্তব সহকারে তাঁহার দ্বারে প্রবেশ কর, প্রশংসা সহকারে তাঁহার প্রাঙ্গণে প্রবেশ কর; তাঁহার স্তব কর, তাঁহার নামের ধন্যবাদ কর। কেননা সদাপ্রভু মঙ্গলময়; তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী; তাঁহার বিশ্বস্ততা পুরুষে পুরুষে স্থায়ী।” (গীতসংহিতা ১০০:৪, ৫) আজকে, সব জাতির লোকেরা যিহোবার মন্দিরের প্রাঙ্গণে আসছে এবং এরজন্য আমরা তাঁর প্রশংসা ও ধন্যবাদ করতে পারি। আপনি কি স্থানীয় কিংডম হলের জন্য ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং যারা যিহোবাকে ভালবাসেন তাদের সঙ্গে নিয়মিত মিলিত হয়ে কি আপনি আপনার উপলব্ধি প্রকাশ করেন? সেখানে গিয়ে আপনি কি আমাদের প্রেমময় স্বর্গীয় পিতার প্রশংসা করার ও তাঁকে ধন্যবাদ জানানোর জন্য মনপ্রাণ দিয়ে প্রশংসা গান করেন?
প্রার্থনা করতে কখনও লজ্জা করবেন না
১৩. শাস্ত্রের কোন্ উদাহরণ দেখায় যে অপরাধের কারণে নিজেদের অযোগ্য মনে করলেও আমাদের যিহোবার কাছে বিনতি করা উচিত?
১৩ অন্যায় করার ফলে নিজেদের অযোগ্য মনে করলেও, ঈশ্বরের কাছে আমাদের মনপ্রাণ দিয়ে বিনতি করা উচিত। বিজাতীয়া স্ত্রীদের গ্রহণ করে যিহূদীরা যখন পাপ করেছিল তখন ইষ্রা হাঁটু গেঁড়ে ঈশ্বরের কাছে তার শুচি হাত তুলে নম্রভাবে প্রার্থনা করেছিলেন: “হে আমার ঈশ্বর, আমি তোমার দিকে মুখ তুলিতে লজ্জিত ও বিষণ্ণ, কেননা হে আমার ঈশ্বর, আমাদের অপরাধ বহুল হইয়া আমাদের মস্তকের ঊদ্ধের্ব উঠিয়াছে, ও আমাদের দোষ বৃদ্ধি পাইয়া গগনস্পর্শী হইয়াছে। আমাদের পিতৃপুরুষদের সময় অবধি অদ্য পর্য্যন্ত আমরা মহাদোষগ্রস্ত . . . কিন্তু আমাদের সকল দুষ্ক্রিয়া ও মহাদোষ প্রযুক্ত আমাদের প্রতি এই সমস্ত ঘটিয়াছে; তথাপি, হে আমাদের ঈশ্বর, তুমি আমাদের অপরাধের দণ্ড লঘু করিয়াছ, অধিকন্তু কতক লোক আমাদিগকে রক্ষিত হইতে দিয়াছ; এই সকলের পরেও আমরা কি পুনর্ব্বার তোমার আজ্ঞা লঙ্ঘন করিয়া ঘৃণার্হ ক্রিয়াতে লিপ্ত এই জাতিদের সহিত কুটুম্বিতা করিব? করিলে তুমি কি আমাদের প্রতি এমন ক্রোধ করিবে না যে, আমরা বিলুপ্ত হইব, আর আমাদের মধ্যে অবশিষ্ট কি রক্ষিত কেহ থাকিবে না? হে সদাপ্রভু ইস্রায়েলের ঈশ্বর, তুমি ধর্ম্মময়, কেননা আমরা রক্ষিত হইয়া অদ্য পর্য্যন্ত কতকগুলি লোক অবশিষ্ট রহিয়াছি; দেখ, আমরা তোমার সাক্ষাতে দোষগ্রস্ত, তাই তোমার সাক্ষাতে আমাদের কেহই দাঁড়াইতে পারে না।”—ইষ্রা ৯:১-১৫; দ্বিতীয় বিবরণ ৭:৩, ৪.
১৪. ঈশ্বরের কাছ থেকে ক্ষমা পেতে হলে কী করা প্রয়োজন যেমন ইষ্রার দিনে করা হয়েছিল?
১৪ ঈশ্বরের কাছ থেকে ক্ষমা পেতে চাইলে, পাপ স্বীকার করার সময় আমাদের অবশ্যই অনুশোচনা ও “মনপরিবর্ত্তনের উপযুক্ত ফলে ফলবান্” হতে হবে। (লূক ৩:৮; ইয়োব ৪২:১-৬; যিশাইয় ৬৬:২) ইষ্রার দিনে, অনুতপ্ত হয়ে অন্যায় থেকে সরে আসার চেষ্টা করা হয়েছিল আর বিজাতীয়া স্ত্রীদেরকে ত্যাগ করে তারা সেটা করেছিল। (ইষ্রা ১০:৪৪. ২ করিন্থীয় ৭:৮-১৩ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।) আমরা যদি কোন গুরুতর পাপের জন্য ঈশ্বরের কাছ থেকে ক্ষমা পেতে চাই তাহলে আসুন প্রার্থনায় নম্রভাবে তা স্বীকার করি এবং আমরা যে অনুতপ্ত হয়েছি তা উপযুক্তভাবে দেখাই। এছাড়াও এক অনুতপ্ত মনোভাব এবং অন্যায় থেকে দূরে থাকার ইচ্ছা থাকলে খ্রীষ্টান প্রাচীনদের কাছ থেকে আমরা আধ্যাত্মিক সাহায্য চাইব।—যাকোব ৫:১৩-১৫.
প্রার্থনা করে সান্ত্বনা পান
১৫. হান্নার অভিজ্ঞতা কিভাবে দেখায় যে আমরা প্রার্থনা করে সান্ত্বনা পেতে পারি?
১৫ কোন কারণে দুঃখিত হলে, আমরা প্রার্থনা করে সান্ত্বনা পেতে পারি। (গীতসংহিতা ৫১:১৭; হিতোপদেশ ১৫:১৩) যেমন ধার্মিক হান্না সান্ত্বনা পেয়েছিলেন। তিনি এমন এক সময়ে বাস করতেন যখন ইস্রায়েলে বড় পরিবার থাকা সাধারণ বিষয় ছিল কিন্তু তার কোন ছেলেমেয়ে হয়নি। তবে তার স্বামী ইল্কানা বাবা হয়েছিলেন কারণ তার আরেক স্ত্রী পনিন্নার ছেলেমেয়ে ছিল আর হান্না বন্ধ্যা ছিলেন বলে পনিন্না প্রায়ই তাকে টিটকারী দিত। হান্না অন্তর থেকে প্রার্থনা করেছিলেন ও প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে যদি তার ছেলে হয় তবে ‘তিনি চিরদিনের জন্য তাহাকে সদাপ্রভুর উদ্দেশে নিবেদন করিবেন।’ প্রার্থনা করে সান্ত্বনা পেয়ে ও মহাযাজক এলির কথা শুনে হান্নার “মুখ আর বিষণ্ণ রহিল না।” হান্নার একটি ছেলে হয় ও তিনি তার নাম শমূয়েল রাখেন। পরে হান্না তাকে যিহোবার মন্দিরে কাজ করার জন্য দিয়েছিলেন। (১ শমূয়েল ১:৯-২৮) ঈশ্বর তার প্রতি দয়া করেছেন বলে কৃতজ্ঞ হয়ে তিনি ধন্যবাদ জানিয়ে প্রার্থনা করেছিলেন—যেখানে তিনি যিহোবাকে অতুলনীয় ঈশ্বর বলে প্রশংসা করেছিলেন। (১ শমূয়েল ২:১-১০) হান্নার মতো, আমরাও প্রার্থনা করে সান্ত্বনা পেতে পারি এবং নিশ্চিত হতে পারি যে ঈশ্বর আমাদের সব প্রার্থনার উত্তর দেবেন, যদি সেগুলো তাঁর ইচ্ছার সঙ্গে মিল রাখে। তাই আমরা যখন তাঁর কাছে আমাদের হৃদয় উজার করে দিই, তখন আসুন আমরা যেন “আর বিষণ্ণ” না হই কারণ তিনি আমাদের বোঝা সরিয়ে দেবেন অথবা আমাদের শক্তি দেবেন যাতে আমরা তা সহ্য করতে পারি।—গীতসংহিতা ৫৫:২২.
১৬. আমরা ভয় পেলে বা উদ্বিগ্ন হলে কেন আমাদের প্রার্থনা করা উচিত, যেমন যাকোব করেছিলেন?
১৬ কোন কারণে যদি আমরা ভয় পাই, দুঃখিত হই বা চিন্তিত হয়ে পড়ি তখন আসুন আমরা প্রার্থনা করে সান্ত্বনা পাওয়ার জন্য ঈশ্বরের কাছে আসি। (গীতসংহিতা ৫৫:১-৪) যাকোব, তার ভাই এষৌর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময় খুব ভয় পাচ্ছিলেন, যার সঙ্গে তার অনেকদিন ধরে কোন যোগাযোগ ছিল না। তবুও, যাকোব প্রার্থনা করেছিলেন: “হে আমার পিতা অব্রাহামের ঈশ্বর ও আমার পিতা ইস্হাকের ঈশ্বর, তুমি সদাপ্রভু আপনি আমাকে বলিয়াছিলে, তোমার দেশে জ্ঞাতিদের নিকটে ফিরিয়া যাও, তাহাতে আমি তোমার মঙ্গল করিব। তুমি এই দাসের প্রতি যে সমস্ত দয়া ও যে সমস্ত সত্যাচরণ করিয়াছ, আমি তাহার কিছুরই যোগ্য নই; কেননা আমি নিজ যষ্টিখানি লইয়া এই যর্দ্দন পার হইয়াছিলাম, এখন দুই দল হইয়াছি। বিনয় করি, আমার ভ্রাতার হস্ত হইতে, এষৌর হস্ত হইতে আমাকে রক্ষা কর, কেননা আমি তাহাকে ভয় করি, পাছে সে আসিয়া আমাকে, ছেলেদের সহিত মাতাকে বধ করে। তুমিই ত বলিয়াছ, আমি অবশ্য তোমার মঙ্গল করিব, এবং সমুদ্রতীরস্থ যে বালি বাহুল্য প্রযুক্ত গণনা করা যায় না, তাহার ন্যায় তোমার বংশ বৃদ্ধি করিব।” (আদিপুস্তক ৩২:৯-১২) যাকোব ও তার সঙ্গীদের এষৌ আক্রমণ করেননি। এভাবেই যিহোবা যাকোবের প্রতি “মঙ্গল” করেছিলেন।
১৭. গীতসংহিতা ১১৯:৫২ পদের সঙ্গে মিল রেখে আমরা যখন চরম পরীক্ষার সম্মুখীন হই তখন কিভাবে প্রার্থনা আমাদের সান্ত্বনা দিতে পারে?
১৭ আমরা যখন বিনতি করি, তখন ঈশ্বরের বাক্যের বিষয়গুলো মনে করে আমরা হয়তো সান্ত্বনা পেতে পারি। বাইবেলের সবচেয়ে বড় ও খুবই সুন্দর এক প্রার্থনা গীত আছে। সম্ভবত রাজপুত্র হিষ্কীয় এটা গেয়েছিলেন যেখানে তিনি বলেন: “সদাপ্রভু, আমি তোমার পূর্ব্বকালের শাসনকলাপ স্মরণ করিয়াছি, আর সান্ত্বনা পাইয়াছি।” (গীতসংহিতা ১১৯:৫২) চরম পরীক্ষার সময় আমাদের নম্র প্রার্থনায় আমরা হয়তো বাইবেলের একটি নীতি বা আইন মনে করতে পারি, যা আমাদেরকে এমন পথে চলতে সাহায্য করবে যাতে করে আমরা এই ভেবে সান্ত্বনা ও আশ্বাস পেতে পারি যে তা আমাদের স্বর্গীয় পিতাকে খুশি করছে।
নিষ্ঠাবান খ্রীষ্টানেরা প্রার্থনায় লেগে থাকেন
১৮. কেন বলা যেতে পারে যে ‘প্রত্যেক নিষ্ঠাবান ব্যক্তি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করবেন?’
১৮ যারা যিহোবার প্রতি নিষ্ঠাবান তারা সকলেই “প্রার্থনায় নিবিষ্ট” থাকবেন। (রোমীয় ১২:১২) দায়ূদ সম্ভবত বৎসেবার সঙ্গে পাপ করার পর ৩২তম গীতটি রচনা করেছিলেন আর তিনি যখন তার পাপকে লুকিয়েছিলেন ও ক্ষমা চাননি সেই সময়ের যন্ত্রণার কথা বর্ণনা করেছিলেন। এরপর তিনি সেই স্বস্তির কথাও লিখেছিলেন যা তিনি অনুতপ্ত হয়ে ও ঈশ্বরের সামনে পাপ স্বীকার করে পেয়েছিলেন। তাই দায়ূদ গেয়েছিলেন: “এজন্য যখন তোমাকে পাওয়া যায়, [যিহোবার ক্ষমা প্রকৃত অনুতপ্ত ব্যক্তিদের জন্য সহজলভ্য বলে] প্রত্যেক সাধু [নিষ্ঠাবান] তোমার কাছে প্রার্থনা করুক।”—গীতসংহিতা ৩২:৬.
১৯. কেন আমাদের শুচি হাত তুলে প্রার্থনা করা উচিত?
১৯ আমরা যদি যিহোবা ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে মূল্যবান জ্ঞান করি তাহলে আমরা যীশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের ভিত্তিতে তাঁর করুণা চেয়ে প্রার্থনা করব। করুণা ও সময়োপযোগী সাহায্য পাওয়ার জন্য বিশ্বাস নিয়ে আমরা সাহসপূর্বক তাঁর অনুগ্রহ সিংহাসনের নিকটে উপস্থিত হতে পারব। (ইব্রীয় ৪:১৬) কিন্তু প্রার্থনা করার আরও অনেক কারণ আছে! তাই আসুন আমরা ঈশ্বরের আন্তরিক প্রশংসা করে ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখিয়ে ‘অবিরত প্রার্থনা করি।’ (১ থিষলনীকীয় ৫:১৭) আসুন আমরা দিন-রাত শুচি হাত তুলে প্রার্থনা করি।
আপনি কিভাবে উত্তর দেবেন?
◻ লোকেদের সামনে প্রার্থনা করার বিষয়ে আগে পরিকল্পনা করলে কী উপকার হবে?
◻ কেন আমাদের সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে প্রার্থনা করা উচিত?
◻ প্রার্থনা করার সময় আমাদের কোন্ মনোভাব দেখানো উচিত?
◻ প্রার্থনা করার সময় আমাদের কেন ধন্যবাদ ও প্রশংসা করার বিষয় মনে রাখা উচিত?
◻ বাইবেল কিভাবে দেখায় যে আমরা প্রার্থনা থেকে সান্ত্বনা পেতে পারি?
[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিহোবার মন্দির উৎসর্গে, লোকেদের সামনে প্রার্থনা করার সময় শলোমন নম্রতার মনোভাব দেখিয়েছিলেন
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
হান্নার মতো আপনিও প্রার্থনা থেকে সান্ত্বনা পেতে পারেন