যিহোবার মহান আত্মিক মন্দির
“আমাদের এমন এক মহাযাজক আছেন, . . . তিনি পবিত্র স্থানের, এবং যে তাম্বু মনুষ্যকর্ত্তৃক নয়, কিন্তু প্রভুকর্ত্তৃক স্থাপিত হইয়াছে, সেই প্রকৃত তাম্বুর সেবক।”—ইব্রীয় ৮:১, ২.
১. পাপী মানবজাতির জন্য ঈশ্বর কোন্ প্রেমপূর্ণ ব্যবস্থা করেছেন?
যিহোবা ঈশ্বর, মানবজাতির প্রতি তাঁর মহান প্রেমবশতঃ, জগতের পাপভার মুছে দেওয়ার জন্য এক বলিদান প্রদান করেছেন। (যোহন ১:২৯; ৩:১৬) এর জন্য প্রয়োজন হয়েছিল স্বর্গ থেকে তাঁর প্রথমজাত পুত্রের জীবন মরিয়ম নামে এক যিহূদী কুমারীর গর্ভে স্থানান্তরিত করা। যিহোবার দূত স্পষ্টভাবে মরিয়মের কাছে বলেছিলেন যে, যে শিশুকে তিনি গর্ভে ধারণ করবেন তাঁকে “পবিত্র সন্তান . . . ঈশ্বরের পুত্ত্র বলা যাইবে।” (লূক ১:৩৪, ৩৫) যোষেফকে যার সাথে মরিয়মের বাগ্দান হয়, যীশুর গর্ভাবস্থায় আসার অলৌকিক প্রকৃতি সম্বন্ধে বলা হয়েছিল আর এও জানানো হয়েছিল যে এই ব্যক্তি “আপন প্রজাদিগকে তাহাদের পাপ হইতে ত্রাণ” করবেন।—মথি ১:২০, ২১.
২. যখন তাঁর বয়স প্রায় ৩০ বছর ছিল তখন যীশু কী করেছিলেন এবং কেন?
২ যীশু বড় হয়ে উঠার সাথে সাথে, অবশ্যই তিনি তাঁর অলৌকিক জন্ম সম্বন্ধে কিছু বিষয় বুঝেছিলেন। তিনি জানতেন যে তাঁর স্বর্গীয় পিতা তাঁর জন্য পৃথিবীতে জীবন-রক্ষামূলক এক কাজ রেখেছিলেন। তাই, প্রায় ৩০ বছর বয়সের একজন পূর্ণ-বয়স্ক মানুষ হিসাবে যীশু ঈশ্বরের ভাববাদী, যোহনের কাছে যর্দন নদীতে বাপ্তিস্ম নেওয়ার জন্য এসেছিলেন।—মার্ক ১:৯; লূক ৩:২৩.
৩. (ক) “তুমি যজ্ঞ ও নৈবেদ্য ইচ্ছা কর নাই” এই কথাগুলির দ্বারা যীশু কী বুঝিয়েছিলেন? (খ) যারা তাঁর শিষ্য হতে চায় তাদের সকলের জন্য যীশু কোন্ উল্লেখযোগ্য উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন?
৩ তাঁর বাপ্তিস্মের সময়ে যীশু প্রার্থনা করছিলেন। (লূক ৩:২১) স্পষ্টতঃ তাঁর জীবনের এই ক্ষণটি থেকে তিনি গীতসংহিতা ৪০:৬-৮ পদের কথাগুলি পরিপূর্ণ করে চলেন, যেমন প্রেরিত পৌলের দ্বারা পরবর্তী সময়ে ইঙ্গিত করা হয়েছিল: “‘তুমি যজ্ঞ ও নৈবেদ্য ইচ্ছা কর নাই, কিন্তু আমার জন্য দেহ রচনা করিয়াছ।’” (ইব্রীয় ১০:৫) এইভাবে যীশু তাঁর সচেতনতা দেখিয়েছিলেন যে ঈশ্বর ‘ইচ্ছা করেন না’ যে যিরূশালেমে ক্রমাগতভাবে পশু বলিদান চলতে থাকবে। বরঞ্চ, তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে বলিরূপে উৎসর্গ করতে ঈশ্বর তাঁর জন্য অর্থাৎ যীশুর জন্য এক সিদ্ধ মানব দেহ রচনা করেছিলেন। এর ফলে পশু বলিদানের আর প্রয়োজন হবে না। ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রতি বশীভূত হওয়ার তাঁর আন্তরিক ইচ্ছা দেখিয়ে যীশু ক্রমাগতভাবে প্রার্থনা করেছিলেন: “দেখ, আমি আসিয়াছি,—গ্রন্থখানিতে আমার বিষয় লিখিত আছে—হে ঈশ্বর, যেন তোমার ইচ্ছা পালন করি।” (ইব্রীয় ১০:৭) সাহস ও নিঃস্বার্থপর ভক্তির কী অত্যুৎকৃষ্ট উদাহরণই না যীশু সেই দিনে সেই সকলের জন্য স্থাপন করেছিলেন যারা পরে তাঁর শিষ্য হবে।—মার্ক ৮:৩৪.
৪. যীশুর নিজেকে উৎসর্গ করার প্রতি ঈশ্বর কিভাবে তাঁর অনুমোদন জানিয়েছিলেন?
৪ ঈশ্বর কি যীশুর বাপ্তিস্মের প্রার্থনাকে অনুমোদন করেছিলেন? যীশুর মনোনীত প্রেরিতদের একজন আমাদের তার উত্তর দিক: “পরে যীশু বাপ্তাইজিত হইয়া অমনি জল হইতে উঠিলেন; আর দেখ, তাঁহার নিমিত্ত স্বর্গ খুলিয়া গেল, এবং তিনি ঈশ্বরের আত্মাকে কপোতের ন্যায় নামিয়া আপনার উপরে আসিতে দেখিলেন। আর দেখ, স্বর্গ হইতে এই বাণী হইল, ‘ইনিই আমার প্রিয় পুত্ত্র, ইহাঁতেই আমি প্রীত।’”—মথি ৩:১৬, ১৭; লূক ৩:২১, ২২.
৫. আক্ষরিক মন্দিরের বেদীর দ্বারা কী চিত্রিত করা হয়েছিল?
৫ ভবিষ্যৎ বলি হিসাবে ব্যবহারের জন্য যীশুর দেহের উপস্থাপনটি ঈশ্বরের গ্রহণ করা বুঝিয়েছিল যে, আধ্যাত্মিক অর্থে, যিরূশালেমের চাইতে আরও মহান একটি বেদী অস্তিত্বে আসবে। আক্ষরিক বেদী যেখানে বলিদানের জন্য পশু নিয়ে আসা হত তা আধ্যাত্মিক বেদীকে চিত্রিত করে, যেটি বলিদান হিসাবে যীশুর মানব জীবন গ্রহণ করার জন্য বস্তুতপক্ষে ছিল ঈশ্বরের ‘ইচ্ছাক্রম’ অথবা ব্যবস্থা। (ইব্রীয় ১০:১০) সেই কারণে প্রেরিত পৌল সহ খ্রীষ্টানদের উদ্দেশ্যে লিখতে পেরেছিলেন: “আমাদের এক যজ্ঞবেদি আছে, তাহার সামগ্রী ভোজন করিবার ক্ষমতা তাহাদের নাই, যাহারা তাম্বু [অথবা, মন্দির] সম্বন্ধে আরাধনা করে।” (ইব্রীয় ১৩:১০) আর এক কথায়, সত্য খ্রীষ্টানেরা এক উৎকৃষ্টতর পাপের-প্রায়শ্চিত্তমূলক বলিদান থেকে উপকৃত হয়, যেটিকে অধিকাংশ যিহূদী যাজকেরা প্রত্যাখ্যান করেছিল।
৬. (ক) যীশুর বাপ্তিস্মের সময়ে কী অস্তিত্বে আসে? (খ) মশীহ অথবা খ্রীষ্ট এই উপাধিটির অর্থ কী?
৬ পবিত্র আত্মা দ্বারা যীশুর অভিষিক্ত হওয়া বুঝিয়েছিল যে ঈশ্বর এখন মহাযাজক হিসাবে যীশুর পরিচর্যার মাধ্যমে তাঁর সমগ্র আত্মিক মন্দির ব্যবস্থাকে অস্তিত্বে এনেছেন। (প্রেরিত ১০:৩৮; ইব্রীয় ৫:৫) শিষ্য লূক এই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার বছরটিকে উল্লেখ করতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন যা “তিবিরিয় কৈসরের রাজত্বের পঞ্চদশ বৎসরে” ঘটেছিল। (লূক ৩:১-৩) সেটি মিলে যায় সা.শ. ২৯ সালের সাথে—যা ছিল ঠিক ৬৯ সপ্তাহের বছর অথবা ৪৮৩ বছর, রাজা অর্তক্ষস্ত যিরূশালেমের প্রাচীর পুনর্নিমাণ করতে আদেশ দেওয়ার সময় থেকে। (নহিমিয় ২:১, ৫-৮) ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে, “অভিষিক্ত ব্যক্তি, নায়ক” সেই চিহ্নিত বছরে আবির্ভূত হবেন। (দানিয়েল ৯:২৫) বহু যিহূদীই এই বিষয়টি সম্বন্ধে স্পষ্টভাবে অবগত ছিল। লূক বর্ণনা দেন “লোকেরা . . . অপেক্ষায় ছিল,” মশীহের অথবা খ্রীষ্টের আবির্ভাব সম্বন্ধে যে উপাধিগুলি ইব্রীয় ও গ্রীক শব্দগুলি থেকে এসেছে তার একই অর্থ ছিল “অভিষিক্ত জন।”—লূক ৩:১৫.
৭. (ক) কখন ঈশ্বর “মহাপবিত্রকে” অভিষিক্ত করেন এবং এটির অর্থ কী? (খ) তাঁর বাপ্তিস্মের সময়ে যীশুর প্রতি আর কী ঘটেছিল?
৭ যীশুর বাপ্তিস্মের সময়ে, মহান আত্মিক মন্দির ব্যবস্থায় ‘মহাপবিত্র’ হিসাবে ঈশ্বরের স্বর্গীয় গৃহকে অভিষিক্ত অথবা পৃথক করা হয়েছিল। (দানিয়েল ৯:২৪) “যে তাম্বু [অথবা, মন্দির] মনুষ্যকর্ত্তৃক নয়, কিন্তু প্রভুকর্ত্তৃক স্থাপিত হইয়াছে” তা কাজ শুরু করে। (ইব্রীয় ৮:২) এছাড়া জল ও পবিত্র আত্মার দ্বারা তাঁর বাপ্তিস্মের মাধ্যমে, মনুষ্য যীশু খ্রীষ্ট পুনরায় ঈশ্বরের আত্মিক পুত্র হিসাবে জন্মেছিলেন। (তুলনা করুন যোহন ৩:৩.) এর অর্থ ছিল যে ঈশ্বর তাঁর নিরূপিত সময়ে স্বর্গীয় জীবনে তাঁর পুত্রকে স্মরণ করবেন, যেখানে তিনি তাঁর পিতার দক্ষিণ হস্তে “মল্কীষেদকের রীতি অনুযায়ী অনন্তকালীন” রাজা ও মহাযাজক রূপে সেবা করবেন।—ইব্রীয় ৬:২০; গীতসংহিতা ১১০:১, ৪.
স্বর্গীয় অতি পবিত্র
৮. স্বর্গে ঈশ্বরের সিংহাসন কোন্ নতুন বৈশিষ্ট্যগুলি এখন গ্রহণ করে?
৮ যীশুর বাপ্তিস্মের দিনে, ঈশ্বরের স্বর্গীয় সিংহাসন নতুন বৈশিষ্ট্য লাভ করেছিল। জগতের পাপের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করতে এক সিদ্ধ মানুষের জীবন দান সম্বন্ধে ঈশ্বরের স্পষ্ট প্রকাশ মানুষের পাপের বিপরীতে ঈশ্বরের পবিত্রতার উপর জোর দেয়। এতে ঈশ্বরের দয়াও তুলে ধরা হয়েছিল কারণ এখন তিনি তৃপ্ত অথবা প্রসন্ন হওয়ার ইচ্ছা দেখান। এর ফলে, স্বর্গে ঈশ্বরের সিংহাসন মন্দিরের ভিতরের প্রকোষ্ঠটির মত হয়, যেখানে মহাযাজক বছরে একবার প্রতীক হিসাবে পাপের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করতে পশুর রক্ত নিয়ে প্রবেশ করতেন।
৯. (ক) পবিত্র এবং অতি পবিত্রের মধ্যে তিরস্করিণীটি কী চিত্রিত করেছিল? (খ) কিভাবে যীশু ঈশ্বরের আত্মিক মন্দিরের তিরস্করিণী অতিক্রম করে ভিতরে প্রবেশ করেছিলেন?
৯ যে তিরস্করিণীটি পবিত্র থেকে মহাপবিত্রকে পৃথক করত তা চিত্রিত করে যীশুর মাংসিক দেহকে। (ইব্রীয় ১০:১৯, ২০) তিনি যখন পৃথিবীতে মানুষ রূপে ছিলেন তখন এটি বেড়াস্বরূপ ছিল যা যীশুকে তাঁর পিতার কাছে প্রবেশ করা থেকে বিরত রেখেছিল। (১ করিন্থীয় ১৫:৫০) যীশুর মৃত্যুর সময়ে “মন্দিরের তিরস্করিণী উপর হইতে নীচ পর্য্যন্ত চিরিয়া দুইখান হইল।” (মথি ২৭:৫১) নাটকীয়ভাবে এটি ইঙ্গিত করেছিল যে, যে বেড়া স্বর্গে যীশুর প্রবেশের প্রতিবন্ধক ছিল তা এখন সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তিন দিন পরে যিহোবা ঈশ্বর আর একটি উল্লেখযোগ্য অলৌকিক কাজ সম্পন্ন করেন। তিনি যীশুকে মৃত্যু থেকে উত্থাপন করেন, রক্তমাংসের মরনশীল মনুষ্য হিসাবে নয়, কিন্তু ‘অনন্তকাল থাকার’ জন্য প্রতাপান্বিত এক আত্মিক প্রাণী রূপে। (ইব্রীয় ৭:২৪) চল্লিশ দিন পরে, যীশু স্বর্গারোহণ করেন এবং প্রকৃত “পবিত্র স্থানে” প্রবেশ করেন “যেন তিনি এখন আমাদের জন্য ঈশ্বরের সাক্ষাতে প্রকাশমান হন।”—ইব্রীয় ৯:২৪.
১০. (ক) তাঁর স্বর্গীয় পিতার কাছে যীশু তাঁর বলিদানের মূল্য উপস্থিত করার পর কী ঘটেছিল? (খ) খ্রীষ্টের শিষ্যদের জন্য পবিত্র আত্মা দ্বারা অভিষিক্ত হওয়া কী বুঝিয়েছিল?
১০ জগতের পাপের জন্য প্রায়শ্চিত হিসাবে যীশুর পাতিত রক্ত কি ঈশ্বর গ্রহণ করেছিলেন? বাস্তবিকই তিনি গ্রহণ করেছিলেন। যীশুর পুনরুত্থানের ঠিক ৫০ দিন পর, পঞ্চাশত্তমীর উৎসবের দিনে এটি প্রমাণিত হয়েছিল। যিরূশালেমে সমবেত যীশুর ১২০ জন শিষ্যের উপরে ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা বর্ষিত হয়েছিল। (প্রেরিত ২:১, ৪, ৩৩) তাদের মহাযাজক যীশু খ্রীষ্টের মত ঈশ্বরের মহান আত্মিক মন্দির ব্যবস্থার অধীনে “পবিত্র যাজকবর্গ” হিসাবে সেবা করার জন্য “আত্মিক বলি উৎসর্গ করিতে” তারা এখন অভিষিক্ত। (১ পিতর ২:৫) এছাড়াও, এই অভিষিক্ত ব্যক্তিরা একটি নতুন জাতি, ঈশ্বরের “পবিত্র জাতি” আত্মিক ইস্রায়েলের প্রবর্তন করে। সেই সময় থেকে, ইস্রায়েল সম্বন্ধীয় মঙ্গলজনক সমস্ত ভবিষ্যদ্বাণী, যেমন “নূতন নিয়ম” এর প্রতিজ্ঞা যা যিরমিয় ৩১:৩১ পদে লিপিবদ্ধ আছে তা প্রকৃত “ঈশ্বরের ইস্রায়েল,” অভিষিক্ত খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর প্রতি প্রযোজ্য হবে।—১ পিতর ২:৯; গালাতীয় ৬:১৬.
ঈশ্বরের আত্মিক মন্দিরের অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলি
১১, ১২. (ক) যীশুর ক্ষেত্রে যাজকীয় প্রাঙ্গণ কী বুঝিয়েছিল এবং তাঁর অভিষিক্ত অনুগামীদের ক্ষেত্রে এটির অর্থ কী? (খ) জলের পাত্রটি কী চিত্রিত করে এবং কিভাবে এটি ব্যবহৃত হত?
১১ যদিও মহাপবিত্র বলতে ‘স্বর্গকেই’ বুঝায় যেখানে ঈশ্বর অধিষ্ঠিত, তাই ঈশ্বরের আত্মিক মন্দিরের অন্যান্য সকল বৈশিষ্ট্য পার্থিব বিষয়ের সাথে সম্বন্ধযুক্ত। (ইব্রীয় ৯:২৪) যিরূশালেমের মন্দিরে, এক আভ্যন্তরীণ যাজকীয় প্রাঙ্গণ ছিল, যার ভিতরে বলির জন্য একটি বেদী ও জলের একটি বড় পাত্র থাকত, যাজকেরা পবিত্র সেবা সম্পাদন করার আগে নিজেদের পরিশুদ্ধ করতে যেটি ব্যবহার করত। ঈশ্বরের আত্মিক মন্দির ব্যবস্থায় এই বিষয়গুলি কী চিত্রিত করে?
১২ যীশু খ্রীষ্টের ক্ষেত্রে, আভ্যন্তরীণ যাজকীয় প্রাঙ্গণটি চিত্রিত করে ঈশ্বরের সিদ্ধ মনুষ্যপুত্র হিসাবে তাঁর নিষ্পাপ অবস্থা। যীশুর বলিদানের উপর বিশ্বাস অনুশীলনের দ্বারা খ্রীষ্টের অভিষিক্ত অনুগামীরা ধার্মিক গণিত হয়। সুতরাং, তাদের নিষ্পাপ ভেবে ঈশ্বর সঠিকভাবে তাদের সাথে আচরণ করতে পারেন। (রোমীয় ৫:১; ৮:১, ৩৩) তাই ঈশ্বরের সামনে পবিত্র যাজকের প্রত্যেক সদস্য যে সুযোগ উপভোগ করে সেই আরোপিত ধার্মিক মনুষ্য অবস্থাকেও এই প্রাঙ্গণ চিত্রিত করে। কিন্তু সেই সাথে অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা অসিদ্ধ এবং পাপ করার সম্ভাবনা তাদের আছে। প্রাঙ্গণের মধ্যে জলের পাত্রটি চিত্রিত করে ঈশ্বরের বাক্যকে, যেটিকে মহাযাজক পবিত্র যাজকবর্গকে ধীরে ধীরে পরিশুদ্ধ করার জন্য ব্যবহার করেন। পরিশুদ্ধ করার এই পদ্ধতির প্রতি বশীভূত হওয়ার দ্বারা তারা এক মর্যাদাপূর্ণ অবস্থা অর্জন করেছে যা ঈশ্বরকে সম্মান করে এবং বহিরাগতদের তাঁর শুদ্ধ উপাসনায় আকর্ষণ করে।—ইফিষীয় ৫:২৫, ২৬; তুলনা করুন মালাখি ৩:১-৩.
পবিত্র
১৩, ১৪. (ক) যীশুর ক্ষেত্রে এবং তাঁর অভিষিক্ত অনুগামীদের ক্ষেত্রে মন্দিরের পবিত্র স্থান কী চিত্রিত করে? (খ) স্বর্ণের দীপবৃক্ষ দ্বারা কী চিত্রিত করা হয়?
১৩ মন্দিরের প্রথম প্রকোষ্ঠটি প্রাঙ্গণের থেকে উৎকৃষ্টতর এক পরিস্থিতিকে চিত্রিত করে। সিদ্ধ মানব যীশু খ্রীষ্টের ক্ষেত্রে, এটি চিত্রিত করে ঈশ্বরের আত্মিক পুত্র হিসাবে তাঁর পুনর্জন্মকে, যিনি তাঁর স্বর্গীয় জীবনে ফিরে যাওয়ার জন্য পূর্বনির্ধারিত ছিলেন। খ্রীষ্টের পাতিত রক্তে তাদের বিশ্বাসের ভিত্তিতে ধার্মিক বলে গণ্য হওয়ার পর, এই অভিষিক্ত অনুগামীরাও ঈশ্বরের আত্মার এই বিশেষ কাজের অভিজ্ঞতা করে। (রোমীয় ৮:১৪-১৭) ঈশ্বরের আত্মিক পুত্র হিসাবে তারা “জল [যেটি হল তাদের বাপ্তিস্ম] এবং আত্মা” দ্বারা “নূতন জন্ম” লাভ করে। যেমন, যদি তারা মৃত্যু পর্যন্ত বিশ্বস্ত থাকে তাহলে স্বর্গীয় জীবনে ঈশ্বরের আত্মিক পুত্র হিসাবে তাদের পুনরুত্থিত হওয়ার আশা রয়েছে।—যোহন ৩:৫, ৭; প্রকাশিত বাক্য ২:১০.
১৪ যে যাজকেরা পার্থিব মন্দিরের পবিত্র অংশে সেবা করত তাদের বাইরের উপাসকেরা দেখতে পেত না। একইভাবে, অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা এক আত্মিক পরিস্থিতি উপভোগ করে, যা ঈশ্বরের বহুসংখ্যক উপাসক যাদের আশা হল পরমদেশ পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকা, তারা তার অংশী হয় না বা তাদের কাছে তা সম্পূর্ণ বোধগম্য হয় না। সমাগমতাম্বুর স্বর্ণের দীপবৃক্ষ চিত্রিত করে অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের জ্ঞানালোকপ্রাপ্ত অবস্থাকে। ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার কাজ হল, প্রদীপের তেলের মত, যা বাইবেলের উপর আলোকপাত করা। ফলে যে বোধগম্যতা খ্রীষ্টানেরা লাভ করে, তারা তা নিজেদের মধ্যে রেখে দেয় না। বরঞ্চ, তারা যীশুর কথার বাধ্য হয়, যিনি বলেছিলেন: “তোমরা জগতের দীপ্তি; . . . তোমাদের দীপ্তি মনুষ্যদের সাক্ষাতে উজ্জ্বল হউক, যেন তাহারা তোমাদের সৎক্রিয়া দেখিয়া তোমাদের স্বর্গস্থ পিতার গৌরব করে।”—মথি ৫:১৪, ১৬.
১৫. দর্শন-রুটির মেজে রুটির দ্বারা কী চিত্রিত করা হয়?
১৫ এই জ্ঞানালোকপ্রাপ্ত অবস্থায় থাকতে হলে, অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের অবশ্যই নিয়মিতভাবে দর্শন-রুটির মেজে রুটির দ্বারা যা চিত্রিত হয়েছে সেই খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। তাদের আত্মিক খাদ্যের প্রধান উৎস হল ঈশ্বরের বাক্য, যেটিকে তারা প্রতিদিন পড়ার জন্য প্রচেষ্টা করে এবং তার উপর ধ্যান করে। এছাড়া তাঁর “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস” এর মাধ্যমে তাদের “উপযুক্ত সময়ে খাদ্য” প্রদানের প্রতিজ্ঞাও যীশু করেছিলেন। (মথি ২৪:৪৫) কোন এক নির্দিষ্ট সময়ে পৃথিবীতে অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের সমগ্র গোষ্ঠীই হল এই “দাস।” বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীগুলির পরিপূর্ণতার উপর তথ্যাদি প্রকাশ করতে এবং আধুনিক দিনের প্রাত্যহিক জীবনে বাইবেলের নীতিগুলি প্রয়োগের উপর সময়োপযোগী নির্দেশনা প্রদান করতে খ্রীষ্ট এই অভিষিক্ত গোষ্ঠীকে ব্যবহার করেছেন। তাই, অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা উপলব্ধি সহকারে এইধরনের সমস্ত আধ্যাত্মিক আয়োজনগুলিকে গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু তাদের আধ্যাত্মিক জীবন নির্ভর করে ঈশ্বর সম্বন্ধীয় জ্ঞান তাদের মনে ও হৃদয়ে গ্রহণ করার চাইতে আরও বেশি কিছুর উপর। যীশু বলেছিলেন: “আমার খাদ্য এই, যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, যেন তাঁহার ইচ্ছা পালন করি ও তাঁহার কার্য্য সাধন করি।” (যোহন ৪:৩৪) একইভাবে, অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা ঈশ্বরের প্রকাশিত ইচ্ছা প্রতিদিন নিজেদের জীবনে প্রয়োগ করার দ্বারা পরিতৃপ্তি লাভ করে।
১৬. বেদীতে ধূপ নিবেদন করার দ্বারা কী চিত্রিত করা হয়?
১৬ সকাল ও সন্ধ্যায় একজন যাজক ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে পবিত্র স্থানের ধূপের বেদীর উপর ধূপ নিবেদন করতেন। একই সময়ে, যাজক নয় এমন উপাসকেরা তাঁর মন্দিরের বহিঃস্থ প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে থেকে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করত। (লূক ১:৮-১০) বাইবেল ব্যাখ্যা করে, “সেই ধূপ পবিত্রগণের প্রার্থনাস্বরূপ।” (প্রকাশিত বাক্য ৫:৮) “আমার প্রার্থনা তোমার সম্মুখে সুগন্ধি ধূপরূপে, . . . সাজান হউক,” গীতরচক দায়ূদ লিখেছিলেন। (গীতসংহিতা ১৪১:২) একইভাবে, অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরাও যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে প্রার্থনায় যিহোবার কাছে উপস্থিত হওয়ার তাদের সুযোগকে মূল্যবান মনে করে। হৃদয় থেকে উৎসারিত ঐকান্তিক আগ্রহপূর্ণ প্রার্থনা যেন সুমিষ্ট-সুগন্ধি ধূপের মত। অন্যান্য উপায়েও অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা ঈশ্বরের প্রশংসা করে, অন্যদের শিক্ষা দিতে তাদের ওষ্ঠকে ব্যবহার করে। কষ্টের মুখে তাদের ধৈর্য এবং পরীক্ষার সময়ে তাদের বিশ্বস্ততা বিশেষ করে ঈশ্বরকে খুশি করে।—১ পিতর ২:২০, ২১.
১৭. প্রায়শ্চিত্তের দিনে অতি পবিত্রস্থানে মহাযাজকের প্রথম প্রবেশের দ্বারা প্রদত্ত ভাববাণীমূলক চিত্রের পরিপূর্ণতায় কী জড়িত ছিল?
১৭ প্রায়শ্চিত্তের দিনে, ইস্রায়েলের মহাযাজক অতি পবিত্র স্থানে প্রবেশ করতেন এবং স্বর্ণের ধূপদানিতে ধূপ জ্বালাতেন যার মধ্যে থাকত জ্বলন্ত কয়লা। পাপের বলিদানের জন্য রক্ত আনার আগেই এটি করতে হত। এই ভবিষ্যদ্বাণীমূলক চিত্রটির পরিপূর্ণতায়, মনুষ্য যীশু আমাদের পাপের জন্য এক চিরস্থায়ী বলিদান হিসাবে তাঁর জীবন যিহোবা ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করার আগে পর্যন্ত সম্পূর্ণ বিশ্বস্ততা বজায় রেখেছিলেন। এইভাবে তিনি দেখিয়েছিলেন যে একজন সিদ্ধ মানুষ তার উপর শয়তান যে ধরনেরই চাপ নিয়ে আসুক না কেন ঈশ্বরের প্রতি তার বিশ্বস্ততা বজায় রাখতে পারত। (হিতোপদেশ ২৭:১১) পরীক্ষার সময়ে যীশু “প্রবল আর্ত্তনাদ ও অশ্রুপাত সহকারে” প্রার্থনা করেছিলেন, “এবং আপন ভক্তি প্রযুক্ত উত্তর পাইলেন।” (ইব্রীয় ৫:৭) এইভাবে তিনি ধার্মিক এবং বিশ্বের সঠিক সার্বভৌম হিসাবে যিহোবাকে মহিমান্বিত করেছিলেন। মৃত্যু থেকে স্বর্গীয় অমর জীবনে তাঁকে পুনরুত্থিত করার দ্বারা ঈশ্বর যীশুকে পুরস্কৃত করেছিলেন। তাঁর এই উচ্চ স্থান থেকে যীশু তাঁর পৃথিবীতে আসার দ্বিতীয় কারণটির প্রতি দৃষ্টি দেন, যা হল ঈশ্বরের সাথে অনুতপ্ত পাপী মনুষ্যদের পুনর্মিলন করা।—ইব্রীয় ৪:১৪-১৬.
ঈশ্বরের আত্মিক মন্দিরের মহোত্তর গৌরব
১৮. যিহোবা তাঁর আত্মিক মন্দিরে কিভাবে উল্লেখযোগ্য গৌরব এনেছেন?
১৮ “এই গৃহের পূর্ব্ব প্রতাপ অপেক্ষা উত্তর প্রতাপ গুরুতর হইবে,” যিহোবা ভাববাণী করেছিলেন। (হগয় ২:৯) এক অমর রাজা এবং যাজক হিসাবে যীশুকে পুনরুত্থিত করার দ্বারা যিহোবা তাঁর আত্মিক মন্দিরে উল্লেখযোগ্য গৌরব এনেছিলেন। যীশু এখন ‘আপনার আজ্ঞাবহ সকলের অনন্ত পরিত্রাণ’ আনার যোগ্য হন। (ইব্রীয় ৫:৯) এইধরনের আজ্ঞাবহতা যারা প্রথম দেখিয়েছিল তারা হল ১২০ জন শিষ্য যারা সা.শ. ৩৩ সালে পঞ্চাশত্তমীতে পবিত্র আত্মা পেয়েছিল। প্রকাশিত বাক্য পুস্তকটি ভাববাণী করে যে ইস্রায়েলের এই আত্মিক পুত্রদের সংখ্যা শেষপর্যন্ত ১,৪৪,০০০ জন হবে। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৪) রাজকীয় ক্ষমতায় যীশুর উপস্থিতির অপেক্ষায়, মৃত্যুর পর তাদের অনেককেই মানবজাতির সাধারণ কবরে অচেতন অবস্থায় শায়িত হতে হয়েছিল। দানিয়েল ৪:১০-১৭, ২০-২৭ পদে বর্ণিত ভবিষ্যদ্বাণীমূলক কালক্রমটি যীশুর তাঁর শত্রুদের মধ্যে শাসন শুরু করার সময় হিসাবে ১৯১৪ সালের প্রতি ইঙ্গিত করে। (গীতসংহিতা ১১০:২) পূর্বের বহু দশক ধরে অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা গভীর আগ্রহের সাথে সেই বছরটির জন্য অপেক্ষা করেছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং তার সাথে মানবজাতির উপর আসা দুর্দশাগুলি প্রমাণ করেছিল যে যীশু বাস্তবিকই ১৯১৪ সালে রাজা হিসাবে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। (মথি ২৪:৩, ৭, ৮) এর অল্প কিছুদিন পরেই, “ঈশ্বরের গৃহে বিচার আরম্ভ হইবার” সময় হয় আর যে অভিষিক্ত শিষ্যেরা মৃত্যুতে নিদ্রা গিয়েছিল, তাদের প্রতি যীশু এই প্রতিজ্ঞাটি পরিপূর্ণ করেন: “পুনর্ব্বার আসিব, এবং আমার নিকটে তোমাদিগকে লইয়া যাইব।”—১ পিতর ৪:১৭; যোহন ১৪:৩.
১৯. কিভাবে ১,৪৪,০০০ জনের অবশিষ্টাংশেরা স্বর্গে অতি পবিত্র স্থানে প্রবেশ করবে?
১৯ পবিত্র যাজকবর্গের ১,৪৪,০০০ জন সদস্যের সকলের সর্বশেষ মুদ্রাঙ্কন হয়নি এবং তাদের স্বর্গীয় গৃহে একত্রিত করা হয়নি। ঈশ্বরের পবিত্র উপস্থিতি থেকে তাদের মাংসিক দেহরূপ “তিরস্করিণী” অথবা বেড়া দ্বারা পৃথকীকৃত পবিত্র স্থানের দ্বারা চিত্রিত আত্মিক পরিস্থিতিতে এদের অবশিষ্টাংশেরা এখনও পৃথিবীতে জীবিত রয়েছে। এই ব্যক্তিরা বিশ্বাসে মারা যাওয়ার সাথে সাথে চোখের পলকে অমর আত্মিক প্রাণী হিসাবে পুনরুত্থিত হয়, ১,৪৪,০০০ জনের মধ্যে ইতিমধ্যেই, যারা স্বর্গে রয়েছে তাদের সাথে যোগ দেওয়ার জন্য।—১ করিন্থীয় ১৫:৫১-৫৩.
২০. এই সময়ে পবিত্র যাজকবর্গের অবশিষ্টাংশেরা কোন্ অত্যাবশ্যকীয় কাজ সম্পাদন করছে এবং এর ফল কী হয়েছে?
২০ স্বর্গে মহাযাজকের সাথে এত যাজক সেবা করার দরুন ঈশ্বরের আত্মিক মন্দির অতিরিক্ত গৌরব পেয়েছে। ইত্যবসরে, এই পবিত্র যাজকদের অবশিষ্টাংশেরা পৃথিবীতে এক মূল্যবান কাজ সম্পাদন করছে। তাদের প্রচারের দ্বারা ঈশ্বর ‘সর্ব্বজাতিকে কম্পান্বিত করেছেন’ তাঁর বিচারের কথা প্রকাশ করে, যেমন হগয় ২:৭ পদে ভাববাণী করা হয়েছিল। একই সময়ে, লক্ষ লক্ষ উপাসকেরা যাদের “সর্ব্বজাতির মনোরঞ্জন বস্তু” রূপে বর্ণনা করা হয়েছে তারা যিহোবার পার্থিব মন্দিরের প্রাঙ্গণে একত্রিত হচ্ছে। এই ব্যক্তিরা কিভাবে ঈশ্বরের ব্যবস্থায় উপাসনা করার জন্য যোগ্য হয় এবং তাঁর মহান আত্মিক মন্দিরের জন্য আমরা কোন্ ভবিষ্যৎ গৌরব আশা করতে পারি? এই প্রশ্নগুলি পরবর্তী প্রবন্ধে পরীক্ষা করা হবে।
পুনরালোচনার প্রশ্নগুলি
◻ সা.শ. ২৯ সালে যীশু কোন্ উল্লেখযোগ্য উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন?
◻ সা.শ. ২৯ সালে কোন্ ব্যবস্থা কার্যকারী হয়?
◻ পবিত্র এবং অতি পবিত্র দ্বারা কী বুঝান হয়েছে?
◻ কিভাবে মহান আত্মিক মন্দির গৌরবান্বিত হয়েছে?
[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
সা.শ. ২৯ সালে পবিত্র আত্মা দ্বারা যীশুর অভিষিক্ত হওয়ার সাথে সাথে ঈশ্বরের মহান আত্মিক মন্দির কার্যকারী হতে শুরু করে