“শান্তির কাল” একেবারে কাছেই!
“সকল বিষয়েরই সময় আছে, . . . যুদ্ধের কাল ও সন্ধির [শান্তির] কাল।”—উপদেশক ৩:১, ৮.
১. যুদ্ধ ও শান্তির বিষয়ে বিংশ শতাব্দীতে কোন্ দুঃখজনক অবস্থা বিরাজ করেছে?
সারা পৃথিবীতে লোকেরা শান্তি চায় আর তা চাওয়াই স্বাভাবিক। ইতিহাসে, আমাদের এই বিংশ শতাব্দীতেই সবচেয়ে বেশি অশান্তি হয়েছে। আর তাই এই শতাব্দীতেই শান্তি আনার জন্য অনেক বেশি চেষ্টা করা হয়েছে। তাই ১৯২০ সালে জাতিপুঞ্জ গঠন করা হয়েছিল। ১৯২৮ সালে কেলগ-ব্রায়েন্ড চুক্তি করা হয়েছিল যেটাকে একটা বইয়ে “প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর শান্তি রক্ষার জন্য সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ” বলা হয়েছিল এবং এই চুক্তিকে “বিশ্বের প্রায় সব দেশই সমর্থন করেছিল . . . সারা পৃথিবীতে শান্তি আনার হাতিয়ার হিসেবে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য তারা একমত হয়েছিল।” কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই জাতিপুঞ্জ অকেজো হয়ে পড়ে এবং ১৯৪৫ সালে তার জায়গায় রাষ্ট্রসংঘ গঠন করা হয়।
২. রাষ্ট্রসংঘের উদ্দেশ্য কী আর এটা কত দূর পর্যন্ত সফল হয়েছে?
২ জাতিপুঞ্জের মতো রাষ্ট্রসংঘের উদ্দেশ্যও হল পৃথিবীতে শান্তি নিয়ে আসা। কিন্তু আজ পর্যন্ত এটা খুব কমই সফল হয়েছে। এটা সত্যি যে এখন পৃথিবীর কোথাও দুটো বিশ্বযুদ্ধের মতো এত বড় যুদ্ধ হচ্ছে না। কিন্তু তবুও ছোট ছোট যুদ্ধগুলো লাখ লাখ লোকেদের মনের শান্তি, বিষয় সম্পত্তি ও জীবন কেড়ে নিচ্ছে। তাই এইরকম মনে করার মতো দুঃসাহস কি আমাদের আছে যে একবিংশ শতাব্দীকে রাষ্ট্রসংঘ “শান্তির কাল” করতে পারবে?
প্রকৃত শান্তির ভিত্তি
৩. কেন ঘৃণা ও প্রকৃত শান্তি একসঙ্গে থাকতে পারে না?
৩ শুধু সহনশীলতাই মানুষে মানুষে ও বিভিন্ন জাতির মধ্যে শান্তি আনতে পারবে না। কেউ যদি আরেকজনকে ঘৃণাই করে, তাহলে তার সঙ্গে কি সত্যিই শান্তিতে থাকা যায়? না, কারণ ১ যোহন ৩:১৫ পদ বলে: “যে কেহ আপন ভ্রাতাকে ঘৃণা করে, সে নরঘাতক।” ইদানীং কালের ঘটনাগুলো প্রমাণ করে যে প্রচণ্ড ঘৃণা খুব সহজেই হিংসাত্মক কাজ ঘটায়।
৪. একমাত্র কারা শান্তি উপভোগ করতে পারেন এবং কেন?
৪ যিহোবা “শান্তির ঈশ্বর” তাই যারা ঈশ্বরকে ভালবাসেন এবং তাঁর ধার্মিক নীতিগুলোকে মেনে চলেন, একমাত্র তাদের মধ্যেই শান্তি থাকে। এই বিষয়টা স্পষ্ট যে যিহোবা সবাইকেই শান্তি দেন না। “আমার ঈশ্বর কহেন, দুষ্ট লোকদের কিছুই শান্তি নাই।” দুষ্ট লোকেরা ঈশ্বরের আত্মা যে পথ দেখায় সেই পথে চলে না তাই তাদের শান্তি নেই, কারণ শান্তি হল ঈশ্বরের আত্মার একটা ফল।—রোমীয় ১৫:৩৩; যিশাইয় ৫৭:২১; গালাতীয় ৫:২২, ২৩.
৫. সত্য খ্রীষ্টানেরা কোন্ বিষয়টা চিন্তাই করতে পারেন না?
৫ এই বিংশ শতাব্দীতে নামধারী খ্রীষ্টানেরা একে অন্যের সঙ্গে যেভাবে যুদ্ধ করেছে, তা সত্য খ্রীষ্টানদের বেলায় চিন্তাই করা যায় না। (যাকোব ৪:১-৪) এটা ঠিক যে ঈশ্বরের সম্বন্ধে মিথ্যা শিক্ষা দেওয়া হলে সত্য খ্রীষ্টানেরা তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন, তবে তাদের সেই যুদ্ধ লোকেদেরকে সাহায্য করার জন্য, তাদের ক্ষতি করার জন্য নয়। কিন্তু ধর্মের নামে অথবা জাতিভেদের কারণে অন্যদের ওপর নির্যাতন করা, সত্য খ্রীষ্টানদের নীতি নয়। রোমের খ্রীষ্টানদের পৌল বলেছিলেন “যদি সাধ্য হয়, তোমাদের যত দূর হাত থাকে, মনুষ্যমাত্রের সহিত শান্তিতে থাক।”—রোমীয় ১২:১৭-১৯; ২ তীমথিয় ২:২৪-২৫.
৬. আজকে সত্যিকারের সুখ একমাত্র কোথায় পাওয়া যায়?
৬ আজকে, যিহোবা শুধু তাদেরই শান্তি দেন যারা যিহোবার সত্য উপাসক। (গীতসংহিতা ১১৯:১৬৫; যিশাইয় ৪৮:১৮) রাজনৈতিক মতভেদ তাদের একতায় ফাঁটল ধরায় না কারণ সব দেশেই তারা রাজনৈতিক দিক দিয়ে নিরপেক্ষ। (যোহন ১৫:১৯; ১৭:১৪) তাদের মধ্যে ‘দলাদলি নাই, কিন্তু তারা এক মনে ও এক বিচারে পরিপক্ব’ বলে ধর্মের পার্থক্য তাদের শান্তি নষ্ট করে না। (১ করিন্থীয় ১:১০) যিহোবার সাক্ষিদের মধ্যে যে শান্তি আছে তা আজকের দিনের জন্য এক বিস্ময়, যা ঈশ্বর তাঁর প্রতিজ্ঞাকে পূর্ণ করার জন্য দিয়েছেন: “আমি শান্তিকে তোমার অধ্যক্ষ করিব, ধার্ম্মিকতাকে তোমার শাসনকর্ত্তা করিব।”—যিশাইয় ৬০:১৭; ইব্রীয় ৮:১০.
কেন “যুদ্ধের কাল”?
৭, ৮. (ক) যিহোবার সাক্ষিদের মধ্যে শান্তি থাকা সত্ত্বেও তারা বর্তমান অবস্থাকে কীভাবে দেখে থাকেন? (খ) একজন খ্রীষ্টানের যুদ্ধের প্রধান অস্ত্র কোন্টা?
৭ যিহোবার সাক্ষিদের মধ্যে শান্তি থাকা সত্ত্বেও, তারা বর্তমান সময়কে মূলত “যুদ্ধের কাল” হিসেবেই দেখে থাকেন। অবশ্য সেটা আক্ষরিক যুদ্ধ নয় কারণ অন্যদেরকে ভয় দেখিয়ে জোর করে বাইবেলের খবর শোনানো, ঈশ্বরের এই আমন্ত্রণের একেবারে উল্টো: “যে ইচ্ছা করে, সে বিনামূল্যেই জীবন-জল গ্রহণ করুক।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (প্রকাশিত বাক্য ২২:১৭) তাই আমরা জোর করে ধর্ম পরিবর্তন করাই না! যিহোবার সাক্ষিদের যে যুদ্ধ তা পুরোপুরি আধ্যাত্মিক। পৌল লিখেছিলেন: “আমাদের যুদ্ধের অস্ত্রশস্ত্র মাংসিক নহে, কিন্তু দুর্গসমূহ ভাঙ্গিয়া ফেলিবার জন্য ঈশ্বরের সাক্ষাতে পরাক্রমী।”—২ করিন্থীয় ১০:৪; ১ তীমথিয় ১:১৮.
৮ ‘আমাদের যুদ্ধের অস্ত্রশস্ত্রের’ মধ্যে প্রধান হল “আত্মার খড়গ, অর্থাৎ ঈশ্বরের বাক্য।” (ইফিষীয় ৬:১৭) এই খড়গের অনেক শক্তি আছে। “ঈশ্বরের বাক্য জীবন্ত ও কার্য্যসাধক, এবং সমস্ত দ্বিধার খড়গ অপেক্ষা তীক্ষ্ণ, এবং প্রাণ ও আত্মা, গ্রন্থি ও মজ্জা, এই সকলের বিভেদ পর্য্যন্ত মর্ম্মবেধী, এবং হৃদয়ের চিন্তা ও বিবেচনার সূক্ষ্ম বিচারক।” (ইব্রীয় ৪:১২) এই খড়গ কাজে লাগিয়ে খ্রীষ্টানেরা “বিতর্ক সকল এবং ঈশ্বর-জ্ঞানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সমস্ত উচ্চ বস্তু” ভেঙে ফেলতে পারেন। (২ করিন্থীয় ১০:৫) এর মাধ্যমে তারা মিথ্যা শিক্ষা, ক্ষতিকর কাজ এবং সেই দর্শনগুলোকে প্রকাশ করতে পারেন, যেগুলো ঈশ্বরের চেয়ে মানুষের জ্ঞানকে জাহির করে।—১ করিন্থীয় ২:৬-৮; ইফিষীয় ৬:১১-১৩.
৯. পাপপূর্ণ মাংসের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধে কেন কোন ঢিলেমি থাকতে পারে না?
৯ খ্রীষ্টানেরা আরেক ধরনের আধ্যাত্মিক যুদ্ধ করে থাকেন আর তা হল আমাদের পাপপূর্ণ মাংসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। খ্রীষ্টানেরা পৌলের উদাহরণ অনুকরণ করেন যিনি স্বীকার করেছিলেন: “আমার নিজ দেহকে প্রহার করিয়া দাসত্বে রাখিতেছি, পাছে অন্য লোকদের কাছে প্রচার করিবার পর আমি আপনি কোন ক্রমে অগ্রাহ্য হইয়া পড়ি।” (১ করিন্থীয় ৯:২৭) কলসীয়ের খ্রীষ্টানদেরকে বলা হয়েছিল যেন তারা “পৃথিবীস্থ আপন আপন অঙ্গ সকল” মৃত্যুসাৎ করেন, “যথা, বেশ্যাগমন, অশুচিতা, মোহ, কুঅভিলাষ, এবং লোভ, এ ত প্রতিমাপূজা।” (কলসীয় ৩:৫) আর বাইবেলের লেখক যিহূদা খ্রীষ্টানদের পরামর্শ দিয়েছিলেন: “পবিত্রগণের কাছে একবারে সমর্পিত বিশ্বাসের পক্ষে প্রাণপণ” কর। (যিহূদা ৩) কেন আমাদের তা করা উচিত? পৌল উত্তর দেন: “যদি মাংসের বশে জীবন যাপন কর, তবে তোমরা নিশ্চয় মরিবে, কিন্তু যদি আত্মাতে দেহের ক্রিয়া সকল মৃত্যুসাৎ কর, তবে জীবিত থাকিবে।” (রোমীয় ৮:১৩) এই স্পষ্ট কথাটা ভাল মতো চিন্তা করলে, খারাপ প্রবণতার বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধে কোনরকম ঢিলেমি থাকতে পারে না।
১০. ১৯১৪ সালে কী হয়েছিল আর অদূর ভবিষ্যতে কী হবে?
১০ বর্তমান সময়কে কেন যুদ্ধের সময় হিসেবে দেখা হয় তার আরেকটা কারণ হল “আমাদের ঈশ্বরের প্রতিশোধের দিন” খুবই কাছে। (যিশাইয় ৬১:১, ২) ১৯১৪ সালে মশীহ রাজ্য প্রতিষ্ঠা এবং শয়তানের ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করার জন্য ঈশ্বরের নিরূপিত সময় এসেছিল। ঈশ্বর মানুষকে তাঁর কোনরকম সাহায্য ছাড়া শাসন করে দেখার জন্য যে সময় দিয়েছিলেন তা তখন শেষ হয়ে গিয়েছিল। ঈশ্বরের মশীহ শাসনকে মেনে নেওয়ার বদলে বেশির ভাগ লোক তাঁকে অস্বীকার করেছিল, যেমন প্রথম শতাব্দীতেও হয়েছিল। (প্রেরিত ২৮:২৭) আর মানুষেরা এর বিরোধিতা করায় খ্রীষ্টকে “[তাঁর] শত্রুদের মধ্যে কর্ত্তৃত্ব” শুরু করতে হয়েছিল। (গীতসংহিতা ১১০:২) আনন্দের বিষয় হল, প্রকাশিত বাক্য ৬:২ পদ প্রতিজ্ঞা করে যে তিনি “জয়” করবেন। আর তা তিনি “সর্ব্বশক্তিমান্ ঈশ্বরের সেই মহাদিনের যুদ্ধার্থে” করবেন “ইব্রীয় ভাষায় যাহাকে হর্মাগিদোন বলে।”—প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৪, ১৬.
এখন “কথা কহিবার কাল”
১১. কেন যিহোবা প্রচুর ধৈর্য দেখিয়ে আসছেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত কী হবে?
১১ মানুষের ইতিহাসে ১৯১৪ সাল ছিল এক সন্ধিক্ষণ আর তখন থেকে আজ ৮৫ বছর পার হয়ে গেছে। যিহোবা মানুষের জন্য অনেক ধৈর্য ধরেছেন। তিনি তাঁর সাক্ষিদেরকে জানিয়েছেন যে সময় খুবই অল্প আর তাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজ করা দরকার। লাখ লাখ লোকেদের জীবন বিপদের মধ্যে রয়েছে আর তাদেরও সতর্ক করে দেওয়া দরকার কারণ “কতকগুলি লোক যে বিনষ্ট হয়, এমন বাসনা তাঁহার নাই; বরং সকলে যেন মনপরিবর্ত্তন পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পায়, এই তাঁহার বাসনা।” (২ পিতর ৩:৯) তবুও, শীঘ্রই সেই সময় আসবে যখন “প্রভু যীশু স্বর্গ হইতে আপনার পরাক্রমের দূতগণের সহিত . . . প্রকাশিত হইবেন।” আর তখন যারা ঈশ্বরের রাজ্যের বার্তা ইচ্ছাকৃতভাবে অস্বীকার করবে তারা সবাই “সমুচিত দণ্ড” পাবে, যা যীশু তাদের ওপর আনবেন “যাহারা ঈশ্বরকে জানে না ও যাহারা আমাদের প্রভু যীশুর সুসমাচারের আজ্ঞাবহ হয় না।”—২ থিষলনীকীয় ১:৬-৯.
১২. (ক) মহাক্লেশ কখন আসতে পারে সেই বিষয়ে হিসাব করে কোন লাভ নেই কেন? (খ) কোন্ বিপদের বিষয়ে যীশু সতর্ক করে দিয়েছিলেন?
১২ শেষে কখন যিহোবার ধৈর্য একেবারে শেষ হয়ে যাবে? “মহাক্লেশ” কখন শুরু হবে সেই সম্বন্ধে হিসাব করে কোন লাভ নেই। কারণ যীশু পরিষ্কারভাবে বলেছিলেন: “সেই দিনের ও সেই দণ্ডের তত্ত্ব কেহই জানে না।” অন্যদিকে তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন: “অতএব জাগিয়া থাক, কেননা তোমাদের প্রভু কোন্ দিন আসিবেন, তাহা তোমরা জান না। . . . তোমরাও প্রস্তুত থাক, কেননা যে দণ্ড তোমরা মনে করিবে না, সেই দণ্ডে মনুষ্যপুত্ত্র আসিবেন।” (মথি ২৪:২১, ৩৬, ৪২, ৪৪) স্পষ্ট করে বলতে গেলে, এটার অর্থ হল যে আমাদের জগতের অবস্থা সম্বন্ধে সবসময় সজাগ থাকতে হবে এবং মহাক্লেশ যে শুরু হবে সেই বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে। (১ থিষলনীকীয় ৫:১-৫) এটাকে হালকাভাবে নিয়ে এইরকম ভাবা কতই না বিপদজনক যে এখন আমরা ধীর গতিতে চলতে পারি, স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ডুবে থাকতে পারি আর সামনে কী ঘটতে চলেছে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে পারি! যীশু বলেছিলেন: “আপনাদের বিষয়ে সাবধান থাকিও, পাছে ভোগপীড়ায় ও মত্ততায় এবং জীবিকার চিন্তায় তোমাদের হৃদয় ভারগ্রস্ত হয়, আর সেই দিন হঠাৎ ফাঁদের ন্যায় তোমাদের উপরে আসিয়া পড়ে।” (লূক ২১:৩৪) আমরা নিশ্চিত: যিহোবার “চারি দূত” ধ্বংসের যে “চারি বায়ু” এখন ধরে আছেন তা তারা চিরকাল ধরে রাখবেন না।—প্রকাশিত বাক্য ৭:১-৩.
১৩. প্রায় ৬০ লাখ লোকেরা কী বুঝতে পেরেছেন?
১৩ বিচারের দিন যেহেতু দ্রুত এগিয়ে আসছে তাই “কথা কহিবার কাল” এর বিষয়ে শলোমন যা বলেছিলেন আমাদের জন্য তার এক বিশেষ অর্থ আছে। (উপদেশক ৩:৭) এখন কথা বলার সময় তা উপলব্ধি করে, প্রায় ৬০ লাখ যিহোবার সাক্ষি উদ্যোগের সঙ্গে ঈশ্বরের রাজ্যের প্রতাপ সম্বন্ধে লোকেদের বলছেন এবং তাঁর প্রতিশোধের দিন সম্বন্ধে সতর্ক করে দিচ্ছেন। খ্রীষ্টের এই বিক্রম দিনে তারা স্বেচ্ছায় নিজেদেরকে বিলিয়ে দেন।—গীতসংহিতা ১১০:৩; ১৪৫:১০-১২.
যারা “যখন শান্তি নাই, তখন শান্তি শান্তি” বলেন
১৪. সাধারণ কাল পূর্ব সপ্তম শতাব্দীতে কোন্ মিথ্যা ভাববাদীরা ছিল?
১৪ সাধারণ কাল পূর্ব সপ্তম শতাব্দীতে ঈশ্বরের ভাববাদী যিরমিয় ও যিহিষ্কেল যিরূশালেমের বিরুদ্ধে ঐশিক বিচারের বার্তা ঘোষণা করেছিলেন কারণ যিরূশালেমের লোকেরা ঈশ্বরের অবাধ্য হয়ে বিপথে চলে গিয়েছিল। তারা যে ধ্বংসের বিষয়ে ভাববাণী করেছিলেন তা সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে হয়েছিল কিন্তু তখনকার বড় বড় ও প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতারা ঈশ্বরের বার্তাবাহকদের বিরোধিতা করেছিল। এই ধর্মীয় নেতারা ‘নির্ব্বোধ ভাববাদী’ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিল যারা “শান্তি না হইলেও . . . ‘শান্তি’ বলিয়া [ঈশ্বরের] প্রজাদিগকে ভ্রান্ত করিয়াছে।”—যিহিষ্কেল ১৩:১-১৬; যিরমিয় ৬:১৪, ১৫; ৮:৮-১২.
১৫. আজকেও কি মিথ্যা ভাববাদীরা আছে? বুঝিয়ে বলুন।
১৫ তখনকার ‘নির্ব্বোধ ভাববাদীদের’ মতো আজকেও বেশির ভাগ ধর্মীয় নেতারা ঈশ্বরের আসন্ন বিচারের দিন ঘোষণা করেন না। এর বদলে, তারা রাজনৈতিক দলগুলোকে রং মাখিয়ে সবার সামনে তুলে ধরেন আর বলেন যে সেগুলোই পৃথিবীতে শান্তি ও নিরাপত্তা নিয়ে আসবে। তারা ঈশ্বরকে বাদ দিয়ে মানুষদের খুশি করায় ব্যস্ত আর তাই তাদের গির্জার সদস্যরা যা শুনতে চান তারা তাই বলেন। তারা বোঝান না যে ঈশ্বরের রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে এবং মশীহ রাজা শীঘ্রই জয় করবেন। (দানিয়েল ২:৪৪; ২ তীমথিয় ৪:৩, ৪; প্রকাশিত বাক্য ৬:২) মিথ্যা ভাববাদীদের মতো, তারাও “যখন শান্তি নাই, তখন শান্তি শান্তি বলিয়াছে।” কিন্তু তাদের বিশ্বাস শীঘ্রই আতঙ্কে পরিণত হবে যখন তারা সেই ব্যক্তির প্রচণ্ড ক্রোধ দেখবেন, যে ব্যক্তিকে তারা ভুলভাবে তুলে ধরেছেন এবং যাঁর নামের ওপর তারা নিন্দা নিয়ে এসেছেন। মিথ্যা ধর্মের বিশ্ব সাম্রাজ্যের নেতারা যাদেরকে বাইবেলে বেশ্যা বলা হয়েছে, এমন মারাত্মক আঘাত পাবে যে তারা তাদের নিজেদের শান্তির নিষ্ফল চিৎকারের তলায় ডুবে যাবে।—প্রকাশিত বাক্য ১৮:৭, ৮.
১৬. (ক) কোন্ কোন্ বিষয়ের জন্য যিহোবার সাক্ষিরা পরিচিত? (খ) যারা “শান্তি না হইলেও . . . ‘শান্তি’” বলেন তাদের চেয়ে তারা কীভাবে আলাদা?
১৬ যদিও এই বড় বড় ও প্রভাবশালী নেতারা কপটভাবে শান্তির প্রতিজ্ঞা করে চলেন, তবুও তারা সেই লোকেদের বিশ্বাসকে নড়চড় করতে পারেন না, যারা বিশ্বাস করেন যে একমাত্র ঈশ্বরই প্রকৃত শান্তি আনতে পারেন। একশ বছরেরও বেশি সময় ধরে যিহোবার সাক্ষিরা বিশ্বস্ততার সঙ্গে ঈশ্বরের বাক্যকে রক্ষা করে আসছেন, সাহসের সঙ্গে মিথ্যা ধর্মের প্রতিরোধ করে আসছেন এবং ঈশ্বরের রাজ্যকে মনেপ্রাণে সমর্থন জানিয়ে আসছেন। শান্তির বিষয়ে মিথ্যে বলে লোকেদের মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে রাখার বদলে তারা তাদের ভুল ভেঙে দেন এবং এই বলে সত্যিকারের অবস্থা জানানোর জন্য যথাসাধ্য পরিশ্রম করে চলেন যে এখন হল যুদ্ধের সময়।—যিশাইয় ৫৬:১০-১২; রোমীয় ১৩:১১, ১২; ১ থিষলনীকীয় ৫:৬.
যিহোবা তাঁর নীরবতা ভাঙেন
১৭. যিহোবা শীঘ্রই তাঁর নীরবতা ভাঙবেন তা বলতে কী বোঝায়?
১৭ এছাড়াও শলোমন বলেছিলেন: “ঈশ্বরই ধার্ম্মিকের ও দুষ্টের বিচার করিবেন, কেননা সেখানে সমস্ত ব্যাপারের নিমিত্ত . . . বিশেষ কাল আছে।” (উপদেশক ৩:১৭) হ্যাঁ, মিথ্যা ধর্ম ও “পৃথিবীর রাজগণ [যারা] দণ্ডায়মান হয়, . . . সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে এবং তাঁহার অভিষিক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে” তাদের বিচার করার জন্য যিহোবার একটা নিরূপিত সময় আছে। (গীতসংহিতা ২:১-৬; প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৩-১৬) সেই সময় যখন আসবে তখনই যিহোবার “নীরব” থাকার সময় শেষ হবে। (গীতসংহিতা ৮৩:১; যিশাইয় ৬২:১; যিরমিয় ৪৭:৬, ৭) আর তিনি তাঁর মশীহ রাজা, যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে শুধু সেই ভাষায় ‘কথা কহিবেন’ যা তাঁর বিরোধীরা বুঝতে পারবে: “সদাপ্রভু বীরের ন্যায় যাত্রা করিবেন, যোদ্ধার ন্যায় উদ্যোগ উত্তেজিত করিবেন; তিনি জয়ধ্বনি করিবেন, হাঁ, মহানাদ করিবেন; তিনি শত্রুদের বিপরীতে পরাক্রম দেখাইবেন; আমি অনেক দিন চুপ করিয়া আছি, নীরব আছি, ক্ষান্ত রহিয়াছি; এখন প্রসবকারিণী স্ত্রীর ন্যায় কোঁকাইয়া উঠিব; আমি এককালে নিঃশ্বাস টানিয়া ফুৎকার করিব। আমি পর্ব্বত ও উপপর্ব্বতগণকে ধ্বংস করিব, তদুপরিস্থ সমস্ত তৃণ শুষ্ক করিব, এবং নদনদীকে উপকূল, ও জলাশয় সকল শুষ্ক করিব। আমি অন্ধদিগকে তাহাদের অবিদিত পথ দিয়া লইয়া যাইব; যে সকল মার্গ তাহারা জানে না, সেই সকল মার্গ দিয়া তাহাদিগকে চালাইব; আমি তাহাদের অগ্রে অন্ধকারকে আলোক, ও বক্রভূমিকে সরল করিব; এই সমস্ত আমি করিব, তাহাদিগকে পরিত্যাগ করিব না।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।)—যিশাইয় ৪২:১৩-১৬.
১৮. কোন্ অর্থে ঈশ্বরের লোকেরা শীঘ্রই “নীরব” হবেন?
১৮ তিনিই যে ঈশ্বর তা প্রমাণ করার জন্য যখন স্বয়ং যিহোবা ‘কথা কহিয়া’ উঠবেন তখন তাঁর লোকেদের নিজেদের পক্ষ সমর্থনের জন্য কথা বলার আর দরকার হবে না। আর সেই সময়ই হবে তাদের জন্য “নীরব থাকিবার কাল।” অতীতে ঈশ্বরের দাসেদের বেলায় যেমন হয়েছিল তেমনই এই কথাগুলো তাদের বেলায়ও খাটবে: “এবার তোমাদিগকে যুদ্ধ করিতে হইবে না; . . . তোমরা শ্রেণীবদ্ধ হও, দাঁড়াইয়া থাক, আর তোমাদের সহবর্ত্তী সদাপ্রভু যে নিস্তার করিবেন, তাহা দেখ।”—২ বংশাবলি ২০:১৭.
১৯. খ্রীষ্টের আধ্যাত্মিক ভাইয়েরা শীঘ্রই কোন্ সুযোগ পাবেন?
১৯ শয়তান ও তার সংগঠনের জন্য কী এক শোচনীয় পরাজয়! “শান্তির ঈশ্বর ত্বরায় শয়তানকে তোমাদের পদতলে দলিত করিবেন,” এই প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী যীশুর গৌরবান্বিত ভাইরা ধার্মিকতার এক উল্লেখযোগ্য বিজয় আনার জন্য এই যুদ্ধে অংশ নেবেন। (রোমীয় ১৬:২০) তাই যে শান্তির জন্য অনেক দিন ধরে অপেক্ষা করা হয়েছে শেষ পর্যন্ত তা একেবারে কাছেই।
২০. শীঘ্রই কীসের সময় হবে?
২০ যিহোবার সেই মহাপ্রতাপের দিন থেকে রক্ষা পেয়ে যারা বেঁচে থাকবেন, পৃথিবীতে তাদের জীবন কত চমৎকারই না হবে! এর পরপরই প্রাচীনকালের বিশ্বস্ত নারী-পুরুষদের পুনরুত্থিত হওয়ার নিরূপিত সময় আসবে। সত্যিই খ্রীষ্টের হাজার বছরের রাজত্ব হবে “রোপণের কাল . . . সুস্থ করিবার কাল . . . গাঁথিবার কাল . . . হাস্য করিবার কাল . . . নৃত্য করিবার কাল . . . আলিঙ্গনের কাল . . . প্রেম করিবার কাল।” হ্যাঁ, তা হবে চিরকালের জন্য “সন্ধির [শান্তির] কাল!”—উপদেশক ৩:১-৮; গীতসংহিতা ২৯:১১; ৩৭:১১; ৭২:৭.
আপনার উত্তর কী?
◻ স্থায়ী শান্তির ভিত্তি কী?
◻ বর্তমানকে যিহোবার সাক্ষিরা কেন ‘যুদ্ধের কাল’ বলে মনে করেন?
◻ ঈশ্বরের লোকেরা কখন ‘কথা কহেন’ ও কখন তারা “নীরব” থাকেন?
◻ কখন ও কীভাবে যিহোবা তাঁর নীরবতা ভাঙবেন?
[Box/Pictures on page 13]
এই বিষয়গুলোর জন্য যিহোবার নিরূপিত সময় আছে
◻ গোগ ঈশ্বরের লোকেদের ওপর আক্রমণ করবে।—যিহিষ্কেল ৩৮:৩, ৪, ১০-১২
◻ মহতী বাবিলকে ধ্বংস করার জন্য ঈশ্বর মনুষ্য শাসকদের হৃদয়ে প্রবৃত্তি দেবেন।—প্রকাশিত বাক্য ১৭:১৫-১৭; ১৯:২
◻ মেষশাবকের বিবাহ হবে।—প্রকাশিত বাক্য ১৯:৬, ৭
◻ হর্মাগিদোনের যুদ্ধের প্রথম পর্যায়।—প্রকাশিত বাক্য ১৯:১১-১৬, ১৯-২১
◻ যীশুর হাজার বছরের রাজত্ব শুরু করার জন্য শয়তানকে বন্দি করা হবে।—প্রকাশিত বাক্য ২০:১-৩
এই ঘটনাগুলো বাইবেলে যেভাবে লেখা রয়েছে সেভাবেই পরপর তালিকাবদ্ধ করা হয়েছে। আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত থাকতে পারি যে এই পাঁচটা ঘটনা যিহোবার নিরূপিত সময় অনুযায়ী ঠিক ঠিক ঘটবে।
[Pictures on page 15]
সত্যিই খ্রীষ্টের হাজার বছরের রাজত্ব হবে. . .
হাস্য করিবার . . .
আলিঙ্গন করিবার . . .
প্রেম করিবার . . .
রোপণ করিবার . . .
নৃত্য করিবার. . . .
গাঁথিয়া তুলিবার সময় . . .