যিহোবা আমাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনগুলো জোগান
“সন্দিগ্ধচিত্ত হইও না; কেননা . . . তোমাদের পিতা জানেন যে, এই সকল দ্রব্যে তোমাদের প্রয়োজন আছে।”—লূক ১২:২৯, ৩০.
১. কীভাবে যিহোবা পশুপাখির জন্য খাদ্য জোগান?
আপনি কি কখনও একটা চড়ুই অথবা অন্য কোনো পাখিকে নিছক ময়লা বলে মনে হয় এমন জায়গায় খুঁটে খুঁটে খাবার খেতে দেখেছেন? আপনি হয়তো কিছুটা আশ্চর্য হয়েছিলেন যে, মাটিতে খুঁটে খুঁটে এটা খাওয়ার জন্য কী খুঁজে পেতে পারে। পর্বতে দত্ত উপদেশে যিশু দেখিয়েছিলেন যে, পাখিদের জন্য যিহোবা যেভাবে খাদ্য জোগান, তা থেকে আমরা এক শিক্ষা লাভ করতে পারি। তিনি বলেছিলেন: “আকাশের পক্ষীদের প্রতি দৃষ্টিপাত কর; তাহারা বুনেও না, কাটেও না, গোলাঘরে সঞ্চয়ও করে না, তথাপি তোমাদের স্বর্গীয় পিতা তাহাদিগকে আহার দিয়া থাকেন; তোমরা কি তাহাদের হইতে অধিক শ্রেষ্ঠ নও?” (মথি ৬:২৬) বিভিন্ন বিস্ময়কর উপায়ে যিহোবা তাঁর সমস্ত সৃষ্ট প্রাণীর জন্য খাদ্য জোগান।—গীতসংহিতা ১০৪:১৪, ২১; ১৪৭:৯.
২, ৩. আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যের জন্য যিশু যে-প্রার্থনার বিষয়ে আমাদের শিক্ষা দিয়েছিলেন, তা থেকে কোন আধ্যাত্মিক শিক্ষাগুলো আমরা পেতে পারি?
২ তা হলে, কেন যিশু তাঁর আদর্শ প্রার্থনায় এই অনুরোধটা যুক্ত করেছিলেন: “আমাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য আজ আমাদিগকে দেও”? (মথি ৬:১১) এই সাধারণ অনুরোধ থেকে গভীর আধ্যাত্মিক শিক্ষাগুলো লাভ করা যেতে পারে। প্রথমত, এটা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, যিহোবা হলেন মহান জোগানদাতা। (গীতসংহিতা ১৪৫:১৫, ১৬) মানুষ রোপণ এবং কর্ষণ করতে পারে কিন্তু একমাত্র ঈশ্বরই বিষয়গুলোকে আধ্যাত্মিক এবং শারীরিকভাবে বৃদ্ধি দিতে পারেন। (১ করিন্থীয় ৩:৭) আমরা যা খাই ও পান করি, তা ঈশ্বরের কাছ থেকে এক উপহার। (প্রেরিত ১৪:১৭) যিহোবাকে আমাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনগুলো সরবরাহ করতে বলা তাঁকে দেখায় যে, এই ধরনের ব্যবস্থাগুলোকে আমরা হালকাভাবে নিই না। অবশ্য, এই ধরনের অনুরোধ আমাদেরকে কাজ করার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয় না, যদি তা করতে আমরা সমর্থ থাকি।—ইফিষীয় ৪:২৮; ২ থিষলনীকীয় ৩:১০.
৩ দ্বিতীয়ত, ‘প্রয়োজনীয় খাদ্যের’ জন্য আমাদের যাচ্ঞা করা ইঙ্গিত দেয় যে, ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আমাদের অতিরিক্ত চিন্তা করা উচিত নয়। যিশু আরও বলেছিলেন: “ইহা বলিয়া ভাবিত হইও না যে, ‘কি ভোজন করিব?’ বা ‘কি পান করিব?’ বা ‘কি পরিব?’ কেননা পরজাতীয়েরাই এই সকল বিষয় চেষ্টা করিয়া থাকে; তোমাদের স্বর্গীয় পিতা ত জানেন যে এই সকল দ্রব্যে তোমাদের প্রয়োজন আছে। কিন্তু তোমরা প্রথমে তাঁহার রাজ্য ও তাঁহার ধার্ম্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা কর, তাহা হইলে ঐ সকল দ্রব্যও তোমাদিগকে দেওয়া হইবে। অতএব কল্যকার নিমিত্ত ভাবিত হইও না, কেননা কল্য আপনার বিষয় আপনি ভাবিত হইবে।” (মথি ৬:৩১-৩৪) ‘প্রয়োজনীয় খাদ্যের’ জন্য করা প্রার্থনা, ‘ভক্তি ও সন্তোষযুক্ত’ সাধাসিধে জীবনযাপন করার নমুনা স্থাপন করে।—১ তীমথিয় ৬:৬-৮.
দৈনন্দিন আধ্যাত্মিক খাদ্য
৪. যিশু এবং ইস্রায়েলীয়দের জীবনের কোন ঘটনা আধ্যাত্মিক খাদ্য গ্রহণ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়?
৪ এ ছাড়া, দৈনন্দিন খাদ্যের জন্য প্রার্থনা করার বিষয়টা আমাদের এও মনে করিয়ে দেওয়া উচিত যে, আমাদের দৈনন্দিন আধ্যাত্মিক খাদ্যের প্রয়োজন রয়েছে। যদিও দীর্ঘদিন উপবাস থাকার পর যিশু অত্যন্ত ক্ষুধার্ত ছিলেন, তবুও তিনি পাথরকে রুটি বানানোর বিষয়ে শয়তানের প্রলোভনকে এই বলে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন: “লেখা আছে, ‘মনুষ্য কেবল রুটীতে বাঁচিবে না, কিন্তু ঈশ্বরের মুখ হইতে যে প্রত্যেক বাক্য নির্গত হয়, তাহাতেই বাঁচিবে।’” (মথি ৪:৪) যিশু এখানে ভাববাদী মোশির কথাগুলো উদ্ধৃত করেছিলেন, যিনি ইস্রায়েলীয়দের বলেছিলেন: “[যিহোবা] তোমাকে নত করিলেন, ও তোমাকে ক্ষুধিত করিয়া তোমার অজ্ঞাত ও তোমার পিতৃপুরুষদের অজ্ঞাত মান্না দিয়া প্রতিপালন করিলেন; যেন তিনি তোমাকে জানাইতে পারেন যে, মনুষ্য কেবল রুটীতে বাঁচে না, কিন্তু সদাপ্রভুর মুখ হইতে যাহা যাহা নির্গত হয়, তাহাতেই মনুষ্য বাঁচে।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৮:৩) যিহোবা যেভাবে মান্না সরবরাহ করতেন, তা ইস্রায়েলীয়দের কেবল দৈহিক খাদ্যই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে আধ্যাত্মিক শিক্ষাগুলোও জুগিয়েছিল। একটা শিক্ষা হল, তাদের ‘প্রতিদিন দিনের খাদ্য কুড়াইতে’ হতো। তারা যদি দিনের চেয়ে অতিরিক্ত সংগ্রহ করত, তা হলে অবশিষ্ট মান্না থেকে দুর্গন্ধ বের হতে এবং তাতে পোকা জন্মাতে শুরু করত। (যাত্রাপুস্তক ১৬:৪, ২০) তবে, ষষ্ঠ দিনে এইরকম ঘটতো না, যখন তাদেরকে বিশ্রাম দিনের প্রয়োজন মেটানোর জন্য দৈনিক পরিমাণের চেয়ে দ্বিগুণ সংগ্রহ করতে হতো। (যাত্রাপুস্তক ১৬:৫, ২৩, ২৪) তাই, মান্না তাদের মনের ওপর এই গভীর ছাপ ফেলেছিল যে, তাদেরকে বাধ্য থাকতে হবে এবং তাদের জীবন কেবল খাদ্যের ওপরই নয় কিন্তু “সদাপ্রভুর মুখ হইতে যাহা যাহা নির্গত হয়, তাহাতেই” নির্ভর করত।
৫. কীভাবে যিহোবা আমাদের দৈনন্দিন আধ্যাত্মিক খাদ্য জোগান?
৫ একইভাবে আমাদেরও, তাঁর পুত্রের মাধ্যমে যিহোবার দ্বারা জোগানো আধ্যাত্মিক খাদ্য প্রতিদিন গ্রহণ করা দরকার। এই উদ্দেশ্যে যিশু ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাসকে’ নিযুক্ত করেছেন, যাতে বিশ্বাসী পরিবারবর্গের জন্য “উপযুক্ত সময়ে খাদ্য” জোগানো হয়। (মথি ২৪:৪৫) বিশ্বস্ত দাস শ্রেণী কেবল বাইবেল অধ্যয়ন সহায়কের আকারে প্রচুর পরিমাণে আধ্যাত্মিক খাদ্যই সরবরাহ করে না কিন্তু সেইসঙ্গে প্রতিদিন বাইবেল পড়ার বিষয়েও আমাদের উৎসাহিত করে। (যিহোশূয়ের পুস্তক ১:৮; গীতসংহিতা ১:১-৩) যিশুর মতো আমরাও যিহোবার ইচ্ছা জানার ও তা পালন করার জন্য প্রতিদিন প্রচেষ্টা করার মাধ্যমে আধ্যাত্মিক পুষ্টি লাভ করতে পারি।—যোহন ৪:৩৪.
পাপের ক্ষমা
৬. কোন ঋণের জন্য আমরা ক্ষমা চাই এবং কোন শর্তগুলোর বিনিময়ে যিহোবা তা বাতিল করতে ইচ্ছুক?
৬ আদর্শ প্রার্থনার পরের অনুরোধটা হল: “আমাদের অপরাধ [“ঋণ,” পাদটীকা] সকল ক্ষমা কর, যেমন আমরাও আপন আপন অপরাধীদিগকে [“ঋণীদিগকে,” পাদটীকা] ক্ষমা করিয়াছি।” (মথি ৬:১২) যিশু এখানে টাকাপয়সার ঋণের কথা বলছিলেন না। তাঁর মনে আমাদের পাপের ক্ষমার বিষয়টা ছিল। লূকের আদর্শ প্রার্থনার বিবরণে এই অনুরোধটাকে এভাবে পড়া হয়: “আমাদের পাপ সকল ক্ষমা কর; কেননা আমরাও আপনাদের প্রত্যেক অপরাধীকে ক্ষমা করি।” (লূক ১১:৪) এভাবে আমরা যখন পাপ করি, তখন এটা এমন যেন আমরা যিহোবার কাছে ঋণী। কিন্তু, আমাদের প্রেমময় পিতা সেই ঋণ ‘মুছিয়া ফেলিতে’ অথবা বাতিল করতে তৈরি, যদি আমরা অকপটভাবে অনুতপ্ত হই, ‘ফিরি’ এবং খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যে বিশ্বাসের ভিত্তিতে তাঁর কাছে ক্ষমা চাই।—প্রেরিত ৩:১৯; ১০:৪৩; ১ তীমথিয় ২:৫, ৬.
৭. ক্ষমার জন্য কেন আমাদের প্রতিদিন প্রার্থনা করা উচিত?
৭ আরেকটা দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা পাপ করি, যখন আমরা যিহোবার ধার্মিকতার মানগুলো পালন করতে ব্যর্থ হই। উত্তরাধীকারসূত্রে পাওয়া পাপের কারণে আমরা সকলে কথায়, কাজে এবং চিন্তায় পাপ করি অথবা আমাদের যা করা উচিত, তা করতে ব্যর্থ হই। (উপদেশক ৭:২০; রোমীয় ৩:২৩; যাকোব ৩:২; ৪:১৭) অতএব, নির্দিষ্ট কোনো দিনে আমরা পাপ করেছি বলে অবগত থাকি অথবা না থাকি, আমাদের রোজকার প্রার্থনায় আমাদের পাপের জন্য ক্ষমা চাওয়ার অনুরোধ যুক্ত করা দরকার।—গীতসংহিতা ১৯:১২; ৪০:১২.
৮. ক্ষমার জন্য প্রার্থনা করার বিষয়টা আমাদের কী করতে পরিচালিত করা উচিত আর এর উপকারজনক ফল কী?
৮ খ্রিস্টের পাতিত রক্তের যে মুক্ত করার ক্ষমতা রয়েছে, সেটার ওপর বিশ্বাসের ভিত্তিতে আত্মপরীক্ষা, অনুতাপ, অপরাধ স্বীকার করার পর ক্ষমার জন্য প্রার্থনা করা উচিত। (১ যোহন ১:৭-৯) আমাদের প্রার্থনার অকপটতা প্রমাণ করতে আমাদেরকে অবশ্যই ক্ষমার জন্য করা অনুরোধকে “মনপরিবর্ত্তনের উপযোগী কার্য্য” দ্বারা সমর্থন করতে হবে। (প্রেরিত ২৬:২০) তখনই, আমরা আমাদের পাপ ক্ষমা করার ব্যাপারে যিহোবার উৎসুক মনোভাবের ওপর আমাদের বিশ্বাস রাখতে পারি। (গীতসংহিতা ৮৬:৫; ১০৩:৮-১৪) এর ফল হল অতুলনীয় মনের শান্তি, “সমস্ত চিন্তার অতীত . . . ঈশ্বরের শান্তি,” যা “[আমাদের] হৃদয় ও মন খ্রীষ্ট যীশুতে রক্ষা করিবে।” (ফিলিপীয় ৪:৭) কিন্তু, যিশুর আদর্শ প্রার্থনা আমাদের পাপের ক্ষমা পাওয়ার জন্য আমাদের কী করতে হবে, সেই বিষয়ে আরও কিছু শেখায়।
ক্ষমা পেতে হলে, আমাদের অবশ্যই ক্ষমা করতে হবে
৯, ১০. (ক) আদর্শ প্রার্থনার সঙ্গে যিশু আরও কোন মন্তব্য যুক্ত করেছিলেন আর এটা কীসের ওপর জোর দিয়েছিল? (খ) আমাদের যে ক্ষমা করা প্রয়োজন, সেই বিষয়ে যিশু কীভাবে আরও দৃষ্টান্ত দিয়েছিলেন?
৯ আগ্রহজনক যে, “আমাদের ঋণ সকল ক্ষমা কর, যেমন আমরাও আপন আপন ঋণীদিগকে ক্ষমা করিয়াছি,” এই অনুরোধই হল আদর্শ প্রার্থনার একমাত্র অংশ, যে-বিষয়ের ওপর যিশু মন্তব্য করেছিলেন। প্রার্থনা শেষ করার পর তিনি আরও বলেছিলেন: “কারণ তোমরা যদি লোকের অপরাধ ক্ষমা কর, তবে তোমাদের স্বর্গীয় পিতা তোমাদিগকেও ক্ষমা করিবেন। কিন্তু তোমরা যদি লোকদিগকে ক্ষমা না কর, তবে তোমাদের পিতা তোমাদেরও অপরাধ ক্ষমা করিবেন না।” (মথি ৬:১৪, ১৫) এভাবে, যিশু অত্যন্ত স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে, যিহোবার কাছ থেকে ক্ষমা পাওয়া অন্যদের ক্ষমা করার ব্যাপারে আমাদের ইচ্ছুক হওয়ার ওপর নির্ভর করে।—মার্ক ১১:২৫.
১০ আরেকটা উপলক্ষে, যিশু একটা দৃষ্টান্ত দিয়ে দেখিয়েছিলেন যে আমরা যদি যিহোবার কাছ থেকে ক্ষমা পাওয়ার আশা করি, তা হলে আমাদেরও ক্ষমা করার প্রয়োজন রয়েছে। তিনি একজন রাজার বিষয়ে বলেছিলেন, যিনি তার কাছে ঋণী ছিলেন এমন একজন দাসের প্রচুর পরিমাণ ঋণ উদারভাবে বাতিল করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে, রাজা এই একই ব্যক্তিকে প্রচণ্ড শাস্তি দেন, যখন সেই ব্যক্তি তার একজন সহদাসের তুলনামূলকভাবে সামান্য পরিমাণ ঋণ বাতিল করতে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। যিশু এই বলে তাঁর দৃষ্টান্তটা শেষ করেছিলেন: “আমার স্বর্গীয় পিতাও তোমাদের প্রতি এইরূপ করিবেন, যদি তোমরা প্রতিজন অন্তঃকরণের সহিত আপন আপন ভ্রাতাকে ক্ষমা না কর।” (মথি ১৮:২৩-৩৫) শিক্ষাটা স্পষ্ট: যিহোবা আমাদের প্রত্যেকের পাপের যে-ঋণ ক্ষমা করেছেন, তা আমাদের বিরুদ্ধে কেউ হয়তো করেছে, এমন যেকোনো অপরাধের চেয়ে অনেক অনেক বেশি। এ ছাড়া, যিহোবা রোজ আমাদের ক্ষমা করেন। তা হলে, নিশ্চিতভাবে আমরা আমাদের বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যে করা অন্যদের ভুলকে ক্ষমা করতে পারি।
১১. প্রেরিত পৌলের দেওয়া কোন উপদেশ আমরা মেনে চলব, যদি আমরা আশা করি যে যিহোবা আমাদের ক্ষমা করুন আর এর উত্তম ফলগুলো কী?
১১ প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “তোমরা পরস্পর মধুরস্বভাব ও করুণচিত্ত হও, পরস্পর ক্ষমা কর, যেমন ঈশ্বরও খ্রীষ্টে তোমাদিগকে ক্ষমা করিয়াছেন।” (ইফিষীয় ৪:৩২) পরস্পরকে ক্ষমা করা খ্রিস্টানদের মধ্যে শান্তি বাড়ায়। এ ছাড়া, পৌল জোরালো উপদেশ করেছিলেন: “তোমরা, ঈশ্বরের মনোনীত লোকদের, পবিত্র ও প্রিয় লোকদের, উপযোগী মতে করুণার চিত্ত, মধুর ভাব, নম্রতা, মৃদুতা, সহিষ্ণুতা পরিধান কর। পরস্পর সহনশীল হও, এবং যদি কাহাকেও দোষ দিবার কারণ থাকে, তবে পরস্পর ক্ষমা কর; প্রভু যেমন তোমাদিগকে ক্ষমা করিয়াছেন, তোমরাও তেমনি কর। আর এই সকলের উপরে প্রেম পরিধান কর; তাহাই সিদ্ধির যোগবন্ধন।” (কলসীয় ৩:১২-১৪) এই সমস্তকিছুই সেই প্রার্থনার মধ্যে রয়েছে, যে-প্রার্থনার বিষয়ে যিশু আমাদের শিক্ষা দিয়েছিলেন: “আমাদের ঋণ সকল ক্ষমা কর, যেমন আমরাও আপন আপন ঋণীদিগকে ক্ষমা করিয়াছি।”
প্রলোভনের সময় সুরক্ষা
১২, ১৩. (ক) আদর্শ প্রার্থনার শেষের পূর্ববর্তী অনুরোধের অর্থ কী হতে পারে? (খ) কে প্রধান প্রলোভনকারী এবং আমাদের যাতে প্রলোভনে না আনা হয়, এই প্রার্থনার অর্থ কী?
১২ যিশুর আদর্শ প্রার্থনার শেষের পূর্ববর্তী অনুরোধটা হল: “আমাদিগকে পরীক্ষাতে আনিও না।” (মথি ৬:১৩) যিশু কি বুঝিয়েছিলেন যে, আমাদেরকে পরীক্ষা বা প্রলুব্ধ না করার জন্য যিহোবার কাছে যাচ্ঞা করা উচিত? এটা হতে পারে না, কারণ শিষ্য যাকোব লিখতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন: “পরীক্ষার সময়ে কেহ না বলুক, ঈশ্বর হইতে আমার পরীক্ষা হইতেছে; কেননা মন্দ বিষয়ের দ্বারা ঈশ্বরের পরীক্ষা করা যাইতে পারে না, আর তিনি কাহারও পরীক্ষা করেন না।” (যাকোব ১:১৩) এ ছাড়া, গীতরচক লিখেছিলেন: “হে সদাপ্রভু, তুমি যদি অপরাধ সকল ধর, তবে, হে প্রভু [“যিহোবা,” NW], কে দাঁড়াইতে পারিবে?” (গীতসংহিতা ১৩০:৩) যিহোবা আমাদের প্রত্যেকটা ভুল ধরেন না আর নিশ্চিতভাবে তিনি আমাদেরকে ভুল করার জন্যও প্রলুব্ধ করেন না। তা হলে, আদর্শ প্রার্থনার এই অংশটার মানে কী?
১৩ যে আমাদেরকে ভুল করতে প্রলুব্ধ করার, নানারকম চাতুরী দ্বারা আমাদের পতন ঘটানোর আর এমনকি গোগ্রাসে গিলে ফেলার চেষ্টা করে, সে হল শয়তান দিয়াবল। (ইফিষীয় ৬:১১) সে হল প্রধান পরীক্ষক বা প্রলোভনকারী। (১ থিষলনীকীয় ৩:৫) আমাদের যাতে প্রলোভনে আনা না হয়, এই প্রার্থনা করার মাধ্যমে আমরা যিহোবার কাছে এই যাচ্ঞা করি যে আমরা যখন প্রলোভনে পড়ি, তখন তিনি যেন আমাদের পতিত হতে না দেন। আমরা তাঁর কাছে যাচ্ঞা করি, যাতে তিনি আমাদের “শয়তানকর্ত্তৃক প্রতারিত” না হতে, প্রলোভনগুলোর বশীভূত না হতে আমাদের সাহায্য করেন। (২ করিন্থীয় ২:১১) আমরা “পরাৎপরের অন্তরালে” থাকার জন্য প্রার্থনা করে আধ্যাত্মিক সুরক্ষা লাভ করি, যা সেই সমস্ত ব্যক্তিকে দেওয়া হয়েছে, যারা তাদের সমস্ত কাজে যিহোবার সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করে।—গীতসংহিতা ৯১:১-৩.
১৪. প্রেরিত পৌল কীভাবে আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন যে, যিহোবা আমাদের পরিত্যাগ করবেন না, যদি আমরা পরীক্ষার সময়ে তাঁর ওপর নির্ভর করি?
১৪ আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, সেটা যদি আমাদের অকপট ইচ্ছা হয়, যা আমাদের প্রার্থনা ও কাজগুলোর দ্বারা প্রকাশিত হয়ে থাকে, তা হলে যিহোবা কখনও আমাদের পরিত্যাগ করবেন না। প্রেরিত পৌল আমাদের আশ্বাস দেন: “মনুষ্য যাহা সহ্য করিতে পারে, তাহা ছাড়া অন্য পরীক্ষা তোমাদের প্রতি ঘটে নাই; আর ঈশ্বর বিশ্বাস্য; তিনি তোমাদের প্রতি তোমাদের শক্তির অতিরিক্ত পরীক্ষা ঘটিতে দিবেন না, বরং পরীক্ষার সঙ্গে সঙ্গে রক্ষার পথও করিয়া দিবেন, যেন তোমরা সহ্য করিতে পার।”—১ করিন্থীয় ১০:১৩.
“আমাদিগকে . . . মন্দ হইতে রক্ষা কর”
১৫. মন্দ থেকে রক্ষা করার জন্য প্রার্থনা করা কেন আগের চেয়ে আরও বেশি জরুরি?
১৫ খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্রের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পাণ্ডুলিপি অনুসারে, যিশুর আদর্শ প্রার্থনা এই কথাগুলো দিয়ে শেষ হয়: “আমাদিগকে . . . মন্দ হইতে রক্ষা কর।”a (মথি ৬:১৩) এই শেষ সময়ে দিয়াবলের হাত থেকে সুরক্ষা পাওয়া আরও বেশি প্রয়োজন। শয়তান ও তার মন্দ দূতেরা অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশ, “যাহারা ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন ও যীশুর সাক্ষ্য ধারণ করে,” তাদের এবং তাদের সহযোগী ‘বিস্তর লোকের’ বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯; ১২:৯, ১৭) প্রেরিত পিতর খ্রিস্টানদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন: “তোমরা প্রবুদ্ধ হও, জাগিয়া থাক; তোমাদের বিপক্ষ দিয়াবল, গর্জ্জনকারী সিংহের ন্যায়, কাহাকে গ্রাস করিবে, তাহার অন্বেষণ করিয়া বেড়াইতেছে। তোমরা বিশ্বাসে অটল থাকিয়া তাহার প্রতিরোধ কর।” (১ পিতর ৫:৮, ৯) শয়তান আমাদের সাক্ষ্য দেওয়ার কাজ বন্ধ করে দিতে চায় এবং পৃথিবীতে তার যে-প্রতিনিধিরা রয়েছে—ধর্মীয়, বাণিজ্যিক অথবা রাজনৈতিক যাই হোক না কেন—তাদের মাধ্যমে সে আমাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করে। যাই হোক, আমরা যদি অটল থাকি, তা হলে যিহোবা আমাদের রক্ষা করবেন। শিষ্য যাকোব লিখেছিলেন: “অতএব তোমরা ঈশ্বরের বশীভূত হও; কিন্তু দিয়াবলের প্রতিরোধ কর, তাহাতে সে তোমাদের হইতে পলায়ন করিবে।”—যাকোব ৪:৭.
১৬. যিহোবার যে-দাসেরা পরীক্ষার মধ্যে রয়েছে, তাদের সাহায্য করার জন্য কোন মাধ্যম যিহোবার রয়েছে?
১৬ যিহোবা তাঁর পুত্রকে প্রলুব্ধ হতে দিয়েছিলেন। কিন্তু, যিশু সুরক্ষা হিসেবে ঈশ্বরের বাক্য ব্যবহার করে দিয়াবলের প্রতিরোধ করার পর, যিহোবা তাঁকে শক্তিশালী করার জন্য দূতেদের পাঠিয়েছিলেন। (মথি ৪:১-১১) একইভাবে, আমাদের সাহায্য করার জন্য যিহোবা তাঁর দূতেদের ব্যবহার করেন, যদি আমরা বিশ্বাস নিয়ে প্রার্থনা করি এবং তাঁকে আমাদের আশ্রয় করি। (গীতসংহিতা ৩৪:৭; ৯১:৯-১১) প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “ইহাতে জানি, প্রভু [“যিহোবা,” NW] ভক্তদিগকে পরীক্ষা হইতে উদ্ধার করিতে, এবং অধার্ম্মিকদিগকে দণ্ডাধীনে বিচারদিনের জন্য রাখিতে জানেন।”—২ পিতর ২:৯.
পুরোপুরি রক্ষা একেবারে কাছে
১৭. আমাদের আদর্শ প্রার্থনা দেওয়ার মাধ্যমে যিশু কীভাবে বিষয়গুলোকে সঠিক অবস্থানে রেখেছিলেন?
১৭ আদর্শ প্রার্থনায় যিশু বিষয়গুলোকে, সেগুলোর সঠিক অবস্থানে রাখেন। আমাদের প্রধান চিন্তার বিষয় হওয়া উচিত, যিহোবার মহান এবং পবিত্র নামের পবিত্রীকরণ। যেহেতু তা সম্পাদন করার হাতিয়ার হল মশীহ রাজ্য, তাই আমরা সমস্ত অসিদ্ধ মানব রাজ্য অথবা সরকারগুলো ধ্বংস করার এবং ঈশ্বরের ইচ্ছা যেমন স্বর্গে তেমনই যেন পৃথিবীতে সম্পূর্ণরূপে পূর্ণ হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য রাজ্য আসুক বলে প্রার্থনা করি। পরমদেশ পৃথিবীতে আমাদের অনন্তজীবনের আশা যিহোবার নামের পবিত্রীকরণ এবং পুরো নিখিলবিশ্বে তাঁর ধার্মিক সার্বভৌমত্ব স্বীকার করার ওপর নির্ভর করে। এই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রার্থনা করার পর, আমরা আমাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনগুলো, আমাদের পাপের ক্ষমা এবং প্রলোভন ও মন্দ ব্যক্তি, শয়তান দিয়াবলের প্রতারণা থেকে রক্ষা করার জন্য প্রার্থনা করতে পারি।
১৮, ১৯. যিশুর আদর্শ প্রার্থনা কীভাবে আমাদের সতর্ক থাকতে এবং আমাদের আশাকে “শেষ পর্যন্ত দৃঢ়” রাখতে সাহায্য করে?
১৮ মন্দ ব্যক্তি ও তার কলুষিত বিধিব্যবস্থা থেকে আমাদের পুরোপুরি রক্ষা এগিয়ে আসছে। শয়তান খুব ভাল করে জানে যে, পৃথিবীর ওপর, বিশেষভাবে যিহোবার বিশ্বস্ত দাসদের ওপর তার ‘অতিশয় রাগ’ প্রকাশ করার জন্য “কাল সংক্ষিপ্ত।” (প্রকাশিত বাক্য ১২:১২, ১৭) “যুগান্তের” যৌগিক চিহ্নে যিশু রোমাঞ্চকর ঘটনাগুলোর বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, যেগুলোর কিছু এখনও আমাদের সামনে রয়েছে। (মথি ২৪:৩, ২৯-৩১) আমরা যখন এগুলো ঘটতে দেখব, তখন আমাদের রক্ষা পাওয়ার আশা আরও উজ্জ্বল হবে। যিশু বলেছিলেন: “এ সকল ঘটনা আরম্ভ হইলে তোমরা ঊর্দ্ধ্বদৃষ্টি করিও, মাথা তুলিও, কেননা তোমাদের মুক্তি সন্নিকট।”—লূক ২১:২৫-২৮.
১৯ যিশু তাঁর শিষ্যদের যে-সংক্ষিপ্ত আদর্শ প্রার্থনা দিয়েছিলেন, সেটা আমাদের নির্ভরযোগ্য নির্দেশনা জোগায় যে, শেষ নিকটবর্তী হওয়ার সময় আমাদের প্রার্থনায় কী কী অন্তর্ভুক্ত করা যায়। আমরা যেন এই আস্থা রাখি যে, শেষ সময় পর্যন্ত, যিহোবা ক্রমাগত আমাদের আধ্যাত্মিক ও বস্তুগত দৈনন্দিন প্রয়োজনগুলো জোগাবেন। প্রার্থনায় সর্তক থাকা আমাদেরকে “আদি হইতে আমাদের নিশ্চয়জ্ঞান শেষ পর্য্যন্ত দৃঢ় করিয়া ধারণ” করতে সমর্থ করবে।—ইব্রীয় ৩:১৪; ১ পিতর ৪:৭.
[পাদটীকা]
a কিছু পুরনো বাইবেল যেমন, কিং জেমস ভারসন প্রভুর প্রার্থনা, এক বন্দনাগীতি (ঈশ্বরের প্রতি প্রশংসার এক অভিব্যক্তি) হিসেবে পরিচিত এই কথাগুলো দিয়ে শেষ করে: “রাজ্য, ক্ষমতা, গৌরব চিরকাল তোমারই। আমেন।” দ্যা যেরোম বিবলিক্যাল কমেনটারি বলে: “বন্দনাগীতি . . . বেশির ভাগ নির্ভরযোগ্য [পাণ্ডুলিপিগুলোতে] পাওয়া যায় না।”
পুনরালোচনা
• ‘প্রয়োজনীয় খাদ্যের’ জন্য আমাদের অনুরোধের দ্বারা কী বোঝানো হয়?
• “আমাদের ঋণ সকল ক্ষমা কর, যেমন আমরাও আপন আপন ঋণীদিগকে ক্ষমা করিয়াছি,” এই প্রার্থনাটা ব্যাখ্যা করুন।
• আমরা যখন আমাদেরকে পরীক্ষায় না আনার জন্য যিহোবার কাছে যাচ্ঞা করি, তখন এর অর্থ কী?
• ‘আমাদিগকে মন্দ হইতে রক্ষা করিবার’ জন্য কেন আমাদের প্রার্থনা করা দরকার?
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
আমরা যদি ক্ষমা পেতে চাই, তা হলে আমাদেরও ক্ষমা করতে হবে
[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]
Lydekker