“জগতের আত্মাকে” প্রতিরোধ করুন
“আমরা জগতের আত্মাকে পাই নাই, বরং ঈশ্বর হইতে নির্গত আত্মাকে পাইয়াছি।”—১ করি. ২:১২.
১, ২. (ক) অতীতে, ক্যানারি পাখিগুলোকে কেন ব্রিটিশ খনিগুলোর মধ্যে রাখা হতো? (খ) খ্রিস্টানরা কোন বিপদের মুখোমুখি হয়?
উনিশশো এগারো সালে, ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ কয়লা খনিশ্রমিকদের জীবনরক্ষার জন্য একটা আইন পাশ করিয়েছিল। প্রতিটা খনিতে দুটো করে ক্যানারি পাখি রাখতে হতো। কোন উদ্দেশ্যে? কোনো খনিতে যদি আগুন লাগতো, তাহলে উদ্ধারকর্মীরা ক্যানারিগুলোকে তাদের সঙ্গে করে মাটির নীচে নিয়ে যেত। এই ছোট্ট পাখিগুলো বিষাক্ত গ্যাস যেমন কার্বন মনোঅক্সাইডের ব্যাপারে খুবই স্পর্শকাতর ছিল। বায়ু যদি দূষিত হয়ে পড়ত, তাহলে পাখিগুলো যন্ত্রণার লক্ষণগুলো প্রদর্শন করত, এমনকি তাদের দাঁড় থেকে পড়েও যেত। এই প্রাথমিক সতর্কবাণী অতীব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কার্বন মনোঅক্সাইড হল এক বর্ণহীন ও গন্ধহীন গ্যাস, যা লোহিত রক্ত কণিকাকে দেহে অক্সিজেন সরবরাহ করায় বাধা দিয়ে মেরে ফেলে। সেই বিপদ সম্বন্ধে সতর্ক না হলে, উদ্ধারকর্মীরা অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে এবং এরপর তারা যে বিষে আক্রান্ত হয়ে গিয়েছে, তা বোঝার আগেই মারা যেতে পারে।
২ আধ্যাত্মিক অর্থে, খ্রিস্টানরাও সেই খনিশ্রমিকদের মতো একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে থাকে। কীভাবে? যিশু যখন তাঁর শিষ্যদের পৃথিবীব্যাপী প্রচার করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন, তখন তিনি জানতেন যে, তিনি তাদেরকে এক বিপদজনক পরিবেশে পাঠাচ্ছেন, যা শয়তান ও জগতের আত্মা দ্বারা শাসিত। (মথি ১০:১৬; ১ যোহন ৫:১৯) যিশু তাঁর শিষ্যদের জন্য এতটাই চিন্তিত ছিলেন যে, তাঁর মৃত্যুর আগের রাতে তিনি তাঁর পিতার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন: “আমি নিবেদন করিতেছি না যে, তুমি তাহাদিগকে জগৎ হইতে লইয়া যাও, কিন্তু তাহাদিগকে সেই পাপাত্মা হইতে রক্ষা কর।”—যোহন ১৭:১৫.
৩, ৪. যিশু তাঁর শিষ্যদের কোন সতর্কবাণী দিয়েছিলেন আর কেন তা আমাদের জন্য আগ্রহের বিষয় হওয়া উচিত?
৩ যিশু তাঁর অনুসারীদের সেই বিপদ সম্বন্ধে সতর্ক করে দিয়েছিলেন, যা মৃত্যুজনক আধ্যাত্মিক নিদ্রার সমান হতে পারে। আমরা যেহেতু বিধিব্যবস্থার শেষকালে বাস করছি, তাই আমাদের জন্য তাঁর কথাগুলোর বিশেষ অর্থ রয়েছে। তিনি তাঁর শিষ্যদের জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন: “তোমরা . . . জাগিয়া থাকিও . . . যেন এই যে সকল ঘটনা হইবে, তাহা এড়াইতে, এবং মনুষ্যপুত্ত্রের সম্মুখে দাঁড়াইতে, শক্তিমান্ হও।” (লূক ২১:৩৪-৩৬) তবে আনন্দের বিষয় হল, যিশু এও প্রতিজ্ঞা করেছেন যে, তাঁর পিতা তাদের স্মৃতিশক্তিকে সতেজ করার এবং তাদেরকে জেগে থাকার ও দৃঢ় থাকার জন্য পবিত্র আত্মা জোগাবেন।—যোহন ১৪:২৬.
৪ আজকে, আমাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? সেই একই পবিত্র আত্মা কি আমাদের সাহায্য করার জন্য রয়েছে? যদি থাকে, তাহলে তা লাভ করার জন্য আমাদের কী করতে হবে? জগতের আত্মা কী এবং কীভাবে তা কাজ করে? আর কীভাবে আমরা জগতের এই আত্মাকে সফলভাবে প্রতিরোধ করতে পারি?—পড়ুন, ১ করিন্থীয় ২:১২.
পবিত্র আত্মা নাকি জগতের আত্মা?
৫, ৬. পবিত্র আত্মা আমাদের জন্য কী করতে পারে কিন্তু তা লাভ করার জন্য আমাদের কী করতে হবে?
৫ পবিত্র আত্মার ব্যবস্থা কেবল প্রথম শতাব্দীতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। এটা আজকেও পাওয়া যায় আর ঈশ্বরের আত্মা আমাদেরকে যা সঠিক, তা করতে শক্তি প্রদান করে ও সেইসঙ্গে তাঁর পরিচর্যায় আমাদেরকে বল প্রদান করে। (রোমীয় ১২:১১; ফিলি. ৪:১৩) এ ছাড়া, এটা আমাদের মধ্যে কোমল গুণাবলি উৎপন্ন করতে পারে যেমন, প্রেম, মাধুর্য্য বা দয়া এবং মঙ্গলভাব, যেগুলো হল ‘আত্মার ফলের’ বিভিন্ন অংশ। (গালা. ৫:২২, ২৩) কিন্তু, যিহোবা ঈশ্বর অনিচ্ছুক মানুষদের ওপর জোর করে তাঁর পবিত্র আত্মা দেন না।
৬ তাই, এটা জিজ্ঞেস করা আমাদের জন্য যুক্তিযুক্ত হবে, ‘পবিত্র আত্মা লাভ করার জন্য আমি কী করতে পারি?’ আসলে, বাইবেল দেখায় যে, বেশ কয়েকটা বিষয় আমরা করতে পারি। একটা সাধারণ ও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হল পবিত্র আত্মা চেয়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা। (পড়ুন, লূক ১১:১৩.) আরেকটা ব্যবহারিক পদক্ষেপ হল, ঈশ্বরের আত্মা দ্বারা অনুপ্রাণিত বাক্য অধ্যয়ন করা ও এটির পরামর্শ কাজে লাগানো। (২ তীম. ৩:১৬) অবশ্য, যারা কেবল বাইবেল পড়ে, তারা সকলেই ঈশ্বরের আত্মা লাভ করে না। কিন্তু, একজন আন্তরিক খ্রিস্টান যখন ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করেন, তখন তিনি অনুপ্রাণিত বাক্যে প্রতিফলিত অনুভূতি ও দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে পারেন। এ ছাড়া, আমাদের জন্য এই বিষয়টাও মেনে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ যে, যিহোবা তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে যিশুকে নিযুক্ত করেছেন এবং তাঁর মাধ্যমেই ঈশ্বর তাঁর আত্মা জুগিয়ে থাকেন। (কল. ২:৬) তাই, আমাদের যিশুর উদাহরণ অনুসরণ করা ও তাঁর শিক্ষাগুলোর সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করা উচিত। (১ পিতর ২:২১) আমরা যত বেশি খ্রিস্টের মতো হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করব, তত বেশি আমরা পবিত্র আত্মা লাভ করব।
৭. কীভাবে জগতের আত্মা ব্যক্তি বিশেষদের প্রভাবিত করে থাকে?
৭ এর বৈসাদৃশ্যে, জগতের আত্মা লোকেদেরকে শয়তানের ব্যক্তিত্ব প্রতিফলিত করতে প্ররোচিত করে। (পড়ুন, ইফিষীয় ২:১-৩.) জগতের আত্মা বেশ কয়েকটা উপায়ে কাজ করে থাকে। আজকে আমাদের চারপাশে যেমন প্রমাণ পাওয়া যায় যে, এটা ঈশ্বরের মানগুলোর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে উৎসাহিত করে। এটা “মাংসের অভিলাষ, চক্ষুর অভিলাষ, ও জীবিকার দর্প” জাগিয়ে তোলে। (১ যোহন ২:১৬) এটা মাংসের কাজগুলো উৎপন্ন করে যেমন, বেশ্যাগমন, প্রতিমাপূজা, প্রেতচর্চা, ঈর্ষা, রাগ এবং মত্ততা। (গালা. ৫:১৯-২১) আর এটা ধর্মভ্রষ্ট কথাবার্তাকে উৎসাহিত করে, যা ধর্মবিরূপক। (২ তীম. ২:১৪-১৮) স্বাভাবিকভাবেই, একজন ব্যক্তি যত বেশি নিজেকে জগতের আত্মা দ্বারা প্রভাবিত হতে দেবেন, তত বেশি তিনি শয়তানের মতো হয়ে উঠবেন।
৮. আমরা সকলে কোন বাছাইয়ের মুখোমুখি হই?
৮ আমাদের পক্ষে সমস্ত বাহ্যিক প্রভাব থেকে মুক্ত এক স্থানে বসবাস করা সম্ভব নয়। প্রত্যেক ব্যক্তিকে বাছাই করতে হবে যে, কোনটাকে তিনি তার জীবনকে পরিচালিত করতে দেবেন—পবিত্র আত্মাকে নাকি জগতের আত্মাকে। যারা এখন জগতের আত্মা দ্বারা শাসিত হয়, তারা এর প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারে এবং তাদের জীবনে পবিত্র আত্মাকে নির্দেশনা দেওয়ার সুযোগ দিতে পারে। কিন্তু, এর বিপরীতটাও সম্ভব। যারা কিছু সময়ের জন্য পবিত্র আত্মা দ্বারা পরিচালিত হয়েছে, তারা জগতের আত্মার ফাঁদে পড়তে পারে। (ফিলি. ৩:১৮, ১৯) আসুন, আমরা বিবেচনা করি যে, কীভাবে আমরা জগতের আত্মাকে প্রতিরোধ করতে পারি?
প্রাথমিক সতর্কতামূলক লক্ষণগুলো শনাক্ত করা
৯-১১. আমরা হয়তো জগতের আত্মার কাছে নতি স্বীকার করেছি কি না, সেই বিষয়ে সতর্কতামূলক কিছু লক্ষণ কী?
৯ শুরুতে উল্লেখিত ব্রিটিশ কয়লা খনিশ্রমিকরা বিষাক্ত গ্যাসের উপস্থিতির প্রাথমিক সতর্কবাণী জোগানোর জন্য ক্যানারি পাখিগুলো ব্যবহার করত। একজন খনিশ্রমিক যদি দেখতেন যে, একটা পাখি এর দাঁড় থেকে পড়ে গিয়েছে, তাহলে তিনি বুঝতে পারতেন যে, রক্ষা পাওয়ার জন্য তাকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। আধ্যাত্মিক অর্থে, কিছু প্রাথমিক সতর্কতামূলক লক্ষণ কি, যা আমরা জগতের আত্মা দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছি বলে ইঙ্গিত দিয়ে থাকে?
১০ আমরা যখন প্রথম ঈশ্বরের বাক্যে প্রাপ্ত সত্যগুলো শিখেছিলাম এবং এরপর যিহোবার কাছে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিলাম, তখন আমরা হয়তো উৎসুকভাবে বাইবেল পড়েছি। আমরা সম্ভবত আন্তরিকভাবে এবং প্রায়ই প্রার্থনা করতাম। আর আমরা খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগ দিয়ে আনন্দিত হতাম, প্রত্যেক সভাকে আধ্যাত্মিক সতেজতার এক উৎস বলে মনে করতাম, ঠিক যেমন একজন তৃষ্ণার্ত ব্যক্তির জন্য এক মরূদ্যান। সেই বিষয়গুলো আমাদেরকে জগতের আত্মা থেকে মুক্ত হতে এবং মুক্ত থাকতে সাহায্য করেছে।
১১ আমরা কি এখনও প্রতিদিন বাইবেল পড়ার চেষ্টা করি? (গীত. ১:২) আমরা কি প্রায়ই এবং আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করি? আমরা কি মণ্ডলীর সভাগুলোকে ভালবাসি, প্রতি সপ্তাহে সব সভাতেই যোগদান করি? (গীত. ৮৪:১০) নাকি এইরকম কিছু উত্তম অভ্যাস আমরা হারিয়ে ফেলেছি? অবশ্য, আমাদের এমন অনেক দায়িত্ব আছে, যেগুলোর জন্য আমাদের সময় ও শক্তির প্রয়োজন আর এক উত্তম আধ্যাত্মিক তালিকা বজায় রাখা কঠিন হতে পারে। কিন্তু, আমাদের কিছু উত্তম অভ্যাস যদি সময়ের প্রবাহে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে, তাহলে এটা কি হতে পারে যে, আমরা জগতের আত্মার কাছে নতি স্বীকার করছি? একসময় আমাদের যে-উত্তম অভ্যাসগুলো ছিল, সেগুলো পুনরুজ্জীবিত করার জন্য আমরা কি এখনই জোরালো প্রচেষ্টা করব?
‘ভারগ্রস্ত হইয়া’ পড়বেন না
১২. যিশু তাঁর শিষ্যদের কার বিষয়ে ‘সাবধান থাকিবার’ কথা বলেছিলেন এবং কেন?
১২ জগতের আত্মাকে প্রতিরোধ করার জন্য আমরা আর কী করতে পারি? যিশু যখন তাঁর শিষ্যদের ‘জাগিয়া থাকিবার’ উপদেশ দিয়েছিলেন, তখন তিনি কেবল নির্দিষ্ট কিছু বিপদ সম্বন্ধে তাদের সতর্ক করেছিলেন। “আপনাদের বিষয়ে সাবধান থাকিও,” তিনি বলেছিলেন, “পাছে ভোগপীড়ায় ও মত্ততায় এবং জীবিকার চিন্তায় তোমাদের হৃদয় ভারগ্রস্ত হয়, আর সেই দিন হঠাৎ ফাঁদের ন্যায় তোমাদের উপরে আসিয়া পড়ে।”—লূক ২১:৩৪, ৩৫.
১৩, ১৪. খাওয়াদাওয়া ও পান করা সম্বন্ধে কোন ধরনের প্রশ্নগুলো নিজেদেরকে জিজ্ঞেস করা উপযুক্ত হবে?
১৩ সেই সতর্কবাণী সম্বন্ধে চিন্তা করে দেখুন। যিশু কি খাবারদাবার ও পানীয় উপভোগ করাকে নিন্দা করেছেন? না! তিনি শলোমনের এই কথাগুলো সম্বন্ধে অবগত ছিলেন: “আমি জানি, যাবজ্জীবন আনন্দ ও সৎকর্ম্ম করণ ব্যতীত আর মঙ্গল [মনুষ্য সন্তানদের] হয় না। আর প্রত্যেক মনুষ্য যে ভোজন পান ও সমস্ত পরিশ্রমের মধ্যে সুখভোগ করে, ইহাও ঈশ্বরের দান।” (উপ. ৩:১২, ১৩) তবুও, যিশু জানতেন যে, জগতের আত্মা এই ক্ষেত্রগুলোতে ইন্দ্রিয়দমনের অভাবকে জাগিয়ে তুলতে পারে।
১৪ কীভাবে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, জগতের আত্মা অতিরিক্ত ভোজন বা পানের বিপদ সম্বন্ধে আমাদের অনুভূতিকে বিষাক্ত করছে না? আমরা হয়তো নিজেদের জিজ্ঞেস করতে পারি: ‘পেটুকতা সম্বন্ধে বাইবেলে অথবা আমাদের প্রকাশনাদিতে দেওয়া পরামর্শ পড়ার পর আমি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাই? আমার কাজগুলোর পক্ষে হয়তো অজুহাত দেখিয়ে অথবা সেগুলোকে ন্যায্য বলে প্রমাণ করে আমি কি সেই উপদেশকে অপ্রাসঙ্গিক অথবা চরম বলে বাতিল করে দিই?a মদ্যজাতীয় পানীয় সম্বন্ধে উপদেশের বিষয়ে আমার দৃষ্টিভঙ্গি কী আর যদি আদৌ পান করে থাকি, তাহলে কি তা পরিমিত মাত্রায় করি এবং সম্পূর্ণরূপে “মত্ততা” এড়িয়ে চলি? আমি কি এই ধরনের উপদেশকে হেয় করে দেখি, এইরকম মনে করি যে, কিছু কারণের জন্য সেগুলো আমার প্রতি প্রযোজ্য নয়? অন্যেরা যদি আমার মদ্যপান নিয়ে উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করে, তখন আমি কি আত্মরক্ষা করি অথবা রেগে যাই? আমি কি অন্যদেরকে এই ধরনের বাইবেলের পরামর্শকে গুরুত্বের সঙ্গে না নিতে উৎসাহিত করি?’ হ্যাঁ, একজন ব্যক্তি জগতের আত্মার কাছে নতি স্বীকার করেছে কি না, সেই বিষয়ে তার মনোভাব একটা লক্ষণ হতে পারে।—তুলনা করুন, রোমীয় ১৩:১১-১৪.
উদ্বিগ্নতার দ্বারা চাপগ্রস্ত হওয়া এড়িয়ে চলুন
১৫. যিশু কোন মানব প্রবণতা সম্বন্ধে সাবধান করেছেন?
১৫ জগতের আত্মাকে প্রতিরোধ করার আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ধাপের অন্তর্ভুক্ত হল উদ্বিগ্নতাকে নিয়ন্ত্রণ করা। যিশু জানতেন যে, অসিদ্ধ মানুষ হিসেবে আমাদের ছোটোখাটো বিষয়ে ভাবিত বা উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রবণতা রয়েছে। তিনি প্রেমের সঙ্গে তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “ভাবিত হইও না।” (মথি ৬:২৫) এটা বোধগম্য যে, আমরা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সম্বন্ধে উদ্বিগ্ন হই যেমন, ঈশ্বরকে খুশি করা, খ্রিস্টীয় দায়িত্বগুলোর যত্ন নেওয়া এবং আমাদের পরিবারের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জোগানো। (১ করি. ৭:৩২-৩৪) তাহলে, যিশুর সাবধানবাণী থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
১৬. অনেক লোকের ওপর জগতের আত্মার কোন প্রভাব রয়েছে?
১৬ জগতের আত্মা ও এটা যে জীবিকার দর্পের ওপর জোর দেয়, তা অনেক ব্যক্তি বিশেষকে ক্ষতিকর উদ্বিগ্নতার দ্বারা জর্জরিত করে। জগৎ আমাদেরকে এইরকম মনে করতে পরিচালিত করে যে, টাকা থাকলেই নিরাপত্তা পাওয়া যায় আর একজন ব্যক্তির যোগ্যতা তার আধ্যাত্মিক গুণাবলির দ্বারা নয় বরং তার ধনসম্পদের পরিমাণ ও প্রকারের দ্বারা মূল্যায়ন করা হয়। যারা এই অপপ্রচারের দ্বারা বিভ্রান্ত হয়, তারা ধনসম্পদ অর্জনের দাস হয়ে থাকে এবং ক্রমাগত সবচেয়ে নতুন, সবচেয়ে বড় ও সবচেয়ে উন্নত সামগ্রী অর্জনের জন্য উদ্বিগ্ন থাকে। (হিতো. ১৮:১১) বস্তুগত বিষয় সম্বন্ধে এই ধরনের বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গি উদ্বিগ্নতা বৃদ্ধি করে, যা একজন ব্যক্তির আধ্যাত্মিক উন্নতিকে চেপে রাখে।—পড়ুন, মথি ১৩:১৮, ২২.
১৭. কীভাবে আমরা উদ্বিগ্নতার দ্বারা চাপগ্রস্ত হওয়া এড়াতে পারি?
১৭ আমরা উদ্বিগ্নতার দ্বারা চাপগ্রস্ত হওয়া এড়াতে পারি, যদি আমরা যিশুর এই আজ্ঞা পালন করি: “কিন্তু, তোমরা প্রথমে [ঈশ্বরের] রাজ্য ও তাঁহার ধার্ম্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা কর।” যিশু আমাদের আশ্বাস দেন যে, আমরা যদি তা করি, তাহলে যে-বিষয়গুলো আমাদের আসলেই প্রয়োজন, সেগুলো আমাদেরকে দেওয়া হবে। (মথি ৬:৩৩) কীভাবে আমরা দেখাতে পারি যে, আমরা এই প্রতিজ্ঞা বিশ্বাস করি? একটা উপায় হল প্রথমে ঈশ্বরের ধার্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা করে—আর্থিক বিষয়গুলোতে যা সঠিক, সেই বিষয়ে ঈশ্বরের মান মেনে চলে। উদাহরণস্বরূপ, আমাদের ব্যবসায়িক বিষয়ে আমরা আমাদের কর ফাঁকি দেওয়া অথবা এমনকি “ছোটোখাটো” মিথ্যা বলা প্রত্যাখ্যান করি। আমাদের আর্থিক প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চলার জন্য আমরা আমাদের যথাসাধ্য করি, যখন ঋণ পরিশোধ করার বিষয়টা আসে, তখন আমাদের “হাঁ, হাঁ,” হয়। (মথি ৫:৩৭; গীত. ৩৭:২১) এই ধরনের সততা একজন ব্যক্তিকে হয়তো ধনী করে তোলে না কিন্তু এটা ঈশ্বরের অনুমোদন নিয়ে আসে, এক শুদ্ধ বিবেক উৎপন্ন করে এবং উদ্বিগ্নতা অনেকটা কমিয়ে দেয়।
১৮. যিশু আমাদের জন্য কোন উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেন আর কীভাবে আমরা তাঁকে অনুকরণ করে উপকৃত হই?
১৮ প্রথমে রাজ্যের বিষয়ে চেষ্টা করার সঙ্গে আমাদের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো সঠিক স্থানে রাখা জড়িত। যিশুর উদাহরণ বিবেচনা করুন। মাঝে মাঝে, তিনি গুণগত মানের কাপড় পরতেন। (যোহন ১৯:২৩) তিনি উত্তম বন্ধুবান্ধবের সাহচর্যে থেকে খাবারদাবার ও মদ্য জাতীয় পানীয় উপভোগ করতেন। (মথি ১১:১৮, ১৯) কিন্তু, ধনসম্পদ এবং আমোদপ্রমোদ তার জীবনে স্বাদনদ্রব্য বা মশলার মতো ছিল, সেগুলো প্রধান খাদ্য ছিল না। যিশুর খাদ্য ছিল যিহোবার ইচ্ছা পালন করা। (যোহন ৪:৩৪-৩৬) আমরা যখন যিশুর উদাহরণ অনুকরণ করি, তখন জীবন অনেক পরিতৃপ্তিদায়ক হয়! আমাদের সেই নিপীড়িত ব্যক্তিদের সাহায্য করার আনন্দ রয়েছে, যারা শাস্ত্র থেকে সান্ত্বনা লাভ করে। আমরা মণ্ডলীর কাছ থেকে প্রেম ও সমর্থন লাভ করি। আর আমরা যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করি। আমাদের জীবনের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো যখন সঠিক স্থানে থাকে, তখন ধনসম্পদ ও আমোদপ্রমোদ আমাদের প্রভু হয় না। এর পরিবর্তে, সেগুলো আমাদের দাস অথবা হাতিয়ার হয়ে থাকে, যা আমাদেরকে যিহোবার উপাসনা করতে সাহায্য করে থাকে। আর যে-কাজ ঈশ্বরের রাজ্যকে সমর্থন করে, সেই কাজে যত বেশি আমরা সক্রিয় হই, সম্ভবত তত কম আমরা জগতের আত্মা দ্বারা পরাস্ত হই।
“আত্মার ভাব” বজায় রাখুন
১৯-২১. কীভাবে আমরা “আত্মার ভাব” বজায় রাখতে পারি আর কেন আমাদের তা করা উচিত?
১৯ কাজের আগে চিন্তা করতে হবে। যেগুলোকে অনেকে অবিবেচক কাজ বলে উল্লেখ করে, সেগুলো প্রায়ই মাংসিক চিন্তাভাবনার দ্বারা উদ্ভূত হয়ে থাকে। তাই, প্রেরিত পৌল আমাদের চিন্তাভাবনাকে রক্ষা করার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তিনি লিখেছিলেন: “যাহারা মাংসের বশে আছে, তাহারা মাংসিক বিষয় ভাবে; কিন্তু যাহারা আত্মার বশে আছে, তাহারা আত্মিক বিষয় ভাবে।”—রোমীয় ৮:৫.
২০ কীভাবে আমরা আমাদের চিন্তাভাবনাকে—আর এভাবে আমাদের কাজকে—জগতের আত্মা দ্বারা প্রভাবিত হতে দেওয়া এড়াতে পারি? আমরা যে-বিষয়ে চিন্তা করি, সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে আমাদের মনকে রক্ষা করতে হবে, যতদূর সম্ভব জগতের অপপ্রচারকে প্রতিরোধ করার প্রচেষ্টা করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, আমোদপ্রমোদ বাছাই করার সময় আমরা আমাদের মনকে সেই প্রোগ্রামগুলোর দ্বারা কলুষিত হতে দেওয়াকে প্রত্যাখ্যান করব, যা অনৈতিকতা অথবা দৌরাত্ম্যকে প্রশ্রয় দেয়। আমরা বুঝতে পারি যে, ঈশ্বরের পবিত্র বা শুচি আত্মা কোনো নোংরা মনের ওপর কাজ করবে না। (গীত. ১১:৫; ২ করি. ৬:১৫-১৮) অধিকন্তু, নিয়মিত বাইবেল পাঠ, প্রার্থনা, ধ্যান ও সভায় উপস্থিতির মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরের আত্মাকে আমাদের ওপর কাজ করতে দিই। আর আমরা যখন নিয়মিতভাবে খ্রিস্টীয় প্রচার কাজে অংশ নিই, তখন সেই আত্মার সঙ্গে কাজ করে থাকি।
২১ নিশ্চিতভাবেই, আমাদের জগতের আত্মাকে ও এটা যে-মাংসিক আকাঙ্ক্ষাকে জাগিয়ে তোলে, তা প্রতিরোধ করতে হবে। কিন্তু, তা করা আমাদের আন্তরিক প্রচেষ্টাকে সার্থক করে তোলে কারণ পৌল যেমন বলেন “মাংসের ভাব মৃত্যু, কিন্তু আত্মার ভাব জীবন ও শান্তি।”—রোমীয় ৮:৬.
[পাদটীকা]
a পেটুকতা হল এক ধরনের মানসিক অবস্থা, যা লোভ ও অতিরিক্ত অসংযমতার দ্বারা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। তাই, এটা একজনের দেহের আকৃতি দ্বারা নয় বরং খাবারের প্রতি তার মনোভাবের দ্বারা নির্ধারিত হয়। একজন ব্যক্তি হয়তো স্বাভাবিক আকৃতির অথবা এমনকি হালকা-পাতলা হয়েও একজন পেটুক হতে পারেন। অন্যদিকে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ওজনের কারণ হতে পারে কোনো রোগ অথবা বংশগত বিষয়গুলো অতিরিক্ত মোটা হওয়ার কারণ হতে পারে। একজন ব্যক্তির ওজন যা-ই হোক না কেন, মূল বিষয়টা হল তিনি খাবারের ব্যাপারে অতিরিক্ত লোভী কি না।—২০০৪ সালের ১ নভেম্বর প্রহরীদুর্গ পত্রিকার “পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল” দেখুন।
আপনি কি মনে করতে পারেন?
• পবিত্র আত্মা লাভ করার জন্য আমাদের কী করা উচিত?
• কিছু উপায় কী, যেগুলোর মাধ্যমে জগতের আত্মা আমাদেরকে প্রভাবিত করতে পারে?
• কীভাবে আমরা জগতের আত্মাকে প্রতিরোধ করতে পারি?
[২১ পৃষ্ঠার চিত্র]
কর্মক্ষেত্রে অথবা স্কুলে যাওয়ার আগে পবিত্র আত্মার জন্য প্রার্থনা করুন
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
আমাদের মনকে শুদ্ধ রাখতে, ব্যাবসার ক্ষেত্রে উত্তম মান বজায় রাখতে এবং বিভিন্ন অভ্যাসের ক্ষেত্রে মিতাচারী হতে হবে