প্রেমপূর্ণ মনোভাব নিয়ে মতভেদ মীমাংসা করুন
“পরস্পর শান্তিতে থাক।”—মার্ক ৯:৫০.
১, ২. আদিপুস্তকে মানুষের কোন দ্বন্দ্বগুলো সম্বন্ধে উল্লেখ করা আছে আর আমাদের কেন এই বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত?
আপনি কি কখনো বাইবেলে উল্লেখিত ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বগুলো নিয়ে চিন্তা করেছেন? আদিপুস্তকের প্রথম কয়েকটা অধ্যায় থেকে আমরা জানতে পারি, কয়িন তার ভাই হেবলকে হত্যা করেছিলেন (আদি. ৪:৩-৮); লেমক একজন যুবককে হত্যা করেছিলেন, কারণ সেই যুবক তাকে আঘাত করেছিল (আদি. ৪:২৩); অব্রাহামের এবং লোটের পশুপালকরা ঝগড়া করেছিল (আদি. ১৩:৫-৭); হাগার সারাকে অবজ্ঞা করেছিলেন আর এই কারণে সারা অব্রাহামের উপর বিরক্ত হয়েছিলেন (আদি. ১৬:৩-৬); ইশ্মায়েল অন্যদের বিরোধিতা করেছিলেন আর অন্যেরাও তার বিরোধিতা করেছিল।—আদি. ১৬:১২.
২ কেন বাইবেলে এই ধরনের দ্বন্দ্ব সম্বন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে? কারণ আমরা যেন সেই অসিদ্ধ ব্যক্তিদের উদাহরণ থেকে শিখতে পারি, যাদের সত্যিই মতভেদ সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা ছিল। আমরাও অসিদ্ধ আর আমরা যখন জীবনে একইরকম সমস্যার মুখোমুখি হই, তখন আমরা বাইবেলে উল্লেখিত উত্তম উদাহরণ অনুকরণ করতে পারি এবং মন্দ উদাহরণ অনুকরণ করা এড়িয়ে চলতে পারি। (রোমীয় ১৫:৪) এই বিবরণগুলো অন্যদের সঙ্গে কীভাবে শান্তি বজায় রাখতে হয়, তা শেখার ক্ষেত্রে আমাদের সাহায্য করতে পারে।
৩. এই প্রবন্ধে কোন বিষয়গুলো আলোচনা করা হবে?
৩ এই প্রবন্ধ থেকে আমরা শিখব, কেন আমাদের মতভেদ মীমাংসা করা বা মতপার্থক্য মিটমাট করা প্রয়োজন এবং কীভাবে আমরা তা করতে পারি। এ ছাড়া, আমরা বাইবেলের কিছু মৌলিক নীতি সম্বন্ধে শিখব, যেগুলো আমাদেরকে সমস্যা সমাধান করতে এবং যিহোবা ও অন্যদের সঙ্গে উত্তম সম্পর্ক বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে।
যে-কারণে ঈশ্বরের দাসদের মতভেদ মীমাংসা করা প্রয়োজন
৪. জগতে কোন মনোভাব ছড়িয়ে আছে আর এর ফল কী হয়েছে?
৪ লোকেদের মধ্যে বিভেদ এবং এত বেশি মতভেদের আসল কারণ হল শয়তান। কেন আমরা তা বলতে পারি? কারণ এদনে শয়তান বলেছিল, প্রত্যেক ব্যক্তি ঈশ্বরের কাছ থেকে স্বাধীন হয়ে নিজের ভালো-মন্দ বাছাই করতে পারে এবং তার সেটা করা উচিত। (আদি. ৩:১-৫) কিন্তু আমরা যখন বর্তমান জগতের দিকে তাকাই, তখন আমরা দেখতে পাই, এই ধরনের মনোভাবের ফলে কেবল বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে মনে করে, তাদের জন্য কোনটা ভালো অথবা মন্দ, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার তাদের রয়েছে। তারা অহংকারী, স্বার্থপর ও প্রতিযোগিতাপরায়ণ। এ ছাড়া, তাদের সিদ্ধান্ত অন্যদের আঘাত দেয় কি না, সেই বিষয়ে তাদের কোনো চিন্তাই নেই। এই ধরনের মনোভাবের কারণে বিভিন্ন দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হতে পারে। বাইবেল আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমরা যদি দ্রুত রেগে যাই, তা হলে অন্যদের সঙ্গে আমাদের অনেক মতপার্থক্য সৃষ্টি হবে আর আমরা অনেক পাপ করে ফেলব।—হিতো. ২৯:২২.
৫. কীভাবে যিশু লোকেদেরকে মতপার্থক্য মিটমাট করার বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছিলেন?
৫ পর্বতেদত্ত উপদেশে যিশু তাঁর শিষ্যদের শান্তিস্থাপন করতে এবং মতপার্থক্য এড়াতে শিক্ষা দিয়েছিলেন, এমনকী তা করার জন্য আমাদের যদি কোনো ত্যাগস্বীকারও করতে হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তিনি তাদের সদয় হতে, অন্যদের সঙ্গে শান্তিস্থাপন করতে, ক্রোধের মতো বিভিন্ন অনুভূতি দূর করতে, দ্রুত মতপার্থক্য মিটমাট করতে এবং তাদের শত্রুদের ভালোবাসতে বলেছিলেন।—মথি ৫:৫, ৯, ২২, ২৫, ৪৪.
৬, ৭. (ক) কেন ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব দ্রুত মীমাংসা করা গুরুত্বপূর্ণ? (খ) যিহোবার সমস্ত দাস নিজেদেরকে কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করতে পারে?
৬ বর্তমানে, আমরা প্রার্থনা ও প্রচার করার মাধ্যমে এবং সভাতে উপস্থিত হওয়ার মাধ্যমে যিহোবার উপাসনা করি। কিন্তু আমরা যদি আমাদের ভাই-বোনদের সঙ্গে শান্তিস্থাপন না করি, তা হলে যিহোবা আমাদের সেই উপাসনা গ্রহণ করবেন না। (মার্ক ১১:২৫) আমরা যদি যিহোবার বন্ধু হতে চাই, তা হলে অন্যেরা যখন ভুল করে, তখন তাদের ক্ষমা করতে হবে।—পড়ুন, লূক ১১:৪; ইফিষীয় ৪:৩২.
৭ যিহোবা চান যেন তাঁর সমস্ত দাস ক্ষমাশীল হয় এবং অন্যদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখে। আমরা নিজেদের জিজ্ঞেস করতে পারি: ‘আমি কি দ্রুত আমার ভাই-বোনদের ক্ষমা করি? আমার কি তাদের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালো লাগে?’ আপনি যদি বুঝতে পারেন, আপনাকে আরও ক্ষমাশীল হতে হবে, তা হলে এই ক্ষেত্রে উন্নতি করার জন্য যিহোবার কাছে সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করুন। আমাদের স্বর্গীয় পিতা এই ধরনের বিনীত প্রার্থনা শুনবেন এবং উত্তর দেবেন।—১ যোহন ৫:১৪, ১৫.
আপনি কি দোষটা উপেক্ষা করতে পারেন?
৮, ৯. আমরা যদি অসন্তুষ্ট হই, তা হলে আমাদের কী করা উচিত?
৮ যেহেতু আমরা সবাই অসিদ্ধ, তাই আমরা জানি, লোকেদের কথা অথবা কাজ হয়তো আমাদের অসন্তুষ্ট করবে। (উপ. ৭:২০; মথি ১৮:৭) আপনি তখন কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবেন? একটা অভিজ্ঞতা থেকে আমরা এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা লাভ করতে পারি: একজন বোন কোনো সামাজিক মেলামেশার সময় দু-জন ভাইকে সম্ভাষণ জানিয়েছিলেন। বোন যেভাবে সম্ভাষণ জানিয়েছিলেন, সেই বিষয়টা নিয়ে ভাইদের মধ্যে একজন অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। এরপর সেই দুই ভাই যখন কথা বলছিলেন, তখন অসন্তুষ্ট ভাই সেই বোন সম্বন্ধে অভিযোগ করতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু, অন্য ভাই তাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন, সেই বোনের বিভিন্ন সমস্যা থাকা সত্ত্বেও তিনি ৪০ বছর ধরে অনুগতভাবে যিহোবার সেবা করে যাচ্ছেন। তিনি নিশ্চিত, বোন তাকে অসন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে এমনটা করেননি। প্রথম ভাই কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? তিনি বলেছিলেন, “আপনি ঠিক বলেছেন।” এরপর এই ভাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যা ঘটেছে, তা তিনি ভুলে যাবেন।
৯ এই অভিজ্ঞতা আমাদের কী শিক্ষা দেয়? কেউ যখন আমাদের অসন্তুষ্ট করে, তখন আমরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাব, তা আমাদের উপর নির্ভর করে। একজন প্রেমময় ব্যক্তি অন্যদের ক্ষমা করে থাকেন। (পড়ুন, হিতোপদেশ ১০:১২; ১ পিতর ৪:৮.) আমরা যখন অন্যদের ‘দোষ ছাড়িয়া দিই,’ তখন যিহোবার চোখে সেটা শোভাময় হয়ে ওঠে। (হিতো. ১৯:১১; উপ. ৭:৯) তাই, কেউ যখন এমন কিছু বলে অথবা এমন কিছু করে, যেটার কারণে আপনি অসন্তুষ্ট হন, তখন নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘আমি কি এই দোষ উপেক্ষা করতে পারি? আমার কি আসলেই এই বিষয়টা নিয়ে ক্রমাগত চিন্তা করার প্রয়োজন রয়েছে?’
১০. (ক) একজন বোন নিজের সম্বন্ধে অন্যদের সমালোচনার প্রতি প্রথমে কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? (খ) কোন শাস্ত্রীয় চিন্তাভাবনা সেই বোনকে মনের শান্তি বজায় রাখতে সাহায্য করেছিল?
১০ অন্যেরা যখন আমাদের সম্বন্ধে নেতিবাচক কোনো কথা বলে, তখন সেই কথা উপেক্ষা করা হয়তো কঠিন হতে পারে। একজন অগ্রগামী বোনের ক্ষেত্রে কী ঘটেছিল, তা বিবেচনা করুন। আমরা তাকে লুসি নামে ডাকছি। মণ্ডলীর মধ্যে কেউ কেউ তার প্রচার কাজের গুণগত মান এবং সময়ের ব্যবহার সম্বন্ধে নেতিবাচক মন্তব্য করেছিল। এতে তিনি অত্যন্ত কষ্ট পেয়েছিলেন আর তাই পরিপক্ব ভাইদের কাছে গিয়ে পরামর্শ চেয়েছিলেন। এর ফল কী হয়েছিল? বোন বলেছিলেন, তারা বাইবেল ব্যবহার করে তাকে বুঝতে সাহায্য করেছেন, তিনি যেন অন্যদের নেতিবাচক মন্তব্য নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করা বন্ধ করেন এবং যিহোবা সম্বন্ধে আরও বেশি চিন্তা করেন। তিনি মথি ৬:১-৪ পদ পড়ে উৎসাহিত হয়েছিলেন। (পড়ুন।) এই পদগুলো তাকে মনে করিয়ে দিয়েছিল, যিহোবাকে খুশি করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই, তিনি নেতিবাচক মন্তব্যগুলো উপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এখন অন্যেরা তার পরিচর্যা সম্বন্ধে নেতিবাচক মন্তব্য করলেও তিনি আনন্দিত থাকেন, কারণ তিনি জানেন, তিনি যিহোবাকে খুশি করার জন্য যথাসাধ্য করছেন।
আপনি যখন দোষটা উপেক্ষা করতে পারেন না
১১, ১২. (ক) একজন খ্রিস্টান যদি মনে করেন, তার ‘বিরুদ্ধে তাহার ভ্রাতার কোন কথা আছে,’ তা হলে তার কোন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত? (খ) অব্রাহাম যেভাবে বিবাদ মীমাংসা করেছিলেন, তা থেকে আমরা কী শিখতে পারি? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)
১১ “আমরা সকলে অনেক প্রকারে উছোট খাই।” (যাকোব ৩:২) ধরুন, আপনি জানতে পেরেছেন, আপনার কোনো কথা অথবা কাজের কারণে কোনো ভাই অসন্তুষ্ট হয়েছেন। তখন আপনার কী করা উচিত? যিশু বলেছিলেন, “তুমি যখন যজ্ঞবেদির নিকটে আপন নৈবেদ্য উৎসর্গ করিতেছ, তখন সেই স্থানে যদি মনে পড়ে যে, তোমার বিরুদ্ধে তোমার ভ্রাতার কোন কথা আছে, তবে সেই স্থানে বেদির সম্মুখে তোমার নৈবেদ্য রাখ, আর চলিয়া যাও, প্রথমে তোমার ভ্রাতার সহিত সম্মিলিত হও, পরে আসিয়া তোমার নৈবেদ্য উৎসর্গ করিও।” (মথি ৫:২৩, ২৪) তাই, আপনার ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলুন। তা করার সময় আপনার লক্ষ্য হবে তার সঙ্গে সম্মিলিত হওয়া বা শান্তিস্থাপন করা। সেই ভাইকে দোষ দেওয়ার চেষ্টা করার পরিবর্তে আপনার নিজের দোষ স্বীকার করা উচিত। আমাদের ভাইয়ের সঙ্গে শান্তি বজায় রাখা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
১২ মতপার্থক্য দেখা দিলে ঈশ্বরের দাসেরা যেভাবে শান্তি বজায় রাখতে পারে, সেই বিষয়ে বাইবেল তুলে ধরে। উদাহরণ স্বরূপ, অব্রাহাম ও তার ভাইপো লোটের অনেক পশু ছিল আর তারা যেখানে থাকত, সেখানে তাদের সমস্ত পশুর জন্য যথেষ্ট চারণভূমি ছিল না। এই কারণে তাদের পশুপালকরা ঝগড়া করতে শুরু করেছিল। অব্রাহাম যেহেতু শান্তি বজায় রাখতে চেয়েছিলেন, তাই তিনি লোটকে উত্তম ভূমি বেছে নিতে দিয়েছিলেন। (আদি. ১৩:১, ২, ৫-৯) আমাদের জন্য কতই-না উত্তম উদাহরণ! উদারতা দেখানোর কারণে অব্রাহাম কি স্থায়ী ক্ষতি ভোগ করেছিলেন? না। কারণ এই ঘটনার পর পরই, যিহোবা অব্রাহামের কাছে এই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, অব্রাহাম যা হারিয়েছেন, সেটার চেয়ে আরও বেশি আশীর্বাদ তিনি লাভ করবেন। (আদি. ১৩:১৪-১৭) এখান থেকে আমরা কী শিখতে পারি? আমরা যখন প্রেমপূর্ণ মনোভাব নিয়ে মতপার্থক্য মিটমাট করি, তখন আমাদের নিজেদের স্বার্থ কিছুটা ত্যাগ করতে হলেও যিহোবা আমাদের আশীর্বাদ করবেন।[১]
১৩. একজন অধ্যক্ষ রূঢ় কথাবার্তার প্রতি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন আর তার উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
১৩ আধুনিক দিনের একটা উদাহরণ বিবেচনা করুন। সম্মেলনের একটা বিভাগের নতুন অধ্যক্ষ, একজন ভাইকে ফোন করে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তিনি সেই বিভাগে কাজ করতে পারবেন কি না। সেই ভাই তার সঙ্গে রূঢ়ভাবে কথা বলে ফোন রেখে দিয়েছিলেন কারণ তিনি সেই বিভাগের আগের অধ্যক্ষের উপর কোনো কারণে তখনও রেগে ছিলেন। নতুন অধ্যক্ষ এতে অসন্তুষ্ট হননি, তবে যা ঘটেছে সেটা তিনি উপেক্ষাও করতে পারেননি। তাই এক ঘণ্টা পর, তিনি আবার সেই ভাইকে ফোন করেছিলেন এবং তার সঙ্গে দেখা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। পরের সপ্তাহে তারা কিংডম হলে দেখা করেছিলেন। যিহোবার কাছে প্রার্থনা করার পর, তারা এক ঘণ্টা ধরে কথা বলেছিলেন। আগের অধ্যক্ষের সঙ্গে কী হয়েছিল, তা ভাই ব্যাখ্যা করেছিলেন। নতুন অধ্যক্ষ সদয়ভাবে তা শুনেছিলেন আর এরপর কিছু সাহায্যকারী শাস্ত্রপদ নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। ফল স্বরূপ, এই ভাইয়েরা শান্তিস্থাপন করেছিলেন এবং সম্মেলনে একসঙ্গে কাজ করেছিলেন। অধ্যক্ষ ভাই তার সঙ্গে সদয়ভাবে ও শান্তভাবে কথা বলেছিলেন বলে সেই ভাই কৃতজ্ঞ হয়েছিলেন।
আপনার কি প্রাচীনদের সঙ্গে কথা বলা উচিত?
১৪, ১৫. (ক) মথি ১৮:১৫-১৭ পদে প্রাপ্ত পরামর্শ আমাদের কখন প্রয়োগ করা উচিত? (খ) যিশু কোন তিনটে পদক্ষেপ সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন আর সেগুলো প্রয়োগ করার সময় আমাদের লক্ষ্য কী হওয়া উচিত?
১৪ দু-জন খ্রিস্টানের মধ্যে যেসব সমস্যা সৃষ্টি হয়, সেগুলোর অধিকাংশই ব্যক্তিগতভাবে মিটমাট করা যেতে পারে এবং তা করা উচিত। কিন্তু, মাঝে মাঝে তা সম্ভব হয় না। কিছু পরিস্থিতিতে, মথি ১৮:১৫-১৭ পদ অনুযায়ী অন্যদের কাছ থেকে সাহায্য নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। (পড়ুন।) যিশু যে-“অপরাধ” বা পাপ সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন, সেটা খ্রিস্টানদের মধ্যে ছোটোখাটো মতপার্থক্যকে বোঝায় না। কেন আমরা তা বলতে পারি? কারণ যিশু বলেছিলেন, অপরাধী যদি তার ভাইয়ের সঙ্গে, সাক্ষিদের সঙ্গে এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত ভাইদের সঙ্গে কথা বলার পরও অনুতপ্ত না হন, তা হলে তিনি “পরজাতীয় লোকের ও করগ্রাহীর তুল্য” হবেন। বর্তমানে, এর অর্থ হচ্ছে তাকে সমাজচ্যুত করা হবে। এই ধরনের ‘অপরাধের’ অন্তর্ভুক্ত হতে পারে কাউকে প্রতারণা করা অথবা অপবাদ দেওয়া। তবে কিছু পাপের ক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবেই প্রাচীনদের মীমাংসা করতে হবে, যেমন ব্যভিচার, সমকামিতা, ধর্মভ্রষ্টতা অথবা প্রতিমাপূজা।
১৫ এই পরামর্শ দেওয়ার পিছনে যিশুর লক্ষ্য ছিল, আমরা যেন প্রেমপূর্ণ মনোভাব নিয়ে একজন ভাইকে সাহায্য করি। (মথি ১৮:১২-১৪) কীভাবে আমরা এই পরামর্শ অনুসরণ করতে পারি? (১) অন্য ব্যক্তিদের জড়িত না করে সেই ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের শান্তিস্থাপন করার চেষ্টা করা উচিত। এর জন্য হয়তো তার সঙ্গে বেশ কয়েক বার কথা বলার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু তারপরও যদি শান্তিস্থাপন করা না যায়, তা হলে আমাদের কী করা উচিত? (২) সেই ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলার সময় আমাদের এমন কাউকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া উচিত, যিনি সেই পরিস্থিতি সম্বন্ধে জানেন অথবা আদৌ কোনো ভুল হয়েছে কি না, সেই বিষয়টা বুঝতে পারবেন। যদি সমস্যাটা তখন সমাধান হয়ে যায়, তা হলে আপনি ‘আপন ভ্রাতাকে লাভ করিবেন।’ কিন্তু, এভাবে আপনার ভাইয়ের সঙ্গে বেশ কয়েক বার কথা বলা সত্ত্বেও যদি আপনি তার সঙ্গে শান্তিস্থাপন করতে না পারেন, তা হলে (৩) সমস্যাটা প্রাচীনদের কাছে জানান।
১৬. কোন বিষয়টা দেখায় যে, যিশুর পরামর্শ অনুসরণ করা হল এক ব্যাবহারিক ও প্রেমপূর্ণ উপায়?
১৬ অধিকাংশ ক্ষেত্রে, মথি ১৮:১৫-১৭ পদে প্রাপ্ত তিনটে পদক্ষেপই গ্রহণ করার প্রয়োজন হয় না। এটা খুবই ভালো বিষয়। কেন তা বলা যায়? কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, একজন পাপী নিজের ভুল বুঝতে পারেন এবং সমস্যাটা সমাধান করেন, যাতে তাকে সমাজচ্যুত করার প্রয়োজন না হয়। তখন অসন্তুষ্ট ব্যক্তির উচিত, শান্তিস্থাপন করার জন্য তার ভাইকে ক্ষমা করা। তাই যিশুর পরামর্শ থেকে এটা স্পষ্ট যে, আমাদের দ্রুত প্রাচীনদের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু, প্রথম দুটো পদক্ষেপ অনুসরণ করার পর এবং কোনো ভুলের প্রকৃত প্রমাণ লাভ করার পরই, আমাদের সেই বিষয়টা সম্বন্ধে প্রাচীনদের জানানো উচিত।
১৭. আমরা যখন একে অন্যের সঙ্গে “শান্তির অন্বেষণ” করার চেষ্টা করব, তখন আমরা কী ফল লাভ করব?
১৭ যতদিন পর্যন্ত এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থা থাকবে, ততদিন পর্যন্ত মানুষ অসিদ্ধ থাকবে এবং অন্যদের অসন্তোষের কারণ হবে। শিষ্য যাকোব লিখেছিলেন: “যদি কেহ বাক্যে উছোট না খায়, তবে সে সিদ্ধ পুরুষ, সমস্ত শরীরকেই বল্গা দ্বারা বশে রাখিতে সমর্থ।” (যাকোব ৩:২) মতপার্থক্য মিটমাট করতে হলে, আমাদের “শান্তির অন্বেষণ ও অনুধাবন” করার জন্য যথাসাধ্য করতে হবে। (গীত. ৩৪:১৪) আমরা যখন অন্যদের সঙ্গে শান্তিস্থাপন করার চেষ্টা করে চলব, তখন আমরা আমাদের ভাই-বোনদের সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রাখতে পারব এবং এর ফলে আমরা একতাবদ্ধ থাকতে পারব। (গীত. ১৩৩:১-৩) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, আমরা “শান্তির ঈশ্বর” যিহোবার সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব বজায় রাখতে পারব। (রোমীয় ১৫:৩৩) এসব আশীর্বাদ আমরা তখনই উপভোগ করতে পারব, যখন আমরা প্রেমপূর্ণ মনোভাব নিয়ে বিভিন্ন মতভেদ মীমাংসা করব।
^ [১] (১২ অনুচ্ছেদ) এ ছাড়া, যাকোব এষৌর সঙ্গে (আদি. ২৭:৪১-৪৫; ৩৩:১-১১); যোষেফ তার ভাইদের সঙ্গে (আদি. ৪৫:১-১৫); এবং গিদিয়োন ইফ্রয়িমীয়দের সঙ্গে (বিচার. ৮:১-৩) শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যা সমাধান করেছিলেন। আপনি হয়তো বাইবেলের একইরকম অন্যান্য উদাহরণ নিয়ে চিন্তা করতে পারেন।