“এ সকল অবশ্যই ঘটিবে”
“যীশু . . . তাঁহাদিগকে কহিলেন . . . এ সকল অবশ্যই ঘটিবে, কিন্তু তখনও শেষ নয়।”—মথি ২৪:৪-৬.
১. কোন্ বিষয়ের প্রতি আমাদের আগ্রহী হওয়া উচিত?
কোন সন্দেহ নেই যে আপনি আপনার জীবন ও আপনার ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আগ্রহী। তাহলে আপনার এই বিষয়টাতেও আগ্রহী হওয়া উচিত যা ১৮৭৭ সালে সি. টি. রাসেলের মনোযোগ কেড়েছিল। রাসেল পরে ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আর আমাদের প্রভুর পুনরাগমনের উদ্দেশ্য ও ধরণ (ইংরেজি) নামে একটা পুস্তিকা লিখেছিলেন। ৬৪ পৃষ্ঠার এই পুস্তিকা যীশুর পুনরাগমন অথবা ভবিষ্যতে ফিরে আসার বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। (যোহন ১৪:৩) একবার যখন তারা জৈতুন পর্বতের ওপর বসেছিলেন যীশুর প্রেরিতেরা তাঁর এই পুনরাগমনের বিষয়েই জিজ্ঞাসা করেছিলেন। তারা প্রশ্ন করেছিলেন: “এই সমস্ত ঘটনা কখন হবে আর আপনার উপস্থিতির [অথবা “আগমনের,” কিং জেমস ভারসান] ও এই বিধিব্যবস্থার শেষের চিহ্ন কী?”—মথি ২৪:৩, NW.
২. যীশু যে ভাববাণী করেছিলেন সেই সম্বন্ধে কেন এত আলাদা আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি আছে?
২ আপনি কি জানেন যীশু কী উত্তর দিয়েছিলেন আর তার অর্থ কি আপনি বোঝেন? তিনটে সুসমাচারের বিবরণেই তা পাওয়া যায়। অধ্যাপক ডি. এ. কারসন বলেন: “মথি ২৪ অধ্যায়ের কথা যা মার্ক ১৩ এবং লূক ২১ অধ্যায়েও পাওয়া যায় তা নিয়ে অনুবাদকদের মধ্যে খুবই মতের অমিল হয়েছে।” এরপর তিনি তার নিজের মতামত দেন আর তার মতামতও ছিল মানুষের দৃষ্টিতে দেখা এক বিষয় যা অন্যগুলোর সঙ্গে মেলে না। গত একশ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে, এইরকমই অনেক দৃষ্টিভঙ্গি দেখিয়েছে যে ওই লোকেদের মধ্যে বিশ্বাসের অভাব আছে। তারা বলেছেন যে সুসমাচারের বইগুলোতে আমরা যা পড়ি তা যীশু কখনই বলেননি, পরে তাঁর কথাগুলোকে বদলে দেওয়া হয়েছে কিংবা তাঁর ভাববাণী পূর্ণই হয়নি। এই সমস্তগুলোই বাইবেল গবেষণাকারীদের নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। এমনকি একজন মন্তব্যকারী মার্কের সুসমাচারকে ‘মহাইয়ানা-বৌদ্ধ দর্শনের’ আলোতে দেখেছিলেন!
৩. যীশুর ভবিষ্যদ্বাণীকে যিহোবার সাক্ষিরা কীভাবে দেখেন?
৩ এই সমস্ত দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীতে, যিহোবার সাক্ষিরা মানেন যে বাইবেল সত্য ও নির্ভরযোগ্য। সেইসঙ্গে তারা যীশু তাঁর মৃত্যুর তিন দিন আগে জৈতুন পর্বতে বসে তাঁর চারজন প্রেরিতকে যা বলেছিলেন সেই কথাও বিশ্বাস করেন। সি. টি. রাসেলের সময় থেকে আজ পর্যন্ত ঈশ্বরের লোকেরা ধীরে ধীরে যীশুর ওই ভবিষ্যদ্বাণীকে আরও ভালভাবে বুঝতে পেরেছেন। গত কয়েক বছরে প্রহরীদুর্গ এই ভবিষ্যদ্বাণীকে ঈশ্বরের লোকেরা কীভাবে দেখেন তা আরও পরিষ্কার করে বুঝিয়েছে। আপনার জীবনকে এটা প্রভাবিত করে বুঝে আপনি কি এই তথ্যকে ভাল করে মনে গেঁথে নিয়েছেন?a আসুন আমরা এটা নিয়ে আবার আলোচনা করি।
এক দুঃখজনক পূর্ণতা একেবারেই কাছে
৪. প্রেরিতেরা কেন যীশুকে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন?
৪ প্রেরিতেরা জানতেন যে যীশুই সেই মশীহ। তাই, তারা যখন যীশুকে তাঁর মৃত্যু, পুনরুত্থান ও আগমন সম্বন্ধে বলতে শোনেন, তারা হয়ত চিন্তা করেছিলেন, ‘যীশু যদি মারা যান ও চলেই যান তবে তিনি কীভাবে সেই চমৎকার কাজগুলো করবেন যা মশীহের করার কথা ছিল?’ পরে যীশু যিরূশালেম ও এর মন্দিরের ধ্বংস সম্পর্কেও বলেছিলেন। আর প্রেরিতেরা আবারও হয়ত ভেবেছিলেন, ‘কখন ও কীভাবে তা ঘটবে?’ এই বিষয়গুলোই বুঝতে চেয়ে প্রেরিতেরা জিজ্ঞাসা করেছিলেন: “আমাদিগকে বলুন দেখি, এই সকল ঘটনা কখন্ হইবে? আর এই সমস্তের সিদ্ধি নিকটবর্ত্তী হইবার চিহ্নই বা কি?”—মার্ক ১৩:৪; মথি ১৬:২১, ২৭, ২৮; ২৩:৩৭–২৪:২.
৫. যীশুর উত্তর কীভাবে প্রথম শতাব্দীতে পূর্ণ হয়েছিল?
৫ যীশু ভাববাণী করেছিলেন যে যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, মহামারী, ভূমিকম্প হবে, খ্রীষ্টানদেরকে ঘৃণা করা হবে, তাদের ওপর অত্যাচার করা হবে, ভণ্ড মশীহ দেখা দেবে এবং ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার চারদিকে প্রচার করা হবে। এরপরই শেষ আসবে। (মথি ২৪:৪-১৪; মার্ক ১৩:৫-১৩; লূক ২১:৮-১৯) যীশু সা.কা. ৩৩ সালের শুরুতে এইসমস্ত কথাগুলো বলেছিলেন। এর বেশ কিছু বছর পরে যীশুর সতর্ক শিষ্যেরা বুঝতে পেরেছিলেন যে ভাববাণী করা বিষয়গুলো সত্যিই তাদের চোখের সামনে পুরোপুরি ঘটে চলেছে। হ্যাঁ, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে সেই সময়ে এই চিহ্ন একবার পূর্ণ হয়েছিল আর তার ফলে যিহূদী বিধিব্যবস্থা সা.কা. ৬৬-৭০ সালের মধ্যে রোমীয়দের হাতে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তা কীভাবে হয়েছিল?
৬. সাধারণ কালের ৬৬ সালে রোমীয় ও যিহূদীদের মধ্যে কী ঘটেছিল?
৬ সাধারণ কাল ৬৬ সালের গরম কালে ধর্মান্ধ যিহূদীরা হঠাৎ করে যিরূশালেম মন্দিরের কাছে দুর্গ পাহারারত রোমীয় সেনাদের ওপর চড়াও হয়, যার ফলে দেশের সব জায়গায় হিংসাত্মক আক্রমণ শুরু হয়ে যায়। অধ্যাপক হেনরিক গ্রেটস্ যিহূদীদের ইতিহাস (ইংরেজি) বইয়ে বলেন: “সিরিয়ার শাসক হিসাবে সেস্টিয়াস গ্যালাসের দায়িত্ব ছিল যে তিনি রোমীয় সৈন্যদের মর্যাদা বহাল রাখেন . . . তাই চারদিকে যে বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ছিল তা না থামিয়ে শুধু বসে বসে তা দেখা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তিনি তার সেনাবাহিনীকে জড়ো করেন আর আশেপাশের রাজ্যের শাসকেরা নিজে থেকেই তাদের সৈন্যদের পাঠিয়ে দেন।” এখন ৩০,০০০ সৈন্য যিরূশালেমকে ঘিরে ফেলে। কিছু সময় লড়াইয়ের পর যিহূদীরা মন্দিরের কাছেই দেওয়ালের পিছন দিকে চলে যায়। “এরপর একটানা পাঁচ দিন ধরে রোমীয়রা দেওয়ালের ওপর আক্রমণ চালায় কিন্তু যিহূদীদের গোলা বর্ষণের ফলে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। শেষে, ছয় দিনের দিন তারা মন্দিরের সামনে উত্তর দিকের দেওয়ালের নিচে গর্ত খুঁড়তে পেরেছিল।”
৭. যীশুর শিষ্যেরা কেন বিষয়গুলোকে বেশিরভাগ যিহূদীদের চেয়ে অন্যভাবে দেখতে পেরেছিলেন?
৭ একবার ভেবে দেখুন যে যিহূদীরা কতই না হতবাক হয়ে পড়েছিল, কারণ তারা এতদিন ধরে বিশ্বাস করত যে ঈশ্বর তাদেরকে ও তাদের পবিত্র নগরীকে রক্ষা করবেন! কিন্তু যীশুর শিষ্যদের আগে থেকেই সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল যে যিরূশালেমের জন্য ধ্বংস অপেক্ষা করছে। যীশু ভাববাণী করেছিলেন: “তোমার উপরে এমন সময় উপস্থিত হইবে, যে সময়ে তোমার শত্রুগণ তোমার চারিদিকে জাঙ্গাল বাঁধিবে, তোমাকে বেষ্টন করিবে, তোমাকে সর্ব্বদিকে অবরোধ করিবে, এবং তোমাকে ও তোমার মধ্যবর্ত্তী তোমার বৎসগণকে ভূমিসাৎ করিবে, তোমার মধ্যে প্রস্তরের উপরে প্রস্তর থাকিতে দিবে না।” (লূক ১৯:৪৩, ৪৪) কিন্তু, সা.কা. ৬৬ সালে ওই ঘটনা কি যিরূশালেমের খ্রীষ্টানদের জন্য মৃত্যু বুঝিয়েছিল?
৮. যীশু কোন্ দুঃখজনক ঘটনার কথা আগে থেকেই বলেছিলেন আর কারা সেই “মনোনীত” লোক ছিলেন যাদের জন্য সেই দিনের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হবে?
৮ জৈতুন পর্বতে প্রেরিতদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় যীশু ভাববাণী করেছিলেন: “তৎকালে এরূপ ক্লেশ উপস্থিত হইবে, যেরূপ ক্লেশ ঈশ্বরের কৃত সৃষ্টির আদি অবধি এ পর্য্যন্ত কখনও হয় নাই, কখনও হইবেও না। আর প্রভু যদি সেই দিনের সংখ্যা কমাইয়া না দিতেন, তবে কোন প্রাণীই রক্ষা পাইত না; কিন্তু তিনি যাহাদিগকে মনোনীত করিয়াছেন, সেই মনোনীতদের জন্য সেই দিনের সংখ্যা কমাইয়া দিলেন।” (মার্ক ১৩:১৯, ২০; মথি ২৪:২১, ২২) অতএব, সেই দিনের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং ‘মনোনীতরা’ রক্ষা পেয়েছিলেন। এই মনোনীতরা কারা ছিলেন? নিশ্চয়ই সেই বিদ্রোহী যিহূদীরা নয় যারা যিহোবাকে উপাসনা করে বলে দাবি করত কিন্তু তাঁর পুত্রকে মেনে নেয়নি। (যোহন ১৯:১-৭; প্রেরিত ২:২২, ২৩, ৩৬) তাহলে প্রকৃত মনোনীতরা ছিলেন সেইসব যিহূদী ও ন-যিহূদী লোকেরা যারা যীশুতে বিশ্বাস করেছিলেন ও তাকে মশীহ ও পরিত্রাতা হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন। ঈশ্বর এই লোকেদের মনোনীত করেছিলেন এবং সা.কা. ৩৩ সালে পঞ্চাশত্তমীর দিনে তিনি তাদেরকে এক নতুন আধ্যাত্মিক জাতি হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন যাদেরকে ‘ঈশ্বরের ইস্রায়েল’ বলা হয়।—গালাতীয় ৬:১৬; লূক ১৮:৭; প্রেরিত ১০:৩৪-৪৫; ১ পিতর ২:৯.
৯, ১০. রোমীয় আক্রমণকে কীভাবে “কমাইয়া” দেওয়া হয়েছিল আর এর ফল কী হয়েছিল?
৯ সেই দিনের সংখ্যা কি “কমাইয়া দেওয়া” হয়েছিল আর যিরূশালেমের অভিষিক্ত মনোনীতরা কি রক্ষা পেয়েছিলেন? অধ্যাপক গ্রেটস বলেন: “[সেস্টিয়াস গ্যালাস] এই সাহসী ও উদ্যোগী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়া ও এইরকম এক ঋতুতে বড় সামরিক অভিযান শুরু করাকে বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করেননি কারণ শীঘ্রিই বর্ষাকাল শুরু হত . . . আর এর ফলে হয়ত সৈন্যদের থাকা-খাওয়ায় সমস্যা দেখা দিতে পারত। সম্ভবত এই কথা ভেবেই তিনি ফিরে যাওয়াকেই বুদ্ধির কাজ বলে মনে করেছিলেন।” সেস্টিয়াস গ্যালাসের মনে যাই থেকে থাকুক না কেন, রোমীয় সৈন্য শহর ছেড়ে চলে গিয়েছিল আর তাদের পিছনে ধাওয়াকারী যিহূদীরা তাদের অনেক ক্ষয়ক্ষতি করেছিল।
১০ সবাইকে অবাক করে দিয়ে রোমীয়দের এই চলে যাওয়া ‘প্রাণীদের’ রক্ষা করেছিল। এই প্রাণীরা ছিল যীশুর শিষ্যেরা যারা তখন যিরূশালেমের ভিতরে বিপদের মধ্যে ছিলেন। ইতিহাস বলে যে সুযোগের এই দ্বার যখনই খুলে যায়, খ্রীষ্টানেরা পাহাড়াঞ্চলে পালিয়ে যান। ভবিষ্যতের বিষয়ে আগে থেকে জানা ও তাঁর উপাসকদের বাঁচানোর ক্ষমতা যে যিহোবার আছে তা কত বিস্ময়করভাবেই না তিনি দেখিয়েছিলেন! কিন্তু যিরূশালেম ও যিহূদিয়ায় রয়ে যাওয়া অবিশ্বাসী যিহূদীদের কী হয়েছিল?
তখনকার লোকেরা তা দেখেছিল
১১. ‘এই বংশের’ বিষয়ে যীশু কী বলেছিলেন?
১১ অনেক যিহূদীরা ভেবেছিল যে তাদের উপাসনা পদ্ধতি যার মূল ছিল মন্দির চিরকাল থাকবে। কিন্তু যীশু বলেছিলেন: “ডুমুরগাছ হইতে . . . শিখ; যখন তাহার শাখা কোমল হইয়া পত্র বাহির করে, তখন তোমরা জানিতে পার, গ্রীষ্মকাল সন্নিকট; সেইরূপ তোমরা ঐ সকল ঘটনা দেখিলেই জানিবে, তিনি সন্নিকট, এমন কি, দ্বারে উপস্থিত। আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, এই কালের লোকদের লোপ হইবে না, যে পর্য্যন্ত না এ সমস্ত সিদ্ধ হয়। আকাশের ও পৃথিবীর লোপ হইবে, কিন্তু আমার বাক্যের লোপ কখনও হইবে না।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।)—মথি ২৪:৩২-৩৫.
১২, ১৩. যীশু যে ‘এই বংশের’ কথা বলেছিলেন তা শিষ্যেরা কীভাবে বুঝতে পেরেছিলেন?
১২ সাধারণ কালের ৬৬ সালের আগের বছরগুলোতে খ্রীষ্টানেরা এই যৌগিক চিহ্নের অনেক অংশ পূর্ণ হতে শুরু হয়েছে বলে দেখেছিলেন—যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ আর এমনকি চারদিকে রাজ্যের সুসমাচার প্রচারের কাজ। (প্রেরিত ১১:২৮; কলসীয় ১:২৩) কিন্তু শেষ কখন আসবে? যীশু আসলে কী বুঝিয়েছিলেন যখন তিনি বলেছিলেন: “এই কালের [বংশের] [গ্রিক, জেনিয়া] লোকদের লোপ হইবে না”? যীশু প্রায়ই তাঁর সময়ের বিরোধী যিহূদীদেরকে যার মধ্যে ধর্মীয় নেতারাও ছিলেন ‘দুষ্ট ও ব্যভিচারী বংশ’ বলেছিলেন। (মথি ১১:১৬; ১২:৩৯, ৪৫; ১৬:৪; ১৭:১৭; ২৩:৩৬) তাই জৈতুন পর্বতে তিনি যখন আবার ‘এই বংশের’ বিষয়ে বলেছিলেন তখন তিনি পুরো ইতিহাসের সম্পূর্ণ যিহূদী জাতির কথা বলছিলেন না; কিংবা তিনি তাঁর শিষ্যদেরও বোঝাননি যদিও তারা “মনোনীত বংশ” ছিলেন। (১ পিতর ২:৯) আর যীশুর ‘এই বংশ’ একটা নির্দিষ্ট সময়কালকেও বোঝায়নি।
১৩ এর বদলে যীশু সেই সময়ের বিরোধী যিহূদীদের বোঝাতে চেয়েছিলেন, যারা তাঁর দেওয়া চিহ্নগুলোর পূর্ণতা দেখেছিল। লূক ২১:৩২ পদের ‘এই বংশের’ বিষয়ে বলতে গিয়ে অধ্যাপক যোয়েল বি. গ্রিন মন্তব্য করেন: “সুসমাচারের তৃতীয় বইটাতে ‘এই বংশ’ (ও এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বাক্যাংশ) সবসময়ই এক নির্দিষ্ট শ্রেণীর লোকেদের বুঝিয়েছে যারা ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের বিরোধিতা করেছিল। . . . এটা সেই লোকেদেরকে [বোঝায়] যারা একগুঁয়েভাবে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য থেকে সরে এসেছিল।”b
১৪. সেই ‘বংশ’ কী ভোগ করেছিল কিন্তু খ্রীষ্টানদের জন্য ফলাফল কীভাবে আলাদা হয়েছিল?
১৪ এই বিরোধী যিহূদীদের দুষ্ট বংশ যারা ওই চিহ্নকে পূর্ণ হতে দেখতে পেয়েছিল তারা যিহূদী ব্যবস্থার শেষও দেখেছিল। (মথি ২৪:৬, ১৩, ১৪) আর সত্যিই তাই হয়েছিল! সা.কা. ৭০ সালে রোমীয় সৈন্য সম্রাট ভেসপাসিয়ানের ছেলে টাইটাসের নেতৃত্বে ফিরে এসেছিলেন। ওই শহরে আটকে পড়া যিহূদীদের যা ভোগ করতে হয়েছিল আমরা তা কল্পনাও করতে পারি না।c প্রত্যক্ষদর্শী ফ্লেভিয়াস যোসেফাস বলেন যে রোমীয়রা যখন শহর তছনছ করে ফেলে সেই সময়ের মধ্যে প্রায় ১১,০০,০০০ যিহূদী মারা গিয়েছিল আর প্রায় ১,০০,০০০ লোককে বন্দি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, যাদের মধ্যে বেশিরভাগ লোকই না খেতে পেয়ে বা রোমীয়দের রঙ্গমঞ্চে খুব ভয়াবহভাবে মারা গিয়েছিল। সত্যিই, সা.কা. ৬৬-৭০ সালের ক্লেশ যিরূশালেম ও যিহূদী ব্যবস্থার জন্য সবচেয়ে বড় ক্লেশ ছিল যা এর আগে তারা কখনও ভোগ করেনি আর আজ পর্যন্ত সেখানে এমন ক্লেশ আর হয়নি। যীশুর ভবিষ্যতের জন্য দেওয়া সতর্কবাণীতে কান দিয়ে সা.কা. ৬৬ সালে রোমীয় সৈন্যরা ফিরে যাওয়ার পর যিরূশালেম ছেড়ে চলে যাওয়া খ্রীষ্টানদের জন্য ফলাফল কতই না আলাদা ছিল! সা.কা. ৭০ সালে অভিষিক্ত ‘মনোনীত’ খ্রীষ্টানেরা “রক্ষা” পেয়েছিলেন বা সুরক্ষিত ছিলেন।—মথি ২৪:১৬, ২২.
আরও একটা পূর্ণতা ঘটার ছিল
১৫. আমরা কীভাবে নিশ্চিত হতে পারি যে সা.কা. ৭০ সালের পরে যীশুর ভবিষ্যদ্বাণী আবারও বড় আকারে পরিপূর্ণ হবে?
১৫ কিন্তু সেটাই শেষ ছিল না। আগে, যীশু বলেছিলেন যে ওই শহর ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর তিনি যিহোবার নামে আসবেন। (মথি ২৩:৩৮, ৩৯; ২৪:২) তারপর জৈতুন পর্বতে বসে বলা তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীতে তিনি এই বিষয়টা আরও স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। আসন্ন “মহাক্লেশ” সম্পর্কে বলার পর তিনি বলেছিলেন যে পরে ভাক্ত খ্রীষ্টদের দেখা যাবে আর বেশ কিছু সময়ের জন্য যিরূশালেম অন্য জাতিদের দ্বারা পদদলিত হবে। (মথি ২৪:২১, ২৩-২৮; লূক ২১:২৪) তাই, এর চেয়েও বড় আর কোন পূর্ণতা কি ঘটার ছিল? ঘটনাগুলো দেখায় যে তা ঘটার ছিল। আমরা যখন প্রকাশিত বাক্য ৬:২-৮ (যা সা.কা. ৭০ সালে যিরূশালেমের ক্লেশের পরে লেখা হয়েছিল) পদের সঙ্গে মথি ২৪:৬-৮ এবং লূক ২১:১০, ১১ পদের তুলনা করি আমরা দেখতে পাই যে ভবিষ্যতে আরও বড় আকারে যুদ্ধ, খাদ্যের অভাব এবং মহামারি হবে। যীশুর এই বাক্যগুলো সেই ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বড় আকারে পূর্ণ হতে শুরু করেছে।
১৬-১৮. এখনও কী হওয়ার বাকি আছে বলে আমরা আশা করতে পারি?
১৬ বছরের পর বছর ধরে যিহোবার সাক্ষিরা শিখিয়ে এসেছেন যে আজকে চিহ্নের পরিপূর্ণতা প্রমাণ করে, “মহাক্লেশ” আসতে এখনও বাকি আছে। আজকের দুষ্ট ‘বংশ’ ওই ক্লেশ দেখতে পাবে। এর থেকে বোঝা যায় যে এবারেও আক্রমণের এক শুরুর পর্যায় (সমস্ত মিথ্যা ধর্মের ওপর আক্রমণ) থাকবে ঠিক যেমন সা.কা. ৬৬ সালে গ্যালাসের আক্রমণ যিরূশালেমে ক্লেশের শুরু করেছিল।d তারপর, এক অনির্দিষ্ট সময়ের পর শেষ আসবে যে শেষের মানে হবে সারা পৃথিবী জুড়ে ধ্বংস ঠিক যেমন সা.কা. ৭০ সালে হয়েছিল।
১৭ আমাদের সামনেই যে ক্লেশ রয়েছে সেই বিষয়ে উল্লেখ করতে গিয়ে যীশু বলেছিলেন: “আর সেই সময়ের ক্লেশের পরেই ‘সূর্য্য অন্ধকার হইবে, চন্দ্র জ্যোৎস্না দিবে না, আকাশ হইতে তারাগণের পতন হইবে ও আকাশমণ্ডলের পরাক্রম সকল বিচলিত হইবে’। আর তখন মনুষ্যপুত্ত্রের চিহ্ন আকাশে দেখা যাইবে, আর তখন পৃথিবীর সমুদয় গোষ্ঠী বিলাপ করিবে, এবং ‘মনুষ্যপুত্ত্রকে আকাশীয় মেঘরথে পরাক্রম ও মহা প্রতাপে আসিতে’ দেখিবে।”—মথি ২৪:২৯, ৩০.
১৮ তাই, যীশু নিজেই বলেছিলেন যে “সেই সময়ের ক্লেশের পরেই” আকাশে ভয়ংকর কিছু ঘটবে। (যোয়েল ২:২৮-৩২; ৩:১৫ পদগুলোর সঙ্গে তুলনা করুন।) অবাধ্য লোকেরা এতে এতই ভয় পেয়ে যাবে ও আঘাত পাবে যে তারা “বিলাপ করিবে।” অনেকের “ভয়ে, এবং ভূমণ্ডলে যাহা যাহা ঘটিবে তাহার আশঙ্কায়, . . . প্রাণ উড়িয়া যাইবে।” কিন্তু সত্য খ্রীষ্টানদের বেলায় তা ঘটবে না! তখন তারা ‘মাথা তুলিবে, কেননা তাহাদের মুক্তি সন্নিকট।’—লূক ২১:২৫, ২৬, ২৮.
সামনেই বিচার!
১৯. মেষ ও ছাগের দৃষ্টান্ত কখন পরিপূর্ণ হবে তা আমরা কীভাবে প্রমাণ করতে পারি?
১৯ লক্ষ্য করুন যে মথি ২৪:২৯-৩১ পদ আগে থেকে জানিয়েছিল যে (১) মনুষ্যপুত্র আসবেন, (২) তিনি মহাপ্রতাপে আসবেন, (৩) দূতেরা তাঁর সঙ্গে থাকবেন এবং (৪) পৃথিবীর সমস্ত গোষ্ঠী তাঁকে দেখতে পাবে। মেষ ও ছাগের দৃষ্টান্তে যীশু আবারও এই বিষয়গুলো বলেন। (মথি ২৫:৩১-৪৬) তাই আমরা বুঝতে পারি যে এই দৃষ্টান্তে যে সময়ের কথা বলা হয়েছে তা হবে মহাক্লেশ শুরু হওয়ার পর, যখন যীশু তাঁর দূতেদের সঙ্গে আসবেন ও বিচার করার জন্য সিংহাসনে বসবেন। (যোহন ৫:২২; প্রেরিত ১৭:৩১. ১ রাজাবলি ৭:৭; দানিয়েল ৭:১০, ১৩, ১৪, ২২, ২৬ এবং মথি ১৯:২৮ পদগুলোর সঙ্গে তুলনা করুন।) কিন্তু কারা বিচারিত হবেন আর এর ফল কী হবে? দৃষ্টান্তটা দেখায় যে সমস্ত জাতির দিকে যীশু তাঁর নজর দেবেন যেন তারা সবাই তাঁর স্বর্গীয় সিংহাসনের সামনে জমা হয়েছে।
২০, ২১. (ক) যীশুর দৃষ্টান্তের মেষদের কী হবে? (খ) ছাগেরা ভবিষ্যতে কী অভিজ্ঞতা করবে?
২০ মেষতুল্য নারী-পুরুষেরা যাদের ওপর যীশুর অনুগ্রহ আছে তাদের ডান দিকে আলাদা করা হবে। কেন? কারণ তারা তাঁর ভাইদের—অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের যারা খ্রীষ্টের স্বর্গীয় রাজ্যে তাঁর সঙ্গে রাজত্ব করবেন, তাদের জন্য ভাল কাজ করার সব সুযোগকে কাজে লাগিয়েছিলেন। (দানিয়েল ৭:২৭; ইব্রীয় ২:৯–৩:১) ওই দৃষ্টান্তের সঙ্গে মিল রেখে লক্ষ লক্ষ মেষতুল্য খ্রীষ্টানেরা যীশুর আধ্যাত্মিক ভাইদের চিনেছেন ও তাদের সঙ্গে কাজ করে তাদের সহায়তা করে চলেছেন। ফলে, এই বিরাট জনতার “মহাক্লেশের” মধ্যে দিয়ে জীবিত পার হওয়ার এবং পৃথিবীতে ঈশ্বরের রাজ্য অর্থাৎ পরমদেশে চিরকাল বেঁচে থাকার বিষয়ে বাইবেল ভিত্তিক আশা রয়েছে।—প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১৪; ২১:৩, ৪; যোহন ১০:১৬.
২১ ছাগদের পরিণতি কতই না অন্যরকম হবে! মথি ২৪:৩০ পদ তাদের বিষয়ে বলে যে যখন যীশু আসবেন তখন ‘তারা বিলাপ করিবে।’ আর কেনই বা তারা বিলাপ করবে না কারণ সাক্ষ্যপ্রমাণ দেখায় যে তারা রাজ্যের সুসমাচারকে অবজ্ঞা করেছে, যীশুর শিষ্যদের বিরোধিতা করেছে আর এই জগৎকে পছন্দ করেছে যা বয়ে চলেছে। (মথি ১০:১৬-১৮; ১ যোহন ২:১৫-১৭) পৃথিবীতে তাঁর কোন শিষ্য নয় কিন্তু স্বয়ং যীশু স্থির করবেন যে কারা ছাগ। তাদের বিষয়ে তিনি বলেন: “ইহারা অনন্ত দণ্ডে . . . প্রবেশ করিবে।”—মথি ২৫:৪৬.
২২. যীশুর ভবিষ্যদ্বাণীর কোন্ অংশটায় আমাদের আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া দরকার?
২২ মথি ২৪ ও ২৫ অধ্যায়ের ভবিষ্যদ্বাণী বোঝার বিষয়টা আমাদের জন্য খুবই রোমাঞ্চকর হয়ে এসেছে। কিন্তু, যীশুর ভবিষ্যদ্বাণীর আরেকটা অংশ রয়েছে যাতে আমাদের আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া দরকার আর সেটা হল ‘ধ্বংসের ঘৃণার্হ বস্তু . . . যাহা পবিত্র স্থানে দাঁড়াইয়া আছে।’ যীশু তাঁর অনুগামীদের এই বিষয়টা বুঝতে ও কাজ করার জন্য তৈরি থাকতে বলেছিলেন। (মথি ২৪:১৫, ১৬) এই “ঘৃণার্হ বস্তু” আসলে কী? কখন এটা পবিত্র স্থানে দাঁড়ায়? আর আমাদের আজকের ও ভবিষ্যৎ জীবন কীভাবে এর সঙ্গে জুড়ে আছে? পরের প্রবন্ধে এই বিষয়গুলো আলোচনা করা হবে।
[পাদটীকাগুলো]
a ১৯৯৪ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি; ১৯৯৫ সালের ১৫ই অক্টোবর ও ১লা নভেম্বর এবং ১৯৯৬ সালের ১৫ই আগস্ট সংখ্যার প্রহরীদুর্গ পত্রিকার অধ্যয়ন প্রবন্ধগুলো দেখুন।
b ব্রিটিশ পণ্ডিত জি. আর. বিসলে-মুরে বলেন: “‘এই বংশ’ বাক্যাংশটা অনুবাদকদের জন্য কোন সমস্যা সৃষ্টি করার কথা নয়। প্রথম দিকের গ্রিক ভাষায় জেনিয়া-র মানে ছিল জন্ম, বংশধর আর তাই জাতি, . . . [গ্রিক সেপটুয়াজিন্ট-এ] ইব্রীয় শব্দ ডর-কে প্রায়ই যুগ, মানবজাতির আয়ু অথবা সমকালীন লোকেদের বোঝাতে বংশ হিসাবে অনুবাদ করা হয়েছে। . . . যীশুর কথা থেকে মনে হয় যে শব্দটার দুরকম অর্থ আছে: একদিকে এটা যীশুর সমকালীন লোকেদের বুঝিয়েছিল আর অন্যদিকে এটা সবসময় পরোক্ষ সমালোচনাকে বোঝায়।”
c যিহূদীদের ইতিহাস বইয়ে অধ্যাপক গ্রেটস বলেন যে কোন কোন সময়ে রোমীয়রা একদিনে ৫০০ জন কয়েদিকে ফাঁসি দিতেন। অন্যান্য যিহূদী বন্দিদের হাত কেটে তাদেরকে আবার সেই শহরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেখানকার অবস্থা কেমন ছিল? “টাকা অচল হয়ে যাওয়ার ফলে তা দিয়ে খাবার কেনা যেত না। রাস্তায় রাস্তায় লোকেরা খুবই নোংরা ও পচা খাবার, এক মুঠো খড়, এক টুকরো চামড়া অথবা কুকুরের খাবার নিয়ে ঝগড়া করত। . . . কবর দিতে না পারায় দিনে দিনে মৃতদেহের সংখ্যা বেড়ে চলেছিল আর সেগুলো পচে সেখানকার গ্রীষ্মকালের আবহাওয়াকে দূষিত করে তুলেছিল আর লোকেরা রোগ, দুর্ভিক্ষ ও অস্ত্রের শিকার হয়েছিল।”
d পরের প্রবন্ধে ভবিষ্যতের ক্লেশের বিষয় আলোচনা করা হয়েছে।
আপনি কি মনে করতে পারেন?
◻ মথি ২৪:৪-১৪ পদ প্রথম শতাব্দীতে কীভাবে পরিপূর্ণ হয়েছিল?
◻ মথি ২৪:২১, ২২ পদের ভাববাণী অনুযায়ী প্রেরিতদের দিনে কীভাবে সময় কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং প্রাণী রক্ষা পেয়েছিল?
◻ মথি ২৪:৩৪ পদে লেখা ‘বংশের’ বৈশিষ্ট্য কী ছিল?
◻ জৈতুন পর্বতে দেওয়া ভবিষ্যদ্বাণীর বিষয়ে আমরা কীভাবে জানতে পারি যে এটার আরেকটা বড় পরিপূর্ণতা রয়েছে?
◻ মেষ ও ছাগের দৃষ্টান্ত কখন ও কীভাবে পূর্ণ হবে?
[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]
রোমের আর্চ অফ টাইটাসের একটা অংশ যেখানে যিরূশালেমের ধ্বংস থেকে বেঁচে যাওয়া দাসেদের দেখানো হয়েছে
[সজন্যে]
Soprintendenza Archeologica di Roma