যখন যীশু রাজ্যের প্রতাপে আসেন
“যাহারা এখানে দাঁড়াইয়া রহিয়াছে, তাহাদের মধ্যে . . . কয়েক জন . . . কোন মতে মৃত্যুর আস্বাদ পাইবে না, যে পর্য্যন্ত মনুষ্যপুত্ত্রকে আপনার রাজ্যে আসিতে না দেখিবে।”—মথি ১৬:২৮.
১, ২. সা.কা. ৩২ সালের পঞ্চাশত্তমীর অল্প কিছুদিন পর কী ঘটে এবং সেই ঘটনার উদ্দেশ্য কী ছিল?
যীশু খ্রীষ্টের তিনজন প্রেরিত, সা.কা. ৩২ সালে পঞ্চাশত্তমীর অল্প কিছুদিন পর, এক স্মরণীয় দর্শন দেখেছিলেন। অনুপ্রাণিত বিবরণ অনুসারে, “যীশু পিতর, যাকোব ও তাঁহার ভ্রাতা যোহনকে সঙ্গে করিয়া বিরলে এক উচ্চ পর্ব্বতে লইয়া গেলেন। পরে তিনি তাঁহাদের সাক্ষাতে রূপান্তরিত হইলেন।”—মথি ১৭:১, ২.
২ রূপান্তরের দর্শনটি এক সংকটপূর্ণ সময়ে ঘটেছিল। যীশু তাঁর অনুগামীদের বলতে শুরু করেছিলেন যে তিনি যিরূশালেমে দুঃখভোগ ও মৃত্যুবরণ করতে যাচ্ছেন, কিন্তু তারা তাঁর বাক্যগুলি উপলব্ধি করা কঠিন বলে মনে করেছিল। (মথি ১৬:২১-২৩) সেই দর্শনটি তাঁর আগত মৃত্যু এবং সেই সাথে কঠোর পরিশ্রম ও পরীক্ষার বছরগুলি যা খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী ভোগ করবে, সেই সম্বন্ধে যীশুর তিনজন প্রেরিতের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করেছিল। বর্তমানে, সেই দর্শন থেকে আমরা কি কিছু শিখতে পারি? হ্যাঁ, কারণ এটি যা পূর্বাভাস দিয়েছিল, তা প্রকৃতপক্ষে আমাদের সময়ে ঘটে।
৩, ৪. (ক) রূপান্তরের ছয় দিন পূর্বে যীশু কী বলেছিলেন? (খ) রূপান্তরের সময়ে যা ঘটেছিল, তা বর্ণনা করুন।
৩ রূপান্তরের ছয় দিন পূর্বে যীশু তাঁর অনুগামীদের বলেছিলেন: “মনুষ্যপুত্ত্র আপন দূতগণের সহিত আপন পিতার প্রতাপে আসিবেন, আর তখন প্রত্যেক ব্যক্তিকে তাহার ক্রিয়ানুসারে প্রতিফল দিবেন।” এই বাক্যগুলি “যুগান্তের” সময়ে পরিপূর্ণ হবে। যীশু আরও বলেছিলেন: “আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, যাহারা এখানে দাঁড়াইয়া রহিয়াছে, তাহাদের মধ্যে এমন কয়েক জন আছে, যাহারা কোন মতে মৃত্যুর আস্বাদ পাইবে না, যে পর্য্যন্ত মনুষ্যপুত্ত্রকে আপনার রাজ্যে আসিতে না দেখিবে।” (মথি ১৬:২৭, ২৮; ২৪:৩; ২৫:৩১-৩৪, ৪১; দানিয়েল ১২:৪) এই পরবর্তী বাক্যগুলির পরিপূর্ণতাস্বরূপ রূপান্তর ঘটেছিল।
৪ সেই তিনজন প্রেরিত ঠিক কী দেখেছিলেন? সেই ঘটনাটি সম্বন্ধে লূকের বর্ণনা এইরকম: “[যীশু] প্রার্থনা করিতেছেন, এমন সময়ে তাঁহার মুখের দৃশ্য অন্যরূপ হইল, এবং তাঁহার বস্ত্র শুভ্র ও চাক্চক্যময় হইল। আর দেখ, দুই জন পুরুষ তাঁহার সহিত কথোপকথন করিতে লাগিলেন; তাঁহারা মোশি ও এলিয়; তাঁহারা সপ্রতাপে দেখা দিয়া, তাঁহার সেই যাত্রার বিষয় কথা কহিতে লাগিলেন, যাহা তিনি যিরূশালেমে সমাপন করিতে উদ্যত ছিলেন।” তারপর “একখানি মেঘ আসিয়া [প্রেরিতদিগকে] ছায়া করিল; তাহাতে তাঁহারা সেই মেঘে প্রবেশ করিলে ইহাঁরা ভীত হইলেন। আর সেই মেঘ হইতে এই বাণী হইল, ইনিই আমার পুত্ত্র, আমার মনোনীত, ইহাঁর কথা শুন।”—লূক ৯:২৯-৩১, ৩৪, ৩৫.
বিশ্বাস শক্তিশালী হয়
৫. রূপান্তর প্রেরিত পিতরের উপর কোন্ প্রভাব নিয়ে আসে?
৫ প্রেরিত পিতর ইতিমধ্যেই যীশুকে “খ্রীষ্ট, জীবন্ত ঈশ্বরের পুত্ত্র” হিসাবে শনাক্ত করেছিলেন। (মথি ১৬:১৬) স্বর্গ থেকে যিহোবার বাক্যগুলি সেই শনাক্তিকে নিশ্চিত করেছিল আর যীশুর রূপান্তরের দর্শনটি ছিল, মানবজাতিকে চূড়ান্তভাবে বিচার করার জন্য রাজ্যের ক্ষমতায় ও প্রতাপে খ্রীষ্টের আগমনের পূর্বাভাস। রূপান্তরের ৩০ বছরেরও বেশি সময় পরে পিতর লিখেছিলেন: “আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের পরাক্রম ও আগমনের বিষয় যখন তোমাদিগকে জ্ঞাত করিয়াছিলাম, তখন আমরা কৌশল-কল্পিত গল্পের অনুগামী হই নাই, কিন্তু তাঁহার মহিমার চাক্ষুষ সাক্ষী হইয়াছিলাম। ফলতঃ তিনি পিতা ঈশ্বর হইতে সমাদর ও গৌরব পাইয়াছিলেন, সেই মহিমাযুক্ত প্রতাপ কর্ত্তৃক তাঁহার কাছে এই বাণী উপনীত হইয়াছিল, ‘ইনিই আমার পুত্ত্র, আমার প্রিয়তম, ইহাঁতেই আমি প্রীত।’ আর স্বর্গ হইতে উপনীত সেই বাণী আমরাই শুনিয়াছি, যখন তাঁহার সঙ্গে পবিত্র পর্ব্বতে ছিলাম।”—২ পিতর ১:১৬-১৮; ১ পিতর ৪:১৭.
৬. রূপান্তরের পর ঘটনাগুলি কিভাবে ঘটেছিল?
৬ সেই তিনজন প্রেরিত যা দেখেছিলেন তা বর্তমানে আমাদের বিশ্বাসকেও শক্তিশালী করে। অবশ্যই, সা.কা. ৩২ সাল থেকে ঘটনাগুলি ঘটে চলেছে। এর পরের বছর, যীশু মৃত্যুবরণ করেন এবং পুনরুত্থিত হয়ে তাঁর পিতার দক্ষিণ দিকে অধিষ্ঠিত হন। (প্রেরিত ২:২৯-৩৬) সেই বছর পঞ্চাশত্তমীর দিনে, নতুন “ঈশ্বরের ইস্রায়েলের” জন্ম হয় এবং যিরূশালেম থেকে শুরু হয়ে পরবর্তীকালে পৃথিবীর প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত এক প্রচার অভিযান শুরু হয়। (গালাতীয় ৬:১৬; প্রেরিত ১:৮) এর ঠিক পরেই যীশুর অনুগামীদের বিশ্বাস পরীক্ষিত হয়েছিল। প্রচার বন্ধ করতে অস্বীকার করায় প্রেরিতদের গ্রেপ্তার এবং প্রচণ্ডভাবে প্রহার করা হয়। এরপরেই স্তিফানকে হত্যা করা হয়। তারপর রূপান্তরের চাক্ষুষ সাক্ষী, যাকোবকে হত্যা করা হয়। (প্রেরিত ৫:১৭-৪০; ৬:৮-৭:৬০; ১২:১, ২) কিন্তু, পিতর এবং যোহন যিহোবাকে বিশ্বস্তভাবে সেবা করতে আরও অনেক বছর বেঁচে ছিলেন। বাস্তবিকপক্ষে, সা.কা. প্রথম শতাব্দীর শেষের দিকে, যোহন যীশুর স্বর্গীয় প্রতাপের আরও দর্শনীয় আভাস লিপিবদ্ধ করেছিলেন।—প্রকাশিত বাক্য ১:১২-২০; ১৪:১৪; ১৯:১১-১৬.
৭. (ক) রূপান্তরের দর্শনটি কখন পরিপূর্ণ হতে আরম্ভ করেছে? (খ) কখন যীশু কিছু লোকেদের তাদের ক্রিয়ানুসারে প্রতিফল দিয়েছিলেন?
৭ ১৯১৪ সালে, “প্রভুর দিনে”-র শুরু থেকে যোহনের দেখা অনেক দর্শনগুলি পরিপূর্ণ হয়ে আসছে। (প্রকাশিত বাক্য ১:১০) রূপান্তরের মাধ্যমে পূর্বাভাসকৃত যীশুর ‘আপন পিতার প্রতাপে আসা’ সম্বন্ধে কী? ১৯১৪ সালে ঈশ্বরের স্বর্গীয় রাজ্যের জন্মের সময়ে এই দর্শন পরিপূর্ণ হতে আরম্ভ করেছে। সিংহাসনে অধিষ্ঠিত নতুন রাজা হিসাবে যীশু যখন একটি প্রভাতীয় তারার ন্যায় নিখিল বিশ্বে উদিত হন, তখন সেটি ছিল যেন একটি নতুন দিনের আরম্ভ। (২ পিতর ১:১৯; প্রকাশিত বাক্য ১১:১৫; ২২:১৬) সেই সময়ে কি যীশু, কিছু ব্যক্তিকে তাদের ক্রিয়ানুসারে প্রতিফল দিয়েছিলেন? হ্যাঁ। জোরালো প্রমাণ রয়েছে যে সেই সময়ের অল্প কিছু পরেই, অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের স্বর্গীয় পুনরুত্থান শুরু হয়েছিল।—২ তীমথিয় ৪:৮; প্রকাশিত বাক্য ১৪:১৩.
৮. কোন্ ঘটনাগুলি রূপান্তরের দর্শনের সর্বোচ্চ পরিপূর্ণতা চিহ্নিত করবে?
৮ কিন্তু শীঘ্রই, যীশু সমগ্র মানবজাতিকে বিচার করার জন্য “সমুদয় দূত সঙ্গে করিয়া আপন প্রতাপে” আসবেন। (মথি ২৫:৩১) সেই সময়ে, তিনি নিজে তাঁর সমস্ত মহিমাময় প্রতাপ প্রকাশ করবেন এবং “প্রত্যেক ব্যক্তিকে” তার ক্রিয়ানুসারে সমুচিত প্রতিফল দেবেন। মেষতুল্য ব্যক্তিরা, তাদের জন্য প্রস্তুতকৃত রাজ্যে অনন্ত জীবনের উত্তরাধিকারী হবে এবং ছাগতুল্য ব্যক্তিরা “অনন্ত দণ্ডে” প্রবেশ করবে। রূপান্তরের দর্শনের পরিপূর্ণতার কী এক চমৎকার উপসংহারই না হবে!—মথি ২৫:৩৪, ৪১, ৪৬; মার্ক ৮:৩৮; ২ থিষলনীকীয় ১:৬-১০.
যীশুর প্রতাপান্বিত সহযোগীরা
৯. আমাদের কি আশা করা উচিত যে রূপান্তরের দর্শনের পরিপূর্ণতায় মোশি এবং এলিয় থাকবেন? ব্যাখ্যা করুন।
৯ রূপান্তরে যীশু একা ছিলেন না। তাঁর সাথে মোশি এবং এলিয়কে দেখা গিয়েছিল। (মথি ১৭:২, ৩) তারা কি আক্ষরিকভাবে উপস্থিত ছিলেন? না, কারণ উভয়েই বহু পূর্বে মারা গিয়েছিলেন এবং এক পুনরুত্থানের অপেক্ষায় পাতালে নিদ্রাগত ছিলেন। (উপদেশক ৯:৫, ১০; ইব্রীয় ১১:৩৫) যীশু যখন স্বর্গীয় প্রতাপে আসবেন, তারা কি তাঁর সাথে আবির্ভূত হবেন? না, কারণ মোশি এবং এলিয় মানুষদের জন্য স্বর্গীয় আশা উন্মুক্ত হওয়ার পূর্বে জীবিত ছিলেন। তারা “ধার্ম্মিক . . . লোকের পুনরুত্থান” হিসাবে পার্থিব পুনরুত্থানের অংশী হবেন। (প্রেরিত ২৪:১৫) অতএব, রূপান্তরের দর্শনে তাদের আবির্ভাব হল রূপক। কোন্ বিষয়ে?
১০, ১১. বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোশি ও এলিয় কাদের চিত্রিত করেন?
১০ অন্য কয়েকটি ক্ষেত্রে মোশি এবং এলিয় ভাববাণীমূলক চরিত্র। নিয়মচুক্তির মধ্যস্থ হিসাবে মোশি, নতুন চুক্তির মধ্যস্থ যীশুর পূর্বাভাসস্বরূপ ছিলেন। (দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:১৮; গালাতীয় ৩:১৯; ইব্রীয় ৮:৬) এলিয়, মশীহের একজন অগ্রদূত, যোহন বাপ্তাইজকের পূর্বাভাস ছিলেন। (মথি ১৭:১১-১৩) এছাড়া, প্রকাশিত বাক্য ১১ অধ্যায়ের বর্ণনার পরিপ্রেক্ষিতে, মোশি এবং এলিয় শেষকালে অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশের পূর্বাভাসস্বরূপ ছিলেন। আমরা কিভাবে তা জানি?
১১ প্রকাশিত বাক্য ১১:১-৬ পদ খুলুন। ৩ পদে আমরা পড়ি: “আমি আপনার দুই সাক্ষীকে কার্য্য দিব, তাঁহারা চটপরিহিত হইয়া এক সহস্র দুই শত ষাট দিন পর্য্যন্ত ভাববাণী বলিবেন।” এই ভবিষ্যদ্বাণীটি ১ম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের অবশিষ্টাংশের উপরে পরিপূর্ণ হয়েছিল।a দুইজন সাক্ষী কেন? কারণ অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশেরা আধ্যাত্মিক উপায়ে কার্য সম্পাদন করেন, যা মোশি এবং এলিয়ের কাজের অনুরূপ। ৫ এবং ৬ পদ আরও বলে চলে: “যদি কেহ [দুই সাক্ষীর] হানি করিতে চায়, তবে তাঁহাদের মুখ হইতে অগ্নি বাহির হইয়া তাঁহাদের শত্রুগণকে গ্রাস করে; যদি কেহ তাঁহাদের হানি করিতে চায়, তবে সেইরূপে তাহাকে হত হইতে হইবে। আকাশ রুদ্ধ করিতে তাঁহাদের ক্ষমতা আছে, যেন তাঁহাদের ভাববাণী কথনের সমস্ত দিন বৃষ্টি না হয়; এবং জল রক্ত করিবার জন্য জলের উপরে ক্ষমতা, এবং যত বার ইচ্ছা করেন পৃথিবীকে সমস্ত আঘাতে আঘাত করিবার ক্ষমতা তাঁহাদের আছে।” এইভাবে, আমাদের এলিয় এবং মোশির দ্বারা সম্পাদিত অলৌকিক কাজগুলির কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়।—গণনাপুস্তক ১৬:৩১-৩৪; ১ রাজাবলি ১৭:১; ২ রাজাবলি ১:৯-১২.
১২. রূপান্তরের ঘটনায় মোশি ও এলিয় কাদের চিত্রিত করেন?
১২ তাহলে, রূপান্তরের প্রেক্ষাপটে মোশি এবং এলিয় কাদের পূর্বাভাস দেন? লূক বলেন যে তারা “সপ্রতাপে” যীশুর সাথে আবির্ভূত হয়েছিলেন। (লূক ৯:৩১) স্পষ্টভাবে, তারা সেই খ্রীষ্টানদের পূর্বাভাস দেন যারা যীশুর সাথে “সহদায়াদ” হিসাবে পবিত্র আত্মার দ্বারা অভিষিক্ত হয়েছেন এবং যারা এর মাধ্যমে ‘তাঁহার সহিত প্রতাপান্বিত’ হওয়ার চমৎকার আশাও লাভ করেছেন। (রোমীয় ৮:১৭) যীশু যখন “প্রত্যেক ব্যক্তিকে তাহার ক্রিয়ানুসারে প্রতিফল” দেওয়ার জন্য রাজ্যের প্রতাপে আসবেন, পুনরুত্থিত অভিষিক্ত জনেরা তাঁর সাথে থাকবেন।—মথি ১৬:২৭.
মোশি এবং এলিয়ের মত সাক্ষীরা
১৩. কোন্ বৈশিষ্ট্যগুলি মোশি এবং এলিয়কে যীশুর সাথে তাঁর প্রতাপান্বিত অভিষিক্ত সহদায়াদদের ভাববাণীমূলক চিত্র হিসাবে যথার্থভাবে চিহ্নিত করে?
১৩ আরও উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেগুলি মোশি এবং এলিয়কে যীশুর অভিষিক্ত সহদায়াদদের ভবিষ্যদ্বাণীমূলক চিত্র হিসাবে যথার্থভাবে চিহ্নিত করে। মোশি এবং এলিয় উভয়েই অনেক বছর ধরে যিহোবার মুখপাত্র হিসাবে সেবা করেছিলেন। উভয়েই শাসকের ক্রোধের সম্মুখীন হয়েছিলেন। প্রয়োজনের সময়ে উভয়েই বিদেশী পরিবারের কাছ থেকে সাহায্য পেয়েছিলেন। উভয়েই সাহসের সাথে রাজাদের সম্মুখে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন এবং মিথ্যা ভাববাদীদের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছিলেন। মোশি এবং এলিয় উভয়েই সীনয় পর্বতে (যেটিকে হোরেব পর্বতও বলা হয়) যিহোবার শক্তির নমুনাগুলি দেখেছিলেন। উভয়েই যর্দনের পূর্বাঞ্চলে উত্তরাধিকারী নিযুক্ত করেছিলেন। আর মোশি (যিহোশূয়ের সাথে) এবং এলিয় (ইলীশায়ের সাথে) উভয়ের সময়েই, যীশুর জীবনকালে যেগুলি ঘটেছিল তা ব্যতিরেকে সর্বাধিক সংখ্যক অলৌকিক কাজগুলি ঘটেছিল।b
১৪. মোশি এবং এলিয়ের মত, অভিষিক্তেরা কিভাবে যিহোবার মুখপাত্র হিসাবে কাজ করেছেন?
১৪ এই সমস্ত কি আমাদের ঈশ্বরের ইস্রায়েলকে স্মরণ করিয়ে দেয় না? হ্যাঁ, অবশ্যই। যীশু তাঁর বিশ্বস্ত অনুগামীদের বলেছিলেন: “অতএব তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর; পিতার ও পুত্ত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে তাহাদিগকে বাপ্তাইজ কর; আমি তোমাদিগকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিয়াছি সে সমস্ত পালন করিতে তাহাদিগকে শিক্ষা দেও। আর দেখ, আমিই যুগান্ত পর্য্যন্ত প্রতিদিন তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি।” (মথি ২৮:১৯, ২০) এই বাক্যগুলির বাধ্য হয়ে, অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিন থেকে এখন পর্যন্ত যিহোবার মুখপাত্র হিসাবে সেবা করে আসছেন। মোশি এবং এলিয়ের মত তারা শাসকদের ক্রোধের সম্মুখীন হয়েছেন এবং তাদের কাছে সাক্ষ্য দিয়েছেন। যীশু তাঁর ১২ জন প্রেরিতকে বলেছিলেন: “আমার জন্য তোমরা দেশাধ্যক্ষ ও রাজাদের সম্মুখে, তাহাদের ও পরজাতিগণের কাছে সাক্ষ্য দিবার জন্য, নীত হইবে।” (মথি ১০:১৮) খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর ইতিহাসে তাঁর বাক্যগুলি বারংবার পরিপূর্ণ হয়ে এসেছে।—প্রেরিত ২৫:৬, ১১, ১২, ২৪-২৭; ২৬:৩.
১৫, ১৬. একদিকে অভিষিক্ত জনেরা এবং অপরদিকে মোশি ও এলিয়ের মধ্যে কোন্ সাদৃশ্য রয়েছে (ক) তাদের নির্ভীকভাবে সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে? (খ) ন-ইস্রায়েলীয়দের কাছ থেকে সাহায্য পাওয়ার ক্ষেত্রে?
১৫ এছাড়া, অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা ধর্মীয় মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে, মোশি এবং এলিয়ের মত নির্ভীক হয়ে এসেছেন। স্মরণ করুন পৌল কিভাবে যিহূদী ভাক্ত ভাববাদী বর-যীশুকে প্রকাশ্যে ভর্ৎসনা করেছিলেন এবং কৌশলতার সাথে অথচ দৃঢ়ভাবে আথীনীয় দেবতাদের ভণ্ডামিকে প্রকাশ করে দিয়েছিলেন। (প্রেরিত ১৩:৬-১২; ১৭:১৬, ২২-৩১) আরও স্মরণ করুন যে, আধুনিক সময়ে, অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশেরা সাহসের সাথে খ্রীষ্টীয় জগৎকে উন্মোচিত করেছেন এবং এইধরনের সাক্ষ্য তাকে আঘাত করেছে।—প্রকাশিত বাক্য ৮:৭-১২.c
১৬ মোশি যখন ফরৌণের ক্রোধ থেকে পলায়ন করেছিলেন, তিনি একজন ন-ইস্রায়েলীয়, রূয়েল যাকে যিথ্রোও বলা হয়, তার গৃহে আশ্রয় পেয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে, মোশি রূয়েলের কাছ থেকে মূল্যবান সাংগঠনিক পরামর্শ পেয়েছিলেন, যার পুত্র হোবব প্রান্তরে ইস্রায়েলকে পরিচালিত করেছিলেন।d (যাত্রাপুস্তক ২:১৫-২২; ১৮:৫-২৭; গণনাপুস্তক ১০:২৯) ঈশ্বরের ইস্রায়েলের সদস্যেরা কি অনুরূপভাবে, যারা ঈশ্বরের ইস্রায়েলের অভিষিক্ত সদস্য নন, তাদের কাছ থেকে সাহায্য পেয়েছেন? হ্যাঁ, তারা “অপর মেষ” এর “বিস্তর লোক”-দের দ্বারা সাহায্য পেয়ে আসছেন যারা এই শেষকালে দৃশ্যপটে আবির্ভূত হয়েছেন। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯; যোহন ১০:১৬; যিশাইয় ৬১:৫) তাঁর অভিষিক্ত ভাইয়েদের প্রতি এই “মেষ”-রা যে উষ্ণ, প্রেমময় সমর্থন জানাবেন সেই সম্বন্ধে ভাববাণী করতে গিয়ে, যীশু ভবিষ্যদ্বাণীমূলকভাবে তাদের বলেছিলেন: “আমি ক্ষুধিত হইয়াছিলাম, আর তোমরা আমাকে আহার দিয়াছিলে; পিপাসিত হইয়াছিলাম, আর আমাকে পান করাইয়াছিলে; অতিথি হইয়াছিলাম, আর আমাকে আশ্রয় দিয়াছিলে; বস্ত্রহীন হইয়াছিলাম, আর আমাকে বস্ত্র পরাইয়াছিলে; পীড়িত হইয়াছিলাম, আর আমার তত্ত্বাবধান করিয়াছিলে; কারাগারস্থ হইয়াছিলাম, আর আমার নিকটে আসিয়াছিলে। . . . আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, আমার এই ভ্রাতৃগণের—এই ক্ষুদ্রতমদিগের—মধ্যে এক জনের প্রতি যখন ইহা করিয়াছিলে, তখন আমারই প্রতি করিয়াছিলে।”—মথি ২৫:৩৫-৪০.
১৭. হোরেব পর্বতে এলিয়ের মত, অভিষিক্তদের কিভাবে অনুরূপ অভিজ্ঞতা হয়েছিল?
১৭ এছাড়া, ঈশ্বরের ইস্রায়েলেরও, হোরেব পর্বতে এলিয়ের মত তুলনামূলক একটি অভিজ্ঞতা ছিল।e এলিয়ের মত যে সময় সে রাণী ঈষেবলের কাছ থেকে পলায়ন করছিলেন, শঙ্কিত অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশেরাও ১ম বিশ্বযুদ্ধের শেষে মনে করেছিলেন যে তাদের কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। তারপরে, এলিয়ের মত, তাদের ঈশ্বরের সাথে এক যোগাযোগ হয়েছিল, যিনি সেই সংগঠনগুলির বিচার করতে এসেছিলেন যারা ‘ঈশ্বরের গৃহ’ বলে দাবি করেছিল। (১ পিতর ৪:১৭; মালাখি ৩:১-৩) যখন খ্রীষ্টীয় জগৎকে যথাযোগ্য অবস্থায় পাওয়া যায়নি তখন অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশেরা “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস” হিসাবে শনাক্তিকৃত হয়েছিলেন এবং যীশুর সমস্ত পার্থিব উত্তরাধিকারীদের উপর নিযুক্ত হয়েছিলেন। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) হোরেবে, এলিয় “ঈষৎ শব্দকারী ক্ষুদ্র এক স্বর” শুনতে পেয়েছিলেন, যা যিহোবার স্বর হিসাবে প্রমাণিত হয়েছিল, যেটি তাকে সম্পন্ন করার জন্য আরও কাজ দিয়েছিল। যুদ্ধোত্তর উদ্বেগহীন বছরগুলিতে, যিহোবার বিশ্বস্ত অভিষিক্ত দাসেরা বাইবেলের পৃষ্ঠাগুলি থেকে তাঁর স্বর শুনেছিলেন। তারাও উপলব্ধি করেছিলেন যে, সম্পন্ন করার জন্য তাদের একটি দায়িত্ব রয়েছে।—১ রাজাবলি ১৯:৪, ৯-১৮; প্রকাশিত বাক্য ১১:৭-১৩.
১৮. যিহোবার ক্ষমতার উল্লেখযোগ্য প্রকাশ কিভাবে ঈশ্বরের ইস্রায়েলের মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছে?
১৮ অবশেষে, যিহোবার ক্ষমতার উল্লেখযোগ্য প্রকাশ কি ঈশ্বরের ইস্রায়েলের দ্বারা পরিচালিত হয়েছে? যীশুর মৃত্যুর পরে, প্রেরিতেরা অনেক অলৌকিক কাজ সম্পাদন করেছিলেন, কিন্তু সেগুলি ক্রমান্বয়ে হ্রাস পায়। (১ করিন্থীয় ১৩:৮-১৩) আজকের দিনে, আমরা আক্ষরিক অর্থে অলৌকিক কাজগুলি দেখি না। অপরপক্ষে, যীশু তাঁর অনুগামীদের বলেছিলেন: “সত্য, সত্য, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, যে আমাতে বিশ্বাস করে, আমি যে সকল কার্য্য করিতেছি, সেও করিবে, এমন কি, এ সকল হইতেও বড় বড় কার্য্য করিবে।” (যোহন ১৪:১২) এর প্রাথমিক পরিপূর্ণতা হয়েছিল তখন, যখন যীশুর শিষ্যেরা প্রথম শতাব্দীতে রোমীয় সাম্রাজ্যের সর্বত্র সুসমাচার প্রচার করেছিলেন। (রোমীয় ১০:১৮) আর এমনকি এর থেকেও বৃহত্তর কার্য বর্তমানে সম্পন্ন হয়ে চলেছে যখন অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশেরা অগ্রভাগে থেকে “সর্ব্ব জাতির কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত” রাজ্যের সুসমাচার “সমুদয় জগতে” প্রচার করছেন। (মথি ২৪:১৪) ফলাফল কী হয়েছে? ইতিহাসে, বিংশ শতাব্দী যিহোবার সর্বাধিক সংখ্যক উৎসর্গীকৃত বিশ্বস্ত দাসেদের একত্রীকরণের সাক্ষ্য বহন করেছে। (প্রকাশিত বাক্য ৫:৯, ১০; ৭:৯, ১০) যিহোবার ক্ষমতার কতই না বিস্ময়কর প্রমাণ!—যিশাইয় ৬০:২২.
যীশুর ভাইয়েরা প্রতাপে আসেন
১৯. যীশুর অভিষিক্ত ভাইয়েদের কখন তাঁর সাথে প্রতাপে দেখা গিয়েছে?
১৯ যীশুর অভিষিক্ত ভাইয়েদের অবশিষ্টাংশেরা যখন তাদের পার্থিব পরিচর্যা সম্পূর্ণ করেন, তারা তাঁর সাথে প্রতাপান্বিত হন। (রোমীয় ২:৬, ৭; ১ করিন্থীয় ১৫:৫৩; ১ থিষলনীকীয় ৪:১৪, ১৭) এইভাবে তারা স্বর্গীয় রাজ্যে অমর রাজা এবং যাজক হয়ে ওঠেন। যীশুর সাথে তারা তখন “লৌহদণ্ড দ্বারা তাহাদিগকে এমনি শাসন করিবে যে, কুম্ভকারের মৃৎপাত্রের ন্যায় চুরমার হইয়া যাইবে।” (প্রকাশিত বাক্য ২:২৭; ২০:৪-৬; গীতসংহিতা ১১০:২, ৫, ৬) যীশুর সাথে তারা “ইস্রায়েলের দ্বাদশ বংশের বিচার করিতে” সিংহাসনে বসবেন। (মথি ১৯:২৮) আর্তনাদকারী সৃষ্টি ঐকান্তিকভাবে এই ঘটনার প্রতীক্ষা করেছে যা “ঈশ্বরের পুত্ত্রগণের প্রকাশপ্রাপ্তির” অংশ।—রোমীয় ৮:১৯-২১; ২ থিষলনীকীয় ১:৬-৮.
২০. (ক) কোন্ প্রত্যাশায় রূপান্তর পিতরকে শক্তিশালী করেছিল? (খ) রূপান্তর আজকের দিনে খ্রীষ্টানদের কিভাবে শক্তিশালী করে?
২০ পৌল “মহাক্লেশ” এর সময়ে যীশুর প্রকাশপ্রাপ্তি সম্বন্ধে বলেন, যখন তিনি লিখেছিলেন: “যে দিন তিনি আপন পবিত্রগণে গৌরবান্বিত হইবার, এবং যাহারা বিশ্বাস করিয়াছে, তাহাদের সকলেতে চমৎকারের পাত্র হইবার জন্য আগমন করিবেন।” (মথি ২৪:২১; ২ থিষলনীকীয় ১:১০) পিতর, যাকোব, যোহন এবং সমস্ত আত্মায়-অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের জন্য কী এক বিস্ময়কর প্রত্যাশা! রূপান্তরের ঘটনাটি পিতরের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করেছিল। নিশ্চিতভাবে, এটি পড়ার মাধ্যমে আমাদের বিশ্বাসও শক্তিশালী হয় এবং যীশু যে শীঘ্রই “প্রত্যেক ব্যক্তিকে তাহার ক্রিয়ানুসারে প্রতিফল দিবেন,” সেই সম্বন্ধে আমাদের প্রত্যয়কে বলীয়ান করে। বিশ্বস্ত অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা যারা এই সময়ে বেঁচে আছেন, তাদের প্রত্যয়কে নিশ্চিত হতে দেখেন যে তারা যীশুর সাথে প্রতাপান্বিত হবেন। অপর মেষেরা এই বিষয়ে জ্ঞাত হয়ে তাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করেছে যে, তিনি এই মন্দ বিধিব্যবস্থার ধ্বংসের মধ্য দিয়ে তাদের সেই প্রতাপান্বিত নতুন জগতে রক্ষা করবেন। (প্রকাশিত বাক্য ৭:১৪) শেষ পর্যন্ত দৃঢ় থাকার জন্য এটি কতই না উৎসাহজনক! আর এই দর্শন আমাদের আরও অনেক কিছু শিক্ষা দিতে পারে, যেমন আমরা পরবর্তী প্রবন্ধে দেখব।
[পাদটীকাগুলো]
a ওয়াচটাওয়ার বাইবেল অ্যান্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটি দ্বারা প্রকাশিত বইগুলি “তোমার নাম পবিত্র বলিয়া মান্য হউক” (ইংরাজি), পৃষ্ঠা ৩১৩-১৪ এবং প্রকাশিত বাক্য—তার মহান পরিপূর্ণতা সন্নিকট! (ইংরাজি), পৃষ্ঠা ১৬৪-৫ দেখুন।
b যাত্রাপুস্তক ২:১৫-২২; ৩:১-৬; ৫:২; ৭:৮-১৩; ৮:১৮; ১৯:১৬-১৯; দ্বিতীয় বিবরণ ৩১:২৩; ১ রাজাবলি ১৭:৮-১৬; ১৮:২১-৪০; ১৯:১, ২, ৮-১৮; ২ রাজাবলি ২:১-১৪.
c প্রকাশিত বাক্য—তার মহান পরিপূর্ণতা সন্নিকট! বইয়ের পৃষ্ঠা ১৩৩-৪১ দেখুন।
d ওয়াচটাওয়ার বাইবেল অ্যান্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটি দ্বারা প্রকাশিত আপনি হর্মাগিদোন থেকে ঈশ্বরের নতুন জগতে রক্ষা পেতে পারেন (ইংরাজি), নামক বইয়ের পৃষ্ঠা ২৮১-৩ দেখুন।
e “তোমার নাম পবিত্র বলিয়া মান্য হউক” বইয়ের পৃষ্ঠা ৩১৭-২০ দেখুন।
আপনি কি স্মরণ করতে পারেন?
◻ রূপান্তরের সময় যীশুর সাথে কারা আবির্ভূত হয়েছিলেন?
◻ রূপান্তরের মাধ্যমে প্রেরিতদের বিশ্বাস কিভাবে শক্তিশালী হয়েছিল?
◻ রূপান্তরে যীশুর সাথে “প্রতাপে” যখন মোশি এবং এলিয় আবির্ভূত হয়েছিলেন, তারা কাদের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন?
◻ একদিকে মোশি ও এলিয় এবং অপরদিকে ঈশ্বরের ইস্রায়েলের মধ্যে কোন্ সাদৃশ্য রয়েছে?
[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]
রূপান্তর অতীত এবং বর্তমানের খ্রীষ্টানদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করেছে