ঈশ্বরীয় শান্তির বার্তাবাহকগণ হিসাবে সেবা করা
“আহা! পর্ব্বতগণের উপরে তাহারই চরণ কেমন শোভা পাইতেছে, যে . . . শান্তি ঘোষণা করে।”—যিশাইয় ৫২:৭.
১, ২. (ক) যিশাইয় ৫২:৭ পদের ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে, কোন্ সুসমাচার প্রচার করতে হবে? (খ) যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বাক্যগুলি প্রাচীন ইস্রায়েলের ক্ষেত্রে কী অর্থ রেখেছিল?
ঘোষণা করার জন্য সুসমাচার রয়েছে! এটি হল শান্তির সমাচার—প্রকৃত শান্তি। এটি পরিত্রাণের এক বার্তা যা ঈশ্বরের রাজ্যের সাথে সম্বন্ধযুক্ত। বহু পূর্বে ভাববাদী যিশাইয় এই সম্পর্কে লিখেছিলেন এবং তার বাক্যগুলি যিশাইয় ৫২:৭ পদে আমাদের জন্য সংরক্ষিত হয়েছিল, যেখানে আমরা পড়ি: “আহা! পর্ব্বতগণের উপরে তাহারই চরণ কেমন শোভা পাইতেছে, যে সুসমাচার প্রচার করে, শান্তি ঘোষণা করে, মঙ্গলের সুসমাচার প্রচার করে, পরিত্রাণ ঘোষণা করে, সিয়োনকে বলে, তোমার ঈশ্বর রাজত্ব করেন।”
২ প্রাচীন ইস্রায়েল এবং আজকের দিনে আমাদের উপকারের জন্য যিহোবা তাঁর ভাববাদী যিশাইয়কে এই বার্তা লিপিবদ্ধ করতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। এর অর্থ কী? যখন যিশাইয় এই সকল বাক্যগুলি লিখেছিলেন, তখন ইতিমধ্যেই ইস্রায়েলের উত্তর রাজ্য অশূরীয়দের দ্বারা নির্বাসিত হয়েছে। পরবর্তীকালে, যিহূদার দক্ষিণ রাজ্যের অধিবাসীদের বাবিলনে নির্বাসিত হওয়ার ছিল। জাতিটির জন্য সেই দিনগুলি দুঃখের এবং অশান্তির ছিল, কারণ লোকেরা যিহোবার প্রতি বাধ্য থাকেনি আর তাই ঈশ্বরের সাথে শান্তিতে ছিল না। যিহোবা যেমন তাদের বলেছিলেন, তাদের পাপপূর্ণ আচরণ তাদের ও তাদের ঈশ্বরের মাঝে এক বিচ্ছেদের কারণস্বরূপ হয়েছিল। (যিশাইয় ৪২:২৪; ৫৯:২-৪) কিন্তু, যিশাইয়ের মাধ্যমে, যিহোবা ভাববাণী করেছিলেন যে যথাকালে বাবিলনের দ্বার খুলে যাবে। ঈশ্বরের লোকেরা তাদের বাসভূমিতে ফিরে আসার জন্য স্বাধীনতা পাবে যেন সেখানে যিহোবার মন্দির পুনর্নির্মাণ করে। সিয়োন পুনঃস্থাপিত হবে এবং সত্য ঈশ্বরের উপাসনা পুনরায় যিরূশালেমে চলতে থাকবে।—যিশাইয় ৪৪:২৮; ৫২:১, ২.
৩. পুনঃস্থাপনের প্রতিজ্ঞাটি কিভাবে ইস্রায়েলদের জন্য শান্তির ভবিষ্যদ্বাণীও ছিল?
৩ এই মুক্তির প্রতিজ্ঞা এক শান্তির ভবিষ্যদ্বাণীও ছিল। যিহোবা যে দেশ ইস্রায়েলীয়দের দিয়েছিলেন সেখানে পুনঃস্থাপিত হওয়া ঈশ্বরের করুণা এবং তাদের অনুতাপের প্রমাণস্বরূপ হত। এটি ইঙ্গিত করত যে তারা ঈশ্বরের সাথে শান্তিতে ছিল।—যিশাইয় ১৪:১; ৪৮:১৭, ১৮.
“তোমার ঈশ্বর রাজত্ব করেন”
৪. (ক) সা.শ.পূ. ৫৩৭ সালে কোন্ অর্থে বলা যেতে পারত যে ‘যিহোবা রাজত্ব করেছিলেন’? (খ) যিহোবা কিভাবে পরবর্তী বছরগুলিতে তাঁর লোকেদের উপকারের জন্য বিষয়গুলিকে নিপুণভাবে পরিচালনা করেছিলেন?
৪ যখন যিহোবা সা.শ.পূ. ৫৩৭ সালে এই মুক্তি সম্পাদন করেন, ঘোষণাটি উপযুক্তভাবে সিয়োনের প্রতি প্রযোজ্য হয়েছিল: “তোমার ঈশ্বর রাজত্ব করেন।” সত্যই, যিহোবা হলেন “অনন্তকালীন রাজা।” (প্রকাশিত বাক্য ১৫:৩, NW) কিন্তু তাঁর লোকেদের এই মুক্তি তাঁর সার্বভৌমত্বের একটি নতুন প্রদর্শন ছিল। লক্ষণীয়ভাবে, এটি সেই সময় পর্যন্ত প্রবল শক্তিমান মানব সাম্রাজ্যের উপর তাঁর ক্ষমতার শ্রেষ্ঠত্বকে প্রকাশ করেছিল। (যিরমিয় ৫১:৫৬, ৫৭) যিহোবার আত্মার কার্যকারিতার ফলস্বরূপ, তাঁর লোকেদের বিরুদ্ধে অন্যান্য চক্রান্তগুলি ব্যর্থ হয়েছিল। (ইষ্টের ৯:২৪, ২৫) তাঁর নিজস্ব সার্বভৌম ইচ্ছা সম্পাদনে সহযোগিতা করার কারণস্বরূপ হতে বিভিন্ন উপায়ে মাদীয়-পারসীক রাজাদের ক্ষেত্রে বারংবার যিহোবা হস্তক্ষেপ করেছিলেন। (সখরিয় ৪:৬) যে বিস্ময়কর ঘটনাগুলি সেই দিনগুলিতে ঘটেছিল তা আমাদের জন্য বাইবেলের বই ইষ্রা, নহিমিয়, ইষ্টের, হগয় এবং সখরিয়তে লিপিবদ্ধ করা রয়েছে। আর সেগুলিকে পুনরালোচনা করা বিশ্বাসকে কতই না শক্তিশালী করে!
৫. যিশাইয় ৫২:১৩–৫৩:১২ পদে কোন্ তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনাগুলি উল্লেখ করা হয়েছিল?
৫ কিন্তু, সা.শ.পূ. ৫৩৭ সালে এবং এর পরবর্তী সময়ে যা ঘটেছিল, তা কেবলমাত্র এক আরম্ভ ছিল। ৫২ অধ্যায়ে পুনঃস্থাপন সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করার পরেই, যিশাইয় মশীহের আগমন সম্পর্কে লিখেছিলেন। (যিশাইয় ৫২:১৩–৫৩:১২) মশীহের মাধ্যমে, যিনি যীশু খ্রীষ্ট হিসাবে প্রমাণিত হন, যিহোবা সা.শ.পূ. ৫৩৭ সালে যা ঘটেছিল তার চেয়েও অধিকতর তাৎপর্যময় এক মুক্তি ও শান্তির বার্তা প্রদান করতেন।
যিহোবার শান্তির সর্বমহান বার্তাবাহক
৬. যিহোবার শান্তির সর্বমহান বার্তাবাহক কে এবং তিনি নিজের প্রতি কোন্ কার্যভার প্রয়োগ করেছিলেন?
৬ যীশু খ্রীষ্ট হলেন যিহোবার শান্তির সর্বমহান বার্তাবাহক। তিনি হলেন ঈশ্বরের বাক্য, যিহোবার নিজস্ব ব্যক্তিগত মুখপাত্র। (যোহন ১:১৪) এর সাথে সঙ্গতি রেখে, যর্দন নদীতে বাপ্তিস্মিত হওয়ার কিছু সময় পরে, যীশু নাসরতের সমাজগৃহে দাঁড়িয়ে যিশাইয় ৬১ অধ্যায় থেকে তাঁর কার্যভারের বিষয়টি উচ্চৈঃস্বরে পড়েছিলেন। সেই কার্যভার স্পষ্ট করে দিয়েছিল যে তিনি যা প্রচার করার জন্য প্রেরিত হয়েছেন তা “মুক্তি” ও “পুনরুদ্ধার” এবং একই সাথে যিহোবার স্বীকৃতি লাভ করার সুযোগকে জড়িত করেছিল। তথাপি, যীশু কেবলমাত্র শান্তির বার্তা ঘোষণা করার চেয়েও বেশি কিছু করেছিলেন। এছাড়াও ঈশ্বর তাঁকে স্থায়ী শান্তির ভিত্তি সরবরাহের জন্য প্রেরণ করেছিলেন।—লূক ৪:১৬-২১, NW.
৭. ঈশ্বরের সাথে শান্তি থেকে কোন্ ফলগুলি আসে যা যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে সম্ভবপর হয়েছে?
৭ যীশুর জন্মের সময়ে, দূতেরা বৈৎলেহমের নিকটে মেষপালকদের কাছে আবির্ভূত হয়ে, ঈশ্বরের প্রশংসা করে বলেছিল: “ঊর্দ্ধ্বলোকে ঈশ্বরের মহিমা, পৃথিবীতে [তাঁহার] প্রীতিপাত্র মনুষ্যদের মধ্যে শান্তি।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (লূক ২:৮, ১৩, ১৪) হ্যাঁ, তাদের জন্য শান্তি থাকত যাদের প্রতি ঈশ্বর প্রীতি দেখিয়েছিলেন কারণ তারা তাঁর পুত্রের মাধ্যমে সম্পাদিত ব্যবস্থায় বিশ্বাস অনুশীলন করেছিল। এটি কী অর্থ করত? তার অর্থ হত যে যদিও মানুষ পাপে জন্মগ্রহণ করেছে, তবুও তারা ঈশ্বরের দৃষ্টিতে এক শুদ্ধ স্থান অর্জন করতে পারত, যেটি হল তাঁর সাথে এক অনুমোদিত সম্পর্ক। (রোমীয় ৫:১) তারা আভ্যন্তরীণ শান্তভাব, শান্তি উপভোগ করতে পারত, যা আর কোন উপায়ে সম্ভব নয়। ঈশ্বরের নিরূপিত সময়ে, আদম থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত পাপের সকল প্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে, যার অন্তর্ভুক্ত অসুস্থতা ও মৃত্যু। লোকেরা আর অন্ধ বা বধির বা খঞ্জ থাকবে না। নৈরাশ্যজনক দুর্বলতা এবং হৃদয়বিদারক মানসিক ব্যাধিগুলি স্থায়ীভাবে সরিয়ে নেওয়া হবে। অনন্তকাল সিদ্ধতায় জীবন উপভোগ করা সম্ভবপর হবে।—যিশাইয় ৩৩:২৪; মথি ৯:৩৫; যোহন ৩:১৬.
৮. ঈশ্বরীয় শান্তি কাদের প্রদান করা হয়েছে?
৮ ঈশ্বরীয় শান্তি কাদের প্রদান করা হয়েছে? যারা যীশু খ্রীষ্টে বিশ্বাস অনুশীলন করে তাদের সকলকে এটি প্রদান করা হয়েছে। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন ‘ঈশ্বরের এই হিতসঙ্কল্প হইল যে যীশুর ক্রুশের রক্ত দ্বারা সন্ধি করিয়া খ্রীষ্টের দ্বারা যেন আপনার সহিত সকলই সম্মিলিত করেন।’ প্রেরিত আরও বলেছিলেন যে এই সম্মিলন “স্বর্গস্থিত” বিষয়গুলিকে জড়িত করবে—অর্থাৎ, তাদের যারা স্বর্গে যীশুর সাথে উত্তরাধিকারী হিসাবে যোগ দেবেন। এছাড়াও এটি “মর্ত্ত্যস্থিত” বিষয়গুলিকেও জড়িত করবে—যা হল তারা, যারা এই পৃথিবীতে অনন্তকাল বেঁচে থাকার সুযোগ দ্বারা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হবে যখন তা সম্পূর্ণরূপে পরমদেশে পরিণত করা হবে। (কলসীয় ১:১৯, ২০) যীশুর বলিদানের মূল্য থেকে উপকার লাভ করার জন্য নিজেদের প্রাপ্তিসাধ্য করায় এবং হৃদয় থেকে ঈশ্বরের প্রতি তাদের বাধ্যতার কারণে, এদের সকলেই ঈশ্বরের সাথে আন্তরিক বন্ধুত্ব উপভোগ করতে পারে।—তুলনা করুন যাকোব ২:২২, ২৩.
৯. (ক) ঈশ্বরের সাথে শান্তি অন্য কোন্ সম্পর্কগুলিকে প্রভাবিত করে? (খ) সর্বত্র স্থায়ী শান্তির উদ্দেশ্যে, কোন্ কর্তৃত্ব যিহোবা তাঁর পুত্রকে প্রদান করেছিলেন?
৯ ঈশ্বরের সাথে এইরূপ শান্তি কতই না অত্যাবশ্যক! যদি ঈশ্বরের সাথে শান্তি না থাকে, তবে অন্য যে কোন সম্পর্কে আর কোন স্থায়ী বা অর্থপূর্ণ শান্তি থাকতে পারে না। যিহোবার সাথে শান্তি হল পৃথিবীতে প্রকৃত শান্তির ভিত্তি। (যিশাইয় ৫৭:১৯-২১) উপযুক্তভাবেই, যীশু খ্রীষ্ট হলেন শান্তিরাজ। (যিশাইয় ৯:৬) ইনিই হলেন সেই ব্যক্তি যার মাধ্যমে মানুষেরা ঈশ্বরের সাথে সম্মিলিত হতে পারে আর যিহোবা শাসন করার কর্তৃত্বও অর্পণ করেছেন। (দানিয়েল ৭:১৩, ১৪) আর মানবজাতির উপর যীশুর রাজকীয় শাসনের ফলাফল বিবেচনা করে, যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেন: “শান্তির সীমা থাকিবে না।”—যিশাইয় ৯:৭; গীতসংহিতা ৭২:৭.
১০. ঈশ্বরের শান্তির বার্তা ঘোষণার ক্ষেত্রে যীশু কিভাবে একটি উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন?
১০ ঈশ্বরের শান্তির বার্তা সমস্ত মানবজাতির প্রয়োজন। এটি প্রচারের ক্ষেত্রে যীশু ব্যক্তিগতভাবে এক উদ্দীপনাপূর্ণ উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন। তিনি যিরূশালেমের মন্দির এলাকায়, পর্বতের পাদদেশে, রাস্তার পাশে, কূপের নিকটে এক শমরীয় স্ত্রীলোকের কাছে এবং লোকেদের গৃহেতে তা করেছিলেন। যেখানেই লোকেরা ছিল, সেখানেই যীশু শান্তি ও ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে প্রচারের জন্য সুযোগগুলি করে নিয়েছিলেন।—মথি ৪:১৮, ১৯; ৫:১, ২; ৯:৯; ২৬:৫৫; মার্ক ৬:৩৪; লূক ১৯:১-১০; যোহন ৪:৫-২৬.
যীশুর পদচিহ্ন অনুসরণ করে চলার জন্য প্রশিক্ষিত
১১. কোন্ কাজের জন্য যীশু তাঁর শিষ্যদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন?
১১ যীশু তাঁর শিষ্যদের ঈশ্বরের শান্তির বার্তা প্রচার করতে শিক্ষা দিয়েছিলেন। ঠিক যেমন যীশু যিহোবার “বিশ্বাস্য ও সত্যময় সাক্ষী” ছিলেন, তেমনি তারা স্বীকার করেছিলেন যে তাদেরও সাক্ষ্য দেওয়ার দায়িত্ব রয়েছে। (প্রকাশিত বাক্য ৩:১৪; যিশাইয় ৪৩:১০-১২) তারা তাদের নেতা হিসাবে খ্রীষ্টের প্রতি দৃষ্টি রেখেছিলেন।
১২. কিভাবে পৌল প্রচার কাজের গুরুত্বের বিষয়টি প্রদর্শন করেছিলেন?
১২ প্রেরিত পৌল প্রচার কাজের গুরুত্বের উপর যুক্তি করেছিলেন এই বলে: “শাস্ত্র বলে, ‘যে কেহ তাঁহার উপরে বিশ্বাস করে, সে লজ্জিত হইবে না।’” অর্থাৎ, কোন ব্যক্তি যে যিহোবার পরিত্রাণের মুখ্য প্রতিনিধি হিসাবে যীশু খ্রীষ্টে বিশ্বাস অনুশীলন করে, সে লজ্জিত হবে না। আর কারও জাতিগত পটভূমি কোন অযোগ্যতার বিষয় নয়, কারণ পৌল আরও বলেছিলেন: “যিহূদী ও গ্রীকে কিছুই প্রভেদ নাই; কেননা সকলেরই একমাত্র প্রভু; যত লোক তাঁহাকে ডাকে, সেই সকলের পক্ষে তিনি ধনবান্। কারণ ‘যে কেহ প্রভুর নামে ডাকে, সে পরিত্রাণ পাইবে।’” (রোমীয় ১০:১১-১৩) কিন্তু লোকেরা সেই সুযোগ সম্পর্কে কিভাবে শিখতে পেরেছিল?
১৩. যদি লোকেদের সুসমাচার জানাতে হত তবে কিসের প্রয়োজন ছিল এবং কিভাবে প্রথম-শতাব্দীর খ্রীষ্টানেরা সেই প্রয়োজনের প্রতি সাড়া দিয়েছিল?
১৩ পৌল প্রশ্নগুলি জিজ্ঞাসা করার দ্বারা সেই বিষয়টি পরিচালিত করেছিলেন, যে যিহোবার প্রত্যেক দাসের বিষয়টি চিন্তা করা উচিত। প্রেরিত জিজ্ঞাসা করেছিলেন: “তাহারা যাঁহাতে বিশ্বাস করে নাই, কেমন করিয়া তাঁহাকে ডাকিবে? আর যাঁহার কথা শুনে নাই, কেমন করিয়া তাঁহাতে বিশ্বাস করিবে? আর প্রচারক না থাকিলে কেমন করিয়া শুনিবে? আর প্রেরিত না হইলে কেমন করিয়া প্রচার করিবে?” (রোমীয় ১০:১৪, ১৫) প্রাথমিক খ্রীষ্টতত্ত্বের বিবরণ এক শক্তিশালী সাক্ষ্য বহন করে যে পুরুষ ও নারী, যুবক ও বৃদ্ধেরা খ্রীষ্ট ও তাঁর প্রেরিতদের দ্বারা স্থাপিত উদাহরণের প্রতি সাড়া দিয়েছিল। তারা সুসমাচারের উদ্যোগী ঘোষণাকারী হয়ে উঠেছিল। যীশুর অনুকরণে, তারা যেখানে খুঁজে পেত সেখানেই লোকেদের কাছে প্রচার করেছিল। কেউ যেন বাদ না পড়ে সেই উদ্দেশ্যে, তারা জনসাধারণ্যে এবং গৃহ থেকে গৃহে উভয় স্থানেই তাদের পরিচর্যা করে চলেছিল।—প্রেরিত ১৭:১৭; ২০:২০.
১৪. কিভাবে প্রমাণিত হয়েছিল যে যারা সুসমাচার ঘোষণা করে তাদের “চরণ” ছিল ‘শোভিত’?
১৪ অবশ্যই, প্রত্যেকে খ্রীষ্টীয় প্রচারকদের অনুগ্রহের সাথে গ্রহণ করেনি। তৎসত্ত্বেও, যিশাইয় ৫২:৭ পদ থেকে পৌলের উদ্ধৃতি সত্য প্রমাণিত হয়েছিল। “প্রেরিত না হইলে কেমন করিয়া প্রচার করিবে?” প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করার পরে, তিনি আরও বলেছিলেন: “যেমন লিখিত আছে, ‘যাহারা মঙ্গলের সুসমাচার প্রচার করে, তাহাদের চরণ কেমন শোভা পায়।’” আমাদের অধিকাংশই আমাদের চরণকে শোভিত অথবা সুন্দর হিসাবে চিন্তা করি না। তাহলে, এর অর্থ কী? এটি হচ্ছে সেই চরণ যা একজন ব্যক্তিকে স্বাভাবিকভাবে পরিচালিত করে যখন সে অন্যদের কাছে প্রচার করতে বের হয়। এইরূপ চরণ প্রকৃতপক্ষে এক ব্যক্তিকে প্রতিনিধিত্ব করে। আর আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে এই অনেকের কাছে যারা প্রেরিতদের এবং যীশু খ্রীষ্টের প্রথম-শতাব্দীর অন্যান্য শিষ্যদের কাছ থেকে সুসমাচার শুনেছিল এই প্রাথমিক খ্রীষ্টানেরা বস্তুতপক্ষেই এক সুন্দর দৃশ্য ছিল। (প্রেরিত ১৬:১৩-১৫) তার চেয়েও বেশি যে, তারা ঈশ্বরের দৃষ্টিতে মহামূল্যবান ছিল।
১৫, ১৬. (ক) কিভাবে প্রাথমিক খ্রীষ্টানেরা প্রদর্শন করেছিলেন যে তারা সত্যই শান্তির বার্তাবাহকগণ ছিলেন? (খ) প্রথম-শতাব্দীর খ্রীষ্টানেরা যেভাবে করেছিলেন সেই একইভাবে আমাদের পরিচর্যা করে চলার ক্ষেত্রে কী আমাদের সাহায্য করতে পারে?
১৫ যীশুর অনুগামীদের কাছে এক শান্তির বার্তা ছিল এবং তারা তা শান্তিপূর্ণভাবে পরিবেশন করেছিলেন। যীশু তাঁর শিষ্যদের এই নির্দেশগুলি দিয়েছিলেন: “আর যে কোন বাটীতে প্রবেশ করিবে, প্রথমে বলিও, এই গৃহে শান্তি বর্ত্তুক। আর তথায় যদি শান্তির সন্তান থাকে, তবে তোমাদের শান্তি তাহার উপরে অবস্থিতি করিবে, নতুবা তোমাদের প্রতি ফিরিয়া আসিবে।” (লূক ১০:৫, ৬) শালোম অথবা “শান্তি” হল এক ঐতিহ্যগত যিহূদী অভিবাদন। কিন্তু, যীশুর নির্দেশগুলি এর চেয়েও আরও বেশি কিছুকে জড়িত করেছিল। ‘খ্রীষ্টের পক্ষে রাজদূত’ হিসাবে, তাঁর অভিষিক্ত শিষ্যেরা লোকেদের পরামর্শ দিয়েছিলেন: “তোমরা ঈশ্বরের সহিত সম্মিলিত হও।” (২ করিন্থীয় ৫:২০) যীশুর নির্দেশগুলির সাথে সামঞ্জস্য রেখে, তারা লোকেদের কাছে ঈশ্বরের রাজ্য এবং স্বতন্ত্র ব্যক্তি হিসাবে তাদের জন্য এটি কী অর্থ করতে পারত সেই বিষয়ে কথা বলেছিলেন। যারা শুনেছিল তারা আশীর্বাদ লাভ করেছিল; যারা বার্তাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছিল।
১৬ যিহোবার সাক্ষীরা আজকে একইভাবে তাদের পরিচর্যা করে চলেছে। যে সুসমাচার তারা লোকেদের কাছে নিয়ে যায় তা তাদের নয়; এটি তাঁর অধিকারভুক্ত, যিনি তাদের পাঠিয়েছিলেন। তাদের কার্যভার হল তা পরিবেশন করা। যদি লোকেরা তা গ্রহণ করে, তবে তারা নিজেদের অপূর্ব আশীর্বাদগুলি গ্রহণ করার অবস্থানে রাখে। যদি তারা তা প্রত্যাখান করে, তবে তারা যিহোবা ঈশ্বর ও তাঁর পুত্র যীশু খ্রীষ্টের সাথে শান্তিকে প্রত্যাখান করছে।—লূক ১০:১৬.
অশান্ত এক জগতে শান্তিপূর্ণ অবস্থা
১৭. এমনকি যখন আমরা কলহপূর্ণ লোকেদের সম্মুখীন হই, আমাদের কিভাবে আচরণ করা উচিত এবং কেন?
১৭ লোকেদের প্রতিক্রিয়া যাই হোক না কেন, যিহোবার দাসেদের জন্য এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে তারা ঈশ্বরীয় শান্তির বার্তাবাহকগণ। জগতের লোকেরা হয়ত প্রচণ্ড তর্কে লিপ্ত হতে পারে এবং যারা তাদের বিরক্ত করে তাদের প্রতি কটূক্তি অথবা উচ্চৈঃস্বরে গালাগালি দেওয়ার মাধ্যমে ক্রোধ প্রকাশ করতে পারে। সম্ভবত অতীতে আমাদের মধ্যে কেউ কেউ তা করেছি। কিন্তু, যদি আমরা নতুন ব্যক্তিত্ব পরিধান করি এবং এখন আর জগতের কোন অংশ না হই, তাহলে আমরা তাদের ধারাগুলিকে অনুকরণ করব না। (ইফিষীয় ৪:২৩, ২৪, ৩১; যাকোব ১:১৯, ২০) অন্যেরা যাই করুক না কেন তার প্রতি মনোযোগ না দিয়ে, আমরা এই পরামর্শটি প্রয়োগ করব: “যদি সাধ্য হয়, তোমাদের যত দূর হাত থাকে, মনুষ্যমাত্রের সহিত শান্তিতে থাক।”—রোমীয় ১২:১৮.
১৮. যখন একজন সরকারি কর্মকর্তা আমাদের সাথে রূঢ় হন তখন কিভাবে আমাদের সাড়া দেওয়া উচিত এবং কেন?
১৮ কখনও কখনও আমাদের পরিচর্যা হয়ত আমাদের সরকারি কর্মকর্তাদের সম্মুখীন করতে পারে। তাদের কর্তৃত্ব জাহির করে, তারা হয়ত ‘আমাদের জিজ্ঞাসা করতে’ পারে যে কেন আমরা কিছু নির্দিষ্ট কাজগুলি করি অথবা আমরা কেন কিছু বিশেষ কার্যধারার সাথে জড়িত হওয়া থেকে বিরত থাকি। তারা হয়ত জানতে চাইতে পারে আমরা যে বার্তা প্রচার করি তা কেন করি—যেটি মিথ্যা ধর্মকে উন্মোচিত করে এবং বর্তমান বিধিব্যবস্থার শেষ সম্বন্ধে বলে। খ্রীষ্টের দ্বারা স্থাপিত উদাহরণের প্রতি আমাদের সম্মান আমাদেরকে মৃদুতা এবং গভীর সম্মান প্রদর্শন করতে প্রণোদিত করবে। (১ পিতর ২:২৩; ৩:১৫) প্রায়ই, এইরূপ কর্মকর্তারা যাজক অথবা তাদের নিজস্ব উর্ধ্বতনদের চাপের অধীনে থাকে। একটি মৃদু উত্তর হয়ত তাদের সাহায্য করতে পারে উপলব্ধি করতে যে আমাদের কার্যধারা তাদের অথবা সমাজের শান্তির প্রতি কোন ভীতির বিষয় নয়। এইরূপ প্রত্যুত্তর যারা এটিকে গ্রহণ করে তাদের মধ্যে সম্মান, সহযোগিতা এবং শান্তির এক মনোভাব উৎপন্ন করে।—তীত ৩:১, ২.
১৯. কোন্ কার্যধারাগুলির সাথে যিহোবার সাক্ষীরা কখনও জড়িত হয় না?
১৯ পৃথিবীব্যাপী যিহোবার সাক্ষীরা এমন লোক হিসাবে পরিচিত যারা জগতের বিবাদে কোন রকম অংশগ্রহণ করে না। তারা জাতি, ধর্ম অথবা রাজনীতির বিষয় সম্পর্কিত জাগতিক সংঘর্ষগুলিতে জড়িত হয় না। (যোহন ১৭:১৪) যেহেতু ঈশ্বরের বাক্য আমাদের “প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্ত্তৃপক্ষদের বশীভূত” হওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়, তাই আমরা সরকারি নীতিগুলির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সরকার বিরোধী আন্দোলনে এমনকি অংশগ্রহণ করার কথা চিন্তাও করব না। (রোমীয় ১৩:১) যিহোবার সাক্ষীরা একটি সরকারকে উচ্ছেদ করার লক্ষ্যে সংগঠিত কোন বিপ্লবে কখনও অংশগ্রহণ করেনি। তাঁর খ্রীষ্টীয় দাসেদের জন্য যিহোবার দ্বারা স্থাপিত মানগুলির পরিপ্রেক্ষিতে, তাদের পক্ষে যে কোন প্রকারের রক্তপাত অথবা দৌরাত্ম্যে অংশগ্রহণ করা অচিন্তনীয়! সত্য খ্রীষ্টানেরা কেবলমাত্র শান্তির বিষয়ে কথাই বলে না; তারা যা প্রচার করে তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে জীবনযাপনও করে থাকে।
২০. শান্তির ক্ষেত্রে, মহতী বাবিল কিধরনের নথি তৈরি করেছে?
২০ সত্য খ্রীষ্টানদের বিপরীতে, যারা খ্রীষ্টীয় জগতের ধর্মীয় সংগঠনগুলিকে প্রতিনিধিত্ব করে তারা শান্তির বার্তাবাহকগণ হিসাবে প্রমাণিত হয়নি। মহতী বাবিলের ধর্মগুলি—খ্রীষ্টীয় জগতের গির্জাগুলি এবং একইভাবে ন-খ্রীষ্টীয় ধর্মগুলি—জাতিগণের যুদ্ধগুলিতে প্রশ্রয়, সমর্থন এবং প্রকৃতপক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছে। এছাড়াও তারা যিহোবার বিশ্বস্ত দাসেদের তাড়না এবং এমনকি হত্যা করতে ইন্ধন যুগিয়েছে। মহতী বাবিল সম্বন্ধে, এই কারণে প্রকাশিত বাক্য ১৮:২৪ পদ ঘোষণা করে: “ভাববাদিগণের ও পবিত্রগণের রক্ত, এবং যত লোক পৃথিবীতে হত হইয়াছে, সেই সকলের রক্ত ইহার মধ্যে পাওয়া গেল।”
২১. কিভাবে অনেক সৎহৃদয় ব্যক্তিরা সাড়া দেন যখন তারা যিহোবার লোকেদের এবং যারা মিথ্যা ধর্ম অনুশীলন করে তাদের আচরণে পার্থক্য দেখেন?
২১ খ্রীষ্টীয় জগতের এবং মহতী বাবিলের বাকি ধর্মগুলির বৈসাদৃশ্যে, সত্য ধর্ম হল এক ইতিবাচক ঐক্য সাধনকারী শক্তি। তাঁর সত্য অনুগামীদের প্রতি যীশু খ্রীষ্ট বলেছিলেন: “তোমরা যদি আপনাদের মধ্যে পরস্পর প্রেম রাখ, তবে তাহাতেই সকলে জানিবে যে, তোমরা আমার শিষ্য।” (যোহন ১৩:৩৫) সেটি এমন এক প্রেম যা জাতিগত, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং বর্ণগত সীমাকে অতিক্রম করে যেগুলি এখন মানবজাতির বাকি অংশকে বিভক্ত করছে। এই বিষয়গুলিকে অবলোকন করে, পৃথিবীব্যাপী লক্ষ লক্ষ লোকেরা যিহোবার অভিষিক্ত দাসেদের বলছে: “আমরা তোমাদের সহিত যাইব, কেননা আমরা শুনিলাম, ঈশ্বর তোমাদের সহবর্ত্তী।”—সখরিয় ৮:২৩.
২২. সাক্ষ্যদানের কাজকে আমরা কিভাবে দেখব যা এখনও করা প্রয়োজন?
২২ যিহোবার লোক হিসাবে, যা সম্পন্ন হয়ে আসছে তার জন্য আমরা অত্যন্ত আনন্দিত, কিন্তু কাজ এখনও শেষ হয়নি। জমিতে বীজ বপন এবং কর্ষণ করার পর, একজন কৃষক সেটিকে ছেড়ে চলে যায় না। সে কাজ করে চলতে থাকে, বিশেষ করে শস্যচ্ছেদন মরশুমের চরম সময়ে। শস্যচ্ছেদনের সময় প্রবল প্রচেষ্টা বজায় রাখা প্রয়োজন। আর ঠিক এখন পূর্বের যে কোন সময়ের চেয়ে সত্য ঈশ্বরের উপাসকদের অধিকতর শস্য সংগ্রহের প্রয়োজন। এটি হচ্ছে আনন্দ করার এক সময়। (যিশাইয় ৯:৩) এটি সত্য যে, আমরা বিরোধিতা ও উদাসীনতার সম্মুখীন হই। ব্যক্তি হিসাবে, আমরা হয়ত গুরুতর অসুস্থতা, কঠিন পারিবারিক অবস্থা অথবা অর্থনৈতিক কষ্ট মোকাবিলা করার জন্য যথাসাধ্য প্রচেষ্টা করে চলছি। কিন্তু যিহোবার প্রতি প্রেম আমাদের সহ্য করতে প্রেরণা দেয়। ঈশ্বর যে বার্তা আমাদের কাছে অর্পণ করেছেন তা এমনকিছু যা লোকেদের শোনা প্রয়োজন। এটি হচ্ছে এক শান্তির বার্তা। বস্তুতপক্ষে, এটি হচ্ছে সেই বার্তা যা যীশু নিজে প্রচার করেছিলেন—ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার।
আপনার উত্তর কী?
◻ প্রাচীন ইস্রায়েলের ক্ষেত্রে যিশাইয় ৫২:৭ পদের কোন্ পরিপূর্ণতা ছিল?
◻ যীশু কিভাবে শান্তির সর্বমহান বার্তাবাহক হিসাবে প্রমাণিত হয়েছিলেন?
◻ খ্রীষ্টানেরা যে কাজে অংশগ্রহণ করে তার সাথে প্রেরিত পৌল কিভাবে যিশাইয় ৫২:৭ পদ যুক্ত করেছিলেন?
◻ আমাদের দিনে শান্তির বার্তাবাহকগণ হওয়ার সাথে কী জড়িত আছে?
[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
যীশুর মত, যিহোবার সাক্ষীরা ঈশ্বরীয় শান্তির বার্তাবাহক
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
রাজ্যের বার্তার প্রতি লোকেরা যেমন প্রতিক্রিয়াই দেখাক না কেন, যিহোবার সাক্ষীরা শান্তিপূর্ণ থাকে