বিচারাসনের সামনে আপনি কিভাবে দাঁড়াবেন?
“আর যখন মনুষ্যপুত্ত্র সমুদয় দূত সঙ্গে করিয়া আপন প্রতাপে আসিবেন, তখন তিনি নিজ প্রতাপের সিংহাসনে বসিবেন।”—মথি ২৫:৩১.
১-৩. ন্যায়বিচার সম্বন্ধে আশাবাদী হওয়ার কী কারণ আমাদের আছে?
‘দোষী না নির্দোষ?’ অনেকে এই বিষয়টি চিন্তা করেন যখন তারা আদালত সংক্রান্ত মকদ্দমা মীমাংসার কোন খবর পান। বিচারক ও জুরির সদস্যেরা হয়ত সততা বজায় রাখার চেষ্টা করেন, কিন্তু সাধারণত ন্যায় বিচার কি হয়ে থাকে? বিচার করার এই পদ্ধতির মধ্যে আপনি কি অন্যায় ও অসমতার কথা শোনেননি? ঐ ধরনের অন্যায় বিচার কোন নতুন বিষয় নয়, যা আমরা লূক ১৮:১-৮ পদে উল্লেখিত যীশুর দৃষ্টান্তের মধ্যে দেখতে পাই।
২ মানুষের ন্যায় বিচার সম্বন্ধে আপনার যাই অভিজ্ঞতা থাকুক না কেন লক্ষ্য করে দেখুন যীশুর দেওয়া উপসংহারটির কথা: “ঈশ্বর কি আপনার সেই মনোনীতদের পক্ষে অন্যায়ের প্রতীকার করিবেন না, যাহারা দিবারাত্র তাঁহার কাছে রোদন করে, . . . ? আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তিনি শীঘ্রই তাহাদের পক্ষে অন্যায়ের প্রতিকার করিবেন। কিন্তু মনুষ্যপুত্ত্র যখন আসিবেন তখন কি পৃথিবীতে বিশ্বাস পাইবেন?”
৩ হ্যাঁ, যিহোবা দেখবেন যে তাঁর দাসেরা যেন অবশেষে ন্যায্য বিচার পায়। যীশুও এর অন্তর্ভুক্ত, বিশেষকরে এখন, যখন আমরা দুষ্ট বিধিব্যবস্থার “শেষ কালে” বাস করছি। পৃথিবী থেকে দুষ্টতাকে সম্পূর্ণভাবে মুছে দিতে শীঘ্রই যিহোবা তাঁর শক্তিমান পুত্রকে ব্যবহার করবেন। (২ তীমথিয় ৩:১; ২ থিষলনীকীয় ১:৭, ৮; প্রকাশিত বাক্য ১৯:১১-১৬) যীশুর ভূমিকা সম্বন্ধে আমরা ধারণা পাই তাঁর দেওয়া শেষ দৃষ্টান্তটি থেকে যেটিকে প্রায়ই বলা হয়ে থাকে মেষ ও ছাগের দৃষ্টান্ত।
৪. মেষ ও ছাগ সম্বন্ধীয় দৃষ্টান্তটি আমরা কিভাবে বুঝেছিলাম, কিন্তু এখন কেন দৃষ্টান্তটির প্রতি আমরা দৃষ্টি দেব? (হিতোপদেশ ৪:১৮)
৪ আমরা অনেকদিন ধরে ভেবে এসেছিলাম যে এই দৃষ্টান্তটি দেখাচ্ছে যে ১৯১৪ সালে যীশু রাজা হিসাবে অধিষ্ঠিত হয়েছেন ও সেই সময় থেকে বিচার করছেন—অনন্ত জীবন সেই সব লোকেদের জন্য যারা মেষতুল্য প্রমাণিত হবে আর ছাগেদের ক্ষেত্রে চিরস্থায়ী মৃত্যু। কিন্তু এই দৃষ্টান্তটির পুনর্বিবেচনা, এর সময় ও এর অর্থ সম্বন্ধে এক নতুন চিন্তাধারা যুগিয়েছে। এই বিশোধন আমাদের প্রচার কাজের গুরুত্বকে ও লোকেদের প্রতিক্রিয়ার তাৎপর্যতাকে আরও জোরদার করে তুলেছে। দৃষ্টান্তটির এই গভীর অর্থের যে ভিত্তি তা জানতে হলে, আসুন আমরা বিবেচনা করে দেখি যে বাইবেল রাজা ও বিচারক হিসাবে যিহোবা ও যীশু উভয়ের সম্বন্ধে কী বলে।
মহান বিচারক হিসাবে যিহোবা
৫, ৬. যিহোবাকে রাজা ও বিচারক হিসাবে ভাবা কেন যথার্থ?
৫ সমস্ত কিছুর উপর শক্তির সাথে যিহোবা এই বিশ্বকে শাসন করেন। আরম্ভ ও শেষ না থাকার দরুন, তিনি “যুগপর্য্যায়ের রাজা” হিসাবে পরিচিত হন। (১ তীমথিয় ১:১৭; গীতসংহিতা ৯০:২, ৪; প্রকাশিত বাক্য ১৫:৩) তাঁর অধিকার আছে বিধি বা নিয়ম তৈরি করা ও তা বলবৎ করা। কিন্তু এক বিচারক হওয়ার বিষয়টিও তাঁর অধিকারের অন্তর্ভুক্ত। যিশাইয় ৩৩:২২ পদ জানায়: “সদাপ্রভু আমাদের বিচারকর্ত্তা, সদাপ্রভু আমাদের ব্যবস্থাপক, সদাপ্রভু আমাদের রাজা; তিনিই আমাদিগকে পরিত্রাণ করিবেন।”
৬ বহুদিন ধরে ঈশ্বরের দাসেরা যিহোবাকে মকদ্দমা ও বিচার্য বিষয়ের বিচারক হিসাবে স্বীকার করে এসেছে। উদাহরণস্বরূপ, “পৃথিবীর বিচারকর্ত্তা” সদোম ও ঘমোরার যে দুষ্টতা তার প্রমাণগুলির পরিমাপ নেন এবং বিচারের এই সিদ্ধান্তে আসেন যে সেখানকার অধিবাসীদের জন্য ধ্বংসই শ্রেয় আর তিনি এই ধার্মিক বিচারটি বলবৎ করেন। (আদিপুস্তক ১৮:২০-৩৩; ইয়োব ৩৪:১০-১২) এটা কতই না আমাদের নিশ্চয়তা দেয় যে যিহোবা হলেন এক ন্যায় বিচারক যিনি সবসময়ে তাঁর বিচারগুলির বলবৎ করতে পারেন!
৭. ইস্রায়েলের সাথে ব্যবহার করার সময় যিহোবা কিভাবে বিচারক হিসাবে কাজ করেছিলেন?
৭ প্রাচীন ইস্রায়েলে অনেক সময় যিহোবা সরাসরি বিচার করতেন। আপনি কি সেই সময় এটা জেনে সান্ত্বনা পেতেন না যে এক সিদ্ধ বিচারক সমস্ত বিষয়ের মীমাংসা করছেন? (লেবীয় পুস্তক ২৪:১০-১৬; গণনাপুস্তক ১৫:৩২-৩৬; ২৭:১-১১) এছাড়া ঈশ্বর “শাসন” বিধি দিয়েছিলেন যা বিচার করার মান হিসাবে সামগ্রিকভাবে উত্তম ছিল। (লেবীয় পুস্তক ২৫:১৮, ১৯; নহিমিয় ৯:১৩; গীতসংহিতা ১৯:৯, ১০; ১১৯:৭, ৭৫, ১৩৪; ১৪৭:১৯, ২০) তিনি “পৃথিবীর বিচারকর্ত্তা,” তাই আমরা সকলেই প্রভাবিত।—ইব্রীয় ১২:২৩.
৮. দানিয়েল কোন্ যথার্থ দর্শন দেখেছিলেন?
৮ এই বিষয়ে আমাদের “প্রত্যক্ষদর্শীর” প্রমাণ আছে। ভাববাদী দানিয়েল এক হিংস্র পশুর দর্শন দেখেন যা সরকার অথবা সাম্রাজ্যগুলিকে চিত্রিত করে।’ (দানিয়েল ৭:১-৮, ১৭) তিনি এর সাথে যোগ দিয়ে বলেন: “কয়েকটী সিংহাসন স্থাপিত হইল, এবং অনেক দিনের বৃদ্ধ উপবিষ্ট হইলেন, তাঁহার পরিচ্ছদ হিমানীর ন্যায় শুক্লবর্ণ।” (দানিয়েল ৭:৯) লক্ষ্য করে দেখুন যে দানিয়েল সিংহাসনগুলি দেখেন “এবং অনেক দিনের বৃদ্ধ [যিহোবা] উপবিষ্ট হইলেন।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন, ‘এখানে কি দানিয়েল, ঈশ্বর যে রাজা হলেন সেটাই প্রত্যক্ষ করছিলেন?’
৯. “সিংহাসনে উপবিষ্ট” হওয়ার অর্থ কী? উদাহরণ দিন।
৯ যখন আমরা পড়ি যে কেউ সিংহাসনে “উপবিষ্ট” হয়েছেন, তখন হয়ত ভাবতে পারি যে তিনি রাজা হলেন কারণ অনেক সময় বাইবেল ঐ ধরনের ভাষা ব্যবহার করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ: “রাজত্বের আরম্ভকালে [সিম্রি] সিংহাসনে উপবিষ্ট হইবামাত্র . . .” (১ রাজাবলি ১৬:১১; ২ রাজাবলি ১০:৩০; ১৫:১২; যিরমিয় ৩৩:১৭) মশীহ ভাববাণী জানায়: “তিনিই . . . আপন সিংহাসনে বসিয়া কর্ত্তৃত্ব করিবেন।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) অতএব ‘সিংহাসনে উপবিষ্ট হওয়ার’ অর্থ রাজা হওয়াকেও বোঝাতে পারে। (সখরিয় ৬:১২, ১৩) যিহোবাকে রাজা হিসাবে বর্ণনা করা হয় যিনি তাঁর সিংহাসনে বসে আছেন। (১ রাজাবলি ২২:১৯; যিশাইয় ৬:১; প্রকাশিত বাক্য ৪:১-৩) তিনি “যুগপর্য্যায়ের রাজা।” তবুও যখন তিনি সার্বভৌমত্বের এক নতুন দিকটির উপর অধিকার গ্রহণ করলেন, তখন বলা যায় যে তিনি এক অর্থে রাজা হলেন অর্থাৎ আবার যেন তিনি নতুনভাবে সিংহাসনে উপবিষ্ট হলেন।—১ রাজাবলি ১৬:১, ৩১; যিশাইয় ৫২:৭; প্রকাশিত বাক্য ১১:১৫-১৭; ১৫:৩; ১৯:২, ৬.
১০. ইস্রায়েলের রাজাদের একটি মুখ্য দায়িত্ব কী ছিল? বর্ণনা করুন।
১০ কিন্তু এখানেই মুখ্য বিষয়টি রয়েছে: প্রাচীন রাজাদের প্রধান কাজ ছিল মকদ্দমাগুলি শোনা এবং সেগুলির বিচার করা। (হিতোপদেশ ২৯:১৪) মনে করে দেখুন শলোমনের সেই বিজ্ঞ বিচারের কথা যখন দুটি স্ত্রীলোক একটি শিশুকে দাবি জানায়। (১ রাজাবলি ৩:১৬-২৮; ২ বংশাবলি ৯:৮) “সিংহাসনের যে বারাণ্ডাতে তিনি বিচার করিবেন” সেটি ছিল তার সরকারি গৃহের একটি অংশ যাকে “বিচারের বারাণ্ডা”-ও বলা হত। (১ রাজাবলি ৭:৭) যিরূশালেমকে এমন একটি স্থান হিসাবে বর্ণনা করা হয় যেখানে “বিচারার্থক সিংহাসন সকল, . . . স্থাপিত” ছিল। (গীতসংহিতা ১২২:৫) অতএব এটা স্পষ্ট যে ‘সিংহাসনে বসার’ অর্থ বিচারের অধিকারকে ব্যবহার করাও হতে পারে।—যাত্রাপুস্তক ১৮:১৩; হিতোপদেশ ২০:৮.
১১, ১২. (ক) দানিয়েল ৭ অধ্যায়ে উল্লেখিত যিহোবার উপবিষ্ট হওয়ার মানে কী? (খ) অন্যান্য শাস্ত্রপদগুলি কিভাবে দেখায় যে যিহোবা বিচারক হিসাবে উপবিষ্ট হয়েছেন?
১১ আসুন আমরা এখন সেই দৃশ্যটিতে ফিরে যাই যেখানে দানিয়েল ‘অনেক দিনের বৃদ্ধকে উপবিষ্ট’ হতে দেখেছিলেন। (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) দানিয়েল ৭:১০ পদ আরও বলে: “বিচার বসিল এবং পুস্তক সকল খোলা হইল।” হ্যাঁ, অনেক দিনের বৃদ্ধ জগৎ শাসনের উপর বিচার আনতে এবং শাসন করার জন্য যোগ্য ব্যক্তি হিসাবে মনুষ্যপুত্রকে বিচার করতে উপবিষ্ট হলেন। (দানিয়েল ৭:১৩, ১৪) এরপর আমরা পড়ি যে: “সেই অনেক দিনের বৃদ্ধ আসিলেন, আর . . . পবিত্রগণের হস্তে বিচার-ভার দত্ত হইল,” যারা বিচারিত হল তারা মনুষ্যপুত্রের সাথে শাসন করার যোগ্যতা অর্জন করল। (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (দানিয়েল ৭:২২) পরিশেষে ‘বিচার বসিল’ এবং শেষ বিশ্বশক্তির উপর এক বিরূপ বিচার আনল।—দানিয়েল ৭:২৬.a
১২ অতএব, দানিয়েল যে দেখেছিলেন ঈশ্বর ‘সিংহাসনে উপবিষ্ট হয়েছেন’ তার মানে ছিল যে তিনি বিচার করতে আসছেন। এর আগে দায়ূদ গেয়েছিলেন: “তুমি [যিহোবা] আমার বিচার ও বিবাদ নিষ্পন্ন করিয়াছ, তুমি সিংহাসনে বসিয়া ধর্ম্মবিচার করিয়াছ।” (গীতসংহিতা ৯:৪, ৭) আর যোয়েল লিখেছিলেন: “জাতিগণ জাগিয়া উঠুক, যিহোশাফট-তলভূমিতে আইসুক, কেননা সে স্থানে আমি [যিহোবা] চারিদিকের সমস্ত জাতির বিচার করিতে বসিব।” (যোয়েল ৩:১২; তুলনা করুন যিশাইয় ১৬:৫.) যীশু ও পৌল উভয়ই বিচার সংক্রান্ত পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন যেখানে একজন ব্যক্তি উপবিষ্ট হয়ে মকদ্দমা শোনে ও বিচার নিষ্পত্তি করে।b—যোহন ১৯:১২-১৬; প্রেরিত ২৩:৩; ২৫:৬.
যীশুর স্থান
১৩, ১৪. (ক) ঈশ্বরের লোকেদের কী নিশ্চয়তা ছিল যে যীশু রাজা হবেন? (খ) কখন যীশু সিংহাসনে উপবিষ্ট হন এবং সা.শ. ৩৩ সাল থেকে তিনি কোন্ অর্থে শাসন করছেন?
১৩ যিহোবা হলেন রাজা ও বিচারক উভয়ই। যীশুর সম্বন্ধে কী বলা যায়? তাঁর জন্ম সম্বন্ধে ঘোষণা করতে গিয়ে একটি দূত বলেন: “প্রভু ঈশ্বর তাঁহার পিতা দায়ূদের সিংহাসন তাঁহাকে দিবেন; . . . ও তাঁহার রাজ্যের শেষ হইবে না।” (লূক ১:৩২, ৩৩) যীশু হবেন দায়ূদ বংশীয় রাজত্বের স্থায়ী উত্তরাধিকারী। (২ শমূয়েল ৭:১২-১৬) তিনি স্বর্গ থেকে শাসন করবেন, কারণ দায়ূদ বলেছিলেন: “সদাপ্রভু আমার প্রভুকে [যীশু] বলেন, তুমি আমার দক্ষিণে বস, যাবৎ আমি তোমার শত্রুগণকে তোমার পাদপীঠ না করি। সদাপ্রভু সিয়োন হইতে তোমার পরাক্রমদণ্ড প্রেরণ করিবেন, তুমি আপন শত্রুদের মধ্যে কর্ত্তৃত্ব করিও।”—গীতসংহিতা ১১০:১-৪.
১৪ এটা কখন ঘটবে? যীশু যখন মানব ছিলেন তখন তিনি রাজা হিসাবে শাসন করেননি। (যোহন ১৮:৩৩-৩৭) সা.শ. ৩৩ সালে তিনি মারা যান, পুনরুত্থিত হন এবং স্বর্গে আরোহণ করেন। ইব্রীয় ১০:১২ পদ জানায়: “ইনি পাপার্থক একই যজ্ঞ চিরকালের জন্য উৎসর্গ করিয়া ঈশ্বরের দক্ষিণে উপবিষ্ট হইলেন।” কিধরনের কর্তৃত্ব যীশুর ছিল? “[ঈশ্বর] তাঁহাকে . . . স্বর্গীয় স্থানে নিজ দক্ষিণ পার্শ্বে বসাইয়াছেন, সমস্ত আধিপত্য, কর্ত্তৃত্ব, পরাক্রম, ও প্রভুত্বের উপরে, . . . এবং তাঁহাকেই সকলের উপরে উচ্চ মস্তক করিয়া মণ্ডলীকে দান করিলেন।” (ইফিষীয় ১:২০-২২) যেহেতু সেই সময় খ্রীষ্টানদের উপর যীশুর এক রাজকীয় কর্তৃত্ব ছিল, তাই পৌল লিখতে পেরেছিলেন যে যিহোবা “আমাদিগকে অন্ধকারের কর্ত্তৃত্ব হইতে উদ্ধার করিয়া আপন প্রেমভূমি পুত্ত্রের রাজ্যে আনয়ন করিয়াছেন।”—কলসীয় ১:১৩; ৩:১.
১৫, ১৬. (ক) কেন আমরা বলি যে সা.শ. ৩৩ সালে যীশু ঈশ্বরের রাজ্যের রাজা হননি? (খ) কখন যীশু ঈশ্বরের রাজ্যে শাসন শুরু করেন?
১৫ কিন্তু, সেই সময়, যীশু সমগ্র জাতির উপর রাজা ও বিচারক হিসাবে কাজ করেননি। তিনি ঈশ্বরের পাশে বসেছিলেন আর সেই সময়ের জন্য অপেক্ষা করছিলেন যখন তিনি ঈশ্বরের রাজ্যের রাজা হিসাবে কাজ করবেন। তাঁর সম্বন্ধে পৌল লিখেছিলেন: “তিনি দূতগণের মধ্যে কাহাকে কোন্ সময়ে বলিয়াছেন, ‘তুমি আমার দক্ষিণে বস, যাবৎ আমি তোমার শত্রুগণকে তোমার পাদপীঠ না করি’?”—ইব্রীয় ১:১৩.
১৬ যিহোবার সাক্ষীরা অনেক প্রমাণ প্রকাশ করেছে যা দেখায় যে যীশুর এই অপেক্ষার সময়টি ১৯১৪ সালে শেষ হয়ে যায়, যখন তিনি অদৃশ্য স্বর্গে ঈশ্বরের রাজ্যের শাসক হন। প্রকাশিত বাক্য ১১:১৫, ১৮ পদ বলে: “‘জগতের রাজ্য আমাদের প্রভুর ও তাঁহার খ্রীষ্টের হইল, এবং তিনি যুগপর্য্যায়ের যুগে যুগে রাজত্ব করিবেন।’” “আর জাতিগণ ক্রুদ্ধ হইয়াছিল, কিন্তু তোমার ক্রোধ উপস্থিত হইল।” হ্যাঁ, ১ম বিশ্বযুদ্ধের সময় জাতিগণ একে অপরের প্রতি ক্রোধ প্রকাশ করেছিল। (লূক ২১:২৪) যুদ্ধবিগ্রহ, ভূমিকম্প, মহামারী, খাদ্যাভাব ও অন্যান্য ঘটনাগুলি যা আমরা ১৯১৪ সাল থেকে দেখে আসছি তা প্রমাণ করে যে যীশু ঈশ্বরের রাজ্যে এখন শাসন করছেন এবং জগতের শেষ পরিণতি সন্নিকট।—মথি ২৪:৩-১৪.
১৭. এতক্ষণ পর্যন্ত আমরা কোন্ মুখ্য বিষয়টি ব্যাখ্যা করলাম?
১৭ একবার সংক্ষেপে পুনরালোচনা করে দেখা যাক: এটা বলা যায় যে ঈশ্বর সিংহাসনে রাজা হিসাবে উপবিষ্ট হয়েছেন, কিন্তু আরেক অর্থে তিনি বিচার করার জন্য তাঁর সিংহাসনে বসেছেন। সা.শ. ৩৩ সালে যীশু ঈশ্বরের দক্ষিণ দিকে বসেন আর এখন তিনি রাজ্যের রাজা। কিন্তু এখন যীশু রাজা হিসাবে শাসন করছেন, এর সাথে কি তিনি বিচারক হিসাবেও কাজ করছেন? আর এটা কেন আমাদের চিন্তার বিষয় হওয়া উচিত, বিশেষকরে এই সময়ে?
১৮. কী প্রমাণ আছে যে যীশু বিচারকও হবেন?
১৮ যিহোবা, যাঁর অধিকার আছে বিচারক মনোনীত করা, তিনি তাঁর মান অনুসারে বিচারক হিসাবে যীশুকে মনোনয়ন করেছেন। যীশু এটি প্রকাশ করেন যখন তিনি সেই সব লোকেদের সম্বন্ধে কথা বলছিলেন যারা আধ্যাত্মিকভাবে জীবন্ত হয়ে উঠেছিল: “পিতা কাহারও বিচার করেন না, কিন্তু সমস্ত বিচার-ভার পুত্ত্রকে দিয়াছেন।” (যোহন ৫:২২) তবুও যীশুর এই বিচারকের ভূমিকা এইধরনের বিচার করার থেকে আরও অতিরিক্ত কিছু সম্পাদন করে, কারণ তিনি জীবিত ও মৃতদের বিচারক। (প্রেরিত ১০:৪২; ২ তীমথিয় ৪:১) একবার পৌল ঘোষণা করেছিলেন: “[ঈশ্বর] একটী দিন স্থির করিয়াছেন, যে দিনে আপনার নিরূপিত ব্যক্তি [যীশু] দ্বারা ন্যায়ে জগৎসংসারের বিচার করিবেন; এই বিষয়ে সকলের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ দিয়াছেন, ফলতঃ মৃতগণের মধ্য হইতে তাঁহাকে উঠাইয়াছেন।”—প্রেরিত ১৭:৩১; গীতসংহিতা ৭২:২-৭.
১৯. যীশু বিচারক হিসাবে উপবিষ্ট হয়েছেন এটা বলা কেন সঠিক?
১৯ তাহলে আমাদের পক্ষে এই পরিসমাপ্তিতে আসা কি যথার্থ হবে যে যীশু এক মহিমান্বিত সিংহাসনে বসেছেন নির্দিষ্টভাবে তাঁর এই বিচারকের ভূমিকাটি পালন করতে? হ্যাঁ। যীশু প্রেরিতদের বলেছিলেন: “তোমরা যত জন আমার পশ্চাদ্গামী হইয়াছ, পুনঃসৃষ্টিকালে, যখন মনুষ্যপুত্ত্র আপন প্রতাপের সিংহাসনে বসিবেন, তখন তোমরাও দ্বাদশ সিংহাসনে বসিয়া ইস্রায়েলের দ্বাদশ বংশের বিচার করিবে।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (মথি ১৯:২৮) যদিও যীশু হলেন এখন রাজ্যের রাজা, কিন্তু তাঁর অতিরিক্ত কাজ যা মথি ১৯:২৮ পদে উল্লেখিত হয়েছে, তার অন্তর্ভুক্ত হল সহস্র বছর শাসনের সময়ে সিংহাসনে বসে বিচার করা। সেই সময় তিনি ধার্মিক ও অধার্মিক সকল মানবজাতির বিচার করবেন। (প্রেরিত ২৪:১৫) এটা মনে রাখা কার্যকারী হবে যখন আমরা যীশুর একটি দৃষ্টান্তের প্রতি মনোনিয়োগ করব যার সাথে আমাদের দিন ও জীবন জড়িত রয়েছে।
দৃষ্টান্তটি কী বলে?
২০, ২১. যীশুর প্রেরিতেরা কী জিজ্ঞাসা করেন যার সাথে আমাদের দিনের সম্পর্ক আছে ও এই পরিপ্রেক্ষিতে কোন্ প্রশ্নটি উত্থাপিত হয়?
২০ যীশুর মৃত্যু হওয়ার কিছুদিন আগে, তাঁর প্রেরিতেরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন: “এই সকল কখন্ হইবে? আর আপনার আগমনের (“উপস্থিতির,” NW) এবং যুগান্তের চিহ্ন কি?” (মথি ২৪:৩) ‘শেষ আসার’ আগে পৃথিবীতে কিছু তাৎপর্যমূলক ঘটনার বিষয় যীশু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। সেই শেষ আসার কিছু আগে জাতিগুলি “‘মনুষ্যপুত্ত্রকে আকাশীয় মেঘরথে পরাক্রম ও মহা প্রতাপে আসিতে’ দেখিবে।”—মথি ২৪:১৪, ২৯, ৩০.
২১ কিন্তু, সেই সব দেশের লোকেদের অবস্থা কী হবে যখন মনুষ্যপুত্র প্রতাপে আসবেন? আসুন আমরা মেষ ও ছাগের দৃষ্টান্তটি থেকে এর উত্তর পাওয়ার চেষ্টা করি যা এই বাক্যগুলির দ্বারা শুরু হয়: “আর যখন মনুষ্যপুত্ত্র সমুদয় দূত সঙ্গে করিয়া আপন প্রতাপে আসিবেন, তখন তিনি নিজ প্রতাপের সিংহাসনে বসিবেন। আর সমুদয় জাতি তাঁহার সম্মুখে একত্রীকৃত হইবে।”—মথি ২৫:৩১, ৩২.
২২, ২৩. কোন্ বিষয়টি ইঙ্গিত দেয় যে মেষ ও ছাগের দৃষ্টান্তটি ১৯১৪ সাল থেকে পরিপূর্ণতা লাভ করতে শুরু করেনি?
২২ এই দৃষ্টান্তটিকে কি ১৯১৪ সালে প্রয়োগ করা যেতে পারে যখন যীশু তাঁর রাজকীয় ক্ষমতায় উপবিষ্ট হন, যা আমরা এতদিন বুঝে এসেছি? মথি ২৫:৩৪ পদ তাঁকে রাজা হিসাবে অভিহিত করে, অতএব যুক্তিসঙ্গতভাবে এই দৃষ্টান্তটির প্রয়োগ করা যেতে পারে ১৯১৪ সালে যখন যীশু রাজা হন। কিন্তু এর ঠিক পরেই তিনি কিধরনের বিচার করেন? সেই সময়ে “সমুদয় জাতি” বিচারিত হয় না। বরঞ্চ, তিনি তাদের প্রতি দৃষ্টি দেন যারা “ঈশ্বরের গৃহে”-র সদস্য হওয়ার দাবি জানায়। (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (১ পিতর ৪:১৭) মালাখি ৩:১-৩ পদ অনুসারে, যিহোবার সংবাদবাহক হিসাবে যীশু পৃথিবীতে অবশিষ্ট অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের উপর বিচার সংক্রান্ত অনুসন্ধান করেন। এছাড়াও সেই সময়টি ছিল খ্রীষ্টজগতের উপর বিচারের এক দণ্ডাজ্ঞার সময়, যারা মিথ্যাভাবে “ঈশ্বরের গৃহে”-রc সদস্য হওয়ার দাবি জানাচ্ছিল। (প্রকাশিত বাক্য ১৭:১, ২; ১৮:৪-৮) অথচ কোন কিছুই ইঙ্গিত দেয় না যে সেই সময় অথবা সেই সময় থেকে শুরু করে যীশু বিচারক হিসাবে উপবিষ্ট হয়ে সমুদয় জাতির লোকেদের পরিশেষে মেষ অথবা ছাগ হিসাবে বিচার করেছেন।
২৩ এই দৃষ্টান্তটির মধ্যে দেওয়া যীশুর কার্যকলাপটি যদি আমরা গভীরভাবে বিবেচনা করে দেখি, তাহলে আমরা দেখতে পাব যে অবশেষে তিনি সমুদয় জাতির বিচার করছেন। দৃষ্টান্তটি এটা দেখায় না যে এই বিচারের কাজটি অনেক বছর ধরে ক্রমাগতভাবে চলতে থাকবে, এই অর্থে যে প্রত্যেকটি ব্যক্তি যারা বিগত দশকগুলিতে মারা গেছে তারা ন্যায়সঙ্গতভাবে অনন্ত মৃত্যু অথবা অনন্ত জীবনের জন্য বিচারিত হয়ে গেছে। এটা মনে হয় যে অধিকাংশই যারা সাম্প্রতিক দশকগুলিতে মারা গেছে, তারা মানবজাতির সাধারণ কবরেই প্রস্থান করেছে। (প্রকাশিত বাক্য ৬:৮; ২০:১৩) কিন্তু, দৃষ্টান্তটি সেই সময়কার কথা বলে যখন যীশু “সমুদয় জাতি”-র লোকেদের বিচার করবেন যারা সেই সময় জীবিত থাকবে ও তাঁর বিচার দণ্ডাজ্ঞার সম্মুখীন হবে।
২৪. কখন মেষ ও ছাগের দৃষ্টান্তটি পরিপূর্ণতা লাভ করবে?
২৪ আরেক কথায় বলতে গেলে, দৃষ্টান্তটি ভবিষ্যতের কথা বলে যখন মনুষ্যপুত্র আপন প্রতাপে আসবেন। সেই সময় যে সব লোকেরা জীবিত থাকবে তিনি তাদের বিচার করার জন্য উপবিষ্ট হবেন। যেভাবে তারা নিজেদের প্রকাশ করেছে তারই ভিত্তিতে তিনি তাদের বিচার করবেন। সেই সময় “ধার্ম্মিক ও দুষ্টের মধ্যে . . . প্রভেদ” স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে। (মালাখি ৩:১৮) বিচারের প্রকৃত ঘোষণা ও তা বলবৎ করার সময়টি থাকবে খুবই সীমিত। ব্যক্তি বিশেষদের সম্বন্ধে যা কিছু প্রকাশ পাবে তারই ভিত্তিতে যীশু সঠিক নির্ণয় নেবেন।—আরও দেখুন ২ করিন্থীয় ৫:১০.
২৫. মনুষ্য পুত্র প্রতাপের সিংহাসনে বসেছেন এই বিষয়টি উল্লেখ করার সময় মথি ২৫:৩১ পদ কী বোঝাতে চেয়েছে?
২৫ তাহলে এর অর্থ এই দাঁড়ায় যে, বিচার করার জন্য যীশুর ‘প্রতাপের সিংহাসনে উপবিষ্ট হওয়া’ যা মথি ২৫:৩১ পদে উল্লেখিত হয়েছে তা হল ভবিষ্যতের বিষয়, যখন এই শক্তিমান রাজা জাতিগণের উপর বিচার ঘোষণা ও বলবৎ করার জন্য উপবিষ্ট হবেন। তবুও, যীশুকে কেন্দ্র করে বিচারের দৃশ্যটি যা মথি ২৫:৩১-৩৩, ৪৬ পদে পাওয়া যায় সেটি দানিয়েলের ৭ অধ্যায়ে উল্লেখিত দৃশ্যটির সাথে তুলনীয়, যেখানে শাসনকারী রাজা, অনেক দিনের বৃদ্ধ, তাঁর বিচারকের ভূমিকাটি পালন করার জন্য উপবিষ্ট হয়েছিলেন।
২৬. দৃষ্টান্তটির কোন্ নতুন ব্যাখ্যা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে?
২৬ এইভাবে মেষ ও ছাগের দৃষ্টান্তটির বোধগম্যতা, ইঙ্গিত করে যে মেষ ও ছাগের উপর বিচার নিষ্পত্তি হল ভবিষ্যতের বিষয়। এটি হবে মথি ২৪:২৯, ৩০ পদে উল্লেখিত “মহাক্লেশ” শুরু হওয়ার এবং মনুষ্যপুত্রের ‘মহাপ্রতাপে আসার’ পর। (তুলনা করুন মার্ক ১৩:২৪-২৬.) সেই সময়ে সমগ্র দুষ্ট বিধিব্যবস্থা যখন শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছাবে তখন যীশু বিচারালয়ে বসে বিচার শোনাবেন ও তা বলবৎ করবেন।—যোহন ৫:৩০; ২ থিষলনীকীয় ১:৭-১০.
২৭. যীশুর শেষ দৃষ্টান্তটির সম্বন্ধে আমরা কী জানতে আগ্রহান্বিত হব?
২৭ এই বিষয়টিই যীশুর দৃষ্টান্তটির সময় সম্বন্ধে আমাদের ধারণাকে পররিষ্কার করে দেয়, যা দেখায় যে কখন মেষ ও ছাগেরা বিচারিত হবে। কিন্তু আমরা যারা উদ্যোগের সাথে রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করে চলেছি, এটা আমাদের কিভাবে প্রভাবিত করে? (মথি ২৪:১৪) এটা কি আমাদের কাজকে অপেক্ষাকৃতভাবে কম তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলে না কি আমাদের উপর আরও অধিক দায়িত্বভার নিয়ে আসে? আসুন আমরা পরবর্তী প্রবন্ধটিতে লক্ষ্য করি যে কিভাবে আমরা প্রভাবিত হচ্ছি।
[পাদটীকাগুলো]
a দানিয়েল ৭:১০, ২৬ পদে যে “বিচার” শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে তা ইষ্রা ৭:২৬ ও দানিয়েল ৪:৩৭; ৭:২২ পদেও পাওয়া যায়।
b খ্রীষ্টানদের একে অপরকে বিচারালয়ে নিয়ে যাওয়ার সম্বন্ধে পৌল জিজ্ঞাসা করেন: “মণ্ডলীতে যাহারা কিছুরই মধ্যে গণ্য নয়, তাহাদিগকেই কি বিচারে বসাইয়া থাক? [আক্ষরিক অর্থে “আপনি কি বসে আছেন]”?”—১ করিন্থীয় ৬:৪.
c ওয়াচটাওয়ার বাইবেল অ্যাণ্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটি দ্বারা প্রকাশিত, প্রকাশিত বাক্য—তার মহান পরিপূর্ণতা সন্নিকট! (ইংরাজি) পৃষ্ঠা ৫৬, ৭৩, ২৩৫-৪৫, ২৬০ দেখুন।
আপনার কি মনে আছে?
◻ যিহোবা কিভাবে রাজা ও বিচারক হিসাবে কাজ করেন?
◻ ‘সিংহাসনে উপবিষ্ট হওয়ার’ কোন্ দুটি অর্থ আছে?
◻ আগে আমরা মথি ২৫:৩১ পদের সময় সম্বন্ধে কী বলতাম, কিন্তু পরিবর্তিত চিন্তাধারার ভিত্তি কী?
◻ কখন মনুষ্যপুত্র তাঁর সিংহাসনে উপবিষ্ট হন যার ইঙ্গিত মথি ২৫:৩১ পদে পাওয়া যায়?