জীবন ও পরিচর্যা সভার জন্য অধ্যয়ন পুস্তিকা-র রেফারেন্স
ফেব্রুয়ারি ৩-৯
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন
আদিপুস্তক ১২-১৪
“এক চুক্তি, যা আপনাকে প্রভাবিত করে”
অন্তর্দৃষ্টি-১ ৫২২ অনু. ৪
চুক্তি
অব্রাহামের সঙ্গে করা চুক্তি। স্পষ্টতই, অব্রাহামের সঙ্গে করা চুক্তি সেই সময় কার্যকর হয়েছিল, যখন অব্রাম (অব্রাহাম) কনানে যাওয়ার সময় ইউফ্রেটিস নদী পার হয়েছিলেন। এর ৪৩০ বছর পর ব্যবস্থা চুক্তি করা হয়েছিল। (গালা ৩:১৭) অব্রাহাম যখন কল্দীয় দেশের ঊরের মিসপতামিয়ায় বাস করতেন, তখন যিহোবা তার সঙ্গে কথা বলেছিলেন ও তাকে সেই দেশে যেতে বলেছিলেন, যে-দেশ ঈশ্বর তাকে দেখাবেন। (প্রেরিত ৭:২, ৩; আদি ১১:৩১; ১২:১-৩) যাত্রাপুস্তক ১২:৪০, ৪১ পদ (LXX) আমাদের জানায়, মিশর ও কনান দেশে ৪৩০ বছর বাস করার পর ইস্রায়েলীয়রা, যারা মিশরে দাস ছিল, “ঐ দিনে” বের হল। যে-দিন তারা মিশর থেকে মুক্ত হয়েছিল, সেটা ছিল খ্রিস্টপূর্ব ১৫১৩ সালের ১৪ নিশান আর এটা ছিল নিস্তারপর্বের তারিখ। (যাত্রা ১২:২, ৬, ৭) এটা হয়তো এই ইঙ্গিত দেয় যে, খ্রিস্টপূর্ব ১৯৪৩ সালের ১৪ নিশান অব্রাহাম কনানে যাওয়ার সময় ইউফ্রেটিস নদী পার হয়েছিলেন আর স্পষ্টতই সেই সময় অব্রাহামের সঙ্গে করা চুক্তি কার্যকর হয়েছিল। অব্রাহাম কনান দেশের শিখিম পর্যন্ত যাত্রা করার পর ঈশ্বর আবারও তাকে দর্শন দেন এবং তাঁর প্রতিজ্ঞা সম্বন্ধে আরও বিস্তারিতভাবে জানান। তাকে বলেন, “আমি তোমার বংশকে এই দেশ দিব।” এই কথা বলার মাধ্যমে ঈশ্বর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, এই চুক্তির সঙ্গে এদনে করা প্রতিজ্ঞার এক যোগসূত্র রয়েছে আর এটাও প্রকাশ করেছিলেন যে, আদিপুস্তক ৩:১৫ পদে উল্লেখিত ‘বংশ’ মানবপরিবার থেকে আসবে। (আদি ১২:৪-৭) পরবর্তী সময়ে যিহোবা আরও বিস্তারিত তথ্য প্রদান করেছিলেন, যেমনটা আদি ১৩:১৪-১৭; ১৫:১৮; ১৭:২-৮, ১৯; ২২:১৫-১৮ পদে লিপিবদ্ধ রয়েছে।
প্রহরীদুর্গ ৮৯ ৭/১ ৩ অনু. ৪
যে-কারণে অব্রাহাম সম্বন্ধে সত্যটা আপনার জানা উচিত
এটা ছিল এক উল্লেখযোগ্য প্রতিজ্ঞা আর অব্রাহাম অন্ততপক্ষে আরও দু-বার এই প্রতিজ্ঞার বিষয়ে বলতে শুনেছিলেন। (আদি ১৮:১৮; ২২:১৮) এই প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ করার জন্য ঈশ্বর এমনকী মৃত ব্যক্তিদেরও পুনরুত্থিত করবেন। এই পুনরুত্থিত ব্যক্তিদের জীবন সত্যিই আশীর্বাদ স্বরূপ হবে, কারণ তাদের মধ্যে অধিকাংশই এমন এক পার্থিব পরিবেশে বেঁচে উঠবে, যা পরমদেশের মতো হবে, যেটাকে মানুষেরা একেবারে শুরুতেই হারিয়ে ফেলেছিল। এরপর, তাদের শেখানো হবে, কীভাবে অনন্তজীবনের আশীর্বাদ লাভ করতে হয়।—আদি ২:৮, ৯, ১৫-১৭; ৩:১৭-২৩.
অন্তর্দৃষ্টি-২ ২১৩ অনু. ৩
ব্যবস্থা
প্রাসঙ্গিক ঐতিহাসিক প্রমাণের উপর ভিত্তি করে কোনো কোনো পণ্ডিত ব্যক্তি মনে করেন, জমি হস্তান্তরের সময় ক্রেতাকে এমন একটা জায়গা থেকে জমিটা দেখানো হতো, যেখান থেকে তিনি সঠিকভাবে চিহ্নিত করা সীমানাসহ পুরো জমিটা দেখতে পেতেন। ক্রেতা যখন বলতেন “আমি দেখেছি,” তখন তিনি যে আইনতভাবে জমি গ্রহণ করেছেন, তা ইঙ্গিত করতেন। যিহোবা যখন অব্রাহামের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, তিনি কনান দেশ লাভ করবেন, তখন অব্রাহামকে প্রথমে চার দিক দেখতে বলা হয়েছিল। অব্রাহাম সেই সময় বলেননি, “আমি দেখেছি।” সম্ভবত এর কারণ হল, ঈশ্বর বলেছিলেন, তিনি পরবর্তীকালে এই প্রতিজ্ঞাত দেশ অব্রাহামের বংশকে দেবেন। (আদি ১৩:১৪, ১৫) মোশিকে ইস্রায়েলের বৈধ প্রতিনিধি হিসেবে সেই দেশ ‘দেখিতে’ বলা হয়েছিল। উপরে আলোচিত ধারণা যদি সত্যি হয়, তা হলে এটা ইঙ্গিত দিয়েছিল, ইস্রায়েলকে বৈধভাবে জমি হস্তান্তরিত করা আর তাদের জন্য এটার অর্থ ছিল, যিহোশূয়ের নেতৃত্বাধীনে সেই দেশ অধিকার করা। (দ্বিতীয় ৩:২৭, ২৮; ৩৪:৪; এ ছাড়া, মথি ৪:৮ পদে যিশুকে দেওয়া শয়তানের প্রস্তাবটাও বিবেচনা করুন।) আরেকটা কাজ ছিল, যেটার সঙ্গেও একইরকম আইনি বিষয় জড়িত ছিল বলে মনে হয় আর সেটা হল, জমি অধিকার করার উদ্দেশে জমির এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত হেঁটে যাওয়া কিংবা জমিতে প্রবেশ করা। (আদি ১৩:১৭; ২৮:১৩) কিছু কিছু প্রাচীন নথিতে, জমি-জায়গা বিক্রির সময় সেখানে থাকা গাছের সংখ্যাও তালিকাভুক্ত করা হতো।—তুলনা করুন, আদি ২৩:১৭, ১৮.
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
প্রেমপূর্ণ মনোভাব নিয়ে মতভেদ মীমাংসা করুন
১২ মতপার্থক্য দেখা দিলে ঈশ্বরের দাসেরা যেভাবে শান্তি বজায় রাখতে পারে, সেই বিষয়ে বাইবেল তুলে ধরে। উদাহরণ স্বরূপ, অব্রাহাম ও তার ভাইপো লোটের অনেক পশু ছিল আর তারা যেখানে থাকত, সেখানে তাদের সমস্ত পশুর জন্য যথেষ্ট চারণভূমি ছিল না। এই কারণে তাদের পশুপালকরা ঝগড়া করতে শুরু করেছিল। অব্রাহাম যেহেতু শান্তি বজায় রাখতে চেয়েছিলেন, তাই তিনি লোটকে উত্তম ভূমি বেছে নিতে দিয়েছিলেন। (আদি. ১৩:১, ২, ৫-৯) আমাদের জন্য কতই-না উত্তম উদাহরণ! উদারতা দেখানোর কারণে অব্রাহাম কি স্থায়ী ক্ষতি ভোগ করেছিলেন? না। কারণ এই ঘটনার পর পরই, যিহোবা অব্রাহামের কাছে এই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, অব্রাহাম যা হারিয়েছেন, সেটার চেয়ে আরও বেশি আশীর্বাদ তিনি লাভ করবেন। (আদি. ১৩:১৪-১৭) এখান থেকে আমরা কী শিখতে পারি? আমরা যখন প্রেমপূর্ণ মনোভাব নিয়ে মতপার্থক্য মিটমাট করি, তখন আমাদের নিজেদের স্বার্থ কিছুটা ত্যাগ করতে হলেও যিহোবা আমাদের আশীর্বাদ করবেন।
অন্তর্দৃষ্টি-২ ৬৮৩ অনু. ১
যাজক
শালেমের রাজা মল্কীষেদক একজন ব্যতিক্রমী যাজক (কোহিন) ছিলেন। বাইবেলে তার বংশতালিকা, জন্ম ও মৃত্যুর কোনো নথি লিপিবদ্ধ নেই। তিনি উত্তরাধিকারসূত্রে যাজকপদ পাননি আর যাজক হিসেবে তার কোনো পূর্বসূরী ও উত্তরসূরী ছিল না। মল্কীষেদক রাজা ও যাজক, উভয়ই ছিলেন। লেবীয় যাজকপদের চেয়ে তার যাজকপদ শ্রেষ্ঠ ছিল, কারণ এক অর্থে লেবি মল্কীষেদককে দশমাংশ দান করেছিলেন, যেহেতু তিনি তখনও অব্রাহামের কটিতে ছিলেন, যখন অব্রাহাম মল্কীষেদককে দশমাংশ দান করেছিলেন ও তার কাছ থেকে আশীর্বাদ লাভ করেছিলেন। (আদি ১৪:১৮-২০; ইব্রীয় ৭:৪-১০) এই ক্ষেত্রগুলোতে মল্কীষেদক যিশু খ্রিস্টের পূর্বাভাস ছিলেন, যিনি “মল্কীষেদকের রীতি অনুসারে অনন্তকালীন যাজক।”—ইব্রীয় ৭:১৭.
ফেব্রুয়ারি ১০-১৬
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন
আদিপুস্তক ১৫-১৭
“যিহোবা অব্রাম ও সারীকে নতুন নাম দিয়েছিলেন—কেন?”
অন্তর্দৃষ্টি-১ ৮১৭
দোষ, দোষ খোঁজা
অন্যদিকে, মানুষের পথ ও মানুষ যা তৈরি করে, সেগুলোতে প্রায়ই কোনো-না-কোনো খুঁত থাকে। মানুষ মাত্রই পাপ ও ভুল করে আর এই বৈশিষ্ট্য তারা আদমের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছে। (রোমীয় ৫:১২; গীত ৫১:৫) কিন্তু যিহোবা, যিনি ত্রুটিহীন, “আমাদের গঠন জানেন; আমরা যে ধূলিমাত্র, ইহা তাঁহার স্মরণে আছে” আর তাই তিনি করুণাময়। (গীত ১০৩:১৩, ১৪) তিনি বিশ্বস্ত ও বাধ্য নোহকে “তাৎকালিক লোকদের মধ্যে . . . সিদ্ধ [“নির্দোষ,” NW]” হিসেবে দেখেছিলেন। (আদি ৬:৯) তিনি অব্রাহামকে আদেশ দিয়েছিলেন, “তুমি আমার সাক্ষাতে গমনাগমন করিয়া সিদ্ধ [“নির্দোষ,” NW] হও।” (আদি ১৭:১) যদিও এই উভয় ব্যক্তিই অসিদ্ধ ছিলেন ও মারা গিয়েছিলেন, কিন্তু যিহোবা, যিনি “অন্তঃকরণের প্রতি দৃষ্টি করেন,” তাদের সিদ্ধ বা নির্দোষ হিসেবে দেখেছিলেন। (১শমূ ১৬:৭; তুলনা করুন, ২রাজা ২০:৩; ২বংশা ১৬:৯) তিনি ইস্রায়েলকে আদেশ দিয়েছিলেন: “তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে সিদ্ধ [“নির্দোষ,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন] হও।” (দ্বিতীয় ১৮:১৩; ২শমূ ২২:২৪) তিনি তাঁর নির্দোষ পুত্রকে (ইব্রীয় ৭:২৬) মুক্তির মূল্যরূপ বলিদান হিসেবে দিয়ে দিয়েছিলেন। যারা বিশ্বাস ও বাধ্যতা দেখায়, তাদের তিনি এই বলিদানের উপর ভিত্তি করে “ধার্ম্মিক” বা নির্দোষ হিসেবে গণ্য করতে পারেন এবং একইসঙ্গে একজন ধার্মিক ও ন্যায্য বিচারক হিসেবে নিজের অবস্থান বজায় রাখতে পারেন।—রোমীয় ৩:২৫, ২৬; দেখুন, বিশ্বস্ততা; সিদ্ধতা।
অন্তর্দৃষ্টি-১ ৩১ অনু. ১
অব্রাহাম
সময় অতিবাহিত হয়। কনানে তাদের দশ বছর কেটে গিয়েছে আর সারা এখনও কোনো সন্তানের জন্ম দেননি। তাই তিনি নিজের পরিবর্ত হিসেবে তার মিশরীয় দাসী হাগারকে দেওয়ার প্রস্তাব দেন, যাতে তার মাধ্যমে একটা সন্তান পেতে পারেন। অব্রাহাম এতে সম্মত হন। তাই খ্রিস্টপূর্ব ১৯৩২ সালে, অব্রাহামের বয়স যখন ৮৬ বছর, তখন ইশ্মায়েলের জন্ম হয়। (আদি ১৬:৩, ১৫, ১৬) আরও সময় অতিবাহিত হয়। খ্রিস্টপূর্ব ১৯১৯ সালে, অব্রাহামের বয়স যখন ৯৯ বছর, তখন যিহোবা আদেশ দেন, যেন অব্রাহামের পরিবারের সমস্ত পুরুষের ত্বক্চ্ছেদ করানো হয়, যেটা তাঁর ও অব্রাহামের মধ্যে যে-বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে, সেটার প্রমাণ স্বরূপ এক চিহ্ন বা নিশ্চয়তা। সেই সময়ই যিহোবা তার নাম অব্রাম পরিবর্তন করে অব্রাহাম রাখেন, “কেননা আমি তোমাকে বহুজাতির আদিপিতা করিলাম।” (আদি ১৭:৫, ৯-২৭; রোমীয় ৪:১১) এর কিছু সময় পরেই মানুষের রূপ ধারণকারী তিন জন স্বর্গদূত, যাদের প্রতি অব্রাহাম ঈশ্বরের নামে আতিথেয়তা দেখিয়েছিলেন, তারা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, সারা নিজে গর্ভবতী হয়ে এক পুত্রের জন্ম দেবেন, হ্যাঁ, এক বছরের মধ্যেই!—আদি ১৮:১-১৫.
নাম কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
ভবিষ্যদ্বাণীমূলক অর্থ প্রদান করার জন্য ঈশ্বর নিজে নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির নাম পরিবর্তন করেছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ, তিনি অব্রামের নাম, যেটার অর্থ “মহাপিতা,” পরিবর্তন করে অব্রাহাম রাখেন, যেটার অর্থ “বহুলোকের পিতা।” এই নামের সঙ্গে মিল রেখে অব্রাহাম সত্যিই অনেক জাতির পিতা হয়েছিলেন। (আদিপুস্তক ১৭:৫, ৬) এ ছাড়া, অব্রাহামের স্ত্রী সারীর কথাও বিবেচনা করুন, যার নামের অর্থ খুব সম্ভবত “বিবাদী।” তিনি সেইসময় নিশ্চয়ই খুব খুশি হয়েছিলেন, যখন ঈশ্বর তার নাম পরিবর্তন করে “সারা” রাখেন, যেটার অর্থ “রাণী” আর এটা ইঙ্গিত দিয়েছিল, তিনি রাজাদের পূর্বপুরুষী হয়ে উঠবেন।—আদিপুস্তক ১৭:১৫, ১৬.
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
অন্তর্দৃষ্টি-১ ৪৬০-৪৬১
সময় সারণি
যিহোবা অব্রামকে (অব্রাহামকে) বলেছিলেন: “নিশ্চয় জানিও, তোমার সন্তানগণ পরদেশে প্রবাসী থাকিবে, এবং বিদেশী লোকদের দাস্যকর্ম্ম করিবে, ও লোকে তাহাদিগকে দুঃখ দিবে—চারি শত বৎসর পর্য্যন্ত।” (আদি ১৫:১৩; এ ছাড়া, প্রেরিত ৭:৬, ৭ পদ দেখুন।) প্রতিজ্ঞাত উত্তরাধিকার বা “বংশ,” ইস্হাকের জন্মের আগে এই কথা বলা হয়েছিল। খ্রিস্টপূর্ব ১৯৩২ সালে মিশরীয় দাসী হাগারের মাধ্যমে অব্রামের পুত্র ইশ্মায়েলের জন্ম হয় আর খ্রিস্টপূর্ব ১৯১৮ সালে ইস্হাকের জন্ম হয়। (আদি ১৬:১৬; ২১:৫) মিশর থেকে ইস্রায়েলীয়দের বার হওয়া, “দুঃখ” ভোগের (আদি ১৫:১৪) শেষকে নির্দেশ করে। সেই সময় থেকে ৪০০ বছর পিছনে ফিরে গেলে আমরা খ্রিস্টপূর্ব ১৯১৩ সালে এসে পৌঁছাই আর সেই সময় ইস্হাকের বয়স ছিল প্রায় পাঁচ বছর। স্পষ্টতই, ইস্হাক তত দিনে স্তন্যপান ত্যাগ করেছিলেন এবং ইতিমধ্যে পরদেশে “প্রবাসী” হিসেবে বাস করছিলেন। আর তখনই তিনি ভবিষ্যদ্বাণীকৃত দুঃখ ভোগ করতে শুরু করেছিলেন, যখন ইশ্মায়েল, যার বয়স প্রায় ১৯ বছর, তাকে “পরিহাস” করেছিল। (আদি ২১:৮, ৯) অব্রাহামের উত্তরাধিকারীকে ইশ্মায়েল যে উপহাস করেছিল, সেটাকে আধুনিক সময়ে হয়তো ততটা গুরুত্ব দিয়ে দেখা না-ও হতে পারে কিন্তু কুলপতিদের সময়ে তেমনটা হতো না। সেই সময় সারার প্রতিক্রিয়া এবং তিনি যখন হাগার ও তার পুত্র ইশ্মায়েলকে তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য জোরাজুরি করেছিলেন, তখন তাতে ঈশ্বরের অনুমোদন এই বিষয়টার প্রমাণ দেয়। (আদি ২১:১০-১৩) এই ঘটনাটা যে ঈশ্বরের অনুপ্রেরণায় বিস্তারিতভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, তা এই বিষয়টার প্রমাণ দেয় যে, সেই সময়ই ভবিষ্যদ্বাণীকৃত ৪০০ বছরের দুঃখ ভোগের সময়কাল শুরু হয়, যা মিশর থেকে ইস্রায়েলীয়দের বার না হওয়া পর্যন্ত শেষ হবে না।—গালা ৪:২৯.
অন্তর্দৃষ্টি-১ ৭৭৮ অনু. ৪
মিশর থেকে ইস্রায়েলীয়দের বার হওয়া
“চতুর্থ পুরুষ।” এই বিষয়টা আমাদের মনে রাখতে হবে যে, যিহোবা অব্রাহামকে বলেছিলেন, তার বংশের চতুর্থ পুরুষ কনান দেশে ফিরে আসবে। (আদি ১৫:১৬) সেই সময়ের লোকেদের দীর্ঘ আয়ুর বিষয়টা বিবেচনা করেও নথি অনুসারে অব্রাহামের সঙ্গে করা চুক্তি কার্যকর হওয়ার সময় থেকে শুরু করে মিশর থেকে ইস্রায়েলীয়দের বার হওয়ার সময় পর্যন্ত মোট ৪৩০ বছরে চারটের বেশি পুরুষ বা প্রজন্ম ছিল। কিন্তু, ইস্রায়েলীয়রা প্রকৃত অর্থে মিশরে ছিল মাত্র ২১৫ বছর। তাই, ইস্রায়েলের লেবির বংশকে উদাহরণ হিসেবে ধরে, মিশরে প্রবেশ করার পর থেকে ‘চার পুরুষ’ এভাবে গণনা করা যেতে পারে: (১) লেবি, (২) কহাৎ, (৩) অম্রম ও (৪) মোশি।—যাত্রা ৬:১৬, ১৮, ২০.
ফেব্রুয়ারি ১৭-২৩
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন
আদিপুস্তক ১৮-১৯
“‘সমস্ত পৃথিবীর বিচারকর্ত্তা’ সদোম ও ঘমোরা ধ্বংস করেন”
“সমস্ত পৃথিবীর বিচারকর্ত্তা” সবসময় ন্যায়বিচার করেন
“সমস্ত পৃথিবীর বিচারকর্ত্তা কি ন্যায়বিচার করিবেন না?” (আদি. ১৮:২৫) বিশ্বস্ত ব্যক্তি অব্রাহাম যখন এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলেন, তখন তার মনে যে সন্দেহ ছিল, এমন নয়। এর পরিবর্তে, অব্রাহামের প্রশ্ন যিহোবার প্রতি তার এই আস্থাকে প্রকাশ করেছিল যে, যিহোবা সদোম ও ঘমোরা নগরের প্রতি নিখুঁত ন্যায়বিচার করবেন। তিনি পুরোপুরি নিশ্চিত ছিলেন, যিহোবা কখনো “দুষ্টের সহিত ধার্ম্মিকের বিনাশ” করবেন না। পরবর্তী সময়ে যিহোবা নিজের সম্বন্ধে বলেছিলেন: “তিনি শৈল, তাঁহার কর্ম্ম সিদ্ধ, কেননা তাঁহার সমস্ত পথ ন্যায্য; তিনি বিশ্বাস্য ঈশ্বর, তাঁহাতে অন্যায় নাই; তিনিই ধর্ম্মময় ও সরল।”—দ্বিতীয়. ৩১:১৯; ৩২:৪.
ধৈর্য—একটা উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিল রেখে সহ্য করা
দীর্ঘসহিষ্ণুতা বা ধৈর্য দেখানোর ক্ষেত্রে সর্বোত্তম উদাহরণ হলেন স্বয়ং প্রভু যিহোবা। (২ পিতর ৩:১৫) আমরা বাইবেলে প্রায়ই পড়ি যে, কীভাবে যিহোবা মহৎ উপায়ে সহ্য ও অপেক্ষা করেছিলেন অর্থাৎ ধৈর্য ধরেছিলেন। (নহি. ৯:৩০; যিশা. ৩০:১৮) আপনার কি মনে আছে, অব্রাহাম যখন সদোমকে ধ্বংস করার বিষয়ে যিহোবার সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁকে একটার পর একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলেন, তখন যিহোবা কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? যিহোবা অব্রাহামের কথায় বাধা দেননি। তিনি অব্রাহামের প্রশ্নগুলো ও তার দুশ্চিন্তার বিষয়গুলো ধৈর্যের সঙ্গে শুনেছিলেন। এরপর, যিহোবা দেখিয়েছিলেন যে, তিনি অব্রাহামের দুশ্চিন্তার বিষয়গুলো শুনেছিলেন এবং তাকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, সদোমে যদি এমনকী মাত্র দশ জন ধার্মিক লোক থাকে, তা হলেও তিনি সেই নগর ধ্বংস করবেন না। (আদি. ১৮:২২-৩৩) যিহোবা সবসময় ধৈর্য ধরে শোনেন আর তিনি কখনো অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখান না!
প্রহরীদুর্গ ১০ ১১/১৫ ২৬ অনু. ১২
যিহোবা আমাদের সার্বভৌম প্রভু!
১২ আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবা শীঘ্র তাঁর সার্বভৌমত্বকে দৃঢ়রূপে প্রতিষ্ঠা করবেন। তিনি অনন্তকাল ধরে দুষ্টতাকে সহ্য করবেন না এবং আমরা জানি যে, আমরা শেষকালে বাস করছি। যিহোবা জলপ্লাবনের সময় দুষ্টদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি সদোম ও ঘমোরা এবং ফরৌণ ও তার সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করেছিলেন। সীষরা ও তার সেনাবাহিনী এবং সন্হেরীব ও অশূরীয় সৈন্যদল পরাৎপরের বিরুদ্ধে সফল হয়নি। (আদি. ৭:১, ২৩; ১৯:২৪, ২৫; যাত্রা. ১৪:৩০, ৩১; বিচার. ৪:১৫, ১৬; ২ রাজা. ১৯:৩৫, ৩৬) তাই, আমরা এই আস্থা রাখতে পারি যে, যিহোবা ঈশ্বর তাঁর নামের প্রতি অসম্মানকে ও তাঁর সাক্ষিদের প্রতি দুর্ব্যবহারকে অনির্দিষ্টকাল ধরে সহ্য করবেন না। এ ছাড়া, আমরা এখন যিশুর আগমন বা উপস্থিতির ও দুষ্ট বিধিব্যবস্থার শেষের চিহ্ন সম্বন্ধে স্পষ্ট প্রমাণ দেখতে পাচ্ছি।—মথি ২৪:৩.
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
প্রহরীদুর্গ ৮৮ ৫/১৫ ২৩ অনু. ৪-৫
কেউ কি ঈশ্বরকে দেখেছে?
এখন আমরা বুঝতে পারি, কেন অব্রাহাম ঈশ্বরের মুখপাত্র হিসেবে আসা মানুষের রূপ ধারণকারী স্বর্গদূতকে এমনভাবে সম্বোধন করেছিলেন, যেন তিনি স্বয়ং যিহোবা ঈশ্বরের সঙ্গে কথা বলছেন। যেহেতু এই স্বর্গদূত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ঠিক সেটাই বলেছিলেন, যা ঈশ্বর অব্রাহামকে বলতে চেয়েছিলেন এবং সেই স্বর্গদূত ঈশ্বরকে প্রতিনিধিত্ব করছিলেন, তাই বাইবেলের নথি এভাবে বলতে পেরেছিল, “সদাপ্রভু . . . তাঁহাকে দর্শন দিলেন।”—আদিপুস্তক ১৮:১.
মনে রাখবেন, ঈশ্বরের মুখপাত্র হিসেবে একজন স্বর্গদূত, ঈশ্বরের বার্তাকে ঠিক ততটাই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পৌঁছে দিতে পারে, যতটা একটা টেলিফোন কিংবা রেডিও আমাদের কথাকে অন্য ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দেয়। তাই এখান থেকে বোঝা সম্ভব কীভাবে অব্রাহাম, মোশি, মানোহ ও অন্যেরা মানুষের রূপ ধারণকারী স্বর্গদূতের সঙ্গে এমনভাবে কথা বলতে পেরেছিলেন, যেন তারা স্বয়ং ঈশ্বরের সঙ্গে কথা বলছিলেন। তারা যদিও সেই স্বর্গদূতদের ও তারা যিহোবার যে-গৌরব প্রতিফলিত করছিলেন, তা দেখতে পেয়েছিলেন কিন্তু তারা ঈশ্বরকে দেখতে পাননি। অতএব, এটা কোনোমতেই প্রেরিত যোহনের লেখা এই কথার সঙ্গে সংঘাত সৃষ্টি করে না: “ঈশ্বরকে কেহ কখনও দেখে নাই।” (যোহন ১:১৮) এই ব্যক্তিরা ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসেবে আসা স্বর্গদূতদের দেখেছিলেন, স্বয়ং ঈশ্বরকে নয়।
চাপের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য অন্যদের সাহায্য করুন
৩ লোট সেইসময়ে এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যখন তিনি অনৈতিকতায় পরিপূর্ণ সদোমের লোকেদের মাঝে বসবাস করা বেছে নিয়েছিলেন। (পড়ুন, ২ পিতর ২:৭, ৮.) সেটা একটা সমৃদ্ধিশালী নগর ছিল কিন্তু লোট যেহেতু সেখানে বাস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তাই তাকে অনেক সমস্যা ভোগ করতে হয়েছিল। (আদি. ১৩:৮-১৩; ১৪:১২) তার স্ত্রী খুব সম্ভবত সেই নগরের প্রতি অথবা সেখানকার লোকেদের প্রতি এতটাই আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন যে, তিনি যিহোবার অবাধ্য হয়েছিলেন। ঈশ্বর যখন আকাশ থেকে সেই নগরে অগ্নি ও গন্ধক বর্ষণ করেছিলেন, তখন তিনি নিজের জীবন হারিয়েছিলেন। আর লোটের দুই মেয়ের বিষয়ে কী বলা যায়? তারা যে-পুরুষদের বাগদত্তা ছিলেন, তারা সদোমে মারা গিয়েছিলেন। লোট তার বাড়ি ও তার বিষয়সম্পত্তি হারিয়েছিলেন আর সেইসঙ্গে সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ক হল, তিনি তার স্ত্রীকে হারিয়েছিলেন। (আদি. ১৯:১২-১৪, ১৭, ২৬) এই চাপপূর্ণ সময়ে যিহোবা কি লোটের প্রতি ধৈর্য ধরা বন্ধ করে দিয়েছিলেন? না।
ফেব্রুয়ারি ২৪–মার্চ ১
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন
আদিপুস্তক ২০-২১
“যিহোবা সবসময় তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো পূরণ করেন”
প্রহরীদুর্গ, জনসাধারণের সংস্করণ ১৭.৩ ১৪-১৫
ঈশ্বর তাকে “রাণী” বলে সম্বোধন করেছিলেন
সারার হাসি কি প্রমাণ দেয়, তার বিশ্বাসের অভাব ছিল? একেবারেই না। বাইবেল জানায়: “বিশ্বাসে স্বয়ং সারাও বংশ উৎপাদনের শক্তি পাইলেন, যদিও তাঁহার অতিরিক্ত বয়স হইয়াছিল, কেননা তিনি প্রতিজ্ঞাকারীকে বিশ্বাস্য জ্ঞান করিয়াছিলেন।” (ইব্রীয় ১১:১১) সারা যিহোবাকে ভালোভাবে জানতেন; তিনি জানতেন যিহোবা তাঁর করা যেকোনো প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ করতে পারেন। আমাদের মধ্যে সবারই এই ধরনের অধিক বিশ্বাসের প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের আরও ভালোভাবে বাইবেলে উল্লেখিত ঈশ্বর সম্বন্ধে জানতে হবে। আমরা যখন তা করি, তখন আমরা জানতে পারি, সারা উপযুক্ত কারণেই এই ধরনের বিশ্বাস বজায় রেখেছিলেন। যিহোবা সত্যিই বিশ্বস্ত এবং তিনি তাঁর সমস্ত প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করেন। একেক সময় তিনি এমন এক উপায় অবলম্বন করতে পারেন, যেটা আমাদের অবাক করে দেয় কিংবা আমরা হয়তো অবিশ্বাসের হাসি হাসতে পারি!
‘তাহার কথা শুন’
অবশেষে ৯০ বছর বয়সে সারার জীবনে সেই আনন্দময় মুহূর্ত আসে, যেটার জন্য তিনি প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর থেকে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে ছিলেন। তিনি তার প্রিয় স্বামীর জন্য এক পুত্রসন্তান প্রসব করেন। সেইসময় অব্রাহামের বয়স ছিল ১০০ বছর! যিহোবার নির্দেশনা অনুযায়ী অব্রাহাম এই শিশুর নাম রাখেন ইস্হাক বা “হাস্য।” সারা বলেন: “ঈশ্বর আমাকে হাস্য করাইলেন; যে কেহ ইহা শুনিবে, সে আমার সহিত হাস্য করিবে।” (আদিপুস্তক ২১:৬) এই কথাগুলো বলার সময় আমরা হয়তো সারার ক্লান্ত কিন্তু হাসিভরা মুখ কল্পনা করতে পারি। যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া এই আশ্চর্য উপহার তাকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আনন্দিত রেখেছিল। কিন্তু, এটা তার জন্য এক গুরুদায়িত্বও ছিল।
ইস্হাকের যখন পাঁচ বছর পূর্ণ হয়, তখন সেই পরিবার তার স্তন্যপান ত্যাগ করার দিন উদ্যাপনের জন্য এক মহাভোজ প্রস্তুত করে। কিন্তু সবাই খুশি ছিল না। বিবরণে আমরা পড়ি, সারা কারো আচরণে এমন কিছু “দেখিলেন,” যেটা তার কাছে বিরক্তিকর বলে মনে হয়েছিল। সারা লক্ষ করেন, হাগারের ১৯ বছর বয়সি ছেলে ইশ্মায়েল ইস্হাককে অনবরত পরিহাস করছে। এটা খেলার ছলে ঠাট্টাতামাশা ছিল না। পরে প্রেরিত পৌল অনুপ্রাণিত হয়ে ইশ্মায়েলের এই আচরণকে তাড়না বলে উল্লেখ করেন। সারা বুঝতে পারেন, এই হয়রানি তার সন্তানের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের উপর বিশাল ক্ষতি নিয়ে আসবে। সারা ভালোভাবেই জানতেন, ইস্হাক শুধু তার সন্তানই নয় কিন্তু যিহোবার উদ্দেশ্যের মধ্যে তার এক মুখ্য ভূমিকা রয়েছে। তাই তিনি সাহস সঞ্চয় করে সরাসরি অব্রাহামের সঙ্গে কথা বলেন। সারা অব্রাহামকে অনুরোধ করেন, তিনি যেন হাগার ও ইশ্মায়েলকে অন্য জায়গায় পাঠিয়ে দেন।—আদিপুস্তক ২১:৮-১০; গালাতীয় ৪:২২, ২৩, ২৯.
অব্রাহাম কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখান? আমরা পড়ি: “এই কথায় অব্রাহাম আপন পুত্ত্রের বিষয়ে অতি অসন্তুষ্ট হইলেন।” তিনি ইশ্মায়েলকে ভালোবাসতেন এবং এই ব্যাপারে পিতৃস্নেহটাই তার কাছে বড়ো হয়ে ওঠে, এর বাইরে তিনি কোনো কিছুই দেখতে পাননি। কিন্তু, যিহোবা বিষয়টাকে স্পষ্টভাবে দেখেছিলেন আর তাই তিনি হস্তক্ষেপ করেন। বিবরণ জানায়: “আর ঈশ্বর অব্রাহামকে কহিলেন, ঐ বালকের বিষয়ে ও তোমার ঐ দাসীর বিষয়ে অসন্তুষ্ট হইও না; সারা তোমাকে যাহা বলিতেছে, তাহার সেই কথা শুন; কেননা ইস্হাকেই তোমার বংশ আখ্যাত হইবে।” যিহোবা অব্রাহামকে আশ্বাস দেন, হাগার ও তার ছেলের প্রয়োজনীয় বিষয়বস্তু জোগানো হবে। বিশ্বস্ত অব্রাহাম এই পরামর্শ মেনে নেন।—আদিপুস্তক ২১:১১-১৪.
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
প্রহরীদুর্গ, জনসাধারণের সংস্করণ ১৭.২ ১২, পাদটীকা
“তুমি দেখিতে সুন্দরী”
সারা ছিলেন অব্রাহামের সৎ বোন। তেরহ যদিও তাদের বাবা ছিলেন কিন্তু তাদের মা ভিন্ন ছিল। (আদিপুস্তক ২০:১২) এই ধরনের বিবাহ যদিও বর্তমানে অনুচিত কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, সেই সময় পরিস্থিতি অনেক আলাদা ছিল। সেই সময়ের লোকেরা সিদ্ধতার কাছাকাছি ছিল, যে-সিদ্ধতা আদম ও হবার ছিল যদিও পরে তারা তা হারিয়েছিলেন। এই ধরনের স্বাস্থ্যবান লোকেরা নিকট আত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে করার ফলে তাদের বংশধরদের মধ্যে জিনগত কোনো বিপদ আসত না। কিন্তু এর প্রায় ৪০০ বছর পরে, লোকেদের আয়ু কমতে কমতে আমাদের মতো হয়ে দাঁড়ায়। সেই সময়, মোশির ব্যবস্থা নিকট আত্মীয়ের মধ্যে যেকোনো ধরনের বৈবাহিক সম্পর্ক নিষিদ্ধ করেছিল।—লেবীয় পুস্তক ১৮:৬.
প্রহরীদুর্গ ৮৯ ৭/১ ২০ অনু. ৯
অব্রাহাম—যারা ঈশ্বরের বন্ধু হতে চায়, তাদের সকলের জন্য এক উদাহরণ
৯ অব্রাম আরেকটা কাজ করার মাধ্যমে দেখিয়েছিলেন, তার দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে। বিবরণ বলে: “সেই স্থানে অব্রাম সেই সদাপ্রভুর উদ্দেশে এক যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করিলেন।” (আদি ১২:৭) সম্ভবত, এটার অন্তর্ভুক্ত ছিল এক পশুবলি উৎসর্গ করা কারণ ইব্রীয় শব্দ “যজ্ঞবেদি”-র অর্থ হল, “বলিদানের স্থান।” পরবর্তীকালে, অব্রাম সেই দেশের অন্যান্য স্থানেও বিশ্বাসের এই একই কাজের পুনরাবৃত্তি করেছিলেন। এর পাশাপাশি, তিনি ‘সদাপ্রভুর নামে ডাকিতেন।’ (আদিপুস্তক ১২:৮; ১৩:১৮; ২১:৩৩) ইব্রীয় বাক্য ‘নামে ডাকা,’ “নাম ঘোষণা (প্রচার) করা”-র অর্থও বোঝাতে পারে। অব্রামের পরিবারের লোকেরা ও সেইসঙ্গে কনানীয়রা নিশ্চয়ই তাকে সাহসের সঙ্গে তার ঈশ্বর যিহোবার নাম ঘোষণা করতে শুনেছিল। (আদিপুস্তক ১৪:২২-২৪) একইভাবে, আজকে যারা ঈশ্বরের বন্ধু হতে চায়, তাদের অবশ্যই বিশ্বাস সহকারে তাঁর নামে ডাকতে হবে। এর অন্তর্ভুক্ত, জনসাধারণ্যে প্রচার কাজে অংশ নেওয়া, ‘ঈশ্বরের উদ্দেশে নিয়ত স্তব-বলি, অর্থাৎ তাঁহার নাম স্বীকারকারী ওষ্ঠাধরের ফল, উৎসর্গ করা।’—ইব্রীয় ১৩:১৫; রোমীয় ১০:১০.